Navel Diseases or Umbilical Diseases

নাভি শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ও রোগের শিকার হতে পারে। নাভি সাধারণত জীবাণু, ময়লা ও ঘামের কারণে সহজে সংক্রমিত হতে পারে। নাভির কিছু সাধারণ রোগ ও সমস্যার বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো:

### ১. **নাভির সংক্রমণ (Omphalitis)**:
– **লক্ষণ**: নাভিতে লালচে ফোলা, পুঁজ বা রক্তপাত, দুর্গন্ধ, এবং ব্যথা দেখা দিতে পারে। এটি শিশু এবং নবজাতকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
– **কারণ**: নাভি পরিষ্কার না রাখার কারণে বা জীবাণু সংক্রমণের কারণে এটি ঘটে। প্রায়শই নবজাতকদের নাভির যত্নে অবহেলা করলে এই সংক্রমণ হয়।
– **চিকিৎসা**: অ্যান্টিসেপটিক দ্রব্য দিয়ে নাভি পরিষ্কার রাখা এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করা।

### ২. **নাভির হার্নিয়া (Umbilical Hernia)**:
– **লক্ষণ**: নাভির আশেপাশে ফোলা বা উঁচু হওয়া এবং কখনও কখনও ব্যথা অনুভূত হয়।
– **কারণ**: নাভির মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার ফলে অন্ত্র বা অন্যান্য অঙ্গপেশি নাভি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। এটি শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্ক উভয় ক্ষেত্রেই হতে পারে।
– **চিকিৎসা**: শিশুদের ক্ষেত্রে এটি সাধারণত সময়ের সাথে সাথে নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

### ৩. **নাভিতে পাথর বা নাভি স্টোন (Navel Stone/Navel Calculus)**:
– **লক্ষণ**: নাভিতে কঠিন পদার্থ বা পাথরের মতো কিছু অনুভূত হয়, যা সাধারণত কালো বা বাদামী রঙের হয়। এটি সাধারণত ব্যথাহীন, তবে কোনো সংক্রমণ ঘটলে ব্যথা হতে পারে।
– **কারণ**: দীর্ঘ সময় ধরে নাভিতে ময়লা জমে থাকা বা তেল, ঘাম, এবং মৃতকোষ জমে পাথরের মতো শক্ত পদার্থ তৈরি হয়।
– **চিকিৎসা**: নাভি পরিষ্কার করে পাথরটি সরানো হয়। যদি পাথরের কারণে সংক্রমণ হয়, তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

### ৪. **নাভি ফোলা বা সিস্ট (Umbilical Cyst)**:
– **লক্ষণ**: নাভিতে ছোট ফোলা বা গুটি দেখা দেয়, যা চাপে ব্যথা হতে পারে বা পুঁজ বা তরল পদার্থ বের হতে পারে।
– **কারণ**: এটি নাভির আশেপাশে থাকা গ্রন্থির মধ্যে তরল জমা হয়ে হতে পারে বা ইনফেকশনের কারণে হতে পারে।
– **চিকিৎসা**: সিস্ট ছোট হলে এটি নিজে থেকেই সেরে যেতে পারে। তবে যদি সংক্রমণ বা পুঁজ দেখা দেয়, তাহলে অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

### ৫. **নাভির ফিস্টুলা (Umbilical Fistula)**:
– **লক্ষণ**: নাভির মাধ্যমে অন্ত্রের তরল বা মল নিঃসরণ হতে পারে। এটি প্রায়ই নাভির চারপাশে ফোলাভাব এবং লালচে ভাব সৃষ্টি করে।
– **কারণ**: জন্মগত ত্রুটির কারণে অন্ত্রের সঙ্গে নাভির সংযোগ থেকে এই সমস্যা হয়।
– **চিকিৎসা**: সাধারণত ফিস্টুলার চিকিৎসার জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।

### ৬. **নাভিতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন (Fungal Infection/Candidiasis)**:
– **লক্ষণ**: নাভিতে লালচে ভাব, চুলকানি এবং ক্ষুদ্র ক্ষত দেখা যায়। কখনও কখনও নাভি থেকে তরল পদার্থও নিঃসৃত হতে পারে।
– **কারণ**: আর্দ্র পরিবেশে ফাঙ্গাস বৃদ্ধি পায়। ঘাম, ময়লা এবং তেলের কারণে নাভি আর্দ্র হয়ে গেলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।
– **চিকিৎসা**: অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ক্রিম বা ওষুধের মাধ্যমে এই ইনফেকশন চিকিৎসা করা হয়।

### ৭. **নাভির দুর্গন্ধ**:
– **লক্ষণ**: নাভি থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া এবং নাভিতে ময়লা জমা দেখা যায়।
– **কারণ**: নাভি সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলে ময়লা, ঘাম এবং তেল জমে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে।
– **চিকিৎসা**: নিয়মিত নাভি পরিষ্কার রাখা এবং ময়লা বা ঘাম জমতে না দেওয়া।

### ৮. **নাভির পিলোনিডাল সিস্ট (Pilonidal Cyst)**:
– **লক্ষণ**: নাভিতে ছোট গুটি বা ফোলা দেখা যায়, যা পুঁজের মতো তরল নিঃসৃত হতে পারে। নাভির আশেপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
– **কারণ**: এটি সাধারণত নাভিতে চুল বা ময়লার জমা হয়ে সংক্রমণের সৃষ্টি করে।
– **চিকিৎসা**: সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক বা সিস্ট অপসারণের জন্য শল্য চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

### ৯. **নাভির ত্বকের প্রদাহ (Periumbilical Cellulitis)**:
– **লক্ষণ**: নাভির আশেপাশের ত্বক লাল হয়ে ফুলে যায় এবং স্পর্শে গরম ও ব্যথা অনুভূত হয়।
– **কারণ**: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে এটি ঘটে। নাভির চারপাশের ত্বকে কোনো ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
– **চিকিৎসা**: অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিয়ে এই প্রদাহের চিকিৎসা করা হয়।

### ১০. **নাভির ত্বকের অ্যালার্জি (Allergic Reaction)**:
– **লক্ষণ**: নাভির আশেপাশে চুলকানি, লালভাব এবং ফুসকুড়ি দেখা যায়।
– **কারণ**: কোনো প্রসাধনী, সোপ, বা ধাতব সামগ্রীতে (যেমন বেল্ট বা নাভির গয়না) অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
– **চিকিৎসা**: অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান থেকে দূরে থাকা এবং অ্যালার্জির ওষুধ সেবন।

### উপসংহার:
নাভি শরীরের একটি সংবেদনশীল অংশ হওয়ায় এর সঠিক যত্ন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যদি কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Disclaimer:
This blog post is for study purposes only. It is not a substitute for professional medical advice. Please consult a healthcare professional for personalized guidance and treatment. Self-medication is strongly discouraged.

Scroll to Top