মুখমন্ডলে দাগ পড়া (মেসতা)
১। সিপিয়া: জরায়ুর পীড়া গ্রন্থ রমণীদের নাকে, মুখে মেছতা বা কালো দাগ। গালের উপরি ভাগে ও নাকে আড়া-আড়িভাবে হলুদ দাগ পড়ে এবং মুখমন্ডলের উপরেও অর্থাৎ গালে হলুদ বর্ণের দাগ পড়ে (মেসতা) তখন সিপিয়া অব্যর্থ মহৌষধ। শক্তি ২০০, ১০০০।
জবায়ুর পীড়াগ্রস্ত স্ত্রীলোক, শীতকাতর, উদাসীন, রোগীনীর গালে, নাকে, নাকের পাশে, মুখমণ্ডলে বিন্দু বিন্দু হলুদবর্ণের দাগ, নাকের পাশে ঘোড়ার জীনের মত দাগ ও কাল কাল মেছতার দাগ, এই রোগিনীর উৎকৃষ্ট ঔষধ সিপিয়া ৩০, ২০০ হইতে উচ্চশক্তি।
২। কলোফাইলাম: আবার যদি দেখেন কোন রোগিনীর ঋতু ও জরায়ু সংক্রান্ত দোষ আছে, তাহাদের মুখমন্ডলের উপর যে কোন প্রকারের দাগে (মেসতায়) কলোফাইলাম অব্যর্থ মহৌষধ। শক্তি ২০০, ১০০০।
যেখানে দেখিবেন অত্যাধিক প্রদর স্রাব জনিত রমণীদের মুখে মেছতা বা কালো দাগ তথায় ‘কলোপাইলাম’ 3x বা 6 চার পাঁচ ফোঁটা সামান্য ঠান্ডা পানির সহিত দিনে তিন বার সেবন করিতে দিবেন উপকার হইবে।
৩। সিকেলিকর: আবার যদি দেখেন কোন রোগীর মুখ মন্ডলে কাল দাগ পরিলে বা মেসতা হইলে সিকেলিকর অব্যর্থ মহৌষধ। শক্তি ১০ এম, ৫০ এম সি এম।
৪। সিমিসিফিউগাঃ যেখানে শুনিবেন নাকে, মুখে, গালে মেছতা বা কালো দাগ তথার ‘সিমিসিফিউগা’ 3x বা 6 দিনে তিন বার সেবন করিতে দিবেন উপকার হইবে। না হইলে 30 সকাল বিকাল দিনে দুই বার।
শীতকাতুরে, জবায়ু পীড়াসহ বাত রোগ এই প্রকৃতির রমণীদের এবং অল্প বয়স্ক তরুণীদের মুখমণ্ডলের মেছতায় একটিয়া রেসিমোসা ৩, ৬ দিনে ৩ মাত্রা। ২০০ হইতে উচ্চশক্তি ও ব্যবহার্য।
5. কলোফাইনাম: ঋতুস্রাবকালীন নানাপ্রকার যাতনা, শ্বেত বা রক্তপ্রদরজনিত কালো বর্ণের দাগে মেছতায় কলোফাইনাম ৩, ৬ দিনে ৩ মাত্রা। ২০০ হইতে উচ্চশক্তি ব্যবহার্য।
6. কোষ্ঠবদ্ধতা, জিহ্বায় শ্বেতবর্ণ লেপযুক্ত রোগীদের মুখমণ্ডলের দাগে কেলি মিউর ৬x, ১২x দিনে ২ বার সেব্য।
7. মুখমণ্ডলে বিশ্রী প্রকৃতির ব্রনের দাগে কেলি ব্রোম ২০০।
* মেছতায় সিপিয়া ২০০ অগ্রগন্য, ১ দিন পর পর সেব্য। এই সাথে রাত্রে মার্ক সল ২০০ অধিক কার্যকরী, মার্ক সল ২০০ প্রতি সকালে ১ ডোজ। ৭ দিন পর সিপিয়া ১এম ১ বার বিশেষ উপকারী। সকাল বেলা মার্ক সল ২০০ এবং রাত্রে এসিড নাইট ২০০ ব্যবহার্য।
মুখমণ্ডলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাল মাথাযুক্ত উদ্ভেদ হইলে সালফার ও গ্রাফাই ২০০। কপালে ক্ষুদ্র কালদাগে গ্রাফাই ২০০, ও নাকের উপর হইলে এসিড নাইট ২০০। বায়োকেমিক কেলি মিউর ও নেট্রাম মিউর ৬০।
উপরোল্লিখিত লক্ষণ অনুযায়ী যে কোন একটি হোমিও ঔষধের সহিত বাইওকেমিক ‘ক্যালকেরিয়া ফস’ 6x বা 12x পর্যায়ক্রমে গরম পানির সহিত সেবনে আরো শীঘ্র উপকার হয়।
বাহ্যিক প্রয়োগ: ‘বার্ব্বেরিস একুই’ Q এক ভাগ, তিন ভাগ নারিকেল তৈলের সহিত মিশ্রিত করিয়া মুখে বাহ্যিক প্রয়োগে মেছতার দাগ দূর হয়। ডাবের পানি দিয়া দিনে ৩ বার মুখ ধৌত করিলেও মুখমন্ডলের দাগদূর হয় ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। শশার রস এবং বেসন একত্র করিয়া পেস্টের মত তৈরী করিয়া মুখে মাখিলে দাগ উঠিয়া যায়।
পথ্যাপথ্য: পুষ্টিকর খাদ্য এই রোগের জন্য বিশেষ প্রয়োজন। মাছ, মাংস, দুগ্ধ, মাখন খাইতে কোন বাধা নাই। কচি ডাবের পানি দিয়া মুখ ধৌত করিলে মুখের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি হয়।
🌑 গাঢ় কালো মেছতা (Dark Melasma / Chloasma) – হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
🔹 1. Sepia
-
কালচে বাদামি দাগ, বিশেষ করে গালের উপরের অংশে।
-
গর্ভধারণ, গর্ভনিরোধক বড়ি বা হরমোন পরিবর্তনের পর মেছতা।
-
মাসিক অনিয়ম, পেটের নিচে ভার, ক্লান্তি।
-
চেহারায় গামলা-আকৃতির বাদামি দাগ (বড় ও ছড়ানো)।
🔹 2. Thuja Occidentalis
-
হরমোনাল কারণে মুখে গাঢ় রঙের মেছতা।
-
ত্বকে রুক্ষতা ও ফুসকুড়ির প্রবণতা।
-
অতীতে ভ্যাকসিন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, বা PCOS এর ইতিহাস থাকলে উপকারী।
🔹 3. Kali Arsenicosum
-
কালচে ধূসর রঙের দাগ, ধীরে ধীরে বেড়ে যায়।
-
ত্বক শুষ্ক, চেহারায় বিবর্ণতা।
-
চর্মরোগের প্রবণতা ও চুল পড়া থাকতে পারে।
🔹 4. Sulphur
-
গাঢ় বাদামি বা কালো দাগ, যা রোদে বাড়ে।
-
চুলকানি প্রবণ ত্বক, জ্বালাভাব।
-
সকালের দিকে গরম বেশি লাগে, ও রাতে চুলকানি বাড়ে।
🔹 5. Berberis Aquifolium
-
ত্বক ফর্সা করে, কালো দাগ ও ব্রণের দাগ হালকা করে।
-
মুখে মেছতা, কালো ছোপ ও রুক্ষ ভাব।
-
এটি মুখে সরাসরি ক্রিম বা মাদার টিঙ্কচার (Q) হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
🧴 বাহ্যিক প্রয়োগ:
Berberis Aquifolium Cream বা Q –
প্রতিদিন ২ বার মুখ ধুয়ে মেছতার জায়গায় লাগান।
Berberis Aquifolium Q (10-15 ফোঁটা) পানিতে মিশিয়ে দিনে ২ বার খাওয়া যেতে পারে (চিকিৎসকের পরামর্শে)।