ফোড়া (abscess)
প্রশ্ন: ফোড়ার সংজ্ঞা ও চিকিৎসা লিখ।
ফোড়া (abscess): ফোড়া হলো শরীরের কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পুঁজ জমার মাধ্যমে একটি সংক্রমণজনিত অবস্থা। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হয় এবং এর ফলে টিস্যুর প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
- ফোড়া আক্রান্ত স্থানে ফুলে ওঠে।
- চামড়া লালচে হয়ে যায়।
- পুঁজ জমার কারণে ব্যথা এবং উষ্ণ অনুভূতি হয়।
ফোড়ার উদাহরণ: ত্বকে, দাঁতের গোড়ায়, লিম্ফ নোডে, বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিতে ফোড়া হতে পারে।
চিকিৎসাঃ
(i) পুঁজ বাহির করে ফেলতে হবে এবং সঠিক লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(ii) ভালভাবে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেস করতে হবে।
(iii) রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে।
সেলুলাইটিস (cellulitis)
প্রশ্ন: সেলুলাইটিসের সংজ্ঞা লিখ।
সেলুলাইটিস (cellulitis) : সেলুলাইটিস হলো ত্বকের নীচের স্তর এবং ত্বকের নিচে থাকা নরম টিস্যুর একটি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ। এটি ত্বকে লালচে ভাব, ফোলা, উষ্ণতা, এবং ব্যথা সৃষ্টি করে এবং প্রায়শই দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
- আক্রান্ত ত্বক ফুলে ওঠে এবং স্পর্শে গরম লাগে।
- ত্বকের রং লালচে বা গোলাপি হয়।
- সংক্রমণ মারাত্মক হলে জ্বর, শীতল অনুভূতি এবং অবসাদও দেখা দিতে পারে।
সেলুলাইটিস সাধারণত স্ট্রেপ্টোকক্কাস (Streptococcus) বা স্ট্যাফাইলোকক্কাস (Staphylococcus) ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয় এবং এটি ত্বকের কাটা, আঁচড়, বা অন্য কোনো ক্ষতের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করার ফলে হতে পারে।
ত্বকের নিচের টিস্যু বিস্তৃত প্রদাহকে সেলুলাইটিস বলে। কিন্তু ইহা শরীরের যে কোন কানেকটিভ টিস্যু প্লেনেও হতে পারে। যথা- পেলভিস, কাঁধ, ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ সেলুলাইটিসের প্যাথলজি লিখ।
প্যাথলজি: সাধারণতঃ স্ট্রেপটোকক্কাস বিটা হেমোলাইটিকাস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হয়।
প্রশ্নঃ সেলুলাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
সেলুলাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার (লক্ষণ ও চিহ্ন)ঃ
(i) আক্রান্ত এলাকায় স্থায়ী ব্যথা হয় এবং পুঁজ হলে টাটায়।
(ii) জ্বর- দুর্বলতা, কিছু ভাল না লাগা এবং ক্ষুধামন্দা।
(iii) স্থানীয় পরীক্ষা-
(ক) রোগী খুব টক্সিক দেখায়। আক্রান্ত এলাকা ফুলে যায়, গরম এবং শক্ত হয়। টিপ দিলে খুব ব্যথা লাগে এবং কোন নির্দিষ্ট সীমা পাওয়া যায় না।
(খ) আক্রান্ত এলাকা প্রথমে একটু শক্ত বা বাদামী রং হয়, পরে নরম হয়।
(গ) আক্রান্ত এলাকায় ফোস্কা হতে পারে। মারাত্বক অবস্থায় ত্বকে গ্যাংরিন হয়। ফ্লাকচুয়েশন পাওয়া যেতে পারে।
(ঘ) রক্তে পলিমরফ নিউক্লিয়ার লিউকোসাইটটোসিস পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: সেলুলাইটিসের চিকিৎসা লিখ।
চিকিৎসা:
রক্ষনশীল: (i) রোগীকে বিছানায় বিশ্রামে রাখতে হবে।
(ii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবস্থা করতে হবে।
(iii) অপারেটিভ : ফ্লাকচুয়েশন থাকলে পুঁজ বাহির করার জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রশ্ন: সেলুলাইটিসের জটিলতা লিখ।
সেলুলাইটিসের জটিলতা:
(i) গ্যাংরিন এবং আক্রান্ত এলাকার চর্ম চটা ধরে উঠে যাওয়া।
(ii) সেপ্টিসেমিয়া।
(iii) আশে-পাশের এলাকায় জীবাণু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
বয়েল (boils)
প্রশ্নঃ বয়েল কাকে বলে? এর জটিলতা লিখ।
বয়েল (boils): বয়েল হলো ত্বকের একটি সংক্রমণজনিত অবস্থা, যা চুলের গোড়া (hair follicle) বা ত্বকের নিচে থাকা সেবাস গ্রন্থির সংক্রমণ থেকে শুরু হয়। এটি একটি গভীর, ফোলা, ব্যথাযুক্ত পুঁজপূর্ণ ফোড়া, যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে হয়।
প্রধান বৈশিষ্ট্য:
- বয়েল সাধারণত একটি লালচে ফোঁড়া বা ফোলা হিসেবে শুরু হয়।
- কেন্দ্রে পুঁজ জমা হয়, যা চামড়াকে শক্ত ও উঁচু করে তোলে।
- আক্রান্ত স্থানে তীব্র ব্যথা, উষ্ণতা, এবং প্রদাহ থাকে।
- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus) ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়।
বয়েল সাধারণত ঘাড়, মুখ, বগল, নিতম্ব বা উরুর মতো স্থানে দেখা যায়, যেখানে ঘর্ষণ বেশি হয় বা ঘাম জমে।
বয়েলের জটিলতাঃ
(i) সেলুলাইটিস বিশেষ করে দুর্বল রোগীদের।
(ii) আক্রান্ত এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত লিম্ফ নোযের ইনফেকশন
(iii) সেকেন্ডারী বয়েলসঃ পার্শ্ববর্তী হেয়ার ফলিকলস এর ইনফেকশনের জন্য।
কার্বাঙ্কল (carbuncles)
প্রশ্নঃ কার্বাঙ্কল কাকে বলে? ইহার কারণ লিখ।
কার্বাঙ্কল (carbuncles): কার্বাঙ্কল (Carbuncle) হল এক ধরনের গুরুতর ত্বকের সংক্রমণ, যা একাধিক ফোড়া একত্রিত হয়ে তৈরি হয়। এটি একাধিক চুলকানি বা ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থির সংক্রমণ থেকে শুরু হয় এবং একাধিক ফোড়া একত্রিত হয়ে একটি বড় গুল্ম বা ফোঁটার আকারে প্রকাশ পায়। কার্বাঙ্কল সাধারণত গভীর এবং বেশ ব্যথাযুক্ত হয়, এবং এতে পুঁজ জমে থাকে। ত্বকের নীচের টিস্যুর নেক্রোসিসকে কার্বাঙ্কল বলে। অনেকগুলি সাইনাসের মাধ্যমে ইহা হতে রস বাহির হয়।
কারণ: স্ট্রাফাইলোকক্কাস অরিয়াস নামক জীবাণু সংক্রমণের ফলে ইহা হয়। ইহা সাধারণতঃ বহুমূত্র ও অন্যান্য রোগের সঙ্গে পাওয়া যায়।
ত্বকের নীচের টিস্যুর নেক্রোসিসকে কার্বাঙ্কল বলে। অনেকগুলি সাইনাসের মাধ্যমে ইহা হতে রস বাহির হয়।
প্রশ্নঃ কার্বাঙ্কলের লক্ষণাবলী লিখ।
কার্বাঞ্চলের লক্ষণাবলী:
স্থানীয়:
(i) ব্যথাযুক্ত শক্ত এলাকা।
(ii) আক্রান্ত এলাকা বাদামী রং ধারণ করে এবং অনেকগুলি সাইনাস তৈরী হয় যার ভিতর দিয়ে পুঁজ বাহির হয়ে আসে।
(iii) ত্বক লাল রং ধারণ করে এবং ইডিমেটাল হয়।
সাধারণ লক্ষণঃ
(i) জ্বর- ১০১-১০৩° ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে।
(ii) জিহ্বা- শুকনা ও আস্তরযুক্ত হয়।
(iii) শীর্ণতা ও বহুমূত্র রোগ সঙ্গে থাকতে পারে।
পরীক্ষা:
(ক) প্রস্রাব পরীক্ষা- প্রস্রাবে সুগারের উপস্থিতি থাকবে।
(খ) আরবিএস- রক্তে সুগারের পরিমাণ নির্ণয়, রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া যেতে পারে।
(খ) কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট- রক্তের উপাদানের তারতম্য পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: কার্বাঙ্কলের চিকিৎসা লিখ।
কার্বাঙ্কলের চিকিৎসাঃ
(i) রোগীকে বিছানায় বিশ্রামে রাখতে হবে।
(ii) বহুমূত্র রোগ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
(iii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(iv) প্রথমে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু উপরের ব্যবস্থাপনা ব্যর্থ হলে অপারেশন দরকার হয়।
(v) ইহার চটা কেটে ফেলতে হবে এবং আক্রান্ত এলাকা অনেক বড় হলে স্কীন গ্রাফটিং করতে হবে।
প্রশ্নঃ কার্বাঙ্কলের লক্ষণাবলী লিখ।
কার্বাঙ্কলের লক্ষণাবলী:
স্থানীয়:
(i) ব্যথাযুক্ত শক্ত এলাকা।
(ii) আক্রান্ত এলাকা বাদামী রং ধারণ করে এবং অনেকগুলি সাইনাস তৈরী হয় যার ভিতর দিয়ে পুঁজ বাহির হয়ে আসে।
(iii) ত্বক লাল রং ধারণ করে এবং ইডিমেটাল হয়।
সাধারণ লক্ষণঃ
(i) জ্বর- ১০১-১০৩° ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে।
(ii) জিহ্বা- শুকনা ও আস্তরযুক্ত হয়।
(iii) শীর্ণতা ও বহুমূত্র রোগ সঙ্গে থাকতে পারে।
পরীক্ষা:
(ক) প্রস্রাব পরীক্ষা- প্রস্রাবে সুগারের উপস্থিতি থাকবে।
(খ) আরবিএস- রক্তে সুগারের পরিমাণ নির্ণয়, রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া যেতে পারে।
(খ) কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট- রক্তের উপাদানের তারতম্য পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: কার্বাঙ্কলের চিকিৎসা লিখ।
কার্বাঙ্কলের চিকিৎসাঃ
(i) রোগীকে বিছানায় বিশ্রামে রাখতে হবে।
(ii) বহুমূত্র রোগ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
(iii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(iv) প্রথমে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু উপরের ব্যবস্থাপনা ব্যর্থ হলে অপারেশন দরকার হয়।
(v) ইহার চটা কেটে ফেলতে হবে এবং আক্রান্ত এলাকা অনেক বড় হলে স্কীন গ্রাফটিং করতে হবে।
গ্যাংগ্রীন (gangrene)
প্রশ্ন: গ্যাংগ্রীন কি? ইহার শ্রেণীবিভাগ লিখ। ২০১৪, ১৬ বা, গ্যাংগ্রীনের সংজ্ঞা লিখ। এর শ্রেণীবিভাগ কর। ২০০৮, ১০ ১২ বা, গ্যাংগ্রীন কাকে বলে? ইহা কত প্রকার ও কি কি?
গ্যাংগ্রীনের সংজ্ঞা: গ্যাংগ্রীন (Gangrene) হলো শরীরের কোনো অংশে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গিয়ে ওই অংশের কোষগুলো মরা বা মৃত হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এটি একটি মারাত্মক অবস্থা হতে পারে, যা চিকিৎসা না করলে জীবনহানির কারণ হতে পারে। গ্যাংগ্রীন সাধারণত সংক্রমণ, রক্ত সঞ্চালন সমস্যা, বা অন্যান্য কারণে ঘটে, এবং এতে আক্রান্ত অঞ্চলে ক্ষয়, কালো হওয়া, পচন বা পুঁজ জমা হতে পারে।
গ্যাংগ্রীনের শ্রেণীবিভাগ:
- আর্দ্র গ্যাংগ্রীন (Wet Gangrene): এটি মূলত সংক্রমণের কারণে ঘটে। আঘাত বা ক্ষতির ফলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে এবং তাতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ত্বক এবং পেশী দ্রুত পচনশীল হয়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থানে ব্যথা, ফোলাভাব, পুঁজ জমা এবং কালো হয়ে যাওয়া দেখা যায়।
- Dry Gangrene: এটি ধীরে ধীরে ঘটতে থাকে এবং সাধারণত কোনো আঘাত বা সংক্রমণের ফলে নয়। রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়া, যেমন ধমনী সংকীর্ণতা বা ডায়াবেটিসের কারণে রক্তপ্রবাহ কমে গিয়ে এটি ঘটে। এতে আক্রান্ত স্থান শুকিয়ে যায় এবং কালো হয়ে যায়।
- এম্বোলিক গ্যাংগ্রীন (Embolic Gangrene): রক্তনালীর মধ্যে কোনো বস্তু (যেমন রক্তবিন্দু বা থ্রম্বাস) আটকে যাওয়ার কারণে অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং গ্যাংগ্রীন হয়। এটি সাধারণত হৃদপিণ্ড বা মস্তিষ্কে সংঘটিত হয়।
- গ্যাস গ্যাংগ্রেনস (Gas Gangrene): এই ধরনের গ্যাংগ্রীন সাধারণত কোনো গভীর আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পর ঘটে এবং ক্লস্ট্রিডিয়াম (Clostridium) ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। এতে আক্রান্ত স্থানে গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং পচনশীলতা দ্রুত হয়।
- প্রেসার গ্যাংগ্রীন (Pressure Gangrene): এটি দীর্ঘ সময় ধরে চাপ বা অবস্থা তৈরি হওয়ার কারণে ঘটে, যেমন দীর্ঘ সময় শয্যাশায়ী রোগীদের ক্ষেত্রে। চাপের কারণে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়, এবং ত্বক মারা যেতে শুরু করে।
প্রশ্নঃ গ্যাংগ্রীনের কারণসমূহ লিখ।
গ্যাংগ্রীনের কারণসমূহঃ
(i) আঘাত জনিতঃ
ক) সরাসরি আঘাত- যেমন- ল্যাসারেটেড ইনজুরি যেখানে প্রধান আর্টারী আক্রান্ত হয়।
খ) পরোক্ষ আঘাত- গ্যাংগ্রীন হতে কিছু দূরে ভেসেল ইনজুরী।
(ii) জীবাণু সংক্রমণজনিত: কার্বাঙ্কল, গ্যাস গ্যাংগ্রীনের জীবাণুসহ বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমনের ফলে।
(iii) ফিজিক্যাল এজেন্ট: বার্ন, স্ক্যান্ড, বিদ্যুৎ, এসিড, ক্ষার ইত্যাদি।
(iv) রোগজনিত কারণেঃ ক) রেনড’স ডিজিজ, খ) আরগোট পয়জনিং,
গ) সেনাইল অ্যাথেরোস্কেলেরোসিস, ঘ) থ্রোম্বোসিস, ৩) ডায়াবেটিস মেলিটাস।
(v) ভেনাস গ্যাংগ্রীন: ভিসারাল নিওপ্লাজম এবং পলিসাইথেমিয়াতে
পেরিফেরাল ভেইনে সম্প্রসারিত ভেনাস থ্রোম্বোসিস ইহার কারণ।
প্রশ্নঃ ড্রাই ও ময়েস্ট গ্যাংগ্রীনের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ০৮, ১৩, ১৪ বা, শুষ্কও আর্দ্র গ্যাংগ্রীনের মধ্যে পার্থক্য লিখ।
শুষ্ক ও আর্দ্র গ্যাংগ্রীনের মধ্যে পার্থক্যঃ
বিষয় | শুষ্ক গ্যাংগ্রীন (Dry Gangrene) | আর্দ্র গ্যাংগ্রীন (Wet Gangrene) |
---|
সংজ্ঞা | এটি রক্ত সঞ্চালনের দীর্ঘমেয়াদি অভাবের কারণে কোষ মরে যাওয়ার একটি ধীর প্রক্রিয়া। | এটি সাধারণত সংক্রমণের কারণে দ্রুত পচনশীল গ্যাংগ্রীনের একটি অবস্থা। |
গঠন প্রক্রিয়া | রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে কোষের মৃত্যু ঘটে। | ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে দ্রুত পচন ও পুঁজ জমা হয়। |
রঙ ও চেহারা | আক্রান্ত স্থান কালো, শুষ্ক, এবং সঙ্কুচিত হয়। | স্থানটি লালচে বা সবুজাভ, ফুলে ওঠা এবং পুঁজপূর্ণ হয়। |
ব্যথা ও অনুভূতি | আক্রান্ত স্থানে ব্যথা কম থাকে এবং এটি সাধারণত অসাড় হয়। | স্থানটি খুবই ব্যথাযুক্ত এবং ফোলা থাকে। |
গন্ধ | কোনো দুর্গন্ধ থাকে না। | পচনের কারণে তীব্র দুর্গন্ধ থাকে। |
প্রধান কারণ | ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়া, যেমন অ্যাথেরোসক্লেরোসিস বা ডায়াবেটিস। | সংক্রমণ, আঘাত, অথবা দ্রুত পচন ঘটানো ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব। |
সম্প্রসারণের গতি | ধীরে ধীরে ছড়ায়। | দ্রুত ছড়ায় এবং সংক্রমণ হতে পারে। |
জীবনহানির ঝুঁকি | কম, যদি সংক্রমণ না ঘটে। | বেশি, কারণ এটি সেপসিস বা রক্ত দূষণ সৃষ্টি করতে পারে। |
চিকিৎসা পদ্ধতি | রক্ত সঞ্চালন পুনরুদ্ধার বা আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলা। | অ্যান্টিবায়োটিক, ড্রেনেজ বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুঁজ অপসারণ। |
প্রশ্ন: গ্যাংগ্রীনের ক্লিনিক্যাল ফিচার বা উপসর্গসমূহ লিখ।
গ্যাংগ্রীনের ক্লিনিক্যাল ফিচার বা উপসর্গসমূহ:
গ্যাংগ্রীনের প্রধান ৫টি সাইন (চিহ্ন) হচ্ছেঃ
(i) রং এর পরিবর্তন, যা রক্তবর্ণ হতে কালো পর্যন্ত হয়।
(ii) পালস এর অনুপস্থিতি।
(iii) তাপ না থাকা।
(iv) অনুভূতি না থাকা।
(v) আক্রান্ত অংশ অচল হয়ে যাওয়া।
আর্দ্র গ্যাংগ্রীন
ক) আর্টারী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।
খ) আর্টারী ও ভেইন উভয়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
গ) ইনফেকশন এবং পিউট্রিফ্যাকশন সব সময়ই থাকবে।
প্রশ্ন : ময়েস্ট গ্যাংগ্রীনের চিকিৎসা লিখ। ২০০৮, ১২, ১৪, ১৬ ময়েস্ট গ্যাংগ্রীনের চিকিৎসাঃ
ময়েস্ট গ্যাংগ্রীন (Wet Gangrene) একটি জরুরি অবস্থা যা দ্রুত চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এর লক্ষ্য হল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ, মৃত টিস্যু অপসারণ, এবং সংক্রমণের বিস্তার রোধ। চিকিৎসার প্রধান ধাপগুলো হলো:
- রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা।
- রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন, এবং শ্বাসপ্রশ্বাস মনিটর করা।
- ইন্ট্রাভেনাস (IV) ফ্লুইড থেরাপি দিয়ে রক্তসঞ্চালন উন্নত করা।
- দ্রুত কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক (IV অ্যান্টিবায়োটিক) দেওয়া হয়।
- মৃত এবং সংক্রমিত টিস্যু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করা।
- টিস্যু পুনরুদ্ধারের জন্য স্বাস্থ্যকর অংশ বজায় রাখা।
- যদি সংক্রমণ শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে, তবে আক্রান্ত অঙ্গ বা অংশ কেটে ফেলা প্রয়োজন।
- হাইপারবারিক অক্সিজেন থেরাপি (Hyperbaric Oxygen Therapy) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- এটি টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ধীর করে এবং টিস্যু পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
- ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য পেইনকিলার ব্যবহার।
- ডায়াবেটিস বা অন্য কারণের জন্য রক্তে শর্করা এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় অবস্থার নিয়ন্ত্রণ।
- অ্যাম্পুটেশন বা বড় অস্ত্রোপচারের পর ফিজিওথেরাপি এবং পুনর্বাসন প্রয়োজন।
- সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি যত্ন।
প্রশ্ন: ড্রাই গ্যাংগ্রীনের চিকিৎসা লিখ। ২০১৬
ড্রাই গ্যাংগ্রীনের চিকিৎসাঃ
ড্রাই গ্যাংগ্রীন (Dry Gangrene) মূলত রক্ত সঞ্চালনের অভাবের কারণে হয় এবং এতে সংক্রমণের লক্ষণ তুলনামূলক কম থাকে। চিকিৎসার উদ্দেশ্য হলো রক্ত সঞ্চালন পুনঃস্থাপন করা, মৃত টিস্যু অপসারণ, এবং জটিলতা প্রতিরোধ করা।
- রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণ খুঁজে বের করা এবং তা সমাধান করা।
- ধমনী রোগ (Peripheral Arterial Disease) থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ।
- ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা।
- ধূমপান ত্যাগ করা, কারণ এটি রক্ত সঞ্চালন আরও খারাপ করে।
- রক্ত প্রবাহ উন্নত করার জন্য ভ্যাসোডাইলেটর ওষুধ ব্যবহার।
- অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট (Anticoagulant) ওষুধ ব্যবহার করে রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ।
- ক্ষতিগ্রস্ত ধমনীর রক্ত প্রবাহ পুনরুদ্ধারে এনজিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারি।
- মৃত টিস্যু থেকে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ক্ষতস্থানে অ্যান্টিসেপ্টিক ব্যবহার।
- চামড়া শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখতে মনোযোগ।
- মৃত টিস্যু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা।
- যদি মৃত টিস্যু শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন প্রাকৃতিকভাবে এটি অপসারণ হতে পারে।
- যদি ড্রাই গ্যাংগ্রীন শরীরের অন্য অংশে সংক্রমণের ঝুঁকি সৃষ্টি করে, তবে অ্যাম্পুটেশন প্রয়োজন হতে পারে।
- হাইপারবারিক অক্সিজেন থেরাপি (Hyperbaric Oxygen Therapy) রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়ক।
- পেইন ম্যানেজমেন্টের জন্য ব্যথানাশক ওষুধ।
- রোগীর পুষ্টিগত চাহিদা পূরণের জন্য সুষম খাবার।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন এবং মিনারেল সাপ্লিমেন্ট।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা।
- নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা।
- দীর্ঘস্থায়ী অসুখ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
প্রশ্নঃ গ্যাংগ্রীন ও নেক্রোসিস এর মধ্যে পার্থক্য লিখ। ২০১৬
গ্যাংগ্রীন ও নেক্রোসিস এর মধ্যে পার্থক্য:
বিষয় | গ্যাংগ্রীন (Gangrene) | নেক্রোসিস (Necrosis) |
---|
সংজ্ঞা | রক্ত সঞ্চালনের ব্যাঘাত বা সংক্রমণের কারণে শরীরের একটি নির্দিষ্ট অংশের টিস্যুর মৃত্যু। | শরীরের যেকোনো কোষ বা টিস্যুর মৃত্যু, যা সংক্রমণ বা আঘাতের কারণে হতে পারে। |
কারণ | রক্ত সঞ্চালন বন্ধ, সংক্রমণ, আঘাত, ডায়াবেটিস বা ধমনী সংকীর্ণতা। | অক্সিজেনের অভাব, আঘাত, বিষক্রিয়া, সংক্রমণ বা রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা। |
পরিসীমা | এটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট অংশে দেখা যায়, যেমন আঙুল, পা, বা ত্বকের বাইরে। | এটি শরীরের যেকোনো টিস্যু বা কোষে হতে পারে। |
সংক্রমণ | প্রায়শই সংক্রমণের সাথে যুক্ত থাকে। | সংক্রমণ ছাড়াও হতে পারে। |
রঙ ও চেহারা | কালো, সবুজ, বা নীলাভ রঙ, পচনের লক্ষণ এবং দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। | মরা টিস্যুর ধূসর বা হলদে রঙ; পচনের লক্ষণ কম থাকে। |
প্রসারণের গতি | গ্যাংগ্রীন ধীরে ধীরে বা দ্রুত ছড়াতে পারে, বিশেষ করে সংক্রমণের ক্ষেত্রে। | নেক্রোসিস সাধারণত নির্দিষ্ট টিস্যুতে সীমাবদ্ধ থাকে এবং ছড়ায় না। |
গন্ধ | পচনের কারণে তীব্র দুর্গন্ধ হয় (বিশেষ করে আর্দ্র গ্যাংগ্রীনে)। | সাধারণত গন্ধহীন। |
জীবনহানির ঝুঁকি | উচ্চ ঝুঁকি, কারণ এটি সেপসিস বা রক্ত দূষণের দিকে অগ্রসর হতে পারে। | কম ঝুঁকি, তবে এটি গুরুতর সংক্রমণ বা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। |
প্রধান উদাহরণ | শুকনো গ্যাংগ্রীন, আর্দ্র গ্যাংগ্রীন, গ্যাস গ্যাংগ্রীন। | হার্ট অ্যাটাকের পরকার নেক্রোসিস, ফ্রস্টবাইটে টিস্যু নষ্ট। |
চিকিৎসা পদ্ধতি | সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক, ড্রেনেজ বা অস্ত্রোপচার। | আঘাত বা সংক্রমণের উৎস অনুসারে চিকিৎসা করা হয়। |
Injuries to the bones – ফ্রাকচার
প্রশ্ন: অস্থিভঙ্গ ও অস্থি সন্ধিচ্যুতির সংজ্ঞা লিখ। ১৫ অস্থিভঙ্গ ও অস্থি সন্ধিচ্যুতির সংজ্ঞা:
অস্থিভঙ্গের : অস্থিভঙ্গ হলো হাড়ের ধারাবাহিকতা (continuity) ভেঙে যাওয়া বা হাড়ের গঠনগত অখণ্ডতা নষ্ট হওয়া। এটি সাধারণত কোনো বাহ্যিক আঘাত, অতিরিক্ত চাপ, হাড়ের দুর্বলতা, বা কিছু নির্দিষ্ট রোগের কারণে ঘটে।
বৈশিষ্ট্য:
- এটি হাড় সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাঙা হিসেবে হতে পারে।
- ফ্র্যাকচার সাধারণত তীব্র ব্যথা, ফুলে যাওয়া, এবং স্থানচ্যুতি সৃষ্টি করে।
- হাড়ের ভাঙা অংশ একে অপরের থেকে সরতে পারে (displacement)।
উদাহরণ:
- গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে আঘাতজনিত ফ্র্যাকচার।
- অস্টিওপোরোসিস বা ক্যালসিয়ামের অভাবে সহজে হাড় ভেঙে যাওয়া।
অস্থি সন্ধিচ্যুতির সংজ্ঞা: অস্থি সন্ধিচ্যুতি হলো দুটি হাড়ের সংযোগস্থল বা যৌথ (joint) এর হাড়ের স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যাওয়া। এটি সাধারণত কোনো আঘাত বা অতিরিক্ত চাপের ফলে ঘটে এবং এতে সংযুক্ত হাড় দুটি স্বাভাবিকভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে না।
বৈশিষ্ট্য:
- আক্রান্ত স্থানে তীব্র ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং চলাচলে সীমাবদ্ধতা দেখা যায়।
- সংশ্লিষ্ট যৌথ স্থান থেকে হাড়ের অস্বাভাবিক স্থানচ্যুতি ঘটে।
- সাধারণত কাঁধ, হাঁটু, আঙুল, বা কনুই যৌথগুলিতে বেশি ঘটে।
উদাহরণ:
- কাঁধের সন্ধিচ্যুতি (Shoulder dislocation) যা খেলাধুলা বা দুর্ঘটনার কারণে ঘটে।
- হাঁটুর সন্ধিচ্যুতি যা গুরুতর আঘাতের ফলস্বরূপ হতে পারে।
প্রশ্ন: অস্থিভঙ্গের কারণ লিখ। ১০
অস্থিভঙ্গের কারণতত্ত্ব:
অস্থিভঙ্গ বা হাড় ভাঙার বিভিন্ন কারণ হতে পারে, যা প্রাকৃতিক আঘাত, শারীরিক অবস্থা, বা বাইরের চাপের কারণে ঘটে। এখানে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
1. আঘাত বা দুর্ঘটনা:
- গাড়ি দুর্ঘটনা
- খেলাধুলা (বিশেষ করে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ইত্যাদি)
- কাজের জায়গায় আঘাত (যেমন সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়া বা ভারী কিছু পড়া)
- ধাক্কা বা স্ট্রাইক (যেমন বক্সিং বা মার্শাল আর্ট)
2. অতিরিক্ত চাপ বা শক্তির প্রয়োগ:
- অনেক বেশি বা অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের ফলে (যেমন ভারী বস্তু উত্তোলন)
- অনেক বেশি বাঁকানো বা মোচড়ানো (যেমন হাড়ের স্থিতিস্থাপকতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার ফলে)
3. হাড়ের দুর্বলতা (অস্টিওপোরোসিস):
- বয়সের কারণে হাড়ের শক্তি কমে যায়।
- অস্টিওপোরোসিস (বয়স, মেনোপজ, বা পুষ্টির অভাব) হাড়ের দুর্বলতা সৃষ্টি করে, ফলে হাড় সহজেই ভেঙে যেতে পারে।
4. শক্তির অভাব:
- ক্যালসিয়ামের অভাব (হাড়ের গঠন ও শক্তি কমে যাওয়ার কারণে)
- ভিটামিন D-এর অভাব (যা ক্যালসিয়াম শোষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে)
5. গুরুতর রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যা:
- হাড়ের ইনফেকশন (যেমন অস্টিওমাইলাইটিস) যা হাড় দুর্বল করে ফেলে।
- টিউমার বা ক্যান্সার (যে কারণে হাড় দুর্বল হয়ে ভেঙে যেতে পারে)।
- অস্থি হরমোনজনিত রোগ (যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, যেখানে হাড় ও যৌথ দুর্বল হয়)।
6. জন্মগত সমস্যা: কিছু জন্মগত সমস্যা যেমন ডিসপ্লেসিয়া বা হাড়ের গঠনগত ত্রুটি, যা হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ায়।
7. পুষ্টিহীনতা: পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার কারণে হাড়ের গঠন এবং শক্তি কমে যেতে পারে, ফলে সহজেই ভাঙতে পারে।
প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮
অস্থিভঙ্গের ক্লিনিক্যাল ফিচার:
প্যাথলজিক্যাল ফ্রাকচার ছাড়া সকল ক্ষেত্রেই ইনজুরির ইতিহাস থাকে।
অস্থিভঙ্গের উপসর্গ বা লক্ষণ সাধারণত হাড় ভেঙে যাওয়ার ধরণ, স্থিতি এবং স্থান অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, কিছু সাধারণ ক্লিনিক্যাল ফিচার বা লক্ষণ যা প্রায় সব ধরনের অস্থিভঙ্গের ক্ষেত্রে দেখা যায়:
1. তীব্র ব্যথা (Severe Pain):ভাঙা হাড়ের স্থানে তীব্র, অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হয়। ব্যথা সাধারণত আক্রান্ত স্থানেই বেশি অনুভূত হয় এবং কোনো চলাচলে তা বাড়তে পারে।
2. ফুলে যাওয়া (Swelling): ভাঙা হাড়ের চারপাশে স্ফীতি বা ফুলে যাওয়া দেখা যায়, যা রক্ত ও তরল জমা হওয়ার কারণে হতে পারে। ফুলে যাওয়া স্থানটি নরম ও স্পর্শে ব্যথাযুক্ত হতে পারে।
3. অস্বাভাবিক আকার বা বিকৃততা (Abnormal Shape or Deformity): ভাঙা হাড়ের স্থানটি পরিবর্তিত আকার ধারণ করতে পারে, যেমন হাড়ের বিকৃতি বা স্থানচ্যুতি। আঘাতপ্রাপ্ত অঞ্চলে হাড়ের অস্বাভাবিক অবস্থান বা বাঁক দেখা যায়।
4. হাড়ের শব্দ (Crepitus): ভাঙা হাড়ের স্থান স্পর্শ করার সময় বা চলাচলের সময় অস্বাভাবিক শব্দ হতে পারে, যা ক্রিপিটাস নামে পরিচিত (ফাটল বা চিপস হওয়ার শব্দ)।
5. চলাচলে অসুবিধা (Impaired Mobility): ভাঙা হাড়ের কারণে আক্রান্ত স্থানটি ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যায়। হাঁটা বা অন্য কোনো ধরনের চলাচল করার সময় ব্যথা ও অস্বস্তি অনুভূত হয়। যদি কোমর, হাঁটু বা পায়ের হাড় ভেঙে যায়, তাহলে চলাফেরা করা সম্ভব নাও হতে পারে।
6. হালকা আঘাতের জন্য তীব্র প্রতিক্রিয়া (Unusual Sensitivity): হাড় ভাঙার কারণে আক্রান্ত স্থানটি তীব্রভাবে স্পর্শকাতর হয়ে যায়। এমনকি সামান্য আঘাত বা চাপও তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
7. রক্তপাত (Bleeding): অস্থিভঙ্গের কারণে মাংসপেশী বা তন্তু ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হতে পারে। যদি হাড়ের ক্ষত স্থানটি ত্বকের নিচে থাকে, তবে গভীর আঘাতের কারণে বড় ধরণের রক্তপাত হতে পারে।
8. সেন্সরি পরিবর্তন (Sensory Changes): কখনও কখনও, বিশেষ করে যদি নড়াচড়া বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন আক্রান্ত স্থান বা অঙ্গের সংবেদনশীলতা হারানো, স্নায়ু সমস্যা বা ঝিনঝিন অনুভূতি হতে পারে।
9. হাড়ের স্থানচ্যুতি (Displacement of Bone): যদি ভাঙা হাড় স্থানচ্যুত হয়ে যায়, তাহলে হাড়ের স্বাভাবিক সংযোগস্থল থেকে সরে গিয়ে নতুন অবস্থানে চলে যেতে পারে, যা হাড়ের আঘাতের এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
10. মাংসপেশী দুর্বলতা (Muscle Weakness): অস্থিভঙ্গের কারণে মাংসপেশী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ফলে আক্রান্ত স্থানে মাংসপেশী দুর্বলতা দেখা যায় এবং অঙ্গটির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।
11. হাড়ের ভাঙ্গা প্রান্তদ্বয় স্থানচ্যুতি হলে আক্রান্ত স্থান বিকৃত আকার ধারন করে। বিকৃতির ধরন নির্ভর করে আঘাতের প্রকৃতি এবং অবস্থার উপর।
12. ভাঙ্গা হাড় অস্বাভাবিক মুভমেন্ট করে।
13. আক্রান্ত অংশ নাড়ালে কিপিটাস (Crepitus) শব্দ পাওয়া যায়। (হাড়ের প্রান্তগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘর্ষণ লাগার কারণ)। কিন্তু এই নড়াচড়ায় টিস্যুর অনেক ক্ষতি করতে পারে।
14. হাড়ের অখন্ডতা থাকে না।
15. এক্স-রে: ফ্রাকচার দেখা যায় এবং ফ্রাকচারের এনাটমী জানা যায়। ভাঙ্গা হাড়ের উভয় দিক থেকে এক্স-রে নিলে ভাঙ্গার ধরন স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের শ্রেণীবিভাগ কর। ২০০৯, ১১, ১৩
ফ্রাকচারের শ্রেণীবিভাগঃ
অস্থিভঙ্গের শ্রেণীবিভাগ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করা যেতে পারে। এখানে তা কিছু সাধারণ শ্রেণীভিত্তিতে বিভক্ত করা হলো:
1. ভাঙার ধরন (Type of Fracture):
খোলামেলা ফ্র্যাকচার (Open Fracture) : যখন হাড় ভেঙে ত্বক ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে। এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
বন্ধ ফ্র্যাকচার (Closed Fracture): হাড় ভেঙে যায় কিন্তু ত্বক ভাঙে না বা বাইরে বেরিয়ে আসে না। সাধারণত আঘাতের কারণে দেখা যায়, এবং এটি কম ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
2. ভাঙার ধরন অনুযায়ী (Based on the Nature of the Fracture):
ট্রান্সভার্স ফ্র্যাকচার (Transverse Fracture): হাড়ের অক্ষের প্রতি 90° কোণে একটি সরল ফাটল।
লম্বা ফ্র্যাকচার (Longitudinal Fracture): হাড়ের অক্ষে (দীর্ঘ অক্ষ বরাবর) ফাটল হয়।
অ্যাংগুলার ফ্র্যাকচার (Oblique Fracture): হাড়ের অক্ষের একটি কোণে তির্যকভাবে ফাটল হয়।
স্পাইরাল ফ্র্যাকচার (Spiral Fracture): হাড়ের চারপাশে পেঁচিয়ে একটি বাঁকা রেখায় ফাটল হয়, সাধারণত অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কারণে।
কম্প্যাক্ট ফ্র্যাকচার (Comminuted Fracture): হাড় ভেঙে ছোট ছোট টুকরোতে পরিণত হয়, এটি গুরুতর আঘাতের ফলে ঘটে।
গ্রিনস্টিক ফ্র্যাকচার (Greenstick Fracture): প্রধানত শিশুর হাড়ে দেখা যায়, যেখানে হাড় আংশিকভাবে ভেঙে যায় কিন্তু পুরোপুরি না, এরকম ভাঙা গাছের সবুজ ডালের মতো।
3. হাড়ের আঘাতের অবস্থান অনুযায়ী (Based on the Location of the Fracture):
ডায়াফিসাল ফ্র্যাকচার (Diaphyseal Fracture): হাড়ের মধ্যবর্তী অংশে ফাটল।
এপিফিসাল ফ্র্যাকচার (Epiphyseal Fracture): হাড়ের প্রান্তে, যেখানে হাড়ের বৃদ্ধির রেখা থাকে।
মেটাফিসাল ফ্র্যাকচার (Metaphyseal Fracture): হাড়ের মধ্যবর্তী অংশ এবং প্রান্তের সংযোগস্থলে ফাটল।
4. ফ্র্যাকচার ক্ষতির ধরন অনুযায়ী (Based on the Severity of the Injury):
এস্টেবল ফ্র্যাকচার (Stable Fracture): ভাঙা হাড়ের অংশ একে অপরের কাছে থাকে, এবং অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসা করা যায়।
আনস্টেবল ফ্র্যাকচার (Unstable Fracture): ভাঙা হাড়ের অংশ একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে, এবং অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।
5. বয়স এবং স্বাস্থ্য অনুযায়ী (Based on the Age and Health Conditions):
ওস্টিওপোরোটিক ফ্র্যাকচার (Osteoporotic Fracture): বয়সজনিত বা ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে হাড় ভেঙে যায়, সাধারণত বৃদ্ধদের মধ্যে দেখা যায়।
ইনফান্ট বা শিশুদের ফ্র্যাকচার (Pediatric Fracture): শিশুদের হাড়ে ভাঙনের ধরন আলাদা হয় এবং তাদের হাড়গুলো দ্রুত সুস্থ হতে পারে।
প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের জটিলতা বর্ণনা কর। ১০, ১৫ বা, অস্থিভঙ্গের জটিলতাসমূহ উল্লেখ কর। ০৯
ফ্রাকচারের জটিলতা:
অস্থিভঙ্গের কিছু জটিলতা হতে পারে, যা ভাঙা হাড়ের প্রকার, গুরুতরতা, বা আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে। নিম্নে অস্থিভঙ্গের কিছু সাধারণ জটিলতা বর্ণনা করা হলো:
1. সংক্রমণ (Infection): খোলামেলা ফ্র্যাকচার (Open Fracture) এর ক্ষেত্রে, যেখানে হাড় ত্বক ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসে, সেখানে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সংক্রমণ হাড়ে পৌঁছে গেলে অস্টিওমাইলাইটিস হতে পারে, যা হাড়ের গভীরে সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা না করলে হাড়ের ক্ষতি এবং ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।
2. হাড়ের অস্থায়ী স্থানচ্যুতি (Malunion): যখন হাড় ভাঙার পর সঠিকভাবে সেঁটে না থাকে, তখন এটি অস্থায়ী স্থানচ্যুতি সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হাড়ের স্বাভাবিক গঠন বা ফাংশন পুনরুদ্ধার হতে পারে না, এবং এটি স্থায়ী বিকৃতির কারণ হতে পারে।
3. হাড়ের ননইউনিয়ন (Nonunion): কখনও কখনও হাড় ভাঙার পর সঠিকভাবে যুক্ত হয় না এবং ভাঙা হাড়ের টুকরোগুলো একে অপরের সাথে যুক্ত হতে পারে না। এটি ননইউনিয়ন নামে পরিচিত, যা দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা এবং চিকিৎসার জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত ক্যালসিয়ামের অভাব, রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা বা হাড়ের ইনফেকশনের কারণে হতে পারে।
4. ভূমিকা-ফ্র্যাকচার (Compartment Syndrome): কোনো গুরুতর আঘাতের কারণে, বিশেষ করে পেশী বা অন্যান্য কোমল টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হলে, কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম হতে পারে। এতে আক্রান্ত স্থানে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, পেশী ও নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পেশী বিকৃতির সম্ভাবনা থাকে।
5. শরীরের অঙ্গের ক্ষতি (Damage to Surrounding Structures): হাড় ভাঙার সময় একে অপরের মধ্যে সংযুক্ত নরম টিস্যু, নার্ভ, রক্তনালি বা তন্তুর ক্ষতি হতে পারে। যেমন, হাঁটু বা কাঁধের হাড় ভাঙলে তৎসংক্রান্ত স্নায়ু বা রক্তনালির ক্ষতি হতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী প্যারালাইসিস বা রক্ত সরবরাহের অভাব সৃষ্টি করতে পারে।
6. ভাঙা হাড়ের চলাচলে সমস্যা (Joint Dysfunction): যদি ভাঙা হাড় কোনো যৌথ স্থানে ঘটে, যেমন হাঁটু, কাঁধ বা কনুই, তাহলে যৌথের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে, যেমন আঙুল বা হাঁটুর কাঠামোগত পরিবর্তন এবং চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
7. থ্রম্বোসিস (Thrombosis): দীর্ঘসময় ধরে অস্থিভঙ্গি আক্রান্ত স্থানে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল না থাকলে, থ্রম্বোসিস বা রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এটি শ্বাসকষ্ট বা হৃৎপিণ্ডের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, এবং রোগীর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
8. শ্বাসকষ্ট (Pulmonary Embolism): দীর্ঘ সময় ধরে অস্থিভঙ্গি আক্রান্ত হয়ে শারীরিক গতিশীলতা কমে গেলে, কখনও কখনও রক্ত জমাট বাঁধে এবং এটি শ্বাসনালীতে পৌঁছে পালমোনারি এম্বোলিজম (ফুসফুসে রক্ত জমাট) সৃষ্টি করতে পারে। এটি জীবনঘাতী হতে পারে এবং জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।
9. সাইকোলজিক্যাল ট্রমা (Psychological Trauma): গুরুতর অস্থিভঙ্গি শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক অবস্থা বা সাইকোলজিক্যাল সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে, যেমন উদ্বেগ, বিষণ্নতা বা পিটিএসডি (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার)।
10. অ্যাম্বুলেটরি প্রব্লেম (Ambulatory Problems): বিশেষ করে কোমর বা পায়ের হাড় ভাঙলে রোগী চলাফেরায় সমস্যা অনুভব করতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে বিছানায় থাকার ফলে পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এবং পুনরায় চলাফেরা বা পুনরুদ্ধারে সমস্যা হতে পারে।
11. ভাসকুলার ড্যামেজ- হেমাটোমা দ্বারা বা ভাঙ্গা অস্থি ডিসপ্লেজমেন্ট হয়ে লিম্বের প্রধান আর্টারি ড্যামেজ হতে পারে।
12. নিউরোলজিক্যাল- নার্ভ ইনজুরি, স্পাইনাল কর্ড এবং রুট ইনজুরি- স্পাইনাল কলামে ইনজুরির কারণে।
13. মাংস পেশীতে ইনজুরি- মাংস পেশীর ফাইবার ছিঁড়ে যাওয়া।
14. টেনডন- টেনডন ছিঁড়ে যাওয়া।
15. ভিসারা ইনজুরি- অ্যাবডোমিনাল/থোরাসিক ভিসারা, মেন- ইনজুরি, বির ফ্রাকচারের কারণে, ইউরেথ্রার ইনজুরি, পেলভিসে ফ্রাকচারের কারণে।
দেরীতে জটিলতাঃ
(i) জয়েন্ট – Stiffness, Secondary, Osteoarthritis
(ii) হাড়- ক্রনিক ইনফেকশনের কারণে অস্টিওমাইয়ে লাইটিস দেরীতে জোড়া লাগা, জোড়া না লাগা, ত্রুটিপূর্ণ জোড়া লাগা, অস্টিওপোরোসিস, পুনঃ ফ্রাকচার গ্রোথ ডিসটাবনেস
(iii) মাংসপেশী – মাংসপেশীর এট্রপি।
প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের জোড়ালাগার পদ্ধতি লিখ। ১১, ১৩
অস্থিভঙ্গের জোড়ালাগার পদ্ধতি:
অস্থিভঙ্গের চিকিৎসায় হাড় সঠিকভাবে পুনরুদ্ধার করতে এবং সুস্থ করতে দুটি মূল ধাপ থাকে: ফ্র্যাকচার রিডাকশন (Fracture Reduction) এবং ফ্র্যাকচার ফিক্সেশন (Fracture Fixation)। এর মধ্যে বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে হাড় পুনরুদ্ধার ও স্থিতিশীল করা হয়। নিম্নে এর পদ্ধতিগুলি বর্ণনা করা হলো:
১. ফ্র্যাকচার রিডাকশন (Fracture Reduction): ফ্র্যাকচার রিডাকশন হলো ভাঙা হাড়ের টুকরোগুলোকে সঠিক স্থানে আনা, যাতে হাড় সঠিকভাবে জোড়া লাগে। এটি দুই ধরনের হতে পারে:
(i) কনজারভেটিভ রিডাকশন (Closed Reduction): এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে হাড়ের টুকরোগুলোকে হাত বা বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়। সাধারণত এটি ব্যবহার করা হয় যখন ফ্র্যাকচারটি খোলামেলা নয় এবং কোনো চিড় বা কাটাছেঁড়া হয়নি। একে সাধারণত স্থানীয় অ্যানেসথেসিয়া (স্থানীয় অবচেতন) দেওয়া হয়।
(ii) ওপেন রিডাকশন (Open Reduction): এটি একটি সার্জিক্যাল পদ্ধতি যেখানে চামড়া কেটে ভাঙা হাড়ের অবস্থান সংশোধন করা হয়। সাধারণত খোলামেলা ফ্র্যাকচার বা জটিল ফ্র্যাকচার হলে এই পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। এতে সাধারণভাবে অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করা হয় এবং হাড় সঠিকভাবে স্থাপন করতে সার্জারির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা হয়।
২. ফ্র্যাকচার ফিক্সেশন (Fracture Fixation): ফ্র্যাকচার ফিক্সেশন হলো ভাঙা হাড়ের টুকরোগুলোকে সঠিক স্থানে স্থির রাখার পদ্ধতি, যাতে হাড় দ্রুত জোড়া লাগে এবং সংক্রমণ বা অন্য জটিলতা এড়ানো যায়। এর পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপ:
(i) কনজারভেটিভ ফিক্সেশন (Conservative Fixation):
- প্লাস্টার কাস্ট (Plaster Cast): এটি একটি সাধারণ পদ্ধতি যেখানে ভাঙা অংশের চারপাশে প্লাস্টার বা গামছা দিয়ে শক্ত রক্ষা তৈরি করা হয়, যাতে হাড় সঠিক অবস্থানে থাকে এবং মুভমেন্ট না ঘটে। এটি সাধারণত সহজ ও প্রাথমিক ফ্র্যাকচারগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়।
- স্লিং (Sling) বা ব্রেস (Brace): কিছু হালকা বা মধ্যম মাত্রার ফ্র্যাকচারগুলির ক্ষেত্রে স্লিং বা ব্রেস ব্যবহার করা হয়, যা ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে স্থিতিশীল রাখে।
(ii) সার্জিক্যাল ফিক্সেশন (Surgical Fixation):
পিন, স্ক্রু, এবং প্লেট (Pins, Screws, and Plates): এসব যন্ত্রাংশ হাড়ের ভাঙা অংশকে সঠিকভাবে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। সার্জারির মাধ্যমে এগুলি হাড়ের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়।এরা মূলত বড় এবং জটিল ফ্র্যাকচারগুলির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
ইন্টারলকিং নেল (Intramedullary Nail): এটি একটি ধাতব রড যা হাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, এবং ফ্র্যাকচার অবস্থান ঠিক করতে সাহায্য করে। সাধারণত থাইব বা হিউমারাসের মতো বড় হাড়ে এটি ব্যবহৃত হয়।
এক্সটার্নাল ফিক্সেটর (External Fixator): একটি যন্ত্র যা হাড়ের বাইরের অংশে ফিক্স করা হয় এবং ভাঙা হাড়ের টুকরোগুলোকে সঠিকভাবে স্থিতিশীল রাখে। এটি খোলামেলা ফ্র্যাকচার বা যেসব ক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ফিক্সেশন সম্ভব নয়, সেখানে ব্যবহৃত হয়।
৩. ফ্র্যাকচার রিকভারি এবং পুনর্বাসন (Fracture Recovery and Rehabilitation): একবার হাড় সঠিকভাবে ফিক্সড হয়ে গেলে, পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার মধ্যে শারীরিক থেরাপি, ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, এবং পুনরায় চলাফেরার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত থাকে। এতে আক্রান্ত স্থানে পেশী শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌথের গতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করা হয়।
প্রশ্ন: একটানা ট্রাকশন কত প্রকার ও কি কি? বর্ণনা কর।
একটানা ট্রাকশন:
একটানা ট্রাকশন তিন ধরনের। যথা-
(i) মধ্যাকর্ষণের মাধ্যমে ট্রাকশন- শুধু আপার লিম্ব (upper limb)-এর ফ্রাকচারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এখানে হাতের কব্জি Sling দ্বারা ঝুলিয়ে রাখলে Arm এর ওজন একটানা ট্রাকশনের কাজ করে।
(ii) Skin বা সারফেস ট্রাকশন- শুধুমাত্র Lower Limb এর ফ্রাকচারে প্রয়োগ করা হয়। ভাঙ্গা বোনের distal অংশে ত্বক Shave করে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে শেষ প্রান্তে ওজন ঝুলানো হয়। এ ওজন ট্রাকশন দিতে থাকে এবং মাংস পেশীর Spasm কে Over come করে। পায়ের পাতা উঁচু করে রেখে শরীরের ওজন দ্বারা Counter traction দেয়া হয়। জয়েন্ট মুক্ত রাখতে হবে।
(iii) Skeletal traction ভাঙ্গা বোনের dista অংশে ভিতর দিয়ে তার বা Steinmann’s Pin প্রবেশ করে এর সঙ্গে ওজন ঝুলিয়ে ট্রাকশন দেয়া হয়। যেমন- ফিমার ফ্রাকচারের ক্ষেত্রে টিবিয়ার উপরের অংশে tibial tuberclc-এর পিছনে পিন ঢুকিয়ে ট্রাকশন দেয়া হয়।
প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১১, ১৩
চিকিৎসাঃ
অস্থিভঙ্গের ব্যবস্থাপনা রোগীর ফ্র্যাকচার (হাড় ভেঙে যাওয়ার) প্রকার, অবস্থান, রোগীর বয়স এবং শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো ভাঙা হাড়গুলো সঠিকভাবে পুনরুদ্ধার করা এবং পুনরায় সেই স্থানে আনা যাতে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। অস্থিভঙ্গের ব্যবস্থাপনা নিম্নলিখিত প্রধান ধাপগুলোতে ভাগ করা যায়:
১. ফ্র্যাকচার রিডাকশন (Fracture Reduction)
ফ্র্যাকচার রিডাকশন হলো ভাঙা হাড়ের টুকরোগুলোকে সঠিক অবস্থানে স্থাপন করা।
(i) কনজারভেটিভ রিডাকশন (Closed Reduction):
- এটি একটি অপ্রকট পদ্ধতি যেখানে হাড়ের টুকরোগুলো বাহ্যিকভাবে হাত বা যন্ত্রের মাধ্যমে সঠিক স্থানে স্থাপন করা হয়।
- সাধারণত সাধারণ বা কম জটিল ফ্র্যাকচারগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়।
- এটি সাধারণত প্লাস্টার কাস্ট, স্লিং, বা অন্যান্য পদ্ধতিতে স্থির রাখা হয়।
(ii) ওপেন রিডাকশন (Open Reduction):
- এটি সার্জারির মাধ্যমে করা হয়, যেখানে চামড়া কেটে হাড়ের টুকরোগুলো সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়।
- গুরুতর বা খোলামেলা ফ্র্যাকচারগুলির জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
২. ফ্র্যাকচার ফিক্সেশন (Fracture Fixation)
ফ্র্যাকচার ফিক্সেশন হল ভাঙা হাড়গুলোকে সঠিকভাবে স্থিতিশীল রাখার পদ্ধতি যাতে হাড় দ্রুত জোড়া লাগে এবং ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা না হয়।
(i) কনজারভেটিভ ফিক্সেশন (Conservative Fixation):
- প্লাস্টার কাস্ট (Plaster Cast): এটি ভাঙা অংশকে সুরক্ষিত এবং স্থিতিশীল রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। সাধারণত হালকা বা মধ্যম ফ্র্যাকচারগুলির জন্য।
- স্লিং বা ব্রেস (Sling or Brace): কিছু ফ্র্যাকচারগুলোতে স্লিং বা ব্রেস ব্যবহৃত হয়, যা সঠিকভাবে অংশটিকে সমর্থন দেয়।
(ii) সার্জিক্যাল ফিক্সেশন (Surgical Fixation):
- পিন, স্ক্রু, এবং প্লেট (Pins, Screws, and Plates): এই ধাতব উপাদানগুলো হাড়ের ভাঙা অংশগুলোকে সঠিকভাবে স্থিতিশীল করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত গুরুতর ফ্র্যাকচারগুলির জন্য।
- ইন্টারমেডুলারি নেল (Intramedullary Nail): এটি একটি রড যা হাড়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং ভাঙা হাড়ের টুকরোগুলোকে স্থিতিশীল রাখে।
- এক্সটার্নাল ফিক্সেটর (External Fixator): এটি একটি বাইরের যন্ত্রাংশ যা হাড়ের বাইরে স্থাপন করা হয়, বিশেষ করে খোলামেলা বা গুরুতর ফ্র্যাকচারগুলিতে।
৩. ব্যথা নিয়ন্ত্রণ (Pain Control)
- অস্থিভঙ্গির ক্ষেত্রে ব্যথা অত্যন্ত প্রচণ্ড হতে পারে, তাই ব্যথা নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- সাধারণত অ্যানালজেসিকস (Painkillers) বা অ্যানেসথেসিয়া (Anesthesia) ব্যবহার করা হয়।
৪. পুনর্বাসন (Rehabilitation)
- একবার হাড় সঠিকভাবে স্থিতিশীল হয়ে গেলে, পুনর্বাসন শুরু হয়। এটি পেশী শক্তি বৃদ্ধি, নমনীয়তা বৃদ্ধি এবং চলাফেরা সক্ষমতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- ফিজিওথেরাপি (Physiotherapy): এটি পেশী শক্তি, জয়েন্ট নমনীয়তা, এবং চলাফেরার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
৫. নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা (Safety and Monitoring)
- ফ্র্যাকচার পুনরুদ্ধারের জন্য নিয়মিত মেডিক্যাল মনিটরিং এবং ফলোআপ গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করে যে হাড় সঠিকভাবে সেরে উঠছে এবং কোনো জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে না।
৬. মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা (Psychological Support)
- গুরুতর অস্থিভঙ্গির কারণে রোগীকে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ হতে পারে। সেক্ষেত্রে মানসিক সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।
7. হেমোরেজের চিকিৎসা- বড় লম্বা বোন, Splint এবং Pelvic fracture এর ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়।
8. রক্তের গ্রুপিং ও ক্রসম্যাসিং করতে হবে।
9. প্রয়োজনে রক্ত দিতে হবে।
10. শক থাকলে তারও চিকিৎসা করতে হবে।
11. শরীরের অন্যান্য স্থানে কোন ইনজুরি থাকলে চিকিৎসা করতে হবে এবং Sepsis প্রতিরোধ করতে হবে।
12. গ্যাংগ্রীন ও টিটেনাস প্রতিরোধ করতে হবে।
প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গে জোড়া না লাগার ক্ষেত্রের ব্যবস্থাপনা কি? ১০
দেরীতে জোড়া লাগা এবং জোড়া না লাগা (Delayed and Non- Union):
অস্থিভঙ্গের জোড়া না লাগা (Nonunion) একটি জটিল সমস্যা, যেখানে ভাঙা হাড় সঠিকভাবে বা সম্পূর্ণভাবে মিলিত হয় না, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে অস্থিরতা বা অক্ষমতা হতে পারে। এটি সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা দাবি করে। অস্থিভঙ্গের জোড়া না লাগার বিভিন্ন কারণ হতে পারে, যেমনঃ উপযুক্ত চিকিৎসার অভাব, অপ্রতুল ফিক্সেশন, বা রোগীর শারীরিক অবস্থা (যেমন ডায়াবেটিস বা অপুষ্টি)। জোড়া না লাগার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো হাড়ের সুস্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং রোগীর কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা।
অস্থিভঙ্গের জোড়া না লাগার ব্যবস্থাপনা:
কনজারভেটিভ চিকিৎসা (Conservative Treatment):
- ব্রেস বা প্লাস্টার কাস্ট: শুরুতে যদি রোগী উন্নতি না দেখায়, তবে সঠিক অবস্থানে রাখার জন্য প্লাস্টার কাস্ট বা ব্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এই চিকিৎসা তখনই প্রয়োগ করা হয়, যখন ফ্র্যাকচারটি স্বাভাবিক ফিক্সেশনে ফেরানোর সম্ভাবনা থাকে।
- ফিজিওথেরাপি: পেশী শক্তি বৃদ্ধি এবং জয়েন্টের নমনীয়তা ফিরে পেতে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা (Surgical Treatment): যদি কনজারভেটিভ পদ্ধতিতে কাজ না হয়, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে:
অপেন রিডাকশন এবং ফিক্সেশন (Open Reduction and Fixation): এই পদ্ধতিতে, ভাঙা হাড়ের অংশগুলোকে খুলে সঠিকভাবে স্থাপন করা হয় এবং তারপর পিন, স্ক্রু, প্লেট বা ইন্টারমেডুলারি রডের সাহায্যে ফিক্স করা হয়।
বোন গ্রাফট (Bone Graft): কখনও কখনও হাড়ের জোড়া না লাগার কারণ হতে পারে অপ্রতুল হাড়ের টিস্যু। এই অবস্থায়, বোন গ্রাফট (হাড়ের নতুন টুকরো) ব্যবহার করা হয়। গ্রাফটটি রোগীর নিজস্ব হাড় থেকে বা ডোনার হাড় থেকে নেওয়া হতে পারে, যাতে হাড়ের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান প্রদান করা হয়।
স্টেম সেল থেরাপি (Stem Cell Therapy): কিছু ক্ষেত্রে, স্টেম সেল থেরাপি ব্যবহার করা হয় যাতে হাড়ের নতুন কোষ তৈরি হতে পারে এবং জোড়া লাগার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
এক্সটার্নাল ফিক্সেটর (External Fixator): যদি ভাঙা হাড়গুলি অপারেটিভ পদ্ধতিতে একত্রিত না হয়, তবে এক্সটার্নাল ফিক্সেটর ব্যবহার করা হতে পারে। এটি বাইরের দিক থেকে ফ্র্যাকচারকে স্থিতিশীল রাখে এবং আঘাতপ্রাপ্ত হাড়ের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
মেডিকেশন (Medications):
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি: হাড়ের সুস্থ বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সহ বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হতে পারে। এটি হাড়ের পুনঃগঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে।
বসোসেপটিভ ড্রাগস (Osteoactive Drugs): কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসকরা এমন ঔষধ দিতে পারেন যা হাড়ের বৃদ্ধি বা পুনঃগঠন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে, যেমন প্যারাথাইরয়েড হরমোন বা প্রোলোটিক।
চিকিৎসার ফলাফল এবং মনিটরিং (Treatment Outcomes and Monitoring):
- রোগীকে নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে পর্যালোচনার জন্য আসতে হবে যাতে চিকিৎসার অগ্রগতি দেখা যায় এবং যেকোনো জটিলতা বা অসুবিধা সময়মতো চিহ্নিত করা যায়।
- রেডিওগ্রাফ (X-ray) বা অন্যান্য ইমেজিং পদ্ধতি দ্বারা হাড়ের অবস্থার পর্যালোচনা করা হয়।
জোড়া না লাগার সম্ভাব্য কারণ:
- অপর্যাপ্ত ফিক্সেশন
- ক্যালসিয়ামের অভাব
- প্রাথমিক চিকিৎসার ভুল বা অপ্রতুলতা
- সংক্রমণ
- বয়স্কতা বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যাসমূহ (যেমন ডায়াবেটিস, অ্যালকোহল বা ধূমপান)
- অপুষ্টি বা হাড়ের দুর্বলতা
প্রশ্ন: গ্রীণস্টিক ফ্রাকচার কি? এর ব্যবস্থাপনা লিখ।০৮ গ্রীণস্টিক ফ্রাকচার:
রেডিয়াস ও আলনার শ্যাফ্ট এর ফ্রাকচারকে গ্রীণস্টিক ফ্রাকচার বলে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ফ্রাকচার কমন দেখা যায়। খেলাধুলার সময়, সামান্য উঁচু থেকে পড়ার কারণে ইহা হতে পারে।
গ্রীণস্টিক ফ্রাকচার ব্যবস্থাপনা:
(i) অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাড় সেট করার পর প্লাস্টার ব্যান্ডেস করে কনুই ভাঁজ করে বাহুর মধ্যস্থলে অনড় অবস্থায় রাখতে হবে।
(ii) যখন দুইটি হাড় ভেঙ্গে যায়, তখন অপারেশন করে প্লেট ও স্ত্র দ্বারা আঁটকিয়ে সেট করে দিতে কবে।
(iii) প্লাস্টার করে ৪-৬ সপ্তাহ রেখে দিলে জোড়া লেগে যায়।
প্রশ্ন: কলিস ফ্রাকচার কাকে বলে? এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
কলিস ফ্রাকচার: আব্রাহাম কলিস নামে ডাবলিনের একজন সার্জন এই ফ্রাকচারের বর্ণনা দেন, তাঁর নামানুসারে এ ফ্রাকচারকে কলিস ফ্রাকচার বলা হয়। হাতের কব্জি সন্ধির ১.৫ ইঞ্চি উপরে রেডিয়ামে এ ফ্রাকচার
হয়। একে কলিস ফ্রাকচার বলে।
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) বয়স্ক মহিলাদের কমন।
(ii) আঘাতের ইতিহাস পাওয়া যাবে। আঘাতের পরিমাণ, ডিসপ্লেসমেন্টের পরিমাণ এবং আঘাত ও ক্ষত কতদিন আগে হয়েছে তার উপর লক্ষণাবলী নির্ভর করে।
(iii) স্থানীয়ভাবে ব্যথা থাকবে। (iv) আক্রান্ত স্থান ফোলে যাবে।
(v) আক্রান্ত স্থান নাড়াচড়ায় অস্বাভাবিক হবে। (vi) স্পর্শকাতর হবে। (vii) কার্যকরী ক্ষমতা লোপ বা কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হবে।
প্রশ্ন: কলিস ফ্রাকচারের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১৫
কলিস ফ্রাকচার: কজি অস্থি সন্ধির ঠিক উপরে ১ ইঞ্চির মধ্যে রেডিয়াস হাড় ভেঙ্গে গেলে, তাকে কলিস ফ্রাকচার বলে।
কারণ: আঘাত, দূর্ঘটনা ইত্যাদির কারণে হতে পারে।
লক্ষণ: স্থানীয়ভাবে ব্যথা, স্ফীতি, অস্বাভাবিক নড়াচড়া, স্পর্শকাতরা এবং কার্যকরী ক্ষমতা নষ্ট হয়।
ব্যবস্থাপনা:
(i) ব্যথা কমানোর জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(ii) ম্যানিপুলেশন দ্বারা রিডাকশন করে প্লাস্টার ব্যাক-স্লাব দ্বারা Immobilise করতে হবে। ফ্রাকচারের ২৪ ঘন্টা পরে এ ব্যাক-স্লাব সম্পূর্ণ করে Colle’s প্লাস্টারে রূপান্তরিত করতে হবে।
(iii) ম্যানিপুলেশন পদ্ধতিতে- জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়া দিয়ে হাত দ্বারা টেনে রিডাকশন করতে হবে। হ্যান্ডসেক পদ্ধতিতে হাত ধরে টেনে ধরতে হবে এবং আস্তে আস্তে ডিফরমিটি আরো বাড়াতে হবে। পরে রেডিয়াসের ছোট টুকরার পিছনে হাত দিয়ে সামনে ও নীচের দিকে এবং আলনার দিকে চাপ দিয়ে রিডাকশন করতে হবে। হাত সম্পূর্ণ প্রোনেশন করে লোয়ার সেগমেন্টের ulnar adduction করতে হবে। ডরসাল প্লাস্টার স্লাব দ্বারা Immobilise করতে হবে। এটি হাতের কজির রেডিয়াল পাশ দিয়ে ঘুড়িয়ে দিতে হবে। যাতে আলনার ডেভিয়েশন ঠিক থাকে। কুনুইর একটু নিচ থেকে মেটাকারপাল হেড পর্যন্ত বিস্তৃত প্লাস্টার করতে হবে। ২/৩ দিনের মধ্যে ফুলা কমে গেলে Full cast দিতে হবে। এ কাষ্ট ৬ সপ্তাহ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যাতে স্টিফনেস না হয়, সেজন্য স্কন্ধ, কুনুই ও আঙ্গুলের ব্যায়াম করতে হবে।
প্রশ্নঃ কলিস ফ্রাকচারের জটিলতা লিখ।
কলিস ফ্রাকচারের জটিলতা:
(i) জয়েন্ট স্টিফনেস :- বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হাত নড়াচড়া না করার ফলে এটি হয়। সাধারণতঃ স্কন্ধ, কুনুই ও আঙ্গুলের সন্ধি আক্রান্ত হয়।
(ii) সাদেক্স অ্যাট্রোফি (Sudeek’s atrophy) :- আক্রান্ত হাত
নড়াচড়া না করলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে স্টিফনেসের সঙ্গে
সঙ্গে হাতে ব্যথা হয়, ফুলে যায়, চকচক করে এবং গরম হয়। (iii) ভাঙ্গা অস্থির উপর ঘর্ষণের ফলে এক্সটেনসর পলিসিস লংগাস টেনডন ছিঁড়ে যায়।
(iv) ডিসপ্লেসমেন্ট মারাত্মক হলে মিডিয়ান নার্ভ, রেডিয়াল আর্টারী ও টেনডনের ইনজুরি হয়।
(v) ম্যাল-ইউনিয়ন।
হেড ইনজুরি (Head injury)
প্রশ্ন: হেড ইনজুরির সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ উল্লেখ কর। ০৯
হেড ইনজুরির সংজ্ঞাঃ
হেড ইনজুরি (Head Injury) হলো মাথার কোনো অংশে আঘাত বা চোট পাওয়া, যার মধ্যে মস্তিষ্ক, স্কালপ, স্কাল বা গাল মাংসপেশী আক্রান্ত হতে পারে। এটি হালকা আঘাত থেকে শুরু করে গুরুতর আঘাত পর্যন্ত হতে পারে এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বা অন্যান্য শারীরিক কাজের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
হেড ইনজুরির শ্রেণীবিভাগ:
হেড ইনজুরির শ্রেণীবিভাগ মূলত আঘাতের প্রকৃতি এবং তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত তিনটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা হয়:
১. হালকা মাথা আঘাত (Mild Head Injury):
- এই ধরনের আঘাতে মাথার বাইরের অংশে চোট বা আঘাত ঘটে, কিন্তু এতে মস্তিষ্কের কোনো গুরুতর ক্ষতি হয় না।
- সাধারণত রোগী কিছুটা মাথাব্যথা বা দুশ্চিন্তার অনুভব করতে পারেন, তবে দ্রুত সেরে ওঠেন।
- কনকাশন (Concussion) এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, যেখানে সাময়িকভাবে স্মৃতি সমস্যা বা মাথা ঘোরা অনুভূতি হয়।
২. মাঝারি মাথা আঘাত (Moderate Head Injury):
- এ ধরনের আঘাতে মস্তিষ্কের কিছু ক্ষতি হতে পারে, যেমন মস্তিষ্কের স্ফীত হওয়া বা ক্ষুদ্র অঙ্গ বা টিস্যুর ক্ষতি।
- রোগী বিভ্রান্তি, মাথাব্যথা, বমি, এবং সাময়িকভাবে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন।
- এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে আঘাতের অবস্থা মূল্যায়ন করা হয় এবং চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
৩. গুরুতর মাথা আঘাত (Severe Head Injury):
- এই ধরনের আঘাতে মস্তিষ্কে গুরুতর ক্ষতি হতে পারে, যেমন ব্রেন কন্টিউশন (Brain Contusion), ইনট্রাক্রানিয়াল হেমোরেজ (Intracranial Hemorrhage), বা ব্রেইন সোয়েলিং (Brain Swelling)।
- রোগী দীর্ঘস্থায়ীভাবে অজ্ঞান থাকতে পারেন, এবং জীবন-সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
- মস্তিষ্কের অপারেশন বা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
হেড ইনজুরির আরও কিছু শ্রেণীবিভাগ:
(i) খোলামেলা মাথা আঘাত (Open Head Injury):
- আঘাতের ফলে মাথার চামড়া বা স্কাল টুকরো ভেঙে যায় এবং মস্তিষ্কে ক্ষতি হতে পারে।
- সাধারণত সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে এবং অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
(ii) বন্ধ মাথা আঘাত (Closed Head Injury):
- মাথার বাইরের কোনো দৃশ্যমান ক্ষতি না হলেও মস্তিষ্কের ভিতরে আঘাত হতে পারে।
- এটি সাধারণত মস্তিষ্কের কম্পন বা স্কালের ভেতরে রক্তক্ষরণ ঘটায়, তবে চামড়ায় কোনো ক্ষত থাকে না।
মস্তিষ্ক, মাথার খুলি বা ইন্টার-সেরিব্রাল ভেসেল পৃথকভাবে বা একত্রে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে নিউরোনাল বিকৃতি হয়ে ক্লিনিক্যাল সাইন ও সিম্পটমস প্রকাশ করে, তাকে হেড ইনজুরি বলে।
(Head injury means injury to brain, skull or intracranial vessels either separately or together causing neuronal damage and producing clinical symptoms and sings.)
হেড ইনজুরি প্রধানতঃ তিন প্রকার। যথা-
(i) সেরিব্রালের আঘাত, (ii) ইন্টার ক্রেনিয়াল, (iii) ইন্টার স্কাল হেমোরেজ।
মেরুদন্ডের ইনজুরী (Spinal injury)
প্রশ্ন: মেরুদন্ডের ইনজুরী বর্ণনা দাও।
মেরুদন্ডের ইনজুরী বর্ণনা:
ট্রান্সর্ভাস এবং স্পাইনাস প্রোসেস ফ্রাকচার: ট্রান্সভার্স প্রসেস ফ্রাকচার শুধু লাম্বার রিজিয়ন এ ঘটে। সরাসরি আঘাতের ফলে ইহা ঘটে এবং কিডনীতে আঘাত লাগার খুবই সম্ভাবনা থাকে। কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার দরকার নাই। কিন্তু রোগীকে ২৪ ঘন্টার জন্য নজরে রাখতে হবে, কোন ভিসেরাল আঘাত হয়েছে কিনা দেখার জন্য। পিঠে সরাসরি আঘাত করলে স্পাইনাল প্রসেস ভেঙ্গে যেতে পারে।
ভার্টিব্রেরাল বডির ক্রাস ফ্রাকচার: পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় যে কোন সময় এই ফ্রাকচার হতে পারে। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই ফ্রাকচার হওয়ার জন্য অল্প আঘাতই যথেষ্ট। থোরাক্স-লাম্বার স্পাইনের যে কোন জায়গায় এই ফ্রাকচার হতে পারে। তবে নীচের দিকের থোরাসিক স্পাইনেই ইহা বেশী হয় এবং জোর করে স্পাইন ফ্লেক্সড (flexd) করলে এই ফ্রাকচার হয়। ভার্টিব্রাল বডি চুপসিয়ে wedge-shepe ধারণ এবং কাইফোসিস (kyphosis) যায়। উঁচু হতে পড়ে গেলে একাধিক ভার্টিব্রাল বডিতে এই ফ্রাকচার হতে পারে।
Incomplete spinal cord ইনজুরি:
এক্ষেত্রে cord-এর continuity থাকে। আংশিক কর্ড ইনজুরি ৪ প্রকারের হতে পারে- (১) এন্টিরিয়র কর্ড সিন্ড্রোম: এতে corticospinal এবং spinothalamic tracts আক্রান্ত হয়। এখানে দুর্বলতা এবং ব্যথা ও তাপানুভূতি লোপ পায়। পস্টেরিয়র কলামের দ্বারা জয়েন্ট পজিশন অনুভূতি এবং vibration অক্ষত থাকে।
(২) পস্টিরিয়র কর্ড সিন্ড্রোম: এখানে উপরের অবস্থার বিপরীত ঘটে। (৩) Brown-Sequard সিন্ড্রোম: এত কর্ডের hemisection ঘটে। এখানে আক্রান্ত পাশে দুর্বলতা এবং বিপরীত পাশে ব্যথা ও তাপানুভূতি লোপ পায়। স্পাইনাল কর্ডের penetrating ইনজুরিতে সাধারণতঃ এ সিন্ড্রোম দেখা যায়।
(৪) Central কর্ড সিন্ড্রোম: এটি বার্ধক্যে, সার্ভিক্যাল spondylosis এবং hyperextension ইনজুরিতে ঘটে। এখানে চার হাতপায়ে অসম্পূর্ণ paresis হয়, সঙ্গে বিক্ষিপ্ত sensory loss। লোয়ার লিম্বের তুলনায় আপার লিম্ব মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়। এখানে plantar reflex এক্সটেনসর হয় এবং spastic paresis-এর লক্ষণ থাকে। তবে অন্যান্যগুলোর তুলনায় এর প্রোগনোসিস ভাল।
Infections and tumours of bones and joints.
প্রশ্ন: টিউমার কি? এর শ্রেণীবিভাগ কর। ২০০৮, ১২ বা, টিউমার কাকে বলে?
টিউমার এর সংজ্ঞাঃ টিউমার হচ্ছে কোন টিস্যুর (Tissue) অস্বাভাবিক বর্ধন যেখানে কোষগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত বিভাজিত হয় এবং যে উত্তেজকের দ্বারা এই বৃদ্ধি সংঘটিত হয় তা সরিয়ে নিলেও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।
(A neoplasm is an abnormal mass of tissue, the growth of which exceeds and is uncoordinated with that of normal tissues and persists in the same excesssive manner often cessation of the stimuli which evoked the change. Exception for example carcinoma in situ is not mass.)
প্রশ্ন: টিউমারের কারণ লিখ। ১৬
টিউমারের কারণঃ
(i) বংশগত কারণে হতে পারে।
(ii) বিজ্ঞানীদের গবেষণায়- অনকোজিন নামক এক প্রকার জিনকে ইহার জন্য দায়ী করা হয়।
(iii) আঘাতজনিত কারণে হতে পারে।
(iv) খাদ্যে ভেজালজনিত কারণে হতে পারে।
(v) পরিবেশগত কারণে হতে পারে।
(vi) সাইকোসি মায়াজমের প্রভাব ইহার মূল কারণ।
প্রশ্নঃ টিউমারের শ্রেণীবিভাগ লিখ।
টিউমারের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Tumours):
1) আচরনের উপর ভিত্তি করে (Classification of behavior) : a) বিনাইন টিউমার (Benign tumour- নির্দোষ) : বিনাইন টিউমার তেমন ক্ষতিকারক নহে।
b) ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (Malignant tumour- ক্ষতিকারক): একটি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হতে পারে কার্সিনোমা (Carcinoma) অথবা সার্কোমা (Sarcoma).
=> এপিথেলিয়াম টিস্যুতে (Epithelial tissue) ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলে, তাকে কার্সিনোমা বলে।
=> মেসেনকাইমাল টিস্যুর (Mesenchymal tissue) ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলে, তাকে সার্কোমা (Sarcoma) বলে।
=> সব ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের নামই হচ্ছে ক্যান্সার (Cancer is the term for all malignant tumours)
2) Classification on tissue of origin:
a. Epilhelial Tumours.
b. Mesenchymal Tumours.
c. Mixed Tumours.
d. Tumours of totipoten cells- teratomas.
প্রশ্ন: বিনাইন টিউমার কাকে বলে?
বিনাইন টিউমার:
যে সকল টিউমারের টিউমার কোষ পারিপার্শ্বিক সুস্থ্য টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করে না, উৎপত্তি স্থলেই এরা সীমাবদ্ধ থাকে, অবক্ষয়ের জন্য কোষগুলি বিনষ্ট হয় কিন্তু সংযোজক টিস্যু অক্ষত থাকে এবং এ অক্ষত সংযোজক টিস্যু টিউমারের চারিপাশে আবরনী সৃষ্টি করে, তাকে বিনাইন টিউমার বলে।
প্রশ্ন : বিনাইন টিউমারের শ্রেণীবিভাগ কর।
বিনাইন টিউমারের শ্রেণীবিভাগ:
সাধারণতঃ বিনাইন শ্রেণীর টিউমার স্থান অনুযায়ী নামকরণ।
(i) ত্বকের টিউমার- Papilloma, (ii) মাংস পেশীর টিউমার- Myoma, (iii) আঁশপূর্ণ সংযোগকারী তন্তুর টিউমার- (Fibroma), ফ্যাটপূর্ণ স্থানের Lipoma (iv) অস্থির টিউমার- Chondroma এবং অষ্টিওমা Osteoma (v) গ্রন্থির টিউমার- Adenoma; (vi) স্নায়ুর টিউমার- Neuroma;
প্রশ্ন: বিনাইন টিউমারের বৈশিষ্ট্য লিখ।
বিনাইন টিউমারের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Benign Tumours):
(i) Differentiation- বিনাইন টিউমারকে সহজেই অন্য টিউমার থেকে আলাদা করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ- লিওমায়োমা
(Leiomyoma) স্বাভাবিক স্মর্থ মাসেলে হয়। ইহাতে এ্যানাপ্লাসিয়াস (আদি কোষান্তর) হয় না। মাইটোসিস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক।
(ii) a. Rate of growth- বিনাইন টিউমারের গ্রোথ ধীরগতি।
b. Size- বিনাইন টিউমার সাধারণতঃ ছোট হয় কিন্তু ইউটেরাস
ফাইব্রয়েড ও ওভারীয়ান সিস্টোঅ্যাডেনোমাস (Cystademomas) খুব বড় সাইজের হয়।
c. Stroma is well-formed (ভিত্তি তন্ত্র স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে)
(iii) a. Capsule (কোষ)- বিনাইন টিউমার ক্যাপসুল দ্বারা আবৃত থাকে। কানেকটিভ টিস্যুর উপর চাপ দেয়। হোস্ট টিস্যু (Host Tissue) থেকে টিউমারকে আলাদা করে ক্যাপসুল।
b. No local invasion in the surrounding tissue.
(iv) No metastasis (মেট্যাস্টোসিস)- বিনাইন টিউমার মেট্যাস্টোসিস হয় না।
(v) Clinical effects: খুবই নির্দোষ কিন্তু মাঝে মধ্যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের সংজ্ঞা লিখ।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের সংজ্ঞা:
যে সকল টিউমার উৎপন্ন স্থানে আবদ্ধ থাকে না এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়, পারিপার্শ্বিক সুস্থ্য টিস্যু আক্রান্ত হয়, আক্রান্ত কোষগুলি ব্লাড ভেসেলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কারণে শরীরে অন্যান্য স্থানের টিস্যুতে বা দেহাঙ্গে টিউমার সৃষ্টি করে, তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে। এরা উৎপত্তি স্থান থেকে এরা সীমাবদ্ধ থাকে না, প্রত্যক্ষভাবে শিরা পথে রক্ত প্রবাহের সঙ্গে এবং লসিকা নালী পথ দিয়ে বিস্তার লাভ করে।
প্রশ্ন: ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্য লিখ।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্য (Charactereistics of Malignant tumours):
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ৪টি ফেজ এ বিভক্ত (four phases)। যথা-
i) Transformation, i.e, malignant change in the target cells.
ii) Growth of the tansformed cells.
iii) Local invasion and
iv) Metastasis
প্রশ্ন : বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ০৮,১২, ১৬
বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মধ্যে পার্থক্য:
বিষয় | বিনাইন টিউমার | ম্যালিগন্যান্ট টিউমার |
---|---|---|
প্রকৃতি | অ-ক্যান্সারজনিত, ক্ষতিকর নয়। | ক্যান্সারজনিত, অত্যন্ত ক্ষতিকর। |
কোষ বিভাজন | ধীরে ধীরে বিভাজন ঘটে। | দ্রুত এবং নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বিভাজন ঘটে। |
আকৃতি ও গঠন | কোষগুলো সুসংগঠিত ও নিয়মিত। | কোষগুলো অনিয়মিত ও অপ্রাকৃত। |
প্রসারিত হওয়া | স্থানীয় থাকে, শরীরের অন্যত্র ছড়ায় না। | শরীরের অন্যান্য অংশে মেটাস্ট্যাসিসের মাধ্যমে ছড়ায়। |
ঘেরাবৃত্তি (Capsule) | প্রায়শই একটি ক্যাপসুল দ্বারা আবৃত। | ক্যাপসুল থাকে না এবং আশেপাশের টিস্যুতে প্রবেশ করে। |
প্রভাব | সাধারণত আশেপাশের টিস্যুকে ক্ষতি করে না। | আশেপাশের টিস্যু এবং অঙ্গকে ধ্বংস করে। |
শল্যচিকিৎসা (Surgery) | সহজে অপসারণ করা যায় এবং পুনরায় ফিরে আসে না। | অপসারণ জটিল এবং পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে। |
জীবন ঝুঁকি | সাধারণত জীবনহানিকর নয়। | জীবনহানিকর এবং প্রাণঘাতী। |
প্রশ্নঃ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের শ্রেণিবিভাগ লিখ। ০৯
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের শ্রেণিবিভাগ:
১। কার্সিনোমা (Carcinoma):
(i) স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা (Squamous cell carcinoma)
(ii) বেসাল সেল কার্সিনোমা (Basal cell carcinoma)
(iii) ট্রান্সিশনাল সেল কার্সিনোমা (Transitional cell carcinoma)
(iv) এডেনোকার্সিনোমা (Adenocarcinoma)
(v) সিস্টএডেনোকার্সিনোমা (Cystadenocarcinoma)
(vi) পেপিলারী কার্সিনোমা (Papillary carcinoma)
২। সার্কোমা (Sarcoma)
(i) ফাইব্রোসার্কোমা (Fibrosarcoma)
(ii) লিপোসার্কোমা (Liposarcoma)
(iii) লিওমায়োসার্কোমা (Leiomyosarcoma)
(iv) (Rhabdomyosarcoma)
(v) এনজিওসার্কোমা (Angiosarcoma)
(vi) লিম্ফোএনজিওসার্কোমা (Lymphangiosarcoma)
(vii) অস্টিয়োসার্কোমা (Osteosarcoma)
(viii) কন্ডোসার্কোমা (Chondrosarcoma)
(ix) ম্যালিগন্যান্ট মেনিনজিওমা (Malignant meningioma)
(x) লিউকেমিয়া (Leukaemia)
(xi) লিম্ফসাইটিক লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা। (Lymphocytic leukaemia and lymphoma)
(xii) (Malignant mixed tumour of salivary gland)
প্রশ্নঃ কার্সিনোমা ও সার্কোমার মধ্যে পার্থক্য লিখ। ০৮, ০৯
কার্সিনোমা ও সার্কোমার মধ্যে পার্থক্য:
বিষয় | কার্সিনোমা (Carcinoma) | সার্কোমা (Sarcoma) |
---|---|---|
উৎপত্তি স্থল | এপিথেলিয়াল কোষ থেকে উৎপত্তি। | কানেকটিভ টিস্যু, যেমন হাড়, পেশি, বা কার্টিলেজ থেকে উৎপত্তি। |
প্রভাবিত টিস্যু | ত্বক, গ্ল্যান্ড, অঙ্গের অভ্যন্তর স্তর (যেমন লিভার, কিডনি)। | হাড়, পেশি, ফ্যাট টিস্যু, রক্তনালী, কার্টিলেজ। |
সাধারণতা | সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার ধরনের একটি। | তুলনামূলকভাবে বিরল। |
বয়সের সাথে সম্পর্ক | সাধারণত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। | যে কোনো বয়সে দেখা যেতে পারে, তবে তরুণদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি। |
প্রবণতা | ধীরে ধীরে বিকাশ ঘটে। | দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। |
মেটাস্ট্যাসিস | সাধারণত লিম্ফ নোডের মাধ্যমে ছড়ায়। | রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে ছড়ানোর প্রবণতা বেশি। |
প্রতিকার ও চিকিৎসা | অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি, এবং রেডিয়েশন সাধারণত কার্যকর। | চিকিৎসা তুলনামূলক জটিল এবং কেমোথেরাপি কম কার্যকর হতে পারে। |
উদাহরণ | স্তন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার। | অস্টিওসার্কোমা (হাড় ক্যান্সার), লিপোসার্কোমা (ফ্যাট টিস্যুর ক্যান্সার)। |
প্রশ্ন : অস্টিওসারকোমা-এর লক্ষণাবলি/ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।০৮
অস্টিওসারকোমা-এর ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) আঘাতের ইতিহাস থাকতে পারে।
(ii) বয়স : ১০ থেকে ২০ বৎসর, ২০ বৎসর বয়সের আগেই প্রায় ৮০% রোগী ডাক্তারের কাছে আসে। ম্যালিগন্যান্ট ডিজিজ বা Paget’s ডিজিজে অতিরিক্ত রেডিরেশন দেয়ার ফলে বৃদ্ধ বয়সে হতে পারে। এগুলো খুবই ম্যালিগন্যান্ট এবং fatal।
(iii) অস্টিওসারকোমা সাধারণতঃ লং বোনের মেটাফাইসিসে (অনেক সময় হাটুর চতুর্পাশে) ব্যথাযুক্ত, দ্রুতবর্ধনশীল টিউমার নিয়ে চিকিৎসকের নিকট আসে। আক্রান্ত বোনে সার্বক্ষণিক ব্যথা থাকে।
(iv) ফুলা: ব্যথার পর এটি দেখা দেয় ও খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অনেক বড় আকারের হতে পারে। এর consistency firm হতে পারে এবং স্থানীয় তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
(v) টিউমারে থ্রিল, পালসেশন বা মারমার থাকতে পারে (অতিরিক্ত
ভাসকুলারিটির কারণে)।
(vi) টিউমারের উপরের ত্বক টানটান হয় এবং চক্চক্ করে। ভেইনগুলো স্পষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত ত্বকে ক্ষত হয়।
(vii) প্যাথলজিক্যাল ফ্রাকচার তেমন হয় না।
(viii) শেষ পর্যায়ে বুকে ব্যথা, কাঁশি, কাঁশির সঙ্গে রক্ত, অল্প অল্প জ্বর দেখা দেয় (ফুসফুসে মেটাসটেসিসের কারণে)।
প্রশ্নঃ অস্টিওসারকোমা-এর লক্ষণাবলি ও ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৮
মেটাস্টেসিস বিহীন :
(১) প্রাথমিক deep X-Ray থেরাপিঃ- স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা হয়। ৪-৬ সপ্তাহ পর মেটাস্টেসিসের জন্য চেকআপ করতে হয়। মেটাসটেসিস না থাকলে এক জয়েন্ট উপরে অ্যাম্পুটেশন করা হয়। অথবা সঙ্গে সঙ্গে এক জয়েন্ট উপরে অ্যাম্পুটেশন করতে হবে।
মেটাস্টেসিস সহ : Deep X-Ray থেরাপি এবং অ্যাম্পুটেশন (টিউমারে ভীষণ ব্যথা বা fungating হলে palliative measure হিসেবে)
ব্যবস্থাপনা:
১। লক্ষণানুসারে প্রযোজ্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ : কার্বো এনিমেলিস, অরাম মেট, আয়োডিয়াম, ফসফরাস, সিম্ফাইটাম।
২। চিকিৎসা সাধারণতঃ রেডিক্যাল লোকাল সার্জারি ও কেমোথেরাপি একসঙ্গে দেয়া হয়। তবে amputation দরকার হতে পারে।
১২। প্রশ্ন: উইংস টিউমা-এর প্যাথলজি লিখ।
প্যাথলজি
খালি চোখে:
(i) হালকা ধূসর রং (দেখতে ব্রেন টিস্যুর মত)। ডিজেনারেশন কমন এবং ডিজেনারেটিভ টিস্যু পূজ এর মত দেখায়।
(ii) বোন destruction এবং পেরিঅস্টিয়ামের নীচে নতুন বোন ফরমেশন একই সঙ্গে দেখা যায়।
(iii) টিউমার অনেক বড় ও লবুলেটেড, সঙ্গে হেমোরেজিক এরিয়া
থাকে।
অনুবীক্ষণ যন্ত্রে : Stroma থাকে না। টিউমার সেলগুলো গোলাকার বা পলিহাইড্রাল, নিউক্লিয়াস গাঢ় রং নেয় এবং মাইটোসিস দেখা যায়।
সেলগুলো ব্লাড ভেসেলের চতুর্পাশে সাজানো থাকে।
প্রশ্নঃ উইংস টিউমা-এর বিস্তার লিখ।
বিস্তার:
(i) রক্তের মাধ্যমে অন্যান্য বোনে এবং শেষে ফুসফুসে।
(ii) লিম্ফেটিক দ্বারা কদাচিৎ।
(iii) সরাসরি infiltration
প্রশ্ন: উইংস টিউমা-এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) বয়স- ৫ থেকে ১৫ বৎসর (কমন)। আঘাতের ইতিহাস থাকতে পারে।
(ii) কমন site-লং বোনের shaft
(iii) লং বোনের মাঝামাঝি জায়গায় পুনঃ পুনঃ ব্যথা এবং সঙ্গে জ্বর। Throbbing ব্যথা হয় এবং রাত্রে বৃদ্ধি পায়। ব্যথার সময় swelling-
এর আকার বৃদ্ধি পায় এবং পরে ছোট হয়ে যায়। (৪) আস্তে আস্তে swelling ফেটে যায় এবং ত্বক fungate করে
(সাধারণতঃ সার্জিক্যাল exploration না করলে এটি ঘটে না)।
(৫) ধীরে ধীরে অন্যান্য বোনেও ব্যথা এবং ফুলা দেখা দেয়। প্যাথলজিক্যাল ফ্রাকচার কমন।
(৭) এনিমিয়া ও লিউকোসাইটোসিস থাকে।
(৮) X-Ray- বোন ফরমেশন ও বোন ডেস্ট্রাকশন একই সঙ্গে দেখা যায়।
চিকিৎসা: কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি দ্বারা ভাল ফল পাওয়া
যায়। অ্যাম্পুটেশন করারও প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।
স্তন ক্যান্সার (Breast – Infections and tumours of breast.)
প্রশ্নঃ স্তন ক্যান্সার কি?
স্তন ক্যান্সার: স্তন ক্যান্সার (Breast Cancer) হলো স্তনের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিভাজন, যা ক্রমে একটি টিউমারে পরিণত হতে পারে এবং অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্তন ক্যান্সার সাধারণত স্তনের দুধ তৈরির গ্রন্থি বা স্তনের রক্তনালীর কোষে শুরু হয়। এটি মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার হলেও পুরুষদের ক্ষেত্রেও এটি হতে পারে, যদিও খুব কম ক্ষেত্রে।
স্তন ক্যান্সারের কারণ:
স্তন ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও সম্পূর্ণরূপে জানা যায়নি, তবে কিছু উপাদান রয়েছে যা এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়:
- বয়স: ৫০ বছরের উপরের মহিলাদের মধ্যে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
- জেনেটিক ফ্যাক্টর: ব্র্যাক ১ এবং ব্র্যাক ২ (BRCA1 and BRCA2) নামক জেনেটিক মিউটেশন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
- পারিবারিক ইতিহাস: স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকা পরিবারে থাকা ব্যক্তিদের ঝুঁকি বেশি।
- হরমোনাল ফ্যাক্টর: মেনোপজের আগে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল শুরু বা প্রথম গর্ভধারণের বয়স বেশি হওয়া, দীর্ঘ সময় ধরে ইস্ট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরন হরমোনের ব্যবহার ইত্যাদি।
- অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান, ওজন বেশি হওয়া এবং শারীরিক সক্রিয়তার অভাব।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ:
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলো বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং এগুলো সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:
- স্তনে বা নিপলে একটি শক্ত দলা বা গুটি অনুভূত হওয়া।
- নিপল থেকে রক্ত বা অস্বাভাবিক স্রাব নির্গত হওয়া।
- স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন।
- নিপল বা স্তনের ত্বকে পরিবর্তন (যেমন, ঝুলে যাওয়া বা লালচে হওয়া)।
- বিভিন্ন সময়ে স্তনে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হওয়া।
স্তন ক্যান্সারের শ্রেণীবিভাগ:
স্তন ক্যান্সারকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
ইনভেসিভ (Invasive) স্তন ক্যান্সার: এই ধরনের ক্যান্সার স্তনের ভিতরের কোষ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আশেপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে। সবচেয়ে সাধারণ ইনভেসিভ স্তন ক্যান্সার হল ডাকটাল কারসিনোমা ইনভেডিং (Invasive Ductal Carcinoma – IDC)।
নন-ইনভেসিভ (Non-invasive) স্তন ক্যান্সার: এটি স্তনের কোষে সীমাবদ্ধ থাকে এবং আশেপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে না। সবচেয়ে সাধারণ নন-ইনভেসিভ ক্যান্সার হল ডাকটাল কারসিনোমা ইন সিটু (DCIS)।
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা:
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে ক্যান্সারের স্তর এবং রোগীর স্বাস্থ্য অবস্থার ওপর। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:
- সার্জারি: ক্যান্সার আক্রান্ত স্তন বা তার অংশ অপসারণ করা।
- কেমোথেরাপি: ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে ঔষধ ব্যবহার করা।
- রেডিওথেরাপি: রেডিওএকটিভ বিকিরণ দ্বারা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা।
- হরমোন থেরাপি: ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনকে ব্লক করে।
- টার্গেটেড থেরাপি: নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার কোষে হামলা করা, যাতে কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়।
ম্যালিগন্যান্ট রোগে মহিলাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ স্তন ক্যান্সার। যে সকল মহিলা সন্তান প্রসব করেছে এবং স্তন্য দান করেছে, তাদের তুলনায় নিঃসন্তান মহিলাদের মধ্যে এটা বেশি হয়। স্তন ক্যান্সারের সকল রোগীর মধ্যে ১% এর কম হচ্ছে পুরুষ রোগী। ৪০- ৫০ বৎসর বয়সীদের মধ্যে এটি কমন রোগ।
প্রশ্নঃ স্তন ক্যান্সারের শ্রেণিবিভাগ লিখ।
স্তন ক্যান্সারের শ্রেণিবিভাগ:
ক) ম্যাক্রোস্কোপিক শ্রেণী বিভাগঃ
(i) স্কিরাস কার্সিনোমা এ জাতীয় ক্যান্সারই সবচেয়ে বেশী হয়। টিউমার ছোট এবং শক্ত হয়। এটি কাটার সময় কাঁচা pear এর মত মনে হয়। এর খন্ডিত সারফেস দেখতে ধূসর, কনকেভ এবং হলুদ এরিয়া বিশিষ্ট।
(ii) অ্যাট্রোফিক স্কিরাসঃ ছোট স্তন বিশিষ্ট বৃদ্ধা মহিলাদের মধ্যে এগুলো বেশী দেখা যায়।
(iii) মেডুলারী কার্সিনোমা : টিউমার বড়, নরম এবং ধূসর প্রকৃতির।
খন্ডিত সারফেসে রক্ত ক্ষরণ ও পচন দেখা যায়।
(iv) প্যাপিলারী কার্সিনোমা : এটা ইন্ট্রাডাক্টাস বা ইন্টাসিস্টিক হতে পারে।
(v) একিউট ইনফ্লেমেটরী কার্সিনোমা : এটি দ্রুত বর্ধনশীল, খুবই অ্যানাপ্লাস্টিক টিউমার। গর্ভকালীন সময়ে বা ল্যাকটেশনের সময়ে এটা সচরাচর দেখা যায়।
খ) মাইক্রোস্কোপিক শ্রেণীবিভাগ:
স্তনের ক্যান্সার ডাক্ট বা অ্যালভিওলার ইপিথেলিয়াম বা স্তনের বোটার ডাক্টের হতে উৎপত্তি হয়।
(i) অ্যাডিনোকার্সিনোমা : এর acini গুলির গঠন ভালভাবে দেখা যায়।
(ii) স্ফেরোয়ডাল সেল কার্সিনোমা: স্কেরোয়ডাল সেলগুলি জটলা আকারে বা স্তম্ভাকারে সাজানো থাকে এবং কদাচিৎ acinus তৈরী করার উদ্যোগ দেখা যায়।
(iii) এনাপ্লাস্টিক কার্সিনোমা (মেডুলারী, এনসেফালয়েড): এটি খুবই সেল সমৃদ্ধ এবং infiltrate করে।
(iv) কলোয়েড কার্সিনোমা : এতে কলোয়েড ডিজেনারেশন ঘটে এবং টিপিক্যাল সিগনেট রিং সেল পাওয়া যায়।
(v) ইন্ট্রাডাক্ট কার্সিনোমা: এটি বড় আকারের মিল্ক ডাক্টে হয়। এটি এমনি এমনিও হতে পারে অথবা ডাক্ট প্যাপিলোমার ম্যালিগন্যান্ট ডিজেনারেশনের পরেও হতে পারে।
(vi) স্কোয়ামাস কার্সিনোমা : ডাক্ট এপিথেলিয়ামে স্কোয়ামাস মেটাপ্লাসিয়া হওয়ার পর হতে পারে।
(vii) প্যাপিলারী সিস্ট অ্যাডেনোকার্সিনোমা।
(viii) প্যাজেট্স ডিজিজ : ইন্ট্রাডাক্ট্রয়াল নিওপ্লাজমসহ এখানে হিস্টোলজীক্যালী ইন্ট্রা-ইপিডারমাল বিস্তৃতি দেখা যায়।
প্রশ্নঃ স্তন ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮
স্তন ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:
স্তন ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল ফিচার (Breast Cancer Clinical Features) সাধারণত ক্যান্সারের স্তর, তার অবস্থান, এবং অন্যান্য বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে স্তন ক্যান্সারের কিছু সাধারণ ক্লিনিক্যাল ফিচার রয়েছে, যা রোগী বা চিকিৎসকের নজরে আসে:
১. স্তনে বা নিপলে একটি গুটি বা কঠিন দলা (Lump or Hard Mass): স্তনে একটি দৃঢ়, বেদনা নাহীন গুটি বা দলা অনুভূত হওয়া। এটি সাধারণত নড়াচড়ার মতো অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। গুটিটি সাধারণত ব্যথাহীন, তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
২. নিপল থেকে অস্বাভাবিক স্রাব (Abnormal Nipple Discharge): স্তনের নিপল থেকে রক্ত, তরল বা হলুদ স্রাব নির্গত হতে পারে, যা সাধারণত ক্যান্সারের উপস্থিতির একটি সংকেত হতে পারে। স্রাবটি বিশেষত একদিকে নিপল থেকে বের হতে দেখা যায়।
৩. স্তনের আকৃতিতে বা আকারে পরিবর্তন (Changes in Size or Shape of the Breast): স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তন হতে পারে, যেমন একটি স্তন অন্যটির তুলনায় বড় বা ছোট হয়ে যাওয়ার মতো। স্তনের ত্বক চিটচিটে বা স্থূল হয়ে যেতে পারে। স্তনের ত্বক সঙ্কুচিত হয়ে বা গা dark ় হতে পারে (orange peel appearance)।
৪. নিপল বা স্তনের ত্বকের রুক্ষতা ও লালভাব (Skin or Nipple Changes): স্তনের ত্বক বা নিপলে লালচে বা রুক্ষতার অনুভূতি হতে পারে। স্তনে বা নিপলে দাগ বা প্রদাহ দেখা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, স্তনের ত্বক গর্তযুক্ত বা কুঁচকে যেতে পারে।
৫. শরীরের অবসাদ (Fatigue or Body Weakness): কিছু রোগী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর অবসাদ বা অস্বস্তির অনুভূতি জানাতে পারেন, যা অনেক সময় ক্যান্সারের আক্রমণ বা চিকিত্সার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
৬. অস্বাভাবিক স্তন ব্যথা (Pain or Tenderness in the Breast): কিছু ক্ষেত্রে, স্তনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তবে, স্তন ক্যান্সার সাধারণত ব্যথাহীন হলেও, কিছু রোগী স্তনের যে কোনো অংশে তীব্র ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
৭. অঙ্গজ তন্তু বা লিম্ফ নোডের স্ফীতি (Swelling of Lymph Nodes): ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে, বিশেষ করে আন্ডারআর্মে (অ্যাক্সিলা) বা ঘাড়ে লিম্ফ নোড স্ফীত হতে পারে। এটি একটি সংকেত হতে পারে যে ক্যান্সার মেটাস্টেসিস করেছে (অর্থাৎ অন্যান্য অঙ্গ বা অংশে ছড়িয়ে পড়েছে)।
৮. স্তনের ত্বকের লালচে বা ঝুলে যাওয়ার অনুভূতি (Skin Redness or Pitting): স্তনের ত্বকে লালচে ভাব সৃষ্টি হতে পারে। স্তনের ত্বক সঙ্কুচিত হয়ে যেতে পারে, যা অরেঞ্জের খোসার মতো দেখতে হতে পারে।
৯. ভোঁতা নিপল (Inverted Nipple) নিপল যদি অভ্যন্তরে ফিরে যায় বা স্তনের অন্য অংশ থেকে আলাদা হয়ে যায়, তবে এটি স্তন ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে।
১০. রক্তের উপস্থিতি (Presence of Blood): নিপল থেকে রক্তক্ষরণের পরিমাণ বাড়লে, এটি একটি গুরুতর সংকেত হতে পারে, যা ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।
১১. ব্যথা বা অস্বস্তি (Pain or Discomfort): যদিও স্তন ক্যান্সার সাধারণত ব্যথাহীন থাকে, কিছু ক্ষেত্রে, ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত অংশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে, বিশেষ করে যদি ক্যান্সার বর্ধিত হয়ে থাকে এবং নিকটবর্তী টিস্যুতে চাপ সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন: স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা লিখ।
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা:
স্টেজ – ১ এবং স্টেজ-২: অধিকাংশ সার্জন এ দুই স্টেজে রেডিকেল মাস্টেকটমি পছন্দ করেন এ অপারেশনে সম্পূর্ণ স্তনের সঙ্গে পেকটোরালিস মেজোর, মাইনর মাংসপেশী এবং এক্সিলারী চর্বিসহ লিম্ফ নেড ফেলে দেয়া হয়।
স্টেজ-২ এই অপারেশনের পরে ইন্টারন্যাল ম্যামারী ও সুপরাক্লাভিকুলার লিম্ফ নোড এরিয়ায় রেডিওথেরাপি দিতে হবে। সম্প্রতি স্টেজ-১ ও স্টেজ-২ তে রেডিকেল মাস্টেকটমির পরিবর্তে সিম্পল মাস্টেকটমি এবং রেডিওথেরাপি দেয়ার কথা বলা হচ্ছে।
স্টেজ-৩: প্রইমারী টিউমার ফেলে দিলেই ভাল হওয়া সম্ভব নয় বিধায় রেডিকেল মাস্টেকটমি করা ঠিক নয়। প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা হিসেবে স্থানীয় রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। Fungating আলসার
সরিয়ে ফেলার জন্য প্রাইমারী টিউমার অনেক সময় অপারেশন করে ফেলে দিতে হবে।
স্টেজ-৪: এই স্তরে পেলিয়েটিভ রেডিওথেরাপি ও হরমোন থেরাপি দেয়া হয়। হরমোনাল ও কেমোথেরাপি সবল স্টেজেই (১ থেকে৪) দেয়া যায়।
Diseases of alimentary tract ক্যান্সার অব ইসোফেগাস (Cancer of Oesophagus)
প্রশ্নঃ ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর সংজ্ঞা লিখ।
ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর সংজ্ঞা: ইসোফেগাসের (অন্ননালী) ভিতরে বা বাহিরে এক প্রকার মেলিগন্যান্ট টিউমার সৃষ্টি হয়ে তা ক্রমশঃ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে ইহার স্বাভাবিক কোষসমূহকে অস্বাভাবিক আকৃতির ও ম্যালিগন্যান্ট করে, ক্যান্সার অব ইসোফেগাস বা অন্ননালীর ক্যান্সার বলে।
প্রশ্নঃ ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর কারণতত্ত্ব লিখ।
ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর কারণতত্ত্ব:
(i) অনকোজিন ইহা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
(ii) বংশগত কারণে
(iii) পরিবেশগত কারণে
(iv) অভ্যাসগত কারণ- ধুমপান, পানের জৰ্দ্দা, এলকোহল সেবন।
(v) অতিরিক্ত মানসিক উত্তেজনা, অশান্তি এবং পারিবারিক কোলহল।
(vi) ইসোফেগাসে ঘন ঘন প্রদাহ
প্রশ্ন: ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর শ্রেণিবিভাগ লিখ।
ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর শ্রেণিবিভাগ:
ক্যান্সার অব ইসোফেগাস ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
(i) সিরাস ক্যান্সার, (ii) মেডুলারী ক্যান্সার,
(iii) আলসারেটিভ ক্যান্সার, (iv) কোলইড ক্যান্সার।
(iv) গ্যাস্ট্রো-জেজুনোস্টমি স্ট্রমা (Jejunum after surgical abastoasis to stomach)
(v) মেকেল’স ডাইভারটিকুলাম। [Ileum adjacent to a mackelis diverticulum (rarely).]
প্রশ্ন: পেপটিক আলসারের কারণসমূহ উল্লেখ কর। ১১ বা, এন্টিরিক পারফোরেশনের এর কারণ লিখ। ১৮
পেপটিক আলসারের কারণসমূহ (Aetiology of peptic ulcer):
পেপটিক আলসার (Peptic Ulcer) হলো পেট বা অন্ত্রের শ্লেষ্মা স্তরের ক্ষতি যা হজম প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত এসিডের প্রভাব থেকে হয়। এটি সাধারণত পেট বা ডুওডেনামের (small intestine-এর প্রথম অংশ) মধ্যে তৈরি হয়।
পেপটিক আলসারের কারণসমূহ নিম্নরূপ:
১. হেলিকোবাক্টর পাইলোরি (Helicobacter pylori) ইনফেকশন: হেলিকোবাক্টর পাইলোরি হলো এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা পেটের শ্লেষ্মার মধ্যে বাস করে এবং এর উপস্থিতি পেপটিক আলসারের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই ব্যাকটেরিয়া পেটের এসিডের কারণে শ্লেষ্মা স্তরের ক্ষতি করতে পারে, ফলে আলসার সৃষ্টি হয়।
২. অতিরিক্ত এসিড উৎপাদন (Excess Acid Production): পেটের অতিরিক্ত এসিড উৎপাদন পেপটিক আলসারের সৃষ্টি করতে পারে। স্ট্রেস, খাদ্যাভ্যাস, এবং কিছু খাবারের প্রভাব এ কারণে হতে পারে।
৩. এনটিআইএ (Non-Steroidal Anti-Inflammatory Drugs – NSAIDs): এনটিআইএডি (NSAIDs) যেমন অ্যাসপিরিন, ইবুপ্রোফেন, এবং ন্যাপ্রোকসেন দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের কারণে পেটের শ্লেষ্মা স্তরের ক্ষতি করতে পারে এবং পেপটিক আলসার সৃষ্টি করতে পারে। এই ওষুধগুলো পেটের শ্লেষ্মার প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা কমিয়ে দেয় এবং এসিডের ক্ষতিকর প্রভাব বৃদ্ধি করে।
৪. অ্যালকোহল ও সিগারেট সেবন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং ধূমপান পেটের শ্লেষ্মা স্তরকে আক্রমণ করতে পারে এবং এসিডের ক্ষতিকর প্রভাব বৃদ্ধি করে। এটি আলসারের সৃষ্টি এবং পরবর্তী সময়ে এর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।
৫. অতিরিক্ত স্ট্রেস: মানসিক চাপ বা স্ট্রেস পেপটিক আলসারের একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। এটি পেটের এসিড উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে এবং শ্লেষ্মা স্তরের ক্ষতি করতে পারে। যদিও স্ট্রেস সরাসরি পেপটিক আলসারের সৃষ্টি করে না, তবে এটি রোগটির উপস্থিতি বা অবস্থা খারাপ করতে সাহায্য করতে পারে।
৬. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অত্যধিক তেল, মসলাযুক্ত খাবার, ক্যাফেইন এবং তীব্র টক খাবার খাওয়ার কারণে পেটের এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি হতে পারে, যা আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৭. হরমোনাল পরিবর্তন: কিছু বিশেষ শারীরিক অবস্থা যেমন ক্রনিক কিডনি রোগ বা কুশিং’স সিনড্রোম-এর কারণে পেপটিক আলসারের ঝুঁকি বাড়ে, কারণ এটি পেটের এসিড উৎপাদন এবং শ্লেষ্মা স্তরের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৮. পারিবারিক ইতিহাস (Genetic Factors): কিছু ব্যক্তির মধ্যে পেপটিক আলসারের জন্য উত্তরাধিকারগত প্রবণতা থাকতে পারে। যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে পেপটিক আলসার থাকে, তবে তাদের মধ্যে এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৯. গ্যাস্ট্রিনোমা (Zollinger-Ellison Syndrome): এটি একটি দুর্লভ অবস্থার মধ্যে পড়তে পারে, যেখানে গ্যাস্ট্রিন নামক হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদন হয়, যা পেটের অতিরিক্ত এসিড উৎপাদন ঘটায় এবং আলসারের সৃষ্টি করে।
প্রশ্ন: পেপটিক আলসারের লক্ষণাবলী লিখ। ১৫ অথবা, পেপটিক আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
পেপটিক আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:
পেপটিক আলসারের লক্ষণাবলী (Peptic Ulcer Symptoms) ব্যক্তির মধ্যে আলসারের অবস্থান, আকার এবং অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে পেপটিক আলসারের কিছু সাধারণ লক্ষণাবলী রয়েছে যা রোগী বা চিকিৎসকের নজরে আসে:
১. পেটে ব্যথা (Abdominal Pain): প্রধান লক্ষণ: পেটে ব্যথা একটি সাধারণ লক্ষণ। এই ব্যথাটি সাধারণত উপরের পেট বা পাকস্থলীর মধ্যে অনুভূত হয়। ব্যথা সাধারণত খাবার খাওয়ার পর বা খালি পেটে বেশি অনুভূত হয়। কিছু রোগী জানায় যে, খাবার খাওয়ার পর বা কিছু অ্যান্টাসিড (পেটের এসিড কমানোর জন্য) গ্রহণের পর ব্যথা কিছুটা কমে যায়।
২. অম্বল বা গ্যাস (Bloating or Belching): পেট ফুলে যাওয়ার অনুভূতি এবং গ্যাস বা অম্বল হতে পারে। এটি খাবার খাওয়ার পর বা খালি পেটে বেশি অনুভূত হতে পারে।
৩. ডাইজেস্টিভ ডিসকমফোর্ট (Indigestion): পেপটিক আলসারের কারণে খাবার হজমে সমস্যা হতে পারে। রোগী জানাতে পারেন যে, খাবার খাওয়ার পর অতিরিক্ত গ্যাস, অস্বস্তি বা অস্থিরতা অনুভূত হয়।
৪. অ্যাপেটাইট লস (Loss of Appetite): রোগী খাবারের প্রতি আগ্রহ হারাতে পারে, যা পেপটিক আলসারের একটি সাধারণ লক্ষণ। এটি ক্ষুধার অনুভূতি কমিয়ে দেয় এবং কিছু ক্ষেত্রে রোগী অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পায়।
৫. Pain Relief After Eating: কিছু রোগী অনুভব করেন যে, খাবার খাওয়ার পর বা অ্যান্টাসিড গ্রহণের পর পেটের ব্যথা কিছুটা কমে যায়। তবে কিছু সময় পর ব্যথা আবার ফিরে আসে।
৬. রক্ত স্রাব বা ব্লিডিং (Bleeding or Blood in Stool): পেপটিক আলসারের কারণে পেট বা অন্ত্রের শ্লেষ্মা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা রক্তপাতের কারণ হতে পারে। রক্তের উপস্থিতি সাধারণত মল বা বমিতে দেখা যায়। বমির রঙ গা dark ় বা রক্তবর্ণ হতে পারে। মলের রঙ কালো বা রক্তের উপস্থিতি হতে পারে, যা মেলিনা নামে পরিচিত (কালো রক্তাক্ত মল)।
৭. বমি (Vomiting): কিছু রোগী বমি করতে পারেন, বিশেষত যদি আলসার বড় বা গভীর হয়ে থাকে। কখনও কখনও বমির মধ্যে রক্তও থাকতে পারে।
৮. শরীরের ক্লান্তি ও দুর্বলতা (Fatigue or Weakness): রক্তক্ষরণের কারণে রোগী ক্লান্তি বা দুর্বলতার অনুভূতি জানাতে পারেন। এটি পেপটিক আলসারের জন্য একটি গম্ভীর লক্ষণ হতে পারে, বিশেষত যদি রক্তপাত হয়ে থাকে।
৯. অস্বাভাবিক ডাইজেস্টিভ সিস্টেম রিঅ্যাকশন (Unusual Digestive Reactions): কিছু রোগী পেটের অস্বস্তি, হালকা মন্দগতি, বা খাবারের প্রতি অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে পারেন, যা পেপটিক আলসারের কারণে ঘটে।
১০. গ্যাস বা অ্যাসিডিটির অনুভূতি (Acidity or Heartburn): অতিরিক্ত এসিডের কারণে অনেক রোগী গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির অনুভূতি জানান, যা পেপটিক আলসারের একটি সাধারণ উপসর্গ হতে পারে
প্রশ্নঃ পেপটিক আলসারের ইনভেস্টিগেশন বা রোগ নির্ণয় লিখ।
পেপটিক আলসারের ইনভেস্টিগেশন:
(i) বেরিয়াম মিল এক্স-রে
(ii) এন্ডোসকপি
(iii) মলের- আর/ই, সি/এস
(iv) প্রস্রাবের আর/ই, সি/এস।
(v) কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট করতে হবে।
প্রশ্নঃ পেপটিক আলসারের জটিলতাসমূহ উল্লেখ কর। ২০০৯ বা, পেপটিক আলসার-এর জটিলতাসমূহ লিখ। ২০১৮
পেপটিক আলসার-এর জটিলতাসমূহ (Complications of peptic ulcer):
পেপটিক আলসারের জটিলতাসমূহ (Complications of Peptic Ulcer) যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। পেপটিক আলসারের কিছু সাধারণ জটিলতা হল:
১. রক্তপাত (Bleeding): পেপটিক আলসার যদি গভীর হয়ে যায়, তবে এটি রক্তস্রাব ঘটাতে পারে। রক্তপাত হতে পারে মল বা বমিতে, যা খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। মলের রঙ কালো বা রক্তবর্ণ হতে পারে (মেলিনা), এবং বমির মধ্যে রক্ত থাকতে পারে।
২. পেরফোরেশন (Perforation): যদি আলসার পেট বা অন্ত্রের দেয়াল পর্যন্ত চলে যায়, তবে এটি শ্বাসনালী বা অন্ত্রের দেয়াল ফাটতে পারে। এটি পেরফোরেশন নামে পরিচিত এবং এর ফলে পেটের ভিতরে ইনফেকশন (পারিটনাইটিস) হতে পারে। পেরফোরেশন সাধারণত তীব্র পেটের ব্যথা এবং জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করে।
৩. স্ট্রিকচার (Stricture): পেপটিক আলসার যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি পেট বা অন্ত্রের দেয়ালে সঙ্কোচন সৃষ্টি করতে পারে, যা স্ট্রিকচার নামে পরিচিত। স্ট্রিকচারের ফলে পেটের ভিতর খাবার বা তরল চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়, যা বদহজম, বমি এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
৪. গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার (Gastric Cancer): দীর্ঘকাল ধরে untreated পেপটিক আলসার গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। যদিও এটি খুবই বিরল, তবে হেলিকোবাক্টর পাইলোরি ইনফেকশন পেপটিক আলসারের সাথে যুক্ত হয়ে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৫. পারিটনাইটিস (Peritonitis): যদি আলসার পেট বা অন্ত্রের দেয়াল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে (পেরফোরেশন), তবে এটি পেটের ভিতরে ইনফেকশন ঘটাতে পারে, যা পারিটনাইটিস নামে পরিচিত। এটি জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন, এবং এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে যদি তা না চিকিৎসা করা হয়।
৬. আয়রন ডিফিশিয়েন্সি অ্যানিমিয়া (Iron Deficiency Anemia): পেপটিক আলসারের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে রক্তপাত হতে পারে, যার ফলে আয়রন ডিফিশিয়েন্সি অ্যানিমিয়া হতে পারে। এটি ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং অন্যান্য লক্ষণ সৃষ্টি করে।
৭. পেটের ব্লকেজ (Gastric Outlet Obstruction): যদি পেপটিক আলসার পেটের দিক থেকে অন্ত্রের দিকে যাওয়ার পথে ব্লক সৃষ্টি করে, তবে এটি গ্যাস্ট্রিক আউটলেট অবস্ট্রাকশন ঘটাতে পারে। এর ফলে খাবার এবং তরল পেট থেকে অন্ত্রের দিকে ঠিকভাবে চলতে পারে না।
প্রশ্নঃ পেপটিক আলসারের ব্যবস্থাপনা বর্ণনা কর। ২০১৮
পেপটিক আলসারের ব্যবস্থাপনা বর্ণনা:
পেপটিক আলসারের ব্যবস্থাপনা (Management of Peptic Ulcer) সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে পেপটিক আলসারের লক্ষণ ও জটিলতাগুলি কমানো সম্ভব। এর ব্যবস্থাপনায় সাধারণত ঔষধ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং কখনও কখনও সার্জারি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
১. ঔষধ (Medications)
২. খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন (Dietary Modifications): খাবার খাওয়ার পরিমিতি: ছোট, নিয়মিত খাবার খাওয়া উচিৎ যাতে পেটের ওপর চাপ কমানো যায়। এসিডিক খাবার এড়িয়ে চলা: অতিরিক্ত এসিডযুক্ত খাবার (যেমন: টমেটো, সাইট্রাস ফল) এড়িয়ে চলা উচিৎ। মসলাদার খাবার কমানো: মসলাদার বা তেলের খাবার পেটের অস্বস্তি বাড়াতে পারে। অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা: এগুলি পেটের এসিড বৃদ্ধি করতে পারে এবং আলসারের লক্ষণ বাড়াতে পারে।
৩. ধূমপান পরিহার (Avoid Smoking): ধূমপান পেটের শ্লেষ্মা ঝিল্লির ক্ষতি করে এবং আলসার সৃষ্টি করতে পারে বা পেপটিক আলসারকে আরও খারাপ করে তোলে। তাই ধূমপান পরিহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট (Stress Management): মানসিক চাপ পেপটিক আলসারের জন্য একটি সম্ভাব্য উদ্দীপক হতে পারে, তাই শিথিল করার কৌশল যেমন যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা সাইকোথেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. সার্জারি (Surgery)
- যদি আলসার গুরুতরভাবে পেরফোরেট (ছিদ্র হয়ে যায়), অথবা যদি দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত বা স্ট্রিকচার হয়, তবে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
- পেরফোরেশন: পেটের দেয়াল ফেটে গেলে তাত্ক্ষণিক সার্জারি প্রয়োজন।
- স্ট্রিকচার: যদি আঘাত বা ক্ষত সঙ্কুচিত হয়ে যায়, তবে এটি অপসারণ বা মেরামত করা হতে পারে।
৬. নির্দিষ্ট মেডিকেল কন্ট্রোল (Specific Medical Control): হেলিকোবাক্টর পাইলোরি নির্মূল করা। দীর্ঘস্থায়ী পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসার জন্য একটি রোগী উপযুক্ত মেডিকেল কন্ট্রোল নেয়।
৭. অপর্যাপ্ত চিকিৎসার ফলে জটিলতা প্রতিরোধ (Preventing Complications of Inadequate Treatment): পেপটিক আলসারের জটিলতাগুলি (যেমন: রক্তপাত, পেরফোরেশন) দ্রুত শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা করা। যদি আলসার দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলা করা হয়, তবে গুরুতর জটিলতা হতে পারে যেমন পেটের ভিতর ক্যান্সার।
8. বিছানায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
9. পুষ্টিকর সহজ পাচ্য খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
10. প্রয়োজনের ইন্টারভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।
11. অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ব্লাড ভলিউম নির্ণয় করে ব্লাড দিতে হবে।
গ্যাস্ট্রিক আলসার (Gastric Ulcer)
প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসার কাকে বলে?
গ্যাস্ট্রিক আলসার (Gastric Ulcer) একটি ধরনের পেপটিক আলসার যা পেটের অভ্যন্তরীণ স্তরের শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে ক্ষত বা আলসার সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় পেটের এসিড এবং হ্যলিকোবাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা শ্লেষ্মা ঝিল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে পেটের দেওয়ালে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
গ্যাস্ট্রিক আলসার সাধারণত পেটের শ্লেষ্মা ও এসিডের ভারসাম্যহীনতার কারণে ঘটে, যা পেটের ভিতরে প্রদাহ এবং ক্ষতির কারণ হয়।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণসমূহ:
- হেলিকোবাক্টর পাইলোরি ইনফেকশন: এটি পেটের শ্লেষ্মা স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং আলসার সৃষ্টি করতে পারে।
- নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs): দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার পেটের শ্লেষ্মা ঝিল্লির ক্ষতি করতে পারে।
- অ্যালকোহল ও ধূমপান: পেটের এসিড উৎপাদন বাড়াতে পারে এবং শ্লেষ্মা স্তরের সুরক্ষা কমাতে পারে।
- অতিরিক্ত স্ট্রেস: মানসিক চাপ পেটের এসিড উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে, যা আলসারের সৃষ্টি করতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিক রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): এসিড রিফ্লাক্সের কারণে গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণতত্ত্ব লিখ।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণতত্ত্ব (Aetiology):
(i) বংশগত কারণ।
(ii) অনিয়মিত আহার, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, অধিক মসলাযুক্ত খাদ্য আহার, অধিক ঝাল।
(iii) এলকোহল বা মদ্যপান।
(iv) অতিরিক্ত ধুমপান, বিশৃংঙ্খলা।
(v) মানসিক বিপর্যয় ও বিশৃংঙ্খলা, দুশ্চিন্তা, মানসিক উদ্বেগ, উত্তেজনা ইত্যাদি।
(vi) রক্তস্বল্পতা এবং মাসিকের গোলযোগের কারণে।
(vii) বয়স- সাধারণত ৪০ বছরের অধিক বয়স্ক ব্যক্তি
(viii) লিঙ্গ- পুরুষঃ মহিলা = ২:১
(ix) দীর্ঘদিন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরম খাদ্যপানীয় আহার
(x) যাদের রক্তের গ্রুপ O+ve
(xi) হজমে দেরি হয় এমন খাদ্য গ্রহন। যেমন- মাংস ও অধিক তৈলাক্ত খাবার।
(xii) কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া- যেমন এন্টাসিড, স্ট্যারয়েড, এসপিরিন ইত্যাদি।
(xiii) শরীরে পারদ ও সিফিলিস বিষক্রিয়ার ফলে।
(xiv) বারে বারে পাকস্থলী প্রদাহ হলে, গ্যাস্ট্রিক মিউকোসা স্থায়ীভাবে নষ্ট হলে ইত্যাদি।
(xv) পাকস্থলীতে কোন কারণে আঘাত লাগলে, পেটের উপরের চামড়া অগ্নিদগ্ধ হওয়া ইত্যাদি।
(xvi) পাকস্থলীতে অধিক সময় ধরে খাদ্যবস্তু অবস্থান করলে পাকস্থলীতে সংকোচন ও প্রসারণ দ্বারা বেশি পরিমানে গ্যাস্ট্রিক রস ও হাইড্রোক্লোরিন এসিড নিঃসারণ করার ফলে।
প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার বা লক্ষণাবলী লিখ।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:
লক্ষণসমূহ:
(i) ব্যথা: ইপিগ্যাস্ট্রিক অঞ্চলে হয়, খাওয়ার পর পরই ব্যথা আরম্ভ হয়, ২-৬ সপ্তাহ পর পরই ব্যথায় আক্রান্ত হয়, বমি করলে ব্যথার উপশম ও খালি পেটে ব্যথার উপশম।
(ii) বমি: বমি গ্যাস্ট্রিক আলসারের কমন লক্ষণ। রক্ত বমি।
(iii) ক্ষুধা: প্রচন্ড ক্ষুধা পায় কিন্তু রোগী ব্যথার ভয়ে খেতে চায় না।
(iv) বদহজম দেখা দেয়।
(v) রক্তযুক্ত পায়খানা। (vi) শক্ত খাদ্য গ্রহণে অনীহা।
চিহ্নসমূহ (Signs):
(i) এপিগ্যাস্ট্রিয়ামের সামান্য বাঁদিকে হাত দ্বারা স্পর্শ করলে ব্যথা ও স্পর্শকাতরতা পাওয়া যায়।
(ii) দিন দিন শরীর ক্ষীণ হতে থাকে। ওজন কমে।
(iii) রক্তবমি (হেমাটেমেসিস) (iv) রক্ত পায়খানা (মেলিনা)
(v) অত্যধিক বমি হতে পার।
প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগানুসন্ধান বা ইনভেস্টিগেশন লিখ।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের ইনভেস্টিগেশন:
(i) ব্লাড- টি.সি, ডি.সি, ই.এস.আর, এইচবি%
(ii) বেরিয়াম এক্স-রে
(iii) এন্ডোসকপি
প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিক আলসারের ভাবীফল লিখ।
গ্যাস্টিক আলসারের ভাবীফল:
ইহার ভাবীফল ভাল নয়। যেহেতু পেটে ব্যথা খাইলে বৃদ্ধি সেহেতু রোগী খেতে চায় না। সে কারণে শরীরের ওজন হ্রাস পায়। রোগের ভাবীফল খারাপের দিকে যায়। নির্দিষ্ট সময় রোগের উপযুক্ত কারণ নির্ণয় করে সদৃশ বিধান মতে সঠিক চিকিৎসা দিলে রোগী আরোগ্য হয়। অন্যথায় জটিলতা সৃষ্টি হয়।
প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসারের জটিলতা লিখ।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের জটিলতা:
(i) রক্তবমি (ii) পাকস্থলী ছিদ্র হওয়া
(iii) পেরিটোনাইটিস
(iv) পেরিগ্যাস্ট্রিক এ্যাটেশন
(v) আওয়ার গ্লাস স্টোমাক
প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা লিখ।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা:
করণীয়:
(i) বিছানায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
(ii) পুষ্টিকর সহজ পাচ্য খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
নিষেধ:
(i) অধিক মসলাযুক্ত, চর্বিযুক্ত, শক্ত খাদ্য বস্তু খাওয়া যাবে না।
(ii) ধুমপান ও মদ পান করা যাবে না।
(iii) মানসিক দুশ্চিন্তা ও উত্তেজনার মধ্যে থাকা যাবে না।
পথ্য: পুষ্টিকর তরল ও অর্ধতরল খাদ্য।
বিশেষ চিকিৎসা: পাকস্থলীর দেওয়াল ছিদ্র হয়ে গেলে উহা অপারেশন করে রিপেয়ার করতে হবে।
কার্ডিও-ইসোফেগাল স্প্রিন্টার-
ফান্ডাস
ইসোফেগাস
লঙ্গিচুডিনাল লেয়ার
সেরোসা
সার্কুলার লেয়ার
বডি
অবলিক লেয়ার
মিউকোসা
লেসার কার্ভেচার
গ্রেটার কার্ভেচার
ডিওডেনাম
পাইলোরিক স্পিন্টার
পাইলোরিক এন্ট্রাম
চিত্রঃ পাকস্থলীর বিভিন্ন অংশ
ডিওডেনাল আলসার (Duodenal Ulcer)
প্রশ্ন: ডিওডেনাল আলসার কাকে বলে?
ডিওডেনাল আলসার এর সংজ্ঞা:
ডিওডেনামের যে কোনো অংশের সারফেস এপিথেলিয়ামের ক্ষত বা আলসারেশন হলে, তাকে ডিওডেনাল আলসার বলে।
প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসারের কারণসমূহ উল্লেখ কর। ০৯
ডিওডেনাল আলসারের কারণসমূহ:
- হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি সংক্রমণ: ডিওডেনামের মিউকাস আবরণ নষ্ট করে এবং আলসারের সৃষ্টি করে।
- অ্যাসিডের অতিরিক্ত নিঃসরণ: প্যারাইটাল কোষ থেকে অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড নিঃসরণের ফলে ডিওডেনামের আবরক কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- NSAIDs এর ব্যবহার: ব্যথানাশক ওষুধ যেমন অ্যাসপিরিন বা ইবুপ্রোফেন ডিওডেনামের সুরক্ষামূলক মিউকাস স্তর কমিয়ে দেয়।
- মানসিক চাপ: দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের নিঃসরণ বাড়িয়ে আলসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ধূমপান: ধূমপান গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড নিঃসরণ বাড়ায় এবং ক্ষত সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
- মদ্যপান: অ্যালকোহল ডিওডেনামের মিউকাস আবরণকে দুর্বল করে তোলে।
- জিনগত প্রভাব: পরিবারের কারো ডিওডেনাল আলসার থাকলে এর ঝুঁকি বাড়ে।
- খাদ্যাভ্যাস: মশলাদার বা অতিরিক্ত ঝালযুক্ত খাবার ডিওডেনামের আবরণে প্রভাব ফেলে।
- জিংকের অভাব: মিউকাস সিক্রেট করার ক্ষমতা কমে যাওয়া।
- কিছু শারীরিক অবস্থা: যেমন জোলিঙ্গার-এলিসন সিনড্রোম, যেখানে অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিন নিঃসরণের কারণে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হয়।
- বংশগত কারণ
- অনিয়মিত আহার, আহারের পর বিশ্রামের অভাব
- বয়স- সাধারণত ২০ থেকে ৫০ বছর।
- লিঙ্গ- পুরুষ: মহিলা = ৪:১
- রক্তের গ্রুপ: O+ve
- খাদ্যাভাস-ঝালযুক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার
- ঔষধ: এন্টাসিড
প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসার ও ডিওডেনাল আলসারের পার্থক্য লিখ। ২০০৯, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮
গ্যাস্ট্রিক আলসার ও ডিওডেনাল আলসারের মধ্যে পার্থক্য:
বিষয় | গ্যাস্ট্রিক আলসার (Gastric Ulcer) | ডিওডেনাল আলসার (Duodenal Ulcer) |
---|---|---|
উৎপত্তি স্থল | পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ স্তরে (stomach lining)। | ডিওডেনামের অভ্যন্তরীণ স্তরে (duodenum lining)। |
বয়সের সাথে সম্পর্ক | সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সে বেশি দেখা যায়। | তরুণ এবং মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। |
খাওয়ার সাথে সম্পর্ক | খাবারের পরে ব্যথা বেড়ে যায়। | খালি পেটে ব্যথা বেশি হয় এবং খাবারের পরে আরাম মেলে। |
ব্যথার সময় | খাবারের ১-২ ঘণ্টা পরে ব্যথা শুরু হয়। | খাবারের ২-৫ ঘণ্টা পরে বা রাতে ব্যথা বেশি হয়। |
অ্যাসিড সিক্রেশনের প্রভাব | অ্যাসিডের মাত্রা সাধারণত স্বাভাবিক বা কম। | অ্যাসিডের মাত্রা সাধারণত বেশি। |
বমি ও রক্তপাত | বমির সাথে রক্ত থাকতে পারে। | সাধারণত বমি হয় না; মলের সাথে কালো রক্ত দেখা যেতে পারে। |
ঝুঁকি | ক্যান্সারে রূপান্তরের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। | ক্যান্সারে রূপান্তরের ঝুঁকি কম। |
প্রধান কারণ | NSAIDs, হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি সংক্রমণ। | হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি সংক্রমণ, মানসিক চাপ। |
চিকিৎসা প্রতিক্রিয়া | চিকিৎসা কিছুটা ধীর হতে পারে। | চিকিৎসার প্রতি ভালো সাড়া দেয়। |
৪। প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার/লক্ষণাবলী লিখ। ডিওডেনাল আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) ব্যথা – ডিওডেনাল পয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হয় খালিপেটে ব্যথা বেশি অনুভূত হয় রাতে ব্যথা হয় খাদ্য গ্রহণের পরে ব্যথার উপশম হয় পেরিওডিসিটি ১-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয়
(ii) বমিঃ সামান্য থাকতে পারে।
(iii) ক্ষুধাঃ বেশি, রোগী খায়ও ভালো। খেলে ব্যথা কমে। হাংগার পেইন।
(iv) অজীর্ণতা দেখা দেয়: কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে।
(v) বুক ও গলা জ্বালা অনুভূত হয়
(vi) মেলিনা- মলের সাথে অতিরিক্ত রক্ত যায়
(vii) রোগীর ওজন বৃদ্ধি পায়।
(viii) রোগীর চেহারা ফ্যাকাসে এবং এনিমিয়া উপস্থিত
(ix) দুর্বলতা, হতাশা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যা থাকতে পারে।
প্রশ্নঃ কিভাবে ডিওডেনাল আলসার রোগ নির্ণয় করবে? ০৯
ডিওডেনাল আলসার রোগ নির্ণয় / ইনভেস্টিগেশনঃ
(i) রোগীর রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে।
(ii) ব্লাড টিসি, ডিসি, ইএসআর, এইচবি% টোটাল কাউন্ট বৃদ্ধি পাবে, ইএসআর বৃদ্ধি পাবে এবং হিমোগ্লোবিন কমে যাবে।
(iii) মল: অকাল্ট ব্লাড টেস্ট পজেটিভ হবে।
(iv) বেরিয়াম এক্স-রে: ডিওডেনামে ক্ষতের উপস্থিতি পাওয়া যাবে।
(v) এন্ডোসকপি এবং গ্যাস্ট্রোকপি: সঠিকভাবে রোগ নির্ণিত হয়।
প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসার পারফোরেশনের লক্ষণ লিখ। ১৮ ডিওডেনাল আলসার পারফোরেশনের লক্ষণাবলী:
(i) ডিওডেনাল আলসারের ইতিহাস থাকবে।
(ii) রোগী ফ্যাকাশে, উদ্বিগ্ন, নড়াচড়ায় অনিচ্ছা দেখা যায়।
(iii) তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি কিন্তু পালস দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
(iv) এবডোমেন কম নড়াচড়া করে অথবা প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসে করে না।
(v) সমস্ত এবডোমেনে স্পর্শকাতরতার সাথে অনুভূতিহীন পারকাসন এবং রিজিডিটি থাকে।
(vi) মিড এক্সজিলা লাইনে লিভারের অনুভুতিহীনতা পাওয়া যায়।
(vii) মলদ্বার পরীক্ষা করলে পেলভিক স্পর্শকাতরতা মলদ্বার পর্যন্ত পাওয়া যায়।
(viii) ৩-৬ ঘন্টা পর ব্যথা, স্পর্শকাতরতা এবং রিজিডিটি হ্রাস পায়। তাপমাত্রা উচ্চ থাকে তবে পালস আরও বৃদ্ধি পায়। বাওয়েল সাউন্ড অনুপস্থিত থাকে।
(ix) নির্দিষ্ট স্পর্শকাতরতা কিন্তু অনিশ্চিত প্রহারহীনতা এবং কাঠিন্যতা।
(x) ৬ ঘন্টা পরে পেরিটোনাইটিস বিস্তৃত এরিয়ায় সম্প্রসারিত হয়। এরসাথে সামান্য এবডোমিনাল স্ফীতি থাকে। প্রচুর পরিমান ফ্রি ফুইড একত্রিত হয় যা ক্লিনিকেলি নির্ধারণ করা যায়।
প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসার পারফোরেশনের ব্যবস্থাপনা বর্ণনা কর। ২০১৮
ডিওডেনাল আলসার পারফোরেশনের ব্যবস্থাপনা বর্ণনাঃ
(i) রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
(ii) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পারফোরেশন এরিয়া নির্ধারণ করতে হবে।
(iii) এনিমিক রোগীর ক্ষেত্রে রক্ত প্রয়োজন হবে। তাই রোগী রক্তের প্রুপিং, ক্রসম্যাচি করতে হবে।
(iv) প্রয়োজনে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
(v) ব্যথা উপশমের জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(vi) সার্জিক্যাল রিপেয়ার পারফোরেটেড ডিওডেনাল আলসারের একমাত্র চিকিৎসা।
রোগী শক বা অস্ত্রোপচারের অনুপযুক্ত অবস্থায় আসলে তখন প্রথমে গ্যাস্টিক সাকশনসহ রিসাকসিটেশন করতে হবে এবং পরবর্তীতে অস্ত্রোপচার করতে হবে।
যদি রোগী প্রথম অবস্থায় আসে বা রোগীর অবস্থা অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত হয় তাহলে অস্ত্রোপচার (গ্যাস্ট্রোজেজুনষ্টমি) দ্বারা ছিদ্র রিপেয়ার করতে হবে এবং পেরিটোনিয়াম পরিষ্কার করতে হবে।
প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসারের জটিলতা ও ভাবীফল লিখ। ০৯ ডিওডেনাল আলসারের ভাবীফল:
ইহার ভাবীফল ভাল নয়। যেহেতু পেটে ব্যথা খাইলে উপশম সেহেতু রোগী ঘনঘন খায়। সেকারণে শরীরের ওজন স্বাভাবিক থাকে। রোগের ভাবীফল খারাপের দিকে যায়। নির্দিষ্ট সময় রোগে উপযুক্ত কারণ নির্ণয় করে সদৃশ বিধান মতে সঠিক চিকিৎসা দিলে রোগী আরোগ্য হয়। অন্যথায় জটিলতা সৃষ্টি হয়।
ডিওডেনাল আলসারের জটিলতা:
(i) রক্তবমি,
(ii) রক্ত পায়খানা,
(iii) ডিওডেনামে ছিদ্র হওয়া,
(iv) পেরিটোনাইটিস।
প্রশ্ন: হেমাটেমেসিস ও মেলিনার সংজ্ঞা ও কারণ সমূহ লিখ। ১৭
হেমাটেমেসিস: হেমাটেমেসিস হল উপরের জিআই ট্র্যাক্ট (পাকস্থলী বা অন্ননালী) থেকে রক্ত বমি হওয়ার একটি অবস্থা। বমি করা রক্ত সাধারণত উজ্জ্বল লাল বা কফির মতো কালচে লাল হয়।
কারণসমূহ:
- পেপটিক আলসার: পাকস্থলী বা ডিওডেনামের ক্ষত।
- ইসোফেজিয়াল ভ্যারিসেস: অন্ননালীর রক্তনালী ফেটে যাওয়া।
- গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার: পাকস্থলীতে টিউমারের কারণে রক্তপাত।
- গ্যাস্ট্রিক ইরোশন: পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
- ম্যালোরি-ওয়েইস সিনড্রোম: অন্ননালীতে ছেঁড়া বা ফাটল।
- রক্ত পাতলা করার ওষুধ: যেমন অ্যাসপিরিন বা অন্যান্য NSAIDs।
- হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি সংক্রমণ।
মেলিনা: মেলিনা হল মলের সাথে কালো, আঠালো রক্ত দেখা দেওয়ার অবস্থা, যা উপরের জিআই ট্র্যাক্ট থেকে রক্তপাতের ফলে হয়।
কারণসমূহ:
- পেপটিক আলসার: ডিওডেনাল বা গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে রক্তপাত।
- গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার: পাকস্থলীর ক্যান্সার থেকে ধীর রক্তপাত।
- ইসোফেজিয়াল ভ্যারিসেস: অন্ননালীর রক্তনালী ফেটে রক্তপাত।
- গ্যাস্ট্রিক ইরোশন: পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া।
- ম্যালোরি-ওয়েইস সিনড্রোম।
- অ্যাসপিরিন বা NSAIDs ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
- অ্যাংগিওডাইস্প্লেসিয়া: জিআই ট্র্যাক্টের অস্বাভাবিক রক্তনালীর বিকাশ।
- ক্রোহন’স ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস।
প্রশ্ন: একিউট এবডোমিনের সংজ্ঞা ও গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলি উল্লেখ কর। ০৯
একিউট এবডোমিনের সংজ্ঞা:
হঠাৎ কোন কারণবশত এবডোমেনে প্রচন্ড ব্যথা বা যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত ইর্মাজেন্সি চিকিৎসা বা সার্জারীর ব্যবস্থা নিতে হয়, তাকে একিউট এবডোমেন বলে। ইহাতে দ্রুত রোগীকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে যায়।
একিউট এবডোমিনের গুরুত্বপূর্ণ কারণসমূহ:
(i) আঘাত
(ii) পেপটিক আলসার- বিশেষত ডিওডেনাল আলসার।
(iii) গ্যাস্ট্রো-এন্টেরাইটিস
(iv) পেরিটোনাইটিস
(v) এপেন্ডিসাইটিস
(vi) কলিসিস্টাইসিস
(vii) কোলাইটিস
(viii) ইনটেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন।
(ix) বাইল ডাক্ট অবস্ট্রাকশন,
(x) স্ট্রাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া।
এন্টেরিক পারফোরেশন (enteric perforation)
প্রশ্নঃ ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশন কাকে বলে।
সংজ্ঞা: ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশন বলতে অন্ত্র বা ক্ষুদ্র/বৃহৎ অন্ত্রের দেয়ালে একটি ছিদ্র বা ফুটো হওয়াকে বোঝায়। এটি একটি গুরুতর চিকিৎসাজনিত অবস্থা যা পেরিটোনাইটিস (পেটের অভ্যন্তরীণ পর্দার প্রদাহ) বা ইনফেকশনের কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় অন্ত্রের ভেতরের উপাদান যেমন গ্যাস, খাদ্য বা ব্যাকটেরিয়া পেটের অভ্যন্তরীণ গহ্বরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জীবননাশের ঝুঁকি তৈরি করে।
যে কোন কারণে অস্ত্র বা ইনটেসটিনে ক্ষত সৃষ্টি হলে, তাকে আন্ত্রিক ছিদ্র বা ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশন বলে।
প্রশ্ন: ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের কারণগুলো লিখ। ০৮
কারণ:
ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের কারণসমূহ:
- ধারালো কোনো বস্তু দিয়ে পেটের আঘাত।
- অস্ত্রোপচারের সময় দুর্ঘটনাজনিত অন্ত্রের ক্ষতি।
- পেপটিক আলসার।
- ক্রোহনস ডিজিজ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস।
- ডাইভার্টিকুলাইটিস।
- টাইফয়েড জ্বরের জটিলতা।
- টিবি (টিউবারকুলোসিস)।
- অন্ত্রের ক্যান্সার।
- অবস্ট্রাকশন বা বাধা থেকে চাপের কারণে।
- ক্ষতিকর রাসায়নিক বা ঔষধের প্রভাব।
প্রশ্ন: ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮
আন্ত্রিক ছিদ্র বা ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশন এর ক্লিনিক্যাল ফিচার নিম্নরূপ:
ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের ক্লিনিক্যাল ফিচার বা লক্ষণাবলী সাধারণত দ্রুত ও তীব্রভাবে প্রকাশ পায়। এটি পেরিটোনাইটিস বা সিস্টেমিক ইনফেকশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। নিচে ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিক্যাল ফিচারসমূহ উল্লেখ করা হলো:
প্রধান ক্লিনিক্যাল ফিচার:
পেটব্যথা (Abdominal Pain):
- হঠাৎ শুরু হওয়া তীব্র ব্যথা।
- সাধারণত ব্যথা পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়ে।
পেট শক্ত হয়ে যাওয়া (Rigid Abdomen):
- পেটের দেয়াল কঠিন এবং স্পর্শে সংবেদনশীল।
- এটি পেরিটোনাইটিসের লক্ষণ।
বমি বমি ভাব বা বমি (Nausea and Vomiting): অন্ত্রের উপাদান পেটের গহ্বরে ছড়িয়ে পড়ার কারণে।
ফুলে যাওয়া পেট (Abdominal Distension): অন্ত্রের মধ্যে গ্যাস বা তরল জমে পেট ফুলে যায়।
জ্বর (Fever): ইনফেকশনের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
রক্তচাপ কমে যাওয়া (Hypotension): রক্তক্ষরণ বা সেপসিসের কারণে শকের লক্ষণ।
দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস (Tachypnea): ব্যথা বা ইনফেকশনের কারণে শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যায়।
হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া (Tachycardia): রক্তচাপ কমে যাওয়া বা শকের কারণে।
স্টুপোর বা কনফিউশন (Stupor or Confusion): সেপসিস বা শকের কারণে।
মলত্যাগ বা গ্যাস নির্গমনের অক্ষমতা (Inability to Pass Stool or Gas): অন্ত্রের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হওয়ার কারণে।
অন্যান্য লক্ষণ:
- ত্বক শীতল এবং আর্দ্র হওয়া।
- শরীর দুর্বল হয়ে পড়া।
- চেহারায় অসুস্থতার চিহ্ন।
প্রশ্ন: ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৮
ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাঃ ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশন একটি গুরুতর মেডিক্যাল ইমারজেন্সি। এর চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবস্থাপনা নিম্নরূপ:
1. প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা (Initial Management)
- জরুরি মূল্যায়ন ও স্থিতিশীলতা:
- রক্তচাপ, হার্ট রেট, শ্বাস প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ।
- রোগী শকের মধ্যে থাকলে IV ফ্লুইড এবং রক্ত দিতে হবে।
- অক্সিজেন থেরাপি:
- অক্সিজেন প্রদান করে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ঠিক রাখা।
- নাসোগ্যাস্ট্রিক টিউব (Nasogastric Tube):
- অন্ত্রের চাপ কমাতে টিউব ব্যবহার।
- ক্যাথেটার ব্যবহার:
- প্রস্রাবের আউটপুট পর্যবেক্ষণের জন্য।
- অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি:
- ইনফেকশন প্রতিরোধে ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
2. ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা (Diagnostic Evaluation)
- রক্ত পরীক্ষা:
- লিউকোসাইটোসিস, রক্তে ল্যাকটেট লেভেল পরীক্ষা।
- ইমেজিং পরীক্ষা:
- এক্স-রে: পেটের গহ্বরে গ্যাস দেখা গেলে এটি পারফোরেশনের লক্ষণ।
- সিটি স্ক্যান: ক্ষতির স্থান নির্ধারণে সাহায্য করে।
3. চূড়ান্ত চিকিৎসা (Definitive Treatment)
(ক) অপারেশন:
- ল্যাপারোটমি বা ল্যাপারোস্কোপি:
- ক্ষতিগ্রস্ত অন্ত্রের অংশ মেরামত বা রিসেকশন।
- পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটির ইনফেকশন পরিষ্কার করা।
- অন্ত্রের স্টোমা তৈরি (Stoma Formation):
- বিশেষ ক্ষেত্রে, অন্ত্রের ফাংশন ঠিক রাখতে স্টোমা তৈরি করা হয়।
(খ) কনজারভেটিভ ব্যবস্থাপনা:
- খুবই সীমিত ক্ষেত্রে, রোগী স্থিতিশীল হলে এবং ক্ষতির মাত্রা কম হলে কনজারভেটিভ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়।
- NPO (কিছু খাওয়া নিষেধ)।
- নাসোগ্যাস্ট্রিক সাকশন।
- IV ফ্লুইড এবং অ্যান্টিবায়োটিক।
4. পরবর্তী যত্ন (Post-Operative Care)
- অপারেশনের পরে রোগীর পর্যবেক্ষণ:
- বায়োভিটালস মনিটরিং।
- ক্ষতস্থানের সংক্রমণ বা সেপসিসের লক্ষণ পরীক্ষা।
- পুষ্টি নিশ্চিতকরণ:
- পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ডায়েট শুরু করা।
- পুনর্বাসন থেরাপি:
- পেটের পেশির কার্যক্ষমতা পুনরুদ্ধার।
5. জটিলতার ব্যবস্থাপনা (Management of Complications)
- সেপসিস: এন্টিবায়োটিক এবং ইনটেনসিভ কেয়ার।
- অবাস্ট্রাকশন: পুনরায় সার্জারি।
- মাল্টি-অর্গান ফেইলিওর: সাপোর্টিভ কেয়ার।
পাইলোরিক স্টেনোসিস (pyloric stenosis)
প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের সংজ্ঞা লিখ।
পাইলোরিক স্টেনোসিসের সংজ্ঞাঃ
পাইলোরিক স্টেনোসিস
পাইলোরিক স্টেনোসিস হলো একটি অবস্থা যেখানে পাইলোরাস (পেট এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে থাকা পেশল ভালভ) অস্বাভাবিকভাবে সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে খাদ্য এবং তরল পেট থেকে ক্ষুদ্রান্ত্রে যেতে বাধা পায়। এটি জন্মগত বা অর্জিত হতে পারে।
সাধারণত দেখা যায়:
- প্রাথমিক বয়সে: শিশুদের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ জন্মগত সমস্যা।
- প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে: এটি পেপটিক আলসার বা পেটের ক্যান্সারের কারণে হতে পারে।
- শিশুদের ক্ষেত্রে: পাইলোরাসের পেশির অতিরিক্ত বৃদ্ধি।
- প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে: আলসারেশন, প্রদাহ বা টিউমার।
পাইলোরিক স্টেনোসিস দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে তা পুষ্টির অভাব এবং ডিহাইড্রেশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের কারণ লিখ। ১০, ১২
পাইলোরিক স্টেনোসিসের কারণ:
1. জন্মগত কারণ (Congenital Causes):
- শিশুদের ক্ষেত্রে পাইলোরাসের মাংসপেশির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
- এটি সাধারণত জন্মের ২-৮ সপ্তাহ পর প্রকাশ পায়।
- পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
2. অর্জিত কারণ (Acquired Causes):
- পেপটিক আলসার: দীর্ঘস্থায়ী পেপটিক আলসার পাইলোরাসে প্রদাহ ও স্কার টিস্যু তৈরি করে সংকোচন ঘটায়।
- পেটের ক্যান্সার: পাইলোরাসে টিউমার বৃদ্ধি পাইলোরিক স্টেনোসিস সৃষ্টি করতে পারে।
- প্রদাহ: দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রাইটিস বা ডিওডেনাইটিস।
- সার্জারির পরবর্তী জটিলতা: পেট বা ডিওডেনামের পূর্ববর্তী সার্জারি পাইলোরাস সংকুচিত করতে পারে।
3. নিউরোমাসকুলার কারণ (Neuromuscular Causes): পাইলোরিক পেশির নার্ভ বা মাংসপেশির কার্যক্ষমতা কমে গেলে।
4. অন্য কারণ:
- প্রদাহজনিত রোগ: ক্রোন্স ডিজিজ।
- অপরিষ্কার খাদ্যাভ্যাস: দীর্ঘমেয়াদী জ্বালাপোড়া বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা।
- অ্যাসিড রিফ্লাক্স: দীর্ঘমেয়াদী অ্যাসিড ক্ষরণ পাইলোরাসে প্রদাহ ঘটাতে পারে।
প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) দীর্ঘদিনের পেপটিক আলসারের ইতিহাস থাকে।
(ii) পেরিয়ডিসিটি আর থাকে না।
(iii) ইপিগ্যাস্ট্রিয়ামে ব্যথা, ভরাট ভাব এবং অসুবিধা অনুভব হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় এটি বেশী অনুভব হয়।
(iv) রোগী সাধারণতঃ সকালে নাস্তা খায়, খুবই সামান্য দুপুরের খাবার এবং এর পর কিছুই খায় না, কারণ রোগী পেট ভরাট অনুভব করে।
(v) বমি-বমির পরিমাণ বেশী হয় এবং দুর্গন্ধ ও ফেনাযুক্ত বমি বৈশিষ্টপূর্ণ। বমি সাধারণতঃ দিনে ১ বার হয়, এবং তা পিচকারীর মতো বমি হয়। বমির মধ্যে undigested particulate বস্তু থাকে যা একদিন বা আরো আগে খাওয়া হয়েছে। বমি করলে রোগী সাধারণতঃ বেশ আরাম বোধ করে।
(vi) রোগীকে পরীক্ষা করলে দেখা যায়-
রোগী ডিহাইড্রেটেড থাকে এবং ওজন কমে যায়। –
-পাতলা রোগীদের প্রসারিত স্টোমাকের বাউন্ডারী দেখা যেতে পারে।
-ইপিগ্যাস্ট্রিয়ামে বাম হতে ডান দিকে প্রবাহিত ভিজিবল পেরিস্টালসিস দেখা যেতে পারে।
-সাক্কাশন স্পাস পাওয়া যায়।
-পারকাশন করলে স্টোমাকের এরিয়া অনেক বড় পাওয়া যায়।
alkalosis-এর কারণে রোগী মানসিকভাবে confused থাকে।
প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের ইনভেস্টিগেশন লিখ।
ইনভেস্টিগেশন:
স্টোমাকের বেরিয়াম মিল এক্স-রে করলে খাওয়ার ৬ ঘণ্টা পরেও খাদ্যের অবশিষ্ট স্টোমাকে পাওয়া যায়। এমনকি ২৪ ঘণ্টা পরেও তা পাওয়া যায়। স্টোমাকের আকার বড় হয় এবং নিচে নেমে আসে। Barium evacuation হতে দীর্ঘ সময় লাগে।
প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১০, ১২
পাইলোরিক স্টেনোসিসের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা:
পাইলোরিক স্টেনোসিসের চিকিৎসা প্রধানত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তবে অস্ত্রোপচারের আগে রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য কিছু প্রাথমিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
1. প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা (Initial Management)
- ডিহাইড্রেশনের চিকিৎসা:
- রোগীর শরীরে তরল ও ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণের জন্য IV ফ্লুইড দেওয়া হয়।
- রক্তে সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ক্লোরাইডের মাত্রা ঠিক করা।
- নাসোগ্যাস্ট্রিক টিউব (Nasogastric Tube):
- পাকস্থলীতে জমে থাকা তরল এবং গ্যাস বের করতে নাসোগ্যাস্ট্রিক টিউব ব্যবহার।
- খাদ্য গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা (NPO – Nothing by Mouth):
- অস্ত্রোপচার পর্যন্ত রোগীকে খাওয়াদাওয়া থেকে বিরত রাখা।
2. চিকিৎসা (Definitive Treatment)
(ক) অস্ত্রোপচার (Surgery):
- র্যামস্টেড পাইলোরোমাইওটমি (Ramstedt’s Pyloromyotomy):
- পাইলোরাসের মাংসপেশি কেটে সংকোচন দূর করা হয়।
- এটি ইনফ্যান্টাইল পাইলোরিক স্টেনোসিসের জন্য আদর্শ অস্ত্রোপচার।
- এন্ডোস্কোপিক ব্যালুন ডাইলেশন: পাইলোরিক স্টেনোসিস মৃদু হলে এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে সংকোচন দূর করা যায়।
- গ্যাস্ট্রোইজুনোস্টোমি (Gastrojejunostomy): যদি পাইলোরাসে বাধা অপসারণ সম্ভব না হয়, তাহলে পাকস্থলী থেকে সরাসরি ক্ষুদ্রান্ত্রে সংযোগ স্থাপন করা হয়।
(খ) মেডিক্যাল ব্যবস্থাপনা (Medical Management):
- এটি সাধারণত অস্ত্রোপচারের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী অবস্থায় ব্যবহার করা হয়।
- অ্যাসিড রিডিউসার: গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড কমাতে ওমেপ্রাজল বা র্যানিটিডিন দেওয়া হয়।
- অ্যান্টিবায়োটিক: সংক্রমণ রোধে প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার।
3. অস্ত্রোপচারের পরবর্তী যত্ন (Post-operative Care)
- অক্সিজেন সরবরাহ: অস্ত্রোপচারের পরে অক্সিজেন প্রদান করা।
- পুষ্টি পুনরুদ্ধার: ধীরে ধীরে তরল খাবার থেকে শুরু করে স্বাভাবিক ডায়েট দেওয়া।
- পর্যবেক্ষণ: সংক্রমণ, বমি, বা অন্য কোনো জটিলতার লক্ষণ দেখা।
- পরবর্তী ফলো-আপ: অস্ত্রোপচারের সাফল্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত ফলো-আপ।
4. জটিলতার ব্যবস্থাপনা (Management of Complications)
- সংক্রমণ (Infection): অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা।
- রিসিডিভ: পুনরায় পাইলোরিক স্টেনোসিস হলে আবার সার্জারি।
- ম্যালনিউট্রিশন: যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করা।
অ্যাপেন্ডিসাইটিস (appendicitis)
প্রশ্ন: এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্পের সংজ্ঞা দাও। এর লক্ষণাবলী লিখ। ১২ বা, এপেন্ডিকুলার লাম্প-এর সংজ্ঞা, লক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৯
এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্পের সংজ্ঞা: এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্প (Appendicular Lump) হলো এ্যাপেন্ডিসাইটিসের একটি জটিল অবস্থা। এটি সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্সের প্রদাহজনিত কারণে পেটের ডানপাশের নিম্নাংশে একটি পিণ্ড (লাম্প) হিসেবে প্রকাশ পায়। এটি ফাইব্রিন, প্রদাহজনিত তরল, পার্শ্ববর্তী অন্ত্র, ওমেন্টাম এবং এ্যাপেন্ডিক্সের সংমিশ্রণে তৈরি হয়।
এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্পের লক্ষণাবলী:
পেটের ব্যথা: শুরুতে পেটের মাঝামাঝি (পেরি-আনবিলিক্যাল অঞ্চল) ব্যথা। পরে ডানপাশের নিম্নাংশে (রাইট ইলিয়াক ফোসা) স্থানান্তরিত হয়।
স্পর্শকাতরতা: রাইট ইলিয়াক ফোসায় স্পর্শ করলে ব্যথা।
লাম্প বা পিণ্ড অনুভব: পেটের ডানপাশে একটি দৃঢ় পিণ্ড অনুভব করা যায়।
জ্বর: হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার জ্বর।
বমি বমি ভাব ও বমি: খাদ্য গ্রহণের প্রতি অনীহা এবং বমি হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া: পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণ, তবে কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হতে পারে।
তরঙ্গাকৃতি (Fluctuation): কিছু ক্ষেত্রে লাম্প মৃদু তরঙ্গাকৃতি হতে পারে, যা পুঁজ জমার ইঙ্গিত দেয়।
বুকের চাপ অনুভব করা: রোগী প্রায়শই অস্বস্তি ও পেট ভারী লাগার কথা বলে।
- একিউট এপেন্ডিসাইটিসের মত ব্যথা বর্তমান থাকবে।
- লাম্প দেখার ৩-৫ দিন পরে ব্যথা শুরু হবে।
- ট্যাকিকার্ডিয়া বর্তমান থাকবে।
একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস
প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি? ২০১৭
একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলো অ্যাপেন্ডিক্সে (পেটের ডানদিকের নিম্নাংশে অবস্থিত ক্ষুদ্র টিউব আকৃতির অঙ্গ) আকস্মিক ও তীব্র প্রদাহ বা সংক্রমণ। এটি একটি সাধারণ এবং জরুরি সার্জিক্যাল সমস্যা।
অ্যাপেন্ডিক্সে প্রদাহের ফলে ব্যথা, ফোলা, এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেওয়ার অবস্থা একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস নামে পরিচিত। এটি সময়মতো চিকিৎসা না করলে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে পেটের গহ্বরে সংক্রমণ (পেরিটোনাইটিস) সৃষ্টি করতে পারে।
কারণসমূহ:
- অ্যাপেন্ডিক্সের ব্লকেজ: কঠিন মল দ্বারা অ্যাপেন্ডিক্সের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া। লিম্ফ নোডের স্ফীতি।
- সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণ।
- টিউমার: বিরল ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিক্সে টিউমার।
লক্ষণাবলী:
- তীব্র পেটব্যথা (প্রথমে পেটের মধ্যভাগে, পরে ডানদিকের নিম্নাংশে স্থানান্তরিত)।
- বমি বা বমি বমি ভাব।
- অরুচি।
- মৃদু জ্বর।
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।
- স্পর্শে ব্যথা বা চাপ দিলে ব্যথা বৃদ্ধি।
একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস একটি চিকিৎসাজনিত জরুরি অবস্থা এবং সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ (অ্যাপেন্ডেকটমি) দ্বারা চিকিৎসা করা হয়।
যে কোন কারণে হঠাৎ এপেন্ডিক্সের ইনফ্লোমেশনকে একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলে। এটি একটি সার্জিক্যাল ইমারজেন্সি।
প্রশ্নঃ একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণসমূহ লিখ। ১৪
একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্সের মধ্যে ব্লকেজ বা সংক্রমণের কারণে ঘটে। প্রধান কারণগুলো হলো:
অ্যাপেন্ডিক্সের ব্লকেজ:
- ফেকালিথ: শক্ত মল বা ফেকাল ম্যাটারের কারণে অ্যাপেন্ডিক্সের লুমেন বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- লিম্ফয়েড হাইপারপ্লাসিয়া: সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় লিম্ফ নোডের স্ফীতি।
- অবসট্রাকশন: খাদ্য কণা বা বস্তু দ্বারা অ্যাপেন্ডিক্সের পথ বন্ধ হওয়া।
সংক্রমণ:
- ব্যাকটেরিয়া: ই.কোলাই (E. coli), ব্যাকটেরয়েডস (Bacteroides) এবং অন্যান্য সংক্রমণ অ্যাপেন্ডিসাইটিস সৃষ্টি করতে পারে।
- ভাইরাস: গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ভাইরাল সংক্রমণ।
ইনফ্লেমেটরি প্রক্রিয়া: দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ বা সংক্রমণের কারণে অ্যাপেন্ডিক্সের প্রদাহ।
টিউমার: বিরল ক্ষেত্রে অ্যাপেন্ডিক্সে টিউমার বা নিউপ্লাজম (neoplasm)।
পরজীবী সংক্রমণ:
- এন্টামিবা হিসটোলিটিকা: অ্যামিবিক সংক্রমণ অ্যাপেন্ডিক্সের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
- হেলমিন্থিক সংক্রমণ: অ্যাস্কারিস বা পিনওয়ার্মের কারণে অ্যাপেন্ডিক্সের ব্লকেজ।
পেটের আঘাত বা ট্রমা: পেটের আঘাত অ্যাপেন্ডিক্সে প্রদাহ বা ব্লকেজ সৃষ্টি করতে পারে।
বংশগত কারণ: পরিবারে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস প্যাথলজি লিখ।
একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের প্যাথলজি:
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে (১) পারফোরেশন বা (২) অ্যাপেন্ডিক্সের ওয়ালের ভিতর দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ট্রান্জমাইগ্রেশন (transmigration) করে পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটির ইনফেকশন ঘটিয়ে থাকে। “অ্যাবডোমিনাল পুলিশম্যান” বলে খ্যাত গ্রেটার ওমেন্টাম আক্রান্ত অ্যাপেন্ডিক্সের চতুর্পাশে বেস্টনী তৈরী করে পেরিটোনিয়াল ইনভেশন (invasion) প্রতিহত করে।
প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস প্রকারভেদ লিখ। ২০১৭ একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের প্রকারভেদঃ
একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস ২ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- (ক) নন-অবস্ট্রাকটিভ ও (খ) অবস্ট্রাকটিভ।
(ক) নন-অবস্ট্রাকটিভ একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস:
এতে সাধারণতঃ মিউকাস মেমব্রেনে ইনফ্লামেশন শুরু হয় এবং নিচের যে কোন একটি পরিনতি লাভ করে-
(১) স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়,
(২) আলসারেশন, (৩) সাপুরেশন, (৪) ফাইব্রোসিস, (৫) গ্যাংরিন।
ইনফেকশন loose সাবমিউকাস টিস্যুতে পৌছায়, তবে এটি দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করে। অ্যাপন্ডিক্স turgid (স্ফীত), dusky red রং ধারণ করে এবং মিউকাস মেমব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়। এর ফলে অ্যাপেন্ডিক্সে গ্যাংগ্রীন হতে পারে। আবার অ্যাপেন্ডিসাইটিস অতি শ্লথগতিতে progress করতে পারে ও এই সময়ে protective barrier তৈরী হতে পারে এবং পেরিটোনাইটিস স্থানীয়ভাবে সীমাবদ্ধ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ইনফেকশন মিউকাস lining অতিক্রম করে না, এ অবস্থায় অসুখ ভাল হয়ে গেলেও পুনঃ আক্রমণ হতে পারে।
(খ) অবস্ট্রাকটিভ একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস: প্রতি ৩টি একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের রোগীর মধ্যে ২টি রোগীর এই জাতীয় অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়ে থাকে। অবস্ট্রাকশন হতে পারে। যথা- ১। লুমেনের মধ্যে (ফরেন বডি বা প্যারাসাইট), ২। ওয়ালের মধ্যে (সাধারণত ইনফ্লামেটরী), ৩। ওয়ালের বাইরে। এগুলোর মধ্যে facecolitis হচ্ছে সবচেয়ে কমন। অবস্ট্রাকটিভ অ্যাপেন্ডিসাইটিসে ইনফ্লামেশন আবদ্ধ হয়, ফলে ইনফ্লামেশন দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং গ্যাংগ্রীন তৈরী হয় বা পারফোরেশন হয়। অনেক সময় ১২-১৮ ঘণ্টার মধ্যে অবস্ট্রাকশনের ডিস্টাল অংশে গ্যাংগ্রীন তৈরী হয়।
প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস ক্লিনিক্যাল ফিচার/লক্ষণাবলী লিখ। বা, একিউট এ্যপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণাবলী লিখ। ১৫, ১৭
একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণাবলী সাধারণত আকস্মিকভাবে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তীব্র হয়। প্রধান লক্ষণাবলী নিম্নরূপ:
পেটব্যথা:
- শুরুতে মধ্যপেটে (Periumbilical region) হালকা ব্যথা।
- পরে ব্যথা ডানদিকের নিম্নাংশে (Right lower quadrant) স্থানান্তরিত হয় (ম্যাকবার্নি পয়েন্টে)।
- ব্যথা চলাফেরা বা কাশি করলে বেড়ে যায়।
অরুচি: খাবারে অনীহা দেখা দেয়।
বমি বা বমি বমি ভাব: পেটব্যথার পরে বমি হতে পারে।
জ্বর: সাধারণত মৃদু জ্বর (99°F থেকে 101°F)। তীব্র সংক্রমণে উচ্চ তাপমাত্রা।
কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া: মলত্যাগে সমস্যা বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।
পেটের ফোলাভাব: অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে পেট ফুলে উঠতে পারে।
স্পর্শে ব্যথা (Tenderness): পেটের ডানদিকের নিম্নাংশ স্পর্শ করলে ব্যথা তীব্র হয়।
রিবাউন্ড টেন্ডারনেস: পেটে চাপ দিয়ে ছাড়ার পর ব্যথা আরও তীব্র হয়।
রোভসিং সাইন (Rovsing’s Sign): বামপাশের পেটে চাপ দিলে ডানপাশে ব্যথা অনুভূত হয়।
অলটারড বাওয়েল হ্যাবিট: মলত্যাগের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিবর্তন দেখা দেয়।
জরুরি লক্ষণ (Complicated Cases):
- উচ্চ তাপমাত্রা ও দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস।
- অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে পেরিটোনাইটিসের লক্ষণ (পেট শক্ত হয়ে যাওয়া, তীব্র ব্যথা)।
একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস চিকিৎসার জন্য সাধারণত সার্জারি (অ্যাপেন্ডেকটমি) প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটসের চিকিৎসা লিখ।
এ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা:
(i) রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
(ii) দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
(iii) ব্যথা কমার জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(iv) প্রয়োজনে ইন্টারভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।
(v) সার্জিক্যাল চিকিৎসা: রক্ষণশীল চিকিৎসায় আরোগ্য না হলে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অপারেশন করতে হবে। এ্যাপেন্ডিসেকটমী
(Appendicectomy) করতে হবে।
এনাল ফিসার (Anal Fissure)
প্রশ্ন: এনাল ফিসারের সংজ্ঞা দাও। এনাল ফিসার কত প্রকার? ১২, ১৪
এনাল ফিসার :
এনাল ফিসার হলো আন্ত্রিক রাস্তা (অ্যানাস) বা গুদে একধরনের ছোট্ট ফাটা বা চিররূপ ক্ষত, যা সাধারণত টান বা চাপের কারণে ঘটে। এটি অ্যানাল স্পিনটার (গুদর পেশি) অঞ্চলে সৃষ্টি হয় এবং একে সাধারণত “পেইনফুল আন্ত্রিক ফাটল” বা “এনাল ক্র্যাক”ও বলা হয়। এ ধরনের ফাটা হওয়ায় অস্বস্তি, ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হতে পারে।
মলদ্বারের চারপাশে ভিতরকার ঝিল্লী আবরণী কোঁচকানো পর্দার মত কপাটিকার সৃষ্টি করে। এই কপাটিকা অংশ চিড়ে গেলে বা ফেঁটে গেলে অর্থাৎ বিদারণ ঘটলে এর অভ্যন্তরস্থ ক্ষুদ্র ধমনী স্ফীত হওয়ায় এটিকে একটি অর্শের মত দেখায়, তাকেই এনাল ফিসার বলে।
এনাল ফিসার প্রকারভেদ
এনাল ফিসার দুটি প্রধান প্রকারে ভাগ করা যায়:
Acute এনাল ফিসার: এটি সাধারণত সাময়িক এবং ছোট আকারের ফাটা, যা সাধারণত টান বা কঠিন মলের কারণে ঘটে। কিছু দিনেই এটি নিজে থেকে সেরে যায়, তবে ব্যথা এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
ক্রনিক এনাল ফিসার: এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রাথমিক ফাটা সারিয়ে না ওঠায়, এবং সাধারণত আরো গভীর ও স্থায়ী হয়ে যায়। একে সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় এবং কখনো কখনো অস্ত্রোপচারও প্রযোজ্য হতে পারে। এতে পেশির শক্তির কারণে গুদে আরো বেশি চাপ পড়ে এবং পুনরায় ফাটা ঘটতে পারে।
এনাল ফিসার সাধারণত মলের উপর অতিরিক্ত চাপ বা কষ্ঠের কারণে হয় এবং এর ফলে অস্বস্তি, রক্তক্ষরণ এবং অনেক সময় জ্বলন বা গাঢ় ব্যথার সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: এনাল ফিসারের লক্ষণগুলি লিখ। ১২
এনাল ফিসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:
এনাল ফিসারের লক্ষণগুলি সাধারণত ব্যথা, রক্তক্ষরণ এবং অন্যান্য অস্বস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। প্রধান লক্ষণগুলি নিম্নরূপ:
ব্যথা (Pain):
- অ্যানাল ফিসারের প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র ব্যথা, বিশেষ করে মলত্যাগের পর।
- ব্যথা তীব্র হতে পারে এবং কিছু সময়ের জন্য স্থায়ী হতে পারে।
- মলত্যাগের সময় এবং পরে কয়েক মিনিট বা ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যথা চলতে পারে।
রক্তক্ষরণ (Bleeding):
- মলত্যাগের সময় বা পরে ক্ষত থেকে রক্তপাত হতে পারে।
- সাধারণত রক্ত সিঁথির আকারে দেখা যায়, যা মল বা টিশু পেপারের উপর স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
অস্বস্তি বা জ্বালা (Discomfort or Irritation):
- গুদ বা পেটে অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- কিছু মানুষ তীব্র জ্বালাভাব বা গরম অনুভব করেন।
মলত্যাগের সময় ভয় বা সমস্যা (Difficulty or Fear of Bowel Movements):
- পেশী স্পাসম বা যন্ত্রণা অনুভব হওয়ায় মলত্যাগের সময় ভয় বা সমস্যা হতে পারে।
- এতে করে রোগী কঠিন মল থেকে বা কষ্ঠ থেকে ভয় পেয়ে কষ্ট পায়।
অ্যানাল স্পাসম (Anal Spasm): ফিসার অঞ্চলে পেশী সঙ্কোচন বা ক্র্যাম্প হতে পারে, যা ব্যথাকে তীব্র করে তোলে।
এনাল ফিসারের এসব লক্ষণ সাধারণত একে অপরের সাথে মিলিত হয় এবং মলত্যাগের পর ব্যথা এবং রক্তক্ষরণের সাথে শুরু হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, বিশেষত যখন ফিসার ক্রনিক হয়ে যায়।
প্রশ্ন: এনাল ফিসারের চিকিৎসা লিখ। ১২, ১৪
এনাল ফিসারের চিকিৎসা:
এনাল ফিসারের চিকিৎসা মূলত লক্ষণের তীব্রতা এবং ফিসারের প্রকার (এ্যাকিউট বা ক্রনিক) অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এটি সাধারণত কনজারভেটিভ (অবাধ চিকিৎসা) থেকে শুরু হয়, এবং প্রয়োজন হলে সার্জিক্যাল চিকিৎসাও প্রযোজ্য হতে পারে। নিচে এনাল ফিসারের বিভিন্ন চিকিৎসার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:
১. কনজারভেটিভ চিকিৎসা (Conservative Treatment):
মল নরম রাখা (Stool Softeners): কষ্টকর মলত্যাগ থেকে এড়িয়ে চলার জন্য মল নরম রাখার উদ্দেশ্যে স্টুল সফটনার ব্যবহার করা হয়।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার (Fiber-Rich Diet): খাদ্যাভ্যাসে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার (যেমন শাক-সবজি, ফল, শস্যদানা) অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে মল নরম থাকে এবং মলত্যাগ সহজ হয়।
ব্যথা উপশমকারী ওষুধ (Pain Relievers): লক্ষনানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। ইস্কিউলাস হিপ, মিলিফলিয়াম, গ্র্যাফাইটিস, নাইট্রিক এসিড, এলুমিনা, নাক্স-ভম, সাইলিসিয়া ইত্যাদি।
ওয়ার্ম সিট্ব্যাথ (Warm Sitz Bath): দিনে ২-৩ বার গরম পানি দিয়ে সিট্ব্যাথ নেওয়া (১০-১৫ মিনিট) ফিসারের ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এটি মাংসপেশীর চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
অ্যানাল স্পাসম রিলিভিং মেডিসিন: কিছু ক্ষেত্রে অ্যানাল স্পাসম (স্প্যাজম) কমানোর জন্য ব্যথানাশক বা স্পাসমোলাইটিক মেডিসিন (যেমন, নিট্রোগ্লিসারিন বা ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার) ব্যবহার করা হতে পারে।
২. সার্জিক্যাল চিকিৎসা (Surgical Treatment):
যদি কনজারভেটিভ চিকিৎসা কার্যকর না হয় এবং ফিসার ক্রনিক হয়ে যায়, তাহলে সার্জিক্যাল চিকিৎসা প্রযোজ্য হতে পারে।
ফিসারটোমি (Fissurectomy): এটি একটি সার্জিকাল পদ্ধতি যেখানে এনাল ফিসারকে অপসারণ করা হয়, এবং কখনো কখনো আশপাশের টিস্যু (যেমন, স্পিন্টার পেশি) কিছুটা কাটতে হতে পারে।
লাইটারাল ইনফেকশন (Lateral Internal Sphincterotomy): এটি একটি পদ্ধতি যেখানে অ্যানাল স্পিন্টারের কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়। এর মাধ্যমে পেশির চাপ কমে যায় এবং ফিসারটি সেরে ওঠে।
অ্যানাল ফ্ল্যাপ সার্জারি: এটি ফিসারের তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব অনুযায়ী প্রয়োগ করা হয়, যেখানে ক্ষতস্থানটি ঠিকভাবে সেলাই করা হয়।
৩. অন্যান্য চিকিৎসা:
- পেটের সঠিক পজিশনে বসানো: মলত্যাগের সময় সঠিক পজিশনে বসে (যেমন, পা কিছুটা উঁচু করে) মলত্যাগ করা, যাতে চাপ কমে এবং ফিসারের ওপর চাপ না পড়ে।
Diseases of the digestive glands লিভার অ্যাবসেস (Liver abscess)
প্রশ্ন: লিভার অ্যাবসেস কাকে বলে?
লিভার অ্যাবসেস এর সংজ্ঞা:
কোন কারণে লিভারের কোষে প্রদাহিত হয়ে পুঁজ উৎপন্ন হলে, তাকে লিভার অ্যাবসেস বলে।
লিভার অ্যাবসেস দুই প্রকারের হতে পারে। যথা- ১। পায়োজেনিক
লিভার অ্যাবসেস ২। অ্যামিবিক লিভার অ্যাবসেস
প্রশ্ন: লিভার অ্যাবসেস এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
লিভার অ্যাবসেস এর ক্লিনিক্যাল ফিচার (লক্ষণাবলী):
(i) শুরু ধীরে ধীরে হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশ দেরীতে এমনকি কয়েক মাস পরেও দেখা দিতে পারে। পুরুষদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। প্রাথমিক সিম্পটম- এনিমিয়া, ওজন কমে যাওয়া প্রথম সিম্পটম।
(ii) জ্বর- ৩৮° সে. পর্যন্ত বা রাত্রে আরো বেড়ে যায়, সঙ্গে প্রচুর ঘাম থাকে।
(iii) ব্যথা- লিভারের স্থানে সব সময় ব্যথা এবং কখনো কখনো ডান কাঁধে তা চলে যেতে পারে। হাটার সময় ব্যথা বেড়ে যাবার কারণে রোগী লিভারের স্থানে হাতের চাপ দিয়ে হাটে। টেন্ডারনেস ও rigidity- একিউট রোগীদের থাকে, কিন্তু ক্রনিক রোগীদের টেন্ডারনেস থাকে না।
(iv) লিভার আকারে বড় হওয়া- লিভার আকারে বড় হয়, কিন্তু লিভারের আকার বড় না হয়েও অ্যাবসেস হতে পারে।
প্রশ্ন: লিভার অ্যাবসেস এর ইনভেস্টিগেশন লিখ।
লিভার অ্যাবসেস এর ইনভেস্টিগেশন :
(i) আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও কম্পিউটেড টমোগ্রাফি- দ্বারা অ্যাবসেসের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করা যায়।
(ii) এক্স-রে- Plain এক্স-রে করলে ডায়াফ্রামের ডান dome উপরের
দিকে ঠেলে উঠা অবস্থায় দেখা যায় Basal lung signs- আক্রান্ত পাশে percussion করলে dullness পাওয়া যাবে।
(iii) রক্ত পরীক্ষা লিউকোসাইটোসিস- সব ক্ষেত্রেই
লিউকোসাইটোসিস হয়। এনিমিয়া উল্লেখযোগ্য।
(iv) মল পরীক্ষা করে- অ্যামিবা বা সিস্ট (cysts) দেখতে হবে, কিন্তু এগুলো না পাওয়া গেলেও অ্যামিবিক অ্যাবসেসের ডায়াগনোসিস বাতিল হয় না।
প্রশ্ন: লিভার অ্যাবসেস এর চিকিৎসা লিখ।
লিভার অ্যাবসেস এর চিকিৎসা।
(i) রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
(ii) প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
(iii) সহজপাচ্য তরল ও অর্ধতরল খাদ্য দিতে হবে।
(iv) প্রচুর পানীয় পান করতে হবে।
(v) কম ফ্যাটযুক্ত খাবার দিতে হবে।
(vi) পর্যাপ্ত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।
(vii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে ম্যাগনেশিয়া মিউর, মার্ক সল, ব্রায়োনিয়া, কোলেস্টেরিনাম। হবে। যেমন- চেলিডোনিয়াম,
ক্যান্সার অফ লিভার (Cancer of Liver)
প্রশ্ন: ক্যান্সার অফ লিভার কাকে বলে? বা, লিভার ক্যান্সারের সংজ্ঞা দাও। ১১
ক্যান্সার অফ লিভার : ক্যান্সার অফ লিভার বা লিভার ক্যান্সার হলো লিভারের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সার) টিউমার, যা সাধারণত লিভারের কোষে অস্বাভাবিক এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া নতুন কোষের কারণে ঘটে। এটি মূলত দুটি ধরনের হতে পারে: প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার এবং সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার।
প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার: এটি লিভারের নিজের কোষ থেকে তৈরি হয়। হেপাটোসেলুলার ক্যান্সার (Hepatocellular Carcinoma বা HCC) হল সবচেয়ে সাধারণ প্রাইমারি লিভার ক্যান্সার। এটি সাধারণত হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস সংক্রমণ, সিরোসিস বা দীর্ঘস্থায়ী অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজের ফলস্বরূপ হতে পারে।
সেকেন্ডারি লিভার ক্যান্সার: এটি অন্য অঙ্গ থেকে (যেমন ফুসফুস, স্তন, কোলন) ক্যান্সারের মেটাস্ট্যাসিস (বিকিরণ বা মেটাস্টাসিস) হয়ে লিভারে ছড়িয়ে পড়ে। সেকেন্ডারি ক্যান্সার সাধারণত প্রাইমারি ক্যান্সারের তুলনায় আরও বেশি সাধারণ।
প্রশ্ন: ক্যান্সার অফ লিভারের কারণতত্ত্ব লিখ।
ক্যান্সার অফ লিভারের কারণতত্ত্ব (Etiology of Liver Cancer):
লিভার ক্যান্সার বা হেপাটোসেলুলার ক্যান্সার (Hepatocellular Carcinoma বা HCC) মূলত বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হতে পারে। এর পেছনে বিভিন্ন জৈবিক, পরিবেশগত এবং জীবনযাত্রার কারণ রয়েছে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিচে লিভার ক্যান্সারের কারণতত্ত্ব বর্ণনা করা হলো:
১. হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণ: হেপাটাইটিস বি (HBV) এবং হেপাটাইটিস সি (HCV) ভাইরাসগুলি দীর্ঘস্থায়ীভাবে লিভারের কোষে সংক্রমণ সৃষ্টি করে, যা সিরোসিস এবং শেষ পর্যন্ত লিভার ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। বিশেষত, হেপাটাইটিস বি ভাইরাস (HBV) এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাস (HCV) দীর্ঘস্থায়ী ইনফেকশন লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত। এই ভাইরাসগুলি লিভারের কোষে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারে এবং কোষের পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যার ফলে ক্যান্সারের বিকাশ হয়।
২. সিরোসিস (Cirrhosis): সিরোসিস হলো লিভারের টিস্যুর প্রদাহজনিত ক্ষতি, যা মূলত দীর্ঘস্থায়ী অ্যালকোহল সেবন, হেপাটাইটিস ভাইরাস, অথবা ফ্যাটি লিভার ডিজিজের (NAFLD) ফলে হতে পারে। সিরোসিসের কারণে লিভারের কোষে ফাইব্রোটিক (scar tissue) পরিবর্তন ঘটে, এবং এটি লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে। সিরোসিস সাধারণত লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
৩. অ্যালকোহল সেবন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন দীর্ঘসময় ধরে লিভারের ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে এলকোহলিক লিভার ডিজিজ এবং সিরোসিস হতে পারে, যা লিভার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। অ্যালকোহলের ফলে লিভারের কোষে চরম পরিবর্তন ঘটতে থাকে, যার কারণে লিভার ক্যান্সার তৈরি হতে পারে।
৪. লিভার ফ্যাটি ডিজিজ (NAFLD): নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) হলো এক ধরনের লিভার ডিজিজ, যেখানে লিভারের কোষে চর্বি জমে যায়, তবে এটি অ্যালকোহলের কারণে নয়। দীর্ঘকাল ধরে এই চর্বি জমে থাকা লিভারের ক্ষতি করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়েটো হেপাটাইটিস (NASH) এই অবস্থার আরও উন্নত রূপ, যা সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।
৫. আফ্লাটক্সিন: আফ্লাটক্সিন একটি বিষাক্ত উপাদান যা কিছু ছত্রাক উৎপন্ন করে। এই ছত্রাকগুলি শস্য, বাদাম, গম এবং অন্যান্য খাদ্যে জন্মাতে পারে, বিশেষ করে উষ্ণ অঞ্চলে। আফ্লাটক্সিন দীর্ঘকাল ধরে লিভারের ক্ষতি করে এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। আফ্লাটক্সিনের কারণে লিভারের কোষে ডিএনএ ক্ষতি হতে পারে, যা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
৬. জিনগত এবং পারিবারিক ইতিহাস: লিভার ক্যান্সারের কিছু বংশগত উপাদানও থাকতে পারে। পরিবারের কোনো সদস্য যদি লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তবে অন্য সদস্যদেরও লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ কিছু জিনগত সমস্যার কারণে, যেমন পাইকিলিক এনজাইমের (cytochrome P450) স্তরের উচ্চতা বা ডিএনএ রিপেয়ার মেকানিজমে সমস্যা থাকলে লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৭. মেটাবলিক সিনড্রোম: মেটাবলিক সিনড্রোম এমন একটি অবস্থার সমষ্টি যেখানে ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ রক্তে শর্করা (ডায়াবেটিস), অতিরিক্ত মেদ এবং উচ্চ কোলেস্টেরল থাকে। এই অবস্থাগুলি লিভারের ক্ষতি এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৮. লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন: লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন করা ব্যক্তিদের মধ্যে, বিশেষত যদি তাদের শরীরে হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণ থাকে, তাদের মধ্যে লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
৯. বয়স এবং লিঙ্গ: লিভার ক্যান্সার সাধারণত বয়সের সঙ্গে বাড়ে, এবং পুরুষদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
১০. রেডিয়েশন এক্সপোজার: দীর্ঘকাল ধরে এক্সপোজার থাকা রেডিয়েশন, যেমন পারমাণবিক বা অন্যান্য রেডিয়েশন, লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
লিভার ক্যান্সারের কারণতত্ত্ব জটিল এবং বিভিন্ন কারণের সমষ্টি হতে পারে। ভাইরাস সংক্রমণ, দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ, পরিবেশগত বিষক্রিয়া এবং জীবনযাত্রার অভ্যাস এই ক্যান্সারের বিকাশে ভূমিকা রাখে। এর থেকে বাঁচার জন্য সচেতনতা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: লিভার ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ লিখ। ১১ বা, ক্যান্সার অফ লিভারের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
ক্যান্সার অফ লিভারের ক্লিনিক্যাল ফিচার (Clinical features):
লিভার ক্যান্সারের লক্ষণগুলি সাধারণত দেরিতে প্রকাশ পায়, কারণ এটি শুরুর দিকে সাধারণত কোনো স্পষ্ট উপসর্গ দেখায় না। তবে ক্যান্সারটি বড় বা প্রগতি লাভ করলে বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। নিচে লিভার ক্যান্সারের কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
ব্যথা বা অস্বস্তি: পেটের ডান পাশে বা পেটের উপরের দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে। বিশেষ করে লিভারের আশপাশের অংশে ব্যথা দেখা দেয়।
অসুস্থতা বা ক্লান্তি: রোগী মাঝে মাঝে অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করে, যা সাধারণত শারীরিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে।
যকৃতে বড় হওয়া (Hepatomegaly): লিভার ক্যান্সার লিভারের আকার বড় করে ফেলতে পারে, যার ফলে পেটের উপরের অংশে ফুলে যাওয়া বা বড় লাগা অনুভূত হতে পারে।
ওজন কমে যাওয়া: কোনো কারণে অকারণ ওজন কমে যেতে পারে, যা প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া এবং সাধারণভাবে শরীরের শক্তি কমে যাওয়া।
হজমের সমস্যা: রোগী হজমের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে, যেমন অরুচি, বমি বমি ভাব, বা কোষ্ঠকাঠিন্য। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে খাবারের পর অস্বস্তি বা গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পিত্তবর্ণ বা জন্ডিস (Jaundice): লিভার ক্যান্সারের কারণে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে ত্বক এবং চোখের সাদা অংশের রঙ পীত হয়ে যেতে পারে, যা জন্ডিস নামে পরিচিত।
পেটের স্ফীতি (Ascites): ক্যান্সারের কারণে পেটের ভিতরে তরল জমে পেট ফুলে যেতে পারে। এটি একটি অত্যন্ত সাধারণ লক্ষণ, যা ক্যান্সারের উন্নতির দিকে নির্দেশ করে।
বাড়তি রক্তচাপ: লিভার ক্যান্সার সিস্টেমিক রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে, যা হৃদরোগের মতো বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ফিভার (Fever): রোগী হালকা থেকে মাঝারি ফিভারের সম্মুখীন হতে পারে। এটি ইনফেকশনের কারণে অথবা ক্যান্সারের বিকাশের কারণে হতে পারে।
ডিপ্রেশন ও মানসিক পরিবর্তন: কিছু রোগী মানসিক অবসাদ, বিষণ্ণতা বা চিন্তার পরিবর্তনও অনুভব করতে পারেন। এটা ক্যান্সারের শরীরিক এবং মানসিক প্রভাবের অংশ হতে পারে।
- রক্ত সঞ্চালন বা গায়ের রং ফ্যাকাশে হওয়া: রক্তচাপ কমে যাওয়ার কারণে বা লিভার কার্যক্ষমতা হ্রাসের কারণে গায়ের রং ফ্যাকাশে বা সাদা হয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন: ক্যান্সার অফ লিভারের ইনভেস্টিগেশন লিখ।
ক্যান্সার অফ লিভারের ইনভেস্টিগেশন (Investigation):
1. Metabolic abnormalities: Polycythaemia, hypercalcaemia,
hypoglycaemia and porphyna cutanea tarda.
2. Imaging: Ultrasonography.
3. à feto protein: Increased or rising serum à feto protein.
4. Liver biopsy
প্রশ্ন: ক্যান্সার অফ লিভারের ভাবীফল লিখ।
ক্যান্সার অফ লিভারের ভাবীফল (Prognosis) :
ক্যান্সার অব লিভারের ভাবীফল ভাল নয়। সঠিক সময় রোগ নির্ণয় করে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করলে প্রায় ১০% রোগী আরোগ্য হয় এবং কিছু রোগী প্রায় ১ বছর বেঁচে থাকে। অন্যথা প্রায় মৃত্যুবরণ করে।
প্রশ্ন: লিভার ক্যান্সারের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১১ বা, ক্যান্সার অফ লিভারের চিকিৎসা লিখ।
ক্যান্সার অফ লিভারের চিকিৎসা:
লিভার ক্যান্সারের ব্যবস্থাপনা রোগের স্টেজ, ক্যান্সারের প্রকৃতি এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণত ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা, সার্জারি এবং অন্যান্য সহায়ক থেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকে। নিচে লিভার ক্যান্সারের ব্যবস্থাপনার প্রধান উপায়গুলি বর্ণনা করা হলো:
সার্জারি (Surgery):
- লিভার রিসেকশন (Liver Resection): যদি ক্যান্সারটি একক স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে এবং লিভারের একটি অংশে থাকে, তবে ক্যান্সারের অংশটি অপসারণ করা যেতে পারে।
- লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন (Liver Transplantation): যদি ক্যান্সারটি লিভারের একটি বড় অংশে ছড়িয়ে পড়েছে বা লিভার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে, তবে পুরো লিভার প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। এটি একটি জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ, কিন্তু সব রোগী এই ধরনের ট্রান্সপ্লান্টেশন জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
রেডিয়েশন থেরাপি (Radiation Therapy): রেডিয়েশন থেরাপি ক্যান্সারের সেলগুলিকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত ক্যান্সারের নির্দিষ্ট স্থানকে লক্ষ্য করে প্রয়োগ করা হয়, বিশেষত যখন সার্জারি সম্ভব না হয় বা ক্যান্সারটি আবার ফিরে আসে।
কেমোথেরাপি (Chemotherapy): কেমোথেরাপি এমন ওষুধ ব্যবহার করে যা ক্যান্সার সেলগুলোকে ধ্বংস করে। এটি সাধারণত সিস্টেমিক থেরাপি হিসাবে ব্যবহার করা হয়, অর্থাৎ শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের চিকিৎসায়ও সাহায্য করে। কিছু কেমোথেরাপি ওষুধ লিভারে সরাসরি প্রয়োগ করা যেতে পারে, বিশেষত যদি ক্যান্সারটি স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে থাকে।
টার্গেটেড থেরাপি (Targeted Therapy): এই থেরাপি ক্যান্সারের কোষগুলির নির্দিষ্ট মলিকুলার লক্ষ্যগুলিতে আঘাত করে। এটি সাধারণত কেমোথেরাপির তুলনায় কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে এবং ক্যান্সারের বৃদ্ধি এবং বিস্তার বন্ধ করতে সাহায্য করে। লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট প্রোটিন এবং রিসেপ্টরগুলো লক্ষ্য করে ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
ইমিউনোথেরাপি (Immunotherapy): এই চিকিৎসায় রোগীর নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা (immune system) ক্যান্সার সেলগুলোকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। ইমিউনোথেরাপি ক্যান্সার সেলের উপর প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এবং ক্যান্সারের প্রবৃদ্ধি বন্ধ করতে সাহায্য করে।
অ্যাবলেশন থেরাপি (Ablation Therapy):
- ইথানল ইনজেকশন (Ethanol Injection): লিভারের ক্যান্সারের টিউমারে সরাসরি ইথানল ইনজেকশন করা হয় যাতে ক্যান্সার সেলগুলো ধ্বংস হয়।
- আরএফ অ্যাবলেশন (Radiofrequency Ablation): রেডিওফ্রিকোয়েন্সি (RF) তরঙ্গ ব্যবহার করে ক্যান্সার টিউমারগুলো ধ্বংস করা হয়। এটি একটি অপারেশনবিহীন পদ্ধতি।
প্যালিয়েটিভ কেয়ার (Palliative Care): প্যালিয়েটিভ কেয়ার ক্যান্সারের নিরাময়ের উদ্দেশ্যে না হলেও রোগীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি রোগীর ব্যথা, অস্বস্তি এবং অন্য যেকোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যার মোকাবিলা করতে সহায়তা করে।
হরমোনাল থেরাপি (Hormonal Therapy): লিভার ক্যান্সারের কিছু ধরনের হরমোনের প্রতি সংবেদনশীল হতে পারে। হরমোনাল থেরাপি ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে ধীর করতে এবং ক্যান্সারের উন্নতি রোধ করতে ব্যবহৃত হয়।
রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
সহজপাচ্য তরল ও অর্ধতরল খাদ্য দিতে হবে।
প্রচুর পানীয় পান করতে হবে।
কম ফ্যাটযুক্ত খাবার দিতে হবে।
পর্যাপ্ত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।
লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
অস্টিওমায়েলাইটিস
প্রশ্ন: অস্টিওমায়েলাইটিস বলতে কি বুঝ?
অস্টিওমায়েলাইটিসের সংজ্ঞা: অস্টিওমায়েলাইটিস হলো হাড়ের সংক্রমণ, যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের কারণে ঘটে। এটি হাড়ের মধ্যে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং সেই হাড়ের পুষ্টি সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, ফলে হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অস্টিওমায়েলাইটিস সাধারণত সংক্রমণের ফলে হাড়ের মজ্জা, অর্থাৎ হাড়ের ভিতরের অংশে প্রভাব ফেলে এবং কখনো কখনো এটি আশেপাশের নরম টিস্যুও প্রভাবিত করতে পারে।
অস্টিওমায়েলাইটিসটি একটি গুরুতর অবস্থা, যা দ্রুত চিকিৎসা না পেলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন হাড়ের ক্ষতি বা অপারেশন প্রয়োজন।
হাড়ের ক্যানসেলাস টিস্যু তথা বোন ম্যারোর পায়োজেনিক অর্গানিজম দ্বারা প্রদাহ হওয়াকে অস্টিওমায়েলাইটিস বলা হয়। অসিটওমায়েলাইটিস দুই প্রকার। যথা- একিউট অস্টিওমায়েলাইটিস ও ক্রনিক অস্টিওমায়েলাইটিস।
প্রশ্ন: একিউট অস্টিও-মাইলাইটিসের সংজ্ঞা, কারণ ও লক্ষণাবলি লিখ।
একিউট অস্টিও-মাইলাইটিসের সংজ্ঞা:
হঠাৎ হাড়ের ক্যানসেলাস টিস্যু তথা বোন ম্যারোর মধ্যে পায়োজেনিক অর্গানিজম দ্বারা প্রদাহ সৃষ্টি হলে, তাকে একিউট অস্টিওমায়েলাইটিস বলা হয়। একিউট অস্টিওমায়েলাইটিস মূলতঃ শিশুদের কমন রোগ। এটি একটি মারাত্বক ও অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ রোগ।
একিউট অস্টিও-মাইলাইটিসের কারণ :
(i) বয়স: শিশুদের বেশি হয়।
(ii) পুরুষদের বেশি হয়।
(iii) আঘাতের ইতিহাস থাকতে পারে।
(iv) সামাজিক অবস্থান: দারিদ্রতা বা অভাবজনিত এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা।
(v) রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু: স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্রেপটোকক্কাস, নিউমোকক্কাস, হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি, সালমোনিলা, স্ট্যাফাইলোকক্কাস অ্যালবাস ইত্যাদি।
একিউট অস্টিও-মাইলাইটিসের লক্ষণাবলি:
(i) প্রচন্ড ব্যথা। আক্রান্ত অঙ্গে হঠাৎ ব্যথা হয় এবং নড়াচড়া করলে তা বৃদ্ধি পায়। ব্যথা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(ii) জ্বর- জ্বরজ্বরভাব জ্বর থাকে।
(iii) শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং অস্থিরতা বর্তমান থাকে।
(iv) পুঁজযুক্ত ফোঁড়া বর্তমান থাকবে।
ইনভেস্টিগেশন:
ব্লাড ফর সিবিসি, ব্লাড ফর কালচার এবং এক্সরে করলে-
(v) ইএসআর ও শ্বেত রক্ত কনিকা বৃদ্ধি পাবে।
(vi) ব্লাড কালচার করলে রক্তে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু উপস্থিতি পাওয়া যাবে।
(vii) এক্স-রে এক্সরে করলে সফ্ট টিস্যু ফোলা পাওয়া যাবে।
কলিলিথিয়াসিস (Cholelithiasis/ Gall stones)
প্রশ্ন: কলিলিথিয়াসিস বলতে কি বুঝ? ১৬ বা, কলিলিথিয়েসিসের সংজ্ঞা দাও। ১৮, ২০
কলিলিথিয়াসিস এর সংজ্ঞা: কলিলিথিয়াসিস হলো পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টি হওয়া, যা সাধারণত পিত্তের উপাদান (যেমন কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন ইত্যাদি) সঞ্চিত হয়ে কঠিন অবস্থায় পরিণত হওয়ার ফলে ঘটে। এই পাথরগুলো পিত্তথলির মধ্যে জমে এবং পিত্তের প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারে, যা তীব্র পিত্তথলি প্রদাহ (কলিসিস্টাইটিস) বা অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। কলিলিথিয়াসিস সাধারণত পেটের ডান দিকের উপরের অংশে ব্যথা সৃষ্টি করে, এবং কখনও কখনও এটি জন্ডিস বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
প্রশ্ন: কলিলিথিয়াসিসের কারণসমূহ লিখ। ১৬
কলিলিথিয়াসিসের কারণসমূহ :
কলিলিথিয়াসিসের কারণসমূহ:
পিত্তের উপাদানের ভারসাম্যহীনতা: পিত্তে কোলেস্টেরল বা বিলিরুবিনের অতিরিক্ত পরিমাণ বা অন্যান্য উপাদানের অস্বাভাবিকতা পাথর তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে। কোলেস্টেরল পাথর সাধারণত কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে তৈরি হয়।
মুটিয়ে যাওয়া (Obesity): শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে যাওয়ার কারণে পিত্তথলির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ফলে পাথর তৈরির সম্ভাবনা বাড়ে।
বয়স: বয়সের সাথে সাথে পিত্তথলির কার্যকারিতা কমে যায়, যার ফলে পাথর তৈরির ঝুঁকি বেড়ে যায়। সাধারণত 40 বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যায়।
গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে পিত্তথলির কার্যকারিতা কমে যায় এবং পাথর সৃষ্টি হতে পারে। প্রস্টেজেরোন নামক হরমোন পিত্তথলির সঙ্কোচন ক্ষমতা কমায়, যা পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
বংশগত কারণ: কিছু ব্যক্তির মধ্যে পিত্তথলির পাথর সৃষ্টির জন্য একটি পারিবারিক ইতিহাস থাকতে পারে, যা বংশগতভাবে প্রভাবিত হয়।
ডায়েট (খাদ্যাভ্যাস): উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া পিত্তথলিতে পাথর সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়। তাছাড়া, কম ফাইবারযুক্ত খাদ্যাভ্যাসও এই ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
রোগ বা শারীরিক অবস্থার উপস্থিতি: ডায়াবেটিস, লিভারের রোগ, ক্রনিক প্যানক্রিয়াটাইটিস, এবং হাইপারট্রাইগ্লিসারিডিমিয়া (রক্তে চর্বির অতিরিক্ত পরিমাণ) কলিলিথিয়াসিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধায় থাকা (Fasting): দীর্ঘদিন ক্ষুধায় থাকলে পিত্তথলির মধ্যে পিত্ত জমে যায় এবং পাথর তৈরি হতে পারে। ক্ষুধায় থাকার কারণে পিত্তথলি সঙ্কুচিত হতে পারে, যার ফলে পাথর তৈরি হয়।
যকৃৎ ও পিত্তথলির কিছু শারীরিক অবস্থা: যকৃৎ বা পিত্তথলির প্রদাহ বা আঘাতও পাথর তৈরির একটি কারণ হতে পারে।
তীব্র চিকিৎসা বা ড্রাগস: কিছু ড্রাগস যেমন, অ্যালেসটেট এবং স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ, পিত্তথলিতে পাথর তৈরির সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
রক্তে অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক উপাদানের তারতম্যের ফলে।
শারীরিক পরিশ্রম না করলে।
লোহিত কনিকা অতিরিক্ত ভাঙ্গার ফলে অতিরিক্ত পিত্তরস উৎপন্ন হওয়ার কারণে।
দীর্ঘদিন যাবৎ কোলেষ্টেরল থেরাপি নিলে।
বহুদিন যাবত জন্মনিয়ন্ত্রনকারী ট্যাবলেট খাওয়ার কারণে।
পিত্তরসের মধ্যে অস্বাভাবিক মাত্রায় বাইল সল্ট থাকলে।
স্থুলদেহের অধিকারী ব্যক্তিদের।
অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহনের কারণে।
জন্মগতভাবে মেটাবলিজমের গোলযোগের কারণে।
বিভিন্ন রোগের জটিলতার কারণে- টাইফয়েড, ডায়াবেটিস, ইত্যাদি।
মাইক্রোঅর্গানিজমের স্ট্রেপটোকক্কাস, ই. কোলাই ইত্যাদি। কারণে- স্ট্যাফাইলোকক্কাস,
প্রশ্ন: কলিলিথিয়াসিসের প্রকারভেদ লিখ। বা, কলিলিথিয়াসিসের প্রকারভেদ বর্ণনা কর। ১৮, ২০
কলিলিথিয়াসিসের প্রকারভেদ:
কোলেস্টেরল পাথর (Cholesterol Stones): এই পাথরগুলো প্রধানত কোলেস্টেরলের অতিরিক্ত জমাটবদ্ধ হওয়ার কারণে তৈরি হয়। এটি সাধারণত হলুদ বা সাদা রঙের হয়ে থাকে এবং সাধারণত বড় আকারে থাকে। উচ্চ কোলেস্টেরল স্তর, মুটিয়ে যাওয়া, গর্ভাবস্থা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি কারণের কারণে এই পাথর তৈরি হয়।
পিগমেন্ট পাথর (Pigment Stones): এই পাথরগুলো বিলিরুবিনের অতিরিক্ত পরিমাণের কারণে তৈরি হয় এবং তারা সাধারণত কালো বা বাদামী রঙের হয়। লিভারের রোগ (যেমন হেপাটাইটিস), লিভারের ক্রনিক ইনফেকশন, হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া (রক্তে রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার সমস্যা) বা অন্যান্য কারণে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে এই পাথর তৈরি হতে পারে।
মিক্সড পাথর (Mixed Stones): এটি কোলেস্টেরল এবং পিগমেন্ট পাথরের মিশ্রণ হতে পারে। এ ধরনের পাথর সাধারণত উভয় উপাদানকে একত্রিত করে তৈরি হয় এবং সেগুলির আকার মাঝারি থেকে বড় হতে পারে।
ক্যালকুলাস পাথর (Calculus Stones): এই পাথরগুলো সাধারণত পিত্তথলির মধ্যে সঞ্চিত পিত্তের উপাদান যেমন কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য যৌগের সমন্বয়ে তৈরি হয়।
প্রশ্ন: কলিলিথিয়াসিসের লক্ষণাবলি লিখ। ১০ বা, কলিলিথিয়েসিসের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর। ১৮, ২০
কলিলিথিয়াসিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার/ লক্ষণাবলী:
কলিলিথিয়াসিসের লক্ষণ সাধারণত পিত্তথলি বা পিত্তনালীর পাথর দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ওপর নির্ভর করে এবং এটি বিভিন্ন পর্যায়ে উপসর্গ তৈরি করতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণাবলি হল:
পেটের ডান দিকে ব্যথা: সাধারণত পেটের ডানদিকে (উপরের অংশে) তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, যা পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার কারণে হতে পারে। ব্যথাটি খাওয়ার পর বা রাতে আরও তীব্র হতে পারে।রাইট হাইপোকন্ডিয়াক ও এপিগ্যাস্ট্রিক অঞ্চলে হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা আরম্ভ হয়। ব্যথার প্রকৃতি- ব্যথা হঠাৎ আসে আবার হঠাৎ চলে যায়। ব্যথা লিভার অঞ্চল ভেদ করে ডান স্ক্যাপুলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। । ব্যথার তীব্রতায় রোগী ছটফট করতে থাকে।
বিলম্বিত পাচনতন্ত্র সমস্যা: গ্যাস, বমি, অস্বস্তি, পেট ফুলে যাওয়া, অ্যাসিডিটি ইত্যাদি সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে।
বমি ও বমির অনুভূতি: পিত্তথলির পাথর বা অপ্রত্যাশিত গ্লাইডিং পাথর অবস্থায় বমি হতে পারে। বমির অনুভূতি তীব্র হতে পারে এবং খাবার খাওয়ার পর বাড়ে।
জন্ডিস (Yellowing of Skin and Eyes): পিত্তনালীর পাথর যদি নালীর মধ্যে আটকে যায়, তবে এটি জন্ডিস সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়।
পেটের ফুলে যাওয়া বা স্ফীত হওয়া: পেটের উপরের অংশে ফুলে যাওয়া অনুভূত হতে পারে, যা পিত্তথলি বা পিত্তনালীতে সমস্যা সৃষ্টি করার ফলে হতে পারে।
মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি: বিশেষত 40 বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে এটি বেশি হয়, বিশেষত গর্ভাবস্থা, মুটিয়ে যাওয়া বা হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে।
পাথরের স্থানান্তরের কারণে তীব্র ব্যথা: যদি পাথর পিত্তনালীতে চলে যায়, তবে এটি প্রচণ্ড ব্যথার কারণ হতে পারে, যা “পিথ হিপ্যাটিক কোলিক” নামে পরিচিত।
অনিয়মিত হজম বা খাবার হজম করতে সমস্যা: খাবার হজম করতে সমস্যা হতে পারে, বিশেষত তেলযুক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর।
জ্বর: সাধারণত জ্বর, শীতল ভাব বা শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা যায়।
- প্রচুর ঘর্মস্রাব ও হাত-পা শীতল হয়ে যায়।
- বমি বমিভাব ও পিত্ত বমি করে।
- হেপাটোমেগালি দেখা দিতে পারে।
- পালস ও রেসপিরেশন এর পরিবর্তন দেখা দেয়।
- মলের রং পরিবর্তন হয়ে সাদা হয়ে যায়।
প্রশ্ন: কলিলিথিয়াসিসের নিদানতত্ত্ব লিখ। ১৩
কলিলিথিয়াসিসের নিদানতত্ত্বঃ জীবাণু সংক্রমণের দ্বারা পুনঃপুনঃ পিত্তথলীর প্রদাহ সৃষ্টির ফলে, শ্লেষ্মা, মৃত তন্তুকোষ ও মৃত জীবাণুসমূহ একত্রিত হয়ে একটি কেন্দ্রীয় মূল অংশ তৈরী করে, বিশেষ করে যখন প্রদাহের ফলে পিত্তকোষ হতে পিত্তের প্রবাহ শ্লথ হয়। পিত্ত প্রবাহ শ্লথ হলে ইহা জমতে সুবিধা হয়। ইহার উপর কোলেষ্টেরল ও পিত্তের রঞ্জক পদার্থ এই মূল অংশের উপর জমে পাথরের আকার বড় করে।
প্রশ্ন: কলিলিথিয়াসিসের রোগ নির্ণয় লিখ। ১৩, ২০ বা, কিভারে কলিলিথিয়াসিস রোগ নির্ণয় সাধিত হয়? ১০
কলিলিথিয়াসিসের রোগ নির্ণয়/ইনভেস্টিগেশন (Investigations for Cholelithiasis):
কলিলিথিয়াসিস নির্ণয়ের জন্য ক্লিনিক্যাল উপসর্গ এবং বিভিন্ন ল্যাবরেটরি ও ইমেজিং পরীক্ষা ব্যবহার করা হয়।
১. ক্লিনিক্যাল ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা
- রোগীর উপসর্গ:
- ডানদিকের পেটের উপরের অংশে ব্যথা
- বমি বা বমির অনুভূতি
- চর্বিযুক্ত খাবারের পর অস্বস্তি
- জন্ডিস।
- Murphy’s Sign: ডানদিকের উপরের পেট চেপে ধরলে ব্যথার কারণে শ্বাস বন্ধ হওয়ার লক্ষণ।
২. ল্যাবরেটরি পরীক্ষা
- CBC (Complete Blood Count): সংক্রমণের কারণে WBC (White Blood Cell) বৃদ্ধি পেতে পারে।
- লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT): বিলিরুবিন, ALP (Alkaline Phosphatase), ALT (Alanine Transaminase), এবং AST (Aspartate Transaminase) মাত্রা বৃদ্ধি পেলে পিত্তনালীর প্রতিবন্ধকতা নির্দেশ করে।
- Serum Amylase & Lipase: প্যানক্রিয়াসে প্রদাহ থাকলে বৃদ্ধি পেতে পারে।
- C-Reactive Protein (CRP): প্রদাহ থাকলে উচ্চমাত্রায় উপস্থিত।
৩. ইমেজিং স্টাডিজ
- আলট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasonography):
- পিত্তথলিতে পাথর বা স্লাজ দেখা যায়।
- এটি প্রথম এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা।
- CT স্ক্যান (Computed Tomography):
- পাথরের আকার ও অবস্থান নির্ণয়ে কার্যকর।
- MRCP (Magnetic Resonance Cholangiopancreatography):
- পিত্তনালী ও প্যানক্রিয়াসের সঠিক চিত্র প্রদান করে।
- HIDA স্ক্যান (Hepatobiliary Iminodiacetic Acid Scan):
- পিত্তথলির কার্যক্ষমতা নির্ণয় এবং ব্লকেজ শনাক্ত করতে ব্যবহৃত।
- ERCP (Endoscopic Retrograde Cholangiopancreatography):
- পিত্তনালীতে পাথর শনাক্ত এবং অপসারণের জন্যও ব্যবহৃত হয়।
৪. স্পেশাল পরীক্ষা
- Endoscopic Ultrasonography (EUS):
- ছোট পাথর নির্ণয়ে সাহায্য করে।
- Oral Cholecystography (OCG):
- বর্তমানে কম ব্যবহৃত হলেও পিত্তথলির পাথর নির্ণয়ে সাহায্য করে।
৫. ডিফারেনশিয়াল ডায়াগনসিস
- অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস
- পেপটিক আলসার
- অ্যাকিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস
- পিত্তথলি ক্যান্সার।
প্রাথমিকভাবে আলট্রাসনোগ্রাফি এবং LFT এর ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করা হয়। জটিল বা সন্দেহজনক ক্ষেত্রে আরও উন্নত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
প্রশ্ন: কলিলিথিয়াসিসের জটিলতাসমূহ লিখ। ১৩, ১৮
কলিলিথিয়াসিসের জটিলতাসমূহ:
(i) গলব্লাডার ছিদ্র হওয়া, বাইল ডাক্ট ছিদ্র হওয়া।
(ii) এম্পায়েমা গলব্লাডার। (iii) হেপাটাইটিস। (iv) পেরিটোনাইটিস।
(v) একিউট কলিসিস্টাইটিস, ক্রণিক কলিসিস্টাইটিস।
(vi) অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস, গ্যাংগ্রীন, জন্ডিস
(vii) প্যানক্রিয়াটাইটিস, ক্যান্সার।
প্রশ্ন: কলিলিথিয়াসিস ও কলিসিস্টাইটিসের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। ১৩
কলিলিথিয়াসিস ও কলিসিস্টাইটিসের মধ্যে পার্থক্য:
বিষয়বস্তু | কলিলিথিয়াসিস (Cholelithiasis) | কলিসিস্টাইটিস (Cholecystitis) |
---|---|---|
সংজ্ঞা | পিত্তথলিতে পাথর বা গলস্টোনের উপস্থিতি। | পিত্তথলির প্রদাহ, যা সাধারণত পাথর দ্বারা সৃষ্ট হয়। |
কারণ | পিত্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন বা পিত্ত লবণ। | পিত্তথলিতে পাথর আটকে গিয়ে প্রদাহ বা সংক্রমণ সৃষ্টি করা। |
লক্ষণাবলী | – উপরের ডান পেটে মৃদু থেকে তীব্র ব্যথা। | – ডান পেটের উপরের অংশে তীব্র ব্যথা। |
– বমি বা বমির অনুভূতি। | – বমি, জ্বর এবং ঠান্ডা লাগা। | |
– চর্বিযুক্ত খাবারের পর অস্বস্তি। | – Murphy’s Sign পজিটিভ। | |
প্রাথমিক অবস্থায় ব্যথা | সাধারণত মাঝে মাঝে ব্যথা (biliary colic)। | ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী এবং তীব্র। |
জ্বর | সাধারণত অনুপস্থিত। | প্রায়শই থাকে। |
জন্ডিস | কম সাধারণ। | বেশি সাধারণ, যদি পিত্তনালী ব্লক হয়। |
রোগ নির্ণয় | আলট্রাসনোগ্রাফিতে পিত্তথলিতে পাথর দেখা যায়। | আলট্রাসনোগ্রাফিতে পিত্তথলির দেয়ালে ফোলাভাব বা তরল জমা। |
জটিলতা | পিত্তনালীর ব্লক, প্যানক্রিয়াটাইটিস, পিত্তথলি ক্যান্সার। | এম্পাইমা, গ্যাংগ্রিন, পিত্তথলির ফেটে যাওয়া। |
চিকিৎসা | – প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচার (Cholecystectomy)। | – অবিলম্বে অস্ত্রোপচার এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক। |
প্রতিরোধ | স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার। | দ্রুত চিকিৎসা এবং পিত্তথলির সঠিক যত্ন। |
- কলিলিথিয়াসিস হলো পিত্তথলিতে পাথর থাকা।
- কলিসিস্টাইটিস হলো পিত্তথলির প্রদাহ, যা পাথর বা অন্যান্য কারণে হয়ে থাকে।
অতএব, দুটি সম্পর্কিত হলেও তাদের লক্ষণ, কারণ এবং ব্যবস্থাপনায় পার্থক্য রয়েছে।
প্রশ্ন: কলিলিথিয়াসিসের চিকিৎসা প্রণালী বর্ণনা কর। ১০ বা, কলিলিথিয়াসিসের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১৬ বা, কলিলিথিয়েসিসের হোমিওপ্যাথিক এবং সার্জিক্যাল চিকিৎসা লিখ। ১৮
কলিলিথিয়াসিসের চিকিৎসা প্রণালী বর্ণনা:
কনজারবেটিভ চিকিৎসা/হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:
(ক) ঔষধ : কার্ডয়াস মেরিনাস, ক্যালকেরিয়া কার্ব, চেলিডোনিয়াম মেজাজ, চায়না অফিসিনালিস, নাক্স-ভমিকা ইত্যাদি ঔষধ লক্ষণানুসারে সেবন করতে দিতে হবে।
করণীয়:
(i) রোগীকে সম্পূর্ণ বিছানায় বিশ্রামে রাখতে হবে।
(ii) প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
(iii) প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
(iv) মুখে খেতে না পারলে ইন্টারভেনাস গ্লুকোজ স্যালাইন দিতে হবে।
(v) লক্ষণানুসারে ব্যথা কমার জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(vi) রোগীর অবস্থার উন্নতির জন্য পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিত- পালস, ব্লাড প্রেসার, রাইট হাইপোকন্ড্রিয়াক শক্ত কিনা পরীক্ষা করতে হবে।
নিষেধ:
(i) ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করতে হবে।
(ii) সকল প্রকার চর্বিযুক্ত খাবার নিষেধ।
(iii) অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ব্যায়াম।
পথ্য:
(i) ব্যথার প্রচন্ড অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মুখে খাবার দেয়া নিষেধ।
(ii) রোগী মাঝে মাঝে তীব্র বমি করে সেই অবস্থায় করণীয়-
– রাইলস টিউবের মাধ্যমে তরল খাবার সরবরাহ করা।
শিরা পথে গ্লুকোজ স্যালাইনের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করা।
(iii) বমি না থাকলে করণীয়-
– মুখে পানি এবং পানীয় পান করাতে হবে।
চর্বিবিহীন পথ্য – স্তূপ।
– দুধ দেয়া যাবে।
– তাজা ফলমূল এর জুস।
সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ উপরিউক্ত চিকিৎসায় রোগী আরোগ্য না হলে এবং পাথর বড় হলে জটিলতা এড়ানোর জন্য সার্জিক্যাল চিকিৎসা কলিসিস্টেকটমি
করতে হবে।
গলব্লাডার
হেপাটিক ডাক্ট
কমন বাইল ডাক্ট
প্যানক্রিয়াটিক ডাক্ট
হেপাটো- প্যানক্রিয়াটিক এম্পুলা
প্যানক্রিয়াস
চিত্র: বিলিয়ারী সিস্টেম।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করা হয় এ রকম পাঁচটি সার্জিক্যাল রোগের নাম ও তিনটি করে ঔষধের নাম লিখ। ১২
হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করা হয় এ রকম পাঁচটি সার্জিক্যাল রোগের নাম ও
তিনটি করে ঔষধের নাম:
(i) টনসিলাইটিস- বেলেডোনা, ফাইটোলক্কা, মার্ক-সল।
(ii) কলিলিথিয়াসিস- কার্ডয়াস মেরিনাস, ক্যালকেরিয়া কার্ব, চেলিডোনিয়াম মেজাজ।
(iii) রেনাল স্টোন- বার্বারিস ভাল, বেনজোয়িক এসিড, সার্সাপেরিলা।
(iv) একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস- বেলেডোনা, ফসফরাস, মার্ক-কর।
(v) এনাল ফিসার- নাইট্রিক এসিড, অরাম মেটালিকাম, সাইলিসিয়া।
কলিসিস্টাইটিস (Cholecystitis)
প্রশ্ন: কলিসিস্টাইটিস কাকে বলে?
কলিসিস্টাইটিস এর সংজ্ঞা: পিত্তথলী, কমন বাইল ডাক্ট, হেপাটিক ডাক্ট এর প্রদাহকে কলিসিস্টাইটিস বলে।
প্রশ্ন: কলিসিস্টাইটিসের কারণসমূহ কি কি? ১২, ১৪ বা, কলিসিস্টাইটিস এর কারণতত্ত্ব লিখ।
কলিসিস্টাইটিস এর কারণতত্ত্ব:
(i) কোন কারণ বশতঃ সিস্টিক ডাক্ট, গলব্লাডারের নেক অথবা কমন বাইল ডাক্টে অবরোধ সৃষ্টি হলে।
(ii) গলব্লাডারে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হলে।
(iii) পিত্তপাথর দ্বারা অবরোধ সৃষ্টি হলে।
(iv) টিউমার বা মিউকাস দ্বারা অবরোধ হলে।
(v) কোন কারণ বশতঃ পিত্তথলীতে প্রদাহ ও পুঁজ সৃষ্টি হলে।
(vi) অতিরিক্ত বাইল উৎপন্ন হলে।
(vii) অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস হলে।
(viii) টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া জ্বরের জটিলতার ফলে। (
ix) পিত্তরসের রাসায়নিক উপাদানের তারতম্য হলে।
(x) আন্ত্রিক জীবাণু দ্বারা ইনফেকশন হলে যেমন- ই. কোলাই,
(xi) বড় ধরনের আঘাত, ব্যাপক স্থান পুড়ে যাওয়ার ফলে এবং অপারেশনের পর।
(xii) ডায়াবেটিস মেলিটাস।
প্রশ্ন: কলিসিস্টাইটিস এর প্রকারভেদ লিখ।
কলিসিস্টাইটিস এর প্রকারভেদ:
(i) একিউট কলিসিস্টাইটিস।
ক) একিউট ক্যালকুলাস কলিসিস্টাইটিস।
খ) একিউট এক্যালকুলাস কলিসিস্টাইটিস।
(ii) ক্রণিক কলিসিস্টাইটিস।
প্রশ্ন: কলিসিস্টাইটিস এর ইনভেস্টিগেশন লিখ।
কলিসিস্টাইটিস এর ইনভেস্টিগেশন:
(i) Blood for T.C, D.C, E.S.R, Hb%. WBC বেড়ে যাবে।
(ii) এবডোমেনের প্লেইন এক্সরে- গলব্লাডারে ইনফেকশনের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যাবে।
(iii) হেপাটো-বিলিয়ারী সিস্টেমের আল্ট্রাসনোগ্রাফি- গলব্লাডারের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়বে।
প্রশ্ন: কলিসিস্টাইটিস এর জটিলতা লিখ।
কলিসিস্টাইটিস এর জটিলতা:
(i) পারফোরেশন,
(ii) গ্যাংগ্রীন,
(iii) পেরিটোনাইটিস,
(iv) কলিলিথিয়াসিস,
(v) জন্ডিস,
(vi) হেপাটোমেগালি,
(vii) হেপাটাইটিস,
(viii) সিরোসিস অব লিভার,
(ix) ক্যান্সার অব লিভার।
প্রশ্নঃ কলিসিস্টাইটিসের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর। ১০, ১২, ১৪ বা, কলিসিস্টাইসিস এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
কলিসিস্টাইসিস এর ক্লিনিক্যাল ফিচারঃ
(i) বয়স: ৩০ থেকে ৫০ বছরের ব্যক্তিদের অধিক হয়।
(ii) লিঙ্গ – মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।
(iii) শারীরিক গঠন : চর্বিবহুল বা মেদ বহুল ব্যক্তি।
লক্ষণাবলীঃ
(i) ব্যথা : অবস্থান- ব্যথা প্রধানতঃ রাইট হাইপোকন্ড্রিয়াক এবং ইপিগ্যাস্ট্রিয়াম অঞ্চলে হয়।
ব্যথার প্রকৃতি- ব্যথা হঠাৎ প্রচন্ড এবং কলিক ধরনের, টেনে ছিঁড়ে ফেলার ন্যায়।
ব্যথার ফোর্স বা গতি ব্যথা স্ক্যাপুলার ইনফেরিয়র এঙ্গেলে অথবা ডান সোল্ডারের মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। কখনো কখনো ব্যথা এবডোমেনের বাম পাশের বুকে ছড়াতে পারে।
স্থায়ীত্ব কাল : ১/২ ঘন্টা থেকে কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয়।
(ii) রোগী অস্থির প্রকৃতির হয়।
(iii) বমিবমিভাব এবং বমি হতে পারে। উগ্র বমি হতে পারে।
(iv) জ্বর জ্বর ভাব ও জ্বর থাকতে পারে।
(v) রোগী সামান্য উপশমের জন্য গরম সেক নিতে চায়।
(vi) ব্যথার পুনরাক্রমনের ইতিহাস থাকবে।
(vii) উদগার থাকতে পারে।
(viii) পেট ফাঁপার ইতিহাস থাকবে।
(ix) চর্বি জাতীয় খাদ্যের প্রতি অনীহার ইতিহাস থাকতে পারে।
সাইন:
(i) শীতসহ জ্বর এবং খিচুনী থাকতে পারে।
(ii) জন্ডিস থাকতে পারে।
(iii) দ্রুত হৃদস্পন্দন থাকবে।
(iv) পেটের উপরের অংশে অস্বস্থিবোধ।
(V) ডান হাইপোকন্ড্রিয়াক অঞ্চলে হাত দ্বারা পরীক্ষা করলে শক্ত, ফোলা, স্পর্শকাতর ব্যথা অনুভব হবে।
(vi) হাত দ্বারা পরীক্ষা করলে পেটে একটি পিন্ড অনুভব হতে পারে। (vii) মারফিস সাইন পজিটিভ হবে। (Murphy’s sign: Positive.)
প্রশ্নঃ কলিসিস্টাইটিসের ব্যবস্থানা লিখ। ১০, ১২, ১৪ বা, কলিসিস্টাইসিস এর চিকিৎসা লিখ। কলিসিস্টাইসিস এর চিকিৎসাঃ
(i) রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
(ii) প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
(iii) রোগীর অবস্থার উন্নতির জন্য পালস, ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করতে হবে।
(iv) প্রয়োজনে ইন্টারভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।
করণীয়: (i) গরম সেক দিলে আরাম বোধ করলে দিতে হবে।
নিষেধ: (i) ধুমপান ও মদ্যপান অভ্যাস থাকলে বর্জন করতে হবে।
(ii) সকল প্রকার চর্বিযুক্ত খাবার। (iii) অতিরিক্ত পরিশ্রম করা।
(iv) অতিরিক্ত ব্যায়াম করা।
পথ্যঃ
(i) সহজপাচ্য তরল ও অর্ধ তরল পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে।
(ii) তাজা ফলমূল ও শাকসব্জি খাদ্য হিসাবে দিতে হবে।
(iii) ব্যথার প্রচন্ড অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মুখে খাবার দেয়া নিষেধ।
(iv) রোগী মাঝে মাঝে তীব্র বমি করবে সে অবস্থায় করণীয়-
রাইলস টিউবের মাধ্যমে তরল খাবার সরবরাহ করতে হবে। – শিরাপথে গ্লুকোজ স্যালাইনের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করতে হবে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: যখন রক্ষণশীল চিকিৎসা ব্যর্থ হবে এবং রোগ জটিল আকার ধারণ করবে তখন কলিসিস্টেকটমী করতে হবে।
হার্নিয়া (Hernias.)
প্রশ্ন: হার্নিয়া কি? ইহার শ্রেণীবিভাগ কর। ০৮, ১৫ বা, হার্নিয়ার সংজ্ঞা দাও। ইহার শ্রেণী বিভাগ কর। ১০, ১৩
হার্নিয়ার সংজ্ঞা: হার্নিয়া (Hernia) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে কোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বের হয়ে আশেপাশের দুর্বল বা ছিদ্রযুক্ত অঞ্চল দিয়ে চামড়ার নিচে স্ফীত হয়। সাধারণত এটি পেটের দেয়ালের দুর্বল অংশ দিয়ে অন্ত্র বা চর্বির একটি অংশ বের হয়ে আসে।
হার্নিয়ার শ্রেণীবিভাগ:
হার্নিয়াকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়, যেমন এর অবস্থান, কারণ, এবং প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে।
1. অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে:
ইনগুইনাল হার্নিয়া (Inguinal Hernia): পেটের নিম্নাংশে ইনগুইনাল ক্যানালের মাধ্যমে অন্ত্র বের হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ হার্নিয়া।
- ডাইরেক্ট ইনগুইনাল হার্নিয়া: পেটের দেয়ালের দুর্বল অংশ দিয়ে অন্ত্র বের হয়।
- ইনডাইরেক্ট ইনগুইনাল হার্নিয়া: জন্মগতভাবে ইনগুইনাল ক্যানাল বন্ধ না থাকার কারণে অন্ত্র বের হয়।
ফেমোরাল হার্নিয়া (Femoral Hernia): পেটের নিম্নাংশে ফেমোরাল ক্যানালের মাধ্যমে অন্ত্র বের হয়। এটি নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
আমবিলিকাল হার্নিয়া (Umbilical Hernia): নাভির চারপাশে অন্ত্র বের হয়ে আসে। এটি শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সাধারণ।
ইনসিশনাল হার্নিয়া (Incisional Hernia): পূর্বে অস্ত্রোপচার করা স্থানের ক্ষতস্থান দুর্বল হয়ে গেলে অন্ত্র বের হয়ে আসে।
হায়াটাল হার্নিয়া (Hiatal Hernia): ডায়াফ্রামের দুর্বল অংশ দিয়ে পাকস্থলীর অংশ উপরের দিকে বের হয়ে আসে।
- লাম্বার হার্নিয়া
- অবটুরেটর হার্নিয়া
- সায়াটিক হার্নিয়া
2. কারণের ওপর ভিত্তি করে:
- কনজেনিটাল হার্নিয়া (Congenital Hernia): জন্মগত অবস্থার কারণে হয়।
- অ্যাকুইয়ার্ড হার্নিয়া (Acquired Hernia): পরবর্তীকালে দুর্বল পেটের দেয়াল বা অতিরিক্ত চাপের কারণে হয়।
3. প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে:
- রিডিউসিবল হার্নিয়া (Reducible Hernia): হার্নিয়ার স্ফীত অংশ চাপ দিলে বা শুয়ে পড়লে ভেতরে প্রবেশ করে।
- ইরিডিউসিবল হার্নিয়া (Irreducible Hernia): স্ফীত অংশ ভেতরে প্রবেশ করানো সম্ভব নয়।
- স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া (Strangulated Hernia): হার্নিয়ার অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যা একটি জরুরি অবস্থা।
- ইনফ্রেন্ড হার্নিয়া।
- অবস্ট্রাকটেড হার্নিয়া
4. হার্নিয়ার sac-এর contents অনুযায়ী:
(i) এন্টারোসিল, (ii) ওমেন্টোসিল।
প্রশ্নঃ হার্নিয়ার কারণ লিখ। ২০১৮
হার্নিয়ার কারণ:
হার্নিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: জন্মগত কারণ এবং অর্জিত কারণ।
১. জন্মগত কারণ (Congenital Causes):
- টিস্যুর দুর্বলতা: জন্মগতভাবে পেটের দেয়াল বা মাংসপেশির দুর্বলতা।
- ইনগুইনাল ক্যানাল বন্ধ না হওয়া: ভ্রূণ অবস্থায় পুরুষ শিশুদের ক্ষেত্রে টেস্টিস নেমে আসার সময় ইনগুইনাল ক্যানাল বন্ধ না হলে জন্মগত হার্নিয়া হতে পারে।
২. অর্জিত কারণ (Acquired Causes):
- ভারী জিনিস তোলা।
- দীর্ঘ সময় ধরে কাশি (যেমন ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস বা ধূমপায়ীদের কাশি)।
- দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য, যার ফলে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দিতে হয়।
- মূত্রত্যাগে বাধা (যেমন প্রোস্টেট সমস্যায় দীর্ঘ সময় চাপ দিতে হয়)।
- গর্ভাবস্থা, বিশেষত একাধিক গর্ভধারণ।
- ওজনাধিক্য (মোটা হওয়া), যা পেটের দেয়ালে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
- পূর্বের অস্ত্রোপচারের ক্ষতস্থান (ইনসিশনাল হার্নিয়া)।
- আঘাতজনিত ক্ষতি বা পেটের দেয়ালে আঘাত।
- পেশির অবক্ষয় বা দূর্বলতা (বিশেষত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে)।
- বার্ধক্যের কারণে পেটের টিস্যু দুর্বল হওয়া।
- দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করা।
- অতিরিক্ত ধূমপান বা মাদকাসক্তি, যা টিস্যুর পুনর্গঠনে বাধা সৃষ্টি করে।
- অপুষ্টিজনিত কারণে পেশির দুর্বলতা।
প্রশ্নঃ হার্নিয়ার লক্ষণাবলী লিখ। ২০১৮
হার্নিয়ার লক্ষণাবলী:
হার্নিয়ার লক্ষণ রোগীর ধরণ, অবস্থান, এবং জটিলতার ওপর নির্ভর করে। সাধারণ লক্ষণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- পেটের দেয়ালের দুর্বল স্থানে (যেমন ইনগুইনাল অঞ্চল বা নাভি) স্ফীত অংশ দেখা যায়।
- সাধারণত স্ফীতি দাঁড়ালে বা চাপ দিলে বৃদ্ধি পায় এবং শুয়ে পড়লে কমে যায়।
- ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ব্যথা বা চাপ অনুভব হয়, বিশেষত ভারী কাজ করার সময়।
- দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালে বা কাশি দিলে ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে।
- স্ফীত স্থানে মৃদু জ্বালাপোড়া বা টান লাগার অনুভূতি হতে পারে।
- বিশেষত হাঁটাচলা বা কাজ করার সময় ব্যথা হতে পারে।
- স্ফীত অংশকে ভেতরে প্রবেশ করানো সম্ভব হয় না।
- হার্নিয়ার অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
- তীব্র ব্যথা, লালচে বা বেগুনি রঙের স্ফীতি।
- বমি বমি ভাব, বমি, জ্বর এবং পেট ফাঁপা।
- এটি একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি।
- অন্ত্রের কোনো অংশ হার্নিয়ার মাধ্যমে বের হলে অন্ত্রের কাজকর্ম ব্যাহত হয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
- অন্ত্রের অংশ সংকুচিত বা ব্লক হলে হতে পারে।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে স্ক্রোটামে টান অনুভব।
- উরুর উপরের অংশে স্ফীতি এবং অস্বস্তি।
- নাভির চারপাশে স্ফীতি।
- বুক জ্বালাপোড়া, ঢেকুর ওঠা, খাবার গিলতে কষ্ট।
- এই স্ফীতির মধ্যে ফ্লুইড জমে। চাপ দিলে ফুইড উপরে উঠে যায় এবং পরে ফিরে আসে।
- দীর্ঘদিন এই স্ফীতির কারণে কুঁচকি স্থান হতে অন্ডকোষ পর্যন্ত ফুলে উঠে এবং কুঁচকি স্থানে ব্যথা করে।
- চলাফেরা সময় অস্বস্থিবোধ করে।
প্রশ্ন: স্ট্রাংগুলেটেড হার্নিয়া কি? ০৮
স্ট্রাংগুলেটেড হার্নিয়া: স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া হলো হার্নিয়ার একটি গুরুতর জটিলতা যেখানে হার্নিয়ার অংশে (অন্ত্র বা অন্য টিস্যু) রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এটি একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি কারণ রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট টিস্যুতে গ্যাংগ্রিন (টিস্যুর মৃত্যু) হতে পারে। স্ট্রাংগুলেশনের প্রথম সিম্পটম দেখা দেয়ার ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই গ্যাংগ্রীন দেখা দিতে পারে। ইংগুইনাল হার্নিয়া, ফিমোরাল হার্নিয়ার চেয়ে বেশী কমন হওয়া সত্ত্বেও ফিমোরাল হার্নিয়াতে strangulation অধিক হয়, কারণ এটির sac-এর neck সরু এবং এর ওয়াল rigid।
স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়ার বৈশিষ্ট্য:
ইরিডিউসিবল হার্নিয়া: হার্নিয়ার অংশকে ম্যানুয়াল চাপে ভেতরে প্রবেশ করানো সম্ভব হয় না।
তীব্র ব্যথা: স্ফীত স্থানে তীব্র, ধারালো ব্যথা অনুভূত হয়, যা সময়ের সঙ্গে আরও তীব্র হয়।
লালচে বা বেগুনি রঙ: হার্নিয়ার স্ফীত অংশ লাল, বেগুনি বা কালো হয়ে যেতে পারে, যা রক্ত সঞ্চালনের বাধা নির্দেশ করে।
বমি এবং বমি বমি ভাব: অন্ত্র সংকুচিত বা ব্লক হয়ে গেলে বমি হতে পারে।
পেট ফাঁপা এবং মলত্যাগ বন্ধ: অন্ত্রের ব্লকেজের কারণে পেট ফাঁপা এবং গ্যাস বা মলত্যাগে সমস্যা দেখা দেয়।
জ্বর এবং দেহের দুর্বলতা: ইনফেকশন বা সেপসিসের কারণে জ্বর এবং দেহে ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়ার ঝুঁকি:
- গ্যাংগ্রিন: আক্রান্ত অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হলে টিস্যু মরে যেতে পারে।
- পেরিটোনাইটিস: অন্ত্রের ফেটে যাওয়া বা ইনফেকশন পেটের গহ্বরে ছড়িয়ে পড়লে এটি মারাত্মক হতে পারে।
- মৃত্যুর ঝুঁকি: সময়মতো চিকিৎসা না করলে জটিলতা জীবন-সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
চিকিৎসা:
স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি, এবং তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।
- অস্ত্রোপচার:
- হার্নিয়ার টিস্যুকে মুক্ত করে রক্ত সঞ্চালন পুনরুদ্ধার করা।
- গ্যাংগ্রিনযুক্ত অংশ সরিয়ে ফেলা (যদি প্রয়োজন হয়)।
- প্রতিরোধ:
- আগের থেকেই রিডিউসিবল হার্নিয়া চিকিৎসা করা।
- হার্নিয়ার স্থানীয় পেশি শক্তিশালী করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।
প্রশ্ন: স্ট্রাংগুলেটেড ইংগুইনাল হার্নিয়ার ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৮
স্ট্রাংগুলেটেড ইংগুইনাল হার্নিয়ার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনাঃ
স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড ইনগুইনাল হার্নিয়া একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি এবং দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। রোগীর অবস্থা নির্ণয় এবং জীবন রক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:
১. তাত্ক্ষণিক রোগ নির্ণয় এবং স্থিতিশীল করা:
ক. রোগ নির্ণয়:
- ক্লিনিক্যাল মূল্যায়ন:
- স্ফীত অংশে তীব্র ব্যথা, লালচে বা বেগুনি রঙ, এবং ইরিডিউসিবল হার্নিয়া।
- বমি, পেট ফাঁপা, এবং মলত্যাগ বন্ধ থাকার ইতিহাস।
- ইমেজিং পরীক্ষা:
- আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান হার্নিয়ার অবস্থা এবং রক্ত সরবরাহের বাধা নির্ণয়ে সহায়ক।
খ. রোগীকে স্থিতিশীল করা:
- আইভি ফ্লুইড দেওয়া: পানিশূন্যতা পূরণের জন্য।
- পেইন ম্যানেজমেন্ট: ব্যথা কমাতে অ্যানালজেসিক বা সেডেটিভ দেওয়া।
- অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা: ইনফেকশন প্রতিরোধে ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন, সেফট্রায়াক্সোন, মেট্রোনিডাজল)।
২. অস্ত্রোপচার (Surgical Management)
স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড ইনগুইনাল হার্নিয়ার একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা হলো জরুরি অস্ত্রোপচার।
ক. সার্জারি করার পদ্ধতি:
- হার্নিয়াটমি (Herniotomy): হার্নিয়াল স্যাক খোলা হয় এবং এর ভেতরের অংশ পরীক্ষা করা হয়।
- রক্ত সঞ্চালন পুনরুদ্ধার: যদি হার্নিয়াল স্যাকের অংশ জীবিত থাকে, তবে তা ভেতরে প্রবেশ করানো হয়।
- গ্যাংগ্রিনযুক্ত অংশ অপসারণ:
- গ্যাংগ্রিনযুক্ত বা মৃত অন্ত্র কেটে ফেলা হয়।
- পুনঃসংযোগ (Anastomosis) বা কোলস্টোমি প্রয়োজন হলে করা হয়।
- হার্নিয়া রিপেয়ার (Hernia Repair):
- অপরেশনের ধরন:
- টেনশন-ফ্রি মেশ রিপেয়ার: পেশি পুনর্গঠনের জন্য মেশ ব্যবহার করা হয়।
- ল্যাপারোস্কোপিক হার্নিয়া রিপেয়ার: আধুনিক এবং কম আক্রমণাত্মক পদ্ধতি।
- অপরেশনের ধরন:
৩. পরবর্তী পরিচর্যা (Postoperative Care):
- ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ: ইনফেকশনের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক চালিয়ে যাওয়া।
- ডায়েট ম্যানেজমেন্ট: অপারেশনের পর তরল এবং নরম খাবার দেওয়া।
- পুনর্বাসন এবং ফিজিক্যাল থেরাপি: পেটের পেশি শক্তিশালী করতে থেরাপি।
- জটিলতা পর্যবেক্ষণ: রক্তক্ষরণ, ক্ষতস্থান ফুলে যাওয়া, বা পুনরায় হার্নিয়ার ঝুঁকি।
৪. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
- আগে থেকেই হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার করানো (ইলেকটিভ সার্জারি)।
- ভারী কাজ ও অতিরিক্ত চাপ এড়ানো।
- নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক ডায়েট বজায় রাখা।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ : লক্ষণানুসারে- নাক্স-ভমিকা, ভিরেট্রাম এলবাম, ককিউলাস, ওপিয়াম ও প্লাম্বাম মেটালিকাম প্রভৃতি ব্যবহার করতে হরে।
প্রশ্ন: হার্নিয়া ও হাইড্রোসিলের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ০৮, ১০, ১৩, ১৫ বা, ইংগুইনাল হার্নিয়া ও হাইড্রোসিলের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ২০০৯, ১৮
বিষয় | হার্নিয়া (Hernia) | হাইড্রোসিল (Hydrocele) |
---|---|---|
সংজ্ঞা | পেটের অভ্যন্তরীণ অংশ (যেমন অন্ত্র) পেটের দেয়ালের দুর্বলতা দিয়ে বেরিয়ে আসে। | টেস্টিস বা স্ক্রোটামের চারপাশে তরল জমে ফোলাভাব সৃষ্টি হয়। |
উপস্থিতি স্থান | পেটের নিম্নাংশে (ইনগুইনাল অঞ্চল), নাভি, বা সার্জারির ক্ষতস্থানে হতে পারে। | শুধুমাত্র স্ক্রোটাম বা টেস্টিসের চারপাশে তরল জমে। |
কারণ | পেটের দেয়ালের দুর্বলতা বা অতিরিক্ত চাপ। | ইনফেকশন, আঘাত, অথবা জন্মগত কারণে টেস্টিসের চারপাশে তরল জমা। |
স্ফীতির বৈশিষ্ট্য | দাঁড়ালে বা চাপ দিলে স্ফীতি বাড়ে এবং শুয়ে পড়লে কমে যেতে পারে। | স্ফীতি ধ্রুবক থাকে, শুয়ে পড়লেও আকার পরিবর্তন হয় না। |
ব্যথা | সাধারণত হালকা ব্যথা বা টান অনুভূত হয়; জটিলতায় তীব্র ব্যথা হতে পারে। | সাধারণত ব্যথাহীন, তবে বড় হলে অস্বস্তি হতে পারে। |
জটিলতা | স্ট্র্যাঙ্গুলেশন, অন্ত্রের ব্লকেজ, বা গ্যাংগ্রিন হতে পারে। | সাধারণত জটিলতা হয় না, তবে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকতে পারে। |
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি | শারীরিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান। | শারীরিক পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফি। |
চিকিৎসা | সাধারণত অস্ত্রোপচার (হার্নিয়া রিপেয়ার)। | অনেক সময় নিজে নিজেই সেরে যায়; প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচার (হাইড্রোসিলেকটমি)। |
প্রতিরোধ | ভারী জিনিস তোলা এড়ানো, পেশি শক্তিশালী করা। | টেস্টিসের সুরক্ষা এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ। |
প্রশ্ন: ইংগুইনাল হার্নিয়ার ব্যবস্থাপনা লিখ। ১০, ১৩, ১৫ ইংগুইনাল হার্নিয়ার ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাঃ
ডাইরেক্ট ইংগুইনাল হার্নিয়ার চিকিৎসা প্রায় ইনডাইরেক্ট হার্নিয়ার চিকিৎসার মতোই। পার্থক্য শুধু, এক্ষেত্রে হার্নিয়ার থলে কেটে ফেলা হয় না। থলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে এটির সামনে ট্রান্সভার্সালিস ফেসা মেরামত করা হয় এবং ইংগুইনাল ক্যানালের পস্টিরিয়র ওয়ালও কিছুটা মেরামত করা হয়। ইনডাইরেক্ট হার্নিয়ার তুলনায় ডাইরেক্ট হার্নিয়ার বেশী পুনরাবৃত্তি ঘটে (প্রায় ২০%)।
ট্রাস ব্যবহার: যদি রোগীর অবস্থা বেশী খারাপ থাকে এবং অ্যানাসথেরিয়া দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হলে বা ক্রোনিক strain থাকলে (যেমন- বৃদ্ধ রোগীর ক্রোনিক কাঁশি), বা অপারেশন করতে না চায় তবে ট্রাস ব্যবহার করা যায়। ট্রাস দ্বারা হার্নিয়া ভাল হয় না, কিন্তু এর জটিলতা এড়ানো যায়, যেমন- স্ট্রাংগুলেশন। ট্রাস সব সময়ই পড়ে থাকতে হবে। রাত্রে খুলে রাখা যেতে পারে, তবে কাঁশি থাকলে ঘুমের মধ্যেও পড়ে থাকতে হবে। শুইয়ে হার্নিয়া রিডিউস করে ট্রাস বাধতে হবে।
Diseases of the urinary tract (কিডনী ও ইউরেটারের ডিজিজ) Renal calculi (কিডনী পাথর)
প্রশ্ন: নেফ্রোলিথিয়েসিস এর সংজ্ঞা লিখ। ২০১৭, ১৮ বা, মূত্র পাথুরীর সংজ্ঞা লিখ।
নেফ্রোলিথিয়েসিস এর সংজ্ঞা/ মূত্র পাথুরীর সংজ্ঞাঃ
রক্তের অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক উপাদানের তারতম্যের কারণে কিডনীর মধ্যে ক্যালসিয়াম অকজালেট, ক্যালসিয়াস ফসফেট, ইউরিক এসিড বা ইউরেট ও সিসটিন ইত্যাদি উপাদান জমাট বেঁধে পাথর আকার ধারণ করলে তাকে, রেনাল ক্যলকুলি বা রেনাল স্টোন বা নেফ্রোলিথিয়েসিস বা মূত্রপাথুরী বলে। ইহা কিডনীতে উৎপন্ন হয় এবং পেলভিস ও ইউরেটার হয়ে ইউরিনারী ব্লাডারে আসে।
প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর কারণ বর্ণনা কর। ২০০৮, ১০ বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের কারণ লিখ। ২০১৮ বা, কিডনী স্টোনের কারণ লিখ। ২০১৭ মূত্র পাথুরীর কারণ:
1. কম পানি পান করা: শরীরে পানির অভাব হলে প্রস্রাব ঘন হয়ে যায়, যা খনিজ পদার্থ জমে পাথর তৈরি করে।
2. অতিরিক্ত সল্ট বা প্রোটিন গ্রহণ: বেশি লবণ বা প্রোটিনযুক্ত খাবার প্রস্রাবের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম ও ইউরিক অ্যাসিডের নিঃসরণ বাড়ায়।
3. অক্সালেটসমৃদ্ধ খাবার: পালং শাক, চা, চকোলেট, বাদাম ইত্যাদি বেশি খেলে অক্সালেট পাথরের ঝুঁকি বাড়ে।
4. জন্মগত কারণ: কিডনি বা মূত্রনালীর গঠনের ত্রুটি থাকলে পাথর তৈরি সহজ হয়।
5. ইনফেকশন: দীর্ঘস্থায়ী মূত্রনালীর সংক্রমণ স্ট্রুভাইট পাথরের কারণ হতে পারে।
6. মেটাবলিক সমস্যা:
হাইপারক্যালসিউরিয়া (প্রস্রাবে বেশি ক্যালসিয়াম নিঃসরণ)।
হাইপারঅক্সালিউরিয়া (অতিরিক্ত অক্সালেট নিঃসরণ)।
হাইপারইউরিকোসিউরিয়া (ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া)।
7. অল্প শারীরিক কার্যক্রম: দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে মূত্র প্রবাহ কমে যায়।
8. অতিরিক্ত ওজন: স্থূলতা কিডনির ওপর চাপ বাড়ায় এবং পাথর তৈরির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
9. দীর্ঘস্থায়ী কিছু রোগ: হাইপারথাইরয়েডিজম, গাউট, ডায়াবেটিস, বা কিডনি রোগ।
10.কিছু ওষুধ: ডিউরেটিকস, অ্যান্টাসিড বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ প্রস্রাবে খনিজ পদার্থের মাত্রা বাড়াতে পারে।
11. উষ্ণ আবহাওয়া: বেশি ঘাম হলে প্রস্রাব কম হয়, যা পাথর তৈরিতে সহায়ক।
12. জলবায়ু ও অঞ্চল: যেসব অঞ্চলে পানি বেশি খনিজযুক্ত, সেখানে পাথরের ঝুঁকি বেশি।
প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর প্যাথলজি লিখ।
প্যাথলজী – প্রধানত: দুই প্রকারের পাথর হয়।
(১) প্রাইমারী পাথর ইহা স্বাভাবিক ইউরিনারী ট্রাক্টে হয় এবং অক্সালেট বা ইউরিক এসিড দ্বারা তৈরী হয়।
(২) সেকেন্ডারী পাথর ইহা অবস্ট্রাকটেড এবং ইনফেকটেড ইউরিনারী ট্রাক্টে হয়। ইহা অ্যামোনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ফসফেট দ্বারা তৈরী হয়।
প্রশ্ন: মূত্র পাথুরীর শ্রেণিবিভাগ লিখ। ২০১৮ বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের শ্রেণিবিভাগ লিখ। ২০১৮ বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের প্রকারভেদ বৈশিষ্ট্যসহ লিখ। ২০১৭
শ্রেণীবিভাগ:-
(i) অক্সালেট পাথর ইহা শক্ত ও কালো বর্ণের পাথর, গায়ে তীব্র কাটা থাকে। এরা এক্স-রে দ্বারা ধরা পড়ে।
(ii) ফসফেট পাথর এরা শক্ত এবং সাদা রং এর। ক্যালসিয়াম, অ্যামোনিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম ফসফেট (ট্রিপল ফসফেট) দ্বারা তৈরী। অনেক সময় ইহা স্ট্রাগহর্ণ পাথর তৈরী করে। এরা এক্স-রে দ্বারা ধরা পড়ে এবং ছোট অবস্থায় সহজে বের হয়।
(iii) ইউরিক এসিড এবং ইউরেট পাথর- এরা বাদামী রং এর, শক্ত এবং মসৃন হয়। এরা এক্স-রে দ্বারা ধরা পড়ে না।
(iv) সিসটিন পাথর- এরা সংখ্যায় একাধিক, হলুদ রং এর, নরম এবং মসৃন হয়।
(v) জ্যানথিন পাথর – ইহা কদাচিৎ দেখা যায়।
প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর ইনভেস্টিগেশন লিখ। বা, কিডনী স্টোনের ইনভেস্টিগেশন লিখ। ২০১৭ কিডনী স্টোনের ইনভেস্টিগেশন:
(i) প্রস্রাব পরীক্ষা- লোহিত রক্ত কনিকা এবং পূজ সেল দেখতে হবে। কালচার ও সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করলে নির্দিষ্ট জীবাণু উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।
(ii) পেটের এক্স-রে করলে পাথর দেখা যেতে পারে। ৯০% পাথর এক্স-রে দ্বারা ধরা পড়ে।
(iii) ইন্টারেনাল পাইলোগ্রাফি করলে পাথরের অবস্থান এবং কিডনির কার্যক্ষমতা সম্পর্কে জানা যায়।
(iv) সিরাম ক্যালসিয়াম এবং সুগার লেভেল দেখতে হবে।
`(v) আল্ট্রাসনোগ্রাম: আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে পাথরের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।
প্রশ্ন: মূত্র পাথুরীর লক্ষণাবলি বর্ণনা কর। ২০০৮, ১০, ১৮ বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের লক্ষণাবলী উল্লেখ কর। ২০১৮ বা, রেনাল ক্যালকুলাসের লক্ষণাবলী লিখ। ২০১৭
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) রেনাল স্টোন ৩০ – ৪০ বৎসর বয়সের মধ্যে বেশী হয়। মেয়েদের- তুলনায় পুরুষদের বেশী হয়।
(ii) স্থায়ী কিডনী ব্যথা, প্রস্রাব বাহির হতে বাধা প্রাপ্ত হলে হঠাৎ পেলভিস অঞ্চলে মারাত্মক ব্যথা হয়। দূরন্ত ব্যথা খুবই প্রচন্ড থাকে। রোগী ব্যথায় হাঁটু মোড়াইয়া গড়াগড়ি করতে থাকে। এই ব্যথা কুঁচকী, উরুর ভিতর দিকে, অন্ডকোষ বা লেবিয়াম মেজাজে আসতে পারে। ব্যথা হঠাৎ চলে যায়।
(iii) বমি বমিভাব এবং বমি ব্যথার সঙ্গে থাকতে পারে। পেট ফুলে যেতে পারে।
(iv) প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। এই রক্ত অনুবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়তে পারে বা খালি চোখেও দেখা যেতে পারে।
(v) প্রস্রাব অনুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করলে- পূজ সেল পাওয়া যায়।
(vi) প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ কারণে জ্বর থাকতে পারে।
(vii) রেনাল কলিকের কয়েক ঘণ্টা পর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
(viii) রোগীকে পরীক্ষা জন্য শুধু কোমড়ে চাপ দিলে ব্যথা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। হাইড্রোনেফ্রোসিস হলে হাত দ্বারা কিডনী অনুভব যেতে পারে।
প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর জটিলতা লিখ। বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের জটিলতাসমূহ উল্লেখ কর। ২০১৮
মূত্র পাথুরীর জটিলতা: (i) হাইড্রোনেফ্রোসিস।
(ii) জীবাণু সংক্রমন হলে পাইলোনেফ্রাইটিস ও হাইড্রোনেফ্রোসিস হতে পারে। (iii) রেনাল পেলভিসের ক্যান্সার
(iv) ইউরেটার ব্লক হওয়ার কারণে প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে।
প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর সার্জিক্যাল চিকিৎসা লিখ। ০৮, ১০ বা, কিডনী স্টোনের চিকিৎসা লিখ। ২০১৭
চিকিৎসা: ছোট পাথর নিজে নিজেই বাহির হয়ে যেতে পারে। কিন্তু পাথরের ডায়ামিটার ১ সেঃ মিঃ এর বেশী হলে নিজে নিজে বাহির হতে পারে না। যদি পাথরের কারণে কিডনী ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় এবং পাথরের প্রকার ক্রমশঃ বড় হতে থাকে তবে পাথর বাহির করে ফেলতে হবে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: পায়েলোলিথোটমী করে পাথর রেনাল পেলভিসের নিচ দিয়ে বের করা যেতে পারে। এই অপারেশনই যথেষ্ট নয়। কেননা বেশীর ভাগ পাথরই কিডনীর নীচের প্রান্তেস্ত হয়। বড় পাথর
হলে কিডনীর ভিতর ইনসিশন দিয়ে পাথর বাহির করতে হবে। যদি একটি কিডনী ভাল থাকে এবং অপর কিডনী মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়ে থাকে, তবে আক্রান্ত কিডনী কেটে ফেলে দিতে হবে (নেফ্রেক্টমী)। এছাড়াও প্রয়োজনে নেফ্রোলিখোটমি, পায়েলোনেফ্রোলিথোটমি, সিস্টোলিখোটমি ইত্যাদি করা যেতে পারে।
ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর ডিজিজ মূত্রনালীর ইনজুরি
প্রশ্ন: ইউরেথ্রার ইনজুরি কাকে বলে? এর প্রকারভেদ লিখ।
ইউরেথ্রার ইনজুরি: কোন কারণে যদি ইউরেথ্রা আঘাত প্রাপ্ত হয়, তাকে ইউরেথ্রার ইনজুরি বলে।
ইউরেথ্রার ইনজুরির শ্রেণীবিভাগ:
ইউরেথ্রার ইনজুরিকে দুই গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে:
(i) মেমব্রেনাস ইউরেথ্রা ছিড়ে যাওয়া,
(ii) বালবাস ইউরেথ্রা ছিড়ে যাওয়া।
প্রশ্ন: ইউরেথ্রার ইনজুরির ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) মেমব্রেনাস ইউরো ছিড়ে যাওয়া: ইহা সাধারণত পেলভিস ফ্রাকচারের সঙ্গে পাওয়া যায়। প্রোস্টেটিক এবং মেমব্রেনাস ইউরেথ্রার সংযোগ স্থলে ছিঁড়ে যায়। ব্লাডার এবং প্রোস্টেট উপরের দিকে এবং পিছন দিকে সরে যায়।
(ii) বালবাস ইউরেথ্রা ছিড়ে যাওয়া: এই জাতীয় ক্ষত staddle injury বা এমন কোন ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করার ফলে ঘটে থাকে যা ইউরেথ্রাকে-পিউবিক আর্চের বিপরীতে চেপে ধরে। ইউরেথ্রা ছিন্ন হওয়া আংশিক বা সম্পূর্ণ হতে পারে।
(iii) রোগী পেরিনিয়ামে ভীষণ ব্যথার কথা বলে। এক্সটারনাল মিটাস দিয়ে রক্তক্ষরণ হয় এবং পেরিনিয়াম হেমাটোমা তৈরি হয়। যদি রোগী প্রস্রাব করে তাহলে প্রস্রাব চারপাশের টিস্যুর মধ্যে ঢুকে পড়ে।
প্রশ্নঃ হেমাচুরিয়া কাকে বলে? ২০১৮
হেমাচুরিয়ার সংজ্ঞা: প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়াকে হেমাচুরিয়া বলে।
প্রশ্নঃ হেমাচুরিয়া কারণসমূহ লিখ। ২০১৮
কারণসমূহঃ
হেমাচুরিয়ার কারণগুলিকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:
(ক) স্থানীয় কারণ: কিডনী, পলিস্টিটিক ডিজিজ, কিডনী, আঘাত, পাইলোনেফ্রাইটিস, টিউবারকুলোসিস, পাথর এবং টিউমার।
ইউরেথ্রার- পাথর, আঘাত এবং টিউমার।
ব্লাডার- আঘাত, সিস্টাইটিস, পাথর এবং টিউমার।
প্রোস্টেট- এনলার্জড প্রোস্টেট।
ইউরেথ্রা বা মূত্রনালী- আঘাত, পাথর এবং টিউমার।
(খ) সাধারণ কারণ: হাইপারটেনশন, অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট থেরাপী এবং থ্রোম্বোসাই…পেলভিসের মধ্যে পাথর আছে বুঝায়। প্রস্রাবের শেষ পর্যায়ে ভীষণ ব্যথাসহ হেমাচুরিয়া হলে ব্লাডারে পাথর থাকা বুঝায়। প্রস্রাব ছাড়া হেমাচুরিয়া হলে ইউরেথ্রা বা মূত্রনালী হতে রক্ত-ক্ষরণ বুঝবে।
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাঃ
যে কোন loin-এ বা উভয় loin-এ রেনাল swelling পাওয়া যেতে পারে। দুই হাতে পরীক্ষা করলে ব্লাডারে নিওপ্লাজমের উপস্থিতি বুঝা যেতে পারে। অনেক সময় প্রোস্টেট বড় হতে পারে। অবশ্য অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল অবস্থা বাদ না দেয়া পর্যন্ত এই ডায়াগনোসিস করা যাবে না। এছাড়াও রোগীর সাধারণ পরীক্ষা এবং ব্লাড প্রেসার রেকর্ড করতে হবে।
প্রশ্নঃ হেমাচুরিয়ার ইনভেস্টিগেশন লিখ।
হেমাচুরিয়ার ইনভেস্টিগেশন:
প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে: খালি চোখে এবং অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করতে হবে।
আই.ডি.পি: পাথর বা নিওপ্লাজম নির্ণয়ে ইহা খুবই সহায়ক। সিস্টোসকোপি: ইহার সাহায্যে ব্লাডারের নিওপ্লাজম এবং প্রোস্টেট এর রক্ত ক্ষরণ দেখা যেতে পারে। এই পরীক্ষা যদি হেমাচুরিয়ার সময় করা হয় তাহলে একটি বা উভয় ইউরেটার হতে রক্ত বাহির হাওয়া দেখা যেতে পারে।
আল্ট্রাসনোগ্রামঃ আল্ট্রাসনোগ্রাম দ্বারা পাথর বা নিওপ্লাজম নির্ণয় করা যেতে পারে।
এক্স-রে: পেটের গ্রেন এক্স-রে করলেও পাথর দেখা যেতে পারে।
হাইড্রোনেফ্রোসিস(hydronephrosis)
প্রশ্ন: হাইড্রোনেফ্রোসিস কাকে বলে?
হাইড্রোনেফ্রোসিস এর সংজ্ঞা: মূত্র প্রবাহে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বাধা থাকলে উহার ফলে যদি কিডনী আকারে বড় হয়ে যায় এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তখন তাকে হাইড্রোনেফ্রোসিস বলা হয়।
প্রকারভেদ:
(i) এক কিডনী
(ii) উভয় কিডনী
প্রশ্ন: হাইড্রোনেফ্রোসিসের কারণসমূহ লিখ।
কারণতত্ত্ব:
(i) রেনাল পেলভিসে বা ইউরেটারে পাথর আটকে যায়।
(ii) মূত্রথলিতে পাথর।
(iii) মূত্রথলিতে টিউমার।
(iv) মূত্রথলিতে জমাট রক্ত।
(v) প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড এনলার্জ।
(vi) স্ট্রিকচার ইউরেথ্রা।
(vii) টিউমারজনিত কারণে মূত্রনালীতে কোথাও চাপ সৃষ্টি।
প্রশ্ন: হাইড্রোনেফ্রোসিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) কিডনী অঞ্চলে হালকা চাপযুক্ত ব্যথা থাকবে।
(ii) রেনাল কলিক থাকতে পারে
(iii) একদিক বা উভয়দিকের কিডনী অঞ্চলে ফুলা দেখা যাবে।
(iv) ইউরেমিয়ার লক্ষণাবলী পাওয়া যাবে।
রিটেনশন অফ ইউরিন(Retention of Urine)
প্রশ্ন: মূত্রবদ্ধতার বা প্রস্রাব আটকানো কাকে বলে? ১
প্রস্রাব আটকানো:
রিটেনশন অব ইউরিন একিউট বা ক্রনিক হতে পারে। ক্রনিক রিটেনশনে শেষ পর্যন্ত রিটেনশনের সঙ্গে overflow থাকে।
প্রশ্ন : মূত্রবদ্ধতার কারণগুলো বর্ণনা কর। ০৮, ১০, ১১, ১৩, ১৪ একিউট রিটেনশন কারণ:
নিম্ন গুরুত্বপূর্ণ কমন কারণগুলি দেয়া হল:
পুরুষদের ক্ষেত্রে : প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হওয়া, ইউরেথ্রায় স্ট্রিকচার, পোস্ট-অপারেটিভ।
মহিলাদের ক্ষেত্রে : রেট্রোর্ভাটেড গ্রেভিড ইউটেরাস, মালটিপল স্কেরোসিস, হিস্টেরিয়া।
ছেলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে: মিটাল আলসার, With scabbing |
অন্যান্য কারণ সমূহঃ
স্পাইনাল অ্যানাসথেসিয়ার পর, ব্লাডারে রক্ত জমাট বাধা, ইউরেথ্রা রাপচার, নিউরোজেনিক রেক্টামে faecal impaction, একিউট ইউরোথ্রাইটিস বা প্রোস্টাটাইটিস, ইউরোথ্রাল ক্যালকুলাস,
ফাইমোসিস।
প্রশ্ন: মূত্রবদ্ধতার ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮, ১০
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
মূত্রবদ্ধতা (Urinary Retention) হল একটি অবস্থা যেখানে মূত্রথলি পূর্ণ হলেও মূত্র ত্যাগ করা সম্ভব হয় না বা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এর ক্লিনিক্যাল ফিচারগুলো নিম্নরূপ:
- মূত্রনালীতে ব্যথা: মূত্রথলি পূর্ণ হলেও মূত্র ত্যাগে অসুবিধা হতে পারে, যা ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
- মূত্র ত্যাগের পরিপূর্ণতা অনুভব না হওয়া: মূত্র ত্যাগের পরও পূর্ণতা অনুভূত হতে পারে এবং অতিরিক্ত চাপ অনুভূত হয়।
- শরীরে পানি জমা: মূত্র ত্যাগের সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে শরীরে পানি জমে যাওয়া (অ্যাডেমা) হতে পারে।
- বড় মূত্রথলি: মূত্রবদ্ধতার কারণে মূত্রথলি অতিরিক্ত পূর্ণ হয়ে গিয়ে সুস্পষ্টভাবে পেটের নিচের অংশে একটি বলের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
- অবিরাম মূত্র ত্যাগের প্রচেষ্টা: মূত্রবদ্ধতার কারণে বারবার মূত্র ত্যাগের চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয় না।
- অবিরাম মূত্রবর্ধন: মূত্র ত্যাগের সময়ে প্রবাহ দুর্বল বা বন্ধ হয়ে যায়।
- প্রচন্ড তৃষ্ণা: মূত্রবদ্ধতা দীর্ঘ সময় ধরে থাকলে শরীরে পানির অভাব বা ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যার ফলে তৃষ্ণা অনুভূত হয়।
- কখনও কখনও পেটে তীব্র ব্যথা: মূত্রথলি যদি অত্যধিক পূর্ণ হয়ে যায় তবে তীব্র পেটব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- এমারজেন্সি সিচুয়েশন: অতি গুরুতর ক্ষেত্রে মূত্রবদ্ধতা জীবনঘাতী হয়ে উঠতে পারে, যখন মূত্রথলি এতটাই পূর্ণ হয় যে তা প্রসারিত হয়ে ভেঙে যেতে পারে (অথবা জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে)।
- রোগী বেশ কয়েক ঘণ্টা যাবত প্রস্রাব ত্যাগ করে না বা প্রস্রাব ত্যাগ করতে সক্ষম হয় না।
- অনেক সময় পাতলা রোগীদের ক্ষেত্রে full bladder এর কারণে swelling দেখা যায়। ইহা palpate করলে dull পাওয়া যাবে।
- ব্লাডারের মাংসপেশীর সঙ্কোচনের ফলে periodically একিউট ব্যথা হবে।
- পরীক্ষা করলে enlarged prostate পাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন: মূত্রবদ্ধতার ব্যবস্থাপনা লিখ। ২০১১, ১৩, ১৪
মূত্রবদ্ধতার ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা:
(i) রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখতে হবে।
(ii) রোগীর উৎকণ্ঠা দূর করার জন্য ঔষধ দিতে হবে। Hot bath দিয়ে internal congestion কমাতে হবে।
(iii) এতে অনেক রোগী প্রস্রাব ত্যাগ করতে সক্ষম হয়। যদি রোগী bladder outflow obstruction -এর সঠিক ইতিহাস দেয়, তবে কনজারভেটিভ চিকিৎসা না দিয়ে ক্যাথিটার প্রবেশ করাতে হবে। ইহা সম্পূর্ণ অ্যান্টিসেপটিক টেকনিকে করতে হবে।
injuries of urethra, stricture of urethra. স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচন
প্রশ্ন: স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচন কাকে বলে? এর কাণসমূহ লিখ।
স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচনের সংজ্ঞাঃ
অসম্পূর্ণমূত্র নিঃসরণ ও ইউরিনারী ব্লাডারে থাকা ইউরিন শেষ পর্যন্ত মূত্রত্যাগে সম্পূর্ণ অসমর্থ লক্ষণকেই স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচন বলে।
স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচনের কারণ:
ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার অর্থ মূত্রনালীর সংকোচন। ইহা হতে পারে:
(1) জন্মগতভাবে হতে পারে।
(ii) আঘাত জনিত বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ইউরেথ্রা রাপচার হওয়া এবং অনেক সময় ইন্সট্রুমেন্ট প্রবেশ করানোর জন্য হয়ে থাকে।
(iii) প্রদাহ জনিত গনোরিয়াল ইনফেকশনের পরে।
প্রশ্ন: স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচনের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা ক্লিনিক্যাল ফিচার।
প্রস্রাব ত্যাগে ক্রমাগতভাবে অসুবিধা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং প্রস্রাবের গতি বা বেগ ও প্রস্রাবের প্রবাহ হ্রাস পেতে থাকে। কোথ দিলে প্রস্রাবের প্রবাহ বেড়ে যায়। মূত্রনালী দিয়ে সামান্য mucoid discharge থাকতে পারে। প্রস্রাবের একিউট রিটেনশন, পেরিইউরেথ্রাল অ্যাবসেস, ফিস্টুলা, প্রস্রাবের এক্সট্রাভেসেশন, ইউরিনারী ইনফেকশন এবং রেনাল ফেইলিউরের উপসর্গ এই অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
রোগী পরীক্ষা (On examination): প্রায় ৭০% রোগীর ক্ষেত্রে বালবাস ইউরেথ্রার প্রদাহজনিত স্ট্রিকচার ঘটে থাকে। এর পরই কমন জায়গা হচ্ছে পেনিসের ভিতরের ইউরেথ্রা (penile urethra)। হাত দ্বারা ইউরেথ্রা পরীক্ষা করলে (palpation) স্ট্রিকচারের অংশে পুরু জায়গা অনুভব করা যাবে। অ্যাবসেস হলে ব্যথাযুক্ত mass অনুভব হবে। পেরিনিয়াল ফিস্টুলা থাকতে পারে। যদি ইহার সঙ্গে প্রস্রাবের রিটেনশন থাকে তাবে ব্লাডার হাতে অনুভব করা যাবে।
ডায়াগনোসিস: ক্যাথিটার বা sound (কাঠি) প্রবেশ করানো সম্ভব না হলে স্ট্রিকচার ডায়াগনোসিস করা যেতে পারে। ইউরেথ্রোগ্রাম দ্বারা স্ট্রিকচারের স্থান এবং বিস্তৃতি দেখা যায়।
প্রশ্নঃ স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচনের চিকিৎসা লিখ।
চিকিৎসা: নিয়মিত এবং সতর্কতার সঙ্গে ডাইলেটেশন (dilatation)
করাই এর মূল চিকিৎসা। অধিকাংশ স্ট্রিকচার ডাইলেটর (dilator) প্রবেশ করিয়ে প্রসারিত করা যায়। একবার স্ট্রিকচার সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করতে পারলে নিয়মিত ভাবে ডাইলেটেশন করতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে দুই ডাইলেটেশনের মধ্যবর্তী সময় বৃদ্ধি করতে হবে। যদি স্ট্রিকচার খুবই টাইট হয় তবে অনেক সময় filiform bougies এর দরকার হতে পারে।
যদি স্ট্রিকচারের ভিতর দিয়ে প্রস্রাব মোটেই বাহির হতে না পারে এবং প্রস্রাব আটকে (রিটেনশন) যায় তবে সুপরাপিউবিক সিস্টোসটমী করে স্ট্রিকচারের স্থানকে বিশ্রাম দিয়া প্রদাহজনিত ইন্ডিমা ভাল হওয়ার সুযোগ দিলে সহজেই filiform bougies প্রবেশ করানো যেতে পারে। ডাইলেটেশন করা সত্বেও যদি স্ট্রিকচার দ্রুত সংকুচিত হয় তবে স্ট্রিকচার অপারেশন করে কেটে ফেলে দিয়ে প্লাস্টিক repair (urethroplasty) করে ইউরেথ্রা স্থায়ীভাবে প্রসারিত করতে হবে।
এনলার্জ প্রোস্টেট (Enlarged prostate)
প্রশ্নঃ এনলার্জ প্রোস্টেট এর সংজ্ঞা লিখ।
এনলার্জ প্রোস্টেট এর সংজ্ঞা: কোন কারণে প্রোস্টেট এর স্বাভাবিক অবস্থা হতে বৃদ্ধি পেলে, তাকে এনলার্জ প্রোস্টেট বলে।
অথবা, প্রোস্টেট এর আকার ও আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেলে, তাকে এনলার্জ প্রোস্টেট বলা হয়।
প্রশ্ন: এনলার্জ প্রোস্টেট এর কারণতত্ত্ব লিখ।
এনলার্জ প্রোস্টেট এর কারণতত্ত্ব:
(i) ইহা সাধারণতঃ ৫০ বছর অধিক বয়স্ক লোকের মধ্যে দেখা যায়।
(ii) ইহার সঠিক কারণ নিশ্চিতরূপে এখনও কিছু জানা যায় নাই।
(iii) প্রোস্টেট নিওপ্লাসিয়া (টিউমার) হলে।
(iv) অস্বাভাবিকভাবে যৌন উপভোগ করলে- অতিরিক্ত হস্তমৈথুন।
(v) জাতি- নিগ্রোদের মধ্যে কম দেখা যায়।
(vi) হরমোন জনিত- বিনাইন নিওপ্লাসিয়া জনিত কারণে এর
(vii) ক্রনিক প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ।
(viii) প্রোস্টেট গ্রন্থির গঠনগত উপাদান- ফাইব্রোম, মাসকুলার ও গ্ল্যান্ডুলার টিস্যুর হাইপারপ্লাসিয়া ও হাইপারট্রফির কারণে ইহা হয়।
(ix) অজানা অনেক কারণে ইহা হতে পারে।
(x) প্রোস্টেট গ্রন্থিতে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার সৃষ্টি হওয়ার কারণে।
(xi) কিছু রোগ ক্ষতিকর প্রভাব- ইউরেথ্রাইটিস, মূত্রনালীতে পাথর, মূত্রনালীর সংকোচন, বাত, গেঁটেবাত, সিফিলিস, সাইকোসিস (গনোরিয়া) ইত্যাদি।
(xii) দীর্ঘদিন কোন উত্তেজক ঔষধ সেবন করা।
প্রশ্ন: এনলার্জ প্রোস্টেট লক্ষণাবলী/ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
এনলার্জ প্রোস্টেট লক্ষণাবলী/ক্লিনিক্যাল ফিচার:
লক্ষণ:
(i) রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হয়। দিনে ও রাত্রে সব সময় ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। রাত্রেই বেশী হয়।
(ii) প্রথবাস্থায় প্রস্রাবে অসুবিধা হয়। কোথ দিলে প্রস্রাবের গতি কমে যায়। প্রস্রাব ধীরে ধীরে বাহির হয় এবং শেষে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়তে থাকে।
(iii) ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হয়, প্রস্রাব ত্যাগ কষ্টকর হয়।
(iv) প্রস্রাব ত্যাগে অস্বস্তি বোধ হয়।
(v) কোঁথ দিয়ে প্রস্রাব করতে গেলে বন্ধ হয়ে যায়।
সাইন:
(i) দিন-রাত তলপেটে অস্বস্তিবোধ।
(ii) তলপেটে প্রস্রাবের থলি উঁচু দেখা যায়।
(iii) তলপেটে পারকাশন (টোকা দিয়ে) করলে ব্লাডার বরাবর স্থানে ডালনেস পাওয়া যাবে।
(iv) অস্কালটেশন- মল দ্বার দিয়ে আঙ্গুল দ্বারা পরীক্ষা করলে প্রোষ্টেট গ্ল্যান্ড বৃদ্ধি পাওয়া যাবে।
প্রশ্ন: এনলার্জ প্রোস্টেট ইনভেস্টিগেশন লিখ।
এনলার্জ প্রোস্টেট ইনভেস্টিগেশন:
(i) রোগীর রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে।
(ii) রক্তের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে।
(iii) প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে।
(iv) লোয়ার এবডোমেনের আল্ট্রাসনোগ্রাফি- প্রোষ্টেট এনলার্জ পাওয়া যাবে।
Investigation:
(1) Unine R/M/E (2) Blood for T.C, D.C, ESR, Hb%
(3) Stool R/M/E,
(4) Blood Urea, Sereem electrolytes and creatinine to assess renal function
(4) Urine culture and sensitivity (5) Plain X-Ray KUB Region
(6) Cystoscopy
প্রশ্ন: এনলার্জ প্রোস্টেট এর জটিলতা লিখ।
এনলার্জ প্রোস্টেট এর জটিলতা:
(i) ইউরিমিয়া। (ii) হাইড্রোনেফ্রোসিস। (iii) পাইয়েলোনেফ্রোসিস।
(iv) কিডনী ফেইলিওর। (v) একিউট রিটেনশন অব ইউরিন (প্রস্রাব আটকানো)। (vi) ক্রনিক রিটেনশন অব ইউরিন (প্রস্রাব আটকানো)।
(vii) প্রস্রাবের সাথে রক্তক্ষরণ (হেমাচুরিয়া)।
(viii) ইউরিনারী সিস্টিমে জীবাণু সংক্রমণ। (ix) পাথর তৈরী।
(x) ব্লাডারে ভাইভার্টিকুলার তৈরী। (xi) হাইড্রোইউরেটার।
প্রশ্ন: প্রোস্টেট এনলার্জ এর প্যাথলজি লিখ।
প্যাথলজী- এতে প্রোস্টেট ল্যাটারাল কোষ বা মধ্য লোব আক্রান্ত হয়। প্রোস্টেটের গ্ল্যান্ডুলার টিস্যু এবং ফাইব্রোমাসকুলার স্ট্রোমায় হাইপারপ্লাসিয়া হয়। সাব-মিউকাস পেরিইউরেথ্রাল গ্ল্যান্ড হতে ইহা ঘটে। যতই হাইপারপ্লাসিয়া বৃদ্ধি পায় ততই স্বাভাবিক প্রোস্টেট চাপ খেতে থাকে এবং পরে ইহা ফলস্ ক্যাপসুলে রূপান্তরিত হয়। প্রোস্টেট বৃদ্ধির ফলে প্রোস্টেটিক ইউরেথ্রা লম্বা ও আঁকাবাঁকা হয়। মধ্য লোব ইন্টারনাল স্ট্রিকচারের ভিতর দিয়ে ব্লাডারের ভিতর ঠেলে প্রবেশ করে পাউচ তৈরী করে। এই পাউচে দীর্ঘ দিন প্রস্রাব জমা থাকার ফলে পাথরের উৎপত্তি হয়। ব্লাডার বড় হয়ে যায়। ক্যাথিটার করার জন্য জীবাণু সংক্রমণ ঘটে এবং পাথর তৈরী হয়। প্রস্রাব আটকানোর ফলে দীর্ঘ দিনের ব্যাক প্রেসারে হাইড্রোনেফ্রোসিস হয়ে রেনাল ফেইলিওর হয়।
প্রশ্ন: বিএইচপি এর সংজ্ঞা ও লক্ষণাবলী লিখ।
বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়া:
৫০ বৎসর রয়সের পর প্রস্টেট গ্ল্যান্ড কিছুটা বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু ৬০ বৎসরের পর বেশি বৃদ্ধি পায়। এই বিনাইন বৃদ্ধির কোন কারণ জানা যায় নাই। সম্ভবত ইহা স্ট্রোজেন হরমোনের অধিক প্রভাবের ফল।
বিএইচপি এর লক্ষণাবলী:
(i) প্রথমাবস্থায় প্রস্রাবে অসুবিধা হয়। কোথ দিলে প্রস্রাবের গতি কমে যায়। প্রস্রাব ধীরে ধীরে বাহির হয় এবং শেষে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়িতে থাকে।
(ii) ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। দিনে ও রাতে সব সময় ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। রাত্রেই বেশি হয়।
(iii) অল্প অল্প করে ব্লাডারে প্রস্রাব জমা হতে থাকে।
(iv) হঠাৎ প্রস্রাব সম্পূর্ণরূপে আটকে যেতে পারে। (v) প্রস্রাবের শেষে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে।
(vi) ক্ষুধামন্দা, মাথা ব্যথা, ঝিমানোভাব দেখা দেয়।
প্রশ্ন: প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির চিকিৎসা বর্ণনা কর। ১১, ১৩, ১৪ বা, এনলার্জ প্রোস্টেট এর চিকিৎসা লিখ। এনলার্জ প্রোস্টেট এর চিকিৎসা:
(i) রোগীকে জোর পূর্বক প্রস্রাব ত্যাগ থেকে বিরত থাকতে হবে।
(ii) প্রয়োজনে ক্যাথিটার দ্বারা প্রস্রাব ত্যাগ করাতে হবে।
(iii) কারণ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা করতে হবে।
(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: উপরিউক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আরোগ্য না হলে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করতে হবে। এনলার্জ প্রোস্টেট এর সার্জিক্যাল অপারেশনের নাম প্রোস্টেকটমি।
Diseases of male genetalia- torsion of testis
প্রশ্ন: স্ক্রোটামের স্তরগুলি উল্লেখ কর এবং হাইড্রোসিলের সংজ্ঞা লিখ। ০৯
স্ক্রোটামের স্তরগুলির নাম:
(i) বাহির ত্বক
(ii) সুপারফিসিয়াল ফেসিয়া অব স্ক্রোটাম।
(iii) এক্সটারনাল স্পার্মমেটিক, লিম্যস্টারিক।
(iv) ইন্টারন্যাল স্পার্মমেটিক।
(v) ফাইব্রাস লেয়ার।
(vi) ইহার ত্বকে পাতলা সিবাসিয়াস গ্রন্থি আছে।
হাইড্রোসিল (hydrocele)
প্রশ্ন: হাইড্রোসিল কাকে বলে? বা হাইড্রোসিলের সংজ্ঞা দাও।
হাইড্রোসিলের সংজ্ঞাঃ হাইড্রোসিল বা অন্ডকোষ বৃদ্ধি- অন্ডকোষের উপর দুটি পর্দা আছে। একটির নাম টিউনিকা ভ্যাজাইনালিস ও অপরটির নাম টিউনিকা এলবুজিনিয়া। স্বাভাবিক অবস্থায় পর্দা দুটি হতে এক প্রকার জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হয়। ফলে পর্দা দুটি একত্রে জড়িয়ে যায় না। কোন কারণ বশতঃ যখন উক্ত জলীয় পদার্থ স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশী পরিমাণে নির্গত হয় এবং তা শোষিত না হয়ে পর্দা দুটির মধ্যে জমা থাকে এবং ক্রমশই পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে আর অন্ডকোষটি আকারে বৃদ্ধি লাভ করে, এ অবস্থাকে হাইড্রোসিল বা অন্ডকোষ বৃদ্ধি বলা হয়।
অথবা প্রোসেসাস ভেজাইনালিস এর যে কোন অংশে অতিরিক্ত ফ্লুইড জমা হওয়াকে হাইড্রোসিল বলে। সাধারণতঃ টিউনিকা ভেজাইনালিস এর মধ্যেই হাইড্রোসিল হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: হাইড্রোসিল কত প্রকার ও কি কি?
হাইড্রোসিলের প্রকারভেদ:
হাইড্রোসিলকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ (ক) প্রাইমারী বা ইডিওপ্যাথিক হাইড্রোসিল, (খ) সেকেন্ডারী হাইড্রোসিল।
(ক) প্রাইমারী বা ইডিওপ্যাথিক হাইড্রোসিল: এর কারণ জানা নাই। অপর্যাপ্ত লিম্ফোটিকসের জন্য ইহা হতে পারে। রোগের বয়স বেশী দিন হলে ইহার ওয়াল পুরু হয়।
(খ) সেকেন্ডারী হাইড্রোসিল: অন্ডকোষ বা ইপিডিডাইমিসে’র রোগের জন্য সেকেন্ডারী হাইড্রোসিল হয়ে থাকে। এই জাতীয় হাইড্রোসিল ছোট এবং ঢিলাঢালা হয়।
প্রাইমারী হাইড্রোসিলকে আবার ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে: যথা-
(i) ভেজাইনাল হাইড্রোসিল scrotal swelling এর মধ্যে ইহা সাধারণতঃ বেশী পাওয়া যায়। রোগী স্ক্রোটামের সিস্টিক ফুলা নিয়ে আসে। এই ফুলায় ফ্লাকচুয়েশন থাকে এবং ট্রান্সইলুমিনেশন করা যায়। ফ্লুইড দ্বারা অন্ডকোষ ঘেরা থাকে বলে অন্ডকোষকে আলাদাভাবে অনুভব করা যায় না।
(ii) জন্মগত (কনজেনিটাল) প্রোসেসাস ভেজাইনালিস থেকে যাবার কারণে এই জাতীয় হাইড্রোসিল শিশুদের মধ্যে পাওয়া যায়। আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে এই হাইড্রোসিলকে পেরিটোনিয়াল ক্যাডিটিতে ঢুকানো যায়।
(iii) ইনফ্যান্টাইল হাইড্রোসিল ইন্টারনাল রিং এ বন্ধ থাকে। সংযোগ থাকে না। প্রোসেসাল ভেজাইনালিস খোলা থাকে এবং পেরিটোনিরাল ক্যাডিটির সঙ্গে ইহার কোন
(iv) এনসিস্টেড হাইড্রোসিল- প্রোসেসাস ভেজাইনালিসের localized patency থাকার কারণে স্পারমাটিক কর্ডে গোলাকার swelling হয়।
প্রশ্ন: হাইড্রোসিলের জটিলতা লিখ।
হাইড্রোসিলের জটিলতা: (i) আঘাতের কারণে হেমাটোসিল হতে পারে। (ii) স্যাক ফেটে যেতে পারে। (iii) হাইড্রোসিল স্যাক এর হার্নিয়া হতে পারে। (iv) স্যাক এর ক্যালসিফিকেশন হতে পারে।
প্রশ্ন: হাইড্রোসিলের চিকিৎসা লিখ।
হাইড্রোসিলের চিকিৎসা: ছোট্ট হাইড্রোসিল, যা কোন অসুবিধার সৃষ্টি করে না, কোন চিকিৎসার দরকার হয় না।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: (i) সাবটোটাল এক্সিশন – পাতলা ওয়ালযুক্ত স্যাক বা থলি উল্টিয়ে দিতে হবে। ক্রনিক পুরু স্যাক বা থলি ভালভাবে রক্ত বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতঃ ইনসিশন দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।’ (ii) ট্যাপিং – স্থানীয়ভাবে অবশ করে একবার বা দুইবার হাইড্রোসিল হতে ফ্লুইড বাহির করে ফেলা যেতে পারে। অ্যাসপিরেশন করার পূর্বে অন্ডকোষের অবস্থান সতর্কতার সঙ্গে নির্ধারণ করতে হবে। অ্যাসপিরেশনের পর অন্ডকোষ ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন ম্যালিগন্যান্সি আছে কিনা।
প্রশ্ন: অর্কাইটিস ও টরশন অব টেস্টিস এর পার্থক্য লিখ। অর্কাইটিস ও টরশন অব টেস্টিস এর পার্থক্যঃ
অর্কাইটিস
টরশন অব টেস্টিস
টেস্টিস একিউট প্রদাহ হলে, ১ তাকে অর্কাইটি বলে।
টেস্টিসের চতুর্দিকে স্পার্মেটিক কর্ড দ্বারা মোচড়ের প্যাঁচানো থাকে।
ইহা ধীরে ধীরে শুরু হয়।
২
৩
ইহা হঠাৎ শুরু হয়।
যেকোন বয়সে হতে পারে।
অল্প বয়সেহতে পারে।
ইউরিনারী ট্রাক্টে ইনফেকশন ৪ বর্তমান থাকে।
ইউরিনারী ট্রাক্টে ইনফেকশন অনুপস্থিত থাকে।
একিউট প্রদাহের ইতিহাস বর্তমান থাকে।
৫
এ্যাংগ্রীণ এর পূর্ব পর্যন্ত প্রদাহের ইতিহাস থাকে না।
ফাইমোসিস
ফাইমোসিসের সংজ্ঞা:
পুং জননেন্দ্রিয়ের অগ্রভাগ ত্বক দ্বারা ঢাকা থাকে। প্রেপুস সংকোচিত হয়ে পড়লে এবং লিঙ্গমুন্ড (গ্লান্স পেনিস) উন্মুক্ত করা না গেলে তাকে ফাইমোসিস বলে।
ফাইমোসিসের কারণ:
জন্মগত হতে পারে।
ফিজিওলজিক্যাল কারণ: বয়স- শিশুদের ৬ বছরের আগে হতে পারে। বয়ষ্কদের- অজ্ঞাত বা সঠিক কারণ জানা যায় নাই।
ফাইমোসিসের লক্ষণাবলীঃ
প্রস্রাব ত্যাগকালে ব্যথা হয়। লিঙ্গমুন্ড ঢেকে থাকে এবং তা উন্মুক্ত করা যায় না। প্রস্রাব ত্যাগ করা কষ্টকর হয়।
Diseases of ear, nose and throat
অটাইটিস মিডিয়া (Otitis media)
প্রশ্ন: অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা লিখ। এর প্রকারভেদ লিখ ।০৮,
অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা: জীবাণু সংক্রমণ বা অন্য যে কোন কারণে মধ্যকানের প্রদাহ হলে, তাকে অটাইটিস মিডিয়া বলে।
অটাইটিস মিডিয়ার প্রকারভেদ:
মধ্যকানের প্রদাহ দুই প্রকার। যথা-
(i) তরুণ মধ্যকানের প্রদাহ বা একিউট অটাইটিস মিডিয়া (Acute Otitis media)
(ii) পুরাতন মধ্যকানের প্রদাহ বা ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়া (Chronic Otitis media)
প্রশ্ন: একিউট অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা কারণ লিখ। ০৮, ১০
একিউট অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা (Acute Otitis Media):. মিডল ইয়ার ক্যাভিটের মিউকোসার একিউট ইনফ্লামেশনকে একিউট অটাইটিস মিডিয়া বলে।
একিউট অটাইটিস মিডিয়ার কারণতত্ত্ব:
(i) বয়স: নবজাতক ও শিশুদের বেশি হয়।
(ii) শীতকালে বেশি হয়।
(iii) ঘন বসতিপূর্ণ ও শিল্প।
(iv) অধিক কমন ঠান্ডা, সর্দিকাশি, একিউট টনসিলাইটিস, – ইনফ্লুয়েঞ্জা
(v) সামান্য কমন- সাইনোসাইটিস, টনসিলেকটমী, হেমোটিমপ্যানাম, টিনপেনিক মেমব্রেনের আঘাত, টেমপোরাল বোন ফ্রাকচার।
(vi) ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আপার রেসপিরেটরী ট্রাক্টের একিউট ইনফেকশন।
(vii) ব্যাকটেরিয়াসমূহ- নিউমোকক্কাস, হেমোলাইটিক ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্ট্রেপটোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস পায়োজেনিক ইত্যাদি।
(viii) যে কোন ধরনের ইনফেকশন- সেপ্টিসেমিয়া, ব্যাকটেরিমিয়া ইত্যাদি।
(ix) ইউস্টেচিয়ান টিউবে (Eustachian tube) অবস্ট্রাকশন,
(ক) ইডিমা- প্যারান্যাজাল, ন্যাজোফ্যারিনঞ্জিয়াল ইত্যাদি
(খ) লুমেন- এনলার্জ অ্যাডেনয়েড (enlarged adenoids), ন্যাজাল পলিপ (Nasal polyp), এনলার্জ টনসিল (enlarged tonsil). ন্যাজোফ্যারিনজিয়্যাল ফাইব্রোমা (nasopharyngeal fibroma)।
প্রশ্ন: একিউট অটাইটিস মিডিয়ার ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮ বা, একিউট অটাইটিস মিডিয়ার লক্ষণ লিখ। ১১
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) কানে ব্যথা: প্রাথমিক অবস্থায় সামান্য ব্যথা হয়, পরবর্তীতে সিভিয়ার ব্যথা হয়। শিশু কান্না করতে থাকে এবং ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত কিছুতেই শান্ত হয় না।
(ii) কানে না শোনা- একিউট অটাইটিস মিডিয়ার সব সময়ই deafness থাকে।
(iii) পূজস্রাব থাকে।
(iv) দুর্বলতা ও অস্বস্থিকর বোধ থাকে।
(v) জ্বর – জ্বর ১০১-১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট হতে পারে।
(vi) টেন্ডারনেস- মাস্টয়েড প্রসেসে প্রেসার দিলে সাধারণতঃ সামান্য টেন্ডারনেস ও ইডিমা পাওয়া যায়।
(vii) টিমপেনিক মেমব্রেন- টিমপেনিক মেমব্রেনের অ্যাপিয়ারেন্স ইনফেকশনের স্টেজ অনুযায়ী পার্থক্য হয়।
(ক) উজ্জ্বলতা নষ্ট হয় এবং লাইট রিফ্লেকশন ব্যাহত হয়।
(খ) পর্দার কিনার এবং ম্যালইওল্যাস (malleus) এর হ্যান্ডেল বরাবর ছোট ছোট ভেসেলগুলিতে আক্রান্ত হয়।
(গ) ড্রাম লাল বর্ণ ধারন করে এবং পূর্ণতা হয়। মেলিয়াসের হ্যান্ডেল অনেক বেশী খাড়াভাব হয়।
(ঘ) ড্রাম বাহির দিকে ঠেলে আসে এবং এর ল্যান্ড মার্কস থাকে না। Pruple রং ধারণ করে।
(ঙ) পারফোরেশন হওয়ার পর কান দিয়ে স্রাব বের হতে থাকে। এ ডিসচার্জ অনেক সময় রক্ত মিশ্রিত হতে পারে।
প্রশ্ন: একিউট অটাইটিস মিডিয়ার চিকিৎসা লিখ। ১১ একিউট অটাইটিস মিডিয়ার চিকিৎসা:
কনজারভেটিভ চিকিৎসা:
(i) বিশ্রামে থাকতে হবে।
(ii) কানের স্রাব পরিষ্কার করতে হবে।
(iii) ন্যাজাল অবস্ট্রাকশন দূর করতে হবে।
(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
■ স্যার্জিক্যাল চিকিৎসা: উপরিউক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগী আরোগ্য না হলে সার্জিক্যাল চিকিৎসা মাইরিঙ্গোটমী (Myringotomy) করতে হবে।
ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়া
প্রশ্ন: ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা প্রকারভেদ লিখ।
সংজ্ঞা: মধ্যকর্ণের মিউকাস মেমব্রেনের ক্রনিক পায়োজেনিক ইনফ্লামেশনকে, ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়া বলে।
প্রকারভেদ:
ক্রোনিক অটাইটিস মিডিয়াকে নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে-
(ক) নন্-সাপুরেটিভ- (i) সেরাস অটাইটিস (ii) মিউকাস অটাইটিস
(খ) সাপুরেটিভ- ক্রোনিক অটাইটিস মিডিয়া ২ প্রকার। যথা-
(i) টিউবো-টিমপ্যানিক (Tubo-tympanic) (benign type/safe)
(ii) অ্যাটিকো-অ্যান্ট্রাল (Attico-antral) (dangerous type/unsafe)
(গ) টিউবারকুলার
প্রশ্নঃ ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার কারণ লিখ।
ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার কারণতত্ত্ব:
(i) ইউস্টেসিয়াম টিউবে অনস্ট্রাকশন কারণে :- সাইনোসাইটিস, রাইনাইটিস- তরুণ ও পুরাতন টনসিলাইটিস- ন্যাজো ফ্যারিংজাইটিস।
(ii) ন্যাজাল পলিপ বা এনলার্জ এডিনয়েডের কারণে ইউস্টোসিয়ান টিউবের অবস্ট্রাকশন।
(iii) মাইক্রোঅর্গানিজম : স্ট্যাফালোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্রেপটোকক্কাস, হিমেফিলাস ইনফ্লয়েঞ্জি, নিউমোকক্কাস ইত্যাদি।
(iv) দূষিত বস্তু দ্বারা কান খোঁচানো।
(v) পুনঃপুনঃ উপরের শ্বাসনালীর রোগ সংক্রমণ।
প্রশ্ন: ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) পুনঃপুনঃ শ্বাসনালীর রোগ সংক্রমণের ইতিহাস থাকে।
(ii) কান পাকার ইতিহাস থাকবে।
(iii) কান হতে দূর্গন্ধহীন মিউকাস এবং পুঁজ মিশ্রিত ডিসচার্জ প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত হবে।
(iv) কানে ব্যথা থাকবে না বা সামান্য হতে পারে।
(v) বধিরতা- মাইন্ড অথবা Moderate হতে পারে।
(vi) টিমপেনিক মেমব্রেন সেন্ট্রাল পারফোরেশন হতে পারে।
Altico Antral type:
(i) দুর্গন্ধ যুক্ত, পুরু, পুরুলেন্ট বা বুক্ত মিশ্রিত ডিসচার্জ কান হতে নির্গত হয়।
(ii) ব্যথা- অস্থায়ীভাবে মাথা ব্যথা ও মাথা ঘুরানিসহ কানে ব্যথা থাকে।
(iii) জ্বর থাকবে।
(iv) বধিরতা- সিভিয়ার হতে পারে।
(v) টিমপেনিক মেমব্রেন সার্জিক্যাল পারফোরেশন হবে।
(vi) কলেসটিয়াটোমা বা প্ল্যানুলেশন টিস্যু উপস্থিত থাকবে বা থাকে।
(vii) পলিপাস থাকবে।
প্রশ্ন: টিউবো-টিমপেনিক ও অ্যাটিকোএন্ট্রাল সাপুরেটিভ অটাইটিসের মধ্যে পার্থক্য লিখ। বা, সিএসওএম এর দুইটি টাইপের পার্থক্য লিখ।
টিউবো-টিমপেনিক ও অ্যাটিকো-এন্ট্রাল সাপুরেটিভ অটাইটিসের মধ্যে পার্থক্য:
বৈশিষ্ট্য | টিউবো-টিমপেনিক সাপুরেটিভ অটাইটিস | অ্যাটিকোএন্ট্রাল সাপুরেটিভ অটাইটিস |
---|---|---|
অবস্থান | middle এয়ার কেভিটি ও টিউবের সংযোগস্থল (ইউস্টাচিয়ান টিউব) | middle এয়ার কেভিটি, অ্যাটিক ও মস্তoid কোষ |
প্রধান কারণ | ইউস্টাচিয়ান টিউবের ফাংশনাল সমস্যা, সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ | ক্রনিক মিডল ইয়ার ইনফেকশন, অ্যাটিকের ইনফেকশন |
লক্ষণ | শ্রবণশক্তি হ্রাস, মৃদু কান ব্যথা, গা dark ় বা তরল আকারের মাকাস | তীব্র কান ব্যথা, পুঁজের প্রবাহ, ড্যামেজড বা দুর্বল হ্যামার কেস |
প্রবণতা | সাধারণত ভাইরাল সংক্রমণ, হালকা বা মাঝারি স্তরের ক্ষতি | দীর্ঘস্থায়ী, মধুর পুঁজ ও চর্বির সমাহারে কান ক্ষতির দিকে আগ্রসর |
গম্ভীরতা | সাধারণত সীমিত এবং সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব | দীর্ঘমেয়াদি এবং প্রাথমিক পর্যায়ে আরও কম কার্যকরী |
চিকিৎসা | অ্যান্টিবায়োটিকস, ইউস্টাচিয়ান টিউবের শুদ্ধিকরণ | অস্ত্রোপচার, মস্তoid কোষ ও অ্যাটিকের চিকিত্সা |
আক্রান্ত ব্যক্তির বয়স | সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি পাওয়া যায় | প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশী দেখা যায় |
ড্রামের পাস্টারো সুপিরিয়র বা pars flaccida’য় পারফোরেশন
প্রশ্ন: সিএসওএম এর জটিলতাসমূহ উল্লেখ কর। বা অটাইটিস মিডিয়ার জটিলতা লিখ। ০৮
জিএসওএম (ক্রনিক সাপুরেটিভ অটাইটিস মিডিয়া) এর জটিলতাসমূহঃ
1) ফেসিয়াল পালিস, (ii) একিউট মাস্টয়ডাইটিস, (iii) মেনিনজাইটিস,
( (iv) এক্সট্রাডুরাল এ্যাবসেস, (v) ব্রেইন অ্যাবসেস, ল্যাবিরিনথাইটিস,
(vi) ল্যাটারাল সাইনাস থ্রোম্বোসিস, (vii) ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস,
(vii) পেট্রোসাইটিস, (ix) হাইড্রোসেফালাস, (x) এনসেফালাইটিস।
প্রশ্ন: ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার চিকিৎসা লিখ।১
চিকিৎসা: রক্ষনশীল চিকিৎসাঃ
(1) রোগকে বিশ্রামে রাখতে হবে
(ii) আক্রান্ত কানের ভিতর শুষ্ক রাখতে হবে
(iii) কানদ্বয় পরিষ্কার রাখতে হবে
(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: উপরিউক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থায় উপকার না হলে সার্জারী করতে হবে।
মাইরিঙ্গোপ্লাস্টি: বাহির দিকে ইনসিশন দ্বারা টিমপেনিক মেমব্রেন উন্মুক্ত করা হয়, পারফোরেশনের রিম হতে ইপিথেলিয়ামের স্তর তুলে ফেলার পর গ্রাফট লাগিয়ে দেয়া হয়।
টিমপেনোপ্লাস্টি (Tympanoplasty):
টিমপেনিক মেমব্রেন রিপেয়ারের সঙ্গে প্রয়োজনে ossicular reconstauction এর মাধ্যমে Hearing resafore করা হয়, তাকে টিমপেনোপ্লাস্টি বলে।
নাক ও গলা (nose and throat)
প্রশ্ন: সাইনোসাইটিসের লক্ষণ ও চিহ্ন লিখ। ১২ সাইনোসাইটিসের লক্ষণ ও চিহ্ন।
(i) প্রচন্ড মাথাব্যথাসহ চোখে ব্যথা।
(ii) উচ্চ তাপমাত্রাযুক্ত জ্বর।
(iii) শরীরে ব্যথা, অস্বস্থিকর অবস্থা, বমিবমিভাব ও বমি।
(iv) ন্যাজাল অবস্ট্রাকশন হতে পারে।
সাইন:
(1) মুখমন্ডল ফোলা বা ইডিমা দেখা দিতে পারে।
(ii) ম্যাক্সিলারী সাইনাস এর চর্ম লাল বর্ণ ধারণ করতে পারে।
(iii) ম্যাক্সিলারী সাইনাস প্রদাহযুক্ত হবে।
(iv) ন্যাজাল ক্যাভিটি- মিডল মিয়েটাসে প্ররুলেন্ট ডিসচার্জ জমা হয় এবং নাক দিয়ে বের হয়। মিউকোসায় অতিমাত্রায় পূর্ণ।
এপিসট্যাক্সিস (Epistaxis)
প্রশ্নঃ এপিসট্যাক্সিসের সংজ্ঞা, কারণ ও ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৯ বা, এপিসট্যাক্সিস কি? ইহার কারণ ও চিকিৎসা লিখ। ২০১১ এপিসট্যাক্সিসঃ এপিট্যাক্সিস বা নাসিকা হতে রক্তস্রাব হলো মাঝে মাঝে নাক হতে রক্ত পড়া। যখন কোন কারণে নাসিকা গহবর হতে রক্তস্রাব হয়, তাকে এপিস্ট্যাক্সিস বলে।
এপিসট্যাক্সিসের কারণ:
(i) কনজেনিটাল কারণ:
(ক) হ্যামোফিলিয়া বা অন্যান্য রক্তজমাট না বাধার কারণ।
(ii) অর্জিত কারণঃ (ক) যে কোন ধরনের আঘাত, (খ) ইনফ্ল্যামেটরী ডিজিজ- হে ফিভার, একিউট রাইনাইটিজ, (গ) টিউমার জনিত কারণ-
লাইফোমা, লিউকেমিয়া (ঘ) রক্তসঞ্চালনজনিত কারণ- হাইপারটেনশন (ঙ) রক্ত জমাট না বাধার কারণ- পারপিউরা।
চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনাঃ
সাধারণ অবস্থাঃ পালস, ব্লাড প্রেসার, মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ।
বিশেষ অবস্থা: মিনি টর্চ লাইট বা প্রয়োজনে এন্টেরিয়র রাইনোস্কপি দ্বারা নাক পরীক্ষা করতে হবে। রক্ত জমাট বাধা থাকলে তুলা দ্বারা নাক পরিষ্কার করতে হবে।
রোগের কারণ ও লক্ষণানুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
ন্যাজাল পলিপ (Nasal polypus)
প্রশ্নঃ ন্যাজাল পলিপের সংজ্ঞা দাও।
ন্যাজাল পলিপের সংজ্ঞা: নাকের মিউকাস মেমব্রেন অধিক বৃদ্ধি পেয়ে বা ইহাতে জলীয় পদার্থ অধিক পরিমানে জমে স্ফীত হলে, তাকে ন্যাজাল পলিপাস বলে। নাকের এবং সাইনাসের মিউকোসার দীর্ঘস্থায়ী ইডিমার ফলে পলিপের সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইথময়েডাল ল্যাবিরিন্থ (Ethmoidal labyrinth) এর ছোট ছোট স্পেসের মিউকোসায় ইডিমা হলে, মিডল মিটাসের চর্তুপাশের সাব মিউকাস বিশেষভাবে ঢিলাঢালা ফলে সহজে পানি জমা হয়ে টিস্যু ফুলে উঠে। যদিও নাক এবং সাইনাসের যে কোন অংশ হতে পলিপ তৈরী হতে পারে। তবুও অধিকাংশ পলিপ মধ্য টারবিনেট এবং ইথময়েড এলাকা হতে উৎপন্ন হয়।
প্রশ্নঃ ন্যাজাল পলিপের শ্রেণিবিভাগ লিখ।
ন্যাজাল পলিপের শ্রেণিবিভাগ:
(ক) উৎপত্তি উৎস অনুসারে টাইপ
(১) ইথময়েডাল পলিপাস। (২) এ্যান্ট্রো-কোয়ানাল পলিপাস।
(খ) ১। সিম্পল মিউকাস পলিপাস।
২। ফাংগাল পলিপাস ও
৩। নিউপ্লাস্টিক পলিপাস।
প্রশ্ন: ন্যাজাল পলিপের কারণসমূহ লিখ। ১০, ১২, ১৮
ন্যাজাল পলিপের কারণসমূহঃ ১। এলার্জি কারণে হতে পারে।
২। ইনফেকশন জনিত কারণে।
৩। এলার্জি ও ইনফেকশন উভয় এর কারণে হতে পারে।
প্রশ্ন: ন্যাজাল পলিপের লক্ষণ ও চিহ্ন লিখ। ১০, ১২, ১৮
ন্যাজাল পলিপের লক্ষণ ও চিহ্নঃ
নাক বন্ধ হয়ে থাকে, সাধারণতঃ এক বা উভয় পাশের। হাঁচি দেয়া, মাথাব্যথা, কাসি, ঘ্রাণশক্তি হ্রাস এবং ঘ্রাণশক্তিহীনতা। অনেক সময় কিছু ডিসচার্জ হতে থাকে। এ ডিসচার্জ মিউকয়েড বা পুরুলেন্ট হতে পারে। হলুদ পুঁজ দ্বারা মিডল কনকার চতুর্পাশের সুপারফিসিয়াল এলাকা হতে পলিপ উপস্থিত হয়েছে বুঝা যায় না বরং উহার সঙ্গে deep-seated সাইনাস ডিজিজ আছে বুঝায়। মাথাব্যথা থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। মাঝে মাঝে প্রচন্ড হাঁচি-কাশি দেখা দেয়।
প্রশ্ন: ন্যাজাল পলিপের ব্যবস্থাপনা লিখ।
ন্যাজাল পলিপের ব্যবস্থাপনা:
১। রোগীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে।
২। অতিরিক্ত ঠান্ডা ও ঠান্ডা জাতীয় খাদ্য খাওয়া হতে বিরত রাখতে
হবে। ৩। সর্বদা নাক পরিষ্কার রাখতে হবে।
৪। রোগীর যাতে ঠান্ডা না লাগে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
৫। লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করাতে হবে।
৬। সার্জিক্যাল চিকিৎসা: প্রয়োজনে Polypectomy করতে হবে।
টনসিলাইটিস (Tonsilitis)
প্রশ্নঃ টনসিলাইটিসের সংজ্ঞা লিখ। ১২ বা, টনসিলাইটিস কাকে বলে? ০৮, ০৯
টনসিলাইটিসের সংজ্ঞা: কোন কারণে একটি টনসিল বা উভয় টনসিল এর চতুষ্পার্শ্বস্থ মিউকাস মেমব্রেনের লালবর্ণ ধারণ, স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত হওয়াকেই টনসিলাইটিস বলা হয়। এক কথায় টনসিল বা টনসিলদ্বয়ের প্রহাদকে টনসিলাইটিস বলে।
প্রশ্নঃ টনসিলাইটিসের প্রকারভেদ লিখ। ১ টনসিলাইটিসের প্রকারভেদ (Types):
হোমিওপ্যাথিক মতে টনসিলাইটিস দুই প্রকার। যথা-
(i) একিউট টনসিলাইটিস এবং (ii) ক্রনিক টনসিলাইটিস। প্যাথলজিক্যাল মতে ইহাকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(1) একিউট ক্যাটারাল টনসিলাইটিস
(ii) ফলিকুলার টনসিলাইটিস এবং
(iii) একিউট সাপুরেটিভ অথবা কুইন্সি টনসিলাইটিস।
প্রশ্ন: সংজ্ঞাসহ টনসিলাইটিসের কারণসমূহ লিখ। ০৯
টনসিলাইটিসের সংজ্ঞা: কোন কারণে একটি টনসিল বা উভয় টনসিল এবং এর চতুষ্পার্শ্বস্থ মিউকাস মেমব্রেনের লালবর্ণ ধারণ, স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত হওয়াকেই টনসিলাইটিস বলা হয়। এক কথায় টনসিল বা টনসিলদ্বয়ের প্রদাহকে টনসিলাইটিস বলে।
কারণতত্ত্ব (Aetiology): (i) বয়স : ৫-১০ বছরের শিশুদের বেশি হয়। (ii) Causative organisms Bacleria-Streptococci, Staphylococci, Pneumococci, H. Inflauenzae Virues- Rhinovirus, Adenovirus, enterovirus
(iii) ঠান্ডা এবং ঠান্ডা আবহাওয়া জনিত কারণে।
(iv) ইনফেকশাস রোগের জটিলতার কারণে যেমন-ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিপথেরিয়া।
(v) টক্সিক গ্যাস গ্রহণ করার ফলে বা ক্ষতিকর গ্যাসের প্রভাবে।
(vi) অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস।
(vii) বংশগত কারণে।
(viii) পাকস্থলীর গোলযোগের কারণে।
(ix) ক্ষতিকর জীবাণুর কারণে, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাংগাস, স্ট্রেপটোকক্কাই, নিউমোকক্কাই, স্ট্যাফাইলোকক্কাই।
(x) অপুষ্টি, পাকস্থলীর গোলাযোগের কারণে।
(xi) জীবনীশক্তির বৈকল্য বা দূর্বলতার কারণে।
প্রশ্নঃ টনসিলাইটিস এর ইনভেস্টিগেশন লিখ।
টনসিলাইটিসের ইনভেস্টিগেশন (Investigation):
(i) খালি চোখে টাং ডিসপ্রেসব এবং ছোট টর্চের সাহায্যে এই রোগ সহজে নির্ণয় করা যায়।
(ii) থ্রোট সোয়ার পরীক্ষা করলে এই রোগ ধরা পড়ে।
(iii) রক্তের টি.সি, ডি.সি, ই.এস.আর, হিমো %
প্রশ্নঃ টনসিলাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার/ লক্ষণাবলী লিখ। ০৮ বা টনসিলাইটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ বর্ণনা কর। ০৯, ১২, ১৪
টনসিলাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার (Clinical Features):
Symptoms:
(i) অতি উচ্চ জ্বর কিংবা স্বল্প জ্বর হতে পারে।
(ii) শরীরের শীত শীত বোধ।
(iii) শোর থ্রোট থাকবে।
(iv) জ্বরজ্বর ভাব, জ্বর থাকবে (১০২ ডিগ্রী থেকে ১০৩ ডিগ্রী)
(v) জিহ্বা পরিষ্কার থাকবে।
(vi) টনসিলদ্বয় ফুলে যাবে এবং লাল বর্ণ ধারণ করবে।
(vii) বাহির থেকে গলা স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভব করে।
(viii) টনসিলদ্বয়ের ব্যথা কান পর্যন্ত পৌছবে।
(ix) খাবার গ্রহণ করার সময় এবং কথা বলার সময় গলায় ব্যথা হবে।
(x) গলার স্বর পরিবর্তন হবে।
Signs (i) গলায় ঘা থাকবে, (ii) জ্বর থাকবে
(iii) শীত শীতভাব থাকবে
(iv) টনসিলের আক্রান্ত অংশ ফোলা, লাল বর্ণ ও স্পর্শকাতর থাকবে।
প্রশ্নঃ টনসিলাইটিসের জটিলতা লিখ। ০৯, ১০
জটিলতা (Complications) : (i) বার বার টনসিল প্রদাহ হলে ক্রনিক টনসিলাইটিসে রূপান্তরিত হতে পারে।
(ii) সারভাইক্যাল গ্ল্যান্ড আক্রান্ত হতে পারে।
(iii) রিউমেটিক ফিভার এবং হার্টের সমস্যা হতে পারে।
(iv) পেরিটনসিলায় অ্যাবসেস (কমন)
(v) প্যারাফেরেঞ্জিয়াল এবসেস।
প্রশ্ন: টনসিলাইটিসের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা লিখ। ১১, ১৫ বা, টনসিলাইটিসের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১২, ১৩, ১৪
টনসিলাইটিসের চিকিৎসা পদ্ধতি:
Advice: করণীয়:
(i) গরম পানি দিয়ে গরগড়া করতে হবে।
(ii) তরল এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
(iii) আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পড়তে হবে।
(iv) স্বাস্থ্যসম্মত ঘরে থাকতে হবে।
নিষেধ: (i) শক্ত খাবার এবং ঠান্ডা খাবার ও পানীয় (ii) ধুমপান ও
মদ্যপান (iii) দূর্যোগপূর্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় হাঁটাচলা
(iv) মশলাযুক্ত খাবার।
পথ্য: (i) তরল এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
(ii) হালকা গরম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: রক্ষণশীল চিকিৎসা ব্যর্থ হলে এবং রোগ জটিল আকার ধারণ করলে অপারেশনের জন্য মেডিক্যাল সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে।
প্রশ্ন: ক্রনিক টনসিলাইটিস এর লক্ষণাবলী ও চিকিৎসা লিখ।
ক্রনিক টনসিলাইটিস (Chronic tonsillitis):
(1) Chronic parenchymatous tonsillitis শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি
হয়। (2) Chronic follicular tonsillitis- বয়স্কদের কমন।
লক্ষণাবলী: (i) বার বার গলা ব্যথা বা পুনঃপুনঃ গলা ব্যথা হবে।
(ii) অল্প তাপমাত্রাযুক্ত জ্বর থাকবে
(iii) টনসিল এনলার্জ এর কারণে খাদ্য ও পানীয় গিলতে কষ্টকর হয়।
(iv) মুখ থেকে দূর্গন্ধ বের হয় এবং খাদ্যের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
(v) শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলদ্বয় এনলার্জ হয় এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
(vi) এন্টেরিয়র পিলারে চাপ দিলে পুঁজ বের হয়ে আসে
(vii) লিম্ফনোডের এনলার্জমেন্ট হয় কিন্তু টেন্ডার থাকে না।
চিকিৎসা: (ক) কনজাবেটিভ (Conservatie treatment):
(i) রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে।
(ii) হালকা গরম পানির গড়গড়া করতে হবে।
(iii) আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পড়তে হবে।
(iv) স্বাস্থ্য সম্মত ঘরে থাকতে হবে।
(v) তরল ও হালকা গরম এবং পুষ্টিকর খাদ্য পানীয় দিতে হবে।
(vi) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(খ) সার্জিক্যাল চিকিৎসা (Surgical Treatment): উপরিউক্ত চিকিৎসায় আরোগ্য না হলে এবং টনসিলদ্বয় এনলার্জমেন্ট থাকলে ও পুনঃপুনঃ প্রদাহ হলে টনসিলেকটমী (Tonsillectomy) করতে হবে।
Diseases of the eye
কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis)
প্রশ্ন: কনজাংটিভাইটিসের সংজ্ঞা লিখ। ২০০৯ বা, কনজাংটিভাইটিস কি? এর প্রকারভেদ কর। ২০০৮
কনজাংটিভাইটিস (চোখ উঠা) এর সংজ্ঞাঃ চোখের কনজাংটিভার প্রদাহকে কনজাংটিভাইটিস বলে। ইহাতে চোখ লাল হয় এবং কনজাংটিভা হতে রস নিসরণ হয়।
প্রকারভেদ: কনজাংটিভাইটিসের প্রকারভেদ নিম্নে দেয়া হলোঃ
ক। জীবাণু ঘটিতঃ
(১) ব্যাক্টেরিয়াল:
(ক) একিউট ক্যাটারাল বা মিউকো পুরুলেন্ট কনজাংটিভাইটিস।
(খ) মেমব্রেনাস কনজাংটিভাইটিস।
(গ) সিউডো মেমব্রেনাস কনজাংটিভাইটিস।
(ঘ) পুরুলেন্ট কনজাংটিভাইটিস।
(ঙ) অ্যাগুলার কনজাংটিভাইটিস (Angular Conjunctivitis)
(২) ভাইরাল:
(ক) ফলিকুলার কনজাংটিভাইটিস
(খ) একিউট হেমোরেজিক কনজাংটিভাইটিস
(গ) বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগের ফলে Measles, Chicken Pox, Herpes Zoster, Yellow fever, influenga
(৩) এলার্জিকঃ (ক) সিম্পল (খ) ভার্নাল (গ) আঘাতজনিত
(ঘ) অন্যান্য চর্ম রোগজনিত
সাধারণতঃ কনজাংটিভাইটিসকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
(১) একিউট কনজাংটিভাইটিস ও
(২) ক্রনিক কনজাংটিভাইটিস।
প্রশ্ন: কনজাংটিভাইটিসের কারণ লিখ। ০৯
কনজাংটিভাইটিসের কারণ:
(i) জীবাণু ঘটিত কারণ: (ক) ভাইরাস (খ) ব্যাক্টেরিয়া,
(ii) এলার্জিজনিত কারণে- হাইপারসেসিটিভিটি,
(iii) আঘাতজনিত কারণে,
(iv) চর্মরোগের জটিলতার কারণে,
(v) ঠান্ডাজনিত কারণে,
(vi) চোখের অন্য রোগের জটিলতার কারণে- অপথ্যালমিয়া, ক্যাটারাল ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ কনজাংটিভাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। বা, কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণাবলি লিখ। ২০০৯
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) চোখে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করে বা হয়।
(ii) ফটোপরিয়া (আলো সহ্য হয় না)
(iii) দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত হয়।
(iv) চোখে লাল বর্ণ দেখায়, চোখ হতে পানি পড়ে।
(v) চোখে আঠালো স্রাব নিঃসৃত হয়ে চোখের পাতা জুড়ে যায়।
(vi) পানির মত রস ধীরে ধীরে পুঁজের আকার ধারণা করে।
(vii) সকালে ঘুম হতে উঠার সময় চোখের পাতা জোড়া লেগে যায়।
(viii) নিচের ফরনিক্স হাইপারেমিয়া না হওয়া পর্যন্ত চোখ স্বাভাবিক দেখায়। ইহার পর নীচের পাতা ঝুলে পড়ে।
প্রশ্ন: কনজাংটিভাইটিসের জটিলতা উল্লেখ কর।
জটিলতাঃ
(i) ক্রনিক কনজাংটিভাইটিস
(ii) মার্জিনাল কর্ণিয়াল আলসার
(iii) ক্রনিক ড্যাকরিওসিস্টাইটিস
প্রশ্ন: কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসাঃ
রক্ষণশীল চিকিৎসা:
(i) রোগীকে আলাদা রুমে রাখতে হবে।
(ii) চোখে নরমাল স্যালাইন দিয়ে দিনে ৩ বার ধৌত করতে হবে।
(iii) ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধৌত করতে হবে।
(iv) রোগীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
(v) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(vi) আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হলে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
কনজাংটিভাইটিসের ব্যবস্থাপনা:
(i) রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখতে হবে।
(ii) রৌদ্রের আলোতে কালো সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।
(iii) পরিষ্কার পানি দ্বারা ঘনঘন চোখ ধৌত করতে হবে।
(iv) চোখ পরিষ্কার করার জন্য জীবাণুমুক্ত কটন বা ক্লথ ব্যবহার করতে হবে।
(v) পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাদ্য ব্যবস্থা করতে হবে।
(vi) তাজা-ফলমূল ব্যবস্থা করতে হবে।
কর্ণিয়াল আলসার (Corneal Ulcer)
প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর সংজ্ঞা দাও। ২০০৯, ১১
কর্ণিয়াল আলসার-এর সংজ্ঞা: কর্ণিয়ায় ইনফেকশন হলে, তাকে কর্ণিয়াল আলসার বলা হয়। (Loss of continuity of corneal epithelium is called carneal ulcer.)
প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর শ্রেণিবিভাগ লিখ। ২০৪
কর্ণিয়াল আলসার-এর শ্রেণিবিভাগ (Clssification of Corneal Ulcer):
(A) Purulent Ulcer (Suppurative koratitis)
(i) পায়োজেনিক (Pyogenic)
(ii) মাইকোটি (Mycotic)
(iii) মারজিরাল (Marginal)
(B) Non-purulent corneal ulcer
(i) ডেনড্রাইটিক (Dendritic)
(ii) নিউট্রেশনাল : ভিটামিন ‘এ’ এর অভার জনিত (Nutritional: vit A Deficiency)
(iii) নিউরোপ্যারালাইটিক (Neuroparalytic)
(iv) ফ্লাইকটেনিউল্যার (Phlyctenular)
(v) মূরেন্স আলসার (Mooren’s Ulcer)
প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর কারণ লিখ।
কর্ণিয়াল আলসারের কারণ:
(i) জীবাণুজনিত : বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা ইনফেকশনের কারণে। যেমন- স্ট্রেপ্টোকক্কাই, স্ট্র্যাফালোকক্কাই, নিউমোকক্কাই ইত্যাদি
(ii) মিউকো-প্ররুলেন্ট কনজাংটিভাইটিস এর জটিলতা কারণে।
(iii) আঘাত জনিত বা চোখে ফরেন বড়ি পড়ার কারণে।
(iv) কনজেনিটাল সিফিলিস- মায়ের সিফিলিস রোগ থাকলে শিশু ডেলিভারীর সময় সিফিলিসের জীবাণু দ্বারা চোখে এ রোগ হতে পারে।
(v) ভিটামিন এ এর অভাবজনিত কারণে।
(vi) অন্যান্য রোগের কারণে- এলার্জি, নিউরালজিক প্যারালাইসিস ইত্যাদি। 4
প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। বা, কর্ণিয়াল আলসার-এর লক্ষণ উল্লেখ কর। ০৯, ১১
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) চোখ হতে পানি পড়তে থাকে এবং ব্যথা হয়।
(ii) আলোর দিকে তাকাতে পারে না।
(iii) কর্ণিয়ার ধূসর রংএর গোলাকার ইনফেলট্রেশনের মাধ্যমে আলসার শুরু হয়। উপরের লেয়ার উঠে যাওয়ায় টিপিক্যাল আলসার সৃষ্টি হয়।
(iv) চোখের কিনারগুলি বুঝে থাকে এবং ঘায়ের মাঝখানটা নেক্রোটিক পদার্থ দ্বারা ঢাকা থাকে।
(v) কর্ণিয়াল আলসারের সাথে সবসময় আইরাইটিস থাকে।
(vi) প্রগ্রেসিভ স্তরে আলসার আকারে এবং গভীরতায় বৃদ্ধি পেতে থাকে।
(vii) মারাত্মক অবস্থায় সমস্ত কর্নিয়া আলসার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে এবং কর্নিয়া উঠে যাওয়ায় আইরিস উন্মুক্ত হতে পারে।
প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর জটিলতা লিখ।
কর্ণিয়াল আলসার-এর জটিলতাঃ
(i) ডেসিসেটোসিল- আলসার গভীর হয়ে কণিয়ায় ডেসিমেট’স মেমব্রেন পর্যন্ত পৌছে গেলে চোখের ভিতরের স্বাভাবিক চাপে এ মেমব্রেন আলসারের তলা দিয়া বাহির দিকে ফুলে উঠে।
(ii) পারপোরেশন- আলসার গভীর হলে সাধারণতঃ রোগী কাশি বা হাঁচি দিলে আলসার ফুটা হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ কর্ণিয়াল আলসার-এর চিকিৎসা লিখ।
কর্ণিয়াল আলসার-এর চিকিৎসাঃ
স্থানীয় চিকিৎসাঃ
(i) ওয়াস: কনজাংটিভাল স্যাক দিয়ে দিনে ৩ বার নরমাল স্যালাইন দিয়ে ওয়াশ করতে হবে।
(ii) কনজাংটিভা হতে কোন ডিসচার্জ না থাকলে চোখ ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে।
(iii) ব্যথা কমানোর জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(iv) রোগীর সাধারণত স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে হবে।
(v) পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে।
(vi) মুক্ত বাতাস ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে হবে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ
ডেনড্রাইটিক আলসার অ্যাবসলুট অ্যালকোহল বা টিংচার আইওডিন সোয়ার দ্বারা কটারাইজ করতে হবে। প্যারাসিনটেসিস (Paracentesis) অর্থাৎ কর্ণিয়ার আলসারের কারণে চোখের ভিতরের চাপ বৃদ্ধি পেলে, ইহা চাপ কমানো জন্য অপারেশন করা হয়।
চোখের ছানি(Cataract)
প্রশ্ন: ক্যাটার্যাক্টের সংজ্ঞা লিখ। ২০১০, ১৩, ১৮
ক্যাটার্যাক্টের সংজ্ঞা: চোখের লেন্সের বা ইহার ক্যাপসুলের জন্মগত বা অর্জিত যে কোন প্রকার অস্বচ্ছতাকে, ক্যাটার্যাক্ট (ছানী) বলে। (Any opacity in the lens on its capsule whether development or acquired is called cataract.)
প্রশ্ন: ক্যাটারাক্টের শ্রেণী বিভাগ কর। ২০১৩, ১৮
শ্রেণীবিভাগ (Classification)
(A) কারণজনিত ক্যাটারাক্ট (Aetiological classification)
(a) Congenital cataract
(i) Blue dot cataract
(ii) Coronary cataract
(iii) Polar Cataract
(iv) Sutural cataract
(v) Coralliform cataract
(vi) Zonular cataract
(vii) Central cataract
(viii) Total cataract
(B) অর্জিত ক্যাটারাক্ট (Acquired cataract)
(i) ডিজেনারেটিভ (Degenarative) (95%)- Senile cataract
(ii) ট্রমাটিক (Traumatic)- Physical Trauma, Chemical, electrical trauma, Irradiation
(iii) কমপ্লীট ক্যাটারাক্ট (Complicated): Anterior uveitis, glaucama, high myopia, preforated conueal ulcer, retinal detachment.
(iv) Secondary from systemic disease-Diabetes mellitus, Myotonic dystrophy, Cretinism glactosaemia
(v) নিউট্রেশনাল (Nutritional) – Vit B1, B2, D deficiency
(C) বয়স অনুয়ায়ী শ্রেণীবিভাগ (According to age of onset): সেনাইল (Senile), প্রি-সেনাইল (pre-senile), জুবেইনাইল (Juvenile), কনজেনিটাল (congenital)
প্রশ্ন: ক্যাটার্যাক্ট এর কারণ লিখ। ২০১১, ১৫, ১৮
ক্যাটার্যাক্ট এর কারণ:
(i) বংশগত বা জন্মগত বৈকল্যতা কারণে।
(ii) পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব। ভিটামিনের অভাব।
(iii) বাহ্যিক আঘাত। যেমন- মেকানিক্যাল, কেমিকেল, ইলেকট্রিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল ইত্যাদি।
(iv) বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে- ডাবেটিস মেলিটাস, হাইপারথাইরোয়েডিজম, ক্রিটেনিজম ইত্যাদি।
(v) বয়সজনিত কারণে- সেনাইল ক্যাটার্যাক্ট (বার্ধক্য জনিত ছানী):
সেনাইল ক্যাটার্যাক্ট সাধারণতঃ ৫০ বৎসর বয়সের পর হয়। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই সমান হারে হয়। সাধারণতঃ দুই চোখের হয়, কিন্তু যে কোন একটি চোখে আগে শুরু হয়। কারণ: আসল কারণ জানা যায় নাই, সম্ভবত শরীরের জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে লেন্সের প্রোটিন জমাট বেঁধে যায়।
প্রশ্ন: ক্যাটার্যাক্টের জটিলতা লিখ। ১৩, ০৮
ক্যাটারাক্টের জটিলতাঃ
(i) ভিস্যুয়াল ফিল্ড সংকীর্ণ হয়ে যায়।
(ii) অপটিক নার্ভের ডিস্ক নিচু হয়ে কাপ এর সৃষ্টি করে।
(iii) পিউপিল এনলার্জ হয়ে যায়।
(iv) দৃষ্টি শক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন: ক্যাটার্যাক্টের সংজ্ঞা ও লক্ষণ লিখ। ১০ ক্যাটার্যাক্ট কি? এর ক্লিনিক্যাল ফিচার (লক্ষণাবলী) কি?০৮, ১৮
ক্লিনিক্যাল ফিচার:
বার্ধক্য জনিত ছানীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(১) নিউক্লিয়ার ছানী-২০-২৫%,
(২) কর্টিক্যাল ছানী ৭৫-৮০%
নিউক্লিয়ার ছানী (শক্ত ছানী):
(i) নিউক্লিয়ার ছানী কর্টিক্যাল ছানীর আগে হয়ে থাকে। অর্থাৎ ৪০ বৎসর বয়সের পরেই।
(ii) প্রথমে লেন্সের নিউক্লিয়াস ঘোলাটে হয় এবং পরে কর্টেক্স ঘোলাটে হয়।
(iii) এটি পরিপক্ক হতে দীর্ঘ সময় লাগে।
(iv) প্রথমাবস্থায় শুরু লেন্স ঘোলাটে দেখানো ছাড়া আর কোন পরিবর্তন পাওয়া যায় না।
(vi) মাইওপিয়ার জন্য চোখে দেখতে অসুবিধা হয়।
(vii) এ জাতীয় ছানীতে হাইপারম্যাচুরিটি ঘটে না।
কর্টিক্যাল ছানী (কোমল বা নরম ছানী):
এটির ক্লিনিক্যাল ফিচারকে ৪টি ধাপে ভাগ করা হয়েছে।
১। ইনসিপিয়েন্ট ধাপ: এই ধাপে লেন্সের কেন্দ্রে অথবা এক পাশ হতে
অস্বচ্ছতা শুরু হয়। পলিওপিয়া, রংধনুর মত রং দেখা এবং চোখে দেখতে অসুবিধা হয়। অস্বচ্ছতা যদি কেন্দ্রে হয়, তবে রোগী দিনের বেলায় চোখে বেশি কম দেখে। লেন্সের পেরিপেরীতে অস্বচ্ছতা হলে রাতে দেখতে বেশি অসুবিধা হয়।
লক্ষণাবলী:
(i) চোখে তীর্যকভাবে আলো ফেললে পিউপিল ধূসর রং এর দেখা যায়। অন্ধকার কক্ষে চোখে আলো ফেললে লালের মধ্যে কাল স্পট দেখা যায়।
স্পিরিট-ল্যাম্প দ্বারা চোখে পরীক্ষা করলে লেন্সের কেন্দ্রে গোল অস্বচ্ছতা দেখা যায়।
(ii) ইন্ট্রমিসেন্ট ধাপ: আগের ধাপের মতই উপসর্গ থাকে এটি ছাড়াও মাওপিয়া যোগ হয়।
লক্ষণাবলীঃ অস্বচ্ছতা আরও বৃদ্ধি পায়। লেপ ফুলে উঠে এবং আইরিস সামনের দিকে ঠেলে দেয়। আইরিসের ছায়া পাওয়া যায়। সেকেন্ডারী গ্লুকোমা তৈরি হয়।
(iii) পরিপক্ক ধাপঃ পুরা লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে যায়।
(ক) লেন্স পূনরায় আগের মত পুরু হয়।
(খ) চোখের দৃষ্টিশক্তি এতই কমে যায় যে রোগী শুধু চোখের সামনে হাত নড়াচড়া অনুভব করতে পারে। (গ) আইরিস সেডো অনুপস্থিত।
(ঘ) অন্ধকার কক্ষে পরীক্ষা করলে কোন ফান্ডাসের ছায়া পাওয়া যায় না। (ঙ) লেন্সের রং মুক্তার মত দেখায়।
(iv) অতিরিক্ত পরিপক্ক ধাপঃ
(ক) লেন্স ছোট হয়ে যায়, সাদা দুধের মত রং ধারন করে।
(খ) লেন্সের সংকুচিত হওয়ার ফলে আইরিস কাপে এবং চোখের সামনের চেম্বার গভীর হয়।
(গ) লেন্স নীচের দিকে ঝুলে পড়ে।
(ঘ) ক্যাপসুল পুরু হয়, কোন ফান্ডাল ছায়া পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন: ক্যাটার্যাক্ট এর চিকিৎসা লিখ। ২০১১, ১৫
ক্যাটার্যাক্ট এর চিকিৎসাঃ
কনজারভেটিভ চিকিৎসা:
অপরিপক্ক ধাপ:
(1) মাঝে মাঝে রিফ্রাকশন পরীক্ষা করে চশমা দ্বারা ঠিক করতে হবে।
(ii) সেন্ট্রাল অস্বচ্ছতা হলে কাল সানগ্লাস পড়তে হবে।
(iii) সেন্ট্রাল অস্বচ্ছতা হলে রাতে কম আলো ব্যবহার করতে হবে।
(iv) পেরিফেরাল অস্বচ্ছতা হলে রাতে অধিক আলো ব্যবহার করতে হবে
(v) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ
পরিপক্ক ধাপ: চোখের অস্বচ্ছ লেন্স অপারেশন করে বের করে ফেলতে হবে এবং নতুন কৃত্রিম লেন্স সংযোগ করতে হবে। নিম্নলিখিত অপারেশন দ্বারা 1. Extraction of lens- (a) Intracapsular (b). Extracapsular (c) Extracapsular lens extraction with ant. chamber or post. chamber Intraocular lens implantation. (d) Phacoemulsification. 2. Discission operation.
প্রশ্ন: ম্যাচিউর ও ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর পার্থক্য লিখ। ২০১৮
ম্যাচিউর ও ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর পার্থক্য:
ম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট
ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট
লেন্সের কালার- মুক্তারমত সাদা
লেন্সের কালার- ধূসর সাদা।
দর্শনশক্তি- অস্পষ্ট মুভমেন্ট। হাত ২
দর্শনশক্তি- অস্পষ্ট আঙ্গুল গণনা করা।
আইরিস সেডো- অনুপস্থিত।
৩
আইরিস সেডো- উপস্থিত।
ফান্ডাল গ্লো (প্রখর দীপ্তি)- ৪ অনুপস্থিত।
ফান্ডাল গ্লো- উপস্থিত।
প্রশ্ন: সংক্ষেপে লিখঃ মেচিউর ক্যাটারেক্ট এর ৫ টি সাইন। ১৭
মেচিউর ক্যাটারেক্ট এর ৫ টি সাইন:
(i) লেন্স পুরু হয়।
(ii) চোখের দৃষ্টিশক্তি এতই কমে যায় যে রোগী শুধু চোখের সামনে
হাত নড়াচড়া অনুভব করতে পারে।
(iii) আইরিস সেডো অনুপস্থিত।
(iv) অন্ধকার কক্ষে পরীক্ষা করলে কোন ফান্ডাসের ছায়া পাওয়া যায় না।
(v) লেন্সের রং মুক্তার মত দেখায়।
প্রশ্ন: ম্যাচিউর ও ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর চিকিৎসা লিখ। ১৮
ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর চিকিৎসা:
(i) মাঝে মাঝে রিফ্রাকশন পরীক্ষা করে চশমা দ্বারা ঠিক করতে হবে।
(ii) সেন্ট্রাল অস্বচ্ছতা হলে কাল সানগ্লাস পড়তে হবে।
(iii) সেন্ট্রাল অস্বচ্ছতা হলে রাতে কম আলো ব্যবহার করতে হবে।
(iv) পেরিফেরাল অস্বচ্ছতা হলে রাতে অধিক আলো ব্যবহার করতে হবে
(v) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
ম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর চিকিৎসা:
পরিপক্ক ধাপ: চোখের অস্বচ্ছ লেন্স অপারেশন করে বের করে ফেলতে হবে এবং নতুন কৃত্রিম লেন্স সংযোগ করতে হবে।
গ্লুকোমা (Glaucoma)
প্রশ্ন: গ্লুকোমার সংজ্ঞা দাও ও শ্রেণীবিভাগ কর। ১১ বা, গ্লুকোমা কি? গ্লুকোমার প্রকারভেদ লিখ। ১৬
গ্লুকোমার সংজ্ঞা:
অক্ষিগোলকের ভিতরে ইন্টার-অকুলার প্রেসার সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধির কারণে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে চোখের যে ক্ষতি সাধিত হয়, তাকে গ্লুকোমা করে। [Glaucoma is a condition where the intruocular pressure of the eye ball increases transienly or permanently causing temporary or permanent damage to the eye. (Normal pressure: 16-23mm of Hg. by schiolz tonometer)]
গ্লুকোমার শ্রেণীবিভাগ : ক) জন্মগত-ইনফ্যান্টাইল গ্লুকোমা।
খ) অর্জিত-(১) প্রাইমারী গ্লুকোমা- ক্রনিক সিম্পল গ্লুকোমা, কনজেস্টিভ গ্লুকোমা (একিউ ও ক্রনিক)
(২) সেকেন্ডারী গ্লুকোমা (Secondary glaucoma):
প্রদাহজনিত সেকেন্ডারী গ্লুকোমা : যেমন- একিউট আইরিডোসিক্লাইটিস, কর্নিয়াল আলসার প্যানঅফথালমাইটিস ইত্যাদি ইন্টারঅকুলার হেমোরেজ।
প্রশ্ন: গ্লুকোমার কারণসমূহ লিখ। ১০, ১২
গ্লুকোমার কারণসমূহঃ
(i) কনজাংটিভাইটিস।
(ii) বংশগত কারণে।
(iii) অতিরিক্ত চোখের পরিশ্রমজনিত কাজ করা।
(iv) সুষম খাদ্যের অভাব।
(v) পুষ্টিহীনতা-পার্নিসাস এনিমিয়া হলে।
(vi) ক্রনিক উদরাময় বা আমাশয়ের চিকিৎসা করা না হলে।
(vii) উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগে ভোগা।
(viii) মানসিক চাপ ও রোগ।
(xi) অতিরিক্ত আলোতে কাজ করা।
(x) স্নায়ুবিক দুর্বলতা।
প্রশ্ন: কোমার প্রধান লক্ষণাবলি লিখ। ২০০৯, ১১
বা. কোমার ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।
বা, গ্লুকোমার সংজ্ঞা দাও। ইহার লক্ষণাবলী লিখ। ২০১৫
গ্লুকোমার ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(i) মাথা ব্যথা ও চোখে ব্যথা দ্বারা রোগের আরম্ভ হয়।
(ii) সেন্ট্রাল ভিশন- সকল বস্তু ঝাপসা দেখে, দূরের বস্তু ভালরূপে দেখতে পায় না।
(iii) ইন্টারঅকুলার টেনশন বৃদ্ধি পায়।
(iv) প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়।
(v) আলোকাতংক ও চোখ থেকে পানি পড়ে।
(vi) চোখের পাতা ফুলে যায়।
(vii) বমিবমি ভাব ও বমি হতে পারে।
(viii) দুশ্চিন্তা উদ্বেগ বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে চোখের ব্যথা বৃদ্ধি পায়।
(ix) কর্ণিয়ার অস্বচ্ছতা দেখা যেতে পারে।
(x) কনজাংটিভায় রক্তের চাপ বৃদ্ধি এবং আইরিস ও কর্ণিয়ার পোস্টেরিয়র সাইডে চাপ বৃদ্ধি।
প্রশ্ন: গ্লুকোমার জটিলতা লিখ। ১০, ১২
গ্লুকোমার জটিলতা:
(i) ভিজুয়াল ফিল্ড সংকীর্ণতা।
(ii) অপটিক নার্ভের ডিক্স নীচু হয়ে কাপ এর সৃষ্টি হয়।
(iii) চোখের পিউপিল বড় হয়ে যায়।
(iv) চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
(v) চোখে সম্পূর্ণ ছানী আসতে পারে।
প্রশ্ন: গ্লুকোমার ব্যবস্থাপনা লিখ। ১০, ১২
গ্লুকোমার চিকিৎসা/ ব্যবস্থাপনাঃ
(i) রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
(ii) উপযুক্ত ভিটামিনযুক্ত, পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
(iii) দৃশ্চিন্তা, উদ্বেগ পরিত্যাগ করে সুনিদ্রা ব্যবস্থা করতে হবে।
(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবস্থা করতে হবে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: উপরিউক্ত ব্যবস্থাপনা আরোগ্য না হলে আইরিডেক্টমি (Iridectomy) করতে হবে।
ড্যাকরিওসিস্টাইটিস (Dacryocystitis)
প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস কাকে বলে?
ড্যাকরিওসিস্টাইটিসের সংজ্ঞা: ল্যাক্রিমাল স্যাক এবং ল্যাক্রিমোন্যাজাল ডাক্টের একিউট সাপুরেটিভ ইনফ্লামেশনকে, ড্যাকরিওসিস্টাইটিস বলা হয়।
প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর কারণ ও প্রকারভেদ লিখ।
ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর প্রকারভেদ: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস কে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) কনজেনিটাল ড্যাকরিওসিস্টাইটিস
(খ) প্রাইমারী ড্যাকরিওসিস্টাইটিস
(i) একিউট ড্যাকরিওসিস্টাইটিস ও (।।) ক্রনিক ড্যাকরিওসিস্টাইটিস
(গ) সেকেন্ডারী ড্যাকরিওসিস্টাইটিস
ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর কারণ:
(i) জীবাণু সংক্রমন
(ii) স্ট্রেপটোকক্কাস হেমোলাইটিকাসের ইনফেকশন
(iii) স্ট্যাফাইলোকক্কাস ও নিউমোকক্কাস সংক্রমন
(iv) নাকের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর প্রদাহ
(v) সিফিলিস রোগের কুফল।
প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। বা, ড্যাকরিওসিস্টাইটিসের লক্ষণাবলী লিখ।
ড্যাকরিওসিস্টাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার:
(1) ফ্রন্টাল রিজিয়নে প্রচন্ড ব্যথা ও স্যাক অঞ্চলে তাপ বোধ।
(ii) জ্বর ও মাথা ব্যথা থাকতে পারে।
(iii) পানি পড়া- সব সময় চোখ হতে পানি পড়ে। ইহা সাধারণতঃ এক চোখ বা উভয় চোখ থেকে পড়তে পারে।
(iv) বাতাস প্রবাহে ও শীতল বাতাসে চোখ অস্বস্তিকর পানিপূর্ণ হয়ে উঠে এবং দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে পড়ে।
(v) প্রদাহ পুঁজযুক্ত হলে অশ্রুথলি ও তার চারপার্শ্বের তন্ত্রসমূহ স্ফীত হয়।
(vi) চোখ দিয়ে সব সময় পানি ও সাদাবর্ণের স্রাব পড়ে।
(vii) চোখের কোঠা ফুলে উঠে ও স্থানীয়ভাবে লাল হয়।
প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর জটিলতা লিখ।
ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর জটিলতা:
(i) চোখের কোনায় ইনফেকশন।
(ii) কনজাংটিভাইটিস।
(iii) কর্নিয়াল আলসার।
প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর চিকিৎসা/ব্যবস্থাপনাঃ
কনজারভেটিভ চিকিৎসা:
(i) ল্যাকরিমোন্যাজাল ডাক্ট পরিষ্কার করতে হবে।
(ii) ল্যাক্রিমিনাল স্যাক-এর চারদিকে পানি বের করতে হবে।
(iii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।
(iv) রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে হবে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ
ড্যাকরি ওসিস্টোরাইনোসটমি (Dacriocystorhinostomy) করতে হবে অথবা ড্যাকরিওসিস্টেকটমি (Dacriocystectomy) অপারেশন করতে হবে।
হেমোরয়েড
প্রশ্ন: হেমোরয়েড এর সংজ্ঞা, পজিশন, কারণ ও শ্রেণিবিভাগ লিখ।
হেমোরয়েড এর সংজ্ঞা: রেক্টামের নিম্নভাগ এবং মলদ্বারের চারপাশের ব্লাডভেসেলের অস্বাভাবিক স্ফীতি এবং প্রলম্বিত রূপ ও আকার ধারণ করাকে, হেমোরয়েডস বা অর্শ বলে।
হেমোরয়েড এর পজিশন: এক্সটার্নাল হেমোরয়েড, ইন্টারনাল হেমোরয়েড ও ইন্টেরোএক্সটারনাল হেমোরয়েড।
হেমোরয়েড এর শ্রেণিবিভাগ: হেমোরয়েডকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (i) এক্সটার্নাল হেমোরয়েড (ii) ইন্টারনাল হেমোরয়েড ও
(iii) ইন্টেরোএক্সটারনাল হেমোরয়েড।
হেমোরয়েড এর কারণ: (i) হেরিডিটি বা বংশগত- জন্মগতভাবে মলদ্বারের ভেইন ওয়ালের দুর্বলতা থাকলে। রেক্টালে আর্টারী সাপ্লাই এর অস্বাভাবিকতা
থাকলে। (ii) পায়ে ভেরিকোস ভেইন থাকলে।
(iii) লোয়ার রেক্টামে ব্লাড প্রেসার বেশি থাকার কারণে এটি হতে পারে।
(iv) কোষ্ঠবদ্ধতা, মলত্যাগের সময় বার বার বেশি করে কোথ দেয়ার কারণে।
(v) ইউরিনারী ব্লাডারের গোলযোগ বা রেনাল স্টোন।
(vi) গর্ভাবস্থার সময় এটি দেখা দিতে পারে।
(vii) লিভারের বিভিন্ন রোগের কারেণ।
(viii) বিভিন্ন কারণে রেক্টামের নিম্নাংশে ভেইনসমূহের উপর চাপ পড়া
প্রশ্ন: হেমোরয়েড এর লক্ষণাবলী, ইনভেস্টিগেশন, চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা লিখ।
হেমোরয়েড এর লক্ষণাবলী: (i) মলত্যাগ করার অত্যন্ত কষ্টকর ও রেক্টামের মধ্যে জ্বালা দপদপানি ও চিড়িক মারা ব্যথা হয়।
(ii) মলের সাথে রক্ত পড়া এবং মলত্যাগের আগে ও শেষে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বের হয়। (iii) কোমরে ও তলপেটে ব্যথা করে।
(iv) অস্থিরতা ও অস্বস্থি বোধ করে।
(v) এনিমিয়া বর্তমান থাকে।
(vi) কোষ্ঠবদ্ধতা বর্তমান থাকে।
(vii) দুর্বলতা দেখা দেয়।
হেমোরয়েড বা অর্শ এর ইনভেস্টিগেশন:
(i) হাতে গ্লাভস পরাবস্থায় মলদ্বার দিয়ে রেক্টামের ভেতরে আঙ্গুল দ্বারা পরীক্ষা করলে এটি নির্ণয় করা যায়।
(ii) ব্লাড ফর সিবিসি করলে- রক্তের উপাদানের তারতম্য দেখা যাবে।
(iii) প্রক্টোস্কোপ বা রেক্টাল স্পেকুলাম যন্ত্র দ্বারা মলদ্বারের ভেতরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে রেক্টামের চারদিকে পরীক্ষা করলে হেমোরয়েডের বা অর্শের আকার, সংখ্যা ও অবস্থান ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়।
হেমোরয়েড বা অর্শ এর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা: (ক) কনজারভেটিভ: (i) কোষ্ঠবদ্ধতা এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ কারণ, সে জন্য প্রথমে কোষ্ঠবদ্ধতা দুর করার ব্যবস্থা করতে হবে।
(ii) ঠান্ডা বা গরম সেক দিলে উপকার হলে তা করতে হবে।
(iii) সিভিয়ার এনিমিয়া হলে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
(iv) প্রয়োজনে ইন্টারভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।
পথ্যাপথ্যঃ
(i) সহজ প্রচ্য পুষ্টিকর তরল ও অর্ধ তরল খাদ্য দিতে হবে।
(ii) ইসুবগুলের ভূসি পানিতে ভিজিয়ে সামান্য গুড় দিয়ে প্রতিদিন সকালে ও রাতে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
(iii) তাজা ফলমূল খেতে হবে।
(iv) নরম ভাত, শাক-সব্জি, কচু, পেঁপে, লেবু, বেল, মাখন ও ঘোল ইত্যাদি।
নিষেধ : (i) অধিক তৈল, মশলা ও ঝালযুক্ত খাদ্য নিষেধ।
(ii) ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে।
(iii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।
খ) সক্রিয় চিকিৎসা (Active treatment):
(1) ইনজেকশন চিকিৎসা (মিচেল)- প্রথম-ডিগ্রি অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েড যা রক্তপাত হয় এবং প্রথম দিকে দ্বিতীয়-ডিগ্রি হেমোরয়েডের ক্ষেত্রে।
(ii) ব্যান্ডিং চিকিৎসা (ব্যারন)- ইনজেকশন দ্বারা পরিচালনা দ্বিতীয় ডিগ্রির জন্য যা খুব বড় হেমোরয়েড এর সফল হওয়ার চিকিৎসা।
(iii) ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery)
(iv) ফটোক্যাগুলেশন (Photocoagulation)
গ) সার্জিক্যাল চিকিৎসা: হেমোরয়েডেক্টমি (Haemorrhoidectomy)।
প্রশ্ন: হেমোরয়েড ও এনালফিসার এর মধ্যে পার্থক্য কর।
হেমোরয়েড ও এনালফিসার এর মধ্যে পার্থক্য:
বৈশিষ্ট্য | হেমোরয়েড (Hemorrhoid) | এনালফিসার (Anal Fissure) |
---|---|---|
সংজ্ঞা | মলদ্বারের ভেতরে বা বাইরের শিরা ফুলে যাওয়া ও গুলিয়ে যাওয়া | মলদ্বারের ত্বকে একটি তীব্র চির ধরে থাকা ফাটল |
অবস্থান | মলদ্বারের ভিতরে (ইন্টারনাল) বা বাইরের (এক্সটার্নাল) শিরায় | মলদ্বারের প্রান্তে, সাধারণত পেছনের দিকে |
প্রধান কারণ | অতিরিক্ত চাপ, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, কোষ্ঠকাঠিন্য, গর্ভাবস্থা | কঠিন মল ত্যাগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতিরিক্ত চাপ |
লক্ষণ | মলত্যাগে ব্যথা, রক্তপাত, মলদ্বারে চাকা বা ফুলে থাকা | মলত্যাগের সময় তীব্র ব্যথা, রক্তপাত, মলদ্বারে ফাটল |
ব্যথা | সাধারণত মৃদু থেকে মাঝারি ব্যথা থাকে, মলত্যাগের সময় | মলত্যাগের সময় তীব্র এবং তীক্ষ্ণ ব্যথা |
রক্তপাত | মলদ্বারে রক্তপাত সাধারণত হালকা ও স্রাবের আকারে থাকে | মলত্যাগের পর রক্তপাত হতে পারে, তবে সাধারণত কম পরিমাণে |
চিকিৎসা | ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ক্রিম, কখনও কখনও অস্ত্রোপচার | ক্রিম, স্থানীয় অ্যানাস্থেটিকস, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, অস্ত্রোপচার |
প্রধান সমস্যা | মলদ্বারের শিরা ফুলে যাওয়া এবং টেনশন বৃদ্ধি | মলদ্বারে তীব্র ফাটল এবং তীব্র ব্যথা সৃষ্টি |
এনাল ফিসার
প্রশ্ন: এনাল ফিসারের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, কারণসমূহ লিখ।
এনাল ফিসারের সংজ্ঞা: মলদ্বারের চারপাশের ভিতর দিল্লির আবরণী কোঁচকানো পর্দার মত কপাটিধা সৃষ্টি করে (এনাল ভান্ত)। এনাল ফিসার হচ্ছে নিম্ন এনাল ক্যানেলের ইনফেকশন ও আলসারেশন।।
এনাল ফিসারের প্রকারভেদ: এনাল ফিসার দুই প্রকার যথা- (১) একিউট এনাল ফিসার ও (ii) ক্রনিক এনাল ফিসার।
এনাল ফিসারের কারণ।
(1) বংশগত কারণে হতে পারে।
(ii) কোষ্ঠকাঠিন্য এ রোগের অন্যতম কারণ। শক্ত গটলে মলের চাপে এনাল ভাল্ব সহজেই ফেটে যায়।
(iii) বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমনের কারণে হতে পারে।
(iv) শক্ত খাদ্য কণা মলের সাথে মলদ্বার দিয়ে বের হওয়ার সময় এনাসের ওয়ালে চাপের ফলে আবরণী ঝিল্লি ফেটে রক্ত বের হতে পারে।
(v) যৌনবাহিত রোগের কারণে এটি হতে পারে।
প্রশ্ন: এনাল ফিসারের লক্ষণাবলী, ইনভেস্টিগেশন ও চিকিৎসা লিখ।
এনাল ফিসারের লক্ষণাবলী: (i) মলদ্বারের যে কোন অংশ ফেটে রক্ত বের হবে। (ii) মলদ্বারে তীব্র বথ্যা হবে এবং ব্যথা মলত্যাগের আগে ও পরে হতে পারে। (iii) মলদ্বারে জ্বালা ও স্পর্শকাতরতা থাকবে। (iv) প্রত্যকবার মলত্যাগের সময় চাপ পড়ায় মলদ্বারের ছিড়ে যাওয়া ঝিল্লির দৈর্ঘ্য বড় হয়। (v) মলের সাথে রক্ত ও কখনও কখনও পুঁজ মিশ্রত থাকে।
এনাল ফিসারের ইনভেস্টিগেশনঃ
(i) রক্তের টি.সি, ডি.সি, এইচবি%, ইএসআর করতে হবে।
(ii) পার-রেক্টাল পরীক্ষা করতে হবে।
এনাল ফিসারের চিকিৎসা: কনজারভেটিভ চিকিৎসাঃ
(1) কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করার ব্যবস্থা করতে হবে।
(ii) ফাইবারযুক্ত খাদ্য খেতে হবে।
(iii) অধিক তৈল, মশলা ও ঝালযুক্ত খাদ্য নিষেধ।
(iv) লক্ষনানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। ইস্কিউলাস হিপ, মিলিফলিয়াম, গ্র্যাফাইটিস, নাইট্রিক এসিড, এলুমিনা, নাক্স-ভম, সাইলিসিয়া ইত্যাদি।
এনাল ফিসারের সার্জিক্যাল চিকিৎসা: কনজারভেটিভ চিকিৎসায় রোগী
আরোগ্য লাভ না করলে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করতে হবে। অন্যথা রোগীর জটিলতা দেখা দিতে পারে। এতে ফিসারেকটমি করতে হবে।
প্রশ্ন: সংক্ষেপে লিখ। কানের ভিতর ফরেন বডি
সংক্ষেপে লিখ।
ময়েস্ট গ্যাংগ্রীন: আর্টারী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আর্টারী ও ভেইন উভয়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইনফেকশন এবং পিউট্রিফ্যাকশন সব সময়ই থাকবে। আক্রান্ত এরিয়া বর্ণ রক্তাভ। সারফেস এরিয়া ফুলা থাকে এবং ইহার উপরের ফোস্কাগুলোতে রক্তাভ ফ্লুইড থাকে। অত্যন্ত দুর্গন্ধ থাকে। কোন সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে না। ভীষণ টক্সিক অবস্থা উৎপন্ন করে।
টক্সিমিয়া (Toxaemia): জীবন্ত ব্যাক্টেরিয়া দেহের কোন স্থানে অবস্থিত থেকে যে অন্তবিষ উৎপন্ন করে, উক্ত বিষ রক্তের সাথে মিশে টিস্যুর উপর যে কাজ করে রোগাবস্থা সৃষ্টি করে, তাকে টক্সিমিয়া বলে।
সেপ্টিসিমিয়ার সংজ্ঞা (septicaemia): কোন ক্ষত সৃষ্টিকারী জীবানু দেহ ও ক্ষতের পচন হতে এক প্রকার বিষ নির্গত হয়ে রক্তে মিশে রক্তকে বিষাক্ত করে, রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু দেহের কোন বিশেষ অংশে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিরোধকারী ইমিউনিটিকে দুর্বল করে, সম্পূর্ণ শরীরে প্রসার লাভ করে এবং রক্তের মধ্যেই জীবাণুসমূহ স্থিতি, বৃদ্ধি ও ব্যাপ্তি ঘটায়, তাকে সেপ্টিসিমিয়া বা
বিষাক্ততা বলে।
ব্যাক্টেরিমিয়া সংজ্ঞা (bacteraemia): যখন কোন বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশ না করে ব্যাক্টেরিয়া গুপ্তভাবে টিস্যু হতে রক্তে প্রবেশ করে, তাকে ব্যাক্টেরিমিয়া বলে।
ময়েস্ট গ্যাংগ্রীন।
আর্টারী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আর্টারী ও ভেইন উভয়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইনফেকশন এবং পিউট্রিফ্যাকশন সব সময়ই থাকবে। রক্তাভ বর্ণের। সারফেস ফুলা থাকে এবং এটির উপরের ফোস্কাগুলোতে রক্তাভ ফ্লুইড থাকে। অত্যন্ত দূর্গন্ধ থাকে। কোন সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে না। ভীষণ টক্সিক হয়ে থাকে।
ম্যাস্টাইটিসঃ জীবাণু বা অন্য যে কোন কারণে স্তনে প্রদাহ হলে, তাকে মাস্টাইটিস বলে। ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি এটির কমন কারণ। অধিকাংশই স্টাফাইলোকক্কাস অরিয়াস দ্বারা হয়ে থাকে। আক্রান্ত স্তনে বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্তনের একটি সিগমেন্টে একিউট ইনফ্লামেশনের চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রথমে সেলুলাইটিস হয় কিন্তু পরে অ্যাবসেস তৈরি হয়।
৩। ডি-হাইড্রেশন
ডি-হাইড্রেশনঃ
ডি-হাইড্রেশন হচ্ছে দেহের এমন একটি অবস্থা যেখানে টিস্যুর মধ্যস্থিত ইন্টারসেলুলার ও এক্সট্রাসেলুলার বডি ফ্লুইড স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। অর্থাৎ দেহে তরল পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পেলে, তাকে ডি-হাইড্রেশন বলে। যেমন- অতিরিক্ত বমি ও উদরাময়া হলে দেহে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়।
৭। রেক্টাল প্রলাপস
৭। রেক্টাল প্রলাপসঃ
শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী, পেশী প্রভৃতিসহ সরলান্ত্রের সমগ্র অংশ নির্গত হলে, তাকে রেক্টাল প্রলাপস বলে। এনিমিয়া, অর্শ, রক্তামাশায়, উদরাময় কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রষ্টেট এনলার্জ প্রভৃতি রোগের কারণে ইহা হতে পারে। সাধারণতঃ মলত্যাগ কালে রেক্টাম ঝুলে পড়ে। আবার কখনও হাঁচি, কাশি, মূত্রত্যাগকালে ইহা বের হয়ে যায়। সদৃশ বিধান মতে চিকিৎসা করার পর আরোগ্য না হলে সর্জিক্যাল চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে।
কানের ভিতর ফরেন বডি: কানের মধ্যে যে সব বস্তু প্রবেশ করে, তাকে,
ফরেন বডি বলে। এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- জীবন্ত ও প্রাণহীন বস্তু। জীবন্ত হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র পোকা-মাকড় এবং ক্ষুদ্র পাথর কণা, শস্য কণা ও অন্যান্য বস্তু। প্রাণহীন বস্তু আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ১। পানি লাগলে ফুলে উঠে এমন। ২। পানি লাগলে ফুলে উঠে না এমন।
সাধারণতঃ ছোট শিশুদের মধ্যে এটি হয়ে থাকে। কিন্তু জীবস্তু পোকা বয়স্কদের কানেও প্রবেশ করতে পারে। আবার দূর্ঘটনার কারণে যে কোন বয়সে কানে ভেতর ফরেন বডি প্রবেশ করতে পারে।
ফরেন বডি প্রকারভেদ:
(i) অ্যানিমেট (জীবন্ত): পোকামাকড়, মাছি, ম্যাগটস।
(ii) নির্জীব: ক) শাক-সবজি- মটর, শিম বীজ, ধান, বিভিন্ন শস্য কণা।
খ) অ-সবজি- পুঁতি, নুড়ি পাথর, পেন্সিল ডগা ইত্যাদি।
ক্লিনিক্যাল ফিচার (লক্ষণাবলী):
(i) কি ধরনের ফরেন বডি তা নির্ধারন করা যেতে পারে।
(ii) ব্যথা হতে পারে। (iii) ফরেন বডির সেনসেশন (সংবেদন)।
(iv) রক্তের দাগযুক্ত স্রাব (হতে পারে)। (v) বধিরতা (হতে পারে)।
কানের ভিতর ফরেন বডির চিকিৎসাঃ ফরেন বড়ি অপসারণ নির্ভর করেঃ
(ক) ফরেন বডির প্রকারভেদ, (খ) আঘাতের সাইজের উপর, (গ) ফরেন বডির আকারের উপর, (ঘ) রোগীর বয়সের উপর।
(i) অ্যানিমেট (জীবন্ত) ফরেন বডি: হার্টম্যান’স ফরসেপ বা সিরিজিং দ্বারা অপসারণ করতে হবে। জীবন্ত জিনিস অপসারণের আগে স্পিরিট, তেল, প্যারাফিন ইত্যাদি দিয়ে মেরে ফেলতে হবে।
(ii) ব্যথা বা রক্তক্ষরন হলে লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হরে।
কানের ভিতর ফরেন বডির ব্যবস্থাপনা: আগে জানতে হবে কি ধরনের ফরেন
বডি কানে প্রবেশ করেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ফরসেপ দ্বারা অত্যন্ত সাবধানতার সাথে কানের ফরেন বডি বের করার চেষ্টা করতে হবে।