সার্জারী (চতুর্থ বর্ষ)

সার্জারি (Surgery) হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে শরীরের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক অংশে শল্যচিকিৎসক (Surgeon) অস্ত্রোপচার করে রোগ নিরাময়, আঘাত ঠিক করা, বা শারীরিক সমস্যা সংশোধন করেন। এটি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে, যেমন:
  1. ডায়াগনস্টিক সার্জারি: রোগ নির্ণয়ের জন্য করা হয়।
  2. কোরেকটিভ সার্জারি: শারীরিক ত্রুটি বা বিকৃতি সংশোধন করার জন্য।
  3. অ্যামার্জেন্সি সার্জারি: জরুরি অবস্থায় করা হয়, যেমন দুর্ঘটনার পর।
  4. কসমেটিক সার্জারি: শারীরিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য।

সার্জারি সাধারণত অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে করা হয় যাতে রোগী ব্যথা অনুভব না করেন।

**হোমিওপ্যাথিতে সার্জারীর পাঠের প্রয়োজনীয়তা:

হোমিওপ্যাথি একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে রোগ নিরাময়ে প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। সাধারণত হোমিওপ্যাথিতে সার্জারির প্রয়োজন হয় না, কারণ এর মূল উদ্দেশ্য শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে রোগ নিরাময় করা। তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিতে সার্জারির জ্ঞান থাকা দরকার হতে পারে, যেমন:

  1. রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসার জন্য: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের রোগের প্রকৃতি, ধরণ এবং স্তর বুঝতে সার্জারির মৌলিক ধারণা থাকা প্রয়োজন। কখনও কখনও রোগ এত জটিল বা মারাত্মক হয়ে যায় যে, ওষুধ দ্বারা সঠিক সময়ে চিকিৎসা সম্ভব নয় এবং অস্ত্রোপচারই একমাত্র উপায়। এমন পরিস্থিতিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসককে রোগীর অবস্থার গুরুত্ব বুঝে প্রথাগত সার্জারির জন্য তাকে সঠিক চিকিৎসকের কাছে পাঠাতে হয়।

  2. জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য: কিছু ক্ষেত্রে আঘাত বা দুর্ঘটনার পর জরুরি ভিত্তিতে সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসককে জানতে হবে কখন রোগীর সার্জারি প্রয়োজন এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা যদি সার্জারির প্রাথমিক ধারণা রাখেন, তবে এসব অবস্থায় রোগীকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।

  3. রোগের সীমাবদ্ধতা বোঝা: সার্জারির জ্ঞান হোমিওপ্যাথ চিকিৎসককে তাদের চিকিৎসার সীমা সম্পর্কে অবগত করে। যদি কোনো রোগ শুধুমাত্র সার্জারি দিয়ে নিরাময়যোগ্য হয়, তবে তিনি রোগীকে যথাযথ চিকিৎসার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারেন।

  4. মেডিকেল পেশার সহযোগিতা: আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিভিন্ন পদ্ধতির সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। হোমিওপ্যাথি এবং সার্জারি একে অপরের পরিপূরক হতে পারে, তাই সার্জারির মৌলিক জ্ঞান থাকলে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসকরা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারেন।

  5. সার্জারির পরবর্তী পরিচর্যার জন্য: যদি কোনো রোগীর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা সার্জারির পরবর্তী যত্নে তাদের সাহায্য করতে পারেন, যা দ্রুত আরোগ্যলাভে সহায়ক হতে পারে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে পারে।

সুতরাং, হোমিওপ্যাথিতে সরাসরি সার্জারি ব্যবহার না হলেও, সার্জারির মৌলিক জ্ঞান থাকা চিকিৎসকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের রোগ নির্ণয়, জরুরি পরিস্থিতি সামলানো এবং সার্জারির পর রোগীর যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। এই কারণে, হোমিওপ্যাথিতে সার্জারির মৌলিক পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

একজন আদর্শ সার্জনের  কিছু বিশেষ গুণাবলী:

একজন আদর্শ সার্জনের জন্য কিছু বিশেষ গুণাবলী থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সার্জারির মাধ্যমে রোগীর জীবন ও স্বাস্থ্য সরাসরি প্রভাবিত হয়। এখানে একজন আদর্শ সার্জনের প্রয়োজনীয় গুণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হলো:

### ১. **কারিগরি দক্ষতা**:
সার্জনের মূল কাজ হলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সুনির্দিষ্ট অস্ত্রোপচার করা। এজন্য সার্জনের হাতের নিখুঁত সমন্বয়, চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, এবং টেকনিক্যাল দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি। তাঁকে বিভিন্ন সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার এবং আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানী হতে হবে।

### ২. **ধৈর্য এবং মনোযোগ**:
সার্জারি একটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল প্রক্রিয়া হতে পারে, যা ধৈর্যের প্রয়োজন। একজন সার্জনকে প্রতিটি ধাপে মনোযোগ দিতে হবে এবং ভুল করার কোনো সুযোগ নেই। নির্ভুল এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে সার্জনকে সবসময় মনোযোগী হতে হয়।

### ৩. **সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা**:
সার্জারি চলাকালীন বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। একজন আদর্শ সার্জনকে দ্রুত এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে সক্ষম হতে হবে। তাঁর সমস্যার প্রতি বিশ্লেষণী দৃষ্টি এবং সৃজনশীল সমাধান খুঁজে বের করার ক্ষমতা থাকতে হবে।

### ৪. **আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা**:
জটিল এবং চাপপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করার সময় একজন সার্জনের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর জীবন ঝুঁকিতে থাকলে একজন সার্জনের শান্ত থাকা এবং ধৈর্য ধরে কাজ করার ক্ষমতা রোগীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

### ৫. **যোগাযোগ দক্ষতা**:
সার্জনকে রোগী, রোগীর পরিবার এবং তার সহকর্মীদের সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করতে জানতে হবে। অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া, ঝুঁকি, এবং রোগীর অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্টভাবে রোগী ও তার পরিবারের সাথে কথা বলা একজন আদর্শ সার্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গুণ।

### ৬. **সহানুভূতি এবং মানবিকতা**:
রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বোঝার জন্য একজন সার্জনের মধ্যে সহানুভূতি থাকা আবশ্যক। একজন সার্জনকে রোগীর দুঃখ-কষ্ট বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী যত্ন এবং সাহায্য দিতে হবে। মানবিক গুণাবলী একজন সার্জনকে রোগীর সাথে আরও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে।

### ৭. **শারীরিক ও মানসিক সহ্যশক্তি**:
সার্জারি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে এবং এর জন্য শারীরিক শক্তি এবং সহনশীলতা প্রয়োজন। একজন সার্জনকে মানসিকভাবে দৃঢ় হতে হবে, যাতে দীর্ঘ সময় কাজ করার পরেও তিনি তার সেরা কাজটি করতে পারেন।

### ৮. **গবেষণা ও শিখতে আগ্রহ**:
মেডিক্যাল ফিল্ডে নতুন নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি প্রতিনিয়ত উদ্ভাবিত হচ্ছে। একজন আদর্শ সার্জনকে সর্বদা শিখতে এবং নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে, যাতে তিনি সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন।

### ৯. **নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব**:
সার্জনের জন্য রোগীর কল্যাণ সবচেয়ে বড় নৈতিক দায়িত্ব। একজন আদর্শ সার্জনকে সব সময় নৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং রোগীর প্রতি তাঁর দায়িত্বশীল আচরণ বজায় রাখতে হবে।

### ১০. **দলগত কাজের দক্ষতা**:
সার্জারি প্রায়ই একটি দলের সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়, যেখানে নার্স, অ্যানেস্থেটিস্ট, এবং অন্যান্য চিকিৎসকরা অংশ নেন। তাই একজন সার্জনকে দলগতভাবে কাজ করতে পারতে হবে এবং সবাইকে নিয়ে সমন্বয় সাধন করতে হবে।

এই গুণাবলীর সমন্বয় একজন সার্জনকে তার ক্ষেত্রে সফল এবং রোগীদের জন্য আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলে।

একটি আদর্শ অপারেশন থিয়েটার কক্ষের বর্ণনা: একটি আদর্শ অপারেশন থিয়েটার (Operation Theater, OT) কক্ষ এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে সার্জারির সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যায়। এর প্রতিটি উপাদান সার্জনের কাজ সহজ করা এবং রোগীর জন্য ঝুঁকি কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ অপারেশন থিয়েটারের কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

### ১. **পরিস্কার এবং জীবাণুমুক্ত পরিবেশ**:
অপারেশন থিয়েটার অবশ্যই সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত থাকতে হবে, যাতে সার্জারির সময় ইনফেকশনের ঝুঁকি কমানো যায়। এজন্য অপারেশন থিয়েটারে এয়ার ফিল্টারেশন সিস্টেম (HEPA) ব্যবহার করা হয়, যা বাতাসকে জীবাণুমুক্ত রাখে। এছাড়া কক্ষের মেঝে, দেয়াল, এবং সরঞ্জাম নিয়মিত পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করা হয়।

### ২. **পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা**:
সার্জারির সময় সঠিকভাবে দেখতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত অপারেশন থিয়েটারে অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং ফোকাস করা যায় এমন সার্জিক্যাল লাইট ব্যবহার করা হয়, যা সার্জনের কাজের স্থানকে পরিষ্কারভাবে আলোকিত করে। এগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হয় যাতে আলো সরাসরি কাজের জায়গায় পড়ে এবং ছায়া না তৈরি হয়।

### ৩. **আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম**:
অপারেশন থিয়েটারে আধুনিক এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকা আবশ্যক। এর মধ্যে রয়েছে:
– **সার্জিক্যাল টেবিল**: নিয়মিত এবং সামঞ্জস্যযোগ্য টেবিল, যা সার্জারির জন্য উপযোগী।
– **অ্যানেস্থেসিয়া মেশিন**: রোগীকে অচেতন রাখার জন্য।
– **মনিটরিং ডিভাইস**: রোগীর হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, অক্সিজেন লেভেল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক পরিসংখ্যান নিরীক্ষণ করার জন্য।
– **সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি**: বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, যেমন স্ক্যালপেল, ফোর্সেপস, সাকশন ডিভাইস, ইলেকট্রিক কাটার ইত্যাদি।

### ৪. **বায়ুপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ**:
অপারেশন থিয়েটারে তাপমাত্রা এবং বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম এবং বায়ুপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা উচিত। এটি একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা বজায় রাখে, যা রোগী এবং সার্জিক্যাল দল উভয়ের জন্য আরামদায়ক এবং জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে।

### ৫. **জরুরি সরঞ্জাম**:
অপারেশন থিয়েটারে সবসময় জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য প্রস্তুতি থাকতে হয়। এজন্য কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (CPR) সরঞ্জাম, ডিফিব্রিলেটর, অক্সিজেন সাপ্লাই, এবং অন্যান্য জরুরি মেডিকেল সরঞ্জাম হাতে রাখা হয়।

### ৬. **স্টেরাইল জোন এবং প্রস্তুতির এলাকা**:
অপারেশন থিয়েটারে একটি নির্দিষ্ট স্থান থাকে যেখানে স্টেরাইল সরঞ্জাম সংরক্ষণ করা হয়। এই জোনে সার্জারির পূর্বে যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করা হয় এবং সার্জিক্যাল দল প্রস্তুতি নেয়, যেমন সঠিক পোশাক পরা এবং জীবাণুমুক্ত গ্লাভস ব্যবহার করা।

### ৭. **যোগাযোগ ব্যবস্থা**:
অপারেশন থিয়েটারে বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন ইন্টারকম বা টেলিফোন সিস্টেম থাকতে হয়। জরুরি অবস্থায় সহায়তা ডাকার জন্য এই ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

### ৮. **বিশেষজ্ঞ দল**:
একটি আদর্শ অপারেশন থিয়েটারে শুধু আধুনিক যন্ত্রপাতি নয়, দক্ষ সার্জন, নার্স এবং অ্যানেস্থেটিস্টদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল থাকে। তারা সবাই সার্জারির সময় সমন্বিতভাবে কাজ করে এবং রোগীর সর্বোচ্চ যত্ন নেয়।

### ৯. **আলাদা প্রবেশ এবং প্রস্থানের ব্যবস্থা**:
অপারেশন থিয়েটারে স্টেরাইল এবং নন-স্টেরাইল প্রবেশের ব্যবস্থা আলাদা থাকতে হয়। যাতে পরিচ্ছন্নতা এবং জীবাণুমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয়। রোগী ও চিকিৎসা দলের প্রবেশ ও প্রস্থান আলাদা পথে হয়, এবং অপারেশনের পর ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও বর্জ্য অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট এলাকা থাকে।

### ১০. **বর্জ্য ব্যবস্থাপনা**:
সার্জারির সময় ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং অন্যান্য উপকরণগুলো নিরাপদ এবং জীবাণুমুক্ত পদ্ধতিতে অপসারণ করা হয়। অপারেশন থিয়েটারে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে, যা জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করতে সহায়ক।

### ১১. **মানবিক ও আরামদায়ক পরিবেশ**:
যদিও অপারেশন থিয়েটার একটি অত্যন্ত প্রযুক্তি-নির্ভর স্থান, তবে এখানে রোগীর মানসিক স্বস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কক্ষটি সজ্জিত থাকে যাতে রোগী প্রবেশের সময় যতটা সম্ভব স্বস্তি বোধ করে।

এই সমস্ত উপাদান একটি আদর্শ অপারেশন থিয়েটারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা রোগীর সুরক্ষা এবং সফল অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনা বাড়ায়।

সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের পূর্বে  প্রস্তুতি:

সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের পূর্বে রোগীর শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সফল অস্ত্রোপচারের জন্য এই প্রস্তুতি রোগীর নিরাপত্তা এবং আরোগ্যের সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করে। এখানে সার্জারির পূর্ব প্রস্তুতির প্রধান ধাপগুলো আলোচনা করা হলো:

### ১. **রোগীকে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করা**:
অস্ত্রোপচারের পূর্বে রোগীর শারীরিক প্রস্তুতি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে সার্জারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি ধাপ হলো:
– **রক্ত পরীক্ষা**: রোগীর রক্তের বিভিন্ন উপাদান, যেমন হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেট সংখ্যা, রক্তের গ্রুপ এবং অন্যান্য পরিসংখ্যান চেক করা হয়।
– **ইসিজি (ECG) এবং এক্স-রে**: রোগীর হার্ট এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা পরীক্ষার জন্য ইসিজি ও বুকের এক্স-রে করা হয়, বিশেষত যদি রোগীর হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকে।
– **অন্যান্য টেস্ট**: কখনও কখনও, সার্জারির ধরণ অনুযায়ী আলট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করা হতে পারে।
– **অ্যানেস্থেসিয়া মূল্যায়ন**: অ্যানেস্থেসিয়ার ধরণ নির্ধারণের জন্য অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট রোগীকে পরীক্ষা করেন এবং কোনো অ্যালার্জি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলে তা বিবেচনা করেন।

### ২. **ওষুধ ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ**:
– **ওষুধ ব্যবস্থাপনা**: অস্ত্রোপচারের পূর্বে রোগী কোনো ওষুধ খেলে তার তথ্য চিকিৎসককে জানাতে হবে। কিছু ওষুধ যেমন ব্লাড থিনার (রক্ত পাতলা করার ওষুধ), সার্জারির পূর্বে বন্ধ করতে হতে পারে, কারণ এগুলো রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ায়।
– **খাদ্য গ্রহণ বন্ধ করা**: সাধারণত সার্জারির ৮-১২ ঘণ্টা পূর্বে রোগীকে কিছু না খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, বিশেষ করে অ্যানেস্থেসিয়ার সময় কোনো সমস্যা এড়ানোর জন্য।

### ৩. **মানসিক প্রস্তুতি**:
– **রোগীর সাথে আলোচনা**: রোগীকে সার্জারির প্রক্রিয়া, সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং পরবর্তী যত্ন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া উচিত। এতে রোগীর মধ্যে মানসিক চাপ কমে এবং সার্জারি সম্পর্কে আস্থা বাড়ে।
– **মানসিক সমর্থন**: কখনও কখনও রোগীর মধ্যে সার্জারি নিয়ে উদ্বেগ বা ভয় দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক এবং পরিবারের সদস্যরা রোগীকে মানসিক সমর্থন প্রদান করে সাহায্য করতে পারেন।

### ৪. **বিরত রাখতে হবে কিছু অভ্যাস**:
– **ধূমপান এবং মদ্যপান বন্ধ করা**: সার্জারির আগে ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করতে বলা হয়, কারণ এটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমাতে পারে এবং সার্জারির সময় ও পরে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
– **ক্যাফেইন ও অন্যান্য উত্তেজক পদার্থ এড়ানো**: শরীরের ওপর উত্তেজক প্রভাব ফেলতে পারে এমন যেকোনো খাবার বা পানীয় এড়াতে হবে।

### ৫. **রোগীর শারীরিক যত্ন**:
– **শরীর পরিষ্কার রাখা**: সার্জারির পূর্বে রোগীকে স্নান করতে বলা হয়, যাতে সার্জারির সময় জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়।
– **নখ কাটা এবং মেকআপ অপসারণ**: নখে ময়লা বা মেকআপ জীবাণুর সংক্রমণ ঘটাতে পারে, তাই এগুলো অপসারণ করতে হয়।

### ৬. **অপারেশন থিয়েটারে আগমনের পূর্বে প্রস্তুতি**:
– **রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা**: সার্জারির ঠিক পূর্বে রোগীর রক্তচাপ, হার্ট রেট, এবং শারীরিক অবস্থা পুনরায় পরীক্ষা করা হয়।
– **পোশাক পরিবর্তন**: রোগীকে বিশেষ অপারেশন গাউন পরানো হয় এবং ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, যেমন জুয়েলারি বা কন্টাক্ট লেন্স অপসারণ করতে বলা হয়।

### ৭. **রক্ত ও জরুরি প্রস্তুতি**:
– **রক্তের ব্যবস্থা**: সার্জারির সময় রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকলে পূর্বেই রোগীর রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী রক্ত সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
– **জরুরি সরঞ্জাম প্রস্তুতি**: সার্জারির সময় যেকোনো জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য অপারেশন থিয়েটারে সব ধরনের জরুরি সরঞ্জাম, যেমন ডিফিব্রিলেটর এবং অক্সিজেন সাপ্লাই, প্রস্তুত রাখা হয়।

### ৮. **আইনি অনুমতি (Informed Consent)**:
– **অনুমতি ফর্ম পূরণ**: রোগী এবং তার পরিবারের সাথে সার্জারি নিয়ে আলোচনা করার পর, রোগীর সম্মতি নিয়ে অনুমতি ফর্মে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এতে সার্জারির সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং প্রক্রিয়াটি রোগী বুঝে নিতে বাধ্য থাকে।

### ৯. **ডায়েটারি পরামর্শ**:
– **সঠিক ডায়েটারি নিয়ম**: সার্জারির পূর্বে ও পরে রোগীকে বিশেষ খাদ্য পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে তার শরীর দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারে।

### ১০. **অ্যানেস্থেসিয়া এবং ব্যথা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা**:
– অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়, এবং রোগীকে সার্জারির সময় এবং পরে ব্যথা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানানো হয়।

এই প্রস্তুতি ধাপগুলো রোগীর নিরাপত্তা, সার্জারির সফলতা এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

অস্ত্রোপচারের পর পরিচর্যা:

অস্ত্রোপচারের পর পরিচর্যা (Postoperative Care) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি রোগীর সুস্থতা ও দ্রুত আরোগ্যলাভ নিশ্চিত করে। সফল অস্ত্রোপচারের পর সঠিক পরিচর্যা না হলে জটিলতা তৈরি হতে পারে। অস্ত্রোপচারের পর রোগীর পরিচর্যার বিভিন্ন ধাপ ও বিষয়গুলো নিম্নরূপ:

### ১. **রোগীর শারীরিক পরিসংখ্যান মনিটরিং**:
– **হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ও শ্বাসের হার**: সার্জারির পর রোগীর শারীরিক পরিসংখ্যান নিয়মিতভাবে মনিটর করা হয়। হার্ট রেট, রক্তচাপ, অক্সিজেন স্যাচুরেশন, এবং শ্বাসের হার সার্জারি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
– **শরীরের তাপমাত্রা**: রোগীর দেহের তাপমাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়, কারণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইনফেকশনের ইঙ্গিত হতে পারে।

### ২. **দ্রুত চেতনা ফিরে পাওয়া (Recovery from Anesthesia)**:
– সার্জারির পর অ্যানেস্থেসিয়া থেকে পুরোপুরি জাগতে রোগীকে সময় দেওয়া হয়। অ্যানেস্থেসিয়ার প্রভাব থেকে বের হতে কিছুটা সময় লাগে, এবং এই সময় রোগীকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা ক্লান্তি অনুভব করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হয়।

### ৩. **ব্যথা ব্যবস্থাপনা**:
– **ব্যথানাশক ওষুধ**: অস্ত্রোপচারের পর ব্যথা সাধারণত একটি বড় সমস্যা। ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। এই ওষুধটি ইঞ্জেকশন, ওরাল (মুখে গ্রহণযোগ্য) বা অন্যান্য পদ্ধতিতে দেওয়া হতে পারে।
– **রোগীর আরাম**: রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে তার আরাম নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, যেমন উপযুক্ত অবস্থানে শুইয়ে রাখা বা কুশন ব্যবহার করা।

### ৪. **খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ**:
– **তরল খাবার শুরু**: প্রথমদিকে রোগীকে হালকা তরল খাবার দেওয়া হয়, যেমন পানি, স্যুপ ইত্যাদি, কারণ সার্জারি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সময় হজমের প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে পুনরায় সক্রিয় হয়।
– **স্বাভাবিক খাদ্যে ফিরে আসা**: ধীরে ধীরে রোগীকে স্বাভাবিক খাবারে ফিরিয়ে আনা হয়, তবে এটি সার্জারির ধরণ এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে।

### ৫. **সার্জারির ক্ষত ও ড্রেসিং**:
– **ক্ষত পরিদর্শন**: সার্জারির ক্ষতটি সঠিকভাবে নিরীক্ষণ করা হয়, যাতে ইনফেকশন বা ফোলা দেখা না দেয়। ক্ষত পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখা জরুরি।
– **ড্রেসিং পরিবর্তন**: ক্ষত স্থানটি ঢেকে রাখতে যে ড্রেসিং করা হয় তা নিয়মিতভাবে পরিবর্তন করা প্রয়োজন, যাতে সংক্রমণ না হয়। চিকিৎসক বা নার্স ড্রেসিং পরিবর্তন করে এবং ক্ষত পরিদর্শন করেন।

### ৬. **শরীরচর্চা ও নড়াচড়া**:
– **প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম**: সার্জারির পর প্রথমে রোগীকে বিশ্রাম নিতে হয়, বিশেষত যদি বড় ধরনের সার্জারি হয়। তবে অতিরিক্ত শুয়ে থাকা রক্তজমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
– **হালকা নড়াচড়া শুরু**: কিছুদিন পর হালকা নড়াচড়া করতে বলা হয়, যেমন বিছানায় বসা বা হাঁটাহাঁটি করা। এটি রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে এবং শারীরিক কার্যকলাপ ধীরে ধীরে বাড়াতে সহায়ক।
– **ফিজিওথেরাপি**: কিছু বিশেষ ধরনের সার্জারির ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে, যাতে পেশি শক্তিশালী হয় এবং দ্রুত আরোগ্যলাভ হয়।

### ৭. **ইনফেকশন প্রতিরোধ**:
– **প্রতিরোধমূলক অ্যান্টিবায়োটিক**: সার্জারির পর ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়।
– **ক্ষত পরিচর্যা**: ক্ষতটি পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া হাত ধোয়া এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়ক।

### ৮. **জরুরী সতর্কতা**:
– সার্জারির পরবর্তী সময়ে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হয়, যেমন:
– **অতিরিক্ত ব্যথা**: যদি ব্যথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় বা নিয়ন্ত্রণ করা না যায়।
– **তীব্র ফোলা বা রক্তপাত**: ক্ষতস্থানে অতিরিক্ত ফোলা বা রক্তপাত দেখা দিলে।
– **জ্বর বা ইনফেকশন**: শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে বা ক্ষতস্থানে পুঁজ বা লালচেভাব দেখা দিলে।

### ৯. **মেডিকেশন ব্যবস্থাপনা**:
– **প্রয়োজনীয় ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ**: অস্ত্রোপচারের পর যে ওষুধগুলো দেওয়া হয়, তা সময়মতো এবং সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করা উচিত। এর মধ্যে ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকতে পারে।

### ১০. **মানসিক সমর্থন ও পুনর্বাসন**:
– সার্জারির পর রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। কিছু রোগী সার্জারি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সময় উদ্বেগ, হতাশা বা মানসিক চাপ অনুভব করতে পারেন। এজন্য পরিবারের সমর্থন এবং প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

### ১১. **চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ**:
– সার্জারির পর নির্দিষ্ট সময় পরপর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে চিকিৎসক রোগীর আরোগ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং প্রয়োজনে ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসা পরিবর্তন করেন।

অস্ত্রোপচারের পর সঠিক পরিচর্যা রোগীর দ্রুত সুস্থতা ও জটিলতা প্রতিরোধে সহায়ক হয়। চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে এবং যথাযথ পরিচর্যা গ্রহণ করে রোগী দ্রুত তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।

সার্জিক্যাল ড্রেসিং বা ক্ষত পরিচর্যার সাধারণ নিয়মাবলী:

সার্জিক্যাল ড্রেসিং বা ক্ষত পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সঠিক পরিচর্যা না করলে ইনফেকশন, ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া বা অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। সঠিক নিয়ম মেনে ড্রেসিং এবং ক্ষত পরিচর্যা করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব। নিচে সার্জিক্যাল ড্রেসিং বা ক্ষত পরিচর্যার সাধারণ নিয়মাবলী দেওয়া হলো:

### ১. **হাত পরিষ্কার রাখা**:
– **হাত ধোয়া**: ক্ষত স্পর্শ করার আগে সবসময় সাবান এবং পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে, অথবা জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
– **গ্লাভস পরা**: জীবাণুমুক্ত গ্লাভস পরা অত্যন্ত জরুরি, বিশেষত নতুন ড্রেসিং করার সময়।

### ২. **ক্ষত পরিদর্শন**:
– **ক্ষত পর্যবেক্ষণ**: ড্রেসিং পরিবর্তন করার সময় ক্ষতটি নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। যদি ক্ষতস্থানে লালচেভাব, ফোলা, পুঁজ বা অতিরিক্ত ব্যথা থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ এগুলো ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।
– **ক্ষত শুকানো**: ক্ষতটি যেন শুকানো এবং পরিষ্কার থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। ড্রেসিং ভিজে গেলে দ্রুত তা পরিবর্তন করতে হবে।

### ৩. **ড্রেসিং পরিবর্তন করার নিয়ম**:
– **ড্রেসিং পরিবর্তনের সময়**: সার্জিক্যাল ড্রেসিং সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবর্তন করতে হয়। তবে ড্রেসিং ভিজে গেলে, ক্ষতস্থানে পুঁজ জমলে বা ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকলে তৎক্ষণাৎ ড্রেসিং পরিবর্তন করা জরুরি।
– **পুরনো ড্রেসিং সরানো**: ড্রেসিং পরিবর্তনের সময় পুরনো ড্রেসিং খুব ধীরে এবং সতর্কতার সাথে সরাতে হবে, যাতে ক্ষতের কোনো ক্ষতি না হয়। যদি ড্রেসিং ক্ষতে আটকে থাকে, তাহলে ড্রেসিং কিছুটা পানি বা জীবাণুনাশক দ্রবণ দিয়ে ভিজিয়ে নরম করে নিতে হবে।

### ৪. **ক্ষত পরিষ্কার করা**:
– **জীবাণুমুক্ত দ্রবণ**: নতুন ড্রেসিং করার আগে ক্ষতটি পরিষ্কার করতে জীবাণুনাশক দ্রবণ, যেমন নরমাল স্যালাইন বা বিশেষভাবে নির্ধারিত ক্লিনজার ব্যবহার করতে হয়।
– **ক্ষত শুকানো**: জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করার পর ক্ষতকে নরম, পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে ধীরে ধীরে শুকিয়ে নিতে হয়।

### ৫. **নতুন ড্রেসিং করা**:
– **জীবাণুমুক্ত ড্রেসিং**: ড্রেসিং অবশ্যই জীবাণুমুক্ত হতে হবে। সাধারণত গজ প্যাড বা বিশেষ ড্রেসিং মেটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়, যা ক্ষতকে ধুলা, ময়লা ও জীবাণু থেকে রক্ষা করে।
– **নরম ও আরামদায়ক ফিট**: ড্রেসিং খুব টাইট হওয়া উচিত নয়, কারণ এতে ক্ষতস্থানে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আবার খুব ঢিলাও করা যাবে না, যাতে ড্রেসিং সঠিকভাবে ক্ষতকে ঢেকে রাখতে পারে।
– **আঁটসাঁট বেঁধে রাখা**: ড্রেসিংটি জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা স্ট্রিপ দিয়ে সঠিকভাবে বেঁধে রাখা হয়, যাতে তা সরে না যায়।

### ৬. **ড্রেসিং বদলানোর সময়সূচি**:
– **ড্রেসিং নিয়মিত পরিবর্তন**: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রেসিং নিয়মিতভাবে পরিবর্তন করতে হবে। সাধারণত প্রতিদিন বা দুই-তিন দিন পর পর ড্রেসিং পরিবর্তন করা হয়, তবে ক্ষত শুকানোর অবস্থার ওপর ভিত্তি করে এটি কমবেশি হতে পারে।

### ৭. **ইনফেকশন প্রতিরোধের ব্যবস্থা**:
– **অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম বা ওষুধ**: কখনও কখনও চিকিৎসক অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম বা ওষুধ দিতে পারেন, যা ড্রেসিং করার আগে ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করতে হয়।
– **ইনফেকশনের লক্ষণ**: ক্ষতস্থানে লালচে রঙ, অতিরিক্ত ফোলা, পুঁজ বের হওয়া, তীব্র ব্যথা, বা জ্বর দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

### ৮. **আঁকড়ানো ও অতিরিক্ত চাপ এড়ানো**:
– **ক্ষতস্থানে চাপ পড়া এড়ানো**: ক্ষতস্থানে অতিরিক্ত চাপ বা আঁকড়ানো এড়াতে হবে। বিশেষত ক্ষতস্থানে কোনো ভারী জিনিস চাপানো বা জোরালো নড়াচড়া করা উচিত নয়।
– **শিথিল পোশাক পরিধান**: ক্ষতের ওপর চাপ পড়তে পারে এমন শক্ত বা আঁটসাঁট পোশাক এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে শিথিল এবং আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে।

### ৯. **ব্যথা ও অস্বস্তি**:
– **ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ**: ড্রেসিং পরিবর্তনের সময় বা পরবর্তী সময়ে যদি অতিরিক্ত ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, তাহলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

### ১০. **নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চিকিৎসকের ফলো-আপ**:
– **চিকিৎসকের ফলো-আপ**: ক্ষত সঠিকভাবে সেরে উঠছে কিনা তা নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। ফলো-আপ চেকআপের মাধ্যমে চিকিৎসক ক্ষত সঠিকভাবে সেরে উঠছে কিনা, ড্রেসিং পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা এবং ইনফেকশন প্রতিরোধের কার্যকারিতা নির্ধারণ করেন।

### ১১. **পানি ও আর্দ্রতা থেকে ক্ষত রক্ষা করা**:
– **ড্রেসিং ভিজে গেলে পরিবর্তন**: ক্ষতস্থানে পানি বা আর্দ্রতা প্রবেশ করতে দেওয়া উচিত নয়। যদি ড্রেসিং ভিজে যায়, তবে তাৎক্ষণিক তা পরিবর্তন করতে হবে।
– **স্নান করার সময় সতর্কতা**: ক্ষতস্থানে পানি না লাগানোর জন্য স্নান করার সময় প্লাস্টিক বা জলরোধী ঢাকনা ব্যবহার করা উচিত।

সঠিক নিয়মে সার্জিক্যাল ড্রেসিং এবং পরিচর্যা ক্ষত দ্রুত শুকাতে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

সার্জারির ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক এবং অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি পার্থক্য:

সার্জারির ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক এবং অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি এবং পদ্ধতিগত দিক থেকে অনেক পার্থক্য রয়েছে। নিচে তাদের প্রধান পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হলো:

বিষয়হোমিওপ্যাথি (Homeopathy)অ্যালোপ্যাথি (Allopathy)
দৃষ্টিভঙ্গিশরীরের স্বাভাবিক নিরাময় প্রক্রিয়া উদ্দীপিত করে রোগ নিরাময়।রোগের কারণ ও লক্ষণ দূর করতে সরাসরি শারীরিক বা ওষুধ প্রয়োগ।
সার্জারি গ্রহণযোগ্যতাশুধুমাত্র তখনই প্রস্তাবিত, যখন এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।প্রথম পছন্দ হতে পারে যদি অস্ত্রোপচার রোগীর জন্য সেরা সমাধান হয়।
চিকিৎসার ধরনঅস্ত্রোপচার এড়ানোর জন্য প্রাথমিকভাবে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসার চেষ্টা।অস্ত্রোপচার নির্ভরশীল এবং দ্রুত ফলাফলের জন্য শল্যচিকিৎসা।
জটিলতার প্রতি মনোভাবজটিলতা এড়াতে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি।জটিলতার সরাসরি চিকিৎসা করতে অস্ত্রোপচার ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার।
প্রতিরোধের ভূমিকাসার্জারির প্রয়োজনীয়তা কমাতে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা।রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখে প্রয়োজন হলে দ্রুত অস্ত্রোপচার।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াসাধারণত কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।ওষুধ ও অস্ত্রোপচারের কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হতে পারে।
সফলতার মাপকাঠিরোগীর সার্বিক আরোগ্য এবং সুস্থতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা।দ্রুত রোগ নিরাময় ও লক্ষণগুলোর সমাধান।
চিকিৎসার উদ্দেশ্যজীবনীশক্তি বা “ভাইটাল ফোর্স” পুনরুদ্ধার করা।রোগের শারীরিক কারণ দূর করা।
ব্যবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতিক্ষুদ্রমাত্রিক ওষুধ, সার্জারি এড়াতে বিশেষ ফোকাস।বড় মাত্রায় ওষুধ, অস্ত্রোপচার, ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।
উদাহরণটনসিলাইটিসে ওষুধ দিয়ে অপসারণ এড়ানোর চেষ্টা।টনসিলাইটিসে টনসিল অপসারণের জন্য সার্জারি।

 

প্রশ্নঃ সেপসিস বা বীজদূষণ কাকে বলে?

সেপসিস বা বীজদূষণ:

সেপসিস (Sepsis) বা বীজদূষণ হলো একটি গুরুতর চিকিৎসাগত অবস্থা যেখানে শরীরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে উঠলে টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের ফলে ঘটে।

সহজ ভাষায়,  সেপসিস হলো যখন সংক্রমণ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের অঙ্গগুলোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। এটি জীবনঘাতী হতে পারে যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয়।

সেপসিসের মূল কারণ:

  1. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (সাধারণত ফুসফুস, কিডনি, বা রক্তে)।
  2. কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সংক্রমণ।
  3. অস্ত্রোপচার পরবর্তী সংক্রমণ।
  4. দীর্ঘস্থায়ী রোগে সংক্রমণ (যেমন ডায়াবেটিস বা ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রে)।

একজুডেশনসহ বা একজুডেশন ব্যতীত জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ হওয়ার পর দূষিত হওয়াকে, সেপসিস বা বীজদূষণ বলে।

প্রশ্নঃ সেপসিস বা বীজদূষণ কারণসমূহ লিখ।

সেপসিস মূলত সংক্রমণের কারণে হয়, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর কারণগুলো নিম্নরূপ:

১. সংক্রমণজনিত কারণ:

  • ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ:

    • ফুসফুসের সংক্রমণ (যেমন নিউমোনিয়া)।
    • কিডনির সংক্রমণ (যেমন পাইলোনেফ্রাইটিস বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন – UTI)।
    • রক্তের সংক্রমণ (ব্যাকটেরিমিয়া)।
    • ত্বকের সংক্রমণ (যেমন সেলুলাইটিস)।
  • ভাইরাল সংক্রমণ:

    • COVID-19, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য ভাইরাস।
  • ফাঙ্গাল সংক্রমণ:

    • বিশেষ করে কম প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে।

২. আঘাতজনিত কারণ

  • বড় আকারের আঘাত বা পোড়া স্থানে সংক্রমণ।
  • অপারেশনের পর সাইটে ইনফেকশন।
  • কোনো ধরনের টিউব, ক্যাথেটার বা অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের মাধ্যমে সংক্রমণ।

৩. অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সংক্রমণ

  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেম: অন্ত্রের ফেটে যাওয়া বা সংক্রমণ।
  • লিভারের সংক্রমণ: হেপাটাইটিস বা লিভার অ্যাবসেস।
  • গাইনোকোলজিক্যাল সংক্রমণ: গর্ভাশয় সংক্রমণ (যেমন পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ – PID)।

৪. দীর্ঘস্থায়ী রোগ

  • ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ সহজে ছড়িয়ে পড়ে।
  • ক্যান্সার বা কেমোথেরাপি চলাকালীন রোগীদের সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি।
  • HIV/AIDS বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে সেপসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৫. অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ

  • অপরিষ্কার স্থানে অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসা।
  • দূষিত খাবার বা পানি থেকে সংক্রমণ।
  • অপরিষ্কার ক্ষত বা কাটাছেঁড়া।

প্রশ্ন: এন্টিসেপটিক মেজার কাকে বলে?

এন্টিসেপটিক মেজারের সংজ্ঞা:

জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ হওয়ার পর দূষিত হওয়ার নাম সেপসিস। এই দূষিত হওয়া বন্ধ করার জন্য বা জীবাণু বৃদ্ধি রোধ করার জন্য যে প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়, তাকে এন্টিসেপটিক মেজার বা জীবাণু নাশক প্রক্রিয়া বলে।

ইহা নিম্নলিখিতভাবে করা যেতে পারে:

(ক) সংক্রমণের উৎস দূর করতে হবে এবং ক্ষরিত পুঁজ নিরাপদে অপসারণ করতে হবে।

(খ) স্বাস্থ্যবিধির পালনের মাধ্যমে রোগ বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

(গ) অস্ত্রোপচার অবশ্যই সংক্রমণ মুক্ত হতে হবে এবং এতে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি ও দ্রব্যাদি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

(ঘ) রোগীকে অস্ত্রোপচারের পূর্বে সার্জনকে অ্যান্টিসেপটিক মেজার সম্বন্ধে সজাগ থাকতে হবে।

Sterilization and disinfection

প্রশ্নঃ বিশোধনের সংজ্ঞা দাও। সার্জারীতে বিশোধনের গুরুত্ব আলোচনা কর। ২০১১, ১৩, ১৪, ১৫ বা, স্টেরিলাইজেশন বা জীবাণু মুক্তকরণ কাকে বলে?

স্টেরিলাইজেশন বা জীবাণুমুক্তকরণ:

স্টেরিলাইজেশন হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো বস্তু বা উপাদান থেকে সকল ধরনের জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস, স্পোর ইত্যাদি) সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস বা অপসারণ করা হয়। এটি সাধারণত চিকিৎসা সরঞ্জাম, ল্যাবরেটরি উপকরণ, এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

সহজ ভাষায়, স্টেরিলাইজেশন হলো কোনো জিনিসকে এমনভাবে জীবাণুমুক্ত করা, যাতে তা সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকে।

উদাহরণ: অপারেশন সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করা। হাসপাতালের ইনজেকশন ও ক্যাথেটার জীবাণুমুক্ত করা। প্যাকেটজাত খাবারের জীবাণুমুক্ত প্রক্রিয়া।

সার্জারিতে বিশোধনের (Sterilization) গুরুত্ব:

বিশোধন বা জীবাণুমুক্তকরণ সার্জারির একটি অপরিহার্য অংশ, যা অস্ত্রোপচারের সময় সংক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রোগীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং অপারেশন-পরবর্তী জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে।

১. সংক্রমণ প্রতিরোধ

  • অস্ত্রোপচারের সময় জীবাণু প্রবেশ করলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
  • বিশোধিত সরঞ্জাম ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাসের কারণে হওয়া সার্জিকাল সাইট ইনফেকশন (SSI) এড়ানো যায়।

২. অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া প্রতিরোধ

  • জীবাণুর সংক্রমণে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে।
  • বিশোধন সংক্রমণ এড়িয়ে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে।

৩. প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয়তা

  • ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, বা HIV/AIDS রোগীর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে।
  • এদের ক্ষেত্রে জীবাণুমুক্ত পরিবেশ ও সরঞ্জাম না থাকলে গুরুতর সংক্রমণ হতে পারে।

৪. মেডিকেল স্টাফদের সুরক্ষা

  • চিকিৎসক এবং নার্সরা অপারেশনের সময় সরাসরি জীবাণুর সংস্পর্শে আসেন।
  • বিশোধনের মাধ্যমে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো হয়।

৫. অপারেশন-পরবর্তী জটিলতা কমানো

  • সংক্রমণ হলে রোগীর পুনরায় চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
  • বিশোধিত উপকরণ ব্যবহার করলে অপারেশনের সাফল্যের হার বাড়ে এবং পুনরায় অপারেশনের প্রয়োজনীয়তা কমে।

৬. বিশ্বাসযোগ্য ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ

  • বিশোধন রোগী এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে আস্থা বাড়ায়।
  • এটি স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করে।

সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার হতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, সার্জারীতে বিশোধনের গুরুত্ব অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

প্রশ্ন: স্টেরলাইজেশনের পদ্ধতিগুলির নাম লিখ। ২০১৮ বা, স্টেরিলাইজেশন-এর সংজ্ঞা ও পদ্ধতিগুলির নাম লিখ। ০৯, ১৭

স্টেরিলাইজেশনের পদ্ধতিগুলির নাম:

১. তাপের মাধ্যমে স্টেরিলাইজেশন (Heat Sterilization)

  • অটোক্লেভ (Autoclaving): উচ্চ তাপ (121–134°C) এবং চাপযুক্ত বাষ্প ব্যবহার।
  • শুকনো তাপ (Dry Heat): উচ্চ তাপমাত্রায় (160–170°C) শুকনো বায়ু ব্যবহার।
  • পেস্টুরাইজেশন (Pasteurization): তরল পদার্থে মৃদু তাপ ব্যবহার (60–85°C)।

২. রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে স্টেরিলাইজেশন (Chemical Sterilization)

  • ইথিলিন অক্সাইড গ্যাস (Ethylene Oxide Gas): প্লাস্টিক ও তাপ-সংবেদনশীল সরঞ্জামের জন্য।
  • হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (Hydrogen Peroxide): গ্যাস বা প্লাজমা আকারে ব্যবহৃত।
  • গ্লুটারালডিহাইড (Glutaraldehyde): তরল জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত।

৩. তেজস্ক্রিয় রশ্মির মাধ্যমে স্টেরিলাইজেশন (Radiation Sterilization)

  • গামা রশ্মি (Gamma Rays): ব্যবহৃত হয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও খাদ্য প্যাকেজিংয়ের জন্য।
  • ইলেকট্রন বিম (Electron Beam): দ্রুত এবং কার্যকর পদ্ধতি।

৪. ফিল্ট্রেশন পদ্ধতি (Filtration Method)

  • তরল ফিল্ট্রেশন: মাইক্রো-ফিল্টার ব্যবহার করে তরল পদার্থ জীবাণুমুক্ত করা।
  • বায়ু ফিল্ট্রেশন: HEPA ফিল্টার ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত বাতাস সরবরাহ।

৫. প্লাজমা স্টেরিলাইজেশন (Plasma Sterilization)

  • ভ্যাকুয়ামে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড প্লাজমা ব্যবহার।

৬. কোল্ড স্টেরিলাইজেশন (Cold Sterilization)

  • কম তাপমাত্রায় রাসায়নিক বা তরল পদার্থ ব্যবহার।

৭. ইনফ্রারেড স্টেরিলাইজেশন (Infrared Sterilization)

  • ইনফ্রারেড তাপ ব্যবহার করে সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করা।

প্রশ্নঃ সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি বিশোধনের পদ্ধতিগুলো বর্ণনা কর। ১১, ১৩, ১৪, ১৫ বা, জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি বর্ণনা কর। অথবা, সাধারণ নির্বীজন পদ্ধতি বর্ণনা কর।

সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি বিশোধনের পদ্ধতিগুলো:

সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি বিশোধন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা অস্ত্রোপচারের সময় সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়। যন্ত্রপাতি বিশোধনের পদ্ধতিগুলি নিম্নরূপ:

১. অটোক্লেভিং (Autoclaving)

  • উচ্চ তাপ (121–134°C) এবং চাপযুক্ত বাষ্প ব্যবহার করে জীবাণু ধ্বংস করা হয়।
  • এটি ধাতব যন্ত্রপাতি এবং টেকসই বস্তু বিশোধনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
  • ব্যবহারের আগে যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হয়।

২. শুকনো তাপের মাধ্যমে বিশোধন (Dry Heat Sterilization)

  • তাপমাত্রা 160–170°C তাপ ব্যবহার করে শুকনো বায়ুর মাধ্যমে জীবাণু ধ্বংস করা হয়।
  • কাঁচ, স্টেইনলেস স্টিল এবং কিছু নির্দিষ্ট তাপ-সহনশীল উপকরণ বিশোধনে ব্যবহৃত হয়।
  • অটোক্লেভের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।

৩. রাসায়নিক বিশোধন (Chemical Sterilization)

  • তরল বা গ্যাস রাসায়নিক ব্যবহার করে সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করা হয়।
  • ইথিলিন অক্সাইড গ্যাস: প্লাস্টিক, তাপ-সংবেদনশীল সরঞ্জাম এবং লেন্সের মতো যন্ত্রপাতির জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • গ্লুটারালডিহাইড: ২% সমাধান ব্যবহৃত হয় যা যন্ত্রপাতি ২০-৩০ মিনিট ডুবিয়ে রাখা হয়।
  • হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড প্লাজমা: ভ্যাকুয়াম পরিবেশে ব্যবহৃত হয়।

৪. ফিল্ট্রেশন পদ্ধতি (Filtration Method)

  • তরল বা গ্যাস সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার জন্য মাইক্রো-ফিল্টার ব্যবহার করা হয়।
  • এটি সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ বা তরল পরিবেশের সরঞ্জাম বিশোধনে ব্যবহৃত হয়।

৫. তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার (Radiation Sterilization)

  • গামা রশ্মি: চিকিৎসা সরঞ্জাম, প্লাস্টিক, এবং প্যাকেজিং বিশোধনে ব্যবহৃত হয়।
  • ইলেকট্রন বিম: দ্রুত এবং কার্যকর পদ্ধতি যা বিশেষ করে ডিসপোজেবল যন্ত্রপাতির জন্য ব্যবহৃত হয়।

৬. ইনফ্রারেড তাপ ব্যবহার (Infrared Heat Sterilization)

  • ইনফ্রারেড তাপ ব্যবহার করে যন্ত্রপাতির উপরিভাগ জীবাণুমুক্ত করা হয়।
  • ক্ষুদ্রতর যন্ত্রাংশ এবং ধাতব উপাদানে ব্যবহৃত হয়।

৭. অ্যালকোহল বা জীবাণুনাশক তরল (Alcohol and Antiseptic Solutions)

  • অ্যালকোহল (৭০% আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল) দ্রুত জীবাণু ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়।
  • কম জটিল এবং দ্রুত ব্যবহারের জন্য কার্যকর।

৮. ওজোন বিশোধন (Ozone Sterilization)

  • ওজোন গ্যাস ব্যবহার করে যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করা হয়।
  • এটি পরিবেশবান্ধব এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি।

৯. কোল্ড স্টেরিলাইজেশন (Cold Sterilization)

  • তাপ ব্যবহার না করে রাসায়নিক সমাধান বা গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
  • তাপ-সংবেদনশীল সরঞ্জামের জন্য উপযুক্ত।

১০. আল্ট্রাসনিক ক্লিনিং (Ultrasonic Cleaning)

  • উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে জীবাণু অপসারণ করা হয়।
  • এটি সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতির উপরিভাগের সূক্ষ্ম ময়লা এবং জীবাণু অপসারণে কার্যকর।

সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি বিশোধনের পদ্ধতিগুলো যন্ত্রপাতির ধরণ, গঠন এবং সংবেদনশীলতার ওপর নির্ভর করে নির্বাচন করা হয়। প্রতিটি পদ্ধতির লক্ষ্য হলো জীবাণু সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে সংক্রমণ প্রতিরোধ নিশ্চিত করা।

 রক্তক্ষরণ (Haemorrhage)

প্রশ্ন: হেমোরেজের সংজ্ঞা দাও। ২০০৯, ১৭, ১৮

হেমোরেজের সংজ্ঞা (Haemorrhage) : হেমোরেজ হলো রক্তপাত বা রক্তস্রাবের একটি অবস্থা, যেখানে শরীরের যেকোনো অংশ থেকে রক্ত অস্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসে। এটি শিরা, ধমনী বা কপার থেকে হতে পারে এবং বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ হতে পারে। হেমোরেজ প্রায়শই আঘাত, শল্য চিকিৎসা, রক্তনালীর অকার্যকারিতা, বা কোনো রোগের কারণে ঘটতে পারে।

প্রশ্নঃ হেমোরেজের কারণসমূহ লিখ। ০৯

হেমোরেজ এর কারণ:

১. আঘাতজনিত কারণ (Traumatic Causes):

  • কাটা বা ছিদ্র হওয়া (Incisions বা Punctures)।
  • দুর্ঘটনা বা আঘাতজনিত রক্তনালীর ক্ষতি।
  • অস্ত্রোপচারের পর রক্তপাত।
  • গুলি বা ধারালো অস্ত্রের আঘাত।

২. রোগজনিত কারণ (Pathological Causes):

  • রক্তনালীর দুর্বলতা (Aneurysm): রক্তনালী ফেটে যাওয়া।
  • হাইপারটেনশন (Hypertension): উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালীর ক্ষতি।
  • রক্তপাতজনিত রোগ (Hemophilia): রক্ত জমাট বাঁধার অক্ষমতা।
  • লিউকেমিয়া (Leukemia): রক্তকণিকা উৎপাদনের রোগ।
  • ডেঙ্গু: প্লাটিলেট কমে রক্তপাত।
  • ভ্যারিকোজ ভেইন (Varicose Veins): শিরার অস্বাভাবিক ফোলাভাব।

৩. স্নায়বিক বা অভ্যন্তরীণ কারণ (Neurological or Internal Causes):

  • মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (Intracranial Hemorrhage)।
  • জ্বর বা রোগজনিত অভ্যন্তরীণ রক্তপাত।
  • অন্ত্র বা পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ (Gastrointestinal Bleeding)।
  • কিডনি বা মূত্রাশয়ে রক্তপাত।

৪. জন্মগত কারণ (Congenital Causes):

  • রক্তনালীর জন্মগত ত্রুটি।
  • জন্মগত রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা।

৫. গর্ভাবস্থায় বা প্রসবকালীন কারণ (Pregnancy and Labor Causes):

  • গর্ভপাত বা একটোপিক প্রেগন্যান্সি।
  • প্লাসেন্টা প্রিভিয়া বা এব্রাপশন।
  • প্রসব-পরবর্তী রক্তপাত (Postpartum Hemorrhage)।

৬. ওষুধজনিত কারণ (Medication Causes):

  • রক্ত পাতলা করার ওষুধ (Anticoagulants)।
  • স্টেরয়েড বা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ।
  • কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি।

৭. অপর্যাপ্ত প্লাটিলেট (Thrombocytopenia):

  • রক্তে প্লাটিলেট কম থাকলে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যায়।

৮. অন্যান্য কারণ:

  • অতিরিক্ত শারীরিক চাপ বা উত্তেজনা।
  • দীর্ঘস্থায়ী রোগ (যেমন: ডায়াবেটিস, ক্যান্সার)।
  • রক্তনালীতে প্রদাহ বা সংক্রমণ।
  • পেপটিক আলসার বা লিভারের সমস্যা।

প্রশ্নঃ রক্তক্ষরণের লক্ষণাবলী লিখ। ১৫ অথবা হেমোরেজের ক্লিনিক্যাল ফিচার/লক্ষণাবলী বর্ণনা কর।

হেমোরেজের ক্লিনিক্যাল ফিচার/লক্ষণাবলী:

রক্তক্ষরণের লক্ষণাবলী রক্তপাতের পরিমাণ, অবস্থান (বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ), এবং এর প্রভাবের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। প্রধান লক্ষণাবলী নিম্নরূপ:

১. বাহ্যিক রক্তক্ষরণের লক্ষণ (External Hemorrhage):

  • ক্ষতস্থানে রক্তপাত দেখা যায়।
  • রক্তক্ষরণ স্থায়ী হলে রক্তের প্রবাহ কমতে বা বন্ধ হতে পারে।
  • ব্যথা এবং স্থানীয় ফোলাভাব।
  • ক্ষতস্থানে রঙ পরিবর্তন (লাল বা বেগুনি দাগ)।

২. অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের লক্ষণ (Internal Hemorrhage):

  • ত্বকের নিচে নীলচে বা বেগুনি দাগ।
  • পেট, বুক, বা অন্যান্য অভ্যন্তরীণ স্থানে ফোলাভাব।
  • কালো বা কফি রঙের বমি (যদি পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ হয়)।
  • কালো বা টারি রঙের মল (মেলেনা)।
  • মূত্রে রক্ত (Hematuria)।

৩. সাধারণ লক্ষণাবলী:

  • মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি।
  • মুখমন্ডল ফ্যাকাশে। ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।
  • দেহে ঘর্মস্রাব ঠান্ডা ও চর্ম খসখসে দেখা যাবে।
  • জিহ্বা শুষ্ক ও ফ্যাকাসে দেখা যাবে।
  • দ্রুত ও ক্ষীন পালস হবে।
  • শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাস।
  • বুক ধড়ফড় করা (Palpitations)।
  • নিম্ন রক্তচাপ (Hypotension)।
  • দ্রুত হৃৎস্পন্দন (Tachycardia)।
  • চেতনা হারানো (Severe রক্তক্ষরণের ক্ষেত্রে)।

৪. গম্ভীর রক্তক্ষরণের লক্ষণ (Severe Hemorrhage):

  • রক্তচাপ দ্রুত কমে যাওয়া।
  • শক (Hypovolemic Shock): শরীরে রক্তের পরিমাণ অত্যধিক কমে গেলে।
  • অঙ্গপ্রত্যঙ্গ শীতল বা নীলচে হওয়া।
  • চেতনা হারানো এবং জীবন বিপন্ন হওয়া।

প্রশ্ন: হেমোরেজের জটিলতা লিখ।

রক্তক্ষরণের জটিলতা:

(i) অলিগেমিক শক: অধিক রক্তক্ষরণের জন্য। শকের চিকিৎসা না করলে মৃত্যু হতে পারে।

(ii) এনিমিয়া।

প্রশ্ন: হেমোরেজের প্রকারভেদ লিখ। ২০০৯ বা, উদাহরণসহ হেমোরেজের শ্রেণিবিভাগ কর। ২০১৭, ১৮ হেমোরেজের প্রকারভেদসমূহঃ

হেমোরেজের প্রকারভেদসমূহ নিম্নরূপ :-

হেমোরেজকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়, যেমন উৎস, প্রকৃতি, এবং অবস্থান অনুসারে। নিচে হেমোরেজের প্রকারভেদ বর্ণনা করা হলো:

১. উৎস অনুযায়ী (Based on Source):

  • ধমনী রক্তক্ষরণ (Arterial Hemorrhage): ধমনী থেকে তীব্র এবং স্পন্দনশীল রক্তপাত যা উজ্জ্বল লাল রঙের।
  • শিরা রক্তক্ষরণ (Venous Hemorrhage): শিরা থেকে অবিরত এবং ধীরগতির রক্তপাত যা গাঢ় লাল রঙের।
  • কেশিকা রক্তক্ষরণ (Capillary Hemorrhage): কেশিকাগুলি থেকে ধীরে ধীরে রক্তপাত, যা সাধারণত ক্ষুদ্র ক্ষতের ক্ষেত্রে ঘটে।

২. প্রকৃতি অনুযায়ী (Based on Nature):

  • প্রাথমিক রক্তক্ষরণ (Primary Hemorrhage): আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পরপরই ঘটে।
  • প্রতিবন্ধক রক্তক্ষরণ (Reactionary Hemorrhage): আঘাতের কয়েক ঘণ্টা পর রক্তপাত শুরু হয়।
  • দ্বিতীয় রক্তক্ষরণ (Secondary Hemorrhage): সংক্রমণ বা ক্ষতস্থানের ক্ষতির কারণে কয়েক দিন পর রক্তপাত ঘটে।

৩. অবস্থানের ভিত্তিতে (Based on Location):

  • বাহ্যিক রক্তক্ষরণ (External Hemorrhage): শরীরের বাইরের অংশ থেকে রক্ত বের হয়, যেমন ক্ষত বা কাটা থেকে।
  • অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ (Internal Hemorrhage):
    শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ হয়, যা বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান নয়।
    উদাহরণ:
    • মস্তিষ্কে (Intracranial Hemorrhage)।
    • ফুসফুসে (Pulmonary Hemorrhage)।
    • পেটে (Abdominal Hemorrhage)।

৪. পরিমাণ অনুযায়ী (Based on Amount):

  • মৃদু রক্তক্ষরণ (Mild Hemorrhage): রক্তপাত কম এবং জীবন বিপন্ন নয়।
  • মাঝারি রক্তক্ষরণ (Moderate Hemorrhage): রক্তপাত মাঝারি পরিমাণে এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।
  • গুরুতর রক্তক্ষরণ (Severe Hemorrhage): প্রচুর রক্তপাত, যা জীবন বিপন্ন করতে পারে।

৫. রক্তপাতের দিক অনুযায়ী (Based on Direction):

  • প্রত্যক্ষ রক্তক্ষরণ (Direct Hemorrhage): আঘাতের স্থানে সরাসরি রক্তপাত।
  • পরোক্ষ রক্তক্ষরণ (Indirect Hemorrhage): রক্ত একটি জায়গায় জমা হয় এবং পরে অন্য পথে বের হয়।

৬. বিশেষ ধরনের রক্তক্ষরণ (Special Types of Hemorrhage):

  • নাক থেকে রক্তপাত (Epistaxis): নাক দিয়ে রক্ত পড়া।
  • পাকস্থলী রক্তপাত (Gastrointestinal Hemorrhage): পাকস্থলী বা অন্ত্র থেকে রক্তপাত।
  • মলদ্বার রক্তপাত (Rectal Hemorrhage): মলদ্বার থেকে রক্তপাত।
  • প্রসব-পরবর্তী রক্তপাত (Postpartum Hemorrhage): প্রসবের পর রক্তপাত।

7.  অবস্থাভেদ ভিত্তিতে

(i) একিউট হেমোরেজ এবং

(ii) ক্রনিক হেমোরেজ

প্রশ্ন: হেমোরেজের চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা কর।

হেমোরেজের চিকিৎসা পদ্ধতি বর্ণনা:

(ক) কনজারভেটিভ চিকিৎসা:

(i) রক্তক্ষরণের পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে।

(ii) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হবে।

(iii) রক্তের পরিমাণ ঠিক রাখার জন্য শিরা পথে স্যালাইন দিতে হবে।

(iv) অধিক রক্তক্ষরণ হলে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করতে হবে।

(v) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(খ) সার্জিক্যাল চিকিৎসা: প্রয়োজনে সার্জিক্যাল চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রশ্নঃ প্রাইমারী হেমোরেজ, রিঅ্যাকশনারী হেমোরেজ ও সেকেন্ডারী হেমোরেজ বর্ণনা কর।

প্রাইমারী হেমোরেজঃ

ব্লাড ভেসেলে ইনজুরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে রক্তক্ষরণ হয়, তাকে প্রাইমারী হেমোরেজ বলে। এটি ইনজুরির সময় বা অপারেশনের সময় হতে পারে। এ হেমোরেজ আর্টারিয়াল, ভেনাস বা ক্যাপিলারি হতে পারে। আর্টারিয়াল ব্লাড ফিনকি দিয়ে বের হয়, ভেইনের ব্লাড গড়িয়ে পড়ে এবং ক্যাপিলারির ব্লাড চুঁইয়ে চুঁইয়ে বের হয়।

রিঅ্যাকশনারী হেমোরেজ:

প্রাইমারী হেমোরেজের পরে ২৪ ঘন্টার মধ্যে (সাধারণতঃ ৪- ৬ ঘন্টা) রিঅ্যাকশনারি হেমোরেজ হতে পারে। একে বিলম্বিত রক্তক্ষরণও বলা যায়। অর্থাৎ রোগীর ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক হয়ে গেলে এর চাপে clots সরে যাওয়া বা ligature slip করা বা reflex vasospasam দূরীভূত হওয়ার কারণে এ হেমোরেজ হয়। শক বা কোন অপারেশনের পরে এ জাতীয় হেমোরেজ হয়ে থাকে।

সেকেন্ডারী হেমোরেজ:

উন্ড থেকে কয়েক দিন পর এ জাতীয় হেমোরেজ হয়। সাধারণতঃ ৭- ১৪ দিন পর এ রক্তক্ষরণ হয়। উন্ডে (ক্ষত) সেপসিসের কারণে ব্লাড ভেসেল ড্যামেজ হয়ে এ হেমোরেজ সৃষ্টি হয়। আর্টারিয়াল হেমোরেজ এ ক্ষেত্রে রক্ত, উজ্জল লাল, ফিনকি দিয়ে বেড়িয়ে আসে যা পালসের তালে তালে উঠানামা করে। ভেনাস হেমোরেজের রক্ত কালচে লাল, রক্তক্ষরণের গতি steady এবং copious। রক্তক্ষরণ বেশী হলে রক্তের রং আরো কালচে হয়। ক্যাপিলারি হেমোরেজ রক্ত উজ্জ্বল লাল, অনেক সময় দ্রুত, চুয়ে চুয়ে বের হয়।

প্রশ্নঃ হেমোরেজ এর ফলাফল বর্ণনা কর।

হেমোরেজ এর ফলাফল:

১০% হেমোরেজ বা ৫০০ মি.লি. ব্লাড loss হলে সামান্য সাধারণ effect দেখা যায়। কিন্তু মোট রক্তের এক তৃতীয়াংশ হঠাৎ loss হলে মারাত্মক পরিণতি দেখা দিতে পারে। কিন্তু শিশুরা সামান্য রক্তক্ষরণও সহ্য করতে পারে না।

একিউট হেমোরেজের প্রতি শরীরের response-কে ৩ টি phage এ বিভক্ত করা হয়েছে।

ফেজ-১: সঙ্গে সঙ্গে syncope হতে পারে, কিন্তু এরপর পরই অবশিষ্ট ব্লাড ভাইটাল সেন্টারসমূহে (যেমন- ব্রেইন) redistribution হয়। ফলে পেরিফেরাল ভেসেলে ভেসোকন্সট্রিকশন হয় (ত্বক ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে ও ফ্যাকাসে হওয়ার কারণ)। যদি ব্লাড loss ২০-৩০% এ বেশী হয়, তবে ভেসোকন্সট্রিকশন ব্লাড প্রেসার মেনটেন করতে ব্যর্থ হয়।

ফেজ-২: টিস্যু ফ্লুইড with draw হয়ে এসে ব্লাডে যোগ হয়ে রক্তের

ভলিউম স্বাভাবিক হয়। ২-৩ দিনের মধ্যে প্লাজমা প্রোটিন স্বাভাবিক হয়। এ সময়ে এনিমিয়া পাওয়া যায় (নরমোক্রোমিক নরমোসাইটিক)। ফেজ-৩: Lost সেল এর রিপ্লেসমেন্ট। ৩-৪ দিনের মধ্যেই WBC রিপ্লেস হয়। কিন্তু RBC এনিমিয়ার মাত্রানুযায়ী ধীরে ধীরে recover হয় (৫-৬ সপ্তাহ সময় লাগে)। যদি ব্লাড ট্রান্সফিউশন দ্বারা ব্লাড loss পূরণ করা না হয় তবে RBC ও প্লাজমা প্রোটিনের replacement সমাপ্ত হতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যায়।

শক (shock)

প্রশ্নঃ শক কাকে বলে? বা শকের সংজ্ঞা লিখ। বা, শক এর সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ লিখ। ২০০৯, ১৫

শক এর সংজ্ঞা:

শক (Shock) হলো একটি বিপজ্জনক চিকিৎসাগত অবস্থা, যেখানে শরীরের টিস্যুগুলোতে রক্ত সরবরাহ কমে যায়, ফলে অক্সিজেন ও পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। এটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, যেমন মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, কিডনি, এবং অন্যান্য টিস্যুগুলোর কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

শকের কারণ হতে পারে রক্তচাপের অত্যধিক পতন, রক্তক্ষরণ, আঘাত, বা সংক্রমণ।

শক-এর শ্রেণীবিভাগ:

শককে বিভিন্ন ধরনের কারণ এবং শারীরিক প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়। প্রধান প্রকারভেদগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো:

১. হাইপোভলেমিক শক (Hypovolemic Shock):

কারণ: রক্ত বা দেহের তরল পদার্থের ঘাটতি।
উদাহরণ:

  • প্রচুর রক্তক্ষরণ
  • ডায়রিয়া বা বমির কারণে তরলপদার্থের ঘাটতি
  • গুরুতর বার্ন বা পোড়া

২. কার্ডিওজেনিক শক (Cardiogenic Shock):

কারণ: হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।
উদাহরণ:

  • হার্ট অ্যাটাক
  • হার্ট ফেইলিউর
  • মায়োকার্ডাইটিস বা হৃদপেশীর প্রদাহ

৩. ডিস্ট্রিবিউটিভ শক (Distributive Shock):

কারণ: রক্তনালীতে অস্বাভাবিক প্রসারণ এবং রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতা।
প্রকার:

  • সেপ্টিক শক (Septic Shock): গুরুতর সংক্রমণের কারণে
  • অ্যানাফাইল্যাকটিক শক (Anaphylactic Shock): অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া
  • নিউরোজেনিক শক (Neurogenic Shock): স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাঘাত বা আঘাতের কারণে

৪. ওবস্ট্রাকটিভ শক (Obstructive Shock):

কারণ: রক্ত সঞ্চালনে বাধা।
উদাহরণ:

  • পালমোনারি এম্বোলিজম (ফুসফুসে রক্তনালীর ব্লক)
  • কার্ডিয়াক ট্যাম্পোনেড (হৃদপিণ্ডের চারপাশে তরল জমে যাওয়া)
  • টেনশন নিউমোথোরাক্স (ফুসফুসের বায়ু জমে রক্তনালীর চাপ সৃষ্টি)

. এন্ডোক্রাইন শক (Endocrine Shock)

কারণ: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
উদাহরণ:

  • অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে গ্লুকোজের অভাব

৬. ট্রমাটিক শক (Traumatic Shock)

কারণ: শারীরিক আঘাত বা গুরুতর চোট।
উদাহরণ: দুর্ঘটনার ফলে অঙ্গহানি, পেশি বা হাড়ের গুরুতর ক্ষতি

৭. মিশ্র শক (Mixed Shock)

কারণ: একাধিক শকের প্রকার একত্রে উপস্থিত।
উদাহরণ: কার্ডিওজেনিক এবং সেপ্টিক শক একসঙ্গে

শকের প্রকারভেদ সঠিকভাবে নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রতিটি প্রকারের জন্য আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন। দ্রুত নির্ণয় এবং সময়মতো চিকিৎসা রোগীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।

প্রশ্নঃ শকের কারণসমূহ লিখ। বা, শকের সংজ্ঞা ও কারণ লিখ। ২০১১, ১৩

শকের কারণসমূহ:

শক বিভিন্ন কারণে হতে পারে। প্রধান কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. হাইপোভলেমিয়া (Hypovolemia)

দেহে রক্ত বা তরল পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে শক দেখা দেয়।

  • প্রচুর রক্তক্ষরণ (আঘাত, অস্ত্রোপচার, বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের কারণে)
  • ডিহাইড্রেশন (ডায়রিয়া, বমি, বা অতিরিক্ত ঘামের কারণে)
  • গুরুতর বার্ন বা পোড়া, যেখানে শরীর থেকে প্রচুর তরল হারিয়ে যায়

২. কার্ডিয়াক কার্যক্ষমতার ঘাটতি (Cardiac Dysfunction)

হৃদপিণ্ড ঠিকমতো রক্ত পাম্প করতে ব্যর্থ হলে শক হতে পারে।

  • হার্ট অ্যাটাক (মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন)
  • কার্ডিয়াক আরেস্ট
  • মায়োকার্ডাইটিস বা হৃদপেশীর প্রদাহ
  • হার্ট ফেইলিউর

৩. রক্তনালীর অস্বাভাবিক প্রসারণ (Vasodilation)

রক্তনালীগুলোর অতিরিক্ত প্রসারণের কারণে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়।

  • সেপ্টিক শক: গুরুতর সংক্রমণের কারণে
  • অ্যানাফাইল্যাকটিক শক: অ্যালার্জির তীব্র প্রতিক্রিয়া
  • নিউরোজেনিক শক: স্নায়ুতন্ত্রের আঘাত বা ব্যাঘাত

৪. রক্তপ্রবাহে বাধা (Obstruction in Blood Flow)

রক্ত সঞ্চালনের পথে বাধা শকের কারণ হতে পারে।

  • পালমোনারি এম্বোলিজম (ফুসফুসে রক্তনালীর ব্লক)
  • কার্ডিয়াক ট্যাম্পোনেড (হৃদপিণ্ডের চারপাশে তরল জমে যাওয়া)
  • টেনশন নিউমোথোরাক্স (ফুসফুসে বায়ু জমে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি)

৫. ট্রমা (Trauma)

শারীরিক আঘাত বা দুর্ঘটনার কারণে শক হতে পারে।

  • গুরুতর চোট বা ক্ষত
  • হাড়ভাঙা বা পেশির গভীর ক্ষতি

৬. এন্ডোক্রাইন সমস্যা (Endocrine Disorders)

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা শকের কারণ হতে পারে।

  • অ্যাড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি
  • থাইরয়েডের কার্যক্ষমতার সমস্যা
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তে শর্করার অভাব

৭. গুরুতর সংক্রমণ (Severe Infection)

সেপ্টিসেমিয়া বা সিস্টেমিক ইনফেকশনের ফলে শরীরে শক দেখা দিতে পারে।

৮. অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া (Allergic Reaction)

তীব্র অ্যালার্জির কারণে হঠাৎ রক্তচাপ কমে গিয়ে শক হতে পারে।

৯. বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব (Toxic Effects)

দেহে বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করলে শকের অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।

  • সাপের কামড়
  • বিষাক্ত ওষুধ বা রাসায়নিক

10. ভেসোভেগাল সিনড্রোম: তীব্র ব্যথা বা ইমোশনাল ব্যাঘাতের জন্য শক হতে পারে। এখানে আপার লিম্ব ও লোয়ার লিম্বের এবং splanchnic arterial bed-এ রিফ্লেক্স ভেসোডাইলেটেশন হয়। ফলে শরীরের নিচের অংশে রক্ত জমা হয়। এ ছাড়াও ভেগাস নার্ভের প্রভাবে হৃদপিন্ডের স্পন্দনের গতি কমে যায়।

11. অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ : রক্তক্ষরণের ফলে রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া।

12. অতিরিক্ত ফ্লুইড বাহির হয়ে যাওয়া (loss) : বমি ও উদরাময় এবং পোড়াক্ষতের কারণে শরীরের ফ্লুইড loss এর অন্যতম কারণ।

 

প্রশ্নঃ শক এর লক্ষণাবলী লিখ। ১১, ১৩, ১৫ বা, শকের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

শকের লক্ষণাবলী:

শক একটি বিপজ্জনক অবস্থা, যা দেহের বিভিন্ন সিস্টেমে প্রভাব ফেলে। এর প্রধান লক্ষণাবলী নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • দুর্বলতা এবং মাথা ঘোরা
  • চেতনা হারানো বা অস্পষ্ট চেতনা
  • শ্বাসকষ্ট এবং উদ্বিগ্নতা
  • রক্তচাপ কমে যাওয়া (Hypotension)
  • দ্রুত এবং ক্ষীণ পালস (Tachycardia এবং Weak Pulse)
  • ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে, এবং ফ্যাকাশে ত্বক
  • নীলচে ত্বক বা নখ (Cyanosis)
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
  • দ্রুত শ্বাস নেওয়া (Tachypnea)
  • শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা শ্বাস নিতে কষ্ট
  • কম মূত্র উৎপাদন (Oliguria)
  • প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া (Anuria)
  • বমি বা বমির ভাব
  • পেট ব্যথা বা ফোলাভাব
  • বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতা
  • হতাশাজনক মানসিক অবস্থা
  • অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বা কম প্রতিক্রিয়া
  • উচ্চ জ্বর বা হাইপোথার্মিয়া (অত্যন্ত কম তাপমাত্রা)
  • শরীরে সংক্রমণের চিহ্ন, যেমন লালভাব বা ফোলাভাব
  • চোখ- দুর্বল চাহনি। চোখ কোঠরাগত।

প্রশ্নঃ শকের শ্রেণীবিভাগের বিস্তারিত বর্ণনা কর।

শকের শ্রেণীবিভাগ:

(i) নিউরোজেনিক শক:

(ক) ভেসোভেগাল শক: এখানে লিম্ব muscles-এ blood জমা হয়

এবং রিফ্রেক্স splanchnic arteriolar bed ডাইলেটেশন ঘটে, ফলে হার্টে ভেনাস রিটার্ন কমে যায়, কার্ডিয়াক আউটপুট কমে যায় ও ব্রাডিকার্ডিয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে cercbral perfusion কমে যায় এবং সেরিব্রাল hypoxia ও রোগী unconscious হয়। রোগীকে দাঁড় করে রাখলে বা সিটিং পজিশনে রাখলে স্থায়ী cerebral damage হবে।

(খ) ট্রমাটিক বা সাইকোজেনিক শক: ভীষণ ব্যথা, যেমন- অন্ডকোষে

হঠাৎ আঘাত বা হার্টের ট্রমাটিক কনটুশন, হঠাৎ ভয় বা খারাপ সংবাদ পেলে এ জাতীয় শক হয়।

(ii) হাইপোভোলেমিক শক: রক্তক্ষরণ, ডিহাইড্রেশনের কারণে

ইন্ট্রাভাসকুলার ব্লাড ভলিউম কমে যাওয়ায় এ জাতীয় শক হয়ে থাকে। ১০-১৫% পর্যন্ত ব্লাড ভলিউম loss হলে ট্র্যাকিকার্ডিয়া এবং vasoconstriction- এর মাধ্যমে ব্লাড প্রেসার maintain হওয়া সম্ভব। ইন্টারস্টিসিয়াল স্পেস থেকে ফ্লুইড ইন্ট্রাভাসকুলার স্পেসে চলে আসে, ঘণ্টায় প্রায় ১ লিটারের বেশী ফ্লুইড ট্রান্সফার হয়। এছাড়াও ভেনাস ক্যাপসিট্যান্স vessels সঙ্কুচিত হয়ে ব্লাড আর্টারিয়াল সিস্টেমে push হয়, ফলে volume deficit, কম্পেন্সেট হয়। বার্ণের ক্ষেত্রে যদি ২৫% বা আরও অধিক পরিমাণে বডি সারফেস এরিয়া পুড়ে যায় তখন generalised কেপিলারী লিকেজ হয়ে প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে gross হাইপোভোলেমিয়া হয়।
(iii) কার্ডিওজেনিক শক: ইনফার্কশনের কারণে হার্টের ওয়ালের ৫০%-এর বেশী damage হলে কার্ডিওজেনিক শক হয়। ফ্লুইড overload- এ বাম ভেন্ট্রিকল pump failure হয়।

(iv) সেপটিক বা এন্ডোটক্সিক শক:

(ক) হাইপারডাইনামিক সেপটিক শক: মারাত্বক গ্রাম নেগেটিভ ইনফেকশনে এটি ঘটে, যেমন- স্ট্র্যাংগুলেটেড ইনটেস্টাইন, পেরিটোনাইটিস, সাপুরেটিভ biliary conditions। প্রথমে রোগীর স্বাভাবিক বা অতিরিক্ত কার্ডিয়াক আউট পুট, tachycardia এবং গরম শুষ্ক ত্বক থাকে।

(খ) হাইপোভোলেমিক হাইপোডাইনামিক সেপটিক শক: যদি severe sepsis বা এন্ডোটক্সিমিয়া persist করে তবে এ জাতীয় শক হয়। এক্ষেত্রে gereralised ক্যাপিলারি leakage ও ফ্লুইড ক্ষরনের কারণে মারাত্বক হাইপোভোলেমিয়া হয়, ফলে কার্ডিয়াক আউটপুট কমে যায়, tachycardia এবং ভেসোকনস্ট্রিকশন হয়।

(v) অ্যানাফাইল্যাকটিক শক: অ্যানাফাইল্যাক্সিসের কমন কারণগুলোর মধ্যে পেনিসিলিন ইনজেকশন অন্যতম। অন্যান্য কারণগুলো হচ্ছে- অ্যানাসথেটিক্স, ডেক্সট্রান ও সিরাম ইনজেকশন গ্রহণ। Mast cells, basophils- এর IgE-এর সঙ্গে অ্যান্টিজেন যুক্ত হয়ে অধিক পরিমাণে হিস্টামিন এবং SRS-A (slow release substance- anapylaxis) রিলিজ করে। এ কম্পাউন্ডগুলো ব্রোঙ্কোস্প্যাজম ল্যারিঙ্কসের ইডিমা এবং হাইপোক্সিয়াসহ রেসপিরেটরি distress ঘটায়, massive ভেসোডাইলেটেশন, হাইপোটেনশন এবং সবশেষে শক ঘটায়। এতে মৃত্যু হার প্রায় ১০%।

প্রশ্নঃ শকের প্যাথলজি বা প্যাথজেনিসিটি বর্ণনা কর। ০৯

শকের প্যাথলজি বা প্যাথজেনিসিটি বর্ণনা:

শক একটি জীবন-হুমকিজনক অবস্থা যা সিস্টেমিক হাইপোফিউশন (দেহের টিস্যু এবং অঙ্গগুলোতে রক্ত সঞ্চালনের অভাব) দ্বারা চিহ্নিত হয়। এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন এবং পুষ্টির সরবরাহ কমিয়ে দেয়, ফলে কোষের কার্যক্রম ব্যাহত হয়। শকের প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তনগুলো নিচে পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হলো:

১. স্নায়বিক এবং হরমোনের প্রতিক্রিয়া: শকের প্রথম পর্যায়ে শরীর ক্ষতিপূরণের জন্য বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।

  • ক্যাটেকোলামিন নিঃসরণ: অ্যাড্রেনালিন এবং নরঅ্যাড্রেনালিন নিঃসৃত হয়, যা হার্টের গতি এবং রক্তচাপ বাড়ায়।
  • রেনিন-অ্যাঞ্জিওটেনসিন-অ্যাল্ডোস্টেরন সিস্টেম: রেনাল ফাংশন কমে যাওয়া রক্তচাপ পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
  • এন্টিডাইইউরেটিক হরমোন (ADH): শরীরে তরল সংরক্ষণ করতে সক্রিয় হয়।
  • পেরিফেরাল ভ্যাসোকনস্ট্রিকশন: ত্বক এবং অপ্রয়োজনীয় অঙ্গগুলোর দিকে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে রক্ত সরবরাহ বাড়ানো।

২. অক্সিজেন সরবরাহ এবং চাহিদার ভারসাম্যহীনতা

  • হাইপোফিউশনের কারণে টিস্যু পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না।
  • অ্যারোবিক মেটাবলিজম বন্ধ হয়ে গ্লুকোজের পরিবর্তে অ্যানারোবিক গ্লাইকোলাইসিস শুরু হয়।
  • ল্যাকটিক অ্যাসিড জমে দেহে অ্যাসিডোসিসের সৃষ্টি হয় (Metabolic Acidosis)।

৩. কোষের কার্যক্ষমতা হ্রাস

  • মাইটোকন্ড্রিয়াল কার্যক্ষমতা কমে যায়, ফলে এনার্জি উৎপাদন হ্রাস পায়।
  • কোষ ঝিল্লির কার্যকারিতা কমে যায়, যা সোডিয়াম-পটাসিয়াম পাম্পকে ব্যাহত করে।
  • কোষের ভেতরে সোডিয়াম এবং পানি জমে কোষ ফুলে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৪. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা ব্যর্থতা (Organ Dysfunction): শকের ক্রমাগত অবস্থায় বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে।

  • হৃৎপিণ্ড: কার্ডিয়াক আউটপুট কমে যায়।
  • কিডনি: অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিউর দেখা দেয়।
  • যকৃত: লিভার এনজাইম বৃদ্ধি পায় এবং ডিটক্সিফিকেশন ক্ষমতা কমে যায়।
  • ফুসফুস: অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম (ARDS)।
  • মস্তিষ্ক: স্নায়বিক কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটে, বিভ্রান্তি বা কোমা হতে পারে।

৫. ইমিউন সিস্টেমের পরিবর্তন

  • শকের ফলে সাইটোকাইন স্টর্ম হতে পারে, যা টিস্যু ড্যামেজকে বাড়িয়ে দেয়।
  • সেপ্টিক শকের ক্ষেত্রে, সংক্রমণ থেকে উৎপন্ন টক্সিন দেহের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যাহত করে।

৬. ইসকেমিয়া এবং মাল্টি-অর্গান ড্যামেজ

  • রক্ত প্রবাহের অভাবের কারণে টিস্যু নেক্রোসিস হয়।
  • দীর্ঘমেয়াদে মাল্টি-অর্গান ফেইলিউর (MOF) হতে পারে।

আঘাতের ফলে মেমব্রেন নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এ সময় মেমব্রেনে রাসায়নিক রূপান্তর বা বিপাকের ফলে ক্ষতিকর পদার্থের উৎপন্ন হতে পারে। এ বিষাক্ত পদার্থ দেহের ভিতরে প্রবাহিত হয়ে শক অবস্থা উৎপন্ন করতে পারে।

প্রশ্নঃ শক এর জটিলতাসমূহ লিখ। ১১, ১৩, ১৫

শক এর জটিলতাসমূহঃ

শক দীর্ঘস্থায়ী হলে বা সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে এটি গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এর প্রধান জটিলতাগুলি নিম্নরূপ:

১. মাল্টি-অর্গান ফেইলিউর (Multiple Organ Failure – MOF)

  • অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহের অভাবে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
  • প্রভাবিত অঙ্গগুলো সাধারণত: কিডনি, যকৃত, ফুসফুস এবং মস্তিষ্ক।

২. হৃদযন্ত্রের জটিলতা (Cardiac Complications)

  • কার্ডিয়াক আউটপুট কমে যাওয়া।
  • অ্যারিথমিয়া বা হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা।
  • মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (হার্ট অ্যাটাক)।

৩. ফুসফুসের সমস্যা (Respiratory Complications)

  • অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম (ARDS)।
  • ফুসফুসে তরল জমে শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি।

৪. কিডনির ব্যর্থতা (Renal Failure)

  • অ্যাকিউট টিউবুলার নেক্রোসিস।
  • প্রস্রাব উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া (Anuria)।

৫. মস্তিষ্কের জটিলতা (Neurological Complications)

  • বিভ্রান্তি, অস্থিরতা, এবং কোমা।
  • দীর্ঘস্থায়ী অবস্থায় স্থায়ী মানসিক সমস্যা বা ব্রেন ড্যামেজ।

৬. সংক্রমণ ও সেপসিস (Infection and Sepsis)

  • শকের কারণে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • সেপ্টিসেমিয়া হতে পারে, যা জীবন-হুমকিজনক।

৭. ডিসেমিনেটেড ইনট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন (DIC)

  • রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া অস্বাভাবিক হয়ে যায়।
  • ক্ষুদ্র রক্তনালীতে জমাট বাঁধার ফলে অঙ্গগুলোর রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

৮. টিস্যু নেক্রোসিস (Tissue Necrosis)

  • টিস্যুতে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে টিস্যু ধ্বংস হয়ে যায়।
  • এই অবস্থায় গ্যাংগ্রিন দেখা দিতে পারে।

৯. মেটাবলিক অ্যাসিডোসিস (Metabolic Acidosis)

  • অক্সিজেনের অভাবে অ্যানারোবিক মেটাবলিজম শুরু হয়, ফলে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমে অ্যাসিডোসিস হয়।

১০. ইমিউন সিস্টেমের ব্যর্থতা (Immune System Collapse)

  • দীর্ঘস্থায়ী শকের ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

প্রশ্নঃ শকের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১১, ১৩, ১৫ বা, শকের চিকিৎসা লিখ।

শকের চিকিৎসা:

শকের ব্যবস্থাপনা দ্রুত, কার্যকর এবং সুনির্দিষ্ট হতে হবে। এটি রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শকের কারণ, প্রকারভেদ এবং জটিলতা অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।

১. শরীরের রক্তচলাচল পুনরুদ্ধার (Restoring Circulation):

  • প্রাথমিক সমস্যা- রক্তক্ষরণ বন্ধ করা, pus ড্রেইন করা ইত্যাদি।
  • রোগীকে শুইয়ে পা উঁচু করে রাখা (Trendelenburg position) যাতে রক্ত মস্তিষ্কে সঞ্চালিত হয়।
  • রোগীর রক্তচাপ মনিটর করা এবং দ্রুত সিস্টেমিক রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা।
  • প্রয়োজনমতো ভ্যাসোপ্রেসর ব্যবহার করা (যেমন: ডোপামিন, অ্যাড্রেনালিন)।

২. অক্সিজেন সরবরাহ (Oxygen Therapy):

  • অক্সিজেন মাস্ক বা ন্যাসাল ক্যানুলার মাধ্যমে রোগীকে অক্সিজেন প্রদান করা।
  • শ্বাসকষ্ট থাকলে মেকানিকাল ভেন্টিলেশন ব্যবহার করা।

৩. তরল সরবরাহ (Fluid Resuscitation):

  • ক্রিস্টালয়েড সলিউশন (Normal Saline বা Ringer’s Lactate): রক্তচাপ স্থিতিশীল করার জন্য দ্রুত প্রয়োগ।
  • কোলয়েড সলিউশন: প্লাজমা ভলিউম বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • রক্ত বা রক্তের উপাদান প্রয়োগ: রক্তক্ষরণের কারণে শক হলে দ্রুত রক্ত সরবরাহ করতে হবে।
  • বমি ও পাতলা পায়খানার কারণে শরীরের ফ্লুইড loss- এর জন্য ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।
  • পোড়া ক্ষতের ক্ষেত্রে- প্লাজমা ইনফিউশন দিতে হবে।

৪. শকের কারণ নির্ধারণ এবং চিকিৎসা (Treating the Underlying Cause):

  • হাইপোভলেমিক শক: রক্ত বা তরল সরবরাহ করে ক্ষতিপূরণ করা।
  • কার্ডিওজেনিক শক:
    • ইনোট্রপিক ড্রাগ (যেমন: ডোপামিন, ডোবুটামিন) ব্যবহার।
    • হৃদপিণ্ডের রক্তপ্রবাহ পুনরুদ্ধারের জন্য স্টেন্ট বা বাইপাস সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।
  • সেপ্টিক শক:
    • দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি।
    • সংক্রমণের উত্স অপসারণ (যেমন: অ্যাবসেস ড্রেন করা)।
  • অ্যানাফাইল্যাকটিক শক:
    • অ্যাড্রেনালিন ইনজেকশন প্রদান।
    • অ্যান্টিহিস্টামিন এবং কর্টিকোস্টেরয়েড ব্যবহার।

৫. রক্তচাপ এবং হার্টের কার্যক্রম মনিটরিং:

  • সেন্ট্রাল ভেনাস প্রেসার (CVP) মনিটরিং।
  • ইসিজি এবং পালস অক্সিমেট্রি পর্যবেক্ষণ।

৬. মেটাবলিক ভারসাম্য রক্ষা (Correcting Metabolic Imbalances):

  • অ্যাসিডোসিস থাকলে Acid-base disturbance ঠিক করতে হবে, যদি আর্টারিয়াল ব্লাডের pH- ৭.২- এর কম হয় তাহলে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট দিতে হবে।
  • রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল করা।

৭. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা রক্ষা (Preventing Organ Failure):

  • কিডনি ফাংশন পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে ডায়ালাইসিস।
  • মাল্টি-অর্গান ফেইলিউর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।

৮. নিয়মিত মনিটরিং এবং সহায়ক ব্যবস্থা:

  • রোগীর তাপমাত্রা, রক্তচাপ, পালস, শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা।
  • মানসিক সাপোর্ট প্রদান।

প্রশ্ন: হাইপোভলেমিক শক-এর সংজ্ঞা, লক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা লিখ। বা, হাইপোভলেমিক শকের সংজ্ঞা, কারণ ও লক্ষণ লিখ।০৯, ১২

হাইপোভলেমিক শকের সংজ্ঞা:

হাইপোভলেমিক শক এমন একটি অবস্থা, যেখানে শরীরে রক্ত বা তরলের পরিমাণ গুরুতরভাবে কমে যাওয়ার ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায় এবং টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়। এটি সাধারণত রক্তক্ষরণ বা শরীরের তরল ক্ষতির কারণে ঘটে।

হাইপোভলেমিক শকের কারণসমূহ:

  • অতিরিক্ত অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ (যেমন: গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্লিডিং, স্প্লিন বা লিভার ফাটল)।
  • অতিরিক্ত বাহ্যিক রক্তক্ষরণ (যেমন: আঘাত বা অস্ত্রোপচারজনিত রক্তক্ষরণ)।
  • অতিরিক্ত বমি বা ডায়রিয়ার কারণে তরল হারানো।
  • অতিরিক্ত ঘামের ফলে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে পানি না খাওয়া।
  • গুরুতর বার্নের ফলে টিস্যু তরলের ক্ষতি।
  • ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস বা ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস।
  • ডায়ুরেটিক ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার।
  • রক্তনালির ভেদ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে রক্তের তরল বেরিয়ে যাওয়া।

হাইপোভলেমিক শকের লক্ষণাবলী:

১. রক্তচাপ দ্রুত কমে যাওয়া।
২. দ্রুত এবং দুর্বল পালস।
৩. ত্বক ফ্যাকাসে, ঠান্ডা এবং আর্দ্র।
৪. শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়ে যাওয়া, এবং মারাত্বক অবস্থায় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
৫. প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
৬. চেতনা হারানো বা বিভ্রান্তি।
৭. উদ্বেগ এবং অস্থিরতা।
৮. ঠোঁট এবং নখের চারপাশ নীলাভ হয়ে যাওয়া। পেরিফেরাল সায়ানোসিস দেখা দেয়।
৯. ত্বক শুষ্ক এবং ইলাস্টিসিটি কমে যাওয়া।

10. প্রচন্ড দুর্বলতা বর্তমান থাকে।

11. চোখ কোঠরাগত, চাকচিক্যভাব থাকে না এবং দুর্বল দৃষ্টি শক্তি।

12. জিহ্বা শুষ্ক, প্রচন্ড পানির পিপাসা থাকে।

13.বমি বমিভাব ও বমি হতে পারে।

হাইপোভলেমিক শক জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। সঠিক কারণ শনাক্ত করে দ্রুত তরল সরবরাহ এবং রক্তচাপ স্থিতিশীল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

 

 

ব্লাড ট্রান্সফিউশন (blood transfusion)

প্রশ্ন: রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রসমূহ ও শর্তগুলি লিখ। ০৯, ১৭

রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রসমূহ:

  1. শল্যচিকিৎসার সময়।
  2. দুর্ঘটনা বা আঘাতজনিত রক্তক্ষরণের ক্ষেত্রে।
  3. প্রসবকালীন বা প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণ।
  4. গুরুতর রক্তাল্পতার কারণে।
  5. ক্যানসারের কারণে রক্তের উপাদান হ্রাস।
  6. হিমোফিলিয়া বা রক্ত জমাট বাঁধার অক্ষমতা।
  7. প্লেটলেটের ঘাটতি।
  8. বড় ধরনের অস্ত্রোপচার (যেমন: হার্ট সার্জারি, লিভার ট্রান্সপ্লান্ট)।
  9. অঙ্গ প্রতিস্থাপন।
  10. সড়ক দুর্ঘটনা বা বড় ধরনের আঘাতে।
  11. যুদ্ধক্ষেত্র বা ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধারকৃত আহত রোগীদের ক্ষেত্রে।
  12. গুরুতর বার্নের ফলে রক্তের উপাদানের ক্ষতি পূরণ করতে।
  13. কিডনি ডায়ালাইসিস রোগীর রক্ত পুনরুদ্ধারের জন্য।
  14. ক্যানসারের চিকিৎসার সময়।

রক্ত সঞ্চালনের শর্তসমূহ:

১. রক্তদাতার রক্তের ধরন (Blood Group Compatibility): রিসিপিয়েন্টের রক্তের ধরন এবং রক্তদাতার রক্তের ধরন অবশ্যই সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।

২. সংক্রমণ মুক্ত রক্ত: দাতার রক্ত অবশ্যই এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, সিফিলিস ইত্যাদি রোগমুক্ত হতে হবে।

৩. রক্তের উপাদানের নির্দিষ্ট প্রয়োজন: শুধু প্লাজমা, প্লেটলেট বা রেড ব্লাড সেল প্রয়োজন হলে তা আলাদা করে সরবরাহ করতে হবে।

৪. রক্তের মেয়াদ: রক্ত অবশ্যই মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগে ব্যবহৃত হতে হবে।

৫. পরীক্ষা-নিরীক্ষা: দাতার রক্ত রিসিপিয়েন্টের সাথে প্রাক-পরীক্ষার মাধ্যমে মিলিয়ে নিতে হবে।

৬. পরিমাণ নির্ধারণ: রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজনীয় পরিমাণ নির্ধারণ করে সঠিকভাবে সরবরাহ করতে হবে।

৭. অবস্থা পর্যবেক্ষণ:

  • রক্ত সঞ্চালনের সময় রোগীর শারীরিক অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
  • এলার্জি বা রিঅ্যাকশনের লক্ষণ দেখা দিলে সঞ্চালন বন্ধ করতে হবে।

৮. বিশেষ অবস্থা:

  • গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন।
  • নবজাতকের ক্ষেত্রে।

রক্ত সঞ্চালনের সঠিক নিয়ম ও শর্ত মেনে চললে এটি রোগীর জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্নঃ রক্ত সঞ্চালনের কন্ট্রাইন্ডিকেশন লিখ।

ব্লাড ট্রান্সফিউশন-এর কন্ট্রাইন্ডিকেশন :

(i) উভয় কিডনির সিভিয়ার ডিজিজ।

(ii) মারাত্মক করোনারি আর্টারিয়াল ডিজিজ বা মাইয়োকার্ডিয়াল ড্যামেজ।:

(iii) কনজেসটিভ কার্ডিয়াক ফেইলুর এবং পালমোনারি ইডিমা।

(iv) হাইপারটেনশনের কিছু কারণ।

(v) পলিসাইথেমিয়া ভেরা।

প্রশ্নঃ রক্ত সঞ্চালনের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি লিখ।

ব্লাড ট্রান্সফিউশনের সুবিধা:

(i) হেমোরেজের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম ও একমাত্র ফ্লুইড replacement

(ii) এতে ব্লাড ভলিউম প্রতিস্থাপিত হয়।

(iii) অক্সিজেন বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, রক্তের জমাট বাঁধার কেপাসিটি বৃদ্ধি পায়।

ব্লাড ট্রান্সফিউশনের অসুবিধা:

(i) ব্লাড draw করার ও ট্রান্সফিউশন করার কৌশল সহজ নয়।

(ii) গ্রুপিং ও ক্রস ম্যাচিং ছাড়া সঙ্গে সঙ্গে রক্ত দেয়া যায় না।

(iii) রক্ত সংরক্ষণ করা বেশ অসুবিধাজনক। তিন সপ্তাহ পর এই রক্ত ব্যবহার করা যায় না।

(iv) ট্রান্সফিউশনে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।

প্রশ্ন: প্লাজমা ট্রান্সফিউশন (আইভি ফ্লুইড) ইন্ডিকেশনস লিখ।

প্লাজমা ট্রান্সফিউশন ইন্ডিকেশনস:

(i) শক ছাড়া হেমোরেজ।

(ii) হাইপোপ্রোটিনেমিয়া।

(iii) একিউট ইনফেকশনের কোন কোন ক্ষেত্রে।

প্রশ্ন: প্লাজমা ট্রান্সফিউশন সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ লিখ।

প্লাজমা ট্রান্সফিউশন সুবিধাঃ

(i) ট্রান্সফিউশনের জন্য কোন ম্যাচিং দরকার হয় না, ফলে প্রয়োজনের মূহুর্তে সঙ্গে সঙ্গে দেয়া যায়।

(ii) দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়।

প্লাজমা ট্রান্সফিউশন অসুবিধা:

(i) অর্ডিনারি প্লাজমা ৩ মাসের বেশী রাখা যায় না, কারণ ফিব্রিনোজন থ্রেড-এ রূপান্তরিত হয়।

(ii) প্লাজমা প্রিপেয়ার করতে স্পেশাল টেকনিক দরকার হয়।

প্রশ্ন: ব্লাড ট্রান্সফিউশনের পূর্বে ইনভেস্টিগেশন ও গ্রহীতাকে এক্সামিনেশনের সতর্কতা লিখ।

ব্লাড ট্রান্সফিউশনের পূর্বে ইনভেস্টিগেশন ও গ্রহীতাকে এক্সামিনেশন:

(i) রোগীর হার্ট ফেইলুর থাকা যাবে না।

(ii) লাঙগস-এ কনজেশন বা পালমোনারি ইডিমা থাকা যাবে না।

(iii) প্রস্রাবে অ্যালবুমিন না থাকা।

(iv) কোন এলার্জিক মেনিফেস্টেশন না থাকা।

(v) ট্রান্সফিউশনের সময় খালি স্টোমাকে থাকা বাঞ্চনীয়।

(vi) রক্তের গ্রুপিং ও ক্রসম্যাচিং।

প্রশ্ন : ব্লাড ট্রান্সফিউশনের পূর্বে ইনভেস্টিগেশন ও দাতাকে এক্সামিনেশনের সতর্কতা লিখ।

দাতাকে এক্সজামিনেশন:

(i) দাতার ইতোপূর্বে সিফিলিস, ম্যালেরিয়া, জন্ডিস ইত্যাদি রোগ ছিল কিনা।

(ii) সিফিলিস, M.T. (ম্যালেরিয়াল ট্রফোজয়েট), হেপাটাইটিস “বি” এন্টিজেন-এর জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।

(iii) রক্তের গ্রুপিং ও ক্রোস ম্যাচিং।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফিউশনের জন্য প্রস্তুত রক্তের পরীক্ষা বর্ণনা কর।

ট্রান্সফিউশনের জন্য প্রস্তুত রক্তের পরীক্ষা:

(i) হেমোলাইসিস- বোতলে রক্ত রেখে দিলে সেল এবং প্লাজমা’র মাঝে ক্লিয়ার সীমারেখা দেখা যায়। কিন্তু যদি এ সীমা অস্পষ্ট বা ডিফিউজ হলে হেমোলাইসিস বুঝায়।

(ii) কয়েকদিন আগের সংগৃহীত রক্ত হলে উপরের প্লাজমা ঘোলাটে হয়।

(iii) রক্ত ৪০ সে. তাপমাত্রায় store করতে হয়।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফিউশন টেকনিক বর্ণনা কর।

ট্রান্সফিউশন টেকনিক:

দুই forms এ ব্লাড ট্রান্সফিউশন দেয়া হয়,

(i) সম্পূর্ণ ব্লাড।
(ii) প্যাক্ত সেল-এক্ষেত্রে প্লাজমার অংশ বাদ দেয়া হয়। সার্কুলেশনে ওভারলোড হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে প্যান্ড সেল ট্রান্সফিউশন দেয়া হয়, যেমন- severely এনিমিক রোগী।

প্রশ্নঃ ট্রান্সফিউশন পূর্ব সতর্কতা বর্ণনা কর।

ট্রান্সফিউশন পূর্ব সতর্কতাঃ

(i) কঠোরভাবে asepsis মেনে চলতে হবে।

(ii) এলার্জিক মেনিফেস্টেশন ঠেকানো ও মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু কিছু রোগীকে এন্টি-এলার্জিক ড্রাগ (যেমন-এভিল), ক্যালসিয়াম গুকোনেট এবং সিডেটিভ ইনজেকশন দেয়া হয়।

(iii) খালি স্টোমাকে থাকলে ভাল হয়।

(iv) কোন অনাকাঙ্খিত রিঅ্যাকশন আগে ভাগে নির্ণয়ের জন্য রোগীর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

ট্রান্সফিউশন পদ্ধতি ইন্ট্রাভেনাস ট্রান্সফিউশন:

মধ্যাকর্ষণের কারণে রক্ত ভেইনে প্রবেশ করে। ভেইনের মধ্যে Roger’s ক্যানুলা (অধিক সময় ব্যাপি ট্রান্সফিউশন দেয়ার জন্য) বা নিজ় প্রবেশ করানো হয়।

ট্রান্সফিউশন রেট- সাধারণ স্পিড হচ্ছে ২০-৩০ ড্রপ/মিনিট। কিন্তু severe ব্লাড loss-এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে running দেয়া যায়।

প্রশ্ন: ব্লাড ট্রান্সফিউশনের জটিলতা বর্ণনা কর।

ব্লাড ট্রান্সফিউশনের জটিলতা:

(i) Cogestive cardiac failure : সাধারণতঃ বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বা যার কার্ডিওভাসকুলার insufficiency আছে এবং অধিক পরিমাণ রক্ত দ্রুত infusion দেয়ার জন্য এটি ঘটে। পালমোনারি ইডিমা।

(ii) ট্রান্সফিউশন রিঅ্যাকশন: কারণ-

(ক) Incompatibility: রক্ত সংগ্রহ, লেবেলিং বা specimens ও ডোনার ব্যাগ চেকিং-এর ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। গ্রুপিং এবং cross-matching-এর সঠিক পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে এ জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

(খ) Simple pyrexial reaction: রোগীর জ্বর উঠে, rigor হয় এবং পালস্ রেট বেড়ে যায়। সাধারণতঃ ডোনারের ব্লাডে pyrogens থাকার জন্য এটি ঘটে। ডিসপোজেবল প্লাস্টিক giving set ব্যবহারের মাধ্যমে ইহা এড়ানো সম্ভব।

(গ) এলার্জিক রিঅ্যাকশন: ডোনার ব্লাডের প্লাজমা প্রোডাক্টের প্রতি

এলার্জিক রিঅ্যাকশনের কারণে এটি ঘটে। এতে রোগীর সামান্য ট্র্যাকিকার্ডিয়া এবং আর্টিকেরিয়াল rash হয়, কদাচিৎ অ্যানাফাইল্যাকটিক রিঅ্যাকশন হতে পারে।

(ঘ) লিউকোসাইট ও platelets-এ প্রতি sensitization : যে সব রোগী পূর্বে অনেক বার ট্রান্সফিউশন নিয়েছে সে সব রোগীর ক্ষেত্রে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- থ্যালাসেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক এনিমিয়া।

(ঙ) ইমিউনোলজিক্যাল sensitization : ইমিউন এন্টিবডি ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে stimulated হতে পারে।

(iii) ইনফেকশন: ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ৪ টি প্রধান কারণে রোগীর ইনফেকশন হতে পারে-

(ক) সিরাম হেপাটাইটিস ভাইরাস: ডোনারের রক্ত থেকে ট্রান্সমিট হতে পারে এবং সাধারণতঃ ট্রান্সফিউশনের ৩ মাস পর মারাত্মক হেপাটাইটিস হয়ে থাকে।

(খ) HIV ইনফেকশন: রক্ত বা ব্লাড প্রোডাক্টের মাধ্যমে ট্রান্সমিট হতে পারে।

(গ) ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন: ত্রুটিপূর্ণ সংরক্ষণের কারণে এটি হতে পারে।

(ঘ) ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া ট্রান্সমিট হতে পারে।

(iv) থ্রোম্বোফ্লেবাইটিস: ভেইনের ইনফ্লামেশন।

(v) এয়ার এম্বোলিজম: ভেসেলে বাতাস প্রবেশ।

(vi) রক্ত জমাট না বাঁধা: কারণ-

(ক) ক্লটিং ফ্যাক্টর বা প্লেটিলেটের ডাইলুশেন। ব্লাড loss পূরণের জন্য অধিক পরিমাণ ব্লাড ট্রান্সফিউশন দিলে প্লেটিলেট, ফ্যাক্টর-VIII এবং ফ্যাক্টর-V কম থাকে বা ডাইলুট হয়।

(খ) Disseminated intravascular coagulation- সাধারণতঃ incompatible ব্লাড ট্রান্সফিউশন দিলে ঘটে, বিশেষ করে ABO incompatibility।

উন্ড (Wounds)

প্রশ্ন: উন্ড কাকে বলে? এর শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর।

উন্ড এর সংজ্ঞাঃ উন্ড (Wound) বলতে শরীরের ত্বক বা টিস্যুর ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হওয়া বা আঘাতের কারণে কোনো ধরনের কাটা, ছিঁড়ে যাওয়া বা ছিদ্র হওয়াকে বোঝায়। এটি সাধারণত বাহ্যিক আঘাতের ফলে সৃষ্টি হয় এবং কখনো কখনো অভ্যন্তরীণ কারণেও হতে পারে।

উন্ডের শ্রেণিবিভাগ:

উন্ডকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়, যেমন আঘাতের প্রকৃতি, সংক্রমণের উপস্থিতি এবং গভীরতা অনুসারে।

১. আঘাতের প্রকৃতি অনুসারে শ্রেণিবিভাগ

  • ইনসিশন (Incised Wound): ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে কাটা ক্ষত।
  • ল্যাসারেশন (Lacerated Wound): ভোঁতা আঘাতে ত্বক বা টিস্যু ছিঁড়ে যাওয়া।
  • অ্যাব্রেশন (Abrasion): ত্বকের ওপরিভাগ ঘষে যাওয়া।
  • পাংচার (Puncture Wound): ধারালো বা তীক্ষ্ণ কিছু দিয়ে ছিদ্র হওয়া।
  • কন্টিউশন (Contusion): আঘাতের ফলে ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাঁধা, তবে ত্বক অক্ষত।
  • অ্যাভালশন (Avulsion): টিস্যুর একটি অংশ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ছিঁড়ে যাওয়া।

২. সংক্রমণের উপস্থিতি অনুসারে শ্রেণিবিভাগ

  • ক্লিন বা অ্যাসেপ্টিক উন্ড (Clean Wound): সংক্রমণহীন উন্ড, যেমন অস্ত্রোপচারের ক্ষত।
  • কন্টামিনেটেড উন্ড (Contaminated Wound): জীবাণু দ্বারা দূষিত ক্ষত, যেমন: দুর্ঘটনায় হওয়া ক্ষত।
  • ইনফেক্টেড উন্ড (Infected Wound): ক্ষত থেকে পুঁজ বের হওয়া বা সংক্রমণের লক্ষণ থাকা।

৩. গভীরতা অনুসারে শ্রেণিবিভাগ

  • সুপারফিশিয়াল উন্ড (Superficial Wound): কেবল ত্বকের ওপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত।
  • ডিপ উন্ড (Deep Wound): ত্বক ভেদ করে মাংসপেশি, নার্ভ বা রক্তনালিকে প্রভাবিত করে।
  • পেনিট্রেটিং উন্ড (Penetrating Wound): একটি বস্তু শরীর ভেদ করে ভেতরে ঢুকে যায়।
  • পেরফোরেটিং উন্ড (Perforating Wound): ক্ষত যে বস্তুটি সৃষ্টি করে, তা শরীরের একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিক দিয়ে বের হয়।

৪. অন্যান্য বিশেষ ক্ষত

  • বার্ন উন্ড (Burn Wound): তাপ, রাসায়নিক পদার্থ, বৈদ্যুতিক আঘাত বা রেডিয়েশনের কারণে সৃষ্ট ক্ষত।
  • ক্রাশ উন্ড (Crush Wound): ভারী বস্তু দ্বারা পিষ্ট হয়ে সৃষ্ট ক্ষত।

প্রশ্নঃ ক্ষত আরোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী ফ্যাক্টরসমূহ লিখ।

ক্ষত আরোগ্য প্রভাব বিস্তারকারী ফ্যাক্টরসমূহ:

(ক) স্থানীয় ফ্যাক্টর:

(i) ত্বকের প্রান্তদ্বয় সঠিকভাবে একত্র না করলে বা মাঝখানে ফাঁক থাকলে দেরিতে হিলিং হয়।

(ii) ক্ষতের মধ্যে মৃত বা নষ্ট টিস্যু, ফরেন বডি এবং জমাট রক্ত থাকলে দ্রুত আরোগ্য হয় না।

(iii) রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত হলে ধীরে ধীরে ক্ষত আরোগ্য লাভ করে।

(iv) স্থানীয় জীবাণু সংক্রমণ দেরীতে হিলিং এর প্রধান কারণ।

(v) আক্রান্ত এলাকা সম্পূর্ণরূপে নড়াচড়া বন্ধ অবস্থায় রাখলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।

(খ) সাধারণ ফ্যাক্টর:

(i) শরীরে প্রোটিনের অভাবে দেরিতে হিলিং হয়।

(ii) ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবেও দেরীতে আরোগ্য হয়

(iii) রক্তাল্পতা দেরীতে আরোগ্যের কারণ।

(iv) বয়স- অল্প বয়ষ্কদের ক্ষত দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।

প্রশ্নঃ ক্ষতের জটিলতাসমূহ লিখ।

ক্ষতের জটিলতা:

(i) অতিরিক্ত রক্তক্ষরন। (ii) জীবাণু সংক্রমণ

(iii) ক্ষত শক্তভাবে জোড়া না লাগতে পারে। ক্ষতের নীচের স্ট্রাকচারের সঙ্গে জোড়া লেগে যাওয়া, দেরীতে আরোগ্য এবং স্বাভাবিক কাজে অসুবিধা।

(iv) ক্ষত আরোগ্যের পর আক্রান্ত জায়গায় সংকোচনের ফলে বিকৃতি (ডিফরমিটি) দেখা দিতে পারে এবং সন্ধির নড়াচড়ায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে

পারে।

(v) ক্ষত ভাল হওয়ার (আক্রান্ত) স্থান উঁচু হয়ে থাকতে পারে এবং কেলয়েড তৈরী করে।

প্রশ্নঃ ক্ষতের চিকিৎসা লিখ।

ক্ষতের চিকিৎসা:

(i) আক্রান্ত অংশ সাবধানতার সঙ্গে নড়াচড়া করতে হবে যাতে আরও বেশি ইনজুরি না হয়।

(ii) রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হবে।

(iii) ব্যথা দূর করার জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবস্থা করতে হবে।

(iv) শক থাকলে তার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।

(v) টিটেনাস ও গ্যাস গ্যাংরিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক ব্যবস্থা করতে হবে।

(vi) স্থানীয় চিকিৎসা: (ক) আক্রান্ত হবার সাথে সাথে প্রতিরক্ষামূলক জীবাণুমুক্ত ড্রেসিং করতে হবে।

(খ) ক্ষতের পাশের ত্বক পরিষ্কার ও সেভ করতে হবে।

(গ) লোকাল বা জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত স্যালাইন দ্বারা ধুতে হবে ও ভিতরে যদি কোন ফরেন বডি থাকলে তা বাহির করে ফেলতে হবে।

(ঘ) মুখ এবং হাতের ক্ষত ছাড়া অন্যান্য ক্ষতের কিনার ৩ মি.মি. কেটে ফেলতে হবে। নষ্ট হয়ে যাওয়া ফ্যাট, ফ্যাসা এবং মাংসপেশী ফেলে দিতে হবে কিন্তু ব্লাড ভেসেল এবং নার্ভ সর্তকতার সঙ্গে রক্ষা করতে হবে। অস্থির খন্ডিত অংশ পুন:স্থাপন ও মেরামত করতে হবে।

(ঙ) ক্ষত সৃষ্টির প্রথম ৮ ঘন্টার মধ্যে রোগী আসলে সেলাই করে * ক্ষতের কিনারগুলি একত্রে জোড়া লাগাতে হবে। ইহাকে প্রাইমারী সুচার বলে। ৮ ঘন্টার পরে হলে এবং যদি দূষিত থাকে, বা বেশি টিস্যু নষ্ট হয় তবে সেলাই দিতে ৫/৬ দিন দেরী করতে হবে। ইহাকে ডিলেড্ প্রাইমারী সুচার বলে। যে সকল ক্ষেত্রে ত্বক একত্রে লাগানো সম্ভব হয় না, সে সকল ক্ষেত্রে স্কীন গ্রাফটিং করতে হবে।
সার্জারী (চতুর্থ বর্ষ)

বার্ন ও স্ক্যান্ড (burns and scalds)

প্রশ্নঃ বার্ন ও স্ক্যান্ড কাকে বলে? বার্ন এর শ্রেণিবিভাগ লিখ।

বার্ন এর সংজ্ঞা:

তাপজনিত (উত্তাপ বা ঠান্ডা) কারণে বা রাসায়নিক সংস্পর্শ্বে এটির ফিজিক্যাল এনার্জি শোষনের ফলে টিস্যু ইনজুরিকে বার্ন বলে। বার্নের শ্রেণীবিভাগঃ

পোড়া ক্ষতের গভীরতা অনুযায়ী বার্নের শ্রেণীবিভাগ- ৩ টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(i) আংশিক থিকনেন বার্ন বা সুপারফিসিয়াল বার্ন,

(ii) ডিপ-ডারমাল বার্ন,

(iii) ফুল থিনেস বার্ন।

বার্নকে আবার তিনটি ডিগ্রীতে বিভক্ত করা যায়। যথা-

(i) ১ম ডিগ্রী : শুধু ইপিডার্মিস আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত স্থান লাল বর্ণ ধারন করে।

(ii) ২য় ডিগ্রী: আক্রান্ত স্থানে ফোস্কা পড়ে এবং সম্পূর্ণ ইপিডার্মিস বিনষ্ট হয়।

(iii) ৩য় ডিগ্রী: সম্পূর্ণ ত্বক বিনষ্ট হয় এবং সাথে সাবকিউটেনাস টিস্যু ও ধ্বংস হতে পারে

স্ক্যান্ড এর সংজ্ঞা: আর্দ্র তাপ দ্বারা সৃষ্ট টিস্যু ড্যামেজকে, স্ক্যান্ড (ঝলসানো) বলে।

প্রশ্নঃ আগুনে পোড়া রোগীর মৃত্যুর কারণগুলি লিখ।

আগুনে পোড়া মৃত্যুর কারণসমূহ নিম্নরূপঃ

ক) তাৎক্ষণিক:

(i) অত্যাধিক ব্যথার কারণে প্রাইমারী বা নিউরোজেনিক শক (মৃত্যু কয়েক ঘন্টার মধ্যে হতে পারে)

(ii) সেকেন্ডারী বা হাইপোভলেমিক শক (মৃত্যু ১ম দুই দিনের মধ্যে হতে পারে)

(iii) দম বন্ধ হওয়া- কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও ধোঁয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের সহিত ফুসফুসে প্রবেশের ফলে।

(iv) প্লাজমার পরিমাণ হ্রাস: হাইপোভলেমিয়া শক মৃত্যু

খ) দেরীতেঃ

(i) হাইপোভলেমিয়া→ রেনাল ফেইলিওয়র

(ii) পোড়াক্ষতে সিস্টেমিক শোষন ও ক্রিয়ার ফলে টক্সিন উৎপন্ন হয়।

(iii) ইফেকশন ও সেপসিস।

(iv) আঘাতজনিত শ্বাসবদ্ধ হওয়া।

(v) কারলিং আলসার হাইপোভলেমিয়া হেমোরেজ হেমাটেমেসিস ও মেলিনা→ শক।

প্রশ্ন: পোড়াক্ষতের সংজ্ঞা দাও এবং ইহার জটিলতাসমূহ লিখ। 

পোড়াক্ষতের সংজ্ঞাঃ

শুষ্ক তাপ বা আগুনের দ্বারা পোড়াকে, পোড়াক্ষত বলে।

পোড়াক্ষতের জটিলতাসমূহ:

শক, টক্সিমিয়া, নেক্রোসিস, সেপসিস, নেফ্রাইটিস, মায়োকার্ডিয়াল ইনফেকশন, পাকস্থলী ও ডিওডেনামে ক্ষত, টিটেনাস, সংকোচন ও শারীরিক বিকৃতি ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ পোড়া ক্ষতের “রুল অব নাইন” লিখ।

পোড়া ক্ষতের “রুল অব নাইন” নিম্নরূপঃ

“রুল অব নাইন” একটি হিসাবের পদ্ধতি যা পোড়া (Burn) ক্ষতজনিত শরীরের পৃষ্ঠের পরিমাণ নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতি শরীরের বিভিন্ন অংশকে একটি নির্দিষ্ট শতাংশের মাধ্যমে ভাগ করে, যাতে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা দ্রুত নির্ধারণ করতে পারেন পোড়া ক্ষতের তীব্রতা এবং চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন।

এটি ব্যবহৃত হয় সাধারণত বৃহৎ বা গুরুতর পোড়া ক্ষত নির্ণয়ে এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরিতে। “রুল অব নাইন” পদ্ধতি ১০ বছরের উপরের বয়সের মানুষের জন্য প্রযোজ্য। শিশুদের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে।

শরীরের অংশ অনুযায়ী “রুল অব নাইন”

শরীরের অংশশতাংশ (%)
মাথা ও গলা৯%
এক হাত৯%
একটি পা১৮%
শরীরের সামনের অংশ১৮%
শরীরের পেছনের অংশ১৮%
বুকে এবং পেটে১৮%
প্রজনন অঙ্গ১%

ব্যবহারের উদ্দেশ্য

  • ক্লিনিক্যাল পর্যবেক্ষণ: পোড়া ক্ষত বৃহৎ হলে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের হিসাবের মাধ্যমে তার পরিমাণ জানা যায়।
  • ফ্লুইড রিসাসিটেশন: সঠিক পরিমাণ তরল প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য।
  • চিকিৎসা সিদ্ধান্ত নেওয়া: ক্ষতগ্রস্ত অংশের পরিমাণ অনুযায়ী চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা।

“রুল অব নাইন” ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, যা রোগীর জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রশ্নঃ বার্ন ও স্ক্যান্ড এর মধ্যে পার্থক্যসমূহ লিখ। বা, অগ্নিদগ্ধ ও ঝলসানো এর মধ্যে পার্থক্য লিখ।

বার্ন ও স্ক্যান্ড এর মধ্যে পার্থক্য:

বিষয়বার্ন (Burn)স্ক্যান্ড (Scald)
সংজ্ঞাতাপ, রাসায়নিক পদার্থ, বৈদ্যুতিক বা রেডিয়েশন দ্বারা ত্বক বা শরীরের অভ্যন্তরীণ অংশে সৃষ্ট ক্ষত।গরম পানি, বাষ্প বা অন্যান্য তরল পদার্থের কারণে ত্বক বা শরীরের ক্ষতি।
কারণতাপ, বৈদ্যুতিক শক, রাসায়নিক পদার্থ, রেডিয়েশন, সূর্যের আলো, ফ্ল্যাশ বা আগুন।গরম পানি, বাষ্প, গরম তরল বা তেল।
প্রকৃতিবার্ন সাধারণত তীব্র তাপের মাধ্যমে তৈরি হয় এবং বিভিন্ন স্তরের ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।স্ক্যান্ড সাধারণত তরল বা গরম পানির সংস্পর্শে হওয়া থেকে তৈরি হয়।
ক্ষতবার্নের ক্ষত ত্বকের বিভিন্ন স্তর (এপিডার্মিস, ডার্মিস, সাবকুটেনিয়াস টিস্যু) সহ গভীরতর হতে পারে।স্ক্যান্ডের ক্ষত সাধারণত ত্বকের বাইরের স্তরে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এটি তীব্র হতে পারে।
ধরনবার্নের তিনটি স্তর: প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডিগ্রি।স্ক্যান্ডও তিনটি স্তরে হতে পারে, তবে এটি সাধারণত ত্বকের বাইরের অংশে সীমাবদ্ধ থাকে।
প্রধান লক্ষণত্বকে তীব্র তাপ, ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, ব্যথা, ফোলা, রক্তক্ষরণ বা মচকানো।গরম পানি বা তরল স্পর্শের পরে ত্বকে লালভাব, ব্যথা, ফোলা, ও পুড়িয়ে যাওয়া।
ফুলে ওঠা (Edema)বার্নে ফুলে ওঠা (Edema) প্রায়ই ঘটে, বিশেষত দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডিগ্রি বার্নে।স্ক্যান্ডে সাধারণত ত্বক বেশি ফুলে ওঠে না, তবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের স্ক্যান্ডেও ফুলে ওঠা দেখা যায়।

সংক্ষেপে পার্থক্য:

  • বার্ন প্রধানত তাপ, বৈদ্যুতিক শক বা রাসায়নিক পদার্থের কারণে ঘটে, যেখানে স্ক্যান্ড গরম তরল বা পানি থেকে ঘটে।
  • বার্নে ত্বক বা টিস্যুর গভীরতর ক্ষতি হতে পারে, তবে স্ক্যান্ডে সাধারণত বাইরের ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রশ্নঃ পোড়া ক্ষতের ব্যবস্থাপনা লিখ। ২০১১, ১৩, ১৪

পোড়া ক্ষতের ব্যবস্থাপনাঃ

পোড়া (Burn) একটি গুরুতর অবস্থা, যার চিকিৎসা দ্রুত এবং সঠিকভাবে করতে হয়। পোড়া ক্ষতের তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নিচে পোড়া ক্ষতের ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তরের নির্দেশনা দেওয়া হল।

১. প্রাথমিক সহায়তা (First Aid)

  • গরম পদার্থের সংস্পর্শ বন্ধ করা: পোড়া ঘটলে প্রথম কাজ হল গরম পদার্থ বা আগুনের সংস্পর্শ থেকে আক্রান্ত অংশকে সরিয়ে নেওয়া। গরম তরল বা অগ্নিকাণ্ডে আক্রান্ত হলে, দ্রুত আক্রান্ত স্থানকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। গরম পানি বা বাষ্প হলে তাৎক্ষণিকভাবে পানি দিয়ে স্থানটি ধুয়ে দিতে হবে।
  • শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখা: রোগীকে ঠাণ্ডা এবং উষ্ণ রাখুন। পোড়া থেকে শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে, তাই রোগীকে তাপ প্রদান করুন।
  • ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা করা: গরম তাপ বা পোড়া অংশ যদি ঠাণ্ডা পানি দ্বারা ধোয়া হয়, তবে এটিকে বেশি সময় ধরে (১৫-২০ মিনিট) ধোয়া উচিত, যাতে তাপের প্রভাব কমে যায়।
  • কভারিং বা ড্রেসিং: পোড়া অংশে কোনো কাপড় বা কাপড়ের ফিতে লাগানোর থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি ত্বকের সাথে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। একটি পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা ড্রেসিং দিয়ে আচ্ছাদন করুন।

২. ফ্লুইড রিসাসিটেশন (Fluid Resuscitation)

  • ফ্লুইড থেরাপি: গুরুতর পোড়ার ক্ষেত্রে রোগীকে যথাযথ ফ্লুইড দেওয়া প্রয়োজন যাতে শরীরের জলশূন্যতা পূর্ণ করা যায়। প্রাথমিকভাবে ল্যাকটেটেড রিংগার সলিউশন বা ইউরোলিংক সলিউশন দেওয়া যেতে পারে।
  • “রুল অব নাইন” পদ্ধতি: পোড়া আঘাতের পরিমাণ হিসাব করতে রুল অব নাইন ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে নির্ধারণ করা যায় কতটুকু তরল শরীরকে দেওয়া হবে।
  • তরলের পরিমাণ: প্রথম দুই ঘণ্টায় ৫০% ফ্লুইড এবং বাকি ৫০% পরবর্তী দুই ঘণ্টায় দেওয়া হয়।

৩. পোড়া ক্ষতের চিকিৎসা (Burn Treatment)

  • প্রথম ডিগ্রী বার্ন: ত্বকের উপরের স্তর পুড়ে যায়, এটি সাধারণত সহজে নিরাময়যোগ্য। গরম পানি বা সোপ দিয়ে স্থানটি ধুয়ে শুকিয়ে নিন এবং অ্যালো ভেরা জেল বা অন্য সুরক্ষা ক্রিম প্রয়োগ করতে পারেন।
  • দ্বিতীয় ডিগ্রী বার্ন: ত্বকের গভীর স্তর পুড়ে যায় এবং ফোলা ও বুদবুদ হতে পারে। এতে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম বা বার্ন ড্রেসিং ব্যবহার করা উচিত। যদি ক্ষত গভীর হয় তবে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা উচিত।
  • তৃতীয় ডিগ্রী বার্ন: ত্বকের সব স্তর এবং কখনও কখনও নিচের টিস্যু বা অঙ্গও পুড়ে যায়। এতে অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি, ড্রেসিং এবং প্রয়োজনে চিরুনির মাধ্যমে ক্ষত পরিষ্কার করা হয়। এই ধরনের পোড়া গুরুতর এবং হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন।

৪. ব্যথা নিরসন (Pain Management)

  • পোড়া রোগীদের জন্য ব্যথা নিরসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত অ্যানালজেসিক ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে গুরুতর ক্ষতগ্রস্ত রোগীদের জন্য মরফিন বা অন্য শক্তিশালী ব্যথানাশক ব্যবহার করা হয়।

৫. ইনফেকশন প্রতিরোধ (Infection Prevention)

  • পোড়া স্থানে সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিসেপ্টিক সলিউশন বা বার্ন ক্রিম ব্যবহার করা উচিত।
  • ক্ষতস্থানে ড্রেসিং পরিবর্তন এবং পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।

৬. মেডিক্যাল মনিটরিং (Medical Monitoring)

  • পোড়া রোগীর রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস এবং তরল সরবরাহ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
  • রোগীকে মনিটরিং ইউনিটে (ICU) স্থানান্তর করার প্রয়োজন হলে তা করা উচিত।

৭. সাধারণ সুস্থতা এবং পুনর্বাসন (Rehabilitation and Recovery)

  • একবার পোড়া ক্ষত নিরাময় হয়ে গেলে, রোগীকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এটি গা ছোঁয়া, শারীরিক থেরাপি, মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুস্থতার জন্য সাহায্য করতে পারে।

৮. মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা (Psychological Support)

  • গুরুতর পোড়া রোগীরা মানসিক চাপের শিকার হতে পারে। তাদেরকে মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা বা কাউন্সেলিং দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

 

ফোড়া (abscess)

প্রশ্ন: ফোড়ার সংজ্ঞা ও চিকিৎসা লিখ।

ফোড়া (abscess):

কোন জায়গায় স্থানীয়ভাবে পুঁজ জমা হওয়াকে ফোড়া’ (অ্যাবসেস) বলে। ইহার শুরুতে আক্রান্ত এলাকা লাল ও গরম হয় এবং ফুলে যায়। পরে নরম হয় এবং ফ্লাকচুয়েশন পাওয়া যায়। যদি পুঁজ বাহির করে ফেলানো না হয় তবে ইহা সারফেসের দিকে বা ফাঁপা অংশ বা পুরা এবং পেরিটোনিয়াল কেভিটিতে ফেটে যায়। জীবাণু সংক্রমণের লক্ষণসমূহ পাওয়া যায়। যথা- ভাল না লাগা, জ্বর, ব্যথা, ক্ষুধামন্দা। রক্তে লিউকোসাইটোসিস পাওয়া যায়।

চিকিৎসাঃ

(i) পুঁজ বাহির করে ফেলতে হবে এবং সঠিক লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(ii) ভালভাবে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেস করতে হবে।

(iii) রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে।

সেলুলাইটিস (cellulitis)

প্রশ্ন: সেলুলাইটিসের সংজ্ঞা লিখ।

সেলুলাইটিস (cellulitis) :

ত্বকের নিচের টিস্যু বিস্তৃত প্রদাহকে সেলুলাইটিস বলে। কিন্তু

ইহা শরীরের যে কোন কানেকটিভ টিস্যু প্লেনেও হতে পারে। যথা- পেলভিস, কাঁধ, ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ সেলুলাইটিসের প্যাথলজি লিখ।

প্যাথলজি: সাধারণতঃ স্ট্রেপটোকক্কাস বিটা হেমোলাইটিকাস নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হয়।

প্রশ্নঃ সেলুলাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

সেলুলাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার (লক্ষণ ও চিহ্ন)ঃ

(i) আক্রান্ত এলাকায় স্থায়ী ব্যথা হয় এবং পুঁজ হলে টাটায়।

(ii) জ্বর- দুর্বলতা, কিছু ভাল না লাগা এবং ক্ষুধামন্দা।

(iii) স্থানীয় পরীক্ষা-

(ক) রোগী খুব টক্সিক দেখায়। আক্রান্ত এলাকা ফুলে যায়, গরম এবং শক্ত হয়। টিপ দিলে খুব ব্যথা লাগে এবং কোন নির্দিষ্ট সীমা পাওয়া যায় না।

(খ) আক্রান্ত এলাকা প্রথমে একটু শক্ত বা বাদামী রং হয়, পরে নরম হয়।

(গ) আক্রান্ত এলাকায় ফোস্কা হতে পারে। মারাত্বক অবস্থায় ত্বকে গ্যাংরিন হয়। ফ্লাকচুয়েশন পাওয়া যেতে পারে।

(ঘ) রক্তে পলিমরফ নিউক্লিয়ার লিউকোসাইটটোসিস পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: সেলুলাইটিসের চিকিৎসা লিখ।

চিকিৎসা:

রক্ষনশীল: (i) রোগীকে বিছানায় বিশ্রামে রাখতে হবে।

(ii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবস্থা করতে হবে।

(iii) অপারেটিভ : ফ্লাকচুয়েশন থাকলে পুঁজ বাহির করার জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।

প্রশ্ন: সেলুলাইটিসের জটিলতা লিখ।

সেলুলাইটিসের জটিলতা:

(i) গ্যাংরিন এবং আক্রান্ত এলাকার চর্ম চটা ধরে উঠে যাওয়া।

(ii) সেপ্টিসেমিয়া।

(iii) আশে-পাশের এলাকায় জীবাণু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।

বয়েল (boils)

প্রশ্নঃ বয়েল কাকে বলে? এর জটিলতা লিখ।

বয়েল (boils):

Hiar follicle এর একিউট স্ট্যাফাইলোকক্কাস ইনফেকশনকে বয়েলস বলে। ইহার সঙ্গে perifolliculitis থাকে। ইহাকে শেষ পর্যন্ত সাপুরেশন সেন্টাল নেক্রোসিস হয়। প্রথমে ব্যথাযুক্ত ও শক্ত দেখা দেয়, যা ক্রমশঃ বড় হতে থাকে। ২ দিন পর মধ্যখানে নরম হয় এবং পুঁজ নির্গত হতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইহার পর এই অবস্থা সাবসাইট হয়। যে বয়েল সাপুরেটিভ ছাড়াই সাবসাইড করে, তাকে ব্লাইন্ড বয়েল বলে। ঘাড়ের পিছনেই বয়েল বেশী হয়। ইহা ছাড়া পেরিএনাল অঞ্চলে ও এক্সটারনাল অডিটরী মিটাসে হয়।

বয়েলের জটিলতাঃ

(i) সেলুলাইটিস বিশেষ করে দুর্বল রোগীদের।

(ii) আক্রান্ত এলাকার সঙ্গে সম্পৃক্ত লিম্ফ নোযের ইনফেকশন

(iii) সেকেন্ডারী বয়েলসঃ পার্শ্ববর্তী হেয়ার ফলিকলস এর ইনফেকশনের জন্য।

কার্বাঙ্কল (carbuncles)

প্রশ্নঃ কার্বাঙ্কল কাকে বলে? ইহার কারণ লিখ।

কার্বাঙ্কল (carbuncles): ত্বকের নীচের টিস্যুর নেক্রোসিসকে কার্বাঙ্কল বলে। অনেকগুলি সাইনাসের মাধ্যমে ইহা হতে রস বাহির হয়।

কারণ: স্ট্রাফাইলোকক্কাস অরিয়াস নামক জীবাণু সংক্রমণের ফলে ইহা হয়। ইহা সাধারণতঃ বহুমূত্র ও অন্যান্য রোগের সঙ্গে পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ কার্বাঙ্কলের লক্ষণাবলী লিখ।

কার্বাঞ্চলের লক্ষণাবলী:

স্থানীয়:

(i) ব্যথাযুক্ত শক্ত এলাকা।

(ii) আক্রান্ত এলাকা বাদামী রং ধারণ করে এবং অনেকগুলি সাইনাস তৈরী হয় যার ভিতর দিয়ে পুঁজ বাহির হয়ে আসে।

(iii) ত্বক লাল রং ধারণ করে এবং ইডিমেটাল হয়।

সাধারণ লক্ষণঃ

(i) জ্বর- ১০১-১০৩° ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে।

(ii) জিহ্বা- শুকনা ও আস্তরযুক্ত হয়।

(iii) শীর্ণতা ও বহুমূত্র রোগ সঙ্গে থাকতে পারে।

পরীক্ষা:

(ক) প্রস্রাব পরীক্ষা- প্রস্রাবে সুগারের উপস্থিতি থাকবে।

(খ) আরবিএস- রক্তে সুগারের পরিমাণ নির্ণয়, রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া যেতে পারে।

(খ) কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট- রক্তের উপাদানের তারতম্য পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন: কার্বাঙ্কলের চিকিৎসা লিখ।

কার্বাঙ্কলের চিকিৎসাঃ

(i) রোগীকে বিছানায় বিশ্রামে রাখতে হবে।

(ii) বহুমূত্র রোগ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

(iii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(iv) প্রথমে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু উপরের ব্যবস্থাপনা ব্যর্থ হলে অপারেশন দরকার হয়।

(v) ইহার চটা কেটে ফেলতে হবে এবং আক্রান্ত এলাকা অনেক বড় হলে স্কীন গ্রাফটিং করতে হবে।

প্রশ্নঃ কার্বাঙ্কলের লক্ষণাবলী লিখ।

কার্বাঙ্কলের লক্ষণাবলী:

স্থানীয়:

(i) ব্যথাযুক্ত শক্ত এলাকা।

(ii) আক্রান্ত এলাকা বাদামী রং ধারণ করে এবং অনেকগুলি সাইনাস তৈরী হয় যার ভিতর দিয়ে পুঁজ বাহির হয়ে আসে।

(iii) ত্বক লাল রং ধারণ করে এবং ইডিমেটাল হয়।

সাধারণ লক্ষণঃ

(i) জ্বর- ১০১-১০৩° ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠে।

(ii) জিহ্বা- শুকনা ও আস্তরযুক্ত হয়।

(iii) শীর্ণতা ও বহুমূত্র রোগ সঙ্গে থাকতে পারে।

পরীক্ষা:

(ক) প্রস্রাব পরীক্ষা- প্রস্রাবে সুগারের উপস্থিতি থাকবে।

(খ) আরবিএস- রক্তে সুগারের পরিমাণ নির্ণয়, রক্তে সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া যেতে পারে।

(খ) কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট- রক্তের উপাদানের তারতম্য পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন: কার্বাঙ্কলের চিকিৎসা লিখ।

কার্বাঙ্কলের চিকিৎসাঃ

(i) রোগীকে বিছানায় বিশ্রামে রাখতে হবে।

(ii) বহুমূত্র রোগ থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

(iii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(iv) প্রথমে অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু উপরের ব্যবস্থাপনা ব্যর্থ হলে অপারেশন দরকার হয়।

(v) ইহার চটা কেটে ফেলতে হবে এবং আক্রান্ত এলাকা অনেক বড় হলে স্কীন গ্রাফটিং করতে হবে।

গ্যাংগ্রীন (gangrene)

প্রশ্ন: গ্যাংগ্রীন কি? ইহার শ্রেণীবিভাগ লিখ। ২০১৪, ১৬ বা, গ্যাংগ্রীনের সংজ্ঞা লিখ। এর শ্রেণীবিভাগ কর। ২০০৮, ১০ ১২ বা, গ্যাংগ্রীন কাকে বলে? ইহা কত প্রকার ও কি কি?

গ্যাংগ্রীনের সংজ্ঞা:

গ্যাংগ্রীন হচ্ছে শরীরের কোন অংশের পচন যুক্ত বাহ্যিক মৃত্যু।

প্রকারভেদ: ইহা তিন প্রকার। যথা ক) শুষ্ক গ্যাংগ্রীন, খ) আর্দ্র বা ময়েন্ট গ্যাংগ্রীন ও গ) গ্যাস গ্যাংগ্রীন।

প্রশ্নঃ গ্যাংগ্রীনের কারণসমূহ লিখ।

গ্যাংগ্রীনের কারণসমূহঃ

(i) আঘাত জনিতঃ

ক) সরাসরি আঘাত- যেমন- ল্যাসারেটেড ইনজুরি যেখানে প্রধান আর্টারী আক্রান্ত হয়।

খ) পরোক্ষ আঘাত- গ্যাংগ্রীন হতে কিছু দূরে ভেসেল ইনজুরী।

(ii) জীবাণু সংক্রমণজনিত: কার্বাঙ্কল, গ্যাস গ্যাংগ্রীনের জীবাণুসহ বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমনের ফলে।

(iii) ফিজিক্যাল এজেন্ট: বার্ন, স্ক্যান্ড, বিদ্যুৎ, এসিড, ক্ষার ইত্যাদি।

(iv) রোগজনিত কারণেঃ ক) রেনড’স ডিজিজ, খ) আরগোট পয়জনিং,

গ) সেনাইল অ্যাথেরোস্কেলেরোসিস, ঘ) থ্রোম্বোসিস, ৩) ডায়াবেটিস মেলিটাস।

(v) ভেনাস গ্যাংগ্রীন: ভিসারাল নিওপ্লাজম এবং পলিসাইথেমিয়াতে

পেরিফেরাল ভেইনে সম্প্রসারিত ভেনাস থ্রোম্বোসিস ইহার কারণ।

প্রশ্নঃ ড্রাই ও ময়েস্ট গ্যাংগ্রীনের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ০৮, ১৩, ১৪ বা, শুদ্ধ ও আর্দ্র গ্যাংগ্রীনের মধ্যে পার্থক্য লিখ।

শুষ্ক ও আর্দ্র গ্যাংগ্রীনের মধ্যে পার্থক্যঃ

১।

ফ্যাক্টর

শুষ্ক গ্যাংগ্রীন

ক) আটারী আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়।

খ) ভেনাস রিটার্ন ঠিক থাকে।

গ) কোন ইনফেকশন থাকে না।

৩।

কাল

সারফেস

৪। গন্ধ

কোঁচকানো, সংঙ্কুচিত এবং স্পর্শ করলে তৈলাক্ত মনে হয়।

রক্তাভ

ফুলা থাকে এবং ইহার উপরের ফোস্কাগুলোতে রক্তাভ ফ্লুইড থাকে।

দুর্গন্ধ থাকে।

৫।

সীমারেখা

সাধারণতঃ কোন গন্ধ নাই।

সুনির্দিষ্ট সীমারেখা তৈরি হয়।

কোন সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে না।

৬।

টক্সিক

সাধারণত টক্সিক লক্ষণ থাকে না।

ভীষণ টক্সিক।

প্রশ্ন: গ্যাংগ্রীনের ক্লিনিক্যাল ফিচার বা উপসর্গসমূহ লিখ।

গ্যাংগ্রীনের ক্লিনিক্যাল ফিচার বা উপসর্গসমূহ:

গ্যাংগ্রীনের প্রধান ৫টি সাইন (চিহ্ন) হচ্ছেঃ

(i) রং এর পরিবর্তন, যা রক্তবর্ণ হতে কালো পর্যন্ত হয়।

(ii) পালস এর অনুপস্থিতি।

(iii) তাপ না থাকা।

(iv) অনুভূতি না থাকা।

(v) আক্রান্ত অংশ অচল হয়ে যাওয়া।

আর্দ্র গ্যাংগ্রীন

ক) আর্টারী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।

খ) আর্টারী ও ভেইন উভয়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

গ) ইনফেকশন এবং পিউট্রিফ্যাকশন সব সময়ই থাকবে।

প্রশ্ন : ময়েস্ট গ্যাংগ্রীনের চিকিৎসা লিখ। ২০০৮, ১২, ১৪, ১৬ ময়েস্ট গ্যাংগ্রীনের চিকিৎসাঃ

(i) রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

(ii) ইনফেকশন নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা করতে হবে।

(iii) মৃত কোষ ও পুঁজ অপসারন করতে হবে।

(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(v) আক্রান্ত এরিয়ায় এন্টিসেপটিক লোশন দ্বারা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করতে হবে। ঘনঘন ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করতে হবে।

(vi) সার্জিক্যাল চিকিৎসা: অপারেশন- প্রয়োজনে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলে দিতে হবে।

প্রশ্ন: ড্রাই গ্যাংগ্রীনের চিকিৎসা লিখ। ২০১৬

ড্রাই গ্যাংগ্রীনের চিকিৎসাঃ

(i) রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

(ii) ইনফেকশন নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা করতে হবে।

(iii) মৃত কোষ অপসারণ করতে হবে।

(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(v) আক্রান্ত এরিয়ায় এন্টিসেপটিক লোশন দ্বারা ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করতে হবে। ঘনঘন ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করতে হবে।

(vi) সার্জিক্যাল চিকিৎসা: অপারেশন করে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলে দিতে হবে।

প্রশ্নঃ গ্যাংগ্রীন ও নেক্রোসিস এর মধ্যে পার্থক্য লিখ। ২০১৬

গ্যাংগ্রীন ও নেক্রোসিস এর মধ্যে পার্থক্য:

গ্যাংগ্রীন

নেক্রোসিস

পায়োজেনিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা কোষের পচন হলে, তাকে গ্যাংগ্রীন বলে।

সাংঘাতিক আঘাতের ফলে যখন কোষের মৃত্যু ঘটে, তাকে নেক্রোসিস বলে।

আর্টারী রক্ত প্রবাহ বন্ধ হওয়া কারণে ইহা সংঘটিত হয়।

আর্টারী ও ভেইন উভয় বন্ধ হওয়ার কারণে সৃষ্টি হয়।

ইহাতে দুর্গন্ধ থাকে বা থাকে না।

ইহাতে দুর্গন্ধ থাকে না।

ইহাতে কোষের মৃত্যু ও পচন উভয় ঘটে।

ইহাতে কোষের মৃত্যু ঘটে।

ইহাতে কোষের পচন ঘটে।

د

কোষের আকৃতি পরিবর্তন ঘটে।

8

Injuries to the bones – ফ্রাকচার

প্রশ্ন: অস্থিভঙ্গ ও অস্থি সন্ধিচ্যুতির সংজ্ঞা লিখ। ১৫ অস্থিভঙ্গ ও অস্থি সন্ধিচ্যুতির সংজ্ঞা:

অস্থিভঙ্গের সংজ্ঞা:

অস্থির স্বাভাবিক স্ট্রাকচারের অখন্ডতা নষ্ট হওয়াকে, ফ্রাকচার (অস্থিভঙ্গ) বলা হয়। (fracture is a break in the normal Structural continuity of a bone)

অস্থি সন্ধিচ্যুতির সংজ্ঞা:

কোন অস্থিসন্ধি স্থল হতে অস্থিসন্ধির অন্তর্ভূক্ত অস্থিপ্রান্ত তার হ্যাভাবিক স্থান হতে যদি সরে যায় বা স্থানচ্যূত হয়, তাকে অস্থিসন্ধিচ্যুতি বলা হয়। (A dislocation is a total disruption of oint with no remaining contact between the articular urfaces.)।

প্রশ্ন: অস্থিভঙ্গের কারণ লিখ। ১০

অস্থিভঙ্গের কারণতত্ত্ব:

* সরাসরি আঘাত ফলে।

∎) পরোক্ষ আঘাত কারণে।

ⅰ) মাংসপেশী সংকোচন জনিত আঘাত কারণে।

-) রোগজনিত কারণ- অষ্টিওআর্থ্রাইটিস, অষ্ট্রিওম্যালাসিয়া, অট্রিওসাকোমা ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮

অস্থিভঙ্গের ক্লিনিক্যাল ফিচার:

প্যাথলজিক্যাল ফ্রাকচার ছাড়া সকল ক্ষেত্রেই ইনজুরির ইতিহাস থাকে।

(i) ফ্রাকচারের সঙ্গে সঙ্গেই আক্রান্ত অংশে ভীষণ ব্যথা হয় এবং ফ্রাকচারের স্থান নড়াচড়া করলে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

(ii) আক্রান্ত অঙ্গ সচল থাকে না, ফুলে যাবে এবং স্বাভাবিক কার্যকারিতা নষ্ট হবে।

(iii) ফ্রাকচারের স্থানে চাপ দিলে টেন্ডারনেস পাওয়া যায়।

(iv) কয়েক ঘন্টার মধ্যে আক্রান্ত স্থান ফুলে যায়।

(v) হাড়ের ভাঙ্গা প্রান্তদ্বয় স্থানচ্যুতি হলে আক্রান্ত স্থান বিকৃত আকার ধারন করে। বিকৃতির ধরন নির্ভর করে আঘাতের প্রকৃতি এবং অবস্থার উপর।

(vi) ভাঙ্গা হাড় অস্বাভাবিক মুভমেন্ট করে।

(vii) আক্রান্ত অংশ নাড়ালে কিপিটাস (Crepitus) শব্দ পাওয়া যায়। (হাড়ের প্রান্তগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘর্ষণ লাগার কারণ)। কিন্তু এই নড়াচড়ায় টিস্যুর অনেক ক্ষতি করতে পারে।

(viii) হাড়ের অখন্ডতা থাকে না।

(ix) এক্স-রে: ফ্রাকচার দেখা যায় এবং ফ্রাকচারের এনাটমী জানা যায়। ভাঙ্গা হাড়ের উভয় দিক থেকে এক্স-রে নিলে ভাঙ্গার ধরন স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।

প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের শ্রেণীবিভাগ কর। ২০০৯, ১১, ১৩

ফ্রাকচারের শ্রেণীবিভাগঃ

(A) ফ্রাকচার লাইনের অবস্থান অনুযায়ী (According to direction of fracture line)-

(1) ট্রান্সর্ভাস ফ্রাকচার (Transverse fracture), (2) অবলিক ফ্রাকচার (Oblique fracture), (3) স্পাইরাল ফ্রাকচার (Spiral fracture)।

(B) ফ্রাকচারের দৃশ্যতা অনুযায়ী (According to communication with the exertion)-

(1) সরল বা ক্লোজড অস্থিভঙ্গ [Simple (Closed) fracture].

(2) যৌগিক অস্থিভঙ্গ বা খোলা অস্থিভঙ্গ [Compound (open)] fracture].

(C) অস্থিভঙ্গের খন্ডতার উপর নির্ভর করে (According to number of fragments of bones)-

(1) সিম্পল অস্থিভঙ্গ (Simple)- শুধুমাত্র দ্বিখন্ডিত (only two fragments).

(2) বহুখন্ডিত অস্থিভঙ্গ (Comminuted)- হাড় অনেক খন্ড হয় (Multiple fragments).

(D) অস্থিসন্ধি সাথে সংযুক্তজনিত শ্রেণীবিভাগ (According to involvement of joint)

(1) ইন্টারভাসকুলার (Intravascular)- জয়েন্ট ক্যাপস্যুলসহ (within Joint capsule)

(2) এক্সটা ক্যাপস্যালার (Extra capsular) – জয়েন্ট ক্যাপস্যুলের বাহিরে (Outside joint capsule.)

(E) কারণ অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ (According to etiology)

(1) আঘাত (Traumatic)

(a) সরাসরি আঘাত (Due to direct trauma) (b) পরোক্ষ আঘাত (Due to indirect trauma)

(2) রোগজনিত বা প্যথলজিক্যাল [Pathological (Spontaneous)]

(a) জনন্মগত (Congenital) (Ontogenesis Imperfecta)

(b) প্রদাহজনিত (Inflammatory) – (Chronic osteomyelitis)

(৫) নিউপ্লাস্টিক বা টিউমারজনিত (Neoplastic) – (Ostesarcoma, Secondaries)

(e) অন্যান্য Others- Paget’s disease

(F) এনাটমীক্যাল পজিশন অনুযায়ী (According to anatomical site of involvement):

(1) ফিমারের নেক এ ফ্রাকচার (Fracture neck of femur)

(2) হিউমেরাসে শ্যাফট এ ফ্রাকচার (Fracture shaft of humerus) etc.

(G) হাড়ের কর্টিকেল সংযুক্ত থাকার উপর নির্ভর করে (According to cortical involvement of bone):

(1) সম্পূর্ণ বা কমপ্লিট (Complete)- উভয় পাশের কটেক্স সংযুক্ত থাকে (both side of cortex involved)

(2) গ্রীণ স্ট্রিকস (Green stick) – এক পাশের কটেক্স সংযুক্ত থাকে। (One side of cortex involve)

(H) অন্যান্য শ্রেণীবিভাগ (Miscellaneous):

(1) অন্তঃপ্রবেশী ফ্রাকচার (Impacted fracture): ভাঙ্গা খন্ড দুইটি একে অন্যের সাথে আটকে থাকে (Fragments locked into each other).

(2) নিম্নগ বা ডিপ্রেসড (Depressed fracture): অস্থিভঙ্গ অংশ চাপে নিচু হয়ে থাকে (fractured part is indented)

প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের জটিলতা বর্ণনা কর। ১০, ১৫ বা, অস্থিভঙ্গের জটিলতাসমূহ উল্লেখ কর। ০৯

ফ্রাকচারের জটিলতা:

(i) ত্বক-কম্পাউন্ড ফ্রাকচারের ত্বক ছিঁড়ে যেতে পারে।

(ii) ভাসকুলার ড্যামেজ- হেমাটোমা দ্বারা বা ভাঙ্গা অস্থি ডিসপ্লেজমেন্ট হয়ে লিম্বের প্রধান আর্টারি ড্যামেজ হতে পারে।

(iii) নিউরোলজিক্যাল- নার্ভ ইনজুরি, স্পাইনাল কর্ড এবং রুট ইনজুরি- স্পাইনাল কলামে ইনজুরির কারণে।

(iv) মাংস পেশীতে ইনজুরি- মাংস পেশীর ফাইবার ছিঁড়ে যাওয়া।

(v) টেনডন- টেনডন ছিঁড়ে যাওয়া।

(vi) ভিসারা ইনজুরি- অ্যাবডোমিনাল/থোরাসিক ভিসারা, মেন- ইনজুরি, বির ফ্রাকচারের কারণে, ইউরেথ্রার ইনজুরি, পেলভিসে ফ্রাকচারের কারণে।

তাৎক্ষনিক স্থানীয় জটিলতা পরবর্তী ফলাফল-

(i) ত্বকের নেক্রোসিস ও গ্যাংরিন।

(ii) ভেনাস থ্রোম্বোসিস।

(iii) ভিসরাল জটিলতা।

(iv) জয়েন্ট ইনফেকশন, বোন ইনফেকশন।

দেরীতে জটিলতাঃ

(i) জয়েন্ট – Stiffness, Secondary, Osteoarthritis

(ii) হাড়- ক্রনিক ইনফেকশনের কারণে অস্টিওমাইয়ে লাইটিস দেরীতে জোড়া লাগা, জোড়া না লাগা, ত্রুটিপূর্ণ জোড়া লাগা, অস্টিওপোরোসিস, পুনঃ ফ্রাকচার গ্রোথ ডিসটাবনেস

(iii) মাংসপেশী – মাংসপেশীর এট্রপি।

প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের জোড়ালাগার পদ্ধতি লিখ। ১১, ১৩

অস্থিভঙ্গের জোড়ালাগার পদ্ধতি:

(i) আঘাত প্রাপ্ত স্থানটি ভালভাবে বেঁধে দিতে হবে এবং রক্তপাত বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।

(ii) অত্যধিক রক্তক্ষয় হলে রক্ত সঞ্চালন করতে হবে।

(iii) ব্যথা কমানোর জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(iv) রিডাকশন- শিশুদের স্কিন ট্রাকশন ও যুবক এবং বৃদ্ধদের স্ক্যালিট্যাল ট্রাকশন করতে হবে।

(v) অনড়করণ (Immobilisation) ইমোবলাইজেশন- প্ল্যাষ্টার অব প্যারিস দ্বারা প্লাষ্টার করে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত এরূপভাবে রাখতে হবে যাতে ভগ্ন অস্থি প্রান্ত কোন ক্রমে নড়াচড়া করতে সমর্থ না হয়।

(vi) পূণর্বাসন (Rehabilitation) রিহ্যাবিলেটেশন : রোগীকে পূনর্বাসনের জন্য উপদেশ দিতে হবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে না পড়ে সে জন্য সন্ধিস্থলের সঞ্চালন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু রাখতে উপদেশ দিতে হবে।

প্রশ্ন: একটানা ট্রাকশন কত প্রকার ও কি কি? বর্ণনা কর।

একটানা ট্রাকশন:

একটানা ট্রাকশন তিন ধরনের। যথা-

(i) মধ্যাকর্ষণের মাধ্যমে ট্রাকশন- শুধু আপার লিম্ব (upper limb)-এর ফ্রাকচারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এখানে হাতের কব্জি Sling দ্বারা ঝুলিয়ে রাখলে Arm এর ওজন একটানা ট্রাকশনের কাজ করে।

(ii) Skin বা সারফেস ট্রাকশন- শুধুমাত্র Lower Limb এর ফ্রাকচারে প্রয়োগ করা হয়। ভাঙ্গা বোনের distal অংশে ত্বক Shave করে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে শেষ প্রান্তে ওজন ঝুলানো হয়। এ ওজন ট্রাকশন দিতে থাকে এবং মাংস পেশীর Spasm কে Over come করে। পায়ের পাতা উঁচু করে রেখে শরীরের ওজন দ্বারা Counter traction দেয়া হয়। জয়েন্ট মুক্ত রাখতে হবে।

(iii) Skeletal traction ভাঙ্গা বোনের dista অংশে ভিতর দিয়ে তার বা Steinmann’s Pin প্রবেশ করে এর সঙ্গে ওজন ঝুলিয়ে ট্রাকশন দেয়া হয়। যেমন- ফিমার ফ্রাকচারের ক্ষেত্রে টিবিয়ার উপরের অংশে tibial tuberclc-এর পিছনে পিন ঢুকিয়ে ট্রাকশন দেয়া হয়।

প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১১, ১৩

চিকিৎসাঃ

১। সাধারণ ব্যবস্থাপনাঃ

(i) ভাঙ্গা অংশের নড়াচড়া বন্ধ করতে হবে। এটি স্থানীয় Splint দ্বারা করা যেতে পারে।

(ii) ব্যথার চিকিৎসা- লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(iii) রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

(iv) হেমোরেজের চিকিৎসা- বড় লম্বা বোন, Splint এবং Pelvic fracture এর ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণ রক্তক্ষরণ হয়।

(v) রক্তের গ্রুপিং ও ক্রসম্যাসিং করতে হবে।

(vi) প্রয়োজনে রক্ত দিতে হবে।

(vii) শক থাকলে তারও চিকিৎসা করতে হবে।

(viii) শরীরের অন্যান্য স্থানে কোন ইনজুরি থাকলে চিকিৎসা করতে হবে এবং Sepsis প্রতিরোধ করতে হবে।

(ix) গ্যাংগ্রীন ও টিটেনাস প্রতিরোধ করতে হবে।

২। স্থানীয় চিকিৎসাঃ

ফ্রাকচারের স্থানীয় চিকিৎসার ধাপ: ৩টি। যথা-

(i) Reduction, (ii) Immobilisation, (iii) Rehabilitation

১। হাড় বসানো বা যথাস্থিতিকরন (Reduction):

ভাঙ্গা হাড়কে স্বাভাবিক এনাটমীতে ফিরিয়ে আনাকে Reduction & ablignment বলা হয়। এটি দুইভাবে ভাগ করা যায়

(1) ক্লোজ রিডাকশন (Closed reduction) এবং

(2) ওপেন রিডাকশন Open reduction (Operative reduction and internal fixation)

(a) Manipulative reduction and

(b) Reduction by continuous traction (একটানা ট্রাকশনের মাধ্যমে)

১। ম্যানিপুলেটিভ রিডাকশন: এক্ষেত্রে ফ্রাকচার স্থানের উপরিভাগ ত্বক অক্ষত থাকে, তাই জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকে না। রোগীকে অজ্ঞান করে বা স্থানীয়ভাবে অবশ করে নিতে হবে। ভাঙ্গা হাড় টেনে ভেঙ্গে যাওয়ার শেষ দুটিকে মুখোমুখী করার পর হাতের সাহায্যে ভাঙ্গা প্রাপ্তদ্বয় স্বাভাবিক এনাটমিক্যাল পজিশনে আনা হয়।

২। একটানা ট্রাকশনের মাধ্যমে রিডাকশন: দীর্ঘ হাড় ফ্রাকচারের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে একটানা ট্রাকশন প্রয়োগ করা হয়। এতে Overlap বা Overriding deformity ঠিক হয়ে যায়।

Open reduction (Operative reduction) :

যে সব ক্ষেত্রে ক্লোজ রিডাকশন করা সম্ভব হয় না বা পরবর্তীকালে রিডাকশন অবস্থা রক্ষা করা সম্ভব হয় না, সে সকল ক্ষেত্রে Open reduction করা হয়। Open reduction সাধারণত স্ক্রু, প্লেট, প্যাঁচানো তার দ্বারা Internal fixation করা হয়।

Immobilisation (আক্রান্ত স্থানের নড়াচড়া বন্ধ করা):

Immobilisation এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাঙ্গা অস্থির নড়াচড়া বন্ধ করার মাধ্যমে রিডাকশন অবস্থা ধরে রাখা এবং জোড়া লাগতে সাহায্য করা, তথা মেল-ইউনিয়ন (malunion) এবং নন-ইউনিয়ন (nonunion) প্রতিহত করা। আক্রান্ত অংশের উপরের এবং নীচের জয়েন্টসহ ইমমোবিলাইজেশন (Immobilisation) করতে হবে। নড়াচড়া বন্ধ না করলে খন্ডসমূহের (Fragment) মাঝে তৈরী হওয়া তরুণ গ্রানুলেশন টিস্যু দূর্বল হয়ে যাবে বা ছিঁড়ে যাবে।

Rehabilitation (Soft tissue এর চিকিৎসা):

Immobilisation এর দিন থেকেই ফ্রাকচারের উপরের এবং নিচের জয়েন্টের মুভমেন্ট উৎসাহিত করতে হবে। লিম্ব উঁচু করে রাখলে Oedema ফ্লুইড drain হতে সাহায্য করে।

মুভমেন্টের ধরন : একটিভ মুভমেন্ট করতে হবে। কখনই Possive মুভমেন্ট করা যাবে না। এতে জয়েন্ট Stiffness বা trauma হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

প্রশ্নঃ অস্থিভঙ্গে জোড়া না লাগার ক্ষেত্রের ব্যবস্থাপনা কি? ১০

দেরীতে জোড়া লাগা এবং জোড়া না লাগা (Delayed and Non- Union):

সাধারণতঃ শিশুর হিউমেরাস এর অবলিক ভঙ্গ জোড়া লাগতে সময় লাগে ৩ সপ্তাহ। পূর্ণ বয়স্কদের একই অস্থি ভংগ জোড়া লাগতে সময় লাগে ৬ সপ্তাহ। পূর্ণ বয়স্কদের টিবিয়া এর ট্রান্সর্ভাস (transverse) ভঙ্গ জোড়া লাগতে সময় লাগে ১২ সপ্তাহ। এবং পূর্ণ বয়স্কদের tibia এর comminuted ভঙ্গ জোড়া লাগতে সময় লাগে ১২ হতে ২৪ সপ্তাহ। অনেক সময় যে সময়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, অস্থির ভগ্ন অংশ জোড়া লাগতে তার চেয়ে বেশি সময় লাগে। যে সময়ে অস্থিভঙ্গ জোড়া লাগার কথা সে সময়ে অস্থিভঙ্গের স্থানে যদি অস্বাভাবিক নড়াচড়া হয়, ব্যথা হয় এবং টিপ দিলে ব্যথা লাগে তবে তাকে delayed Union বা দেরীতে জোড়া লাগা বলে। Callus দেরিতে Ossificetion হওয়াই এর কারণ এবং এক্স-রে করলে এটা ভাল দেখা যায় না এবং অস্থির ভগ্ন প্রান্তগুলির মধ্যে ফাঁক দেখা যায়। অস্থি সম্পূর্ণরূপে জোড়া না লাগা পর্যন্ত Delayed Union পদ্ধতি চলতে থাকে। এই Healing পদ্ধতি যদি অস্থি সম্পূর্ণরূপে জোড়া লাগার পূর্বেই থেমে যায় তবে ভগ্ন স্থানে অস্বাভাবিক নড়াচড়া থেকে যায় এবং এক্স-রে করলে স্থায়ীভাবে অস্থিভঙ্গ দেখা যায়। এই জাতীয় অস্থিভঙ্গকে Non-Union বা জোড়া না লাগা বলে। Pathologically অস্থির ভগ্ন প্রান্তগুলি fibrous টিস্যু দ্বারা জোড়া লাগানো থাকে এবং false joint cavity তৈরী করে। একে সিউডোআপ্রোসিস (Pseudarthrosis) বলে।

প্রশ্ন: গ্রীণস্টিক ফ্রাকচার কি? এর ব্যবস্থাপনা লিখ।০৮ গ্রীণস্টিক ফ্রাকচার:

রেডিয়াস ও আলনার শ্যাফ্ট এর ফ্রাকচারকে গ্রীণস্টিক ফ্রাকচার বলে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই ফ্রাকচার কমন দেখা যায়। খেলাধুলার সময়, সামান্য উঁচু থেকে পড়ার কারণে ইহা হতে পারে।

গ্রীণস্টিক ফ্রাকচার ব্যবস্থাপনা:

(i) অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাড় সেট করার পর প্লাস্টার ব্যান্ডেস করে কনুই ভাঁজ করে বাহুর মধ্যস্থলে অনড় অবস্থায় রাখতে হবে।

(ii) যখন দুইটি হাড় ভেঙ্গে যায়, তখন অপারেশন করে প্লেট ও স্ত্র দ্বারা আঁটকিয়ে সেট করে দিতে কবে।

(iii) প্লাস্টার করে ৪-৬ সপ্তাহ রেখে দিলে জোড়া লেগে যায়।

প্রশ্ন: কলিস ফ্রাকচার কাকে বলে? এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

কলিস ফ্রাকচার: আব্রাহাম কলিস নামে ডাবলিনের একজন সার্জন এই ফ্রাকচারের বর্ণনা দেন, তাঁর নামানুসারে এ ফ্রাকচারকে কলিস ফ্রাকচার বলা হয়। হাতের কব্জি সন্ধির ১.৫ ইঞ্চি উপরে রেডিয়ামে এ ফ্রাকচার

হয়। একে কলিস ফ্রাকচার বলে।

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) বয়স্ক মহিলাদের কমন।

(ii) আঘাতের ইতিহাস পাওয়া যাবে। আঘাতের পরিমাণ, ডিসপ্লেসমেন্টের পরিমাণ এবং আঘাত ও ক্ষত কতদিন আগে হয়েছে তার উপর লক্ষণাবলী নির্ভর করে।

(iii) স্থানীয়ভাবে ব্যথা থাকবে। (iv) আক্রান্ত স্থান ফোলে যাবে।

(v) আক্রান্ত স্থান নাড়াচড়ায় অস্বাভাবিক হবে। (vi) স্পর্শকাতর হবে। (vii) কার্যকরী ক্ষমতা লোপ বা কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হবে।

প্রশ্ন: কলিস ফ্রাকচারের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১৫

কলিস ফ্রাকচার: কজি অস্থি সন্ধির ঠিক উপরে ১ ইঞ্চির মধ্যে রেডিয়াস হাড় ভেঙ্গে গেলে, তাকে কলিস ফ্রাকচার বলে।

কারণ: আঘাত, দূর্ঘটনা ইত্যাদির কারণে হতে পারে।

লক্ষণ: স্থানীয়ভাবে ব্যথা, স্ফীতি, অস্বাভাবিক নড়াচড়া, স্পর্শকাতরা এবং কার্যকরী ক্ষমতা নষ্ট হয়।

ব্যবস্থাপনা:

(i) ব্যথা কমানোর জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(ii) ম্যানিপুলেশন দ্বারা রিডাকশন করে প্লাস্টার ব্যাক-স্লাব দ্বারা Immobilise করতে হবে। ফ্রাকচারের ২৪ ঘন্টা পরে এ ব্যাক-স্লাব সম্পূর্ণ করে Colle’s প্লাস্টারে রূপান্তরিত করতে হবে।

(iii) ম্যানিপুলেশন পদ্ধতিতে- জেনারেল অ্যানাস্থেসিয়া দিয়ে হাত দ্বারা টেনে রিডাকশন করতে হবে। হ্যান্ডসেক পদ্ধতিতে হাত ধরে টেনে ধরতে হবে এবং আস্তে আস্তে ডিফরমিটি আরো বাড়াতে হবে। পরে রেডিয়াসের ছোট টুকরার পিছনে হাত দিয়ে সামনে ও নীচের দিকে এবং আলনার দিকে চাপ দিয়ে রিডাকশন করতে হবে। হাত সম্পূর্ণ প্রোনেশন করে লোয়ার সেগমেন্টের ulnar adduction করতে হবে। ডরসাল প্লাস্টার স্লাব দ্বারা Immobilise করতে হবে। এটি হাতের কজির রেডিয়াল পাশ দিয়ে ঘুড়িয়ে দিতে হবে। যাতে আলনার ডেভিয়েশন ঠিক থাকে। কুনুইর একটু নিচ থেকে মেটাকারপাল হেড পর্যন্ত বিস্তৃত প্লাস্টার করতে হবে। ২/৩ দিনের মধ্যে ফুলা কমে গেলে

Full cast দিতে হবে। এ কাষ্ট ৬ সপ্তাহ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যাতে স্টিফনেস না হয়, সেজন্য স্কন্ধ, কুনুই ও আঙ্গুলের ব্যায়াম করতে হবে।

 প্রশ্নঃ কলিস ফ্রাকচারের জটিলতা লিখ।

কলিস ফ্রাকচারের জটিলতা:

(i) জয়েন্ট স্টিফনেস :- বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হাত নড়াচড়া না করার ফলে এটি হয়। সাধারণতঃ স্কন্ধ, কুনুই ও আঙ্গুলের সন্ধি আক্রান্ত হয়।

(ii) সাদেক্স অ্যাট্রোফি (Sudeek’s atrophy) :- আক্রান্ত হাত

নড়াচড়া না করলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, ফলে স্টিফনেসের সঙ্গে

সঙ্গে হাতে ব্যথা হয়, ফুলে যায়, চকচক করে এবং গরম হয়। (iii) ভাঙ্গা অস্থির উপর ঘর্ষণের ফলে এক্সটেনসর পলিসিস লংগাস টেনডন ছিঁড়ে যায়।

(iv) ডিসপ্লেসমেন্ট মারাত্মক হলে মিডিয়ান নার্ভ, রেডিয়াল আর্টারী ও টেনডনের ইনজুরি হয়।

(v) ম্যাল-ইউনিয়ন।

হেড ইনজুরি (Head injury)

প্রশ্ন: হেড ইনজুরির সংজ্ঞা ও শ্রেণীবিভাগ উল্লেখ কর। ০৯ হেড ইনজুরির সংজ্ঞাঃ

মস্তিষ্ক, মাথার খুলি বা ইন্টার-সেরিব্রাল ভেসেল পৃথকভাবে বা একত্রে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে নিউরোনাল বিকৃতি হয়ে ক্লিনিক্যাল সাইন ও সিম্পটমস প্রকাশ করে, তাকে হেড ইনজুরি বলে।

(Head injury means injury to brain, skull or intracranial vessels either separately or together causing neuronal damage and producing clinical symptoms and sings.)

হেড ইনজুরির শ্রেণিবিভাগ:

হেড ইনজুরি প্রধানতঃ তিন প্রকার। যথা-

(i) সেরিব্রালের আঘাত, (ii) ইন্টার ক্রেনিয়াল, (iii) ইন্টার স্কাল হেমোরেজ।

মেরুদন্ডের ইনজুরী (Spinal injury)

প্রশ্ন: মেরুদন্ডের ইনজুরী বর্ণনা দাও।

মেরুদন্ডের ইনজুরী বর্ণনা:

ট্রান্সর্ভাস এবং স্পাইনাস প্রোসেস ফ্রাকচার: ট্রান্সভার্স প্রসেস ফ্রাকচার শুধু লাম্বার রিজিয়ন এ ঘটে। সরাসরি আঘাতের ফলে ইহা ঘটে এবং কিডনীতে আঘাত লাগার খুবই সম্ভাবনা থাকে। কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার দরকার নাই। কিন্তু রোগীকে ২৪ ঘন্টার জন্য নজরে রাখতে হবে, কোন ভিসেরাল আঘাত হয়েছে কিনা দেখার জন্য। পিঠে সরাসরি আঘাত করলে স্পাইনাল প্রসেস ভেঙ্গে যেতে পারে।

ভার্টিব্রেরাল বডির ক্রাস ফ্রাকচার: পূর্ণ বয়স্ক অবস্থায় যে কোন সময় এই ফ্রাকচার হতে পারে। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই ফ্রাকচার হওয়ার জন্য অল্প আঘাতই যথেষ্ট। থোরাক্স-লাম্বার স্পাইনের যে কোন জায়গায় এই ফ্রাকচার হতে পারে। তবে নীচের দিকের থোরাসিক স্পাইনেই ইহা বেশী হয় এবং জোর করে স্পাইন ফ্লেক্সড (flexd) করলে এই ফ্রাকচার হয়। ভার্টিব্রাল বডি চুপসিয়ে wedge-shepe ধারণ এবং কাইফোসিস (kyphosis) যায়। উঁচু হতে পড়ে গেলে একাধিক ভার্টিব্রাল বডিতে এই ফ্রাকচার হতে পারে।

Incomplete spinal cord ইনজুরি:

এক্ষেত্রে cord-এর continuity থাকে। আংশিক কর্ড ইনজুরি ৪ প্রকারের হতে পারে- (১) এন্টিরিয়র কর্ড সিন্ড্রোম: এতে corticospinal এবং spinothalamic tracts আক্রান্ত হয়। এখানে দুর্বলতা এবং ব্যথা ও তাপানুভূতি লোপ পায়। পস্টেরিয়র কলামের দ্বারা জয়েন্ট পজিশন অনুভূতি এবং vibration অক্ষত থাকে।

(২) পস্টিরিয়র কর্ড সিন্ড্রোম: এখানে উপরের অবস্থার বিপরীত ঘটে। (৩) Brown-Sequard সিন্ড্রোম: এত কর্ডের hemisection ঘটে। এখানে আক্রান্ত পাশে দুর্বলতা এবং বিপরীত পাশে ব্যথা ও তাপানুভূতি লোপ পায়। স্পাইনাল কর্ডের penetrating ইনজুরিতে সাধারণতঃ এ সিন্ড্রোম দেখা যায়।

(৪) Central কর্ড সিন্ড্রোম: এটি বার্ধক্যে, সার্ভিক্যাল spondylosis এবং hyperextension ইনজুরিতে ঘটে। এখানে চার হাতপায়ে অসম্পূর্ণ paresis হয়, সঙ্গে বিক্ষিপ্ত sensory loss। লোয়ার লিম্বের তুলনায় আপার লিম্ব মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়। এখানে plantar reflex এক্সটেনসর হয় এবং spastic paresis-এর লক্ষণ থাকে। তবে অন্যান্যগুলোর তুলনায় এর প্রোগনোসিস ভাল।

Infections and tumours of bones and joints.

প্রশ্ন: টিউমার কি? এর শ্রেণীবিভাগ কর। ২০০৮, ১২ বা, টিউমার কাকে বলে?

টিউমার এর সংজ্ঞাঃ

টিউমার হচ্ছে কোন টিস্যুর (Tissue) অস্বাভাবিক বর্ধন যেখানে কোষগুলি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত বিভাজিত হয় এবং যে উত্তেজকের দ্বারা এই বৃদ্ধি সংঘটিত হয় তা সরিয়ে নিলেও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে।

(A neoplasm is an abnormal mass of tissue, the growth of which exceeds and is uncoordinated with that of normal tissues and persists in the same excesssive manner often cessation of the stimuli which evoked the change. Exception for example carcinoma in situ is not mass.)

টিউমারের কারণ লিখ। ১৬

টিউমারের কারণঃ

(i) বংশগত কারণে হতে পারে।

(ii) বিজ্ঞানীদের গবেষণায়- অনকোজিন নামক এক প্রকার জিনকে ইহার জন্য দায়ী করা হয়।

(iii) আঘাতজনিত কারণে হতে পারে।

(iv) খাদ্যে ভেজালজনিত কারণে হতে পারে।

(v) পরিবেশগত কারণে হতে পারে।

(vi) সাইকোসি মায়াজমের প্রভাব ইহার মূল কারণ।

প্রশ্নঃ টিউমারের শ্রেণীবিভাগ লিখ।

টিউমারের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Tumours):

1) আচরনের উপর ভিত্তি করে (Classification of behavior) : a) বিনাইন টিউমার (Benign tumour- নির্দোষ) : বিনাইন টিউমার তেমন ক্ষতিকারক নহে।

b) ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (Malignant tumour- ক্ষতিকারক): একটি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হতে পারে কার্সিনোমা (Carcinoma) অথবা সার্কোমা (Sarcoma).

=> এপিথেলিয়াম টিস্যুতে (Epithelial tissue) ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলে, তাকে কার্সিনোমা বলে।

=> মেসেনকাইমাল টিস্যুর (Mesenchymal tissue) ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলে, তাকে সার্কোমা (Sarcoma) বলে।

=> সব ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের নামই হচ্ছে ক্যান্সার (Cancer is the term for all malignant tumours)

2) Classification on tissue of origin:

a. Epilhelial Tumours.

b. Mesenchymal Tumours.

c. Mixed Tumours.

d. Tumours of totipoten cells- teratomas.

প্রশ্ন: বিনাইন টিউমার কাকে বলে?

বিনাইন টিউমার:

যে সকল টিউমারের টিউমার কোষ পারিপার্শ্বিক সুস্থ্য টিস্যুর মধ্যে প্রবেশ করে না, উৎপত্তি স্থলেই এরা সীমাবদ্ধ থাকে, অবক্ষয়ের জন্য কোষগুলি বিনষ্ট হয় কিন্তু সংযোজক টিস্যু অক্ষত থাকে এবং এ অক্ষত সংযোজক টিস্যু টিউমারের চারিপাশে আবরনী সৃষ্টি করে, তাকে বিনাইন টিউমার বলে।

প্রশ্ন : বিনাইন টিউমারের শ্রেণীবিভাগ কর।

বিনাইন টিউমারের শ্রেণীবিভাগ:

সাধারণতঃ বিনাইন শ্রেণীর টিউমার স্থান অনুযায়ী নামকরণ।

(i) ত্বকের টিউমার- Papilloma, (ii) মাংস পেশীর টিউমার- Myoma, (iii) আঁশপূর্ণ সংযোগকারী তন্তুর টিউমার- (Fibroma), ফ্যাটপূর্ণ স্থানের Lipoma (iv) অস্থির টিউমার- Chondroma এবং অষ্টিওমা Osteoma (v) গ্রন্থির টিউমার- Adenoma; (vi) স্নায়ুর টিউমার- Neuroma;

প্রশ্ন: বিনাইন টিউমারের বৈশিষ্ট্য লিখ।

বিনাইন টিউমারের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Benign Tumours):

(i) Differentiation- বিনাইন টিউমারকে সহজেই অন্য টিউমার থেকে আলাদা করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ- লিওমায়োমা

(Leiomyoma) স্বাভাবিক স্মর্থ মাসেলে হয়। ইহাতে এ্যানাপ্লাসিয়াস (আদি কোষান্তর) হয় না। মাইটোসিস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক।

(ii) a. Rate of growth- বিনাইন টিউমারের গ্রোথ ধীরগতি।

b. Size- বিনাইন টিউমার সাধারণতঃ ছোট হয় কিন্তু ইউটেরাস

ফাইব্রয়েড ও ওভারীয়ান সিস্টোঅ্যাডেনোমাস (Cystademomas) খুব বড় সাইজের হয়।

c. Stroma is well-formed (ভিত্তি তন্ত্র স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে)

(iii) a. Capsule (কোষ)- বিনাইন টিউমার ক্যাপসুল দ্বারা আবৃত থাকে। কানেকটিভ টিস্যুর উপর চাপ দেয়। হোস্ট টিস্যু (Host Tissue) থেকে টিউমারকে আলাদা করে ক্যাপসুল।

b. No local invasion in the surrounding tissue.

(iv) No metastasis (মেট্যাস্টোসিস)- বিনাইন টিউমার মেট্যাস্টোসিস হয় না।

(v) Clinical effects: খুবই নির্দোষ কিন্তু মাঝে মধ্যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রশ্ন: ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের সংজ্ঞা লিখ।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের সংজ্ঞা:

যে সকল টিউমার উৎপন্ন স্থানে আবদ্ধ থাকে না এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়, পারিপার্শ্বিক সুস্থ্য টিস্যু আক্রান্ত হয়, আক্রান্ত কোষগুলি ব্লাড ভেসেলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কারণে শরীরে অন্যান্য স্থানের টিস্যুতে বা দেহাঙ্গে টিউমার সৃষ্টি করে, তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে। এরা উৎপত্তি স্থান থেকে এরা সীমাবদ্ধ থাকে না, প্রত্যক্ষভাবে শিরা পথে রক্ত প্রবাহের সঙ্গে এবং লসিকা নালী পথ দিয়ে বিস্তার লাভ করে।

প্রশ্ন: ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্য লিখ।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্য (Charactereistics of Malignant tumours):

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ৪টি ফেজ এ বিভক্ত (four phases)। যথা-

i) Transformation, i.e, malignant change in the target cells.

ii) Growth of the tansformed cells.

iii) Local invasion and

iv) Metastasis

প্রশ্ন : বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ০৮,১২, ১৬

বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের মধ্যে পার্থক্য:

বিনাইন টিউমার

বিনাইন টিউমারে কোষের আকৃতি স্বাভাবিক থাকে।

ইহার নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন স্বাভাবিক।

ইহার বৃদ্ধি মন্থর।

কোষ বিভাজন- মাইটোসিস হয় না।

ইহাতে হেমোরেজ ও নেক্রোসিস সামান্য পরিমাণে হতে পারে বা নাও হতে পারে।

এ টিউমার ক্যাপসুল দ্বারা আবৃত।

ইহার স্থানান্তর হয় না।

ইহার ভবিষ্যৎ পরিণতি রোগীর মৃত্যু হয় না।

ম্যালিগন্যান্ট টিউমার

১ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারে কোষের আকৃতি অস্বাভাবিক থাকে।

ইহার নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন অস্বাভাবিক, হাইপারক্রোমিক।

8

ইহার বৃদ্ধি দ্রুত।

কোষ বিভাজন- মাইটোসিস হয়।

ইহাতে হেমোরেজ ও নেক্রোসিস প্রচুর পরিমাণে হয়।

এ টিউমার ক্যাপসুল দ্বারা আবৃতবিহীন।

ইহার স্থানান্তর হয় অর্থাৎ এক হতে অন্য স্থানে ছড়ায়।

ইহার ভবিষ্যৎ পরিণতি রোগীর মৃত্যু হয়।

প্রশ্নঃ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের শ্রেণিবিভাগ লিখ। ০৯

ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের শ্রেণিবিভাগ:

১। কার্সিনোমা (Carcinoma):

(i) স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা (Squamous cell carcinoma)

(ii) বেসাল সেল কার্সিনোমা (Basal cell carcinoma)

(iii) ট্রান্সিশনাল সেল কার্সিনোমা (Transitional cell carcinoma)

(iv) এডেনোকার্সিনোমা (Adenocarcinoma)

(v) সিস্টএডেনোকার্সিনোমা (Cystadenocarcinoma)

(vi) পেপিলারী কার্সিনোমা (Papillary carcinoma)

২। সার্কোমা (Sarcoma)

(i) ফাইব্রোসার্কোমা (Fibrosarcoma)

(ii) লিপোসার্কোমা (Liposarcoma)

(iii) লিওমায়োসার্কোমা (Leiomyosarcoma)

(iv) (Rhabdomyosarcoma)

(v) এনজিওসার্কোমা (Angiosarcoma)

(vi) লিম্ফোএনজিওসার্কোমা (Lymphangiosarcoma)

(vii) অস্টিয়োসার্কোমা (Osteosarcoma)

(viii) কন্ডোসার্কোমা (Chondrosarcoma)

1.

(ix) ম্যালিগন্যান্ট মেনিনজিওমা (Malignant meningioma)

(x) লিউকেমিয়া (Leukaemia)

(xi) লিম্ফসাইটিক লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা। (Lymphocytic

leukaemia and lymphoma)

(xii) (Malignant mixed tumour of salivary gland)

প্রশ্নঃ কার্সিনোমা ও সার্কোমার মধ্যে পার্থক্য লিখ। ০৮, ০৯ কার্সিনোমা ও সার্কোমার মধ্যে পার্থক্য:

কার্সিনোমা:

কার্সিনোমা সাধারণতঃ ১ ৫০বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সে হয়ে থাকে।

ইহা উপঝিল্লিক টিস্যুতে হয়ে থাকে

ইহাতে রক্তপাত সহজে হয় না।

ইহাতে নেক্রোসিস অবস্থা হয় ৪ না।

ইহাতে কোষসমূহ দলবদ্ধভাবে সাজানো থাকে।

লিম্ফ ভেসেল দ্বারা সংক্রমিত ৬ হয়।

ইহাতে প্রতিটি স্ট্রোমা কোষ দলকে ঘিরে রাখে।

সার্কোমা

সার্কোমা সাধারণতঃ ১০- ২০ বছর বা অল্প বয়সে হয়ে থাকে।

ইহা সংযোগকারী টিস্যুতে হয়।

অনেক সময় রক্তপাত হয়ে থাকে।

ইহাতে সাধারণত হয়। নেক্রোসিস

ইহাতে কোষগুলি দলবদ্ধভাবে থাকে না।

ব্লাড ভেসেল দ্বারা সংক্রমিত হয়।

ইহাতে স্ট্রোমা প্রতিটি কোষকে আলাদা করে রাখে।

অস্টিওসারকোমা

প্রশ্ন : অস্টিওসারকোমা-এর লক্ষণাবলি/ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।০৮

অস্টিওসারকোমা-এর ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) আঘাতের ইতিহাস থাকতে পারে।

(ii) বয়স : ১০ থেকে ২০ বৎসর, ২০ বৎসর বয়সের আগেই প্রায় ৮০% রোগী ডাক্তারের কাছে আসে। ম্যালিগন্যান্ট ডিজিজ বা Paget’s ডিজিজে অতিরিক্ত রেডিরেশন দেয়ার ফলে বৃদ্ধ বয়সে হতে পারে। এগুলো খুবই ম্যালিগন্যান্ট এবং fatal।

(iii) অস্টিওসারকোমা সাধারণতঃ লং বোনের মেটাফাইসিসে (অনেক সময় হাটুর চতুর্পাশে) ব্যথাযুক্ত, দ্রুতবর্ধনশীল টিউমার নিয়ে চিকিৎসকের নিকট আসে। আক্রান্ত বোনে সার্বক্ষণিক ব্যথা থাকে।

(iv) ফুলা: ব্যথার পর এটি দেখা দেয় ও খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অনেক বড় আকারের হতে পারে। এর consistency firm হতে পারে এবং স্থানীয় তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

(v) টিউমারে থ্রিল, পালসেশন বা মারমার থাকতে পারে (অতিরিক্ত

ভাসকুলারিটির কারণে)।

(vi) টিউমারের উপরের ত্বক টানটান হয় এবং চক্চক্ করে। ভেইনগুলো স্পষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত ত্বকে ক্ষত হয়।

(vii) প্যাথলজিক্যাল ফ্রাকচার তেমন হয় না।

(viii) শেষ পর্যায়ে বুকে ব্যথা, কাঁশি, কাঁশির সঙ্গে রক্ত, অল্প অল্প জ্বর দেখা দেয় (ফুসফুসে মেটাসটেসিসের কারণে)।

প্রশ্নঃ অস্টিওসারকোমা-এর লক্ষণাবলি ও ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৮ মেটাস্টেসিস বিহীন :

(১) প্রাথমিক deep X-Ray থেরাপিঃ- স্থানীয়ভাবে প্রয়োগ করা হয়। ৪-৬ সপ্তাহ পর মেটাস্টেসিসের জন্য চেকআপ করতে হয়। মেটাসটেসিস না থাকলে এক জয়েন্ট উপরে অ্যাম্পুটেশন করা হয়। অথবা সঙ্গে সঙ্গে এক জয়েন্ট উপরে অ্যাম্পুটেশন করতে হবে।

মেটাস্টেসিস সহ : Deep X-Ray থেরাপি এবং অ্যাম্পুটেশন (টিউমারে ভীষণ ব্যথা বা fungating হলে palliative measure হিসেবে)

ব্যবস্থাপনা:

১। লক্ষণানুসারে প্রযোজ্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ : কার্বো এনিমেলিস, অরাম মেট, আয়োডিয়াম, ফসফরাস, সিম্ফাইটাম।

২। চিকিৎসা সাধারণতঃ রেডিক্যাল লোকাল সার্জারি ও কেমোথেরাপি একসঙ্গে দেয়া হয়। তবে amputation দরকার হতে পারে।

১২। প্রশ্ন: উইংস টিউমা-এর প্যাথলজি লিখ।

প্যাথলজি

খালি চোখে:

(i) হালকা ধূসর রং (দেখতে ব্রেন টিস্যুর মত)। ডিজেনারেশন কমন এবং ডিজেনারেটিভ টিস্যু পূজ এর মত দেখায়।

(ii) বোন destruction এবং পেরিঅস্টিয়ামের নীচে নতুন বোন ফরমেশন একই সঙ্গে দেখা যায়।

(iii) টিউমার অনেক বড় ও লবুলেটেড, সঙ্গে হেমোরেজিক এরিয়া

থাকে।

অনুবীক্ষণ যন্ত্রে : Stroma থাকে না। টিউমার সেলগুলো গোলাকার বা পলিহাইড্রাল, নিউক্লিয়াস গাঢ় রং নেয় এবং মাইটোসিস দেখা যায়।

সেলগুলো ব্লাড ভেসেলের চতুর্পাশে সাজানো থাকে।

প্রশ্নঃ উইংস টিউমা-এর বিস্তার লিখ।

বিস্তার:

(i) রক্তের মাধ্যমে অন্যান্য বোনে এবং শেষে ফুসফুসে।

(ii) লিম্ফেটিক দ্বারা কদাচিৎ।

(iii) সরাসরি infiltration

প্রশ্ন: উইংস টিউমা-এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) বয়স- ৫ থেকে ১৫ বৎসর (কমন)। আঘাতের ইতিহাস থাকতে পারে।

(ii) কমন site-লং বোনের shaft

(iii) লং বোনের মাঝামাঝি জায়গায় পুনঃ পুনঃ ব্যথা এবং সঙ্গে জ্বর। Throbbing ব্যথা হয় এবং রাত্রে বৃদ্ধি পায়। ব্যথার সময় swelling-

এর আকার বৃদ্ধি পায় এবং পরে ছোট হয়ে যায়। (৪) আস্তে আস্তে swelling ফেটে যায় এবং ত্বক fungate করে

(সাধারণতঃ সার্জিক্যাল exploration না করলে এটি ঘটে না)।

(৫) ধীরে ধীরে অন্যান্য বোনেও ব্যথা এবং ফুলা দেখা দেয়। প্যাথলজিক্যাল ফ্রাকচার কমন।

(৭) এনিমিয়া ও লিউকোসাইটোসিস থাকে।

(৮) X-Ray- বোন ফরমেশন ও বোন ডেস্ট্রাকশন একই সঙ্গে দেখা যায়।

চিকিৎসা: কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি দ্বারা ভাল ফল পাওয়া

যায়। অ্যাম্পুটেশন করারও প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।

স্তন ক্যান্সার (Breast – Infections and tumours of breast.)

প্রশ্নঃ স্তন ক্যান্সার কি?

স্তন ক্যান্সার:

ম্যালিগন্যান্ট রোগে মহিলাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ স্তন ক্যান্সার। যে সকল মহিলা সন্তান প্রসব করেছে এবং স্তন্য দান করেছে, তাদের তুলনায় নিঃসন্তান মহিলাদের মধ্যে এটা বেশি হয়। স্তন ক্যান্সারের সকল রোগীর মধ্যে ১% এর কম হচ্ছে পুরুষ রোগী। ৪০- ৫০ বৎসর বয়সীদের মধ্যে এটি কমন রোগ।

প্রশ্নঃ স্তন ক্যান্সারের শ্রেণিবিভাগ লিখ।

স্তন ক্যান্সারের শ্রেণিবিভাগ:

ক) ম্যাক্রোস্কোপিক শ্রেণী বিভাগঃ

(i) স্কিরাস কার্সিনোমা এ জাতীয় ক্যান্সারই সবচেয়ে বেশী হয়। টিউমার ছোট এবং শক্ত হয়। এটি কাটার সময় কাঁচা pear এর মত মনে হয়। এর খন্ডিত সারফেস দেখতে ধূসর, কনকেভ এবং হলুদ এরিয়া বিশিষ্ট।

(ii) অ্যাট্রোফিক স্কিরাসঃ ছোট স্তন বিশিষ্ট বৃদ্ধা মহিলাদের মধ্যে এগুলো বেশী দেখা যায়।

(iii) মেডুলারী কার্সিনোমা : টিউমার বড়, নরম এবং ধূসর প্রকৃতির।

খন্ডিত সারফেসে রক্ত ক্ষরণ ও পচন দেখা যায়।

(iv) প্যাপিলারী কার্সিনোমা : এটা ইন্ট্রাডাক্টাস বা ইন্টাসিস্টিক হতে পারে।

(v) একিউট ইনফ্লেমেটরী কার্সিনোমা : এটি দ্রুত বর্ধনশীল, খুবই অ্যানাপ্লাস্টিক টিউমার। গর্ভকালীন সময়ে বা ল্যাকটেশনের সময়ে এটা সচরাচর দেখা যায়।

খ) মাইক্রোস্কোপিক শ্রেণীবিভাগ:

স্তনের ক্যান্সার ডাক্ট বা অ্যালভিওলার ইপিথেলিয়াম বা স্তনের বোটার ডাক্টের হতে উৎপত্তি হয়।

(i) অ্যাডিনোকার্সিনোমা : এর acini গুলির গঠন ভালভাবে দেখা যায়।

(ii) স্ফেরোয়ডাল সেল কার্সিনোমা: স্কেরোয়ডাল সেলগুলি জটলা আকারে বা স্তম্ভাকারে সাজানো থাকে এবং কদাচিৎ acinus তৈরী করার উদ্যোগ দেখা যায়।

(iii) এনাপ্লাস্টিক কার্সিনোমা (মেডুলারী, এনসেফালয়েড): এটি খুবই সেল সমৃদ্ধ এবং infiltrate করে।

(iv) কলোয়েড কার্সিনোমা : এতে কলোয়েড ডিজেনারেশন ঘটে এবং টিপিক্যাল সিগনেট রিং সেল পাওয়া যায়।

(v) ইন্ট্রাডাক্ট কার্সিনোমা: এটি বড় আকারের মিল্ক ডাক্টে হয়। এটি এমনি এমনিও হতে পারে অথবা ডাক্ট প্যাপিলোমার ম্যালিগন্যান্ট ডিজেনারেশনের পরেও হতে পারে।

(vi) স্কোয়ামাস কার্সিনোমা : ডাক্ট এপিথেলিয়ামে স্কোয়ামাস মেটাপ্লাসিয়া হওয়ার পর হতে পারে।

(vii) প্যাপিলারী সিস্ট অ্যাডেনোকার্সিনোমা।

(viii) প্যাজেট্স ডিজিজ : ইন্ট্রাডাক্ট্রয়াল নিওপ্লাজমসহ এখানে হিস্টোলজীক্যালী ইন্ট্রা-ইপিডারমাল বিস্তৃতি দেখা যায়।

প্রশ্নঃ স্তন ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮ স্তন ক্যান্সারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) স্তনের মধ্যে lump হাতে অনুভব করা যায়।

(ii) সাধারণত শক্ত হয়।

(iii) প্রাথমিক স্তরে ব্যথা থাকে না।

(iv) স্তনের বোঁটা হতে রস ঝরতে থাকে বা সাম্প্রতিক রিট্রাকশন থাকে।

(v) অনেক সময় দূরবর্তী মেটাস্টেসিস দেখা যায় যেমন- এক্সিলারী লিম্ফ নোড বড় হওয়া, ফুসফুস, অস্থিতে মেটাস্টেসিস।

(vi) প্যাথলজিক্যাল ফ্রাকচার সরাসরি স্তন ক্যান্সারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

প্রশ্ন: স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা লিখ।

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা:

স্টেজ – ১ এবং স্টেজ-২: অধিকাংশ সার্জন এ দুই স্টেজে রেডিকেল মাস্টেকটমি পছন্দ করেন এ অপারেশনে সম্পূর্ণ স্তনের সঙ্গে পেকটোরালিস মেজোর, মাইনর মাংসপেশী এবং এক্সিলারী চর্বিসহ লিম্ফ নেড ফেলে দেয়া হয়।

স্টেজ-২ এই অপারেশনের পরে ইন্টারন্যাল ম্যামারী ও সুপরাক্লাভিকুলার লিম্ফ নোড এরিয়ায় রেডিওথেরাপি দিতে হবে। সম্প্রতি স্টেজ-১ ও স্টেজ-২ তে রেডিকেল মাস্টেকটমির পরিবর্তে সিম্পল মাস্টেকটমি এবং রেডিওথেরাপি দেয়ার কথা বলা হচ্ছে।

স্টেজ-৩: প্রইমারী টিউমার ফেলে দিলেই ভাল হওয়া সম্ভব নয় বিধায় রেডিকেল মাস্টেকটমি করা ঠিক নয়। প্যালিয়েটিভ চিকিৎসা হিসেবে স্থানীয় রেডিওথেরাপি দেয়া হয়। Fungating আলসার

সরিয়ে ফেলার জন্য প্রাইমারী টিউমার অনেক সময় অপারেশন করে ফেলে দিতে হবে।

স্টেজ-৪: এই স্তরে পেলিয়েটিভ রেডিওথেরাপি ও হরমোন থেরাপি দেয়া হয়। হরমোনাল ও কেমোথেরাপি সবল স্টেজেই (১ থেকে৪) দেয়া যায়।

সংক্ষেপে লিখঃ

ময়েস্ট গ্যাংগ্রীন: আর্টারী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আর্টারী ও ভেইন উভয়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইনফেকশন এবং পিউট্রিফ্যাকশন সব সময়ই থাকবে। আক্রান্ত এরিয়া বর্ণ রক্তাভ। সারফেস এরিয়া ফুলা থাকে এবং ইহার উপরের ফোস্কাগুলোতে রক্তাভ ফ্লুইড থাকে। অত্যন্ত দুর্গন্ধ থাকে। কোন সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে না। ভীষণ টক্সিক অবস্থা উৎপন্ন করে।

টক্সিমিয়া (Toxaemia): জীবন্ত ব্যাক্টেরিয়া দেহের কোন স্থানে অবস্থিত থেকে যে অন্তবিষ উৎপন্ন করে, উক্ত বিষ রক্তের সাথে মিশে টিস্যুর উপর যে কাজ করে রোগাবস্থা সৃষ্টি করে, তাকে টক্সিমিয়া বলে।

সেপ্টিসিমিয়ার সংজ্ঞা (septicaemia): কোন ক্ষত সৃষ্টিকারী জীবানু দেহ ও ক্ষতের পচন হতে এক প্রকার বিষ নির্গত হয়ে রক্তে মিশে রক্তকে বিষাক্ত করে, রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু দেহের কোন বিশেষ অংশে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রতিরোধকারী ইমিউনিটিকে দুর্বল করে, সম্পূর্ণ শরীরে প্রসার লাভ করে এবং রক্তের মধ্যেই জীবাণুসমূহ স্থিতি, বৃদ্ধি ও ব্যাপ্তি ঘটায়, তাকে সেপ্টিসিমিয়া বা

বিষাক্ততা বলে।

ব্যাক্টেরিমিয়া সংজ্ঞা (bacteraemia): যখন কোন বাহ্যিক লক্ষণ প্রকাশ না করে ব্যাক্টেরিয়া গুপ্তভাবে টিস্যু হতে রক্তে প্রবেশ করে, তাকে ব্যাক্টেরিমিয়া বলে।

Diseases of alimentary tract ক্যান্সার অব ইসোফেগাস (Cancer of Oesophagus)

প্রশ্নঃ ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর সংজ্ঞা লিখ।

ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর সংজ্ঞা:

ইসোফেগাসের (অন্ননালী) ভিতরে বা বাহিরে এক প্রকার মেলিগন্যান্ট টিউমার সৃষ্টি হয়ে তা ক্রমশঃ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে ইহার স্বাভাবিক কোষসমূহকে অস্বাভাবিক আকৃতির ও ম্যালিগন্যান্ট করে, ক্যান্সার অব ইসোফেগাস বা অন্ননালীর ক্যান্সার বলে।

প্রশ্নঃ ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর কারণতত্ত্ব লিখ।

ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর কারণতত্ত্ব:

(i) অনকোজিন ইহা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

(ii) বংশগত কারণে

(iii) পরিবেশগত কারণে

(iv) অভ্যাসগত কারণ- ধুমপান, পানের জৰ্দ্দা, এলকোহল সেবন।

(v) অতিরিক্ত মানসিক উত্তেজনা, অশান্তি এবং পারিবারিক কোলহল।

(vi) ইসোফেগাসে ঘন ঘন প্রদাহ

প্রশ্ন: ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর শ্রেণিবিভাগ লিখ।

ক্যান্সার অব ইসোফেগাস এর শ্রেণিবিভাগ:

ক্যান্সার অব ইসোফেগাস ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

(i) সিরাস ক্যান্সার, (ii) মেডুলারী ক্যান্সার,

(iii) আলসারেটিভ ক্যান্সার, (iv) কোলইড ক্যান্সার।

(iv) গ্যাস্ট্রো-জেজুনোস্টমি স্ট্রমা (Jejunum after surgical abastoasis to stomach)

(v) মেকেল’স ডাইভারটিকুলাম। [Ileum adjacent to a mackelis diverticulum (rarely).]

প্রশ্ন: পেপটিক আলসারের কারণসমূহ উল্লেখ কর। ১১ বা, এন্টিরিক পারফোরেশনের এর কারণ লিখ। ১৮

পেপটিক আলসারের কারণসমূহ (Aetiology of peptic ulcer):

(i) Age – ডিওডেনাল আলসার (২ থেকে ৫০ বছর) গ্যাস্ট্রিক আলসার (৪০ বছর)

(ii) Sex (লিঙ্গভেদে)- ডিওডেনাল আলসার (পুরুষ: নারী = ৪ : ১)

গ্যাস্ট্রিক আলসার (পুরুষ: নারী = ২ : ১)

(iii) Family history- May be positive

(iv) Blood group – ‘0’ +ve

(v) Diet- Spicy, hard fried food

(vi) Drugs – Antacids, Steroids

(vii) helicobacter pylori- 90% o.c and 70%

প্রশ্ন: পেপটিক আলসারের লক্ষণাবলী লিখ। ১৫ অথবা, পেপটিক আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

পেপটিক আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:

এবডোমিনাল ব্যথার ৩ ধরণের চরিত্রগত কমন লক্ষণ প্রদর্শন করে।

যথা-

(i) ইপিগ্যাস্ট্রিয়াম অঞ্চলে (localisation to the epigustriam)

(ii) খাদ্য গ্রহণের সাথে সম্পর্কিত (relationship to food)

(iii) ইপিসোডিক (episodic occurance)

১। ইপিগ্যাস্ট্রিক পেইন

২। হাংগার পেইন

৩। নাইট পেইন

৪। পেইন রিলিফ- খাদ্য, দুধ বা এন্টাসিড এবং বমি করলে।

৫। ইপিসোডিক পেইন- ১ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত

৬। অন্যান্য লক্ষণ- ক্ষুধা মন্দা, অস্বস্তিবোধ, নিদ্রাহীনতা, জ্বরজ্বরভাব ও জ্বর এবং এনিমিয়া বর্তমান থাকবে।

প্রশ্নঃ পেপটিক আলসারের ইনভেস্টিগেশন বা রোগ নির্ণয় লিখ।

পেপটিক আলসারের ইনভেস্টিগেশন:

(i) বেরিয়াম মিল এক্স-রে

(ii) এন্ডোসকপি

(iii) মলের- আর/ই, সি/এস

(iv) প্রস্রাবের আর/ই, সি/এস।

(v) কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট করতে হবে।

প্রশ্নঃ পেপটিক আলসারের জটিলতাসমূহ উল্লেখ কর। ২০০৯ বা, পেপটিক আলসার-এর জটিলতাসমূহ লিখ। ২০১৮

পেপটিক আলসার-এর জটিলতাসমূহ (Complications of peptic ulcer):

১। তরুণ (Acute)-

ⅰ) পারফোরেশন (Perforation.)

ii) হেমাটেমেসিস বা মেলিনা (Haematemesis and/or melaena.) –

২। ইন্টারমিডেয়েট: রেসিডুয়াল অ্যাবসেস (Intermediate: residual abscess)

৩। পুরাতন (Chronic)

(i) স্টেনোসিস (Stenosis): pyloric stenosis, hour-glass contracture, tea-pot deformity. (ii) Penetration into pancreas, liver or retroperitoneal space.

(iii) কার্সিনোমা (Carcinoma)- গ্যাস্ট্রিক আলসার (gastric ulcer).

(iv) মিল্ক এলকালিন সিন্ড্রোম (‘Milk alkali syndrome’) – Due to excessive ingestion of alkali and calcium salts.

প্রশ্নঃ পেপটিক আলসারের ব্যবস্থাপনা বর্ণনা কর। ২০১৮

পেপটিক আলসারের ব্যবস্থাপনা বর্ণনা:

করণীয়:

(i) বিছানায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।

(ii) পুষ্টিকর সহজ পাচ্য খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

(iii) প্রয়োজনের ইন্টারভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।

(iv) অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ব্লাড ভলিউম নির্ণয় করে ব্লাড দিতে হবে।

নিষেধ:

(i) অধিক মসলাযুক্ত, চর্বিযুক্ত, শক্ত খাদ্য বস্তু খাওয়া যাবে না।

(ii) ধুমপান ও মদ পান করা যাবে না।

(iii) মানসিক দুশ্চিন্তা ও উত্তেজনার মধ্যে থাকা যাবে না।

পথ্য: পুষ্টিকর তরল ও অর্ধতরল খাদ্য।

বিশেষ চিকিৎসা: পাকস্থলীর দেওয়াল এবং ডিওডেনাল অংশ ছিদ্র হয়ে গেলে উহা অপারেশন করে রিপেয়ার করতে হবে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার (Gastric Ulcer)

প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসার কাকে বলে?

গ্যাস্ট্রিক আলসারের সংজ্ঞা:

এডিস-পেপসিন ডাইজেশনের ফলে পাকস্থলীর সারকেস এপিথেলিয়ামের যে কোন অংশের ক্ষত হয়, তাকে গ্যাস্ট্রিক আলসার বলা হয়।

প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণতত্ত্ব লিখ।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণতত্ত্ব (Aetiology):

(i) বংশগত কারণ।

(ii) অনিয়মিত আহার, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, অধিক মসলাযুক্ত খাদ্য আহার, অধিক ঝাল।

(iii) এলকোহল বা মদ্যপান।

(iv) অতিরিক্ত ধুমপান, বিশৃংঙ্খলা।

(v) মানসিক বিপর্যয় ও বিশৃংঙ্খলা, দুশ্চিন্তা, মানসিক উদ্বেগ, উত্তেজনা ইত্যাদি।

(vi) রক্তস্বল্পতা এবং মাসিকের গোলযোগের কারণে।

(vii) বয়স- সাধারণত ৪০ বছরের অধিক বয়স্ক ব্যক্তি

(viii) লিঙ্গ- পুরুষঃ মহিলা = ২:১

(ix) দীর্ঘদিন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা বা অতিরিক্ত গরম খাদ্যপানীয় আহার

(x) যাদের রক্তের গ্রুপ O+ve

(xi) হজমে দেরি হয় এমন খাদ্য গ্রহন। যেমন- মাংস ও অধিক তৈলাক্ত খাবার।

(xii) কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া- যেমন এন্টাসিড, স্ট্যারয়েড, এসপিরিন ইত্যাদি।

(xiii) শরীরে পারদ ও সিফিলিস বিষক্রিয়ার ফলে।

(xiv) বারে বারে পাকস্থলী প্রদাহ হলে, গ্যাস্ট্রিক মিউকোসা স্থায়ীভাবে নষ্ট হলে ইত্যাদি।

(xv) পাকস্থলীতে কোন কারণে আঘাত লাগলে, পেটের উপরের চামড়া অগ্নিদগ্ধ হওয়া ইত্যাদি।

(xvi) পাকস্থলীতে অধিক সময় ধরে খাদ্যবস্তু অবস্থান করলে পাকস্থলীতে সংকোচন ও প্রসারণ দ্বারা বেশি পরিমানে গ্যাস্ট্রিক রস ও হাইড্রোক্লোরিন এসিড নিঃসারণ করার ফলে।

প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার বা লক্ষণাবলী লিখ।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:

লক্ষণসমূহ:

(i) ব্যথা: ইপিগ্যাস্ট্রিক অঞ্চলে হয়, খাওয়ার পর পরই ব্যথা আরম্ভ হয়, ২-৬ সপ্তাহ পর পরই ব্যথায় আক্রান্ত হয়, বমি করলে ব্যথার উপশম ও খালি পেটে ব্যথার উপশম।

(ii) বমি: বমি গ্যাস্ট্রিক আলসারের কমন লক্ষণ। রক্ত বমি।

(iii) ক্ষুধা: প্রচন্ড ক্ষুধা পায় কিন্তু রোগী ব্যথার ভয়ে খেতে চায় না।

(iv) বদহজম দেখা দেয়।

(v) রক্তযুক্ত পায়খানা। (vi) শক্ত খাদ্য গ্রহণে অনীহা।

চিহ্নসমূহ (Signs):

(i) এপিগ্যাস্ট্রিয়ামের সামান্য বাঁদিকে হাত দ্বারা স্পর্শ করলে ব্যথা ও স্পর্শকাতরতা পাওয়া যায়।

(ii) দিন দিন শরীর ক্ষীণ হতে থাকে। ওজন কমে।

(iii) রক্তবমি (হেমাটেমেসিস) (iv) রক্ত পায়খানা (মেলিনা)

(v) অত্যধিক বমি হতে পার।

প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগানুসন্ধান বা ইনভেস্টিগেশন লিখ।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের ইনভেস্টিগেশন:

(i) ব্লাড- টি.সি, ডি.সি, ই.এস.আর, এইচবি%

(ii) বেরিয়াম এক্স-রে

(iii) এন্ডোসকপি

প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিক আলসারের ভাবীফল লিখ।

গ্যাস্টিক আলসারের ভাবীফল:

ইহার ভাবীফল ভাল নয়। যেহেতু পেটে ব্যথা খাইলে বৃদ্ধি সেহেতু রোগী খেতে চায় না। সে কারণে শরীরের ওজন হ্রাস পায়। রোগের ভাবীফল খারাপের দিকে যায়। নির্দিষ্ট সময় রোগের উপযুক্ত কারণ নির্ণয় করে সদৃশ বিধান মতে সঠিক চিকিৎসা দিলে রোগী আরোগ্য হয়। অন্যথায় জটিলতা সৃষ্টি হয়।

প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসারের জটিলতা লিখ।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের জটিলতা:

(i) রক্তবমি (ii) পাকস্থলী ছিদ্র হওয়া

(iii) পেরিটোনাইটিস

(iv) পেরিগ্যাস্ট্রিক এ্যাটেশন

(v) আওয়ার গ্লাস স্টোমাক

প্রশ্ন: গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা লিখ।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের চিকিৎসা:

করণীয়:

(i) বিছানায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।

(ii) পুষ্টিকর সহজ পাচ্য খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

নিষেধ:

(i) অধিক মসলাযুক্ত, চর্বিযুক্ত, শক্ত খাদ্য বস্তু খাওয়া যাবে না।

(ii) ধুমপান ও মদ পান করা যাবে না।

(iii) মানসিক দুশ্চিন্তা ও উত্তেজনার মধ্যে থাকা যাবে না।

পথ্য: পুষ্টিকর তরল ও অর্ধতরল খাদ্য।

বিশেষ চিকিৎসা: পাকস্থলীর দেওয়াল ছিদ্র হয়ে গেলে উহা অপারেশন করে রিপেয়ার করতে হবে।

কার্ডিও-ইসোফেগাল স্প্রিন্টার-

ফান্ডাস

ইসোফেগাস

লঙ্গিচুডিনাল লেয়ার

সেরোসা

সার্কুলার লেয়ার

বডি

অবলিক লেয়ার

মিউকোসা

লেসার কার্ভেচার

গ্রেটার কার্ভেচার

ডিওডেনাম

পাইলোরিক স্পিন্টার

পাইলোরিক এন্ট্রাম

চিত্রঃ পাকস্থলীর বিভিন্ন অংশ

ডিওডেনাল আলসার (Duodenal Ulcer)

প্রশ্ন: ডিওডেনাল আলসার কাকে বলে?

ডিওডেনাল আলসার এর সংজ্ঞা:

ডিওডেনামের যে কোনো অংশের সারফেস এপিথেলিয়ামের ক্ষত বা আলসারেশন হলে, তাকে ডিওডেনাল আলসার বলে।

প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসারের কারণসমূহ উল্লেখ কর। ০৯ ১২৯

ডিওডেনাল আলসারের কারণতত্ত্ব (Aetiology):

(i) বংশগত কারণ

(ii) অনিয়মিত আহার, আহারের পর বিশ্রামের অভাব

(iii) বয়স- সাধারণত ২০ থেকে ৫০ বছর।

(iv) লিঙ্গ- পুরুষ: মহিলা = ৪:১

(v) রক্তের গ্রুপ: O+ve

(vi) খাদ্যাভাস-ঝালযুক্ত ও মসলাযুক্ত খাবার

(vii) ঔষধ: এন্টাসিড

প্রশ্নঃ গ্যাস্ট্রিক আলসার ও ডিওডেনাল আলসারের পার্থক্য লিখ। ২০০৯, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮

গ্যাস্ট্রিক আলসার ও ডিওডেনাল আলসারের মধ্যে পার্থক্য:

পয়েন্ট

ডিওডেনাল আলসার

গ্যাস্ট্রিক আলসার

১। ব্যথা

ডিওডেনাল পয়েন্টে ব্যথা করে। খালি পেটে ব্যথা করে। রাতে ব্যথা কমন, খাওয়ার পরে ব্যথা কমে।

ইপিগ্যাস্টিক অঞ্চলে ব্যথা করে। খাওয়ার পরে ব্যথা করে। খাওয়ার পরে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

২। বমি

সামান্য হতে পারে।

প্রচন্ড বমি হয়।

৩। হেমাটেমেসিস

সামান্য হতে পারে।

প্রচুর হয়।

৪। মেলিনা

প্রচুর হয়।

সামান্য হয়।

৫। ক্ষুধা

ভাল, রোগী ঘনঘন খায় ব্যথা নিবারনের জন্য।

স্বাভাবিক, কিন্তু রোগী খায় না কারণ খেলে ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

৬। খাদ্য গ্রহন

সলিড ও সেমি-সলিড উভয় খাদ্য গ্রহণ করে।

সলিড খাদ্য পরিহার করে, সেমি-সলিড গ্রহণ করে।

৭। ওজন

প্রচুর খাদ্য খায় তাই ওজন বৃদ্ধি পায়।

কম খাদ্য খায় তাই ওজন কমে যায়।

৪। প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার/লক্ষণাবলী লিখ। ডিওডেনাল আলসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) ব্যথা – ডিওডেনাল পয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হয়

খালিপেটে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়

রাতে ব্যথা হয়

খাদ্য গ্রহণের পরে ব্যথার উপশম হয়

পেরিওডিসিটি ১-৩ সপ্তাহ স্থায়ী হয়

(ii) বমিঃ সামান্য থাকতে পারে।

(iii) ক্ষুধাঃ বেশি, রোগী খায়ও ভালো। খেলে ব্যথা কমে। হাংগার পেইন।

(iv) অজীর্ণতা দেখা দেয়: কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে।

(v) বুক ও গলা জ্বালা অনুভূত হয়

(vi) মেলিনা- মলের সাথে অতিরিক্ত রক্ত যায়

(vii) রোগীর ওজন বৃদ্ধি পায়।

(viii) রোগীর চেহারা ফ্যাকাসে এবং এনিমিয়া উপস্থিত

(ix) দুর্বলতা, হতাশা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ জনিত সমস্যা থাকতে পারে।

প্রশ্নঃ তুমি কিভাবে ডিওডেনাল আলসার রোগ নির্ণয় করবে? ০৯ ডিওডেনাল আলসার রোগ নির্ণয় / ইনভেস্টিগেশনঃ

(i) রোগীর রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে।

(ii) ব্লাড টিসি, ডিসি, ইএসআর, এইচবি% টোটাল কাউন্ট বৃদ্ধি পাবে, ইএসআর বৃদ্ধি পাবে এবং হিমোগ্লোবিন কমে যাবে।

(iii) মল: অকাল্ট ব্লাড টেস্ট পজেটিভ হবে।

(iv) বেরিয়াম এক্স-রে: ডিওডেনামে ক্ষতের উপস্থিতি পাওয়া যাবে।

(v) এন্ডোসকপি এবং গ্যাস্ট্রোকপি: সঠিকভাবে রোগ নির্ণিত হয়।

প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসার পারফোরেশনের লক্ষণ লিখ। ১৮ ডিওডেনাল আলসার পারফোরেশনের লক্ষণাবলী:

(i) ডিওডেনাল আলসারের ইতিহাস থাকবে।

(ii) রোগী ফ্যাকাশে, উদ্বিগ্ন, নড়াচড়ায় অনিচ্ছা দেখা যায়।

(iii) তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি কিন্তু পালস দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

(iv) এবডোমেন কম নড়াচড়া করে অথবা প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসে করে না।

(v) সমস্ত এবডোমেনে স্পর্শকাতরতার সাথে অনুভূতিহীন পারকাসন এবং রিজিডিটি থাকে।

(vi) মিড এক্সজিলা লাইনে লিভারের অনুভুতিহীনতা পাওয়া যায়।

(vii) মলদ্বার পরীক্ষা করলে পেলভিক স্পর্শকাতরতা মলদ্বার পর্যন্ত পাওয়া যায়।

(viii) ৩-৬ ঘন্টা পর ব্যথা, স্পর্শকাতরতা এবং রিজিডিটি হ্রাস পায়। তাপমাত্রা উচ্চ থাকে তবে পালস আরও বৃদ্ধি পায়। বাওয়েল সাউন্ড অনুপস্থিত থাকে।

(ix) নির্দিষ্ট স্পর্শকাতরতা কিন্তু অনিশ্চিত প্রহারহীনতা এবং কাঠিন্যতা।

(x) ৬ ঘন্টা পরে পেরিটোনাইটিস বিস্তৃত এরিয়ায় সম্প্রসারিত হয়। এরসাথে সামান্য এবডোমিনাল স্ফীতি থাকে। প্রচুর পরিমান ফ্রি ফুইড একত্রিত হয় যা ক্লিনিকেলি নির্ধারণ করা যায়।

প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসার পারফোরেশনের ব্যবস্থাপনা বর্ণনা কর। ২০১৮

ডিওডেনাল আলসার পারফোরেশনের ব্যবস্থাপনা বর্ণনাঃ

(i) রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

(ii) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পারফোরেশন এরিয়া নির্ধারণ করতে হবে।

(iii) এনিমিক রোগীর ক্ষেত্রে রক্ত প্রয়োজন হবে। তাই রোগী রক্তের প্রুপিং, ক্রসম্যাচি করতে হবে।

(iv) প্রয়োজনে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।

(v) ব্যথা উপশমের জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(vi) সার্জিক্যাল রিপেয়ার পারফোরেটেড ডিওডেনাল আলসারের একমাত্র চিকিৎসা।

রোগী শক বা অস্ত্রোপচারের অনুপযুক্ত অবস্থায় আসলে তখন প্রথমে গ্যাস্টিক সাকশনসহ রিসাকসিটেশন করতে হবে এবং পরবর্তীতে অস্ত্রোপচার করতে হবে।

যদি রোগী প্রথম অবস্থায় আসে বা রোগীর অবস্থা অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত হয় তাহলে অস্ত্রোপচার (গ্যাস্ট্রোজেজুনষ্টমি) দ্বারা ছিদ্র রিপেয়ার করতে হবে এবং পেরিটোনিয়াম পরিষ্কার করতে হবে। (Pyloroplasty with vagotomy)

প্রশ্নঃ ডিওডেনাল আলসারের জটিলতা ও ভাবীফল লিখ। ০৯ ডিওডেনাল আলসারের ভাবীফল:

ইহার ভাবীফল ভাল নয়। যেহেতু পেটে ব্যথা খাইলে উপশম সেহেতু রোগী ঘনঘন খায়। সেকারণে শরীরের ওজন স্বাভাবিক থাকে। রোগের ভাবীফল খারাপের দিকে যায়। নির্দিষ্ট সময় রোগে উপযুক্ত কারণ নির্ণয় করে সদৃশ বিধান মতে সঠিক চিকিৎসা দিলে রোগী আরোগ্য হয়। অন্যথায় জটিলতা সৃষ্টি হয়।

ডিওডেনাল আলসারের জটিলতা:

(i) রক্তবমি,

(ii) রক্ত পায়খানা,

(iii) ডিওডেনামে ছিদ্র হওয়া,

(iv) পেরিটোনাইটিস।

প্রশ্ন: হেমাটেমেসিস ও মেলিনার সংজ্ঞা ও কারণ সমূহ লিখ। ১৭

রক্ত বমি (Haematemesis) এবং কালো পায়খানা (Melaena):

রক্ত বমি (Haematemesis): বমির সঙ্গে রক্ত বের হওয়াকে রক্ত বমি বা Haematemesis বলে।

কালো পায়খানা (Melaena): পরিবর্তিত রক্ত পায়খানাকে কালো পায়খানা বা Melaena বলে।

কারণঃ এর কারণগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: ক) স্থানীয় কারণ:

ইসোফেগাস: রিফ্লাক্স ইসোফেগাজাইটিস, হায়াটাস হার্নিয়া, ইসোফেগাজিয়াল ভেরিসেস।

স্টোমাক: ক্রনিক গ্যাষ্ট্রিক আলসার, একিউট ইরোশন, স্টোমাকের টিউমার।

ডিওডেনাল: ডিওডেনাল আলসার, অ্যাম্পুলারী কার্সিনোমা।

ক্ষুদ্রান্ত্র:

মেকেল’স ডাইভার্টিকুলায়, টিউমার, আলসার।

বৃহদান্ত্রঃ ড্রাইভার্টিকুলাইটিস, আলসারেটিভ কোলাইটিস, কার্সিনোমা।

খ) সাধারণ কারণ: ব্লাড ডিসক্রাসিয়াস (লিউকেমিয়া, হেমোফাইলিয়া, থ্রোম্বোসাইটোপেনিয়া), অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট থেরাপী, ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশন ইউরেমিয়া, মারাত্মক টক্সিমিয়া, সেপ্টিসেমিয়া এবং বিস্তৃত বার্ন বা পোড়া।

প্রশ্ন: একিউট এরডোমিনের সংজ্ঞা ও গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলি উল্লেখ কর। ০৯

একিউট এবডোমিনের সংজ্ঞা:

হঠাৎ কোন কারণবশত এবডোমেনে প্রচন্ড ব্যথা বা যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত ইর্মাজেন্সি চিকিৎসা বা সার্জারীর ব্যবস্থা নিতে হয়, তাকে একিউট এবডোমেন বলে। ইহাতে দ্রুত রোগীকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে যায়।

একিউট এবডোমিনের গুরুত্বপূর্ণ কারণসমূহ:

(i) আঘাত

(ii) পেপটিক আলসার- বিশেষত ডিওডেনাল আলসার।

(iii) গ্যাস্ট্রো-এন্টেরাইটিস

(iv) পেরিটোনাইটিস

(v) এপেন্ডিসাইটিস

(vi) কলিসিস্টাইসিস

(vii) কোলাইটিস

(viii) ইনটেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন।

(ix) বাইল ডাক্ট অবস্ট্রাকশন,

(x) স্ট্রাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া।

এন্টেরিক পারফোরেশন (enteric perforation)

প্রশ্নঃ ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশন কাকে বলে।

সংজ্ঞা: যে কোন কারণে অস্ত্র বা ইনটেসটিনে ক্ষত সৃষ্টি হলে, তাকে আন্ত্রিক ছিদ্র বা ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশন বলে।

প্রশ্ন: ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের কারণগুলো লিখ। ০৮

কারণ: আন্ত্রিক ছিদ্রের কারণসমূহ নিম্নরূপঃ

(i) আঘাত প্রাপ্তি।

(ii) পেপটিক আলসার।

(iii) টাইফয়েড জ্বর, প্রভৃতি।

প্রশ্ন: ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮ আন্ত্রিক ছিদ্র বা ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশন এর ক্লিনিক্যাল ফিচার নিম্নরূপ:

ক) প্রাথমিক অবস্থা: রোগীর পেপটিক আলসার ও টাইফয়েড জ্বরের পূর্ব ইতিহাস থাকার সম্ভাবনা থাকে। প্রথম অবস্থায় পেটে বেদনা হয়, বমি হতে পারে এবং কোষ্ঠবদ্ধতা থাকে। রোগী নড়াচড়া করতে চায় না, চুপ-চাপ থাকতে ভালবাসে, বিমর্ষ ও চিন্তিত দেখায়, চেহারা ফ্যাকাশে, শ্বাস-প্রশ্বাসে পেট নড়াচড়া করে না। পেটে স্পর্শকাতরতার সাথে ডাল পারকাসন এবং রিজিডিটি বিদ্যমান থাকে।

খ) প্রতিক্রিয়া অবস্থা: এ অবস্থায় পেটে ব্যথা, স্পর্শকাতরতা ও রিজিডিটি থাকে না। তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থা অপেক্ষা সামান্য বেশী থাকে, আবার উচ্চতাপও থাকতে পারে। কিন্তু নাড়ীর গতি খুবই বেশী। গ) শেষ অবস্থা : এ অবস্থায় পেটের ব্যথা, স্পর্শকাতরতা এবং রিজিডিটি কমে যায়। কিন্তু পেট ফুলে যায়।

প্রশ্ন: ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৮ ইন্টেস্টাইনাল পারফোরেশনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাঃ

আন্ত্রিক ছিদ্রের একমাত্র চিকিৎসা হলো সার্জিক্যাল রিপেয়ার। রোগী যদি প্রথমাবস্থায় আসে অথবা রোগীর অবস্থা অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত হয় তবে নিম্নলিখিত অস্ত্রোপচারগুলি করা যায়:

ক) ছিদ্রের রিপেয়ার করতে হবে।

খ) পেরিটোনিয়াম পরিষ্কার করতে হবে।

গ) সাধারণভাবে অজ্ঞান করে ল্যাপারোটমী করা উচিত।

আর যদি রোগী শক বা অস্ত্রোপচারের অনুপযুক্ত অবস্থায় থাকে তবে প্রথমে গ্যাস্ট্রিক সাকশনসহ রিসাকসিটেশন করে পরে অস্ত্রোপচার করা হয়।

পাইলোরিক স্টেনোসিস (pyloric stenosis)

প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের সংজ্ঞা লিখ।

পাইলোরিক স্টেনোসিসের সংজ্ঞাঃ

ডিওডেনাল আলসার, প্রি-পাইলোরিক আলসার, কার্সিনোমা, পাইলোরিক এন্ট্রাম প্রভৃতি রোগের কারণে পাকস্থলী পাইলোরাসের সংকোচন ঘটে, এ সংকোচন অবস্থাকে পাইলোরিক স্টেনোসিস বলে।

প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের কারণ লিখ। ১০, ১২

পাইলোরিক স্টেনোসিসের কারণ:

(i) ক্রনিক ডিওডেনাল আলসারের কারণে cicatrisation হওয়াই এটির কারণ।

(ii) প্রি-পাইলোরিক আলসার।

(iii) পাইলোরাসের নিকটে কার্সিনোমা।

(iv) প্রাপ্ত বয়স্ক হাইপারট্রোফিক পালোরিক স্টেনোসিস। স্টেনোসিসের ফলে স্টোমাকের ভিতরের দ্রব্য জমা হতে থাকে। ফলে স্টোমাক প্রসারিত এবং হাইপারট্রোফি হতে থাকে। মহিলাদের মধ্যে এটি classically হয়।

প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) দীর্ঘদিনের পেপটিক আলসারের ইতিহাস থাকে।

(ii) পেরিয়ডিসিটি আর থাকে না।

(iii) ইপিগ্যাস্ট্রিয়ামে ব্যথা, ভরাট ভাব এবং অসুবিধা অনুভব হয়। বিশেষ করে সন্ধ্যায় এটি বেশী অনুভব হয়।

(iv) রোগী সাধারণতঃ সকালে নাস্তা খায়, খুবই সামান্য দুপুরের খাবার এবং এর পর কিছুই খায় না, কারণ রোগী পেট ভরাট অনুভব করে।

(v) বমি-বমির পরিমাণ বেশী হয় এবং দুর্গন্ধ ও ফেনাযুক্ত বমি বৈশিষ্টপূর্ণ। বমি সাধারণতঃ দিনে ১ বার হয়, এবং তা পিচকারীর মতো বমি হয়। বমির মধ্যে undigested particulate বস্তু থাকে যা একদিন বা আরো আগে খাওয়া হয়েছে। বমি করলে রোগী সাধারণতঃ বেশ আরাম বোধ করে।

(vi) রোগীকে পরীক্ষা করলে দেখা যায়-

রোগী ডিহাইড্রেটেড থাকে এবং ওজন কমে যায়। –

-পাতলা রোগীদের প্রসারিত স্টোমাকের বাউন্ডারী দেখা যেতে পারে।

-ইপিগ্যাস্ট্রিয়ামে বাম হতে ডান দিকে প্রবাহিত ভিজিবল পেরিস্টালসিস দেখা যেতে পারে।

-সাক্কাশন স্পাস পাওয়া যায়।

-পারকাশন করলে স্টোমাকের এরিয়া অনেক বড় পাওয়া যায়।

alkalosis-এর কারণে রোগী মানসিকভাবে confused থাকে।

প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের ইনভেস্টিগেশন লিখ।

ইনভেস্টিগেশন:

স্টোমাকের বেরিয়াম মিল এক্স-রে করলে খাওয়ার ৬ ঘণ্টা পরেও খাদ্যের অবশিষ্ট স্টোমাকে পাওয়া যায়। এমনকি ২৪ ঘণ্টা পরেও তা পাওয়া যায়। স্টোমাকের আকার বড় হয় এবং নিচে নেমে আসে। Barium evacuation হতে দীর্ঘ সময় লাগে।

প্রশ্ন: পাইলোরিক স্টেনোসিসের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১০, ১২

পাইলোরিক স্টেনোসিসের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা:

এটির একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন। প্রি-অপারেটিভ চিকিৎসা দেয়ার ৭-১০ দিন পর অপারেশন করতে হয়। প্রাথমিকভাবে স্যালাইন দ্বারা গ্যাস্ট্রিক lavage দেয়া হয়। মোটা টিউব দ্বারা ৪-৫ দিন গ্যাস্ট্রিক lavage দেয়া হয়। অধিক পরিমাণে প্রোটিন, ফ্লুইড জয়েন্ট এবং ইলোক্ট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক করতে হবে এবং ভিটামিনের অভাব পূরণ করতে হবে। স্বাভাবিক প্রস্রাব হলে পানির অভাব পূরণ হয়েছে বুঝতে হবে। এটির কারণ ক্রনিক ডিওডেনাল আলসার হলে truncal ভ্যাগোটমি এবং গ্যাস্ট্রেজেজুনোস্টোমি করা যেতে পারে। কেউ কেউ Billroch II গ্যাস্ট্রেকটমি suggest করে, কিন্তু এর মৃত্যু ঝুকি বেশী।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস (appendicitis)

প্রশ্ন: এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্পের সংজ্ঞা দাও। এর লক্ষণাবলী লিখ। ১২ বা, এপেন্ডিকুলার লাম্প-এর সংজ্ঞা, লক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৯

এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্পের সংজ্ঞা:

এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্প (Appendicular Lump) হলো এ্যাপেন্ডিসাইটিসের একটি জটিল অবস্থা। এটি সাধারণত অ্যাপেন্ডিক্সের প্রদাহজনিত কারণে পেটের ডানপাশের নিম্নাংশে একটি পিণ্ড (লাম্প) হিসেবে প্রকাশ পায়। এটি ফাইব্রিন, প্রদাহজনিত তরল, পার্শ্ববর্তী অন্ত্র, ওমেন্টাম এবং এ্যাপেন্ডিক্সের সংমিশ্রণে তৈরি হয়।

এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্পের লক্ষণাবলী:

  1. পেটের ব্যথা:

    • শুরুতে পেটের মাঝামাঝি (পেরি-আনবিলিক্যাল অঞ্চল) ব্যথা।
    • পরে ডানপাশের নিম্নাংশে (রাইট ইলিয়াক ফোসা) স্থানান্তরিত হয়।
  2. স্পর্শকাতরতা:

    • রাইট ইলিয়াক ফোসায় স্পর্শ করলে ব্যথা।
  3. লাম্প বা পিণ্ড অনুভব:

    • পেটের ডানপাশে একটি দৃঢ় পিণ্ড অনুভব করা যায়।
  4. জ্বর:

    • হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার জ্বর।
  5. বমি বমি ভাব ও বমি:

    • খাদ্য গ্রহণের প্রতি অনীহা এবং বমি হতে পারে।
  6. কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া:

    • পেট ফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণ, তবে কিছু ক্ষেত্রে ডায়রিয়া হতে পারে।
  7. তরঙ্গাকৃতি (Fluctuation):

    • কিছু ক্ষেত্রে লাম্প মৃদু তরঙ্গাকৃতি হতে পারে, যা পুঁজ জমার ইঙ্গিত দেয়।
  8. বুকের চাপ অনুভব করা:

    • রোগী প্রায়শই অস্বস্তি ও পেট ভারী লাগার কথা বলে।
  9. একিউট এপেন্ডিসাইটিসের মত ব্যথা বর্তমান থাকবে।
  10. লাম্প দেখার ৩-৫ দিন পরে ব্যথা শুরু হবে।
  11. ট্যাকিকার্ডিয়া বর্তমান থাকবে।

স্থানীয় পরীক্ষা (এবডোমেন): 

1. রাইট ইলিয়াক ফোসাতে একটি লাম্প দেখা যাবে– স্পর্শকাতর হবে।

2. সামান্য নড়াচড়া করা যায়।

3. হাত দ্বারা চাপ দিয়ে মার্জিন দেখা যায়।

4. স্থানীয়ভাবে শক্ত হওয়া দেখা দিবে।

এ্যাপেন্ডিকুলার লাম্পের চিকিৎসা/ব্যবস্থাপনাঃ

(i) রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

(ii) দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

(iii) ব্যথা কমার জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(iv) প্রয়োজনে ইন্টারভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।

(v) রক্ষণশীল চিকিৎসায় আরোগ্য না হলে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অপারেশন অ্যাপেন্ডিসেকটমী (Appendicectomy) করতে হবে।

একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস

প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি? ২০১৭

একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস:

যে কোন কারণে হঠাৎ এপেন্ডিক্সের ইনফ্লোমেশনকে একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস বলে। এটি একটি সার্জিক্যাল ইমারজেন্সি।

প্রশ্নঃ একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণসমূহ লিখ। ১৪০

কারণ: যদিও সত্যিকারের কোন সন্তোষজনক কারণ জানা যায় নাই। নিম্নে কতকগুলো Aetiological Factor বর্ণনা করা হলো।

(i) বয়স- সবচেয়ে কমন শৈশবে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে incidence কমে যায়।

(ii) লিঙ্গ (sex) – মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের বেশী হয়।

(iii) Race এবং খাদ্য- উন্নত বিশ্বে এটি বেশী পাওয়া যায়, যেমন ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এশিয়ান ও আফ্রিকার দেশ সমূহে কম। অর্থাৎ cellulose সমৃদ্ধ খাদ্যের তুলনায় অধিক মাংসযুক্ত খাদ্য ভোজীদের বেশী হয়।

(iv) সামাজিক (status) অবস্থান উচ্চ মর্যাদার লোকদের মধ্যে বেশী হয়।

(v) পারিবারিক সংবেদনশীলতা: এটি unusual, কিন্তু বংশানুক্রমে অ্যাপেন্ডিক্সের অবস্থানগত ত্রুটির জন্য সহজে ইনফেকশন হতে পারে।

(vi) অ্যাপেন্ডিক্সের লুমেনে অবস্ট্রাকশন: প্রায় ৮০% inflamed appendix- এ অবস্ট্রাকশন পাওয়া যায়। স্ট্রিকচার, ফরেন বডি বা রাউন্ড ওয়ার্ম বা থ্রেড ওয়ার্ম দ্বারা অবস্ট্রাকশন হতে পারে।

(vii) কোলোনের দূরবর্তী অবস্ট্রাকশন- বৃদ্ধদের ডান দিকের কোলোনে কার্সিনোমার কারণে অবস্ট্রাকশন হলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে পারে।

(viii) পারগ্যাটিভস (Purgatives)- এর অপব্যবহার, বিশেষ করে ক্যাস্টোর ওয়েল (castor oil)।

(ix) ব্যাকটেরিয়া : কমন অর্গানিজম হচ্ছে Esch. coli (৮৫% ক্ষেত্রে), এন্টারোকোলাই (৩০%), নন-হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাই, অ্যানারোবিক স্ট্রেপ্টোকক্কাই।

প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস প্যাথলজি লিখ।

একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের প্যাথলজি:

অ্যাপেন্ডিসাইটিস হতে (১) পারফোরেশন বা (২) অ্যাপেন্ডিক্সের ওয়ালের ভিতর দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ট্রান্জমাইগ্রেশন (transmigration) করে পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটির ইনফেকশন ঘটিয়ে থাকে। “অ্যাবডোমিনাল পুলিশম্যান” বলে খ্যাত গ্রেটার ওমেন্টাম আক্রান্ত অ্যাপেন্ডিক্সের চতুর্পাশে বেস্টনী তৈরী করে পেরিটোনিয়াল ইনভেশন (invasion) প্রতিহত করে।

প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস প্রকারভেদ লিখ। ২০১৭ একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের প্রকারভেদঃ

একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস ২ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন- (ক) নন-অবস্ট্রাকটিভ ও (খ) অবস্ট্রাকটিভ।

(ক) নন-অবস্ট্রাকটিভ একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস:

এতে সাধারণতঃ মিউকাস মেমব্রেনে ইনফ্লামেশন শুরু হয় এবং নিচের যে কোন একটি পরিনতি লাভ করে-

(১) স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়,

(২) আলসারেশন, (৩) সাপুরেশন, (৪) ফাইব্রোসিস, (৫) গ্যাংরিন।

ইনফেকশন loose সাবমিউকাস টিস্যুতে পৌছায়, তবে এটি দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করে। অ্যাপন্ডিক্স turgid (স্ফীত), dusky red রং ধারণ করে এবং মিউকাস মেমব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়। এর ফলে অ্যাপেন্ডিক্সে গ্যাংগ্রীন হতে পারে। আবার অ্যাপেন্ডিসাইটিস অতি শ্লথগতিতে progress করতে পারে ও এই সময়ে protective barrier তৈরী হতে পারে এবং পেরিটোনাইটিস স্থানীয়ভাবে সীমাবদ্ধ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ইনফেকশন মিউকাস lining অতিক্রম করে না, এ অবস্থায় অসুখ ভাল হয়ে গেলেও পুনঃ আক্রমণ হতে পারে।

(খ) অবস্ট্রাকটিভ একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস: প্রতি ৩টি একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের রোগীর মধ্যে ২টি রোগীর এই জাতীয় অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়ে থাকে। অবস্ট্রাকশন হতে পারে। যথা- ১। লুমেনের মধ্যে (ফরেন বডি বা প্যারাসাইট), ২। ওয়ালের মধ্যে (সাধারণত ইনফ্লামেটরী), ৩। ওয়ালের বাইরে। এগুলোর মধ্যে facecolitis হচ্ছে সবচেয়ে কমন। অবস্ট্রাকটিভ অ্যাপেন্ডিসাইটিসে ইনফ্লামেশন আবদ্ধ হয়, ফলে ইনফ্লামেশন দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং গ্যাংগ্রীন তৈরী হয় বা পারফোরেশন হয়। অনেক সময় ১২-১৮ ঘণ্টার মধ্যে অবস্ট্রাকশনের ডিস্টাল অংশে গ্যাংগ্রীন তৈরী হয়।

প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস ক্লিনিক্যাল ফিচার/লক্ষণাবলী লিখ। বা, একিউট এ্যপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণাবলী লিখ। ১৫, ১৭

একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার:

দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের তেমন হয় না। একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস শিশুকালে বেশী কমন, কিন্তু যে কোন বয়সই হতে পারে।

জেনারেল ফিচার:

(i) প্রথম ৬ ঘণ্টায় কদাচিৎ শরীরের তাপ বা pulse rate- এ পরিবর্তন ঘটে।

(ii) এই সময়ের পর সামান্য জ্বর ও পালস রেট বেড়ে ৮০ বা ৯০ হয়।

(iii) মারাত্বক অবস্থায়- যতই সময় পার হয় শরীরের তাপ বেড়ে ৩৮.৩°০ হয় এবং আনুপাতিক হারে pulse rate বেড়ে যায়।

(iv) ৯০% রোগীর ক্ষেত্রে W.B.C কাউন্ট ১০,০০০/ mm³ – এর চেয়ে বেশী হয়।

বিশেষ ফিচার:

(ক) নন-অবস্ট্রাকটিভ একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস: এটির ৪টি বিশেষ ফিচার আছে। যথা-

*(i) অ্যাবডোমিনাল ব্যথা:- যা স্থান পরিবর্তন করে, প্রথমে নাভীর চারপাশে, ইপিগ্যাস্ট্রিয়ামে বা সমস্ত পেটে ব্যথা শুরু হয়। নন- অবস্ট্রাকটিভ ক্ষেত্রে ব্যথা সব সময় থেকেই যায়, কিন্তু অবস্ট্রাকটিভের ক্ষেত্রে ব্যথা থেমে থেমে হয়। কয়েক ঘণ্টা পর যেখানে প্রদাহিত অ্যাপেন্ডিক্স প্যারাইটাল পেরিটোনিয়ামকে অস্বস্তিকর করে, সেখানে ব্যথা স্থানান্তরিত হয়। এ ব্যথা কাঁশি দিলে বৃদ্ধি পায়।

(ii) গ্যাস্ট্রিক ফাংশন বিপর্যস্ত হয় :- Protective pylorospasm -এর ফলে ক্ষুধামন্দা, বমি বমিভাব, মাঝে মাঝে বমি, বাদামী রং-এর ফাঁটা ফাঁটা জিহ্বা এবং দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস হয়। স্বল্প সময়ের জন্য বমি হয় এবং স্টোমাক খালি হলে বমি বন্ধ হয়ে যায়। বেশীর ভাগ রোগীরই কোষ্ঠবদ্ধতা হয়, তবে অনেক সময় ডাইরিয়া হতে পারে।

(iii) অ্যাপেন্ডিক্সের অবস্থানে স্থানীয় টেন্ডারনেস :- ব্যথা স্থানান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে McBurneys পয়েন্টে টেন্ডারনেস পাওয়া যায় এবং অ্যাপেন্ডিক্সের অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করে।

(iv) ডান ইলিয়াক ফোসা শক্ত হওয়া:- সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টেন্ডারনেসের সাথে মাংসপেশী অনমনীয়তা স্পষ্ট হয়, ফলে সঠিকভাবে আর স্থান নির্ণয় করা যায় না।

প্রশ্ন: একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটসের চিকিৎসা লিখ।

এ্যাপেন্ডিসাইটিসের চিকিৎসা:

(i) রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

(ii) দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

(iii) ব্যথা কমার জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(iv) প্রয়োজনে ইন্টারভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।

(v) সার্জিক্যাল চিকিৎসা: রক্ষণশীল চিকিৎসায় আরোগ্য না হলে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অপারেশন করতে হবে। এ্যাপেন্ডিসেকটমী

(Appendicectomy) করতে হবে।

এনাল ফিসার (Anal Fissure)

প্রশ্ন: এনাল ফিসারের সংজ্ঞা দাও। এনাল ফিসার কত প্রকার? ১২, ১৪

এনাল ফিসার :

মলদ্বারের চারপাশে ভিতরকার ঝিল্লী আবরণী কোঁচকানো পর্দার মত কপাটিকার সৃষ্টি করে। এই কপাটিকা অংশ চিড়ে গেলে বা ফেঁটে গেলে অর্থাৎ বিদারণ ঘটলে এর অভ্যন্তরস্থ ক্ষুদ্র ধমনী স্ফীত হওয়ায় এটিকে একটি অর্শের মত দেখায়, তাকেই এনাল ফিসার বলে।

এনাল ফিসারের প্রকারভেদ:

এনাল ফিসার সাধারণত দুই ভাবে চিহ্নিত করা হয়। যথা-

ক) নিম্ন অস্বাভাবিকতা:

(i) পায়ু পথের ঢাকনি: পায়ুপথটি খোলা থাকে ও কর্তনবৎ ব্যথা নিয়মিত হতে থাকে।

(ii) এট্রপিক এনাস: প্লাস্টিক কাট ব্যাক অপারেশন প্রয়োজন।

(iii) স্টেনন্ড এনাস: নিয়মিত প্রসারণ।

(iv) মেমব্রেনাস স্টেনসিসঃ ইনসিশন (ছিদ্রকরণ)।

খ) উচ্চ অস্বাভাবিকতাঃ

(i) এনো রেক্টাল এজেন্সি, (ii) রেক্টাল আট্রিসিয়া ও (ii) ক্লোয়েকা।

২। এনাল ফিসারের লক্ষণগুলি লিখ। ১২

এনাল ফিসারের ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) ধারালো অস্ত্র দ্বার কর্তনবৎ ব্যথা।

(ii) মলের সাথে উজ্জ্বল বর্ণের রক্ত মিশ্রিত থাকবে।

(iii) মলদ্বারে সামান্য ডিসচার্জ বর্তমান থাকবে।

(iv) কোষ্টবদ্ধতার ইতিহাস থাকবে।

চিহ্ন:

(i) মলদ্বারের মাথায় একিউট ফিসার দৃশ্যমান হবে।

(ii) প্রচন্ড ব্যাথার কারণে মলদ্বার পরীক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। মলদ্বার খোলা থাকার করণে ভিতরের এনাল স্পিন্ডার দেখা যায়।

 এনাল ফিসারের চিকিৎসা লিখ। ১২, ১৪

এনাল ফিসারের চিকিৎসা:

ক) কনজারভেটিভ চিকিৎসা বা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

(i) লক্ষনানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। ইস্কিউলাস হিপ, মিলিফলিয়াম, গ্র্যাফাইটিস, নাইট্রিক এসিড, এলুমিনা, নাক্স-ভম, সাইলিসিয়া ইত্যাদি।

(ii) কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করার ব্যবস্থা করতে হবে।

(iii) প্রচুর পরিমান আঁশযুক্ত খাদ্য খেতে দিতে হবে।

(iv) প্রচুর পরিমান পানি পান করাতে হবে।

খ) সার্জিক্যাল চিকিৎসা:

পুরাতন রোগের ক্ষেত্রে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করতে হবে। এর নাম ফিসারেক্টমী এবং স্পিনেক্টেরোটমী (Dorsal fisurectomy and sphincterotomy)

Diseases of the digestive glands লিভার অ্যাবসেস (Liver abscess)

লিভার অ্যাবসেস কাকে বলে?

লিভার অ্যাবসেস এর সংজ্ঞা:

কোন কারণে লিভারের কোষে প্রদাহিত হয়ে পুঁজ উৎপন্ন হলে, তাকে লিভার অ্যাবসেস বলে।

লিভার অ্যাবসেস দুই প্রকারের হতে পারে। যথা- ১। পায়োজেনিক

লিভার অ্যাবসেস ২। অ্যামিবিক লিভার অ্যাবসেস

লিভার অ্যাবসেস এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

লিভার অ্যাবসেস এর ক্লিনিক্যাল ফিচার (লক্ষণাবলী):

(i) শুরু ধীরে ধীরে হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বেশ দেরীতে এমনকি কয়েক মাস পরেও দেখা দিতে পারে। পুরুষদের মধ্যে বেশী দেখা যায়। প্রাথমিক সিম্পটম- এনিমিয়া, ওজন কমে যাওয়া প্রথম সিম্পটম।

(ii) জ্বর- ৩৮° সে. পর্যন্ত বা রাত্রে আরো বেড়ে যায়, সঙ্গে প্রচুর ঘাম থাকে।

(iii) ব্যথা- লিভারের স্থানে সব সময় ব্যথা এবং কখনো কখনো ডান কাঁধে তা চলে যেতে পারে। হাটার সময় ব্যথা বেড়ে যাবার কারণে রোগী লিভারের স্থানে হাতের চাপ দিয়ে হাটে। টেন্ডারনেস ও rigidity- একিউট রোগীদের থাকে, কিন্তু ক্রনিক রোগীদের টেন্ডারনেস থাকে না।

(iv) লিভার আকারে বড় হওয়া- লিভার আকারে বড় হয়, কিন্তু লিভারের আকার বড় না হয়েও অ্যাবসেস হতে পারে।

লিভার অ্যাবসেস এর ইনভেস্টিগেশন লিখ।

লিভার অ্যাবসেস এর ইনভেস্টিগেশন :

(i) আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও কম্পিউটেড টমোগ্রাফি- দ্বারা অ্যাবসেসের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করা যায়।

(ii) এক্স-রে- Plain এক্স-রে করলে ডায়াফ্রামের ডান dome উপরের

দিকে ঠেলে উঠা অবস্থায় দেখা যায় Basal lung signs- আক্রান্ত পাশে percussion করলে dullness পাওয়া যাবে।

(iii) রক্ত পরীক্ষা লিউকোসাইটোসিস- সব ক্ষেত্রেই

লিউকোসাইটোসিস হয়। এনিমিয়া উল্লেখযোগ্য।

(iv) মল পরীক্ষা করে- অ্যামিবা বা সিস্ট (cysts) দেখতে হবে, কিন্তু এগুলো না পাওয়া গেলেও অ্যামিবিক অ্যাবসেসের ডায়াগনোসিস বাতিল হয় না।

লিভার অ্যাবসেস এর চিকিৎসা লিখ।

লিভার অ্যাবসেস এর চিকিৎসা।

(i) রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।

(ii) প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

(iii) সহজপাচ্য তরল ও অর্ধতরল খাদ্য দিতে হবে।

(iv) প্রচুর পানীয় পান করতে হবে।

(v) কম ফ্যাটযুক্ত খাবার দিতে হবে।

(vi) পর্যাপ্ত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।

(vii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে ম্যাগনেশিয়া মিউর, মার্ক সল, ব্রায়োনিয়া, কোলেস্টেরিনাম। হবে। যেমন- চেলিডোনিয়াম,

ক্যান্সার অফ লিভার (Cancer of Liver)

ক্যান্সার অফ লিভার কাকে বলে? বা, লিভার ক্যান্সারের সংজ্ঞা দাও। ১১

ক্যান্সার অফ লিভার :

লিভার কোষের ম্যালিগন্যান্ট প্রকৃতির পরিবর্তন হলে, তাকে ক্যান্সার অফ লিভার বলে। লিভারের এক প্রকার ফাইব্রয়েড পদার্থ জমে ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঐ ফাইব্রয়েড টিস্যুতে নিউক্লিয়াই সেল ইত্যাদি বর্ধনের ফলে রক্তবাহী টিস্যু আক্রান্ত হয়। এবং লিভারের কোন স্থানে টিউমার সৃষ্টি করে ও ক্রমশ ক্ষত উৎপন্ন করে, যার ফলে ক্রমশ শরীর ক্ষয়, শুদ্ধ ও দুর্বল এবং রক্ত সঞ্চালনে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় মারাত্মক অবস্থা করে।

ক্যান্সার অফ লিভারের কারণতত্ত্ব লিখ।

ক্যান্সার অফ লিভারের কারণতত্ত্ব।

(i) ক্রণিক হেপাটাইটিস-বি ও সি ভাইরাস।

(ii) আলফা টক্সিন কন্টামিনেটে ফুড।

(iii) এলকোহল সেবন।

(iv) লিভার কোষে আয়রণ জমার ফলে।

(v) প্রাইমারী বিলিয়ারী সিরোসিস (মহিলাদের)

(vi) টক্সিন- এলকোহল, আর্সেনিক ইত্যাদি।

(vii) ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ (মহিলাদের)।

(viii) এনাবলিক স্টেরয়েড এবং এন্ডোজেনিক স্টেরয়েড।

লিভার ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ লিখ। ১১ বা, ক্যান্সার অফ লিভারের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

ক্যান্সার অফ লিভারের ক্লিনিক্যাল ফিচার (Clinical features):

লক্ষণ : (1) ক্রমবর্ধমান দূর্বলতা, এনোরেক্সিয়া, ওজন হ্রাস (Weakness, anorexia, weight loss)

(ii) জ্বর এবং এবডোমিনাল পেইন (fever, abdominal pain)

(iii) এনলার্জ, ইরেগুলার, অনুভূতিপ্রবণ লিভার (Enlarged, irregular, tender liver)

(iv) এসাইটিস (ascitis)

(v) লিভার শক্ত বা ইন্টার-এবডোমিনাল রক্তক্ষরন হতে পারে (Bruit may heard over the liver or intra-abdominal bleeding may occur.)

সাইন

(i) এনিমিয়া ও জন্ডিস উপস্থিত থাকবে।

(ii) জ্বর জ্বরভাব ও জ্বর থাকতে পারে।

(ii) মুখমন্ডল ফ্যাকাশে, চোখ বসে যাবে।

(iv) মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে।

(v) আঙ্গুলের ক্লাবিং এবং লিউকোনিকিয়া থাকতে পারে।

(vi) সমস্ত দেহের ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন থাকতে পারে।

(vii) হেপাটোমেগালি (Hepatomegaly) -নন-টেন্ডার, শক্ত, ইরেগুলার।

ক্যান্সার অফ লিভারের ইনভেস্টিগেশন লিখ।

ক্যান্সার অফ লিভারের ইনভেস্টিগেশন (Investigation):

1. Metabolic abnormalities: Polycythaemia, hypercalcaemia,

hypoglycaemia and porphyna cutanea tarda.

2. Imaging: Ultrasonography.

3. à feto protein: Increased or rising serum à feto protein.

4. Liver biopsy

ক্যান্সার অফ লিভারের ভাবীফল লিখ।

ক্যান্সার অফ লিভারের ভাবীফল (Prognosis) :

ক্যান্সার অব লিভারের ভাবীফল ভাল নয়। সঠিক সময় রোগ নির্ণয় করে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করলে প্রায় ১০% রোগী আরোগ্য হয় এবং কিছু রোগী প্রায় ১ বছর বেঁচে থাকে। অন্যথা প্রায় মৃত্যুবরণ করে।

লিভার ক্যান্সারের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১১ বা, ক্যান্সার অফ লিভারের চিকিৎসা লিখ।

ক্যান্সার অফ লিভারের চিকিৎসা:

জেনারেল চিকিৎসা:

(i) রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।

(ii) প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

(iii) সহজপাচ্য তরল ও অর্ধতরল খাদ্য দিতে হবে।

(iv) প্রচুর পানীয় পান করতে হবে।

(v) কম ফ্যাটযুক্ত খাবার দিতে হবে।

(vi) পর্যাপ্ত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।

(vii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা (Surgical Treatment):

1. Surgical removal requires a tumour confined one lobe in the absence of cirrhosis. 2. Liver transplantation

অস্টিওমায়েলাইটিস

অস্টিওমায়েলাইটিস বলতে কি বুঝ?

অস্টিওমায়েলাইটিসের সংজ্ঞা:

হাড়ের ক্যানসেলাস টিস্যু তথা বোন ম্যারোর পায়োজেনিক অর্গানিজম দ্বারা প্রদাহ হওয়াকে অস্টিওমায়েলাইটিস বলা হয়। অসিটওমায়েলাইটিস দুই প্রকার। যথা- একিউট অস্টিওমায়েলাইটিস ও ক্রনিক অস্টিওমায়েলাইটিস।

একিউট অস্টিও-মাইলাইটিসের সংজ্ঞা, কারণ ও লক্ষণাবলি লিখ

একিউট অস্টিও-মাইলাইটিসের সংজ্ঞা:

হঠাৎ হাড়ের ক্যানসেলাস টিস্যু তথা বোন ম্যারোর মধ্যে পায়োজেনিক অর্গানিজম দ্বারা প্রদাহ সৃষ্টি হলে, তাকে একিউট অস্টিওমায়েলাইটিস বলা হয়। একিউট অস্টিওমায়েলাইটিস মূলতঃ শিশুদের কমন রোগ। এটি একটি মারাত্বক ও অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ রোগ।

একিউট অস্টিও-মাইলাইটিসের কারণ :

(i) বয়স: শিশুদের বেশি হয়।

(ii) পুরুষদের বেশি হয়।

(iii) আঘাতের ইতিহাস থাকতে পারে।

(iv) সামাজিক অবস্থান: দারিদ্রতা বা অভাবজনিত এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা।

(v) রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু: স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্রেপটোকক্কাস, নিউমোকক্কাস, হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জি, সালমোনিলা, স্ট্যাফাইলোকক্কাস অ্যালবাস ইত্যাদি।

একিউট অস্টিও-মাইলাইটিসের লক্ষণাবলি:

(i) প্রচন্ড ব্যথা। আক্রান্ত অঙ্গে হঠাৎ ব্যথা হয় এবং নড়াচড়া করলে তা বৃদ্ধি পায়। ব্যথা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

(ii) জ্বর- জ্বরজ্বরভাব জ্বর থাকে।

(iii) শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং অস্থিরতা বর্তমান থাকে।

(iv) পুঁজযুক্ত ফোঁড়া বর্তমান থাকবে।

ইনভেস্টিগেশন:

ব্লাড ফর সিবিসি, ব্লাড ফর কালচার এবং এক্সরে করলে-

(v) ইএসআর ও শ্বেত রক্ত কনিকা বৃদ্ধি পাবে।

(vi) ব্লাড কালচার করলে রক্তে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু উপস্থিতি পাওয়া যাবে।

(vii) এক্স-রে এক্সরে করলে সফ্ট টিস্যু ফোলা পাওয়া যাবে।

কলিলিথিয়াসিস (Cholelithiasis/ Gall stones)

কলিলিথিয়াসিস বলতে কি বুঝ? ১৬

বা, কলিলিথিয়েসিসের সংজ্ঞা দাও। ১৮, ২০

কলিলিথিয়াসিস এর সংজ্ঞা:

কোন কারণে পিত্তথলির মধ্যে পাথর সৃষ্টি হলে, তাকে পিত্তপাথুরী বা কলিলিথিয়াসিস বলে।

কলিলিথিয়াসিসের কারণসমূহ লিখ। ১৬

কলিলিথিয়াসিসের কারণসমূহ :

(i) বয়স- সাধারণতঃ ৩০-৪৫ বছর বয়স্কদের বেশি হয়।

(ii) লিঙ্গ- পুরুষ থেকে মহিলাদের বেশী হয়।

(iii) জেনেটিকস বা বংশগত।

(iv) কলিসিস্টাইটিস বা পিত্তথলির বার বার প্রদাহের কারণে।

(v) রক্তে অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক উপাদানের তারতম্যের ফলে।

(vi) শারীরিক পরিশ্রম না করলে।

(vii) পাথর উৎপন্ন হবার মত খাদ্য ও পানীয় বেশী গ্রহণ করলে।

(viii) পিত্তথলীতে ক্ষত এবং প্রদাহ হলে।

(ix) লোহিত কনিকা অতিরিক্ত ভাঙ্গার ফলে অতিরিক্ত পিত্তরস উৎপন্ন হওয়ার কারণে।

(x) দীর্ঘদিন যাবৎ কোলেষ্টেরল থেরাপি নিলে।

(xi) বহুদিন যাবত জন্মনিয়ন্ত্রনকারী ট্যাবলেট খাওয়ার কারণে।

(xii) পিত্তরসের মধ্যে অস্বাভাবিক মাত্রায় বাইল সল্ট থাকলে।

(xiii) স্থুলদেহের অধিকারী ব্যক্তিদের।

(xiv) অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহনের কারণে।

(xv) জন্মগতভাবে মেটাবলিজমের গোলযোগের কারণে।

(xvi) বিভিন্ন রোগের জটিলতার কারণে- টাইফয়েড, ডায়াবেটিস, ইত্যাদি।

(xvii) মাইক্রোঅর্গানিজমের স্ট্রেপটোকক্কাস, ই. কোলাই ইত্যাদি। কারণে- স্ট্যাফাইলোকক্কাস,

কলিলিথিয়াসিসের প্রকারভেদ লিখ। বা, কলিলিথিয়াসিসের প্রকারভেদ বর্ণনা কর। ১৮, ২০

কলিলিথিয়াসিসের প্রকারভেদ:

কলিলিথিয়াসিসকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক) কোলেষ্টেরল পাথর (Cholesterol stones), খ) পিগমেন্ট পাথর (Pigment stones), গ) মিক্সড পাথর (Mixed stones)

কলিলিথিয়াসিসের লক্ষণাবলি লিখ। ১০ বা, কলিলিথিয়েসিসের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর। ১৮, ২০

কলিলিথিয়াসিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার/ লক্ষণাবলী:

(i) রাইট হাইপোকন্ডিয়াক ও এপিগ্যাস্ট্রিক অঞ্চলে হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা আরম্ভ হয়। ব্যথার প্রকৃতি- ব্যথা হঠাৎ আসে আবার হঠাৎ চলে যায়।

(ii) ব্যথা লিভার অঞ্চল ভেদ করে ডান স্ক্যাপুলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ।

(iii) ব্যথার তীব্রতায় রোগী ছটফট করতে থাকে

(iv) প্রচুর ঘর্মস্রাব ও হাত-পা শীতল হয়ে যায়।

(v) বমি বমিভাব ও পিত্ত বমি করে।

(vi) জ্বর জ্বরভাব ও জ্বর থাকতে পারে।

(vii) জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

(viii) হেপাটোমেগালি দেখা দিতে পারে।

(ix) পালস ও রেসপিরেশন এর পরিবর্তন দেখা দেয়।

(x) মলের রং পরিবর্তন হয়ে সাদা হয়ে যায়।

কলিলিথিয়াসিসের নিদানতত্ত্ব লিখ। ১৩

কলিলিথিয়াসিসের নিদানতত্ত্বঃ

জীবাণু সংক্রমণের দ্বারা পুনঃপুনঃ পিত্তথলীর প্রদাহ সৃষ্টির ফলে, শ্লেষ্মা, মৃত তন্তুকোষ ও মৃত জীবাণুসমূহ একত্রিত হয়ে একটি কেন্দ্রীয় মূল অংশ তৈরী করে, বিশেষ করে যখন প্রদাহের ফলে পিত্তকোষ হতে পিত্তের প্রবাহ শ্লথ হয়। পিত্ত প্রবাহ শ্লথ হলে ইহা জমতে সুবিধা হয়। ইহার উপর কোলেষ্টেরল ও পিত্তের রঞ্জক পদার্থ এই মূল অংশের উপর জমে পাথরের আকার বড় করে।

কলিলিথিয়াসিসের রোগ নির্ণয় লিখ। ১৩, ২০ বা, কিভারে কলিলিথিয়াসিস রোগ নির্ণয় সাধিত হয়? ১০

কলিলিথিয়াসিসের রোগ নির্ণয়/ইনভেস্টিগেশন:

(1) রোগীর লক্ষণাবলী সংগ্রহ করে রোগীলিপি প্রস্তুত করার মধ্যমে।

ii) ডিজিটাল এক্স-রে- ইহার দ্বারা পাথরের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।

(iii) আল্ট্রাসনোগ্রাফি- ইহার মাধ্যমে লিভার, গলব্লাডার ও পাথরের অবস্থা জানা যায়।

(iv) রক্তে সিবিসি পরীক্ষা।

(v) সিরাম বিলিরুবিন পরীক্ষা।

কলিলিথিয়াসিসের জটিলতাসমূহ লিখ। ১৩, ১৮

কলিলিথিয়াসিসের জটিলতাসমূহ:

(i) গলব্লাডার ছিদ্র হওয়া, বাইল ডাক্ট ছিদ্র হওয়া।

(ii) এম্পায়েমা গলব্লাডার। (iii) হেপাটাইটিস। (iv) পেরিটোনাইটিস।

(v) একিউট কলিসিস্টাইটিস, ক্রণিক কলিসিস্টাইটিস।

(vi) অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস, গ্যাংগ্রীন, জন্ডিস

(vii) প্যানক্রিয়াটাইটিস, ক্যান্সার।

কলিলিথিয়াসিস ও কলিসিস্টাইটিসের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। ১৩ কলিলিথিয়াসিস ও কলিসিস্টাইটিসের মধ্যে পার্থক্য:

কলিলিথিয়াসিস

কোন কারণে পিত্তথলির মধ্যে ১ পাথর সৃষ্টি হলে, তাকে পিত্তপাথুরী বা কলিলিথিয়াসিস বলে।

এতে রক্তের উপাদানের ২ তারতম্যের কারণে সৃষ্টি হয়।

এতে বমিবমিভাব ও পিত্ত বমি হয়।

এতে ব্যথা থেমে থেমে হয়।

এর ভাবীফল খুবই খারাপ।

কলিসিস্টাইটিস

পিত্তথলী, কমন বাইল ডাক্ট, হেপাটিক ডাক্ট এর প্রদাহকে কলিসিস্টাইটিস বলে।

এতে পিত্তথলী, কমন বাইল ডাক্ট, হেপাটিক ডাক্ট এ জীবাণু সংক্রমনের কারণে হয়।

এতে পিত্ত পারে। বমি নাও হতে

এতে ব্যথা একটানা চলতে থাকে।

এর ভারীফল খারাপ।

কলিলিথিয়াসিসের চিকিৎসা প্রণালী বর্ণনা কর। ১০ বা, কলিলিথিয়াসিসের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১৬ বা, কলিলিথিয়েসিসের হোমিওপ্যাথিক এবং সার্জিক্যাল চিকিৎসা লিখ। ১৮

কলিলিথিয়াসিসের চিকিৎসা প্রণালী বর্ণনা:

কনজারবেটিভ চিকিৎসা/হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা:

(ক) ঔষধ : কার্ডয়াস মেরিনাস, ক্যালকেরিয়া কার্ব, চেলিডোনিয়াম মেজাজ, চায়না অফিসিনালিস, নাক্স-ভমিকা ইত্যাদি ঔষধ লক্ষণানুসারে সেবন করতে দিতে হবে।

করণীয়:

(i) রোগীকে সম্পূর্ণ বিছানায় বিশ্রামে রাখতে হবে।

(ii) প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

(iii) প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।

(iv) মুখে খেতে না পারলে ইন্টারভেনাস গ্লুকোজ স্যালাইন দিতে হবে।

(v) লক্ষণানুসারে ব্যথা কমার জন্য হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(vi) রোগীর অবস্থার উন্নতির জন্য পরীক্ষা করতে হবে। নিয়মিত- পালস, ব্লাড প্রেসার, রাইট হাইপোকন্ড্রিয়াক শক্ত কিনা পরীক্ষা করতে হবে।

নিষেধ:

(i) ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করতে হবে।

(ii) সকল প্রকার চর্বিযুক্ত খাবার নিষেধ।

(iii) অতিরিক্ত পরিশ্রম ও ব্যায়াম।

পথ্য:

(i) ব্যথার প্রচন্ড অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মুখে খাবার দেয়া নিষেধ।

(ii) রোগী মাঝে মাঝে তীব্র বমি করে সেই অবস্থায় করণীয়-

– রাইলস টিউবের মাধ্যমে তরল খাবার সরবরাহ করা।

শিরা পথে গ্লুকোজ স্যালাইনের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করা।

(iii) বমি না থাকলে করণীয়-

– মুখে পানি এবং পানীয় পান করাতে হবে।

চর্বিবিহীন পথ্য – স্তূপ।

– দুধ দেয়া যাবে।

– তাজা ফলমূল এর জুস।

সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ

উপরিউক্ত চিকিৎসায় রোগী আরোগ্য না হলে এবং পাথর বড়

হলে জটিলতা এড়ানোর জন্য সার্জিক্যাল চিকিৎসা কলিসিস্টেকটমি

করতে হবে।

গলব্লাডার

হেপাটিক ডাক্ট

কমন বাইল ডাক্ট

প্যানক্রিয়াটিক ডাক্ট

হেপাটো- প্যানক্রিয়াটিক এম্পুলা

প্যানক্রিয়াস

চিত্র: বিলিয়ারী সিস্টেম।

হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করা হয় এ রকম পাঁচটি সার্জিক্যাল রোগের নাম ও তিনটি করে ঔষধের নাম লিখ। ২১

হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা করা হয় এ রকম পাঁচটি সার্জিক্যাল রোগের নাম ও

তিনটি করে ঔষধের নাম:

(i) টনসিলাইটিস- বেলেডোনা, ফাইটোলক্কা, মার্ক-সল।

(ii) কলিলিথিয়াসিস- কার্ডয়াস মেরিনাস, ক্যালকেরিয়া কার্ব, চেলিডোনিয়াম মেজাজ।

(iii) রেনাল স্টোন- বার্বারিস ভাল, বেনজোয়িক এসিড, সার্সাপেরিলা।

(iv) একিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস- বেলেডোনা, ফসফরাস, মার্ক-কর।

(v) এনাল ফিসার- নাইট্রিক এসিড, অরাম মেটালিকাম, সাইলিসিয়া।

কলিসিস্টাইটিস (Cholecystitis)

কলিসিস্টাইটিস কাকে বলে?

কলিসিস্টাইটিস এর সংজ্ঞা:

পিত্তথলী, কমন বাইল ডাক্ট, হেপাটিক ডাক্ট এর প্রদাহকে কলিসিস্টাইটিস বলে। (Def: Inflammation of the gall bladder, common bile duct, hepatic duct is called cholicystitics.)

কলিসিস্টাইটিসের কারণসমূহ কি কি? ১২, ১৪ বা, কলিসিস্টাইটিস এর কারণতত্ত্ব লিখ।

কলিসিস্টাইটিস এর কারণতত্ত্ব:

(i) কোন কারণ বশতঃ সিস্টিক ডাক্ট, গলব্লাডারের নেক অথবা কমন বাইল ডাক্টে অবরোধ সৃষ্টি হলে।

(ii) গলব্লাডারে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হলে।

(iii) পিত্তপাথর দ্বারা অবরোধ সৃষ্টি হলে। (iv) টিউমার বা মিউকাস দ্বারা অবরোধ হলে।

(v) কোন কারণ বশতঃ পিত্তথলীতে প্রদাহ ও পুঁজ সৃষ্টি হলে।

(vi) অতিরিক্ত বাইল উৎপন্ন হলে।

(vii) অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস হলে।

(viii) টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া জ্বরের জটিলতার ফলে। (

ix) পিত্তরসের রাসায়নিক উপাদানের তারতম্য হলে।

(x) আন্ত্রিক জীবাণু দ্বারা ইনফেকশন হলে যেমন- ই. কোলাই,

(xi) বড় ধরনের আঘাত, ব্যাপক স্থান পুড়ে যাওয়ার ফলে এবং অপারেশনের পর।

(xii) ডায়াবেটিস মেলিটাস।

কলিসিস্টাইটিস এর প্রকারভেদ লিখ।

কলিসিস্টাইটিস এর প্রকারভেদ:

(i) একিউট কলিসিস্টাইটিস।

ক) একিউট ক্যালকুলাস কলিসিস্টাইটিস।

খ) একিউট এক্যালকুলাস কলিসিস্টাইটিস।

(ii) ক্রণিক কলিসিস্টাইটিস।

কলিসিস্টাইটিস এর ইনভেস্টিগেশন লিখ।

কলিসিস্টাইটিস এর ইনভেস্টিগেশন:

(i) Blood for T.C, D.C, E.S.R, Hb%. WBC বেড়ে যাবে।

(ii) এবডোমেনের প্লেইন এক্সরে- গলব্লাডারে ইনফেকশনের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যাবে।

(iii) হেপাটো-বিলিয়ারী সিস্টেমের আল্ট্রাসনোগ্রাফি- গলব্লাডারের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়বে।

কলিসিস্টাইটিস এর জটিলতা লিখ।

কলিসিস্টাইটিস এর জটিলতা:

(i) পারফোরেশন,

(ii) গ্যাংগ্রীন,

(iii) পেরিটোনাইটিস,

(iv) কলিলিথিয়াসিস,

(v) জন্ডিস,

(vi) হেপাটোমেগালি,

(vii) হেপাটাইটিস,

(viii) সিরোসিস অব লিভার,

(ix) ক্যান্সার অব লিভার।

প্রশ্নঃ কলিসিস্টাইটিসের লক্ষণাবলী বর্ণনা কর। ১০, ১২, ১৪ বা, কলিসিস্টাইসিস এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

কলিসিস্টাইসিস এর ক্লিনিক্যাল ফিচারঃ

(i) বয়স: ৩০ থেকে ৫০ বছরের ব্যক্তিদের অধিক হয়।

(ii) লিঙ্গ – মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।

(iii) শারীরিক গঠন : চর্বিবহুল বা মেদ বহুল ব্যক্তি।

লক্ষণাবলীঃ

(i) ব্যথা : অবস্থান- ব্যথা প্রধানতঃ রাইট হাইপোকন্ড্রিয়াক এবং ইপিগ্যাস্ট্রিয়াম অঞ্চলে হয়।

ব্যথার প্রকৃতি- ব্যথা হঠাৎ প্রচন্ড এবং কলিক ধরনের, টেনে ছিঁড়ে ফেলার ন্যায়।

ব্যথার ফোর্স বা গতি ব্যথা স্ক্যাপুলার ইনফেরিয়র এঙ্গেলে অথবা ডান সোল্ডারের মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। কখনো কখনো ব্যথা এবডোমেনের বাম পাশের বুকে ছড়াতে পারে।

স্থায়ীত্ব কাল : ১/২ ঘন্টা থেকে কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হয়।

(ii) রোগী অস্থির প্রকৃতির হয়।

(iii) বমিবমিভাব এবং বমি হতে পারে। উগ্র বমি হতে পারে।

(iv) জ্বর জ্বর ভাব ও জ্বর থাকতে পারে।

(v) রোগী সামান্য উপশমের জন্য গরম সেক নিতে চায়।

(vi) ব্যথার পুনরাক্রমনের ইতিহাস থাকবে।

(vii) উদগার থাকতে পারে।

(viii) পেট ফাঁপার ইতিহাস থাকবে।

(ix) চর্বি জাতীয় খাদ্যের প্রতি অনীহার ইতিহাস থাকতে পারে।

সাইন:

(i) শীতসহ জ্বর এবং খিচুনী থাকতে পারে।

(ii) জন্ডিস থাকতে পারে।

(iii) দ্রুত হৃদস্পন্দন থাকবে।

(iv) পেটের উপরের অংশে অস্বস্থিবোধ।

(V) ডান হাইপোকন্ড্রিয়াক অঞ্চলে হাত দ্বারা পরীক্ষা করলে শক্ত, ফোলা, স্পর্শকাতর ব্যথা অনুভব হবে।

(vi) হাত দ্বারা পরীক্ষা করলে পেটে একটি পিন্ড অনুভব হতে পারে। (vii) মারফিস সাইন পজিটিভ হবে। (Murphy’s sign: Positive.)

প্রশ্নঃ কলিসিস্টাইটিসের ব্যবস্থানা লিখ। ১০, ১২, ১৪ বা, কলিসিস্টাইসিস এর চিকিৎসা লিখ। কলিসিস্টাইসিস এর চিকিৎসাঃ

(i) রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।

(ii) প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

(iii) রোগীর অবস্থার উন্নতির জন্য পালস, ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করতে হবে।

(iv) প্রয়োজনে ইন্টারভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।

করণীয়: (i) গরম সেক দিলে আরাম বোধ করলে দিতে হবে।

নিষেধ: (i) ধুমপান ও মদ্যপান অভ্যাস থাকলে বর্জন করতে হবে।

(ii) সকল প্রকার চর্বিযুক্ত খাবার। (iii) অতিরিক্ত পরিশ্রম করা।

(iv) অতিরিক্ত ব্যায়াম করা।

পথ্যঃ

(i) সহজপাচ্য তরল ও অর্ধ তরল পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে।

(ii) তাজা ফলমূল ও শাকসব্জি খাদ্য হিসাবে দিতে হবে।

(iii) ব্যথার প্রচন্ড অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মুখে খাবার দেয়া নিষেধ।

(iv) রোগী মাঝে মাঝে তীব্র বমি করবে সে অবস্থায় করণীয়-

রাইলস টিউবের মাধ্যমে তরল খাবার সরবরাহ করতে হবে। – শিরাপথে গ্লুকোজ স্যালাইনের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: যখন রক্ষণশীল চিকিৎসা ব্যর্থ হবে এবং রোগ জটিল আকার ধারণ করবে তখন কলিসিস্টেকটমী করতে হবে।

হার্নিয়া (Hernias.)

প্রশ্ন: হার্নিয়া কি? ইহার শ্রেণীবিভাগ কর। ০৮, ১৫ বা, হার্নিয়ার সংজ্ঞা দাও। ইহার শ্রেণী বিভাগ কর। ১০, ১৩

হার্নিয়ার সংজ্ঞা:  হার্নিয়া (Hernia) হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে কোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যু তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে বের হয়ে আশেপাশের দুর্বল বা ছিদ্রযুক্ত অঞ্চল দিয়ে চামড়ার নিচে স্ফীত হয়। সাধারণত এটি পেটের দেয়ালের দুর্বল অংশ দিয়ে অন্ত্র বা চর্বির একটি অংশ বের হয়ে আসে।

হার্নিয়ার শ্রেণীবিভাগ:

হার্নিয়াকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়, যেমন এর অবস্থান, কারণ, এবং প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে।

1. অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে:

  • ইনগুইনাল হার্নিয়া (Inguinal Hernia): পেটের নিম্নাংশে ইনগুইনাল ক্যানালের মাধ্যমে অন্ত্র বের হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ হার্নিয়া।

    • ডাইরেক্ট ইনগুইনাল হার্নিয়া: পেটের দেয়ালের দুর্বল অংশ দিয়ে অন্ত্র বের হয়।
    • ইনডাইরেক্ট ইনগুইনাল হার্নিয়া: জন্মগতভাবে ইনগুইনাল ক্যানাল বন্ধ না থাকার কারণে অন্ত্র বের হয়।
  • ফেমোরাল হার্নিয়া (Femoral Hernia): পেটের নিম্নাংশে ফেমোরাল ক্যানালের মাধ্যমে অন্ত্র বের হয়। এটি নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

  • আমবিলিকাল হার্নিয়া (Umbilical Hernia): নাভির চারপাশে অন্ত্র বের হয়ে আসে। এটি শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে সাধারণ।

  • ইনসিশনাল হার্নিয়া (Incisional Hernia): পূর্বে অস্ত্রোপচার করা স্থানের ক্ষতস্থান দুর্বল হয়ে গেলে অন্ত্র বের হয়ে আসে।

  • হায়াটাল হার্নিয়া (Hiatal Hernia): ডায়াফ্রামের দুর্বল অংশ দিয়ে পাকস্থলীর অংশ উপরের দিকে বের হয়ে আসে।

  • লাম্বার হার্নিয়া
  • অবটুরেটর হার্নিয়া
  • সায়াটিক হার্নিয়া

2. কারণের ওপর ভিত্তি করে:

  • কনজেনিটাল হার্নিয়া (Congenital Hernia): জন্মগত অবস্থার কারণে হয়।
  • অ্যাকুইয়ার্ড হার্নিয়া (Acquired Hernia): পরবর্তীকালে দুর্বল পেটের দেয়াল বা অতিরিক্ত চাপের কারণে হয়।

3. প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে:

  • রিডিউসিবল হার্নিয়া (Reducible Hernia): হার্নিয়ার স্ফীত অংশ চাপ দিলে বা শুয়ে পড়লে ভেতরে প্রবেশ করে।
  • ইরিডিউসিবল হার্নিয়া (Irreducible Hernia): স্ফীত অংশ ভেতরে প্রবেশ করানো সম্ভব নয়।
  • স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া (Strangulated Hernia): হার্নিয়ার অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যা একটি জরুরি অবস্থা।
  • ইনফ্রেন্ড হার্নিয়া।
  • অবস্ট্রাকটেড হার্নিয়া

4.  হার্নিয়ার sac-এর contents অনুযায়ী:

(i) এন্টারোসিল, (ii) ওমেন্টোসিল।

প্রশ্নঃ হার্নিয়ার কারণ লিখ। ২০১৮

হার্নিয়ার কারণ:

হার্নিয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: জন্মগত কারণ এবং অর্জিত কারণ

১. জন্মগত কারণ (Congenital Causes):

  • টিস্যুর দুর্বলতা: জন্মগতভাবে পেটের দেয়াল বা মাংসপেশির দুর্বলতা।
  • ইনগুইনাল ক্যানাল বন্ধ না হওয়া: ভ্রূণ অবস্থায় পুরুষ শিশুদের ক্ষেত্রে টেস্টিস নেমে আসার সময় ইনগুইনাল ক্যানাল বন্ধ না হলে জন্মগত হার্নিয়া হতে পারে।

২. অর্জিত কারণ (Acquired Causes):

  • ভারী জিনিস তোলা।
  • দীর্ঘ সময় ধরে কাশি (যেমন ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস বা ধূমপায়ীদের কাশি)।
  • দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য, যার ফলে মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দিতে হয়।
  • মূত্রত্যাগে বাধা (যেমন প্রোস্টেট সমস্যায় দীর্ঘ সময় চাপ দিতে হয়)।
  • গর্ভাবস্থা, বিশেষত একাধিক গর্ভধারণ।
  • ওজনাধিক্য (মোটা হওয়া), যা পেটের দেয়ালে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
  • পূর্বের অস্ত্রোপচারের ক্ষতস্থান (ইনসিশনাল হার্নিয়া)।
  • আঘাতজনিত ক্ষতি বা পেটের দেয়ালে আঘাত।
  • পেশির অবক্ষয় বা দূর্বলতা (বিশেষত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে)।
  • বার্ধক্যের কারণে পেটের টিস্যু দুর্বল হওয়া।
  • দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করা।
  • অতিরিক্ত ধূমপান বা মাদকাসক্তি, যা টিস্যুর পুনর্গঠনে বাধা সৃষ্টি করে।
  • অপুষ্টিজনিত কারণে পেশির দুর্বলতা।

প্রশ্নঃ হার্নিয়ার লক্ষণাবলী লিখ। ২০১৮

হার্নিয়ার লক্ষণাবলী:

হার্নিয়ার লক্ষণ রোগীর ধরণ, অবস্থান, এবং জটিলতার ওপর নির্ভর করে। সাধারণ লক্ষণগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

    • পেটের দেয়ালের দুর্বল স্থানে (যেমন ইনগুইনাল অঞ্চল বা নাভি) স্ফীত অংশ দেখা যায়।
    • সাধারণত স্ফীতি দাঁড়ালে বা চাপ দিলে বৃদ্ধি পায় এবং শুয়ে পড়লে কমে যায়।
    • ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ব্যথা বা চাপ অনুভব হয়, বিশেষত ভারী কাজ করার সময়।
    • দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ালে বা কাশি দিলে ব্যথা বৃদ্ধি পেতে পারে।
    • স্ফীত স্থানে মৃদু জ্বালাপোড়া বা টান লাগার অনুভূতি হতে পারে।
    • বিশেষত হাঁটাচলা বা কাজ করার সময় ব্যথা হতে পারে।
    • স্ফীত অংশকে ভেতরে প্রবেশ করানো সম্ভব হয় না।
    • হার্নিয়ার অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
    • তীব্র ব্যথা, লালচে বা বেগুনি রঙের স্ফীতি।
    • বমি বমি ভাব, বমি, জ্বর এবং পেট ফাঁপা।
    • এটি একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি।
    • অন্ত্রের কোনো অংশ হার্নিয়ার মাধ্যমে বের হলে অন্ত্রের কাজকর্ম ব্যাহত হয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
    • অন্ত্রের অংশ সংকুচিত বা ব্লক হলে হতে পারে।
    • পুরুষদের ক্ষেত্রে স্ক্রোটামে টান অনুভব।
    • উরুর উপরের অংশে স্ফীতি এবং অস্বস্তি।
    • নাভির চারপাশে স্ফীতি।
    • বুক জ্বালাপোড়া, ঢেকুর ওঠা, খাবার গিলতে কষ্ট। 
    • এই স্ফীতির মধ্যে ফ্লুইড জমে। চাপ দিলে ফুইড উপরে উঠে যায় এবং পরে ফিরে আসে।
    • দীর্ঘদিন এই স্ফীতির কারণে কুঁচকি স্থান হতে অন্ডকোষ পর্যন্ত ফুলে উঠে এবং কুঁচকি স্থানে ব্যথা করে।
    • চলাফেরা সময় অস্বস্থিবোধ করে।

প্রশ্ন: স্ট্রাংগুলেটেড হার্নিয়া কি? ০৮

স্ট্রাংগুলেটেড হার্নিয়া: স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া হলো হার্নিয়ার একটি গুরুতর জটিলতা যেখানে হার্নিয়ার অংশে (অন্ত্র বা অন্য টিস্যু) রক্ত সরবরাহ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এটি একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি কারণ রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট টিস্যুতে গ্যাংগ্রিন (টিস্যুর মৃত্যু) হতে পারে। স্ট্রাংগুলেশনের প্রথম সিম্পটম দেখা দেয়ার ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই গ্যাংগ্রীন দেখা দিতে পারে। ইংগুইনাল হার্নিয়া, ফিমোরাল হার্নিয়ার চেয়ে বেশী কমন হওয়া সত্ত্বেও ফিমোরাল হার্নিয়াতে strangulation অধিক হয়, কারণ এটির sac-এর neck সরু এবং এর ওয়াল rigid।

স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়ার বৈশিষ্ট্য:

  1. ইরিডিউসিবল হার্নিয়া: হার্নিয়ার অংশকে ম্যানুয়াল চাপে ভেতরে প্রবেশ করানো সম্ভব হয় না।

  2. তীব্র ব্যথা: স্ফীত স্থানে তীব্র, ধারালো ব্যথা অনুভূত হয়, যা সময়ের সঙ্গে আরও তীব্র হয়।

  3. লালচে বা বেগুনি রঙ: হার্নিয়ার স্ফীত অংশ লাল, বেগুনি বা কালো হয়ে যেতে পারে, যা রক্ত সঞ্চালনের বাধা নির্দেশ করে।

  4. বমি এবং বমি বমি ভাব: অন্ত্র সংকুচিত বা ব্লক হয়ে গেলে বমি হতে পারে।

  5. পেট ফাঁপা এবং মলত্যাগ বন্ধ: অন্ত্রের ব্লকেজের কারণে পেট ফাঁপা এবং গ্যাস বা মলত্যাগে সমস্যা দেখা দেয়।

  6. জ্বর এবং দেহের দুর্বলতা: ইনফেকশন বা সেপসিসের কারণে জ্বর এবং দেহে ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।

স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়ার ঝুঁকি:

  • গ্যাংগ্রিন: আক্রান্ত অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হলে টিস্যু মরে যেতে পারে।
  • পেরিটোনাইটিস: অন্ত্রের ফেটে যাওয়া বা ইনফেকশন পেটের গহ্বরে ছড়িয়ে পড়লে এটি মারাত্মক হতে পারে।
  • মৃত্যুর ঝুঁকি: সময়মতো চিকিৎসা না করলে জটিলতা জীবন-সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

চিকিৎসা:

স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি, এবং তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।

  • অস্ত্রোপচার:
    • হার্নিয়ার টিস্যুকে মুক্ত করে রক্ত সঞ্চালন পুনরুদ্ধার করা।
    • গ্যাংগ্রিনযুক্ত অংশ সরিয়ে ফেলা (যদি প্রয়োজন হয়)।
  • প্রতিরোধ:
    • আগের থেকেই রিডিউসিবল হার্নিয়া চিকিৎসা করা।
    • হার্নিয়ার স্থানীয় পেশি শক্তিশালী করার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।

প্রশ্ন: স্ট্রাংগুলেটেড ইংগুইনাল হার্নিয়ার ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৮

স্ট্রাংগুলেটেড ইংগুইনাল হার্নিয়ার চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনাঃ

স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড ইনগুইনাল হার্নিয়া একটি মেডিকেল ইমারজেন্সি এবং দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। রোগীর অবস্থা নির্ণয় এবং জীবন রক্ষা করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়:

১. তাত্ক্ষণিক রোগ নির্ণয় এবং স্থিতিশীল করা:

ক. রোগ নির্ণয়:

  • ক্লিনিক্যাল মূল্যায়ন:
    • স্ফীত অংশে তীব্র ব্যথা, লালচে বা বেগুনি রঙ, এবং ইরিডিউসিবল হার্নিয়া।
    • বমি, পেট ফাঁপা, এবং মলত্যাগ বন্ধ থাকার ইতিহাস।
  • ইমেজিং পরীক্ষা:
    • আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান হার্নিয়ার অবস্থা এবং রক্ত সরবরাহের বাধা নির্ণয়ে সহায়ক।

খ. রোগীকে স্থিতিশীল করা:

  • আইভি ফ্লুইড দেওয়া: পানিশূন্যতা পূরণের জন্য।
  • পেইন ম্যানেজমেন্ট: ব্যথা কমাতে অ্যানালজেসিক বা সেডেটিভ দেওয়া।
  • অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা: ইনফেকশন প্রতিরোধে ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন, সেফট্রায়াক্সোন, মেট্রোনিডাজল)।

২. অস্ত্রোপচার (Surgical Management)

স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড ইনগুইনাল হার্নিয়ার একমাত্র কার্যকর চিকিৎসা হলো জরুরি অস্ত্রোপচার।

ক. সার্জারি করার পদ্ধতি:

  1. হার্নিয়াটমি (Herniotomy): হার্নিয়াল স্যাক খোলা হয় এবং এর ভেতরের অংশ পরীক্ষা করা হয়।
  2. রক্ত সঞ্চালন পুনরুদ্ধার: যদি হার্নিয়াল স্যাকের অংশ জীবিত থাকে, তবে তা ভেতরে প্রবেশ করানো হয়।
  3. গ্যাংগ্রিনযুক্ত অংশ অপসারণ:
    • গ্যাংগ্রিনযুক্ত বা মৃত অন্ত্র কেটে ফেলা হয়।
    • পুনঃসংযোগ (Anastomosis) বা কোলস্টোমি প্রয়োজন হলে করা হয়।
  4. হার্নিয়া রিপেয়ার (Hernia Repair):
    • অপরেশনের ধরন:
      • টেনশন-ফ্রি মেশ রিপেয়ার: পেশি পুনর্গঠনের জন্য মেশ ব্যবহার করা হয়।
      • ল্যাপারোস্কোপিক হার্নিয়া রিপেয়ার: আধুনিক এবং কম আক্রমণাত্মক পদ্ধতি।

৩. পরবর্তী পরিচর্যা (Postoperative Care):

  1. ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ:
    • ইনফেকশনের লক্ষণ পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক চালিয়ে যাওয়া।
  2. ডায়েট ম্যানেজমেন্ট:
    • অপারেশনের পর তরল এবং নরম খাবার দেওয়া।
  3. পুনর্বাসন এবং ফিজিক্যাল থেরাপি:
    • পেটের পেশি শক্তিশালী করতে থেরাপি।
  4. জটিলতা পর্যবেক্ষণ:
    • রক্তক্ষরণ, ক্ষতস্থান ফুলে যাওয়া, বা পুনরায় হার্নিয়ার ঝুঁকি।

৪. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  • আগে থেকেই হার্নিয়ার অস্ত্রোপচার করানো (ইলেকটিভ সার্জারি)।
  • ভারী কাজ ও অতিরিক্ত চাপ এড়ানো।
  • নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক ডায়েট বজায় রাখা।

হোমিওপ্যাথিক ঔষধ : লক্ষণানুসারে- নাক্স-ভমিকা, ভিরেট্রাম এলবাম, ককিউলাস, ওপিয়াম ও প্লাম্বাম মেটালিকাম প্রভৃতি ব্যবহার করতে হরে।

প্রশ্ন: হার্নিয়া ও হাইড্রোসিলের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ০৮, ১০, ১৩, ১৫ বা, ইংগুইনাল হার্নিয়া ও হাইড্রোসিলের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ২০০৯, ১৮

বিষয়হার্নিয়া (Hernia)হাইড্রোসিল (Hydrocele)
সংজ্ঞাপেটের অভ্যন্তরীণ অংশ (যেমন অন্ত্র) পেটের দেয়ালের দুর্বলতা দিয়ে বেরিয়ে আসে।টেস্টিস বা স্ক্রোটামের চারপাশে তরল জমে ফোলাভাব সৃষ্টি হয়।
উপস্থিতি স্থানপেটের নিম্নাংশে (ইনগুইনাল অঞ্চল), নাভি, বা সার্জারির ক্ষতস্থানে হতে পারে।শুধুমাত্র স্ক্রোটাম বা টেস্টিসের চারপাশে তরল জমে।
কারণপেটের দেয়ালের দুর্বলতা বা অতিরিক্ত চাপ।ইনফেকশন, আঘাত, অথবা জন্মগত কারণে টেস্টিসের চারপাশে তরল জমা।
স্ফীতির বৈশিষ্ট্যদাঁড়ালে বা চাপ দিলে স্ফীতি বাড়ে এবং শুয়ে পড়লে কমে যেতে পারে।স্ফীতি ধ্রুবক থাকে, শুয়ে পড়লেও আকার পরিবর্তন হয় না।
ব্যথাসাধারণত হালকা ব্যথা বা টান অনুভূত হয়; জটিলতায় তীব্র ব্যথা হতে পারে।সাধারণত ব্যথাহীন, তবে বড় হলে অস্বস্তি হতে পারে।
জটিলতাস্ট্র্যাঙ্গুলেশন, অন্ত্রের ব্লকেজ, বা গ্যাংগ্রিন হতে পারে।সাধারণত জটিলতা হয় না, তবে ইনফেকশনের ঝুঁকি থাকতে পারে।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতিশারীরিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান।শারীরিক পরীক্ষা এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফি।
চিকিৎসাসাধারণত অস্ত্রোপচার (হার্নিয়া রিপেয়ার)।অনেক সময় নিজে নিজেই সেরে যায়; প্রয়োজন হলে অস্ত্রোপচার (হাইড্রোসিলেকটমি)।
প্রতিরোধভারী জিনিস তোলা এড়ানো, পেশি শক্তিশালী করা।টেস্টিসের সুরক্ষা এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ।

প্রশ্ন: ইংগুইনাল হার্নিয়ার ব্যবস্থাপনা লিখ। ১০, ১৩, ১৫ ইংগুইনাল হার্নিয়ার ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসাঃ

ডাইরেক্ট ইংগুইনাল হার্নিয়ার চিকিৎসা প্রায় ইনডাইরেক্ট হার্নিয়ার চিকিৎসার মতোই। পার্থক্য শুধু, এক্ষেত্রে হার্নিয়ার থলে কেটে ফেলা হয় না। থলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে এটির সামনে ট্রান্সভার্সালিস ফেসা মেরামত করা হয় এবং ইংগুইনাল ক্যানালের পস্টিরিয়র ওয়ালও কিছুটা মেরামত করা হয়। ইনডাইরেক্ট হার্নিয়ার তুলনায় ডাইরেক্ট হার্নিয়ার বেশী পুনরাবৃত্তি ঘটে (প্রায় ২০%)।

ট্রাস ব্যবহার: যদি রোগীর অবস্থা বেশী খারাপ থাকে এবং অ্যানাসথেরিয়া দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হলে বা ক্রোনিক strain থাকলে (যেমন- বৃদ্ধ রোগীর ক্রোনিক কাঁশি), বা অপারেশন করতে না চায় তবে ট্রাস ব্যবহার করা যায়। ট্রাস দ্বারা হার্নিয়া ভাল হয় না, কিন্তু এর জটিলতা এড়ানো যায়, যেমন- স্ট্রাংগুলেশন। ট্রাস সব সময়ই পড়ে থাকতে হবে। রাত্রে খুলে রাখা যেতে পারে, তবে কাঁশি থাকলে ঘুমের মধ্যেও পড়ে থাকতে হবে। শুইয়ে হার্নিয়া রিডিউস করে ট্রাস বাধতে হবে।

Diseases of the urinary tract (কিডনী ও ইউরেটারের ডিজিজ) Renal calculi (কিডনী পাথর)

প্রশ্ন: নেফ্রোলিথিয়েসিস এর সংজ্ঞা লিখ। ২০১৭, ১৮ বা, মূত্র পাথুরীর সংজ্ঞা লিখ।

নেফ্রোলিথিয়েসিস এর সংজ্ঞা/ মূত্র পাথুরীর সংজ্ঞাঃ

রক্তের অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক উপাদানের তারতম্যের কারণে কিডনীর মধ্যে ক্যালসিয়াম অকজালেট, ক্যালসিয়াস ফসফেট, ইউরিক এসিড বা ইউরেট ও সিসটিন ইত্যাদি উপাদান জমাট বেঁধে পাথর আকার ধারণ করলে তাকে, রেনাল ক্যলকুলি বা রেনাল স্টোন বা নেফ্রোলিথিয়েসিস বা মূত্রপাথুরী বলে। ইহা কিডনীতে উৎপন্ন হয় এবং পেলভিস ও ইউরেটার হয়ে ইউরিনারী ব্লাডারে আসে।

প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর কারণ বর্ণনা কর। ২০০৮, ১০ বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের কারণ লিখ। ২০১৮ বা, কিডনী স্টোনের কারণ লিখ। ২০১৭ মূত্র পাথুরীর কারণ:

1. কম পানি পান করা: শরীরে পানির অভাব হলে প্রস্রাব ঘন হয়ে যায়, যা খনিজ পদার্থ জমে পাথর তৈরি করে।

2. অতিরিক্ত সল্ট বা প্রোটিন গ্রহণ: বেশি লবণ বা প্রোটিনযুক্ত খাবার প্রস্রাবের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম ও ইউরিক অ্যাসিডের নিঃসরণ বাড়ায়।

3. অক্সালেটসমৃদ্ধ খাবার: পালং শাক, চা, চকোলেট, বাদাম ইত্যাদি বেশি খেলে অক্সালেট পাথরের ঝুঁকি বাড়ে।

4. জন্মগত কারণ: কিডনি বা মূত্রনালীর গঠনের ত্রুটি থাকলে পাথর তৈরি সহজ হয়।

5. ইনফেকশন: দীর্ঘস্থায়ী মূত্রনালীর সংক্রমণ স্ট্রুভাইট পাথরের কারণ হতে পারে।
6. মেটাবলিক সমস্যা:

হাইপারক্যালসিউরিয়া (প্রস্রাবে বেশি ক্যালসিয়াম নিঃসরণ)।
হাইপারঅক্সালিউরিয়া (অতিরিক্ত অক্সালেট নিঃসরণ)।
হাইপারইউরিকোসিউরিয়া (ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া)।

7. অল্প শারীরিক কার্যক্রম: দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা অনিয়মিত জীবনযাত্রার কারণে মূত্র প্রবাহ কমে যায়।
8. অতিরিক্ত ওজন: স্থূলতা কিডনির ওপর চাপ বাড়ায় এবং পাথর তৈরির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

9. দীর্ঘস্থায়ী কিছু রোগ: হাইপারথাইরয়েডিজম, গাউট, ডায়াবেটিস, বা কিডনি রোগ।
10.কিছু ওষুধ: ডিউরেটিকস, অ্যান্টাসিড বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ প্রস্রাবে খনিজ পদার্থের মাত্রা বাড়াতে পারে।

11. উষ্ণ আবহাওয়া: বেশি ঘাম হলে প্রস্রাব কম হয়, যা পাথর তৈরিতে সহায়ক।
12. জলবায়ু ও অঞ্চল: যেসব অঞ্চলে পানি বেশি খনিজযুক্ত, সেখানে পাথরের ঝুঁকি বেশি।

প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর প্যাথলজি লিখ।

প্যাথলজী – প্রধানত: দুই প্রকারের পাথর হয়।

(১) প্রাইমারী পাথর ইহা স্বাভাবিক ইউরিনারী ট্রাক্টে হয় এবং অক্সালেট বা ইউরিক এসিড দ্বারা তৈরী হয়।

(২) সেকেন্ডারী পাথর ইহা অবস্ট্রাকটেড এবং ইনফেকটেড ইউরিনারী ট্রাক্টে হয়। ইহা অ্যামোনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ফসফেট দ্বারা তৈরী হয়।

প্রশ্ন: মূত্র পাথুরীর শ্রেণিবিভাগ লিখ। ২০১৮ বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের শ্রেণিবিভাগ লিখ। ২০১৮ বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের প্রকারভেদ বৈশিষ্ট্যসহ লিখ। ২০১৭

শ্রেণীবিভাগ:-

(i) অক্সালেট পাথর ইহা শক্ত ও কালো বর্ণের পাথর, গায়ে তীব্র কাটা থাকে। এরা এক্স-রে দ্বারা ধরা পড়ে।

(ii) ফসফেট পাথর এরা শক্ত এবং সাদা রং এর। ক্যালসিয়াম, অ্যামোনিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম ফসফেট (ট্রিপল ফসফেট) দ্বারা তৈরী। অনেক সময় ইহা স্ট্রাগহর্ণ পাথর তৈরী করে। এরা এক্স-রে দ্বারা ধরা পড়ে এবং ছোট অবস্থায় সহজে বের হয়।

(iii) ইউরিক এসিড এবং ইউরেট পাথর- এরা বাদামী রং এর, শক্ত  এবং মসৃন হয়। এরা এক্স-রে দ্বারা ধরা পড়ে না।

(iv) সিসটিন পাথর- এরা সংখ্যায় একাধিক, হলুদ রং এর, নরম এবং মসৃন হয়।

(v) জ্যানথিন পাথর – ইহা কদাচিৎ দেখা যায়।

প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর ইনভেস্টিগেশন লিখ। বা, কিডনী স্টোনের ইনভেস্টিগেশন লিখ। ২০১৭ কিডনী স্টোনের ইনভেস্টিগেশন:

(i) প্রস্রাব পরীক্ষা- লোহিত রক্ত কনিকা এবং পূজ সেল দেখতে হবে। কালচার ও সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করলে নির্দিষ্ট জীবাণু উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।

(ii) পেটের এক্স-রে করলে পাথর দেখা যেতে পারে। ৯০% পাথর এক্স-রে দ্বারা ধরা পড়ে।

(iii) ইন্টারেনাল পাইলোগ্রাফি করলে পাথরের অবস্থান এবং কিডনির কার্যক্ষমতা সম্পর্কে জানা যায়।

(iv) সিরাম ক্যালসিয়াম এবং সুগার লেভেল দেখতে হবে।

`(v) আল্ট্রাসনোগ্রাম: আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে পাথরের উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।

প্রশ্ন: মূত্র পাথুরীর লক্ষণাবলি বর্ণনা কর। ২০০৮, ১০, ১৮ বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের লক্ষণাবলী উল্লেখ কর। ২০১৮ বা, রেনাল ক্যালকুলাসের লক্ষণাবলী লিখ। ২০১৭

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) রেনাল স্টোন ৩০ – ৪০ বৎসর বয়সের মধ্যে বেশী হয়। মেয়েদের- তুলনায় পুরুষদের বেশী হয়।

(ii) স্থায়ী কিডনী ব্যথা, প্রস্রাব বাহির হতে বাধা প্রাপ্ত হলে হঠাৎ পেলভিস অঞ্চলে মারাত্মক ব্যথা হয়। দূরন্ত ব্যথা খুবই প্রচন্ড থাকে। রোগী ব্যথায় হাঁটু মোড়াইয়া গড়াগড়ি করতে থাকে। এই ব্যথা কুঁচকী, উরুর ভিতর দিকে, অন্ডকোষ বা লেবিয়াম মেজাজে আসতে পারে। ব্যথা হঠাৎ চলে যায়।

(iii) বমি বমিভাব এবং বমি ব্যথার সঙ্গে থাকতে পারে। পেট ফুলে যেতে পারে।

(iv) প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। এই রক্ত অনুবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়তে পারে বা খালি চোখেও দেখা যেতে পারে।

(v) প্রস্রাব অনুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করলে- পূজ সেল পাওয়া যায়।

(vi) প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ কারণে জ্বর থাকতে পারে।

(vii) রেনাল কলিকের কয়েক ঘণ্টা পর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।

(viii) রোগীকে পরীক্ষা জন্য শুধু কোমড়ে চাপ দিলে ব্যথা ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায় না। হাইড্রোনেফ্রোসিস হলে হাত দ্বারা কিডনী অনুভব যেতে পারে।

প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর জটিলতা লিখ। বা, নেফ্রোলিথিয়েসিসের জটিলতাসমূহ উল্লেখ কর। ২০১৮

মূত্র পাথুরীর জটিলতা: (i) হাইড্রোনেফ্রোসিস।

(ii) জীবাণু সংক্রমন হলে পাইলোনেফ্রাইটিস ও হাইড্রোনেফ্রোসিস হতে পারে। (iii) রেনাল পেলভিসের ক্যান্সার

(iv) ইউরেটার ব্লক হওয়ার কারণে প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে।

প্রশ্নঃ মূত্র পাথুরীর সার্জিক্যাল চিকিৎসা লিখ। ০৮, ১০ বা, কিডনী স্টোনের চিকিৎসা লিখ। ২০১৭

চিকিৎসা: ছোট পাথর নিজে নিজেই বাহির হয়ে যেতে পারে। কিন্তু পাথরের ডায়ামিটার ১ সেঃ মিঃ এর বেশী হলে নিজে নিজে বাহির হতে পারে না। যদি পাথরের কারণে কিডনী ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় এবং পাথরের প্রকার ক্রমশঃ বড় হতে থাকে তবে পাথর বাহির করে ফেলতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: পায়েলোলিথোটমী করে পাথর রেনাল পেলভিসের নিচ দিয়ে বের করা যেতে পারে। এই অপারেশনই যথেষ্ট নয়। কেননা বেশীর ভাগ পাথরই কিডনীর নীচের প্রান্তেস্ত হয়। বড় পাথর

হলে কিডনীর ভিতর ইনসিশন দিয়ে পাথর বাহির করতে হবে। যদি একটি কিডনী ভাল থাকে এবং অপর কিডনী মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়ে থাকে, তবে আক্রান্ত কিডনী কেটে ফেলে দিতে হবে (নেফ্রেক্টমী)। এছাড়াও প্রয়োজনে নেফ্রোলিখোটমি, পায়েলোনেফ্রোলিথোটমি, সিস্টোলিখোটমি ইত্যাদি করা যেতে পারে।

ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর ডিজিজ মূত্রনালীর ইনজুরি

প্রশ্ন: ইউরেথ্রার ইনজুরি কাকে বলে? এর প্রকারভেদ লিখ।

ইউরেথ্রার ইনজুরি: কোন কারণে যদি ইউরেথ্রা আঘাত প্রাপ্ত হয়, তাকে ইউরেথ্রার ইনজুরি বলে।

ইউরেথ্রার ইনজুরির শ্রেণীবিভাগ:

ইউরেথ্রার ইনজুরিকে দুই গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে:

(i) মেমব্রেনাস ইউরেথ্রা ছিড়ে যাওয়া,

(ii) বালবাস ইউরেথ্রা ছিড়ে যাওয়া।

প্রশ্ন: ইউরেথ্রার ইনজুরির ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) মেমব্রেনাস ইউরো ছিড়ে যাওয়া: ইহা সাধারণত পেলভিস ফ্রাকচারের সঙ্গে পাওয়া যায়। প্রোস্টেটিক এবং মেমব্রেনাস ইউরেথ্রার সংযোগ স্থলে ছিঁড়ে যায়। ব্লাডার এবং প্রোস্টেট উপরের দিকে এবং পিছন দিকে সরে যায়।

(ii) বালবাস ইউরেথ্রা ছিড়ে যাওয়া: এই জাতীয় ক্ষত staddle injury বা এমন কোন ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করার ফলে ঘটে থাকে যা ইউরেথ্রাকে-পিউবিক আর্চের বিপরীতে চেপে ধরে। ইউরেথ্রা ছিন্ন হওয়া আংশিক বা সম্পূর্ণ হতে পারে।

(iii) রোগী পেরিনিয়ামে ভীষণ ব্যথার কথা বলে। এক্সটারনাল মিটাস দিয়ে রক্তক্ষরণ হয় এবং পেরিনিয়াম হেমাটোমা তৈরি হয়। যদি রোগী প্রস্রাব করে তাহলে প্রস্রাব চারপাশের টিস্যুর মধ্যে ঢুকে পড়ে।

প্রশ্নঃ হেমাচুরিয়া কাকে বলে? ২০১৮

হেমাচুরিয়ার সংজ্ঞা:

প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়াকে হেমাচুরিয়া বলে।

প্রশ্নঃ হেমাচুরিয়া কারণসমূহ লিখ। ২০১৮

কারণসমূহঃ

হেমাচুরিয়ার কারণগুলিকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:

(ক) স্থানীয় কারণ: কিডনী, পলিস্টিটিক ডিজিজ, কিডনী, আঘাত, পাইলোনেফ্রাইটিস, টিউবারকুলোসিস, পাথর এবং টিউমার।

ইউরেথ্রার- পাথর, আঘাত এবং টিউমার।

ব্লাডার- আঘাত, সিস্টাইটিস, পাথর এবং টিউমার।

প্রোস্টেট- এনলার্জড প্রোস্টেট।

ইউরেথ্রা বা মূত্রনালী- আঘাত, পাথর এবং টিউমার।

(খ) সাধারণ কারণ: হাইপারটেনশন, অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট থেরাপী এবং থ্রোম্বোসাই…পেলভিসের মধ্যে পাথর আছে বুঝায়। প্রস্রাবের শেষ পর্যায়ে ভীষণ ব্যথাসহ হেমাচুরিয়া হলে ব্লাডারে পাথর থাকা বুঝায়। প্রস্রাব ছাড়া হেমাচুরিয়া হলে ইউরেথ্রা বা মূত্রনালী হতে রক্ত-ক্ষরণ বুঝবে।

ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাঃ

যে কোন loin-এ বা উভয় loin-এ রেনাল swelling পাওয়া যেতে পারে। দুই হাতে পরীক্ষা করলে ব্লাডারে নিওপ্লাজমের উপস্থিতি বুঝা যেতে পারে। অনেক সময় প্রোস্টেট বড় হতে পারে। অবশ্য অন্যান্য প্যাথলজিক্যাল অবস্থা বাদ না দেয়া পর্যন্ত এই ডায়াগনোসিস করা যাবে না। এছাড়াও রোগীর সাধারণ পরীক্ষা এবং ব্লাড প্রেসার রেকর্ড করতে হবে।

প্রশ্নঃ হেমাচুরিয়ার ইনভেস্টিগেশন লিখ।

হেমাচুরিয়ার ইনভেস্টিগেশন:

প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে: খালি চোখে এবং অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করতে হবে।

আই.ডি.পি: পাথর বা নিওপ্লাজম নির্ণয়ে ইহা খুবই সহায়ক। সিস্টোসকোপি: ইহার সাহায্যে ব্লাডারের নিওপ্লাজম এবং প্রোস্টেট এর রক্ত ক্ষরণ দেখা যেতে পারে। এই পরীক্ষা যদি হেমাচুরিয়ার সময় করা হয় তাহলে একটি বা উভয় ইউরেটার হতে রক্ত বাহির হাওয়া দেখা যেতে পারে।

আল্ট্রাসনোগ্রামঃ আল্ট্রাসনোগ্রাম দ্বারা পাথর বা নিওপ্লাজম নির্ণয় করা যেতে পারে।

এক্স-রে: পেটের গ্রেন এক্স-রে করলেও পাথর দেখা যেতে পারে।

হাইড্রোনেফ্রোসিস(hydronephrosis)

প্রশ্ন: হাইড্রোনেফ্রোসিস কাকে বলে?

হাইড্রোনেফ্রোসিস এর সংজ্ঞা:

মূত্র প্রবাহে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বাধা থাকলে উহার ফলে যদি কিডনী আকারে বড় হয়ে যায় এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তখন তাকে হাইড্রোনেফ্রোসিস বলা হয়।

প্রকারভেদ:

(i) এক কিডনী

(ii) উভয় কিডনী

প্রশ্ন: হাইড্রোনেফ্রোসিসের কারণসমূহ লিখ।

কারণতত্ত্ব:

(i) রেনাল পেলভিসে বা ইউরেটারে পাথর আটকে যায়।

(ii) মূত্রথলিতে পাথর।

(iii) মূত্রথলিতে টিউমার।

(iv) মূত্রথলিতে জমাট রক্ত।

(v) প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড এনলার্জ।

(vi) স্ট্রিকচার ইউরেথ্রা।

(vii) টিউমারজনিত কারণে মূত্রনালীতে কোথাও চাপ সৃষ্টি।

প্রশ্ন: হাইড্রোনেফ্রোসিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) কিডনী অঞ্চলে হালকা চাপযুক্ত ব্যথা থাকবে।

(ii) রেনাল কলিক থাকতে পারে

(iii) একদিক বা উভয়দিকের কিডনী অঞ্চলে ফুলা দেখা যাবে।

(iv) ইউরেমিয়ার লক্ষণাবলী পাওয়া যাবে।

রিটেনশন অফ ইউরিন(Retention of Urine)

প্রশ্ন: মূত্রবদ্ধতার বা প্রস্রাব আটকানো কাকে বলে?

প্রস্রাব আটকানো:

রিটেনশন অব ইউরিন একিউট বা ক্রনিক হতে পারে। ক্রনিক রিটেনশনে শেষ পর্যন্ত রিটেনশনের সঙ্গে overflow থাকে।

প্রশ্ন : মূত্রবদ্ধতার কারণগুলো বর্ণনা কর। ০৮, ১০, ১১, ১৩, ১৪ একিউট রিটেনশন কারণ:

নিম্ন গুরুত্বপূর্ণ কমন কারণগুলি দেয়া হল:

পুরুষদের ক্ষেত্রে : প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড বড় হওয়া, ইউরেথ্রায় স্ট্রিকচার, পোস্ট-অপারেটিভ।

মহিলাদের ক্ষেত্রে : রেট্রোর্ভাটেড গ্রেভিড ইউটেরাস, মালটিপল স্কেরোসিস, হিস্টেরিয়া।

ছেলে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে: মিটাল আলসার, With scabbing |

অন্যান্য কারণ সমূহঃ

স্পাইনাল অ্যানাসথেসিয়ার পর, ব্লাডারে রক্ত জমাট বাধা, ইউরেথ্রা রাপচার, নিউরোজেনিক রেক্টামে faecal impaction, একিউট ইউরোথ্রাইটিস বা প্রোস্টাটাইটিস, ইউরোথ্রাল ক্যালকুলাস,

ফাইমোসিস।

প্রশ্ন: মূত্রবদ্ধতার ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮, ১০

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) রোগী বেশ কয়েক ঘণ্টা যাবত প্রস্রাব ত্যাগ করে না বা প্রস্রাব ত্যাগ

করতে সক্ষম হয় না।

(ii) অনেক সময় পাতলা রোগীদের ক্ষেত্রে full bladder এর কারণে swelling দেখা যায়। ইহা palpate করলে dull পাওয়া যাবে।

(iii) ব্লাডারের মাংসপেশীর সঙ্কোচনের ফলে periodically একিউট ব্যথা হবে।

(iv) পরীক্ষা করলে enlarged prostate পাওয়া যেতে পারে।

(v) ইউরেথ্রার ফ্লোর Pagets disease করে-দেখতে হবে কোন induration পাওয়া যায় কিনা। ইহা stricture এ পাওয়া যায়।

(vi) লোয়ার লিম্বের রিফ্লেক্স এবং পেরিনিয়াল অনুভূতি পরীক্ষা করে spinal কারণ বাদ দিতে হবে।

প্রশ্ন: মূত্রবদ্ধতার ব্যবস্থাপনা লিখ। ২০১১, ১৩, ১৪ মূত্রবদ্ধতার ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা:

(i) রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা নজরে রাখতে হবে।

(ii) রোগীর উৎকণ্ঠা দূর করার জন্য ঔষধ দিতে হবে। Hot bath দিয়ে internal congestion কমাতে হবে।

(iii) এতে অনেক রোগী প্রস্রাব ত্যাগ করতে সক্ষম হয়। যদি রোগী bladder outflow obstruction -এর সঠিক ইতিহাস দেয়, তবে কনজারভেটিভ চিকিৎসা না দিয়ে ক্যাথিটার প্রবেশ করাতে হবে। ইহা সম্পূর্ণ অ্যান্টিসেপটিক টেকনিকে করতে হবে।

injuries of urethra, stricture of urethra. স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচন

প্রশ্ন: স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচন কাকে বলে? এর কাণসমূহ লিখ।

স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচনের সংজ্ঞাঃ

অসম্পূর্ণমূত্র নিঃসরণ ও ইউরিনারী ব্লাডারে থাকা ইউরিন শেষ পর্যন্ত মূত্রত্যাগে সম্পূর্ণ অসমর্থ লক্ষণকেই স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচন বলে।

স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচনের কারণ:

ইউরেথ্রাল স্ট্রিকচার অর্থ মূত্রনালীর সংকোচন। ইহা হতে পারে:

(1) জন্মগতভাবে হতে পারে।

(ii) আঘাত জনিত বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ইউরেথ্রা রাপচার হওয়া এবং অনেক সময় ইন্সট্রুমেন্ট প্রবেশ করানোর জন্য হয়ে থাকে।

(iii) প্রদাহ জনিত গনোরিয়াল ইনফেকশনের পরে।

প্রশ্ন: স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচনের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা ক্লিনিক্যাল ফিচার।

প্রস্রাব ত্যাগে ক্রমাগতভাবে অসুবিধা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং প্রস্রাবের গতি বা বেগ ও প্রস্রাবের প্রবাহ হ্রাস পেতে থাকে। কোথ দিলে প্রস্রাবের প্রবাহ বেড়ে যায়। মূত্রনালী দিয়ে সামান্য mucoid discharge থাকতে পারে। প্রস্রাবের একিউট রিটেনশন, পেরিইউরেথ্রাল অ্যাবসেস, ফিস্টুলা, প্রস্রাবের এক্সট্রাভেসেশন, ইউরিনারী ইনফেকশন এবং রেনাল ফেইলিউরের উপসর্গ এই অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

রোগী পরীক্ষা (On examination): প্রায় ৭০% রোগীর ক্ষেত্রে বালবাস ইউরেথ্রার প্রদাহজনিত স্ট্রিকচার ঘটে থাকে। এর পরই কমন জায়গা হচ্ছে পেনিসের ভিতরের ইউরেথ্রা (penile urethra)। হাত দ্বারা ইউরেথ্রা পরীক্ষা করলে (palpation) স্ট্রিকচারের অংশে পুরু জায়গা অনুভব করা যাবে। অ্যাবসেস হলে ব্যথাযুক্ত mass অনুভব হবে। পেরিনিয়াল ফিস্টুলা থাকতে পারে। যদি ইহার সঙ্গে প্রস্রাবের রিটেনশন থাকে তাবে ব্লাডার হাতে অনুভব করা যাবে।

ডায়াগনোসিস: ক্যাথিটার বা sound (কাঠি) প্রবেশ করানো সম্ভব না হলে স্ট্রিকচার ডায়াগনোসিস করা যেতে পারে। ইউরেথ্রোগ্রাম দ্বারা স্ট্রিকচারের স্থান এবং বিস্তৃতি দেখা যায়।

প্রশ্নঃ স্ট্রিকচার অব ইউরেথ্রা বা মূত্রনালীর সংকোচনের চিকিৎসা লিখ।

চিকিৎসা: নিয়মিত এবং সতর্কতার সঙ্গে ডাইলেটেশন (dilatation)

করাই এর মূল চিকিৎসা। অধিকাংশ স্ট্রিকচার ডাইলেটর (dilator) প্রবেশ করিয়ে প্রসারিত করা যায়। একবার স্ট্রিকচার সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করতে পারলে নিয়মিত ভাবে ডাইলেটেশন করতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে দুই ডাইলেটেশনের মধ্যবর্তী সময় বৃদ্ধি করতে হবে। যদি স্ট্রিকচার খুবই টাইট হয় তবে অনেক সময় filiform bougies এর দরকার হতে পারে।

যদি স্ট্রিকচারের ভিতর দিয়ে প্রস্রাব মোটেই বাহির হতে না পারে এবং প্রস্রাব আটকে (রিটেনশন) যায় তবে সুপরাপিউবিক সিস্টোসটমী করে স্ট্রিকচারের স্থানকে বিশ্রাম দিয়া প্রদাহজনিত ইন্ডিমা ভাল হওয়ার সুযোগ দিলে সহজেই filiform bougies প্রবেশ করানো যেতে পারে। ডাইলেটেশন করা সত্বেও যদি স্ট্রিকচার দ্রুত সংকুচিত হয় তবে স্ট্রিকচার অপারেশন করে কেটে ফেলে দিয়ে প্লাস্টিক repair (urethroplasty) করে ইউরেথ্রা স্থায়ীভাবে প্রসারিত করতে হবে।

এনলার্জ প্রোস্টেট (Enlarged prostate)

প্রশ্নঃ এনলার্জ প্রোস্টেট এর সংজ্ঞা লিখ।

এনলার্জ প্রোস্টেট এর সংজ্ঞা:

কোন কারণে প্রোস্টেট এর স্বাভাবিক অবস্থা হতে বৃদ্ধি পেলে, তাকে এনলার্জ প্রোস্টেট বলে।

অথবা, প্রোস্টেট এর আকার ও আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেলে, তাকে এনলার্জ প্রোস্টেট বলা হয়।

প্রশ্ন: এনলার্জ প্রোস্টেট এর কারণতত্ত্ব লিখ।

এনলার্জ প্রোস্টেট এর কারণতত্ত্ব:

(i) ইহা সাধারণতঃ ৫০ বছর অধিক বয়স্ক লোকের মধ্যে দেখা যায়।

(ii) ইহার সঠিক কারণ নিশ্চিতরূপে এখনও কিছু জানা যায় নাই।

(iii) প্রোস্টেট নিওপ্লাসিয়া (টিউমার) হলে।

(iv) অস্বাভাবিকভাবে যৌন উপভোগ করলে- অতিরিক্ত হস্তমৈথুন।

(v) জাতি- নিগ্রোদের মধ্যে কম দেখা যায়।

(vi) হরমোন জনিত- বিনাইন নিওপ্লাসিয়া জনিত কারণে এর

(vii) ক্রনিক প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ।

(viii) প্রোস্টেট গ্রন্থির গঠনগত উপাদান- ফাইব্রোম, মাসকুলার ও গ্ল্যান্ডুলার টিস্যুর হাইপারপ্লাসিয়া ও হাইপারট্রফির কারণে ইহা হয়।

(ix) অজানা অনেক কারণে ইহা হতে পারে।

(x) প্রোস্টেট গ্রন্থিতে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার সৃষ্টি হওয়ার কারণে।

(xi) কিছু রোগ ক্ষতিকর প্রভাব- ইউরেথ্রাইটিস, মূত্রনালীতে পাথর, মূত্রনালীর সংকোচন, বাত, গেঁটেবাত, সিফিলিস, সাইকোসিস (গনোরিয়া) ইত্যাদি।

(xii) দীর্ঘদিন কোন উত্তেজক ঔষধ সেবন করা।

প্রশ্ন: এনলার্জ প্রোস্টেট লক্ষণাবলী/ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

এনলার্জ প্রোস্টেট লক্ষণাবলী/ক্লিনিক্যাল ফিচার:

লক্ষণ:

(i) রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হয়। দিনে ও রাত্রে সব সময় ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। রাত্রেই বেশী হয়।

(ii) প্রথবাস্থায় প্রস্রাবে অসুবিধা হয়। কোথ দিলে প্রস্রাবের গতি কমে যায়। প্রস্রাব ধীরে ধীরে বাহির হয় এবং শেষে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়তে থাকে।

(iii) ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হয়, প্রস্রাব ত্যাগ কষ্টকর হয়।

(iv) প্রস্রাব ত্যাগে অস্বস্তি বোধ হয়।

(v) কোঁথ দিয়ে প্রস্রাব করতে গেলে বন্ধ হয়ে যায়।

সাইন:

(i) দিন-রাত তলপেটে অস্বস্তিবোধ।

(ii) তলপেটে প্রস্রাবের থলি উঁচু দেখা যায়।

(iii) তলপেটে পারকাশন (টোকা দিয়ে) করলে ব্লাডার বরাবর স্থানে ডালনেস পাওয়া যাবে।

(iv) অস্কালটেশন- মল দ্বার দিয়ে আঙ্গুল দ্বারা পরীক্ষা করলে প্রোষ্টেট গ্ল্যান্ড বৃদ্ধি পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন: এনলার্জ প্রোস্টেট ইনভেস্টিগেশন লিখ।

এনলার্জ প্রোস্টেট ইনভেস্টিগেশন:

(i) রোগীর রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে।

(ii) রক্তের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে।

(iii) প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করতে হবে।

(iv) লোয়ার এবডোমেনের আল্ট্রাসনোগ্রাফি- প্রোষ্টেট এনলার্জ পাওয়া যাবে।

Investigation:

(1) Unine R/M/E (2) Blood for T.C, D.C, ESR, Hb%

(3) Stool R/M/E,

(4) Blood Urea, Sereem electrolytes and creatinine to assess renal function

(4) Urine culture and sensitivity (5) Plain X-Ray KUB Region

(6) Cystoscopy

প্রশ্ন: এনলার্জ প্রোস্টেট এর জটিলতা লিখ।

এনলার্জ প্রোস্টেট এর জটিলতা:

(i) ইউরিমিয়া। (ii) হাইড্রোনেফ্রোসিস। (iii) পাইয়েলোনেফ্রোসিস।

(iv) কিডনী ফেইলিওর। (v) একিউট রিটেনশন অব ইউরিন (প্রস্রাব আটকানো)। (vi) ক্রনিক রিটেনশন অব ইউরিন (প্রস্রাব আটকানো)।

(vii) প্রস্রাবের সাথে রক্তক্ষরণ (হেমাচুরিয়া)।

(viii) ইউরিনারী সিস্টিমে জীবাণু সংক্রমণ। (ix) পাথর তৈরী।

(x) ব্লাডারে ভাইভার্টিকুলার তৈরী। (xi) হাইড্রোইউরেটার।

প্রশ্ন: প্রোস্টেট এনলার্জ এর প্যাথলজি লিখ।

প্যাথলজী- এতে প্রোস্টেট ল্যাটারাল কোষ বা মধ্য লোব আক্রান্ত হয়। প্রোস্টেটের গ্ল্যান্ডুলার টিস্যু এবং ফাইব্রোমাসকুলার স্ট্রোমায় হাইপারপ্লাসিয়া হয়। সাব-মিউকাস পেরিইউরেথ্রাল গ্ল্যান্ড হতে ইহা ঘটে। যতই হাইপারপ্লাসিয়া বৃদ্ধি পায় ততই স্বাভাবিক প্রোস্টেট চাপ খেতে থাকে এবং পরে ইহা ফলস্ ক্যাপসুলে রূপান্তরিত হয়। প্রোস্টেট বৃদ্ধির ফলে প্রোস্টেটিক ইউরেথ্রা লম্বা ও আঁকাবাঁকা হয়। মধ্য লোব ইন্টারনাল স্ট্রিকচারের ভিতর দিয়ে ব্লাডারের ভিতর ঠেলে প্রবেশ করে পাউচ তৈরী করে। এই পাউচে দীর্ঘ দিন প্রস্রাব জমা থাকার ফলে পাথরের উৎপত্তি হয়। ব্লাডার বড় হয়ে যায়। ক্যাথিটার করার জন্য জীবাণু সংক্রমণ ঘটে এবং পাথর তৈরী হয়। প্রস্রাব আটকানোর ফলে দীর্ঘ দিনের ব্যাক প্রেসারে হাইড্রোনেফ্রোসিস হয়ে রেনাল ফেইলিওর হয়।

প্রশ্ন: বিএইচপি এর সংজ্ঞা ও লক্ষণাবলী লিখ।

বিনাইন প্রস্টেটিক হাইপারপ্লাসিয়া:

৫০ বৎসর রয়সের পর প্রস্টেট গ্ল্যান্ড কিছুটা বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু ৬০ বৎসরের পর বেশি বৃদ্ধি পায়। এই বিনাইন বৃদ্ধির কোন কারণ জানা যায় নাই। সম্ভবত ইহা স্ট্রোজেন হরমোনের অধিক প্রভাবের ফল।

বিএইচপি এর লক্ষণাবলী:

(i) প্রথমাবস্থায় প্রস্রাবে অসুবিধা হয়। কোথ দিলে প্রস্রাবের গতি কমে যায়। প্রস্রাব ধীরে ধীরে বাহির হয় এবং শেষে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব পড়িতে থাকে।

(ii) ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। দিনে ও রাতে সব সময় ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। রাত্রেই বেশি হয়।

(iii) অল্প অল্প করে ব্লাডারে প্রস্রাব জমা হতে থাকে।

(iv) হঠাৎ প্রস্রাব সম্পূর্ণরূপে আটকে যেতে পারে। (v) প্রস্রাবের শেষে প্রস্রাবের সাথে রক্ত যেতে পারে।

(vi) ক্ষুধামন্দা, মাথা ব্যথা, ঝিমানোভাব দেখা দেয়।

প্রশ্ন: প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির চিকিৎসা বর্ণনা কর। ১১, ১৩, ১৪ বা, এনলার্জ প্রোস্টেট এর চিকিৎসা লিখ। এনলার্জ প্রোস্টেট এর চিকিৎসা:

(i) রোগীকে জোর পূর্বক প্রস্রাব ত্যাগ থেকে বিরত থাকতে হবে।

(ii) প্রয়োজনে ক্যাথিটার দ্বারা প্রস্রাব ত্যাগ করাতে হবে।

(iii) কারণ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা করতে হবে।

(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: উপরিউক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আরোগ্য না হলে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করতে হবে। এনলার্জ প্রোস্টেট এর সার্জিক্যাল অপারেশনের নাম প্রোস্টেকটমি।

Diseases of male genetalia- torsion of testis

প্রশ্ন: স্ক্রোটামের স্তরগুলি উল্লেখ কর এবং হাইড্রোসিলের সংজ্ঞা লিখ। ০৯

স্ক্রোটামের স্তরগুলির নাম:

(i) বাহির ত্বক

(ii) সুপারফিসিয়াল ফেসিয়া অব স্ক্রোটাম।

(iii) এক্সটারনাল স্পার্মমেটিক, লিম্যস্টারিক।

(iv) ইন্টারন্যাল স্পার্মমেটিক।

(v) ফাইব্রাস লেয়ার।

(vi) ইহার ত্বকে পাতলা সিবাসিয়াস গ্রন্থি আছে।

হাইড্রোসিলের সংজ্ঞাঃ

হাইড্রোসিল বা অন্ডকোষ বৃদ্ধি- অন্ডকোষের উপর দুটি পর্দা আছে। একটির নাম টিউনিকা ভ্যাজাইনালিস ও অপরটির নাম টিউনিকা এলবুজিনিয়া। স্বাভাবিক অবস্থায় পর্দা দুটি হতে এক প্রকার জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হয়। ফলে পর্দা দুটি একত্রে জড়িয়ে যায় না। কোন কারণ বশতঃ যখন উক্ত জলীয় পদার্থ স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশী পরিমাণে নির্গত হয় এবং তা শোষিত না হয়ে পর্দা দুটির মধ্যে জমা থাকে এবং ক্রমশই পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে আর অন্ডকোষটি আকারে বৃদ্ধি লাভ করে, এ অবস্থাকে হাইড্রোসিল বা অন্ডকোষ বৃদ্ধি বলা হয়।

হাইড্রোসিল (hydrocele)

প্রশ্ন: হাইড্রোসিল কাকে বলে? বা হাইড্রোসিলের সংজ্ঞা দাও।

হাইড্রোসিলের সংজ্ঞাঃ

হাইড্রোসিল বা অন্ডকোষ বৃদ্ধি- অন্ডকোষের উপর দুটি পর্দা আছে। একটির নাম টিউনিকা ভ্যাজাইনালিস ও অপরটির নাম টিউনিকা এলবুজিনিয়া। স্বাভাবিক অবস্থায় পর্দা দুটি হতে এক প্রকার জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হয়। ফলে পর্দা দুটি একত্রে জড়িয়ে যায় না। কোন কারণ বশতঃ যখন উক্ত জলীয় পদার্থ স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশী পরিমাণে নির্গত হয় এবং তা শোষিত না হয়ে পর্দা দুটির মধ্যে জমা থাকে এবং ক্রমশই পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে আর অন্ডকোষটি আকারে বৃদ্ধি লাভ করে, এ অবস্থাকে হাইড্রোসিল বা অন্ডকোষ বৃদ্ধি বলা হয়।

অথবা প্রোসেসাস ভেজাইনালিস এর যে কোন অংশে অতিরিক্ত ফ্লুইড জমা হওয়াকে হাইড্রোসিল বলে। সাধারণতঃ টিউনিকা ভেজাইনালিস এর মধ্যেই হাইড্রোসিল হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: হাইড্রোসিল কত প্রকার ও কি কি?

হাইড্রোসিলের প্রকারভেদ:

হাইড্রোসিলকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ (ক) প্রাইমারী বা ইডিওপ্যাথিক হাইড্রোসিল, (খ) সেকেন্ডারী হাইড্রোসিল।

(ক) প্রাইমারী বা ইডিওপ্যাথিক হাইড্রোসিল: এর কারণ জানা নাই। অপর্যাপ্ত লিম্ফোটিকসের জন্য ইহা হতে পারে। রোগের বয়স বেশী দিন হলে ইহার ওয়াল পুরু হয়।

(খ) সেকেন্ডারী হাইড্রোসিল: অন্ডকোষ বা ইপিডিডাইমিসে’র রোগের জন্য সেকেন্ডারী হাইড্রোসিল হয়ে থাকে। এই জাতীয় হাইড্রোসিল ছোট এবং ঢিলাঢালা হয়।

প্রাইমারী হাইড্রোসিলকে আবার ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে: যথা-

(i) ভেজাইনাল হাইড্রোসিল scrotal swelling এর মধ্যে ইহা সাধারণতঃ বেশী পাওয়া যায়। রোগী স্ক্রোটামের সিস্টিক ফুলা নিয়ে আসে। এই ফুলায় ফ্লাকচুয়েশন থাকে এবং ট্রান্সইলুমিনেশন করা যায়। ফ্লুইড দ্বারা অন্ডকোষ ঘেরা থাকে বলে অন্ডকোষকে আলাদাভাবে অনুভব করা যায় না।

(ii) জন্মগত (কনজেনিটাল) প্রোসেসাস ভেজাইনালিস থেকে যাবার কারণে এই জাতীয় হাইড্রোসিল শিশুদের মধ্যে পাওয়া যায়। আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে এই হাইড্রোসিলকে পেরিটোনিয়াল ক্যাডিটিতে ঢুকানো যায়।

(iii) ইনফ্যান্টাইল হাইড্রোসিল ইন্টারনাল রিং এ বন্ধ থাকে। সংযোগ থাকে না। প্রোসেসাল ভেজাইনালিস খোলা থাকে এবং পেরিটোনিরাল ক্যাডিটির সঙ্গে ইহার কোন

(iv) এনসিস্টেড হাইড্রোসিল- প্রোসেসাস ভেজাইনালিসের localized patency থাকার কারণে স্পারমাটিক কর্ডে গোলাকার swelling হয়।

প্রশ্ন: হাইড্রোসিলের জটিলতা লিখ।

হাইড্রোসিলের জটিলতা: (i) আঘাতের কারণে হেমাটোসিল হতে পারে। (ii) স্যাক ফেটে যেতে পারে। (iii) হাইড্রোসিল স্যাক এর হার্নিয়া হতে পারে। (iv) স্যাক এর ক্যালসিফিকেশন হতে পারে।

প্রশ্ন: হাইড্রোসিলের চিকিৎসা লিখ।

হাইড্রোসিলের চিকিৎসা: ছোট্ট হাইড্রোসিল, যা কোন অসুবিধার সৃষ্টি করে না, কোন চিকিৎসার দরকার হয় না।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: (i) সাবটোটাল এক্সিশন – পাতলা ওয়ালযুক্ত স্যাক বা থলি উল্টিয়ে দিতে হবে। ক্রনিক পুরু স্যাক বা থলি ভালভাবে রক্ত বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতঃ ইনসিশন দিয়ে কেটে ফেলতে হবে।’ (ii) ট্যাপিং – স্থানীয়ভাবে অবশ করে একবার বা দুইবার হাইড্রোসিল হতে ফ্লুইড বাহির করে ফেলা যেতে পারে। অ্যাসপিরেশন করার পূর্বে অন্ডকোষের অবস্থান সতর্কতার সঙ্গে নির্ধারণ করতে হবে। অ্যাসপিরেশনের পর অন্ডকোষ ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন ম্যালিগন্যান্সি আছে কিনা।

প্রশ্ন: অর্কাইটিস ও টরশন অব টেস্টিস এর পার্থক্য লিখ। অর্কাইটিস ও টরশন অব টেস্টিস এর পার্থক্যঃ

অর্কাইটিস

টরশন অব টেস্টিস

টেস্টিস একিউট প্রদাহ হলে, ১ তাকে অর্কাইটি বলে।

টেস্টিসের চতুর্দিকে স্পার্মেটিক কর্ড দ্বারা মোচড়ের প্যাঁচানো থাকে।

ইহা ধীরে ধীরে শুরু হয়।

ইহা হঠাৎ শুরু হয়।

যেকোন বয়সে হতে পারে।

অল্প বয়সেহতে পারে।

ইউরিনারী ট্রাক্টে ইনফেকশন ৪ বর্তমান থাকে।

ইউরিনারী ট্রাক্টে ইনফেকশন অনুপস্থিত থাকে।

একিউট প্রদাহের ইতিহাস বর্তমান থাকে।

এ্যাংগ্রীণ এর পূর্ব পর্যন্ত প্রদাহের ইতিহাস থাকে না।

ফাইমোসিস

ফাইমোসিসের সংজ্ঞা:

পুং জননেন্দ্রিয়ের অগ্রভাগ ত্বক দ্বারা ঢাকা থাকে। প্রেপুস সংকোচিত হয়ে পড়লে এবং লিঙ্গমুন্ড (গ্লান্স পেনিস) উন্মুক্ত করা না গেলে তাকে ফাইমোসিস বলে।

ফাইমোসিসের কারণ:

জন্মগত হতে পারে।

ফিজিওলজিক্যাল কারণ: বয়স- শিশুদের ৬ বছরের আগে হতে পারে। বয়ষ্কদের- অজ্ঞাত বা সঠিক কারণ জানা যায় নাই।

ফাইমোসিসের লক্ষণাবলীঃ

প্রস্রাব ত্যাগকালে ব্যথা হয়। লিঙ্গমুন্ড ঢেকে থাকে এবং তা উন্মুক্ত করা যায় না। প্রস্রাব ত্যাগ করা কষ্টকর হয়।

Diseases of ear, nose and throat

অটাইটিস মিডিয়া (Otitis media)

প্রশ্ন: অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা লিখ। এর প্রকারভেদ লিখ ।০৮,

অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা: জীবাণু সংক্রমণ বা অন্য যে কোন কারণে মধ্যকানের প্রদাহ হলে, তাকে অটাইটিস মিডিয়া বলে।

অটাইটিস মিডিয়ার প্রকারভেদ:

মধ্যকানের প্রদাহ দুই প্রকার। যথা-

(i) তরুণ মধ্যকানের প্রদাহ বা একিউট অটাইটিস মিডিয়া (Acute Otitis media)

(ii) পুরাতন মধ্যকানের প্রদাহ বা ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়া (Chronic Otitis media)

প্রশ্ন: একিউট অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা কারণ লিখ। ০৮, ১০

একিউট অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা (Acute Otitis Media):.

মিডল ইয়ার ক্যাভিটের মিউকোসার একিউট ইনফ্লামেশনকে একিউট অটাইটিস মিডিয়া বলে।

একিউট অটাইটিস মিডিয়ার কারণতত্ত্ব:

(i) বয়স: নবজাতক ও শিশুদের বেশি হয়।

(ii) শীতকালে বেশি হয়।

(iii) ঘন বসতিপূর্ণ ও শিল্প।

(iv) অধিক কমন ঠান্ডা, সর্দিকাশি, একিউট টনসিলাইটিস, – ইনফ্লুয়েঞ্জা

(v) সামান্য কমন- সাইনোসাইটিস, টনসিলেকটমী, হেমোটিমপ্যানাম, টিনপেনিক মেমব্রেনের আঘাত, টেমপোরাল বোন ফ্রাকচার।

(vi) ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আপার রেসপিরেটরী ট্রাক্টের একিউট ইনফেকশন।

(vii) ব্যাকটেরিয়াসমূহ- নিউমোকক্কাস, হেমোলাইটিক ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্ট্রেপটোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস পায়োজেনিক ইত্যাদি।

(viii) যে কোন ধরনের ইনফেকশন- সেপ্টিসেমিয়া, ব্যাকটেরিমিয়া ইত্যাদি।

(ix) ইউস্টেচিয়ান টিউবে (Eustachian tube) অবস্ট্রাকশন,

(ক) ইডিমা- প্যারান্যাজাল, ন্যাজোফ্যারিনঞ্জিয়াল ইত্যাদি

(খ) লুমেন- এনলার্জ অ্যাডেনয়েড (enlarged adenoids), ন্যাজাল পলিপ (Nasal polyp), এনলার্জ টনসিল (enlarged tonsil). ন্যাজোফ্যারিনজিয়্যাল ফাইব্রোমা (nasopharyngeal fibroma)।

প্রশ্ন: একিউট অটাইটিস মিডিয়ার ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। ০৮ বা, একিউট অটাইটিস মিডিয়ার লক্ষণ লিখ। ১১

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) কানে ব্যথা: প্রাথমিক অবস্থায় সামান্য ব্যথা হয়, পরবর্তীতে সিভিয়ার ব্যথা হয়। শিশু কান্না করতে থাকে এবং ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত কিছুতেই শান্ত হয় না।

(ii) কানে না শোনা- একিউট অটাইটিস মিডিয়ার সব সময়ই deafness থাকে।

(iii) পূজস্রাব থাকে।

(iv) দুর্বলতা ও অস্বস্থিকর বোধ থাকে।

(v) জ্বর – জ্বর ১০১-১০৩ ডিগ্রী ফারেনহাইট হতে পারে।

(vi) টেন্ডারনেস- মাস্টয়েড প্রসেসে প্রেসার দিলে সাধারণতঃ সামান্য

টেন্ডারনেস ও ইডিমা পাওয়া যায়।

(vii) টিমপেনিক মেমব্রেন- টিমপেনিক মেমব্রেনের অ্যাপিয়ারেন্স ইনফেকশনের স্টেজ অনুযায়ী পার্থক্য হয়।

(ক) উজ্জ্বলতা নষ্ট হয় এবং লাইট রিফ্লেকশন ব্যাহত হয়।

(খ) পর্দার কিনার এবং ম্যালইওল্যাস (malleus) এর হ্যান্ডেল বরাবর ছোট ছোট ভেসেলগুলিতে আক্রান্ত হয়।

(গ) ড্রাম লাল বর্ণ ধারন করে এবং পূর্ণতা হয়। মেলিয়াসের হ্যান্ডেল অনেক বেশী খাড়াভাব হয়।

(ঘ) ড্রাম বাহির দিকে ঠেলে আসে এবং এর ল্যান্ড মার্কস থাকে না। Pruple রং ধারণ করে।

(ঙ) পারফোরেশন হওয়ার পর কান দিয়ে স্রাব বের হতে থাকে। এ ডিসচার্জ অনেক সময় রক্ত মিশ্রিত হতে পারে।

প্রশ্ন: একিউট অটাইটিস মিডিয়ার চিকিৎসা লিখ। ১১ একিউট অটাইটিস মিডিয়ার চিকিৎসা: কনজারভেটিভ চিকিৎসা

(i) বিশ্রামে থাকতে হবে।

(ii) কানের স্রাব পরিষ্কার করতে হবে।

(iii) ন্যাজাল অবস্ট্রাকশন দূর করতে হবে।

5

(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

■ স্যার্জিক্যাল চিকিৎসা: উপরিউক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগী আরোগ্য না হলে সার্জিক্যাল চিকিৎসা মাইরিঙ্গোটমী (Myringotomy) করতে হবে।

ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়া

প্রশ্ন: ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার সংজ্ঞা প্রকারভেদ লিখ।

সংজ্ঞা: মধ্যকর্ণের মিউকাস মেমব্রেনের ক্রনিক পায়োজেনিক ইনফ্লামেশনকে, ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়া বলে।

প্রকারভেদ:

ক্রোনিক অটাইটিস মিডিয়াকে নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণীবিভাগ করা হয়েছে-

(ক) নন্-সাপুরেটিভ- (i) সেরাস অটাইটিস (ii) মিউকাস অটাইটিস

(খ) সাপুরেটিভ- ক্রোনিক অটাইটিস মিডিয়া ২ প্রকার। যথা-

(i) টিউবো-টিমপ্যানিক (Tubo-tympanic) (benign type/safe)

(ii) অ্যাটিকো-অ্যান্ট্রাল (Attico-antral) (dangerous type/unsafe)

(গ) টিউবারকুলার

প্রশ্নঃ ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার কারণ লিখ।

ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার কারণতত্ত্ব:

(i) ইউস্টেসিয়াম টিউবে অনস্ট্রাকশন কারণে :- সাইনোসাইটিস, রাইনাইটিস- তরুণ ও পুরাতন টনসিলাইটিস- ন্যাজো ফ্যারিংজাইটিস।

(ii) ন্যাজাল পলিপ বা এনলার্জ এডিনয়েডের কারণে ইউস্টোসিয়ান টিউবের অবস্ট্রাকশন।

(iii) মাইক্রোঅর্গানিজম : স্ট্যাফালোকক্কাস অরিয়াস, স্ট্রেপটোকক্কাস, হিমেফিলাস ইনফ্লয়েঞ্জি, নিউমোকক্কাস ইত্যাদি।

(iv) দূষিত বস্তু দ্বারা কান খোঁচানো।

(v) পুনঃপুনঃ উপরের শ্বাসনালীর রোগ সংক্রমণ।

প্রশ্ন: ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) পুনঃপুনঃ শ্বাসনালীর রোগ সংক্রমণের ইতিহাস থাকে।

(ii) কান পাকার ইতিহাস থাকবে।

(iii) কান হতে দূর্গন্ধহীন মিউকাস এবং পুঁজ মিশ্রিত ডিসচার্জ প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত হবে।

(iv) কানে ব্যথা থাকবে না বা সামান্য হতে পারে।

(v) বধিরতা- মাইন্ড অথবা Moderate হতে পারে।

(vi) টিমপেনিক মেমব্রেন সেন্ট্রাল পারফোরেশন হতে পারে।

Altico Antral type:

(i) দুর্গন্ধ যুক্ত, পুরু, পুরুলেন্ট বা বুক্ত মিশ্রিত ডিসচার্জ কান হতে নির্গত হয়।

(ii) ব্যথা- অস্থায়ীভাবে মাথা ব্যথা ও মাথা ঘুরানিসহ কানে ব্যথা থাকে।

(iii) জ্বর থাকবে।

(iv) বধিরতা- সিভিয়ার হতে পারে।

(v) টিমপেনিক মেমব্রেন সার্জিক্যাল পারফোরেশন হবে।

(vi) কলেসটিয়াটোমা বা প্ল্যানুলেশন টিস্যু উপস্থিত থাকবে বা থাকে।

(vii) পলিপাস থাকবে।

প্রশ্ন: টিউবো-টিমপেনিক ও অ্যাটিকোএন্ট্রাল সাপুরেটিভ অটাইটিসের মধ্যে পার্থক্য লিখ।

বা, সিএসওএম এর দুইটি টাইপের পার্থক্য লিখ।

টিউবো-টিমপেনিক ও অ্যাটিকো-এন্ট্রাল সাপুরেটিভ অটাইটিসের মধ্যে

পার্থক্য:

টিউবো-টিমপেনিক CSOM

অ্যাটিকো-অ্যান্ট্রাল CSOM

ইহা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়।

ইহা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

ইহার onset তত silent নয়।

ইহার onset খুবই silent।

ডিসচার্জ- মিউকয়েড বা মিউকো পুরুলেন্ট এবং copius।

ডিসচার্জ হলুদ, copious বা scanty এবং দুর্গন্ধযুক্ত।

কান মাঝে মাঝে শুকনা থাকে অর্থাৎ ডিসচার্জ থাকে না।

এখানে ডিসচার্জ সবসময় থাকে।

ইহাতে bone আক্রান্ত হয় না।

ইহাতে bone আক্রান্ত হয়, অর্থাৎ টিমপেনিক রিং, Ossicles, মাস্টয়েড এয়ার সেলস এবং অ্যাটিক, অডিটাস ও অ্যান্ট্রামের bonywall আক্রান্ত হয়।

ড্রামের পারফোরেশন এন্টিরিয়র বা সেন্ট্রাল হয় এবং

ড্রামের পাস্টারো সুপিরিয়র বা pars flaccida’য় পারফোরেশন

প্রশ্ন: সিএসওএম এর জটিলতাসমূহ উল্লেখ কর। বা অটাইটিস মিডিয়ার জটিলতা লিখ। ০৮

জিএসওএম (ক্রনিক সাপুরেটিভ অটাইটিস মিডিয়া) এর জটিলতাসমূহঃ

1) ফেসিয়াল পালিস, (ii) একিউট মাস্টয়ডাইটিস, (iii) মেনিনজাইটিস,

( (iv) এক্সট্রাডুরাল এ্যাবসেস, (v) ব্রেইন অ্যাবসেস, ল্যাবিরিনথাইটিস,

(vi) ল্যাটারাল সাইনাস থ্রোম্বোসিস, (vii) ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস,

(vii) পেট্রোসাইটিস, (ix) হাইড্রোসেফালাস, (x) এনসেফালাইটিস।

প্রশ্ন: ক্রনিক অটাইটিস মিডিয়ার চিকিৎসা লিখ।

চিকিৎসা: রক্ষনশীল চিকিৎসাঃ

(1) রোগকে বিশ্রামে রাখতে হবে

(ii) আক্রান্ত কানের ভিতর শুষ্ক রাখতে হবে

(iii) কানদ্বয় পরিষ্কার রাখতে হবে

(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: উপরিউক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থায় উপকার না হলে সার্জারী করতে হবে।

মাইরিঙ্গোপ্লাস্টি: বাহির দিকে ইনসিশন দ্বারা টিমপেনিক মেমব্রেন উন্মুক্ত করা হয়, পারফোরেশনের রিম হতে ইপিথেলিয়ামের স্তর তুলে ফেলার পর গ্রাফট লাগিয়ে দেয়া হয়।

টিমপেনোপ্লাস্টি (Tympanoplasty):

টিমপেনিক মেমব্রেন রিপেয়ারের সঙ্গে প্রয়োজনে ossicular reconstauction এর মাধ্যমে Hearing resafore করা হয়, তাকে টিমপেনোপ্লাস্টি বলে।

নাক ও গলা (nose and throat)

প্রশ্ন: সাইনোসাইটিসের লক্ষণ ও চিহ্ন লিখ। ১২ সাইনোসাইটিসের লক্ষণ ও চিহ্ন।

(i) প্রচন্ড মাথাব্যথাসহ চোখে ব্যথা।

(ii) উচ্চ তাপমাত্রাযুক্ত জ্বর।

(iii) শরীরে ব্যথা, অস্বস্থিকর অবস্থা, বমিবমিভাব ও বমি।

(iv) ন্যাজাল অবস্ট্রাকশন হতে পারে।

সাইন:

(1) মুখমন্ডল ফোলা বা ইডিমা দেখা দিতে পারে।

(ii) ম্যাক্সিলারী সাইনাস এর চর্ম লাল বর্ণ ধারণ করতে পারে।

(iii) ম্যাক্সিলারী সাইনাস প্রদাহযুক্ত হবে।

(iv) ন্যাজাল ক্যাভিটি- মিডল মিয়েটাসে প্ররুলেন্ট ডিসচার্জ জমা হয় এবং নাক দিয়ে বের হয়। মিউকোসায় অতিমাত্রায় পূর্ণ।

এপিসট্যাক্সিস (Epistaxis)

প্রশ্নঃ এপিসট্যাক্সিসের সংজ্ঞা, কারণ ও ব্যবস্থাপনা লিখ। ০৯ বা, এপিসট্যাক্সিস কি? ইহার কারণ ও চিকিৎসা লিখ। ২০১১ এপিসট্যাক্সিসঃ এপিট্যাক্সিস বা নাসিকা হতে রক্তস্রাব হলো মাঝে মাঝে নাক হতে রক্ত পড়া। যখন কোন কারণে নাসিকা গহবর হতে রক্তস্রাব হয়, তাকে এপিস্ট্যাক্সিস বলে।

এপিসট্যাক্সিসের কারণ:

(i) কনজেনিটাল কারণ:

(ক) হ্যামোফিলিয়া বা অন্যান্য রক্তজমাট না বাধার কারণ।

(ii) অর্জিত কারণঃ (ক) যে কোন ধরনের আঘাত, (খ) ইনফ্ল্যামেটরী ডিজিজ- হে ফিভার, একিউট রাইনাইটিজ, (গ) টিউমার জনিত কারণ-

লাইফোমা, লিউকেমিয়া (ঘ) রক্তসঞ্চালনজনিত কারণ- হাইপারটেনশন (ঙ) রক্ত জমাট না বাধার কারণ- পারপিউরা।

চিকিৎসা বা ব্যবস্থাপনাঃ

সাধারণ অবস্থাঃ পালস, ব্লাড প্রেসার, মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ।

বিশেষ অবস্থা: মিনি টর্চ লাইট বা প্রয়োজনে এন্টেরিয়র রাইনোস্কপি দ্বারা নাক পরীক্ষা করতে হবে। রক্ত জমাট বাধা থাকলে তুলা দ্বারা নাক পরিষ্কার করতে হবে।

রোগের কারণ ও লক্ষণানুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।

ন্যাজাল পলিপ (Nasal polypus)

প্রশ্নঃ ন্যাজাল পলিপের সংজ্ঞা দাও।

ন্যাজাল পলিপের সংজ্ঞা:

নাকের মিউকাস মেমব্রেন অধিক বৃদ্ধি পেয়ে বা ইহাতে জলীয় পদার্থ অধিক পরিমানে জমে স্ফীত হলে, তাকে ন্যাজাল পলিপাস বলে। নাকের এবং সাইনাসের মিউকোসার দীর্ঘস্থায়ী ইডিমার ফলে পলিপের সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইথময়েডাল ল্যাবিরিন্থ (Ethmoidal labyrinth) এর ছোট ছোট স্পেসের মিউকোসায় ইডিমা হলে, মিডল মিটাসের চর্তুপাশের সাব মিউকাস বিশেষভাবে ঢিলাঢালা ফলে সহজে পানি জমা হয়ে টিস্যু ফুলে উঠে। যদিও নাক এবং সাইনাসের যে কোন অংশ হতে পলিপ তৈরী হতে পারে। তবুও অধিকাংশ পলিপ মধ্য টারবিনেট এবং ইথময়েড এলাকা হতে উৎপন্ন হয়।

প্রশ্নঃ ন্যাজাল পলিপের শ্রেণিবিভাগ লিখ।

ন্যাজাল পলিপের শ্রেণিবিভাগ:

(ক) উৎপত্তি উৎস অনুসারে টাইপ

(১) ইথময়েডাল পলিপাস। (২) এ্যান্ট্রো-কোয়ানাল পলিপাস।

(খ) ১। সিম্পল মিউকাস পলিপাস।

২। ফাংগাল পলিপাস ও

৩। নিউপ্লাস্টিক পলিপাস।

১৪। প্রশ্ন: ন্যাজাল পলিপের কারণসমূহ লিখ। ১০, ১২, ১৮ ন্যাজাল পলিপের কারণসমূহঃ ১। এলার্জি কারণে হতে পারে।

২। ইনফেকশন জনিত কারণে।

৩। এলার্জি ও ইনফেকশন উভয় এর কারণে হতে পারে।

প্রশ্ন: ন্যাজাল পলিপের লক্ষণ ও চিহ্ন লিখ। ১০, ১২, ১৮

ন্যাজাল পলিপের লক্ষণ ও চিহ্নঃ

নাক বন্ধ হয়ে থাকে, সাধারণতঃ এক বা উভয় পাশের। হাঁচি দেয়া, মাথাব্যথা, কাসি, ঘ্রাণশক্তি হ্রাস এবং ঘ্রাণশক্তিহীনতা। অনেক সময় কিছু ডিসচার্জ হতে থাকে। এ ডিসচার্জ মিউকয়েড বা পুরুলেন্ট হতে পারে। হলুদ পুঁজ দ্বারা মিডল কনকার চতুর্পাশের সুপারফিসিয়াল এলাকা হতে পলিপ উপস্থিত হয়েছে বুঝা যায় না বরং উহার সঙ্গে deep-seated সাইনাস ডিজিজ আছে বুঝায়। মাথাব্যথা থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। মাঝে মাঝে প্রচন্ড হাঁচি-কাশি দেখা দেয়।

প্রশ্ন: ন্যাজাল পলিপের ব্যবস্থাপনা লিখ।

ন্যাজাল পলিপের ব্যবস্থাপনা:

১। রোগীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে।

২। অতিরিক্ত ঠান্ডা ও ঠান্ডা জাতীয় খাদ্য খাওয়া হতে বিরত রাখতে

হবে। ৩। সর্বদা নাক পরিষ্কার রাখতে হবে।

৪। রোগীর যাতে ঠান্ডা না লাগে সে ব্যবস্থা করতে হবে।

৫। লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সেবন করাতে হবে।

৬। সার্জিক্যাল চিকিৎসা: প্রয়োজনে Polypectomy করতে হবে।

টনসিলাইটিস (Tonsilitis)

প্রশ্নঃ টনসিলাইটিসের সংজ্ঞা লিখ। ১২ বা, টনসিলাইটিস কাকে বলে? ০৮, ০৯

টনসিলাইটিসের সংজ্ঞা: কোন কারণে একটি টনসিল বা উভয় টনসিল এর চতুষ্পার্শ্বস্থ মিউকাস মেমব্রেনের লালবর্ণ ধারণ, স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত হওয়াকেই টনসিলাইটিস বলা হয়। এক কথায় টনসিল বা টনসিলদ্বয়ের প্রহাদকে টনসিলাইটিস বলে।

প্রশ্নঃ টনসিলাইটিসের প্রকারভেদ লিখ। ১ টনসিলাইটিসের প্রকারভেদ (Types):

হোমিওপ্যাথিক মতে টনসিলাইটিস দুই প্রকার। যথা-

(i) একিউট টনসিলাইটিস এবং (ii) ক্রনিক টনসিলাইটিস। প্যাথলজিক্যাল মতে ইহাকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(1) একিউট ক্যাটারাল টনসিলাইটিস

(ii) ফলিকুলার টনসিলাইটিস এবং

(iii) একিউট সাপুরেটিভ অথবা কুইন্সি টনসিলাইটিস।

প্রশ্ন: সংজ্ঞাসহ টনসিলাইটিসের কারণসমূহ লিখ। ০৯

টনসিলাইটিসের সংজ্ঞা: কোন কারণে একটি টনসিল বা উভয় টনসিল এবং এর চতুষ্পার্শ্বস্থ মিউকাস মেমব্রেনের লালবর্ণ ধারণ, স্ফীত ও প্রদাহযুক্ত হওয়াকেই টনসিলাইটিস বলা হয়। এক কথায় টনসিল বা টনসিলদ্বয়ের প্রদাহকে টনসিলাইটিস বলে।

কারণতত্ত্ব (Aetiology): (i) বয়স : ৫-১০ বছরের শিশুদের বেশি হয়। (ii) Causative organisms Bacleria-Streptococci, Staphylococci, Pneumococci, H. Inflauenzae Virues- Rhinovirus, Adenovirus, enterovirus

(iii) ঠান্ডা এবং ঠান্ডা আবহাওয়া জনিত কারণে।

(iv) ইনফেকশাস রোগের জটিলতার কারণে যেমন-ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডিপথেরিয়া।

(v) টক্সিক গ্যাস গ্রহণ করার ফলে বা ক্ষতিকর গ্যাসের প্রভাবে।

(vi) অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস। (vii) বংশগত কারণে।

(viii) পাকস্থলীর গোলযোগের কারণে।

(ix) ক্ষতিকর জীবাণুর কারণে, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাংগাস, স্ট্রেপটোকক্কাই, নিউমোকক্কাই, স্ট্যাফাইলোকক্কাই।

(x) অপুষ্টি, পাকস্থলীর গোলাযোগের কারণে।

(xi) জীবনীশক্তির বৈকল্য বা দূর্বলতার কারণে।

প্রশ্নঃ টনসিলাইটিস এর ইনভেস্টিগেশন লিখ।

টনসিলাইটিসের ইনভেস্টিগেশন (Investigation):

(i) খালি চোখে টাং ডিসপ্রেসব এবং ছোট টর্চের সাহায্যে এই রোগ সহজে নির্ণয় করা যায়।

(ii) থ্রোট সোয়ার পরীক্ষা করলে এই রোগ ধরা পড়ে।

(iii) রক্তের টি.সি, ডি.সি, ই.এস.আর, হিমো %

প্রশ্নঃ টনসিলাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার/ লক্ষণাবলী লিখ। ০৮ বা টনসিলাইটিসের লক্ষণ ও উপসর্গ বর্ণনা কর। ০৯, ১২, ১৪

টনসিলাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার (Clinical Features):

Symptoms: (i) অতি উচ্চ জ্বর কিংবা স্বল্প জ্বর হতে পারে।

(ii) শরীরের শীত শীত বোধ।

(iii) শোর থ্রোট থাকবে।

(iv) জ্বরজ্বর ভাব, জ্বর থাকবে (১০২ ডিগ্রী থেকে ১০৩ ডিগ্রী)

(v) জিহ্বা পরিষ্কার থাকবে।

(vi) টনসিলদ্বয় ফুলে যাবে এবং লাল বর্ণ ধারণ করবে।

(vii) বাহির থেকে গলা স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভব করে।

(viii) টনসিলদ্বয়ের ব্যথা কান পর্যন্ত পৌছবে।

(ix) খাবার গ্রহণ করার সময় এবং কথা বলার সময় গলায় ব্যথা হবে।

(x) গলার স্বর পরিবর্তন হবে।

Signs (i) গলায় ঘা থাকবে, (ii) জ্বর থাকবে

(iii) শীত শীতভাব থাকবে

(iv) টনসিলের আক্রান্ত অংশ ফোলা, লাল বর্ণ ও স্পর্শকাতর থাকবে।

প্রশ্নঃ টনসিলাইটিসের জটিলতা লিখ। ০৯, ১০

জটিলতা (Complications) : (i) বার বার টনসিল প্রদাহ হলে ক্রনিক টনসিলাইটিসে রূপান্তরিত হতে পারে।

(ii) সারভাইক্যাল গ্ল্যান্ড আক্রান্ত হতে পারে।

(iii) রিউমেটিক ফিভার এবং হার্টের সমস্যা হতে পারে।

(iv) পেরিটনসিলায় অ্যাবসেস (কমন)

(v) প্যারাফেরেঞ্জিয়াল এবসেস।

প্রশ্ন: টনসিলাইটিসের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা লিখ। ১১, ১৫ বা, টনসিলাইটিসের ব্যবস্থাপনা লিখ। ১২, ১৩, ১৪

টনসিলাইটিসের চিকিৎসা পদ্ধতি:

Advice: করণীয়:

(i) গরম পানি দিয়ে গরগড়া করতে হবে।

(ii) তরল এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।

(iii) আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পড়তে হবে।

(iv) স্বাস্থ্যসম্মত ঘরে থাকতে হবে।

নিষেধ: (i) শক্ত খাবার এবং ঠান্ডা খাবার ও পানীয় (ii) ধুমপান ও

মদ্যপান (iii) দূর্যোগপূর্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় হাঁটাচলা

(iv) মশলাযুক্ত খাবার।

পথ্য: (i) তরল এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ

(ii) হালকা গরম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: রক্ষণশীল চিকিৎসা ব্যর্থ হলে এবং রোগ জটিল আকার ধারণ করলে অপারেশনের জন্য মেডিক্যাল সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রশ্ন: ক্রনিক টনসিলাইটিস এর লক্ষণাবলী ও চিকিৎসা লিখ।

ক্রনিক টনসিলাইটিস (Chronic tonsillitis):

(1) Chronic parenchymatous tonsillitis শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি

হয়। (2) Chronic follicular tonsillitis- বয়স্কদের কমন।

লক্ষণাবলী: (i) বার বার গলা ব্যথা বা পুনঃপুনঃ গলা ব্যথা হবে।

(ii) অল্প তাপমাত্রাযুক্ত জ্বর থাকবে

(iii) টনসিল এনলার্জ এর কারণে খাদ্য ও পানীয় গিলতে কষ্টকর হয়।

(iv) মুখ থেকে দূর্গন্ধ বের হয় এবং খাদ্যের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।

(v) শিশুদের ক্ষেত্রে টনসিলদ্বয় এনলার্জ হয় এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে।

(vi) এন্টেরিয়র পিলারে চাপ দিলে পুঁজ বের হয়ে আসে

(vii) লিম্ফনোডের এনলার্জমেন্ট হয় কিন্তু টেন্ডার থাকে না।

চিকিৎসা: (ক) কনজাবেটিভ (Conservatie treatment):

(i) রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে।

(ii) হালকা গরম পানির গড়গড়া করতে হবে।

(iii) আবহাওয়া অনুযায়ী পোশাক পড়তে হবে।

(iv) স্বাস্থ্য সম্মত ঘরে থাকতে হবে।

(v) তরল ও হালকা গরম এবং পুষ্টিকর খাদ্য পানীয় দিতে হবে।

(vi) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(খ) সার্জিক্যাল চিকিৎসা (Surgical Treatment): উপরিউক্ত চিকিৎসায় আরোগ্য না হলে এবং টনসিলদ্বয় এনলার্জমেন্ট থাকলে ও পুনঃপুনঃ প্রদাহ হলে টনসিলেকটমী (Tonsillectomy) করতে হবে।

Diseases of the eye

কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis)

প্রশ্ন: কনজাংটিভাইটিসের সংজ্ঞা লিখ। ২০০৯ বা, কনজাংটিভাইটিস কি? এর প্রকারভেদ কর। ২০০৮

কনজাংটিভাইটিস (চোখ উঠা) এর সংজ্ঞাঃ

চোখের কনজাংটিভার প্রদাহকে কনজাংটিভাইটিস বলে। ইহাতে চোখ লাল হয় এবং কনজাংটিভা হতে রস নিসরণ হয়।

প্রকারভেদ: কনজাংটিভাইটিসের প্রকারভেদ নিম্নে দেয়া হলোঃ

ক। জীবাণু ঘটিতঃ

(১) ব্যাক্টেরিয়াল:

(ক) একিউট ক্যাটারাল বা মিউকো পুরুলেন্ট কনজাংটিভাইটিস।

(খ) মেমব্রেনাস কনজাংটিভাইটিস।

(গ) সিউডো মেমব্রেনাস কনজাংটিভাইটিস।

(ঘ) পুরুলেন্ট কনজাংটিভাইটিস।

(ঙ) অ্যাগুলার কনজাংটিভাইটিস (Angular Conjunctivitis)

(২) ভাইরাল:

(ক) ফলিকুলার কনজাংটিভাইটিস

(খ) একিউট হেমোরেজিক কনজাংটিভাইটিস

(গ) বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগের ফলে Measles, Chicken Pox, Herpes Zoster, Yellow fever, influenga

(৩) এলার্জিকঃ (ক) সিম্পল (খ) ভার্নাল (গ) আঘাতজনিত

(ঘ) অন্যান্য চর্ম রোগজনিত

সাধারণতঃ কনজাংটিভাইটিসকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

(১) একিউট কনজাংটিভাইটিস ও

(২) ক্রনিক কনজাংটিভাইটিস।

প্রশ্ন: কনজাংটিভাইটিসের কারণ লিখ। ০৯

কনজাংটিভাইটিসের কারণ:

(i) জীবাণু ঘটিত কারণ: (ক) ভাইরাস (খ) ব্যাক্টেরিয়া,

(ii) এলার্জিজনিত কারণে- হাইপারসেসিটিভিটি,

(iii) আঘাতজনিত কারণে,

(iv) চর্মরোগের জটিলতার কারণে,

(v) ঠান্ডাজনিত কারণে,

(vi) চোখের অন্য রোগের জটিলতার কারণে- অপথ্যালমিয়া, ক্যাটারাল ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ কনজাংটিভাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। বা, কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণাবলি লিখ। ২০০৯

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) চোখে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করে বা হয়।

(ii) ফটোপরিয়া (আলো সহ্য হয় না)

(iii) দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত হয়।

(iv) চোখে লাল বর্ণ দেখায়, চোখ হতে পানি পড়ে।

(v) চোখে আঠালো স্রাব নিঃসৃত হয়ে চোখের পাতা জুড়ে যায়।

(vi) পানির মত রস ধীরে ধীরে পুঁজের আকার ধারণা করে।

(vii) সকালে ঘুম হতে উঠার সময় চোখের পাতা জোড়া লেগে যায়।

(viii) নিচের ফরনিক্স হাইপারেমিয়া না হওয়া পর্যন্ত চোখ স্বাভাবিক দেখায়। ইহার পর নীচের পাতা ঝুলে পড়ে।

প্রশ্ন: কনজাংটিভাইটিসের জটিলতা উল্লেখ কর।

জটিলতাঃ

(i) ক্রনিক কনজাংটিভাইটিস

(ii) মার্জিনাল কর্ণিয়াল আলসার

(iii) ক্রনিক ড্যাকরিওসিস্টাইটিস

প্রশ্ন: কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা লিখ।

কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসাঃ

রক্ষণশীল চিকিৎসা:

(i) রোগীকে আলাদা রুমে রাখতে হবে।

(ii) চোখে নরমাল স্যালাইন দিয়ে দিনে ৩ বার ধৌত করতে হবে।

(iii) ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধৌত করতে হবে।

(iv) রোগীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

(v) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(vi) আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হলে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

কনজাংটিভাইটিসের ব্যবস্থাপনা:

(i) রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখতে হবে।

(ii) রৌদ্রের আলোতে কালো সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

(iii) পরিষ্কার পানি দ্বারা ঘনঘন চোখ ধৌত করতে হবে।

(iv) চোখ পরিষ্কার করার জন্য জীবাণুমুক্ত কটন বা ক্লথ ব্যবহার করতে হবে।

(v) পুষ্টিকর সহজপাচ্য খাদ্য ব্যবস্থা করতে হবে।

(vi) তাজা-ফলমূল ব্যবস্থা করতে হবে।

কর্ণিয়াল আলসার (Corneal Ulcer)

প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর সংজ্ঞা দাও। ২০০৯, ১১

কর্ণিয়াল আলসার-এর সংজ্ঞা: কর্ণিয়ায় ইনফেকশন হলে, তাকে কর্ণিয়াল আলসার বলা হয়। (Loss of continuity of corneal epithelium is called carneal ulcer.)

প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর শ্রেণিবিভাগ লিখ। ২০৪

কর্ণিয়াল আলসার-এর শ্রেণিবিভাগ (Clssification of Corneal Ulcer):

(A) Purulent Ulcer (Suppurative koratitis)

(i) পায়োজেনিক (Pyogenic)

(ii) মাইকোটি (Mycotic)

(iii) মারজিরাল (Marginal)

(B) Non-purulent corneal ulcer

(i) ডেনড্রাইটিক (Dendritic)

(ii) নিউট্রেশনাল : ভিটামিন ‘এ’ এর অভার জনিত (Nutritional: vit A Deficiency)

(iii) নিউরোপ্যারালাইটিক (Neuroparalytic)

(iv) ফ্লাইকটেনিউল্যার (Phlyctenular)

(v) মূরেন্স আলসার (Mooren’s Ulcer)

প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর কারণ লিখ।

কর্ণিয়াল আলসারের কারণ:

(i) জীবাণুজনিত : বিভিন্ন প্রকার জীবাণু দ্বারা ইনফেকশনের কারণে। যেমন- স্ট্রেপ্টোকক্কাই, স্ট্র্যাফালোকক্কাই, নিউমোকক্কাই ইত্যাদি

(ii) মিউকো-প্ররুলেন্ট কনজাংটিভাইটিস এর জটিলতা কারণে।

(iii) আঘাত জনিত বা চোখে ফরেন বড়ি পড়ার কারণে।

(iv) কনজেনিটাল সিফিলিস- মায়ের সিফিলিস রোগ থাকলে শিশু ডেলিভারীর সময় সিফিলিসের জীবাণু দ্বারা চোখে এ রোগ হতে পারে।

(v) ভিটামিন এ এর অভাবজনিত কারণে।

(vi) অন্যান্য রোগের কারণে- এলার্জি, নিউরালজিক প্যারালাইসিস ইত্যাদি। 4

প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। বা, কর্ণিয়াল আলসার-এর লক্ষণ উল্লেখ কর। ০৯, ১১

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) চোখ হতে পানি পড়তে থাকে এবং ব্যথা হয়।

(ii) আলোর দিকে তাকাতে পারে না।

(iii) কর্ণিয়ার ধূসর রংএর গোলাকার ইনফেলট্রেশনের মাধ্যমে আলসার শুরু হয়। উপরের লেয়ার উঠে যাওয়ায় টিপিক্যাল আলসার সৃষ্টি হয়।

(iv) চোখের কিনারগুলি বুঝে থাকে এবং ঘায়ের মাঝখানটা নেক্রোটিক পদার্থ দ্বারা ঢাকা থাকে।

(v) কর্ণিয়াল আলসারের সাথে সবসময় আইরাইটিস থাকে।

(vi) প্রগ্রেসিভ স্তরে আলসার আকারে এবং গভীরতায় বৃদ্ধি পেতে থাকে।

(vii) মারাত্মক অবস্থায় সমস্ত কর্নিয়া আলসার দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে এবং কর্নিয়া উঠে যাওয়ায় আইরিস উন্মুক্ত হতে পারে।

প্রশ্ন: কর্ণিয়াল আলসার-এর জটিলতা লিখ।

কর্ণিয়াল আলসার-এর জটিলতাঃ

(i) ডেসিসেটোসিল- আলসার গভীর হয়ে কণিয়ায় ডেসিমেট’স মেমব্রেন পর্যন্ত পৌছে গেলে চোখের ভিতরের স্বাভাবিক চাপে এ মেমব্রেন আলসারের তলা দিয়া বাহির দিকে ফুলে উঠে।

(ii) পারপোরেশন- আলসার গভীর হলে সাধারণতঃ রোগী কাশি বা হাঁচি দিলে আলসার ফুটা হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ কর্ণিয়াল আলসার-এর চিকিৎসা লিখ।

কর্ণিয়াল আলসার-এর চিকিৎসাঃ

স্থানীয় চিকিৎসাঃ

(i) ওয়াস: কনজাংটিভাল স্যাক দিয়ে দিনে ৩ বার নরমাল স্যালাইন দিয়ে ওয়াশ করতে হবে।

(ii) কনজাংটিভা হতে কোন ডিসচার্জ না থাকলে চোখ ব্যান্ডেজ করে রাখতে হবে।

(iii) ব্যথা কমানোর জন্য লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(iv) রোগীর সাধারণত স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে হবে।

(v) পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে।

(vi) মুক্ত বাতাস ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ

ডেনড্রাইটিক আলসার অ্যাবসলুট অ্যালকোহল বা টিংচার আইওডিন সোয়ার দ্বারা কটারাইজ করতে হবে। প্যারাসিনটেসিস (Paracentesis) অর্থাৎ কর্ণিয়ার আলসারের কারণে চোখের ভিতরের চাপ বৃদ্ধি পেলে, ইহা চাপ কমানো জন্য অপারেশন করা হয়।

চোখের ছানি(Cataract)

প্রশ্ন: ক্যাটার‍্যাক্টের সংজ্ঞা লিখ। ২০১০, ১৩, ১৮

ক্যাটার‍্যাক্টের সংজ্ঞা: চোখের লেন্সের বা ইহার ক্যাপসুলের জন্মগত বা অর্জিত যে কোন প্রকার অস্বচ্ছতাকে, ক্যাটার‍্যাক্ট (ছানী) বলে। (Any opacity in the lens on its capsule whether development or acquired is called cataract.)

প্রশ্ন: ক্যাটারাক্টের শ্রেণী বিভাগ কর। ২০১৩, ১৮

শ্রেণীবিভাগ (Classification)

(A) কারণজনিত ক্যাটারাক্ট (Aetiological classification)

(a) Congenital cataract

(i) Blue dot cataract

(ii) Coronary cataract

(iii) Polar Cataract

(iv) Sutural cataract

(v) Coralliform cataract

(vi) Zonular cataract

(vii) Central cataract

(viii) Total cataract

(B) অর্জিত ক্যাটারাক্ট (Acquired cataract)

(i) ডিজেনারেটিভ (Degenarative) (95%)- Senile cataract

(ii) ট্রমাটিক (Traumatic)- Physical Trauma, Chemical, electrical trauma, Irradiation

(iii) কমপ্লীট ক্যাটারাক্ট (Complicated): Anterior uveitis, glaucama, high myopia, preforated conueal ulcer, retinal detachment.

(iv) Secondary from systemic disease-Diabetes mellitus, Myotonic dystrophy, Cretinism glactosaemia

(v) নিউট্রেশনাল (Nutritional) – Vit B1, B2, D deficiency

(C) বয়স অনুয়ায়ী শ্রেণীবিভাগ (According to age of onset): সেনাইল (Senile), প্রি-সেনাইল (pre-senile), জুবেইনাইল (Juvenile), কনজেনিটাল (congenital)

প্রশ্ন: ক্যাটার‍্যাক্ট এর কারণ লিখ। ২০১১, ১৫, ১৮

ক্যাটার‍্যাক্ট এর কারণ:

(i) বংশগত বা জন্মগত বৈকল্যতা কারণে।

(ii) পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব। ভিটামিনের অভাব।

(iii) বাহ্যিক আঘাত। যেমন- মেকানিক্যাল, কেমিকেল, ইলেকট্রিক্যাল, রেডিওলজিক্যাল ইত্যাদি।

(iv) বিভিন্ন ধরনের রোগের কারণে- ডাবেটিস মেলিটাস, হাইপারথাইরোয়েডিজম, ক্রিটেনিজম ইত্যাদি।

(v) বয়সজনিত কারণে- সেনাইল ক্যাটার‍্যাক্ট (বার্ধক্য জনিত ছানী):

সেনাইল ক্যাটার‍্যাক্ট সাধারণতঃ ৫০ বৎসর বয়সের পর হয়। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই সমান হারে হয়। সাধারণতঃ দুই চোখের হয়, কিন্তু যে কোন একটি চোখে আগে শুরু হয়। কারণ: আসল কারণ জানা যায় নাই, সম্ভবত শরীরের জৈব রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে লেন্সের প্রোটিন জমাট বেঁধে যায়।

প্রশ্ন: ক্যাটার‍্যাক্টের জটিলতা লিখ। ১৩, ০৮

ক্যাটারাক্টের জটিলতাঃ

(i) ভিস্যুয়াল ফিল্ড সংকীর্ণ হয়ে যায়।

(ii) অপটিক নার্ভের ডিস্ক নিচু হয়ে কাপ এর সৃষ্টি করে।

(iii) পিউপিল এনলার্জ হয়ে যায়।

(iv) দৃষ্টি শক্তি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন: ক্যাটার‍্যাক্টের সংজ্ঞা ও লক্ষণ লিখ। ১০ ক্যাটার‍্যাক্ট কি? এর ক্লিনিক্যাল ফিচার (লক্ষণাবলী) কি?০৮, ১৮

ক্লিনিক্যাল ফিচার:

বার্ধক্য জনিত ছানীকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

(১) নিউক্লিয়ার ছানী-২০-২৫%,

(২) কর্টিক্যাল ছানী ৭৫-৮০%

নিউক্লিয়ার ছানী (শক্ত ছানী):

(i) নিউক্লিয়ার ছানী কর্টিক্যাল ছানীর আগে হয়ে থাকে। অর্থাৎ ৪০ বৎসর বয়সের পরেই।

(ii) প্রথমে লেন্সের নিউক্লিয়াস ঘোলাটে হয় এবং পরে কর্টেক্স ঘোলাটে হয়।

(iii) এটি পরিপক্ক হতে দীর্ঘ সময় লাগে।

(iv) প্রথমাবস্থায় শুরু লেন্স ঘোলাটে দেখানো ছাড়া আর কোন পরিবর্তন পাওয়া যায় না।

(vi) মাইওপিয়ার জন্য চোখে দেখতে অসুবিধা হয়।

(vii) এ জাতীয় ছানীতে হাইপারম্যাচুরিটি ঘটে না।

কর্টিক্যাল ছানী (কোমল বা নরম ছানী):

এটির ক্লিনিক্যাল ফিচারকে ৪টি ধাপে ভাগ করা হয়েছে।

১। ইনসিপিয়েন্ট ধাপ: এই ধাপে লেন্সের কেন্দ্রে অথবা এক পাশ হতে

অস্বচ্ছতা শুরু হয়। পলিওপিয়া, রংধনুর মত রং দেখা এবং চোখে দেখতে অসুবিধা হয়। অস্বচ্ছতা যদি কেন্দ্রে হয়, তবে রোগী দিনের বেলায় চোখে বেশি কম দেখে। লেন্সের পেরিপেরীতে অস্বচ্ছতা হলে রাতে দেখতে বেশি অসুবিধা হয়।

লক্ষণাবলী:

(i) চোখে তীর্যকভাবে আলো ফেললে পিউপিল ধূসর রং এর দেখা যায়। অন্ধকার কক্ষে চোখে আলো ফেললে লালের মধ্যে কাল স্পট দেখা যায়।

স্পিরিট-ল্যাম্প দ্বারা চোখে পরীক্ষা করলে লেন্সের কেন্দ্রে গোল অস্বচ্ছতা দেখা যায়।

(ii) ইন্ট্রমিসেন্ট ধাপ: আগের ধাপের মতই উপসর্গ থাকে এটি ছাড়াও মাওপিয়া যোগ হয়।

লক্ষণাবলীঃ অস্বচ্ছতা আরও বৃদ্ধি পায়। লেপ ফুলে উঠে এবং আইরিস সামনের দিকে ঠেলে দেয়। আইরিসের ছায়া পাওয়া যায়। সেকেন্ডারী গ্লুকোমা তৈরি হয়।

(iii) পরিপক্ক ধাপঃ পুরা লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে যায়।

(ক) লেন্স পূনরায় আগের মত পুরু হয়।

(খ) চোখের দৃষ্টিশক্তি এতই কমে যায় যে রোগী শুধু চোখের সামনে হাত নড়াচড়া অনুভব করতে পারে। (গ) আইরিস সেডো অনুপস্থিত।

(ঘ) অন্ধকার কক্ষে পরীক্ষা করলে কোন ফান্ডাসের ছায়া পাওয়া যায় না। (ঙ) লেন্সের রং মুক্তার মত দেখায়।

(iv) অতিরিক্ত পরিপক্ক ধাপঃ

(ক) লেন্স ছোট হয়ে যায়, সাদা দুধের মত রং ধারন করে।

(খ) লেন্সের সংকুচিত হওয়ার ফলে আইরিস কাপে এবং চোখের সামনের চেম্বার গভীর হয়।

(গ) লেন্স নীচের দিকে ঝুলে পড়ে।

(ঘ) ক্যাপসুল পুরু হয়, কোন ফান্ডাল ছায়া পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন: ক্যাটার‍্যাক্ট এর চিকিৎসা লিখ। ২০১১, ১৫

ক্যাটার‍্যাক্ট এর চিকিৎসাঃ

কনজারভেটিভ চিকিৎসা:

অপরিপক্ক ধাপ:

(1) মাঝে মাঝে রিফ্রাকশন পরীক্ষা করে চশমা দ্বারা ঠিক করতে হবে।

(ii) সেন্ট্রাল অস্বচ্ছতা হলে কাল সানগ্লাস পড়তে হবে।

(iii) সেন্ট্রাল অস্বচ্ছতা হলে রাতে কম আলো ব্যবহার করতে হবে।

(iv) পেরিফেরাল অস্বচ্ছতা হলে রাতে অধিক আলো ব্যবহার করতে হবে

(v) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ

পরিপক্ক ধাপ: চোখের অস্বচ্ছ লেন্স অপারেশন করে বের করে ফেলতে হবে এবং নতুন কৃত্রিম লেন্স সংযোগ করতে হবে। নিম্নলিখিত অপারেশন দ্বারা 1. Extraction of lens- (a) Intracapsular (b). Extracapsular (c) Extracapsular lens extraction with ant. chamber or post. chamber Intraocular lens implantation. (d) Phacoemulsification. 2. Discission operation.

প্রশ্ন: ম্যাচিউর ও ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর পার্থক্য লিখ। ২০১৮

ম্যাচিউর ও ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর পার্থক্য:

ম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট

ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট

লেন্সের কালার- মুক্তারমত সাদা

লেন্সের কালার- ধূসর সাদা।

দর্শনশক্তি- অস্পষ্ট মুভমেন্ট। হাত ২

দর্শনশক্তি- অস্পষ্ট আঙ্গুল গণনা করা।

আইরিস সেডো- অনুপস্থিত।

আইরিস সেডো- উপস্থিত।

ফান্ডাল গ্লো (প্রখর দীপ্তি)- ৪ অনুপস্থিত।

ফান্ডাল গ্লো- উপস্থিত।

প্রশ্ন: সংক্ষেপে লিখঃ মেচিউর ক্যাটারেক্ট এর ৫ টি সাইন। ১৭

মেচিউর ক্যাটারেক্ট এর ৫ টি সাইন:

(i) লেন্স পুরু হয়।

(ii) চোখের দৃষ্টিশক্তি এতই কমে যায় যে রোগী শুধু চোখের সামনে

হাত নড়াচড়া অনুভব করতে পারে।

(iii) আইরিস সেডো অনুপস্থিত।

(iv) অন্ধকার কক্ষে পরীক্ষা করলে কোন ফান্ডাসের ছায়া পাওয়া যায় না।

(v) লেন্সের রং মুক্তার মত দেখায়।

প্রশ্ন: ম্যাচিউর ও ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর চিকিৎসা লিখ। ১৮

ইমম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর চিকিৎসা:

(i) মাঝে মাঝে রিফ্রাকশন পরীক্ষা করে চশমা দ্বারা ঠিক করতে হবে।

(ii) সেন্ট্রাল অস্বচ্ছতা হলে কাল সানগ্লাস পড়তে হবে।

(iii) সেন্ট্রাল অস্বচ্ছতা হলে রাতে কম আলো ব্যবহার করতে হবে।

(iv) পেরিফেরাল অস্বচ্ছতা হলে রাতে অধিক আলো ব্যবহার করতে হবে

(v) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

ম্যাচিউর ক্যাটারাক্ট এর চিকিৎসা:

পরিপক্ক ধাপ: চোখের অস্বচ্ছ লেন্স অপারেশন করে বের করে ফেলতে হবে এবং নতুন কৃত্রিম লেন্স সংযোগ করতে হবে।

গ্লুকোমা (Glaucoma)

প্রশ্ন: গ্লুকোমার সংজ্ঞা দাও ও শ্রেণীবিভাগ কর। ১১ বা, গ্লুকোমা কি? গ্লুকোমার প্রকারভেদ লিখ। ১৬

গ্লুকোমার সংজ্ঞা:

অক্ষিগোলকের ভিতরে ইন্টার-অকুলার প্রেসার সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বৃদ্ধির কারণে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে চোখের যে ক্ষতি সাধিত হয়, তাকে গ্লুকোমা করে। [Glaucoma is a condition where the intruocular pressure of the eye ball increases transienly or permanently causing temporary or permanent damage to the eye. (Normal pressure: 16-23mm of Hg. by schiolz tonometer)]

গ্লুকোমার শ্রেণীবিভাগ : ক) জন্মগত-ইনফ্যান্টাইল গ্লুকোমা।

খ) অর্জিত-(১) প্রাইমারী গ্লুকোমা- ক্রনিক সিম্পল গ্লুকোমা, কনজেস্টিভ গ্লুকোমা (একিউ ও ক্রনিক)

(২) সেকেন্ডারী গ্লুকোমা (Secondary glaucoma):

প্রদাহজনিত সেকেন্ডারী গ্লুকোমা : যেমন- একিউট আইরিডোসিক্লাইটিস, কর্নিয়াল আলসার প্যানঅফথালমাইটিস ইত্যাদি ইন্টারঅকুলার হেমোরেজ।

প্রশ্ন: গ্লুকোমার কারণসমূহ লিখ। ১০, ১২

গ্লুকোমার কারণসমূহঃ

(i) কনজাংটিভাইটিস।

(ii) বংশগত কারণে।

(iii) অতিরিক্ত চোখের পরিশ্রমজনিত কাজ করা।

(iv) সুষম খাদ্যের অভাব।

(v) পুষ্টিহীনতা-পার্নিসাস এনিমিয়া হলে।

(vi) ক্রনিক উদরাময় বা আমাশয়ের চিকিৎসা করা না হলে।

(vii) উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগে ভোগা।

(viii) মানসিক চাপ ও রোগ।

(xi) অতিরিক্ত আলোতে কাজ করা।

(x) স্নায়ুবিক দুর্বলতা।

প্রশ্ন: কোমার প্রধান লক্ষণাবলি লিখ। ২০০৯, ১১

বা. কোমার ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ।

বা, গ্লুকোমার সংজ্ঞা দাও। ইহার লক্ষণাবলী লিখ। ২০১৫

গ্লুকোমার ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(i) মাথা ব্যথা ও চোখে ব্যথা দ্বারা রোগের আরম্ভ হয়।

(ii) সেন্ট্রাল ভিশন- সকল বস্তু ঝাপসা দেখে, দূরের বস্তু ভালরূপে দেখতে পায় না।

(iii) ইন্টারঅকুলার টেনশন বৃদ্ধি পায়।

(iv) প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়।

(v) আলোকাতংক ও চোখ থেকে পানি পড়ে।

(vi) চোখের পাতা ফুলে যায়।

(vii) বমিবমি ভাব ও বমি হতে পারে।

(viii) দুশ্চিন্তা উদ্বেগ বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে চোখের ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

(ix) কর্ণিয়ার অস্বচ্ছতা দেখা যেতে পারে।

(x) কনজাংটিভায় রক্তের চাপ বৃদ্ধি এবং আইরিস ও কর্ণিয়ার পোস্টেরিয়র সাইডে চাপ বৃদ্ধি।

প্রশ্ন: গ্লুকোমার জটিলতা লিখ। ১০, ১২

গ্লুকোমার জটিলতা:

(i) ভিজুয়াল ফিল্ড সংকীর্ণতা।

(ii) অপটিক নার্ভের ডিক্স নীচু হয়ে কাপ এর সৃষ্টি হয়।

(iii) চোখের পিউপিল বড় হয়ে যায়।

(iv) চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

(v) চোখে সম্পূর্ণ ছানী আসতে পারে।

প্রশ্ন: গ্লুকোমার ব্যবস্থাপনা লিখ। ১০, ১২

গ্লুকোমার চিকিৎসা/ ব্যবস্থাপনাঃ

(i) রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।

(ii) উপযুক্ত ভিটামিনযুক্ত, পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।

(iii) দৃশ্চিন্তা, উদ্বেগ পরিত্যাগ করে সুনিদ্রা ব্যবস্থা করতে হবে।

(iv) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ব্যবস্থা করতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: উপরিউক্ত ব্যবস্থাপনা আরোগ্য না হলে আইরিডেক্টমি (Iridectomy) করতে হবে।

 

 

ড্যাকরিওসিস্টাইটিস (Dacryocystitis)

প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস কাকে বলে?

ড্যাকরিওসিস্টাইটিসের সংজ্ঞা 8 ল্যাক্রিমাল স্যাক এবং ল্যাক্রিমোন্যাজাল ডাক্টের একিউট সাপুরেটিভ ইনফ্লামেশনকে, ড্যাকরিওসিস্টাইটিস বলা হয়।

প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর কারণ ও প্রকারভেদ লিখ

ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর প্রকারভেদ: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস কে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(ক) কনজেনিটাল ড্যাকরিওসিস্টাইটিস

(খ) প্রাইমারী ড্যাকরিওসিস্টাইটিস

(i) একিউট ড্যাকরিওসিস্টাইটিস ও (।।) ক্রনিক ড্যাকরিওসিস্টাইটিস

(গ) সেকেন্ডারী ড্যাকরিওসিস্টাইটিস

ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর কারণ:

(i) জীবাণু সংক্রমন

(ii) স্ট্রেপটোকক্কাস হেমোলাইটিকাসের ইনফেকশন

(iii) স্ট্যাফাইলোকক্কাস ও নিউমোকক্কাস সংক্রমন

(iv) নাকের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লীর প্রদাহ

(v) সিফিলিস রোগের কুফল।

প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর ক্লিনিক্যাল ফিচার লিখ। বা, ড্যাকরিওসিস্টাইটিসের লক্ষণাবলী লিখ।

ড্যাকরিওসিস্টাইটিসের ক্লিনিক্যাল ফিচার:

(1) ফ্রন্টাল রিজিয়নে প্রচন্ড ব্যথা ও স্যাক অঞ্চলে তাপ বোধ।

(ii) জ্বর ও মাথা ব্যথা থাকতে পারে।

(iii) পানি পড়া- সব সময় চোখ হতে পানি পড়ে। ইহা সাধারণতঃ এক চোখ বা উভয় চোখ থেকে পড়তে পারে।

(iv) বাতাস প্রবাহে ও শীতল বাতাসে চোখ অস্বস্তিকর পানিপূর্ণ হয়ে উঠে এবং দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে পড়ে।

(v) প্রদাহ পুঁজযুক্ত হলে অশ্রুথলি ও তার চারপার্শ্বের তন্ত্রসমূহ স্ফীত হয়।

(vi) চোখ দিয়ে সব সময় পানি ও সাদাবর্ণের স্রাব পড়ে।

(vii) চোখের কোঠা ফুলে উঠে ও স্থানীয়ভাবে লাল হয়।

প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর জটিলতা লিখ।

ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর জটিলতা:

(i) চোখের কোনায় ইনফেকশন।

(ii) কনজাংটিভাইটিস।

(iii) কর্নিয়াল আলসার।

প্রশ্ন: ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা লিখ।

ড্যাকরিওসিস্টাইটিস এর চিকিৎসা/ব্যবস্থাপনাঃ

কনজারভেটিভ চিকিৎসা:

(i) ল্যাকরিমোন্যাজাল ডাক্ট পরিষ্কার করতে হবে।

(ii) ল্যাক্রিমিনাল স্যাক-এর চারদিকে পানি বের করতে হবে।

(iii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হবে।

(iv) রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে হবে।

সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ

ড্যাকরি ওসিস্টোরাইনোসটমি (Dacriocystorhinostomy) করতে হবে অথবা ড্যাকরিওসিস্টেকটমি (Dacriocystectomy) অপারেশন করতে হবে।

হেমোরয়েড

প্রশ্ন:  হেমোরয়েড এর সংজ্ঞা, পজিশন, কারণ ও শ্রেণিবিভাগ লিখ।

হেমোরয়েড এর সংজ্ঞা: রেক্টামের নিম্নভাগ এবং মলদ্বারের চারপাশের ব্লাডভেসেলের অস্বাভাবিক স্ফীতি এবং প্রলম্বিত রূপ ও আকার ধারণ করাকে, হেমোরয়েডস বা অর্শ বলে।

হেমোরয়েড এর পজিশন: এক্সটার্নাল হেমোরয়েড, ইন্টারনাল হেমোরয়েড ও ইন্টেরোএক্সটারনাল হেমোরয়েড।

হেমোরয়েড এর শ্রেণিবিভাগ: হেমোরয়েডকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- (i) এক্সটার্নাল হেমোরয়েড (ii) ইন্টারনাল হেমোরয়েড ও

(iii) ইন্টেরোএক্সটারনাল হেমোরয়েড।

হেমোরয়েড এর কারণ: (i) হেরিডিটি বা বংশগত- জন্মগতভাবে মলদ্বারের ভেইন ওয়ালের দুর্বলতা থাকলে। রেক্টালে আর্টারী সাপ্লাই এর অস্বাভাবিকতা

থাকলে। (ii) পায়ে ভেরিকোস ভেইন থাকলে।

(iii) লোয়ার রেক্টামে ব্লাড প্রেসার বেশি থাকার কারণে এটি হতে পারে।

(iv) কোষ্ঠবদ্ধতা, মলত্যাগের সময় বার বার বেশি করে কোথ দেয়ার কারণে।

(v) ইউরিনারী ব্লাডারের গোলযোগ বা রেনাল স্টোন।

(vi) গর্ভাবস্থার সময় এটি দেখা দিতে পারে।

(vii) লিভারের বিভিন্ন রোগের কারেণ।

(viii) বিভিন্ন কারণে রেক্টামের নিম্নাংশে ভেইনসমূহের উপর চাপ পড়া

প্রশ্ন: হেমোরয়েড এর লক্ষণাবলী, ইনভেস্টিগেশন, চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা লিখ।

হেমোরয়েড এর লক্ষণাবলী: (i) মলত্যাগ করার অত্যন্ত কষ্টকর ও রেক্টামের মধ্যে জ্বালা দপদপানি ও চিড়িক মারা ব্যথা হয়।

(ii) মলের সাথে রক্ত পড়া এবং মলত্যাগের আগে ও শেষে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বের হয়। (iii) কোমরে ও তলপেটে ব্যথা করে।

(iv) অস্থিরতা ও অস্বস্থি বোধ করে।

(v) এনিমিয়া বর্তমান থাকে।

(vi) কোষ্ঠবদ্ধতা বর্তমান থাকে।

(vii) দুর্বলতা দেখা দেয়।

হেমোরয়েড বা অর্শ এর ইনভেস্টিগেশন:

(i) হাতে গ্লাভস পরাবস্থায় মলদ্বার দিয়ে রেক্টামের ভেতরে আঙ্গুল দ্বারা পরীক্ষা করলে এটি নির্ণয় করা যায়।

(ii) ব্লাড ফর সিবিসি করলে- রক্তের উপাদানের তারতম্য দেখা যাবে।

(iii) প্রক্টোস্কোপ বা রেক্টাল স্পেকুলাম যন্ত্র দ্বারা মলদ্বারের ভেতরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে ঘুরিয়ে রেক্টামের চারদিকে পরীক্ষা করলে হেমোরয়েডের বা অর্শের আকার, সংখ্যা ও অবস্থান ইত্যাদি নির্ণয় করা যায়।

হেমোরয়েড বা অর্শ এর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা: (ক) কনজারভেটিভ: (i) কোষ্ঠবদ্ধতা এ রোগের গুরুত্বপূর্ণ কারণ, সে জন্য প্রথমে কোষ্ঠবদ্ধতা দুর করার ব্যবস্থা করতে হবে।

(ii) ঠান্ডা বা গরম সেক দিলে উপকার হলে তা করতে হবে।

(iii) সিভিয়ার এনিমিয়া হলে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

(iv) প্রয়োজনে ইন্টারভেনাস স্যালাইন দিতে হবে।

পথ্যাপথ্যঃ

(i) সহজ প্রচ্য পুষ্টিকর তরল ও অর্ধ তরল খাদ্য দিতে হবে।

(ii) ইসুবগুলের ভূসি পানিতে ভিজিয়ে সামান্য গুড় দিয়ে প্রতিদিন সকালে ও রাতে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

(iii) তাজা ফলমূল খেতে হবে।

(iv) নরম ভাত, শাক-সব্জি, কচু, পেঁপে, লেবু, বেল, মাখন ও ঘোল ইত্যাদি।

নিষেধ : (i) অধিক তৈল, মশলা ও ঝালযুক্ত খাদ্য নিষেধ।

(ii) ধুমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করতে হবে।

(iii) লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

খ) সক্রিয় চিকিৎসা (Active treatment):

(1) ইনজেকশন চিকিৎসা (মিচেল)- প্রথম-ডিগ্রি অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েড যা রক্তপাত হয় এবং প্রথম দিকে দ্বিতীয়-ডিগ্রি হেমোরয়েডের ক্ষেত্রে।

(ii) ব্যান্ডিং চিকিৎসা (ব্যারন)- ইনজেকশন দ্বারা পরিচালনা দ্বিতীয় ডিগ্রির জন্য যা খুব বড় হেমোরয়েড এর সফল হওয়ার চিকিৎসা।

(iii) ক্রায়োসার্জারি (Cryosurgery)

(iv) ফটোক্যাগুলেশন (Photocoagulation)

গ) সার্জিক্যাল চিকিৎসা: হেমোরয়েডেক্টমি (Haemorrhoidectomy)।

প্রশ্ন: হেমোরয়েড ও এনালফিসার এর মধ্যে পার্থক্য কর।

হেমোরয়েড ও এনালফিসার এর মধ্যে পার্থক্য:

হেমোরয়েড

রেক্টামের নিম্নভাগ এবং মলদ্বারের ১ চারপাশের ব্লাডভেসেলের অস্বাভাবিক স্ফীতি এবং প্রলম্বিত রূপ ও আকার ধারণ করাকে, হেমোরয়েডস বা অর্শ বলে।

এটি তিন এক্সটার্নাল প্রকার। যথা- ২ হেমোরয়েড, ইন্টারনাল হেমোরয়েড ও ইন্টেরোএক্সটারনাল হেমোরয়েড।

এতে উজ্জ্বল লাল বর্ণের প্রচুর ৩ পরিমাণ রক্ত ক্ষরণ হয়।

এতে জ্বালা ও ব্যথা বেশি।

8

এনাল ফিসার

মলদ্বারের চারপাশের ভিতর ঝিল্লির আবরনী কোঁচকানো পর্দার মত কপাটিকা সৃষ্টি করে (এনাল ভাল্ব)। এবার ফিসার হচ্ছে নিম্ন এনাল ক্যানেলের ইনফেকশন ও আলসারেশন।

এনাল ফিসার দুই প্রক্রীর। যথা- একিউট এনাল ফিসার ও ক্রনিক এনাল ফিসার।

এতে লাল বর্ণের সামন্য পরিমাণ রক্ত ক্ষরণ হয়।

এতে জ্বালা ও ব্যথা কম।

এনাল ফিসার

প্রশ্ন: এনাল ফিসারের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, কারণসমূহ লিখ।

এনাল ফিসারের সংজ্ঞা: মলদ্বারের চারপাশের ভিতর দিল্লির আবরণী কোঁচকানো পর্দার মত কপাটিধা সৃষ্টি করে (এনাল ভান্ত)। এনাল ফিসার হচ্ছে নিম্ন এনাল ক্যানেলের ইনফেকশন ও আলসারেশন।।

এনাল ফিসারের প্রকারভেদ: এনাল ফিসার দুই প্রকার যথা- (১) একিউট এনাল ফিসার ও (ii) ক্রনিক এনাল ফিসার।

এনাল ফিসারের কারণ।

(1) বংশগত কারণে হতে পারে।

(ii) কোষ্ঠকাঠিন্য এ রোগের অন্যতম কারণ। শক্ত গটলে মলের চাপে এনাল ভাল্ব সহজেই ফেটে যায়।

(iii) বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমনের কারণে হতে পারে।

(iv) শক্ত খাদ্য কণা মলের সাথে মলদ্বার দিয়ে বের হওয়ার সময় এনাসের ওয়ালে চাপের ফলে আবরণী ঝিল্লি ফেটে রক্ত বের হতে পারে।

(v) যৌনবাহিত রোগের কারণে এটি হতে পারে।

প্রশ্ন:  এনাল ফিসারের লক্ষণাবলী, ইনভেস্টিগেশন ও চিকিৎসা লিখ।

এনাল ফিসারের লক্ষণাবলী: (i) মলদ্বারের যে কোন অংশ ফেটে রক্ত বের হবে। (ii) মলদ্বারে তীব্র বথ্যা হবে এবং ব্যথা মলত্যাগের আগে ও পরে হতে পারে। (iii) মলদ্বারে জ্বালা ও স্পর্শকাতরতা থাকবে। (iv) প্রত্যকবার মলত্যাগের সময় চাপ পড়ায় মলদ্বারের ছিড়ে যাওয়া ঝিল্লির দৈর্ঘ্য বড় হয়। (v) মলের সাথে রক্ত ও কখনও কখনও পুঁজ মিশ্রত থাকে।

এনাল ফিসারের ইনভেস্টিগেশনঃ

(i) রক্তের টি.সি, ডি.সি, এইচবি%, ইএসআর করতে হবে।

(ii) পার-রেক্টাল পরীক্ষা করতে হবে।

এনাল ফিসারের চিকিৎসা: কনজারভেটিভ চিকিৎসাঃ

(1) কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করার ব্যবস্থা করতে হবে।

(ii) ফাইবারযুক্ত খাদ্য খেতে হবে।

(iii) অধিক তৈল, মশলা ও ঝালযুক্ত খাদ্য নিষেধ।

(iv) লক্ষনানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। ইস্কিউলাস হিপ, মিলিফলিয়াম, গ্র্যাফাইটিস, নাইট্রিক এসিড, এলুমিনা, নাক্স-ভম, সাইলিসিয়া ইত্যাদি।

এনাল ফিসারের সার্জিক্যাল চিকিৎসা: কনজারভেটিভ চিকিৎসায় রোগী

আরোগ্য লাভ না করলে সার্জিক্যাল চিকিৎসা করতে হবে। অন্যথা রোগীর জটিলতা দেখা দিতে পারে। এতে ফিসারেকটমি করতে হবে।

প্রশ্ন:  সংক্ষেপে লিখ। কানের ভিতর ফরেন বডি

 

 

সংক্ষেপে লিখ।

১। ময়েস্ট গ্যাংগ্রীন

ময়েস্ট গ্যাংগ্রীন।

আর্টারী হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আর্টারী ও ভেইন উভয়ই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইনফেকশন এবং পিউট্রিফ্যাকশন সব সময়ই থাকবে। রক্তাভ বর্ণের। সারফেস ফুলা থাকে এবং এটির উপরের ফোস্কাগুলোতে রক্তাভ ফ্লুইড থাকে। অত্যন্ত দূর্গন্ধ থাকে। কোন সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে না। ভীষণ টক্সিক হয়ে থাকে।

২। ম্যাস্টাইটিস

৫। ম্যাস্টাইটিসঃ

জীবাণু বা অন্য যে কোন কারণে স্তনে প্রদাহ হলে, তাকে মাস্টাইটিস বলে। ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সৃষ্টি এটির কমন কারণ। অধিকাংশই স্টাফাইলোকক্কাস অরিয়াস দ্বারা হয়ে থাকে। আক্রান্ত স্তনে বা অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্তনের একটি সিগমেন্টে একিউট ইনফ্লামেশনের চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রথমে সেলুলাইটিস হয় কিন্তু পরে অ্যাবসেস তৈরি হয়।

৩। ডি-হাইড্রেশন

ডি-হাইড্রেশনঃ

ডি-হাইড্রেশন হচ্ছে দেহের এমন একটি অবস্থা যেখানে টিস্যুর মধ্যস্থিত ইন্টারসেলুলার ও এক্সট্রাসেলুলার বডি ফ্লুইড স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। অর্থাৎ দেহে তরল পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পেলে, তাকে ডি-হাইড্রেশন বলে। যেমন- অতিরিক্ত বমি ও উদরাময়া হলে দেহে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়।

৭। রেক্টাল প্রলাপস

৭। রেক্টাল প্রলাপসঃ

শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী, পেশী প্রভৃতিসহ সরলান্ত্রের সমগ্র অংশ নির্গত হলে, তাকে রেক্টাল প্রলাপস বলে। এনিমিয়া, অর্শ, রক্তামাশায়, উদরাময় কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রষ্টেট এনলার্জ প্রভৃতি রোগের কারণে ইহা হতে পারে। সাধারণতঃ মলত্যাগ কালে রেক্টাম ঝুলে পড়ে। আবার কখনও হাঁচি, কাশি, মূত্রত্যাগকালে ইহা বের হয়ে যায়। সদৃশ বিধান মতে চিকিৎসা করার পর আরোগ্য না হলে সর্জিক্যাল চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে।

কানের ভিতর ফরেন বডি: কানের মধ্যে যে সব বস্তু প্রবেশ করে, তাকে,

ফরেন বডি বলে। এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- জীবন্ত ও প্রাণহীন বস্তু। জীবন্ত হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র পোকা-মাকড় এবং ক্ষুদ্র পাথর কণা, শস্য কণা ও অন্যান্য বস্তু। প্রাণহীন বস্তু আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- ১। পানি লাগলে ফুলে উঠে এমন। ২। পানি লাগলে ফুলে উঠে না এমন।

সাধারণতঃ ছোট শিশুদের মধ্যে এটি হয়ে থাকে। কিন্তু জীবস্তু পোকা বয়স্কদের কানেও প্রবেশ করতে পারে। আবার দূর্ঘটনার কারণে যে কোন বয়সে কানে ভেতর ফরেন বডি প্রবেশ করতে পারে।

ফরেন বডি প্রকারভেদ:

(i) অ্যানিমেট (জীবন্ত): পোকামাকড়, মাছি, ম্যাগটস।

(ii) নির্জীব: ক) শাক-সবজি- মটর, শিম বীজ, ধান, বিভিন্ন শস্য কণা।

খ) অ-সবজি- পুঁতি, নুড়ি পাথর, পেন্সিল ডগা ইত্যাদি।

ক্লিনিক্যাল ফিচার (লক্ষণাবলী):

(i) কি ধরনের ফরেন বডি তা নির্ধারন করা যেতে পারে।

(ii) ব্যথা হতে পারে। (iii) ফরেন বডির সেনসেশন (সংবেদন)।

(iv) রক্তের দাগযুক্ত স্রাব (হতে পারে)। (v) বধিরতা (হতে পারে)।

কানের ভিতর ফরেন বডির চিকিৎসাঃ ফরেন বড়ি অপসারণ নির্ভর করেঃ

(ক) ফরেন বডির প্রকারভেদ, (খ) আঘাতের সাইজের উপর, (গ) ফরেন বডির আকারের উপর, (ঘ) রোগীর বয়সের উপর।

(i) অ্যানিমেট (জীবন্ত) ফরেন বডি: হার্টম্যান’স ফরসেপ বা সিরিজিং দ্বারা অপসারণ করতে হবে। জীবন্ত জিনিস অপসারণের আগে স্পিরিট, তেল, প্যারাফিন ইত্যাদি দিয়ে মেরে ফেলতে হবে।

(ii) ব্যথা বা রক্তক্ষরন হলে লক্ষণানুসারে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ দিতে হরে।

কানের ভিতর ফরেন বডির ব্যবস্থাপনা: আগে জানতে হবে কি ধরনের ফরেন

বডি কানে প্রবেশ করেছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা করতে হবে। ফরসেপ দ্বারা অত্যন্ত সাবধানতার সাথে কানের ফরেন বডি বের করার চেষ্টা করতে হবে।

 

Disclaimer:
This blog post is for study purposes only. It is not a substitute for professional medical advice. Please consult a healthcare professional for personalized guidance and treatment. Self-medication is strongly discouraged.

Scroll to Top