কেস টেকিং এন্ড রেপার্টরী (4th Year))

কেইস টেকিং এবং রোগী পরীক্ষা

প্রশ্ন: কেইস টেকিং বা রোগীলিপি বলতে কি বুঝ? ১০ বা, কেইস টেকিং কাকে বলে? ১১, ১২ বা, রোগীলিপি কি? ০৮, ০৯

রোগীলিপি বা কেইস টেকিং হল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যেখানে রোগীর রোগের লক্ষণ, শারীরিক অবস্থা, মানসিক ও আবেগজনিত অবস্থা, এবং ব্যক্তিগত ইতিহাস বিশদভাবে সংগ্রহ করা হয়। এটি রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত ওষুধ নির্বাচন করার মূল ভিত্তি।

কেইস টেকিং-এর মূল উদ্দেশ্য:

  1. রোগীর সম্পূর্ণ চিত্র বোঝা: রোগীর শারীরিক, মানসিক ও আবেগজনিত লক্ষণগুলোর বিস্তারিত ধারণা পাওয়া।
  2. বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ খুঁজে বের করা: রোগের সাধারণ লক্ষণ ছাড়াও রোগীর অদ্বিতীয় ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণগুলো সনাক্ত করা।
  3. বিকল্প ওষুধের তালিকা তৈরি করা: রোগীর লক্ষণের ভিত্তিতে সম্ভাব্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধ নির্বাচন করা।
  4. মায়াজম নির্ধারণ করা: রোগের মূল কারণ ও পেছনের মায়াজমিক (Psora, Sycosis, Syphilis) অবস্থা বোঝা।

কেইস টেকিং-এর ধাপসমূহ:

  1. রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ: নাম, বয়স, লিঙ্গ, পেশা, ও যোগাযোগের ঠিকানা।
  2. রোগের প্রধান অভিযোগ (Chief Complaint): রোগীর যে সমস্যার জন্য চিকিৎসা নিতে এসেছে সেটির বিশদ বর্ণনা।
  3. বর্তমান রোগের ইতিহাস (History of Present Illness): কখন, কীভাবে, এবং কোন পরিস্থিতিতে সমস্যা শুরু হয়েছিল।
  4. পূর্বের চিকিৎসার ইতিহাস (Past Medical History): রোগী আগে কোনো চিকিৎসা নিয়েছে কিনা বা অন্য কোনো রোগে ভুগেছে কিনা।
  5. পারিবারিক ইতিহাস (Family History): বংশগত রোগ বা অন্য কোনো সমস্যার প্রভাব বোঝা।
  6. জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস (Lifestyle and Diet): রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস, এবং ঘুমের ধরণ।
  7. মানসিক ও আবেগজনিত অবস্থা (Mental and Emotional State): রোগীর চিন্তা-ভাবনা, আবেগপ্রবণতা, ভীতি, এবং স্বভাব।
  8. বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ সংগ্রহ (Characteristic Symptoms): রোগীর বিশেষ ও ব্যক্তিগত লক্ষণ, যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে।
  9. পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ (Examination and Observation): রোগীর বাহ্যিক লক্ষণ ও শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা।
  10. সম্পূর্ণ কেইস বিশ্লেষণ: সমস্ত তথ্য একত্র করে একটি সুনির্দিষ্ট ওষুধ নির্ধারণের জন্য বিশ্লেষণ করা।

কেইস টেকিং-এর প্রয়োজনীয়তা:

  • এটি রোগীর সমস্যার গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
  • সঠিক ওষুধ নির্ধারণের জন্য রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করতে সাহায্য করে।
  • রোগীর দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য মূল কারণ নির্ণয়ে সহায়তা করে।

কেইস টেকিং-এর নীতিমালা:

  • রোগীর কথা ধৈর্য সহকারে শোনা।
  • কোনোরকম পূর্বধারণা ছাড়া নিরপেক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহ করা।
  • গোপনীয়তা বজায় রাখা।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় কেইস টেকিং-এর গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি চিকিৎসার ভিত্তি। যত ভালোভাবে কেইস টেকিং করা হবে, ততই সঠিক ওষুধ নির্বাচনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

প্রশ্ন: রোগীলিপি প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তা লিখ।৯ বা, রোগীলিপি তৈরী করতে হয় কেন? ০৯, ১৫, ১৬, ১৮ বা, কেইস টেকিং বা রোগীলিপি করা চিকিৎসকের নিকট কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর। ১২

রোগীলিপি প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তা:

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগীলিপি প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোগীর রোগের প্রকৃতি এবং ব্যক্তিগত লক্ষণগুলো গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে, যা সঠিক ওষুধ নির্ধারণের মূল চাবিকাঠি। নিচে রোগীলিপি প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তাগুলো উল্লেখ করা হলো:

১. সঠিক ওষুধ নির্বাচন

  • রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং আবেগগত লক্ষণগুলো একত্রিত করে ওষুধের উপযুক্ত ম্যাচ খুঁজে বের করা সহজ হয়।
  • হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগের উপসর্গের সাথে রোগীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের মিল খুঁজে বের করার মাধ্যমে একক ওষুধ নির্বাচন করা হয়।

২. রোগের কারণ এবং মায়াজম নির্ধারণ

  • রোগের গভীরে প্রবেশ করে রোগের মূল কারণ এবং রোগীর মায়াজমিক অবস্থা (Psora, Sycosis, Syphilis) চিহ্নিত করা যায়।
  • দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে রোগের পেছনে থাকা কারণগুলো বুঝতে সাহায্য করে।

৩. রোগের উন্নতির পর্যবেক্ষণ

  • রোগীর প্রথম সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে রোগের উন্নতির ধাপগুলো পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করার জন্য একটি ভালো রোগীলিপি অপরিহার্য।
  • পরবর্তী সাক্ষাতে রোগী কেমন উন্নতি করেছে তা পূর্বের তথ্যের সাথে তুলনা করা যায়।

৪. রোগীর সম্পূর্ণ চিত্র বোঝা

  • রোগীর শারীরিক উপসর্গ ছাড়াও মানসিক ও আবেগগত অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের ধরণ এবং জীবনযাত্রার তথ্য একত্রিত করার মাধ্যমে রোগীর হোলিস্টিক চিত্র তৈরি করা যায়।

৫. ব্যক্তিগত এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ চিহ্নিত করা

  • রোগীর এমন লক্ষণ যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে, তা চিহ্নিত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ:
    • এক ব্যক্তি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হলে সাধারণ উপসর্গের পাশাপাশি তার নির্দিষ্ট শীত-গরমের অনুভূতি বা অস্বস্তি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
  • এটি হোমিওপ্যাথির মূল নীতি অনুযায়ী Individualization of Medicine-কে সহজ করে।

৬. সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা

  • রোগের তীব্রতা এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদী বা স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা যায়।
  • রোগীর উন্নতি বা অবস্থার পরিবর্তন অনুযায়ী চিকিৎসায় পরিবর্তন আনতে রোগীলিপি সহায়ক।

৭. গবেষণা ও শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ

  • চিকিৎসকদের রোগ এবং চিকিৎসার ধরন বিশ্লেষণের জন্য রোগীলিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ভবিষ্যতে রোগী বা অনুরূপ কোনো কেস পরিচালনায় এটি একটি রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে।

৮. রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়ানো

  • রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস সংগ্রহ করার মাধ্যমে রোগী অনুভব করে যে চিকিৎসক তার সমস্যায় গভীর মনোযোগ দিচ্ছেন। এটি রোগীর মানসিক স্বস্তি এবং চিকিৎসার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করে।

৯. গোপনীয়তার নিশ্চয়তা

  • রোগীলিপিতে রোগীর ব্যক্তিগত এবং চিকিৎসাগত তথ্য সংরক্ষিত থাকে, যা রোগীর গোপনীয়তা রক্ষায় সহায়তা করে।

১০. জটিল রোগের ক্ষেত্রে সহায়ক

  • দীর্ঘমেয়াদী এবং জটিল রোগ (যেমন: ক্যান্সার, সোরিয়াসিস, বা মানসিক রোগ) চিকিৎসায় রোগীলিপি প্রস্তুত করা রোগের প্রকৃতি এবং গতিপ্রকৃতি বুঝতে সহায়তা করে।

রোগীলিপি প্রস্তুত করা সঠিক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি রোগী এবং রোগের প্রকৃতি বোঝা, সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা, এবং চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য অপরিহার্য হাতিয়ার। একজন দক্ষ হোমিওপ্যাথ রোগীলিপি প্রস্তুত করেই চিকিৎসা শুরু করেন।

প্রশ্ন: রোগীলিপি প্রস্তুতকালে চিকিৎসকের কি কি সর্তকতা অবলম্বন করা উচিৎ? ১০, ২০

রোগীলিপি প্রস্তুতকালে চিকিৎসকের সতর্কতা:

রোগীলিপি প্রস্তুত করা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে চিকিৎসকের কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সঠিক রোগীলিপি প্রস্তুত করতে হলে নিচের বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিতে হবে:

১. রোগীর কথা মনোযোগ সহকারে শোনা: রোগীর অভিযোগ ও লক্ষণ সম্পর্কে ধৈর্য সহকারে শুনতে হবে। রোগীর কথা মাঝপথে থামানো বা তাড়াহুড়ো করা যাবে না। রোগী যা বলতে চায় তা স্পষ্টভাবে বুঝে নিতে হবে।

২. প্রশ্ন করার পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট রাখা: প্রশ্নগুলো সরাসরি এবং সহজ ভাষায় করতে হবে। দ্ব্যর্থক বা বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। খোলামেলা এবং রোগী-বান্ধব প্রশ্ন করা জরুরি।

৩. পূর্বধারণা এড়িয়ে চলা: রোগীর সমস্যার বিষয়ে কোনো পূর্বধারণা বা অনুমান করা যাবে না। সমস্ত তথ্য নিরপেক্ষভাবে গ্রহণ করতে হবে।

৪. রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা: রোগীর ব্যক্তিগত এবং চিকিৎসাগত তথ্য সর্বদা গোপন রাখতে হবে। রোগী যাতে আরাম বোধ করে এবং তার ব্যক্তিগত বিষয় নির্দ্বিধায় বলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. রোগীর আবেগ ও মানসিক অবস্থার প্রতি সংবেদনশীল থাকা রোগীর মানসিক অবস্থা বুঝে তার সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করতে হবে। কোনো কঠিন বা অসম্মানজনক মন্তব্য করা যাবে না।

৬. লক্ষণগুলো স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করা রোগীর প্রতিটি শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় লক্ষণ বিস্তারিতভাবে লিখে রাখতে হবে। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এবং সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে পার্থক্য বুঝে তা আলাদাভাবে নোট করতে হবে।

৭. অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এড়িয়ে চলা রোগীর সমস্যার সাথে সম্পর্কহীন কোনো ব্যক্তিগত বা সামাজিক প্রশ্ন করা উচিত নয়। রোগী যাতে অস্বস্তি বোধ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৮. সময়ানুবর্তিতা বজায় রাখা রোগীর যথেষ্ট সময় নিয়ে কথা শোনা উচিত, তবে অপ্রয়োজনীয় সময় অপচয় করা উচিত নয়। প্রতিটি তথ্য যথাসময়ে এবং সুনির্দিষ্টভাবে সংগ্রহ করতে হবে।

৯. রোগীর অঙ্গভঙ্গি ও আচরণ পর্যবেক্ষণ রোগীর কথার পাশাপাশি তার অঙ্গভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি, এবং শারীরিক ভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। এটি রোগীর মানসিক অবস্থা এবং শারীরিক সমস্যার গভীরতা বুঝতে সাহায্য করে।

১০. পেশাদারিত্ব বজায় রাখা রোগীর প্রতি সর্বদা পেশাদার এবং শালীন আচরণ বজায় রাখতে হবে। চিকিৎসা চলাকালীন রোগীর সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করা যাবে না।

১১. রোগীর ভাষা ও সংস্কৃতি বোঝা রোগীর ভাষা, আঞ্চলিক সংস্কৃতি, এবং বিশ্বাস সম্পর্কে সংবেদনশীল থাকতে হবে। রোগীর ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করা হলে রোগী বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।

১২. প্রয়োজনীয় তথ্যের বাইরে কোনো তথ্য চাপিয়ে না দেওয়া রোগীকে ভয় দেখানো বা অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে উদ্বিগ্ন করা ঠিক নয়। রোগী যা বলতে চায়, তা সঠিকভাবে গ্রহণ করতে হবে।

১৩. পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ সঠিকভাবে করা বাহ্যিক লক্ষণ ও রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে সহায়ক পরীক্ষা করার সময় রোগীকে আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

রোগীলিপি প্রস্তুতকালে চিকিৎসকের দায়িত্ব হলো রোগীর সমস্যা এবং লক্ষণ সঠিকভাবে বুঝে নেওয়া এবং তা সঠিক পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধ করা। এই সতর্কতাগুলো রোগীর আস্থা অর্জন করতে এবং সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন: আদর্শ রোগীলিপি কিভাবে প্রস্তুত করবে?  বা, সঠিক রোগীলিপি প্রস্তুত পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচনা কর। বা পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি প্রণয়ণের পদ্ধতিসমূহ কি কি? বা, একআদর্শ রোগীলিপিতে কি কি বিষয় থাকা প্রয়োজন?০৮, ১৯

আদর্শ রোগীলিপি প্রস্তুত করার পদ্ধতি:

আদর্শ রোগীলিপি প্রস্তুত করতে চিকিৎসককে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি এবং পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করতে হয়। এটি রোগীর শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় লক্ষণগুলোর একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরে, যা সঠিক ওষুধ নির্বাচন এবং কার্যকর চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদর্শ রোগীলিপি প্রস্তুত করার ধাপগুলো নিম্নরূপ:

১. রোগীর সম্পূর্ণ পরিচিতি লিপিবদ্ধ করা
রোগীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, পেশা, ঠিকানা এবং যোগাযোগের মাধ্যমসহ প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এটি চিকিৎসার ধারাবাহিকতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।

২. বর্তমান সমস্যা ও লক্ষণসমূহ লিপিবদ্ধ করা
রোগী কী ধরনের সমস্যায় ভুগছে এবং এর প্রকৃতি কেমন, তা বিস্তারিতভাবে লিখতে হবে। রোগের তীব্রতা, স্থায়িত্ব এবং উদ্দীপক কারণ উল্লেখ করতে হবে।

৩. অতীত চিকিৎসার ইতিহাস সংগ্রহ
রোগীর পূর্বে নেওয়া চিকিৎসা, ব্যবহৃত ওষুধ এবং পূর্ববর্তী রোগ বা অস্ত্রোপচারের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এটি রোগের মূল কারণ এবং বর্তমান অবস্থার উপর প্রভাব বুঝতে সাহায্য করে।

৪. পারিবারিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা
রোগীর পরিবারে কোনো জিনগত রোগ (যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, সোরিয়াসিস) আছে কিনা, তা লিখে রাখতে হবে। এটি রোগের মায়াজমিক বিশ্লেষণে সহায়ক।

৫. মানসিক ও আবেগীয় লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা
রোগীর মানসিক অবস্থা, স্বভাব, আচার-আচরণ, ভয়, চিন্তা ও আবেগের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এটি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৬. রোগীর অভ্যাস ও জীবনধারা বিশ্লেষণ
রোগীর খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের ধরণ, পরিশ্রমের ধরণ, নেশা বা কোনো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। রোগের কারণ নির্ণয়ে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

৭. শরীরের বিশেষ লক্ষণ লিপিবদ্ধ করা
শরীরের বিশেষ স্থান বা অঙ্গের লক্ষণ, যেমন: ত্বকের অবস্থা, শারীরিক গঠন, তাপমাত্রা সহ্যশক্তি, ক্ষুধা বা তৃষ্ণার তারতম্য উল্লেখ করতে হবে।

৮. বাহ্যিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা
রোগীর অঙ্গভঙ্গি, মুখমণ্ডলের অভিব্যক্তি, চোখ, ত্বক, নখ, এবং চলাফেরার ধরন পর্যবেক্ষণ করে সেগুলো লিপিবদ্ধ করতে হবে।

৯. সুস্পষ্ট ভাষায় রোগীলিপি প্রস্তুত করা
লক্ষণগুলো এমনভাবে লিখতে হবে যেন তা সহজে বোঝা যায় এবং ভবিষ্যতে পুনর্বিবেচনা করা যায়। অপ্রাসঙ্গিক তথ্য এড়িয়ে চলতে হবে।

১০. রোগীর কথা সম্পূর্ণ শুনে নেওয়া
রোগী যা বলতে চান তা ধৈর্য সহকারে শুনতে হবে। চিকিৎসককে রোগীর প্রতি আন্তরিক এবং সহানুভূতিশীল হতে হবে।

১১. বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ লিপিবদ্ধ করা
রোগীর সাধারণ লক্ষণের পাশাপাশি তার ব্যতিক্রমী লক্ষণগুলো আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে। এ ধরনের লক্ষণ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ওষুধ নির্বাচনকে সহজ করে।

১২. চিকিৎসা-পরবর্তী পর্যবেক্ষণ নোট রাখা
রোগীর প্রথম চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া কেমন হয়েছে এবং এর উন্নতির পর্যায় কী, তা নিয়মিতভাবে লিপিবদ্ধ করা উচিত।

সঠিক এবং আদর্শ রোগীলিপি চিকিৎসার মান বৃদ্ধি করে। এটি চিকিৎসকের জন্য রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা কার্যকর করার একটি অপরিহার্য হাতিয়ার।

প্রশ্ন: রোগীলিপি কি? রোগীলিপি ছাড়া হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করা যায় না কেন? ১২

রোগীলিপি:

রোগীলিপি হলো রোগীর শারীরিক, মানসিক, আবেগীয় এবং জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিপিবদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া। এটি রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি রোগের প্রকৃতি, কারণ, লক্ষণ এবং রোগীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রোগীলিপি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় একটি অপরিহার্য অংশ, যা সঠিক ওষুধ নির্বাচন এবং চিকিৎসার সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করে।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীলিপি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি রোগী সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা দেয়। রোগীলিপি ছাড়া হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করা কঠিন বা প্রায় অসম্ভব। এর কারণগুলো নিম্নরূপ:

১. সম্পূর্ণ লক্ষণ বিশ্লেষণ সম্ভব নয়
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় শুধুমাত্র রোগের নাম নয়, রোগীর ব্যক্তিগত এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণগুলো সঠিকভাবে জানা দরকার। রোগীলিপি ছাড়া এই তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।

২. সঠিক ওষুধ নির্বাচন ব্যাহত হয়
হোমিওপ্যাথিতে “সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টুর” নীতির ভিত্তিতে চিকিৎসা করা হয়। সঠিক ওষুধ নির্বাচনের জন্য রোগীর শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণগুলোর বিস্তারিত জ্ঞান প্রয়োজন, যা রোগীলিপি ছাড়া সম্ভব নয়।

৩. রোগের মূল কারণ নির্ণয় করা যায় না
রোগীর অতীত চিকিৎসা, পারিবারিক ইতিহাস এবং মানসিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে রোগের মূল কারণ নির্ণয় করতে হয়। রোগীলিপি ছাড়া এই তথ্য পাওয়া যায় না।

৪. মায়াজম বিশ্লেষণ অসম্ভব
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগের মায়াজম (সোর, সাইকোসিস, সিফিলিস) নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস ছাড়া মায়াজম নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

৫. রোগীর প্রতি সংবেদনশীল আচরণ প্রতিষ্ঠা হয় না
রোগীলিপি প্রস্তুতের সময় রোগীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়। এটি রোগীর আস্থা অর্জন এবং চিকিৎসকের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। রোগীলিপি ছাড়া এই সংবেদনশীল সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।

৬. জটিল রোগ নির্ণয় কঠিন হয়ে পড়ে
কিছু জটিল বা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণের মধ্যে গভীর সম্পর্ক থাকে। রোগীলিপি ছাড়া এই সম্পর্ক নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।

৭. চিকিৎসার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায় না
রোগীর উন্নতির পর্যায় এবং চিকিৎসার প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য রোগীলিপি অপরিহার্য। এটি ছাড়া চিকিৎসার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন।

রোগীলিপি হলো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ভিত্তি। এটি চিকিৎসকের জন্য রোগ নির্ণয়, সঠিক ওষুধ নির্বাচন, এবং রোগীর উন্নতির পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে অপরিহার্য। রোগীলিপি ছাড়া হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: চিকিৎসক রোগীকে কেন সংকেতপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন না? ১৩, ১৪, ১৮ বা, চিকিৎসক রোগীকে কিভাবে প্রশ্ন করবেন তা উদাহরণসহ লিখ। ১২, ১৭ বা, রোগীলিপি প্রস্তুতকালে রোগীকে প্রশ্ন করার পদ্ধতি কি? ১৯ বা, রোগীলিপি প্রস্তুতকালে রোগীকে প্রশ্ন করার সঠিক পদ্ধতি কি? বা, চিকিৎসক কিভাবে রোগীকে প্রশ্ন করবেন?- ব্যাখ্যা কর। ১০

সংকেতপূর্ণ প্রশ্ন হলো এমন প্রশ্ন, যা রোগীকে কোনো নির্দিষ্ট উত্তর দিতে প্রভাবিত করে বা নির্দেশ করে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগী সম্পর্কে সঠিক এবং নিরপেক্ষ তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংকেতপূর্ণ প্রশ্ন করার ফলে রোগী সঠিকভাবে তার সমস্যা প্রকাশ করতে পারে না, যা সঠিক চিকিৎসার জন্য ক্ষতিকর। এর কারণগুলো নিম্নরূপ:

১. তথ্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় সংকেতপূর্ণ প্রশ্ন রোগীর প্রকৃত অভিজ্ঞতার পরিবর্তে চিকিৎসকের ধারণা প্রতিফলিত করে। এতে তথ্য বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং রোগের সঠিক চিত্র বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।

২. রোগীর প্রকৃত লক্ষণ লুকায়িত থাকে রোগীর মনোজগৎ, শারীরিক অনুভূতি এবং সমস্যা প্রকৃতভাবে বুঝতে হলে তাকে তার নিজের ভাষায় সমস্যা প্রকাশ করতে দিতে হবে। সংকেতপূর্ণ প্রশ্নে রোগী নিরপেক্ষভাবে নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে না।

৩. সঠিক ওষুধ নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় সঠিক ওষুধ নির্বাচন রোগীর ব্যক্তিগত এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণের উপর নির্ভর করে। সংকেতপূর্ণ প্রশ্নে পাওয়া উত্তর নির্ভরযোগ্য না হওয়ায় সঠিক ওষুধ নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যায়।

৪. রোগীর আস্থা নষ্ট হয় সংকেতপূর্ণ প্রশ্ন করলে রোগী অনুভব করতে পারে যে তার অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এতে রোগীর আস্থা কমে যায় এবং চিকিৎসকের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে।

৫. প্রাকৃতিক লক্ষণ বিকৃত হয় প্রশ্নের মাধ্যমে রোগীকে প্রভাবিত করলে তার প্রকৃত অনুভূতি প্রকাশ পায় না। এর ফলে প্রাকৃতিক লক্ষণগুলোর বিকৃতি ঘটে, যা রোগীর অবস্থা বিশ্লেষণে বাধা সৃষ্টি করে।

৬. রোগীর মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় সংকেতপূর্ণ প্রশ্ন রোগীকে বিভ্রান্ত করতে পারে এবং সে কীভাবে উত্তর দেবে তা নিয়ে মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। এতে রোগীর স্বতঃস্ফূর্ততা নষ্ট হয়।

উদাহরণ

  • সংকেতপূর্ণ প্রশ্ন: “আপনার কি মাথা ব্যথা খালি পেটে বেশি হয়?”
    • এটি রোগীকে প্রভাবিত করে নির্দিষ্ট উত্তর দিতে।
  • নিরপেক্ষ প্রশ্ন: “আপনার মাথা ব্যথা কখন বেশি হয়?”
    • এটি রোগীকে নিজের অভিজ্ঞতা সঠিকভাবে জানাতে সাহায্য করে।

সঠিক পদ্ধতি

চিকিৎসকের উচিত খোলামেলা এবং নিরপেক্ষ প্রশ্ন করা, যেন রোগী তার সমস্যা নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রকাশ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

  • “আপনার কী ধরনের কষ্ট হচ্ছে?”
  • “আপনার সমস্যা কখন বাড়ে বা কমে?”

 

রোগীকে সংকেতপূর্ণ প্রশ্ন না করে তার নিজস্ব অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে সুযোগ দেওয়া হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। এটি সঠিক রোগীলিপি তৈরিতে এবং কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।

৭। রোগীলিপি প্রস্তুতকালে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে? ১১, ১৪ বা, রোগীলিপি প্রস্তুতের অসুবিধাগুলো কি কি?

রোগীলিপি প্রস্তুতকালে জটিলতা:

ডাঃ হ্যানিম্যানের মতে, আদর্শ আরোগ্যের জন্য রোগীলিপি প্রস্তুত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁর মতে রোগ চিত্র যদি সুষ্ঠ ও সঠিকভাবে নেয়া যায়, তাহলে রোগীর আরোগ্য অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়ে যায় রোগীলিপি প্রস্তুত করা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং কার্যকর চিকিৎসার পথে বাধা সৃষ্টি করে। রোগীলিপি প্রস্তুতকালে যে জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে সেগুলো নিম্নরূপ:

১. রোগীর সমস্যা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারা। অনেক সময় রোগীরা তাদের লক্ষণ বা সমস্যা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারেন না। রোগী যদি কম কথা বলে বা লজ্জা পায়, তবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়তে পারে। শিশু বা মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি জটিল হয়ে ওঠে।

২. তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা। কিছু রোগী অজ্ঞতা, ভয়, বা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে তথ্যকে অতিরঞ্জিত করে বা ভুলভাবে উপস্থাপন করে। যেমন, ছোট সমস্যাকে বড় করে বলা বা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ এড়িয়ে যাওয়া।

৩. রোগীর অসহযোগিতা। অনেক সময় রোগীরা চিকিৎসকের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে আগ্রহী হয় না। কিছু রোগী তাদের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করতে দ্বিধা করে বা দীর্ঘ সময় ধরে প্রশ্নের উত্তর দিতে বিরক্ত বোধ করে।

৪. সংকেতপূর্ণ প্রশ্নের প্রভাব। যদি চিকিৎসক সংকেতপূর্ণ প্রশ্ন করেন, তবে রোগীর আসল অনুভূতির পরিবর্তে প্রভাবিত উত্তর পাওয়া যায়। এতে লক্ষণগুলোর প্রকৃতি বিকৃত হয়।

৫. ভাষাগত বা সাংস্কৃতিক বাধা। চিকিৎসক এবং রোগীর ভাষাগত পার্থক্য থাকলে সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়। রোগীর সাংস্কৃতিক বিশ্বাস বা আচার-আচরণও রোগীলিপি তৈরিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

৬. সময় স্বল্পতা। জটিল রোগীর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় না পেলে রোগীলিপি অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। জরুরি অবস্থায় বিশদ রোগীলিপি প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

৭. গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে রোগীর আশঙ্কা। কিছু রোগী তাদের ব্যক্তিগত বা গোপন সমস্যাগুলো শেয়ার করতে দ্বিধা করে। তারা ভাবতে পারে যে তাদের তথ্য গোপন থাকবে না।

৮. বহু উপসর্গযুক্ত রোগীর ক্ষেত্রে জটিলতা। যেসব রোগীর একাধিক সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে প্রধান এবং গৌণ লক্ষণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

৯. মায়াজম বিশ্লেষণে জটিলতা। রোগীর পূর্ব ইতিহাস এবং পারিবারিক ইতিহাস না পেলে রোগের মায়াজম সঠিকভাবে নির্ধারণ করা কঠিন।

১০. রোগীর মানসিক অবস্থার প্রভাব। রোগী যদি মানসিক চাপ, বিষণ্নতা বা ভয় অনুভব করে, তবে সে সঠিকভাবে তথ্য দিতে পারে না।

১১. শিশু বা বৃদ্ধ রোগীর ক্ষেত্রে সমস্যা। শিশু রোগীরা তাদের সমস্যা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে না। বৃদ্ধ রোগীরা কখনো কখনো ভুল তথ্য দেয় বা অতীতের ঘটনা ভুলে যায়।

১২. বিশেষ লক্ষণ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর বিশেষ বা ব্যতিক্রমী লক্ষণগুলি খুঁজে বের করা জটিল হয়ে পড়ে।

13. অচেতন ও শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে সঠিক রোগ লক্ষণাবলী পাওয়া যায় না বা মা ও পরিচর্যাকারী সঠিক তথ্য দিতে পারে না। ফলে আদর্শ আরোগ্য জন্য উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচনে কষ্ট হয়।

14. রোগ লক্ষণাবলী অস্পষ্টরূপে প্রকাশ এবং  লক্ষণাবলী স্বল্পতার ফলে জটিলতা দেখা দেয়।

15. রোগীলিপি প্রস্তুতকালে রোগী ও তাঁর সেবাকারীদের সঠিক তথ্য দানে অভাব ও মিশ্র মায়াজমের কারণে রোগ লক্ষণ চাপা পড়ে। ফলে প্রকৃত রোগীলিপি প্রস্তুতে অসুবিধা বা জটিলতা দেখা দেয়।

এই জটিলতা সমাধানে চিকিৎসকের উচিত রোগীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, নিরপেক্ষ প্রশ্ন করা, রোগীকে আরামদায়ক পরিবেশ দেওয়া এবং তাকে আশ্বস্ত করা যে তার ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখা হবে। সতর্ক পর্যবেক্ষণ এবং ধৈর্যের মাধ্যমে রোগীলিপি প্রস্তুত করা সম্ভব।

প্রশ্ন: রোগীলিপি প্রস্তুতকালে চিকিৎসককে কে কে এবং কিভাবে সাহায্য করতে পারে? ২০১১, ১৪ বা কারা এবং কিভাবে রোগীলপি প্রস্তুতকালে চিকিৎসককে সাহায্য করতে পারে?

রোগীলিপি প্রস্তুতকালে চিকিৎসককে বিভিন্ন পক্ষ সাহায্য করতে পারে, যাতে সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং রোগীর যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।

  • রোগী স্বয়ং নিজে: রোগী নিজে চিকিৎসকের নিকট তার কষ্টকর লক্ষণাবলী সম্বন্ধে যতদূর সম্ভব বিস্তারিত বর্ণনা করবেন।
  • রোগীর পরিবার: অনেক সময় মানসিক রোগগ্রস্ত রোগীর মুখ হতে তার অসুস্থ্যতার সম্পর্কে তেমন জানা যায় না। আবার শিশু ও অচেতন রোগীরা নিজেদের কষ্ট কথা বলতে পারে না। উক্ত ক্ষেত্রে পিতা-মাতা ও সেবাকারীদের সহযোগীতা নিয়ে রোগীলিপি প্রস্তুত করতে হয়। 

  • আত্মীয় স্বজন: রোগীর অতীত ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস এবং শারীরিক ও মানসিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে সাহায্য করে।  তারপর রোগীর আত্মীয়- স্বজন, অসুস্থ্যতার সময় যে সকল লক্ষণ ও আচার আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করছেন, তা চিকিৎসকের নিকট বর্ণনা করবেন।

  • বন্ধু-বান্ধব: বন্ধু-বান্ধব অসুস্থ্যতার সময় যে সকল লক্ষণ ও আচার আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করছেন, তা চিকিৎসকের নিকট বর্ণনা করবেন। অর্জিত রোগের ক্ষেত্রে লজ্জা ও ভয়ের কারণে রোগী সহজে বলতে চায় না। সেক্ষেত্রে দৃঢ়তার সাথে গোপনে রোগীর বন্ধু-বান্ধব থেকে জেনে নিতে হবে।
  • রোগীর সেবাকারীগণ বা নার্স: রোগীর শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ নোট করে রাখতে সাহায্য করে।

  • মনোচিকিৎসক বা সাইকোলজিস্ট: রোগীর মানসিক অবস্থা এবং মনোভাব বিশ্লেষণে সহায়তা করে।

  • বিশেষজ্ঞ বা কনসালটেন্ট চিকিৎসক: জটিল রোগ নির্ণয়, মায়াজম বিশ্লেষণ এবং বিশেষ লক্ষণ মূল্যায়নে সাহায্য করে।

  • প্রযুক্তিগত সহায়তা (কম্পিউটারাইজড সিস্টেম বা সফটওয়্যার): রোগীর তথ্য সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে আরও সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর করতে সহায়তা করে।

  • চিকিৎসক নিজে: রোগীর পুরো ইতিহাস শোনার সময় ধৈর্য, মনোযোগ এবং পারদর্শিতা প্রদর্শন করে, যাতে রোগী সঠিকভাবে তার সমস্যা ব্যাখ্যা করতে পারে।

অতএব উপরিউক্ত ব্যক্তিবর্গ চিকিৎসককে রোগীলিপি প্রস্তুতে সাহায্য করতে পারেন।

 প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সবচেয়ে কঠিন কাজ রোগীলিপি প্রস্তুত করা ব্যাখ্যা কর? ২০০৯, ১৩, ১৪, ১৫ বা ঔষধ নির্বাচনে চিকিৎসকের সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটি এবং কেন? বা, রোগীলিপি চিকিৎসা কার্যের একটি প্রধান অংশ- আলোচনা কর। বা, চিকিৎসা কর্মে চিকিৎসকের সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটি? ১৮

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সবচেয়ে কঠিন কাজ রোগীলিপি প্রস্তুত করা, কারণ এটি রোগীর পুরো চিকিৎসা প্রক্রিয়ার ভিত্তি স্থাপন করে। রোগীলিপি হলো রোগী সম্পর্কে পুরোপুরি এবং সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়া, যা পরবর্তী সময়ে উপযুক্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নির্বাচন করতে সহায়তা করে।

হোমিওপ্যাথিক সর্বজনীননীতি “সদৃশ সদৃশকে প্রতিহত করে”। হোমিওপ্যাথিতে “রোগ নয়, রোগীকে চিকিৎসা কর, রোগীকে আংশিক বা আঙ্গিকভাবে, সামগ্রীকভাবে চিকিৎসা কর” ইহার ডাঃ হ্যানিম্যানের আদর্শনীতি।

উপরিউক্ত নীতিসমূহ বাস্তবায়িত করতে হলে একজন আদর্শ চিকিৎসককে একটি আর্দশ রোগীলিপি তৈরী করতে হবে।

রোগীলিপি প্রস্তুত করার জন্য চিকিৎসককে রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং অনুভূতিগত অবস্থার প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে হয়। এর মধ্যে কয়েকটি কারণ রয়েছে, যা এই কাজটিকে কঠিন করে তোলে:

  1. রোগীর মনোভাব ও অনুভূতি সঠিকভাবে বোঝা: রোগীর মানসিক অবস্থা, মনোভাব, এবং তাদের প্রতিক্রিয়া সঠিকভাবে বুঝতে হবে, যা অনেক সময় সরাসরি প্রকাশ পায় না। অনেক রোগী তাদের সমস্যাগুলো খুলে বলার ক্ষেত্রে সংকোচ অনুভব করে বা ভুল তথ্য দেয়।

  2. বিভিন্ন লক্ষণের মেলবন্ধন: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগীর শারীরিক লক্ষণ, মানসিক অবস্থা, এবং অস্বস্তি বা কষ্টের অনুভূতি একত্রে বিশ্লেষণ করতে হয়। এগুলোর মধ্যে সম্পর্ক এবং পার্থক্য বোঝা কঠিন হতে পারে। বিশেষত যখন রোগী একাধিক উপসর্গ বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা নিয়ে আসে, তখন সঠিক লক্ষণ নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  3. ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও জীবনধারা মূল্যায়ন: রোগীর শারীরিক অবস্থা ছাড়াও তার মানসিকতা, জীবনধারা, অভ্যাস, পরিবেশ এবং পারিবারিক ইতিহাস সবকিছুই চিকিৎসার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো বুঝতে চিকিৎসককে খোলামেলা আলোচনা এবং রোগীর সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়।

  4. রোগীর ভাষা ও শারীরিক লক্ষণ বিশ্লেষণ: রোগী তাদের অনুভূতি বা ব্যথার প্রকৃতি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না বা তাদের শরীরী ভাষা সঠিকভাবে পাঠ করা কঠিন হতে পারে। চিকিৎসককে এমন উপসর্গের প্রতি মনোযোগী হতে হয়, যা রোগী সাধারণত উল্লেখ করে না, কিন্তু এগুলো চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

  5. সঠিক মায়াজম নির্বাচন: রোগীর মায়াজম বা রোগের মূল কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি মায়াজম সঠিকভাবে নির্ধারণ না করা হয়, তবে চিকিৎসার ফলাফল সঠিক হতে পারে না।

  6. সময়ের অভাব: অনেক রোগী তাদের লক্ষণ এবং ইতিহাস শেয়ার করতে অনেক সময় নেন, এবং চিকিৎসকের কাছে পর্যাপ্ত সময় না থাকলে সঠিক রোগীলিপি প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

এই সকল কারণে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের জন্য রোগীলিপি প্রস্তুত করা একটি সৃজনশীল এবং সতর্ক প্রক্রিয়া। সঠিক রোগীলিপি তৈরি করার জন্য ধৈর্য, মনোযোগ, এবং বিশেষজ্ঞ দক্ষতা প্রয়োজন।

 প্রশ্নঃ “রোগীলিপি না করে সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন অসম্ভব”- যুক্তি দেখাও। ২০১১, ১৪ বা, “রোগীলিপি না করে সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন সম্ভব নয়”- যুক্তি দাও। ২০১৩ বা, রোগীলিপি তৈরি ছাড়া ঔষধ নির্বাচন অসম্ভব- ব্যাখ্যা কর। ২০১৮

রোগীলিপি না করে সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন অসম্ভব:

“রোগীলিপি না করে সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন অসম্ভব” – এই বক্তব্যটি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মূল ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায়, রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং অনুভূতিগত উপসর্গগুলোর পূর্ণ বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য, যা শুধুমাত্র সঠিকভাবে রোগীলিপি প্রস্তুত করেই করা সম্ভব। এখানে কিছু যুক্তি দেওয়া হল, কেন রোগীলিপি ছাড়া সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন করা অসম্ভব:

  1. রোগীর সম্পূর্ণ ইতিহাস জানা: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়, রোগীর অতীত ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা, মানসিকতা, অভ্যাস, এবং শারীরিক উপসর্গগুলো একত্রে মূল্যায়ন করা হয়। রোগীলিপি প্রস্তুত করার মাধ্যমে চিকিৎসক রোগীর এই সব দিক সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করেন। যদি এসব তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করা না হয়, তবে সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

  2. সঠিক লক্ষণ নির্বাচন: রোগীর উপসর্গের মধ্যে অনেক সময় কিছু অদ্ভুত বা অস্পষ্ট লক্ষণ থাকে, যা রোগীলিপি প্রস্তুত করার সময় সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হয়। এই লক্ষণগুলো ঔষধ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রোগীলিপি না করলে, চিকিৎসক এই লক্ষণগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন না, ফলে উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়ে।

  3. ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও পরিবেশের গুরুত্ব: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রোগীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, মানসিক অবস্থা, এবং পরিবেশের উপরেও ভিত্তি করে থাকে। এই বিষয়গুলো রোগীর চিকিৎসার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে। রোগীলিপি ছাড়া এসব দিক বুঝে ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব নয়, কারণ এসব উপাদান ঔষধের সাথে সদৃশতার প্রভাব ফেলে।

  4. মায়াজম ও রোগের মূল কারণ: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগের মায়াজম (মূল কারণ) সঠিকভাবে চিহ্নিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীলিপি ছাড়া মায়াজম নির্ধারণ করা কঠিন, এবং এটি সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে সহায়তা করে। যদি মায়াজম ভুলভাবে চিহ্নিত হয়, তবে ঔষধটি সদৃশ হবে না এবং রোগী সুস্থ হওয়ার বদলে আরও খারাপ হতে পারে।

  5. ঔষধের ব্যাপকতা ও পার্থক্য: হোমিওপ্যাথি ঔষধের বেশ কয়েকটি ধরনের উপসর্গ এবং প্রতিক্রিয়া থাকে। একজন চিকিৎসক যদি রোগীলিপি না করেন, তবে তিনি রোগীর সকল লক্ষণ এবং উপসর্গের মধ্যে সঠিক সম্পর্ক খুঁজে বের করতে পারবেন না। এর ফলে, চিকিৎসক ঔষধের সদৃশতার বিষয়টি ঠিকভাবে ধরতে পারবেন না, যা রোগীর উন্নতির পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে।

  6. সঠিক প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ: হোমিওপ্যাথিতে ঔষধের প্রতিক্রিয়া রোগীর শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা অনুসারে পরিবর্তিত হয়। রোগীলিপি না করে, চিকিৎসককে রোগীর প্রতিক্রিয়া সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে ঔষধের সদৃশতা অসম্ভব হয়ে ওঠে।

  7. হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে “সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার” অর্থাৎ সদৃশ দ্বারা সদৃশকে আরোগ্য সাধন। রোগচিত্র সঠিকভাবে প্রণয়ন করা একজন চিকিৎসকের সর্বাপেক্ষা প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ। চিররোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসক এ রোগীলিপি তার সদৃশতম ঔষধ নির্বাচনের জন্য পথ প্রদর্শক হিসাবে ব্যবহার করবেন। এ রোগীলিপি দ্বারা রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধটি সহজেই নির্বাচিত করা হয়।
  8. নির্বাচিত ঔষধ প্রয়োগের ফলে রোগীর দেহ ও মনে কি পরিমাণে উন্নতি সাধিত হচ্ছে তা রোগীলিপির মাধ্যমে জানা যায়। রোগীলিপি করে প্রয়োগকৃত ঔষধের শক্তি, মাত্রা বা অন্য কোন কারণে রোগের বৃদ্ধি হল কিনা তা সহজেই চিকিৎসকের নজরে আসে। যদি চিকিৎসক রোগীলিপি না করে সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন করে তা হলে ঔষধ প্রকৃত সদৃশ হবে না কারণ রোগীর সামগ্রীক বৈশিষ্ট্য তার মনে রাখা সম্ভব হয়।

এ কারণে, রোগীলিপি ছাড়া সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সঠিক রোগীলিপি প্রস্তুত করেই চিকিৎসক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় উপযুক্ত এবং সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করতে সক্ষম হন।

প্রশ্নঃ রোগী পরীক্ষাকালে চিকিৎসক নিজে কি কি পরীক্ষা করবেন? বা, রোগী পর্যবেক্ষণের সময় সর্বপ্রথম চিকিৎসকের দর্শনীয় বিষয়গুলো কি কি? ১৬

রোগী পরীক্ষাকালে চিকিৎসক পরীক্ষা করবেন:

রোগী পরীক্ষাকালে চিকিৎসক নিজে নিম্নলিখিত বিষয়াবলী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন।

১। রোগীর দৈহিক গঠনগত অবস্থা বা সার্বদৈহিক অবস্থা:

(i) রোগীর চেহারা, দেহের গঠন, শয়নভঙ্গি।

(ii) পুষ্টির অবস্থা, এনিমিয়া, জন্ডিস দেখতে হবে।

(iii) সায়ানোসিস, ইডিমা, পিগমেনটেশন দেখতে হবে।

(iv) চর্মের প্রকৃতি, আঁচিল, দাঁদ, একজিমা দেখতে হবে।

(v) লিম্ফনোড, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড।

(vi) পালস, ব্লাডপ্রেসার, রেসপিরেশন, বডি টেম্পারেচার, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি।

২। সিস্টেম পরীক্ষা-

(i) রেসপিরেটরী সিস্টেমের পরীক্ষা,

(ii) কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের পরীক্ষা,

(iii) ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের পরীক্ষা,

(iv) নার্ভাস সিস্টেমের পরীক্ষা,

(v) লোকোমটর সিস্টেমের পরীক্ষা,

(vi) জেনিটো-ইউরিনারী সিস্টেমের পরীক্ষা।

প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিকোন হতে কিভাবে রোগী পরীক্ষা করবে? ২০০৯, ১৩, ১৪, ১৫, ১৮ বা, রোগী পরীক্ষা কেন করতে হয় তা আলোচনা কর। ২০১৫

হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিকোন হতে রোগী পরীক্ষার পদ্ধতি নিম্নরূপ:

(i) রোগীর পরিচিতি- এখানে রোগীর নাম ঠিকানাসহ বিস্তারিত পরিচিতি থাকবে।

(ii) রোগীর প্রধান প্রধান সমস্যা নিতে হবে।

(iii) বর্তমান কষ্টকর অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

(iv) রোগীর রোগ সম্পর্কিত অতীতে ইতিহাস নিতে হবে।

(v) রোগীর ব্যক্তিগত ইতিহাস নিতে হবে।

(vi) রোগীর সামাজিক অবস্থান, পেশাগত, বাসস্থান সম্পর্কিত ইতিহাস নিতে হবে।

(vii) রোগীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাধারণ চিত্র নিতে হবে।

(viii) রোগীর সামগ্রীক বৈশিষ্ট সম্বন্ধে বিস্তারিত ইতিহাস নিতে হবে।

(ix) রোগীর রোগ সম্পর্কিত লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধি।

(x) রোগীর এনিমিয়া, জন্ডিস, ইডিমা ইত্যাদি দেখতে হবে।

(xi) কার্ডিও-ভাসকুলার সিস্টেম- হাত ও স্টেথোস্কোপ দ্বারা পরীক্ষা করতে হবে।

(xii) এবডোনেম পরীক্ষা করতে হবে।

(xiii) বুক পরীক্ষা করতে হবে।

প্রশ্ন: রোগীলিপি তৈরীতে একজন চিকিৎসকের কি কি গুণ থাকা প্রয়োজন? ২০০৮ বা. রোগীলিপি নির্ণয়ে প্রকৃত চিকিৎসকের গুণাবলী কি কি?

রোগীলিপি তৈরীতে একজন চিকিৎসকের নিম্নলিখিত গুণ থাকা প্রয়োজন/রোগীলিপি নির্ণয়ে প্রকৃত চিকিৎসকের গুণাবলী:

রোগীলিপি নির্ণয়ে প্রকৃত চিকিৎসকের গুণাবলী সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিম্যান “অর্গানন অব মেডিসিন” নামক গ্রন্থের ৮৩নং অনুচ্ছেদে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। প্রকৃত চিকিৎসকের নিম্নলিখিত গুণাবলী থাকতে হবে বা আবশ্যক:

১/ পূর্ব সংস্কার হতে মুক্ত থাকতে হবে। ২। পঞ্চ ইন্দ্রিয় সুস্থ ও কর্মপটু হতে হবে। ৩। পর্যবেক্ষণশীল মন থাকতে হবে এবং ৪। রোগ চিত্র অংকনে বিশ্বস্ত হতে হবে।

পূর্ব সংস্কার হতে মুক্ত:

চিকিৎসককে পূর্বসংস্কার হতে মুক্ত হতে হবে। কারণ চিকিৎসক যদি ভীত হয় বা ভয় পায় নিজে রোগে আক্রান্ত হবে মনে করেন তবে তিনি সঠিকভাবে রোগী চিকিৎসা করতে পারবে না। কোন রোগীর রোগীলিপি নির্ণয় করে দুই তিনটি লক্ষণ নির্ণয় করে, যদি চিকিৎসক পূর্ব সংস্কার অনুযায়ী মনে করেন যে এ রোগী অমুক ঔষধের দ্বারা ভাল হবে কারণ ঐ ঔষধ দ্বারা পূর্বে এ ধরনের লক্ষণগুলিই আরোগ্য লাভ করে ছিল ইত্যাদি নির্ণয় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন এবং ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন। তাই চিকিৎসককে অবশ্যই সংস্কারমুক্ত নিরপেক্ষ মন নিয়ে রোগীলিপি সংগ্রহ কার্যে ব্রতী হতে হবে।

পঞ্চইন্দ্রিয় সুস্থ ও কর্মপটুঃ

রোগীলিপি সংগ্রহকালে চিকিৎসকের পঞ্চইন্দ্রিয়সমূহ অর্থাৎ চোখ, কান, নাক, ত্বক ইত্যাদি যদি সুস্থ না থাকে তাহলে চিকিৎসক

প্রকৃত রোগীলিপি অংকনে ব্যর্থ হবেন। চিকিৎসকের পঞ্চইন্দ্রিয় সুস্থ থাকলে তবেই তিনি চিকিৎসা উপযুক্ত ভাবে করতে পারবেন। মানসিক ও শারীরিক বিকৃতি বা অসুস্থতা থাকলে কাজে ব্যাঘাত ঘটে। যেমন- চিকিৎসক যদি নীলকে লাল, গরমকে ঠান্ডা/ঠান্ডাকে গরম অনুভব করলে প্রকৃত রোগীলিপি অংকিত হবে না।

পর্যবেক্ষনশীল মনঃ

চিকিৎসককে রোগী পরিদর্শন কার্যে পর্যবেক্ষনশীল মন থাকতে হবে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সদৃশ লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা। রোগীর প্রকাশিত লক্ষণাবলী রোগের অস্তিত্বের পরিচায়ক, ব্যক্তিভেদে একই রোগের বিভিন্ন স্বরূপ পরিদৃষ্ট হয়। তাই প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসাকে ধৈর্য্যশীল ও মনোযোগী হতে হবে।

রোগীচিত্র অংকনে বিশ্বস্ততা:

রোগের প্রকৃত চিত্র অংকনে একজন চিকিৎসককে অবশ্যই সত্যসন্ধানী ও ন্যায় পরায়ন হতে হবে। যত্ন ও সময়ের অভাবে আরোগ্য বিধানে চিকিৎসকের রোগীর লক্ষণসমষ্টি সংগ্রহ করতে তাড়াহুড়া করলে প্রকৃতরোগ চিত্র অংকন করা সম্ভব নয়। রোগীর গোপনীয় বিষয় চিকিৎসকে অবশ্যই গোপন রাখতে হবে। রোগী যা বলে তার কিছুই পরিবর্তন না করে রোগের প্রকৃত চিত্র অংকন করতে হবে।

উপরিউক্ত আলোচনা হতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, একজন আদর্শ চিকিৎসকের রোগীলিপি অংকনে উপরিউক্ত গুণাবলী অবশ্যই থাকতে হবে এ নির্দেশনা ডাঃ হ্যানিম্যানের।

প্রশ্নঃ রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের প্রথম কর্তব্য কি?

রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের প্রথম কর্তব্য:

রোগীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা, সান্তনা দেয়া, রোগীর প্রতি মনোযোগী হওয়া, তাঁর রোগ লক্ষণের প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং রোগীর নাম, ঠিকানা, বয়স, পেশা প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করা হল রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের প্রথম কর্তব্য।

১৫। প্রশ্ন: রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের দ্বিতীয় কর্তব্য কি? ২০১৩ রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের দ্বিতীয় কর্তব্যঃ

চিকিৎসক রোগীকে তাঁর রোগের কষ্টকর অবস্থা বর্ণনা করতে বলবেন, রোগ লক্ষণ বর্ণনাকালে যেন ধীরে ধীরে বলেন যাতে তিনি বর্ণনা হতে প্রয়োজনীয় অংশটুকু সঠিকভাবে লিখে নিতে পারেন। এরপর রোগীর নিকট যাঁরা সর্বক্ষণ থাকেন তাঁরা রোগীর রোগ যন্ত্রণার সময় কি কি বলতে শুনতে পেয়েছেন এবং রোগীকে কি করতে দেখেছেন প্রভৃতি তাঁদের হতে জেনে নিবেন। রোগী, তাঁর আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সেবাকারীরা যা বর্ণনা করেন তা বর্ণনাকারীর ভাষায় লিখে নিতে হবে। তাঁরা অবান্তর কিছু না বললে বাধা দিবে না। রোগীলিপি সংগ্রহে ইহাই চিকিৎসকের দ্বিতীয় কর্তব্য। অসম্পূর্ণ লক্ষণগুলি প্রশ্ন দ্বারা সম্পূর্ণভাবে জেনে নেয়া চিকিৎসকের দ্বিতীয় কর্তব্য। রোগী তার অসুস্থতার কথা অতিরঞ্জিত করে বলে তার বর্ণনা হতে প্রকৃত লক্ষণগুলি অতি সতর্কতার সহিত বাহির করা চিকিৎসকের দ্বিতীয় কর্তব্য। রোগের গুপ্ত কারণ কৌশলে জেনে নেয়া চিকিৎসকের দ্বিতীয় কর্তব্য।

১৬। প্রশ্নঃ রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য কি?২০১৩ বা, একজন প্রকৃত চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা কর।

রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য:

অর্গানন অব মেডিসিনের ১৪৬ নং অনুচ্ছেদে প্রকৃত চিকিৎসকের তৃতীয় কর্তব্য সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিম্যান বর্ণনা করেছেন। প্রকৃত চিকিৎসকের কাজের তৃতীয় অংশটি হচ্ছে বিশুদ্ধ ক্রিয়া নির্ণয় করার জন্য যেগুলোর সুস্থ ব্যক্তিদের শরীরে পরীক্ষা করা হয়েছে, সে সকল কৃত্রিম রোগ উৎপাদক শক্তির বা ঔষধসমূহের সদৃশ বিধানমতে প্রাকৃতিক রোগ নিরাময় কল্পে বিবেচনা পূর্বক প্রয়োগ সম্পর্কিত।

১৭। প্রশ্ন: রোগীলিপিকরণের কারণগুলি উল্লেখ কর। ২০১৭

রোগীলিপিকরণের কারণগুলি:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কার্য পরিচালনা করতে গেলে রোগীলিপি প্রস্তুতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রোগীর রোগ লক্ষণের মধ্যেই রোগের

প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। রোগীর মানসিক, ধাতুগত ও সার্বদৈহিক লক্ষণাবলী নিয়ে রোগীলিপি প্রস্তুত করতে হয়। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর রোগ লক্ষণের সদৃশ মেটেরিয়া মেডিকা হতে ঔষধের লক্ষণসমষ্টির সাথে মিলিয়ে রোগীর ঔষধ নির্বাচন করতে হয়। চিকিৎসক রোগীর নিকট হতে, তাঁর আত্নীয়-স্বজনের নিকট হতে, সেবাকারীর নিকট হতে লক্ষণাবলী সংগ্রহ করে এবং নিজে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা মাধ্যমে প্রকৃত রোগীচিত্র তৈরি করতে হয়। লক্ষণসমষ্টির মাধ্যমে রোগীর একটি পূর্ণাঙ্গ রোগচিত্র ফুটিয়ে তোলা এবং রোগের প্রগনোসিস ও জটিলতা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যায়। পক্ষান্তরে রোগীর রোগীলিপি প্রস্তুত না করে রোগ যন্ত্রণা সম্বন্ধে মুখেমুখে শুনে ঔষধ নির্বাচন করলে রোগী প্রকৃত অর্থাৎ ডাঃ হ্যানিম্যানের আদর্শ আরোগ্য সম্ভব নয়। এছাড়াও কোন রোগী চিকিৎসা কালে যদি অন্যত্র চলে যায় এবং পরবর্তীতে কিছু দিন পরে পুনরায় চিকিৎসা নিতে চায় তাহলে পূর্ববর্তী সময় কি ঔষধ সেবন করেছে তা চিকিৎসকের মনে না থাকার কারণে উক্ত রোগীর সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে না।

১৮। প্রশ্নঃ একটি আদর্শ রোগীলিপিতে কোন কোন বিষয় থাকা আবশ্যক?১৭ বা, একটি আদর্শ রোগীলিপিতে কি কি বিষয় থাকা প্রয়েজন? ০৮, ০৯

একটি আদর্শ রোগীলিপিতে নিম্নলিখিত বিষয় থাকা আবশ্যক:

(i) রোগীলিপি প্রস্তুত করার সময় প্রথমেই রোগীলিপি খাতার বাম পার্শে উপরে রোগীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, পেশা ও ঠিকানা প্রভৃতি লিখে রাখতে হবে।

(ii) রোগীর লক্ষণাবলী সংগ্রহের জন্য রোগীর নিজের বর্ণনা, আত্মীয়-স্বজন ও পরিচর্যাকারীর নিকট হতে বর্ণনা এবং চিকিৎসকে স্বয়ং পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

(v) চিকিৎসক স্বয়ং, চক্ষু, কর্ণ ও অন্যান্য ইন্দ্রিয় দ্বারা রোগীর যাবতীয় কষ্টকর অবস্থা অনুধাবন করবেন। চিকিৎসককে দর্শন, শ্রবণ ও স্পর্শন এ তিনটি পদ্ধতিতে রোগী পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করতে হয়। উপরিউক্ত বিষয়সমূহ একটি আদর্শ রোগীলিপিতে থাকা আবশ্যক।

রোগীলিপি সংরক্ষণ

প্রশ্নঃ রোগীলিপির উদ্দেশ্য কি? ২০০৮, ১০, ১১, ১৩, ১৪

রোগীলিপির উদ্দেশ্য:

ডাঃ হ্যানিম্যান রচিত “অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থের ১নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত রুগ্ন মানবজাতিকে আরোগ্যদান করে স্বাস্থ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই চিকিৎসকের একমাত্র লক্ষ্য ও কর্তব্য। সুতরাং ডা: হ্যানিম্যানের উক্ত উক্তিকে বাস্তবায়িত করার জন্য রোগাক্রান্ত রোগীর রোগীলিপি প্রস্তুত করা একান্ত প্রয়োজন।

রোগীলিপির প্রধান উদ্দেশ্য হলো রোগী সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এবং সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা, যা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদান করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীলিপির উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ:

  1. রোগীর সমস্ত লক্ষণ সংগ্রহ করা: রোগী কোন ধরনের শারীরিক, মানসিক বা অনুভূতিগত সমস্যায় ভুগছেন, তা সঠিকভাবে জানা এবং সেগুলোকে নথিভুক্ত করা। এটি চিকিৎসকের জন্য উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করতে সহায়তা করে।

  2. রোগীর ইতিহাস বিশ্লেষণ: রোগীর অতীত ইতিহাস, পারিবারিক ইতিহাস, এবং বর্তমান অবস্থার ভিত্তিতে রোগের মূল কারণ বা মায়াজম চিহ্নিত করা। এই তথ্য চিকিৎসককে রোগের সঠিক নিকটবর্তী কারণ বা উদ্দীপনা জানাতে সাহায্য করে।

  3. সঠিক ঔষধ নির্বাচন: রোগী সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে চিকিৎসক সর্বোত্তম ও সদৃশ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন করতে পারেন, যা রোগীর উপসর্গের সাথে পুরোপুরি মিলবে।

  4. রোগীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিশ্লেষণ: রোগীর শারীরিক লক্ষণের পাশাপাশি তার মানসিক অবস্থা, চিন্তা, অনুভূতি, এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। এটি ঔষধ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ হোমিওপ্যাথি শুধুমাত্র শারীরিক লক্ষণ নয়, মানসিক অবস্থা থেকেও ঔষধ নির্বাচন করে।

  5. ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ: রোগীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য যেমন তার খাদ্যাভ্যাস, অভ্যাস, জীবনযাপন, পরিবেশ, এবং আচরণ বিশ্লেষণ করা। এসব বিষয়ও চিকিৎসার ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।

  6. হোমিওপ্যাথিক মায়াজম নির্ধারণ: রোগীর মায়াজম চিহ্নিত করা (যেমন সিফিলিস, স্কোলিওসিস, বা পসাইকোসিস) চিকিৎসায় সহায়তা করে, কারণ মায়াজম অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

  7. চিকিৎসার ফলাফল নিশ্চিত করা: রোগীলিপি সঠিকভাবে প্রস্তুত করলে, ঔষধ প্রয়োগের পর রোগীর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়। সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা চিকিৎসার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

মোটকথা, রোগীলিপি প্রস্তুতির মাধ্যমে চিকিৎসক রোগীর উপসর্গ ও ইতিহাসের পুরো ছবি দেখতে পান, যা তাকে সঠিক এবং কার্যকর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নির্বাচন করতে সহায়তা করে।

প্রশ্ন: রোগীলিপি প্রস্তুত ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা লিখ। বা, রোগীলিপি প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর। ১৩, ১৪, ১৬, ১৮

রোগীলিপি প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তা:

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগীলিপি প্রস্তুত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রোগীর রোগের প্রকৃতি এবং ব্যক্তিগত লক্ষণগুলো গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে, যা সঠিক ওষুধ নির্ধারণের মূল চাবিকাঠি। নিচে রোগীলিপি প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তাগুলো উল্লেখ করা হলো:

১. সঠিক ওষুধ নির্বাচন: রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং আবেগগত লক্ষণগুলো একত্রিত করে ওষুধের উপযুক্ত ম্যাচ খুঁজে বের করা সহজ হয়। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগের উপসর্গের সাথে রোগীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের মিল খুঁজে বের করার মাধ্যমে একক ওষুধ নির্বাচন করা হয়।

২. রোগের কারণ এবং মায়াজম নির্ধারণ: রোগের গভীরে প্রবেশ করে রোগের মূল কারণ এবং রোগীর মায়াজমিক অবস্থা (Psora, Sycosis, Syphilis) চিহ্নিত করা যায়। দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে রোগের পেছনে থাকা কারণগুলো বুঝতে সাহায্য করে।

৩. রোগের উন্নতির পর্যবেক্ষণ: রোগীর প্রথম সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে রোগের উন্নতির ধাপগুলো পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করার জন্য একটি ভালো রোগীলিপি অপরিহার্য। পরবর্তী সাক্ষাতে রোগী কেমন উন্নতি করেছে তা পূর্বের তথ্যের সাথে তুলনা করা যায়।

৪. রোগীর সম্পূর্ণ চিত্র বোঝা: রোগীর শারীরিক উপসর্গ ছাড়াও মানসিক ও আবেগগত অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের ধরণ এবং জীবনযাত্রার তথ্য একত্রিত করার মাধ্যমে রোগীর হোলিস্টিক চিত্র তৈরি করা যায়।

৫. ব্যক্তিগত এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ চিহ্নিত করা: রোগীর এমন লক্ষণ যা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে, তা চিহ্নিত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ: এক ব্যক্তি ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হলে সাধারণ উপসর্গের পাশাপাশি তার নির্দিষ্ট শীত-গরমের অনুভূতি বা অস্বস্তি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। এটি হোমিওপ্যাথির মূল নীতি অনুযায়ী Individualization of Medicine-কে সহজ করে।

৬. সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা: রোগের তীব্রতা এবং রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদী বা স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা যায়। রোগীর উন্নতি বা অবস্থার পরিবর্তন অনুযায়ী চিকিৎসায় পরিবর্তন আনতে রোগীলিপি সহায়ক।

৭. গবেষণা ও শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ: চিকিৎসকদের রোগ এবং চিকিৎসার ধরন বিশ্লেষণের জন্য রোগীলিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যতে রোগী বা অনুরূপ কোনো কেস পরিচালনায় এটি একটি রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে।

৮. রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়ানো: রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস সংগ্রহ করার মাধ্যমে রোগী অনুভব করে যে চিকিৎসক তার সমস্যায় গভীর মনোযোগ দিচ্ছেন। এটি রোগীর মানসিক স্বস্তি এবং চিকিৎসার প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করে।

৯. গোপনীয়তার নিশ্চয়তা: রোগীলিপিতে রোগীর ব্যক্তিগত এবং চিকিৎসাগত তথ্য সংরক্ষিত থাকে, যা রোগীর গোপনীয়তা রক্ষায় সহায়তা করে।

১০. জটিল রোগের ক্ষেত্রে সহায়ক: দীর্ঘমেয়াদী এবং জটিল রোগ (যেমন: ক্যান্সার, সোরিয়াসিস, বা মানসিক রোগ) চিকিৎসায় রোগীলিপি প্রস্তুত করা রোগের প্রকৃতি এবং গতিপ্রকৃতি বুঝতে সহায়তা করে।

রোগীলিপি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাঃ  হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে মায়াজমেটিক অবস্থার উপর নির্ভর করে সদৃশ বিধান মতে পরিচালিত হয়। কোন চিররোগের রোগীর চিকিৎসা করতে হলে তাকে এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ দিতে হবে। আবার এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ঔষধ প্রয়োগের ফলে রোগীর কিছু লক্ষণাবলী আরোগ্য হবার পর আরো কিছু লক্ষণ বাকী ও নতুন লক্ষণ দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রয়োজন হয়, তখন যদি রোগীলিপি থাকে তাহলে রোগীর জন্য পরবর্তী ঔষধ নির্বাচন করতে সহজ হয়। রোগীলিপি সংরক্ষণ করলে কোন রোগী যদি চিকিৎসাকালে প্রয়োজনের তাগিদে দূরে কোন স্থানে গমন করে পরবর্তীতে আবার চিকিৎসা নেন, তাহলে চিকিৎসকের জন্য চিকিৎসা করতে সুবিধা হয়। ঔষধ সেবনের পর রোগীর দেহে প্রকাশিত লক্ষণসমূহ যেগুলো দূরীভূত হয়েছে সেগুলো রোগীলিপি হতে কেটে দিয়ে অবশিষ্ট লক্ষণাবলী সংগ্রহ করে পরবর্তীতে পরিপূরক/অনুপূরক এর প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীতে আদর্শ আরোগ্য করা সম্ভব।

অতএব, উপরিউক্ত আলোচনার হতে ইহাই প্রতীয়মান হয়, রোগীলিপি প্রস্তুত ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।

৩। প্রশ্ন: পূর্বে ঔষধ সেবনকারী রোগীর লক্ষণসমূহ কিভাবে সংগ্রহ করবে? ২০০৯

পূর্বে ঔষধ সেবনকারী রোগীর লক্ষণসমূহ সংগ্রহের নির্বাচন: ডাঃ হ্যানিম্যান অর্গানন অব মেডিসিনের ৯১ ও ৯২নং অনুচ্ছেদে পূর্বে ঔষধ সেবনকারী রোগীর লক্ষণসমূহ সংগ্রহ করার নিয়মাবলী বর্ণনা করেছেন।

তাঁর মতে, রোগী যদি অন্য ঔষধ সেবনকালে এসে থাকে তবে সে অবস্থায় প্রকাশিত লক্ষণাবলীসমূহ সঠিক রোগচিত্র ফুটে তুলতে অসমর্থ হতে পারে। তাই প্রকৃত রোগ লক্ষণ নির্ণায়ার্থে ঔষধ সেবনের পূর্বের লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে। অথবা কিছুদিন ঔষধ বন্ধ রেখে প্রকৃত রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করতে হবে। ইহা মৃদু প্রকৃতির স্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে এরূপ করতে হবে।

পূর্বে ঔষধ সেবনকারীর গুরুতর পীড়ায় রোগী যদি অন্য ঔষধ সেবনকালে এসে থাকে, তার রোগ যদি দ্রুত বর্ধনশীল হয় এবং গুরুতর হয় তবে সঠিক রোগ লক্ষণ নির্ণয়ার্থে ঔষধ প্রয়োগ বিলম্বিত করা যাবে না। কারণ ঔষধ প্রয়োগে বিলম্বিত হলে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে। এই অবস্থায় প্রথম ঔষধ সেবন করার পূর্বের লক্ষণগুলি রোগী বা তার বন্ধু- বান্ধবদের নিকট হতে জেনে নিতে হবে। তা জানতে অসমর্থ হলে প্রথম ঔষধ সেবনের পরবর্তী লক্ষণগুলির উপর নির্ভর করে সঠিক ঔষধ নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে। এতে প্রথম প্রয়োগকৃত বিসদৃশ ঔষধে কোন প্রকার মারাত্মক ক্রিয়া হতে রোগী রক্ষা পাবে।

উপরিউল্লিখিত নিয়ম অনুসারে পূর্বে ঔষধ সেবনকারী রোগীর লক্ষণসমূহ সংগ্রহ করতে হবে।

 প্রশ্নঃ রোগীলিপি সংরক্ষণের উপকারিতা বর্ণনা কর। ২০১৩, ১৮ বা, রোগীলিপি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা লিখ। ০৮, ১১

রোগীলিপি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা:

  1. চিকিৎসার অগ্রগতি ট্র্যাক করা: রোগীর চিকিৎসার উন্নতি পর্যবেক্ষণ ও প্রগ্রেস মূল্যায়ন করতে সাহায্য করে।

  2. ভবিষ্যতে চিকিৎসার জন্য রেফারেন্স: রোগী পুনরায় চিকিৎসার জন্য আসলে পূর্বের তথ্য রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

  3. আইনগত এবং পেশাগত দায়বদ্ধতা: আইনি প্রমাণ হিসেবে রোগীলিপি কাজ করে এবং চিকিৎসকের পেশাদারী সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

  4. গোপনীয়তা রক্ষা: রোগীর তথ্য গোপন রাখা এবং প্রয়োজনীয় লোকজনের কাছে সীমাবদ্ধ থাকা নিশ্চিত করে।

  5. সহযোগিতামূলক চিকিৎসায় সুবিধা: একাধিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করতে সহায়তা করে।

  6. নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োগের জন্য সাহায্য: সঠিক ডোজ এবং চিকিৎসা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

  7. রোগীর পরিবারের জন্য সহায়ক: রোগীর চিকিৎসার ইতিহাস জানিয়ে রোগীর পরিবারের জন্য সুবিধা প্রদান করে।

  8. চিকিৎসক এবং রোগীর মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি: রোগী জানে যে তার তথ্য সুরক্ষিত, যা আস্থার সম্পর্ক তৈরি করে।

  9. রোগের মায়াজম এবং উপসর্গ বিশ্লেষণ: রোগীর মায়াজম ও উপসর্গ বিশ্লেষণে সহায়তা করে সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে।

  10. উন্নত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা: রোগীর উপযুক্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করে।

এগুলি সবই রোগীলিপি সংরক্ষণের মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসার সুষ্ঠু পরিচালনা এবং উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে মায়াজমেটিক অবস্থার উপর নির্ভর করে সদৃশ বিধান মতে পরিচালিত হয়। কোন চিররোগের রোগীর চিকিৎসা করতে হলে তাকে এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ দিতে হবে। আবার এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ঔষধ প্রয়োগের ফলে রোগীর কিছু লক্ষণাবলী আরোগ্য হবার পর আরো কিছু লক্ষণ বাকী ও নতুন লক্ষণ দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রয়োজন হয়, তখন যদি রোগীলিপি থাকে তাহলে রোগীর জন্য পরবর্তী ঔষধ নির্বাচন করতে সহজ হয়। রোগীলিপি সংরক্ষণ করলে কোন রোগী যদি চিকিৎসাকালে প্রয়োজনের তাগিদে দূরে কোন স্থানে গমন করে পরবর্তীতে আবার চিকিৎসা নেন, তাহলে চিকিৎসকের জন্য চিকিৎসা করতে সুবিধা হয়। ঔষধ সেবনের পর রোগীর দেহে প্রকাশিত লক্ষণসমূহ যেগুলো দূরীভূত হয়েছে সেগুলো রোগীলিপি হতে কেটে দিয়ে অবশিষ্ট লক্ষণাবলী সংগ্রহ করে পরবর্তীতে পরিপূরক/অনুপূরক এর প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীতে আদর্শ আরোগ্য করা সম্ভব। সুতরাং রোগীলিপি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।

৫। প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যক্তিগত ইতিহাসের প্রয়োজনীতা বর্ণনা কর।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ব্যক্তিগত ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাকে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা বলা হয়। কারণ রোগীর দেহে ও মনে রোগাক্রান্ত লক্ষণাবলী সংগ্রহ করে তার সদৃশ মেটেরিয়া মেডিকা লিপিবদ্ধ সুস্থমানবদেহে পরীক্ষিত ঔষধ তালিকা থেকে একটি ঔষধ দ্বারা রোগারোগ্য করা হয়। ডাঃ হ্যানিম্যানের আদর্শ আরোগ্যনীতি অনুসারে রোগীলিপি নিয়ে রোগীর জন্য আরোগ্যকর ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। তিনি রোগীলিপি রোগীর ব্যক্তিগত ইতিহাসের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সোরা মায়াজম যা রোগ সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সোরা মানুষের মস্তিষ্কে বিকৃত করা বা অন্যায় বা খারাপ কাজ করার অনুভূতি জন্মায়। সোর
এককভাবে দেহে কোন রোগের সৃষ্টি করতে পারে না, ফলে সোরা আকাঙ্খা তৈরি করে ফল হিসেবে সিফিলিস ও সাইকোসিস দেহে প্রবেশ করে এবং সংক্রমনের মাধ্যমে দেহে রোগের সৃষ্টি করে। সুতরাং রোগের কারণ নির্ণয়ের। জনা ব্যক্তিগত ইতিহাসের প্রয়োজন। রোগীর ব্যক্তিগত শখ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, অভ্যাস ইত্যাদি রোগারোগ্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- রাত্রিজাগরণ, খাদ্যঅভ্যাস, নেশাজাতীয় অভ্যাস ইত্যাদি আরোগ্যের বাঁধা সৃষ্টি করে।

অতএব, রোগীকে আদর্শ আরোগ্য করার জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যক্তিগত ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

প্রশ্নঃ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় বংশগত ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর। ০৯, ১৩, ১৫

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় বংশগত ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা:

  1. মায়াজম চিহ্নিতকরণ: বংশগত ইতিহাসের মাধ্যমে রোগীর মায়াজম (যেমন সিফিলিস, স্কিনসিস) চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, যা চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডাঃ হ্যানিম্যান কর্তৃক আবিষ্কৃত হোমিপ্যাথি সদৃশ বিধানে আরোগ্য সাধন করে। তাঁর মতে রোগের কারণ হচ্ছে মায়াজম অর্থাৎ সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস দ্বারা রোগ সৃষ্টি হয়। এ মায়াজম বংশগত বা অর্জিত দুই হতে পারে। অর্জিত মায়াজমের অধিকারী পিতা-মাতার সন্তানেরা জন্মগতভাবে পিতা-মাতার দেহের সুপ্ত মায়াজম প্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে এ সুপ্ত মায়াজম উত্তেজক কারণ বা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অর্গান দখল করে ঐ অর্গানের ক্রিয়ার বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। যার ফলে দেহে ও মনে কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ ও চিহ্ন প্রকাশিত হয়, তাকে রোগ বলা হয়। বংশগতির ধারক ও বাহক জীন, সুতরাং জীনের মাধ্যমে এইরোগ সৃষ্টিকারী মায়াজম পিতা-মাতা থেকে পরবর্তী বংশধরদের দেহে ছড়ায়। 

  2. রোগের প্রবণতা বুঝা: পরিবারের পূর্ববর্তী সদস্যদের রোগের ইতিহাস জানা গেলে, রোগীর মধ্যে সেই রোগের প্রবণতা বা ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

  3. উপসর্গের পুনরাবৃত্তি চিহ্নিতকরণ: পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একই ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখতে পেলে তা রোগের পুনরাবৃত্তি নির্দেশ করতে পারে, যা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সহায়ক।

  4. ঔষধ নির্বাচন সহজতর করা: বংশগত ইতিহাসের মাধ্যমে সঠিক ঔষধ নির্বাচন সহজ হয়, কারণ কিছু হোমিওপ্যাথিক ঔষধ শুধুমাত্র বিশেষ মায়াজম বা বংশগত রোগের জন্য কার্যকর।

  5. গুরুতর রোগের পূর্বাভাস: পরিবারের ইতিহাসে গুরুতর রোগের উপস্থিতি (যেমন ক্যান্সার, হার্ট রোগ) রোগীর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করে।

  6. অধিক উপযুক্ত চিকিৎসার পরিকল্পনা: রোগীর পরিবারগত ইতিহাস জানালে, চিকিৎসক আরও উপযুক্ত ও ব্যক্তিগতকৃত চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে পারেন।

  7. জীবনযাপন ও অভ্যাস সম্পর্কিত তথ্য: পরিবারের মধ্যে অভ্যাসগত বা পরিবেশগত প্রবণতাগুলোর পরিচিতি রোগীর চিকিৎসা পরিকল্পনায় সহায়তা করে।

  8. দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা: পরিবারের ইতিহাস জানালে চিকিৎসক দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক রোগের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন।

  9. রোগীর মানসিক এবং শারীরিক পরিস্থিতি বোঝা: বংশগত ইতিহাসের মাধ্যমে রোগীর মানসিক এবং শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অধিক তথ্য পাওয়া যায়, যা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচনে সহায়তা করে।

  10. ফলস্বরূপ চিকিৎসা সফলতা বৃদ্ধি: বংশগত ইতিহাসের বিশ্লেষণ চিকিৎসার ফলস্বরূপ সফলতা বাড়াতে সহায়তা করে, কারণ এটি ঔষধের প্রভাব এবং রোগীর পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা প্রদান করে।

সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক বংশগত ইতিহাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ও আদর্শ আরোগ্যে ইহার গুরুত্ব অত্যধিক।

প্রশ্নঃ ধাতু প্রকৃতি বলতে কি বুঝ? কত প্রকার ও কি কি?

ধাতু প্রকৃতি (Constitution):

প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে নির্দিষ্ট কিছু গঠন ও প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এ সকল বৈশিষ্ট্যাবলী তার দৈহিক গঠন ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। জন্মগতভাবে প্রাপ্ত ব্যক্তি বিশেষের এই সব বৈশিষ্ট্যাবলীর সমষ্টিকে ধাতু প্রকৃতি বলে। এক কথায়, ধাতু প্রকৃতি বলতে রোগীর দৈহিক গঠন এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাধারণ চিত্র যা অন্য রোগী বা ঔষধের স্বাতন্ত্র্য থেকে আলাদা করা যায়।

ধাতু প্রকৃতির প্রকারভেদ: ধাতু প্রকৃতির প্রধানত চার প্রকার। যথা-

ধাতু প্রকৃতির প্রধান চার প্রকার হল:

  1. রক্ত প্রধান (Sanguinous):
    এই ধরনের প্রকৃতির ব্যক্তিরা সাধারণত উজ্জ্বল, উদ্যমী, চঞ্চল এবং সহজেই আবেগপ্রবণ হয়ে থাকেন। তারা মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করেন এবং তাদের মধ্যে শক্তি ও জীবনীশক্তি প্রচুর থাকে। এই প্রকৃতির লোকেরা সাধারণত সুখী এবং সহজেই পরিস্ফুটিত হয়ে ওঠেন। তবে কখনও কখনও তারা অস্থির, অবিরাম চলমান এবং ভাবনাগুলোর মধ্যে বিভ্রান্ত থাকতে পারেন।

  2. স্নায়ু প্রধান (Nervous):
    স্নায়ু প্রধান প্রকৃতির ব্যক্তিরা সাধারণত অত্যন্ত সংবেদনশীল, চিন্তাশীল, এবং উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন। তারা সহজেই উদ্বিগ্ন এবং মানসিক চাপ বা উত্তেজনা সৃষ্টিকারী পরিস্থিতিতে অধিক প্রভাবিত হন। তাদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তা এবং বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা দেখা যায়, তবে তারা শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন।

  3. পিত্ত প্রধান (Bilious):
    পিত্ত প্রধান প্রকৃতির ব্যক্তিরা সাধারণত উচ্চতর শক্তি ও উদ্যমী মনোভাবের অধিকারী। তারা তীক্ষ্ণ, বিচক্ষণ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম। তবে তাদের মাঝে অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা বা মনোভাবের পরিবর্তন হতে পারে, বিশেষত যখন পরিস্থিতি তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী চলে না। তারা সঠিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করেন এবং এতে প্রচুর পরিশ্রমী হয়ে থাকেন।

  4. শ্লেষ্মা প্রধান (Phlegmatic):
    শ্লেষ্মা প্রধান প্রকৃতির ব্যক্তিরা সাধারণত শান্ত, স্থিতিশীল, এবং সহনশীল প্রকৃতির হন। তারা অনেক সময় ধীর, অলস বা খুব কম উত্তেজিত হয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে অনেক সময় শারীরিক বা মানসিক শান্তি এবং সমতা বজায় রাখার প্রবণতা থাকে, তবে তারা কখনও কখনও অনুকূল পরিস্থিতি না পেলে বা চাপ অনুভব করলে স্লথ বা নিরুৎসাহিত হতে পারেন।

এই চার প্রকার ধাতু প্রকৃতির ধারণা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগীর লক্ষণ ও আচরণ বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন: রোগীলিপি প্রস্তুতে রোগীর ধাতু প্রকৃতির ও আচরণ পর্যবেক্ষন আবশ্যক কেন? ০৮, ১০

রোগীলিপি প্রস্তুতে রোগীর ধাতু প্রকৃতির ও আচরণ পর্যবেক্ষন আবশ্যক: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি সদৃশ বিধানে আরোগ্য সাধন করে। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সুস্থ মানুষের উপর পরীক্ষিত। ঔষধ পরীক্ষার সময় পরীক্ষাকারী দৈহিক গঠন ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের উপর ঔষধের যে ক্রিয়া প্রকাশ পায় তা বিশুদ্ধ মেটেরিয়া মেডিকাতে অন্তর্ভূক্ত হয়। পরীক্ষাকারীর ধাতু প্রকৃতি ও আচরনের যে পরিবর্তন দেখা যায়, ঠিক অসুস্থ অবস্থায় রোগীর দেহে সে ধরনের চিত্র ফুটে উঠে।

চিকিৎসকের ধাতু প্রকৃতির সম্বন্ধে জ্ঞান থাকেন এবং রোগীর আচার আচরণ সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তবে রোগীলিপি প্রণয়ন অধিকতর সহজ ও নির্ভুল হয়। ঔষধ নির্বাচন, আনুসঙ্গিক চিকিৎসা, রোগনির্ণয়, পথ্যাপথ্য, খাদ্য বিচার প্রভৃতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে চিকিৎসা কার্যকে সহজতর করাও সম্ভব। রোগীর ধাতু প্রকৃতির সহিত মায়াজমের সম্পর্ক বিদ্যমান। যেমন- রক্ত প্রধান, স্নায়ু প্রধান, ধাতুর সহিত সোরা, শ্লেষ্মা প্রধান ধাতুর সহিত সাইকোসিস, পিত্ত প্রধান ধাতুর সহিত সিফিলিস মায়াজমের সম্পর্ক রয়েছে। আবার একই রোগীতে বিভিন্ন ধাতু প্রকৃতির উপস্থিতিতে মিশ্র মায়াজম টিউবারকুলারের সৃষ্টি হতে পারে।

উপরিউক্ত আলোচনা হতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, রোগীর ধাতু প্রকৃতির পর্যবেক্ষন ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করে রোগ নির্ণয় ও ঔষধ • নির্বাচনের জন্য রোগীলিপি প্রণয়ন করা চিকিৎসকের একান্ত কর্তব্য ও প্রয়োজনীয় বিষয় বস্তু।

৯। প্রশ্নঃ হোমিওপ্যাথিতে রোগী পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনা কর। হোমিওপ্যাথিতে রোগী পরীক্ষা পদ্ধতি বর্ণনাঃ

ডাঃ হ্যানিম্যান “অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থের ৮৪-১০২ নং অনুচ্ছেদের রোগীলিপি সংগ্রহ এবং এর ৯০ নং অনুচ্ছেদে রোগী পরীক্ষা অর্থাৎ চিকিৎসক নিজে রোগী সম্বন্ধে যা পর্যবেক্ষণ করেন তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎকের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান কর্তব্য হল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রোগী পরীক্ষা করে লক্ষণ সমষ্টি সংগ্রহ করা। রোগীলিপি সংগ্রহ অর্থাৎ লক্ষণ সমষ্টি সংগ্রহের নিয়মাবলী যেমন রোগীর বর্ণনা হতে, সেবাকারীর বর্ণনা হতে, আত্মীয়-স্বজনের বর্ণনা হতে এবং চিকিৎসক নিজে রোগী সম্বন্ধে যা পর্যবেক্ষণ করবেন তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া রয়েছে। চিকিৎসক রোগীর দেহের তাপমাত্রা, রক্তের চাপ, এনিমিয়া, জন্ডিস, চেহারা, ধাতুগত লক্ষণ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাধারণ চিত্র, সার্বদৈহিক লক্ষণাবলী, মায়াজমেটিক অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করে মেটেরিয়া মেডিকা হতে উক্ত রোগের সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করতে হবে।

সুতরাং হোমিওপ্যাথিতে রোগী পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

১০। প্রশ্ন: চিররোগের রোগীলিপিতে জটিলতা কি? ২০১২

চিররোগের রোগীলিপিতে জটিলতা:

অচিররোগে রোগ অতিদ্রুত ও তীব্রভাবে আবির্ভূত হয় বলে উহার লক্ষণসমূহ সুস্পষ্টরূপে অধিক সংখ্যক লক্ষণ প্রকাশ পায়। ফলে সহজেই রোগীর রোগ লক্ষণ সংগ্রহ করে সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করে রোগারোগ্য করা সম্ভব হয়। পক্ষান্তরে চিররোগে রোগ লক্ষণসমূহ অতিধীরে ধীরে আবির্ভূত হয়। এতে লক্ষণাবলী অস্পষ্টরূপে প্রকাশ পায় এবং অধিকাংশ লক্ষণ সুপ্তাবস্থায় থাকে। ফলে চিররোগে রোগ লক্ষণাবলী সংগ্রহ করা অপেক্ষাকৃত কঠিন।

চিররোগ চির মায়াজম দ্বারা গঠিত। ইহা বংশগতভাবে পিতা- মাতা থেকে সন্তানের দেহে সংক্রমিত হয়। ইহাতে দীর্ঘদিন ভূগতে ভূগতে রোগী প্রকৃত সুস্থাবস্থার কথা ভুলে যায়। তাই প্রকৃত রোগাবস্থার তুলনা করতে পারে না এবং দীর্ঘদিনের অসুস্থকর লক্ষণগুলিকে স্বাভাবিক বলে মনে করে। তা চিকিৎসককে বলার প্রয়োজন মনে করে না।

চিররোগে রোগীর রোগ লক্ষণাবলী সম্পূর্ণভাবে বিকাশিত হয় না। রোগ লক্ষণাবলী অল্প ২/১টি প্রকাশিত হয়। অল্প সংখ্যক লক্ষণ নিয়ে সঠিক ঔষধ নির্ণয় করা কষ্টকর হয়।

উপরিউক্ত আলোচনা হতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, চির রোগের রোগীলিপি সংগ্রহে চিকিৎসক বিপাকে পড়ে। রোগী তার রোগ লক্ষণ সঠিকভাবে বলতে পারে না ফলে আদর্শ রোগীলিপি তৈরীতে জটিলতা দেখা দেয়।

১১। প্রশ্নঃ খনিজ জলে স্নান সম্পর্কে ডাঃ হ্যানিম্যানের মতামত কি?

খনিজ জলে স্নান সম্পর্কে ডাঃ হ্যানিম্যানের মতামত:

ডাঃ হ্যানিম্যান অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের ২৯১ নং অনুচ্ছেদে খনিজ পানিতে গোসল সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

খনিজ পানিতে গোসল করা কিছুটা উপকারী যদি রোগ সেরে যাওয়ার পর স্বাস্থ্য লাভের অবস্থা, পানির তাপমাত্রা, স্নানের মাত্রার পরিমাণ ও পুনঃপ্রয়োগ সম্বন্ধে জানা যায়। কিন্তু উত্তম প্রয়োগ হলে তা রুগ্ন দেহে কেবল বাহ্যিক পরিবর্তনই আনে, এতে প্রকৃত কোন ঔষধ নেই। তবে যে সকল রোগীর রোগ মুক্তির পর ঠান্ডা পানিতে স্নান সদৃশ বিধানে কার্যকারী নয়। স্নানের ক্রিয়া বাহ্যিকভাবে উপকারী ভেষজের মত সূক্ষ্মভাবে তা ক্রিয়া প্রকাশ করে না, তাই ভেষজের মত তা হতে কোন বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায় না। খনিজ উপাদান মিশ্রিত পানিতে গোসল করলে, অনেক সময় চর্মরোগ দমিত হয়ে রোগীর অধিকতর ক্ষতি হতে পারে কিন্তু পরিষ্কার পানিতে গোসলে সেরূপ অপসারিত নাই বরং উপকার আছে।

উপরিউক্ত আলোচনা হতে বুঝা যায় যে, খনিজ পানিতে গোসলের উপকারীতা ও অপকারীতা উভয়ই বিদ্যমান আছে।

১২। প্রশ্নঃ মহামারী রোগের সঠিক চিত্র কিভাবে লাভ করা যায়? ১৭ মহামারী রোগের সঠিক চিত্র নিম্নলিখিতভাবে লাভ করা যায়:

রোগ আক্রমন এলাকায় প্রত্যেকটি রোগীকে আলাদাভাবে পরীক্ষা করে মহামারী রোগের সঠিক চিত্র অংকন করা যায়। ডাঃ হ্যানিম্যানের মতে, মহামারী এলাকায় প্রতিটি রোগীকে আরাদা ভাবে পরীক্ষা ও রোগীর কষ্টের কথা শুনে রোগীলিপি করে ঔষধ দিতে হবে। দুই/তিন জন রোগীর রোগলক্ষণ নিয়ে সকল রোগীকে একই ঔষধ প্রয়োগ করা হতে বিরত থাকতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রশ্নঃ রোগী পরীক্ষা কাকে বলে? ২০১৮

রোগী পরীক্ষা (Patient Examination) হল রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং রোগের ইতিহাসের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনা নির্ধারণের প্রক্রিয়া। এটি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সহ সব ধরনের চিকিৎসায় অপরিহার্য। রোগী পরীক্ষা করতে হলে চিকিৎসককে রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়, এবং রোগীর উপসর্গ ও লক্ষণগুলি লক্ষ্য করতে হয়।

প্রশ্নঃ রোগী পরীক্ষার আবশ্যকতা কি? বা, রোগী পরীক্ষা কেন করতে হয়? আলোচনা কর। ২০১৫, ১৮

রোগী পরীক্ষার আবশ্যকতা:

  1. সঠিক রোগ নির্ণয় করা: রোগীর উপসর্গ এবং লক্ষণ বিশ্লেষণ করে সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয়।

  2. চিকিৎসার পরিকল্পনা নির্ধারণ: রোগী পরীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সঠিক চিকিৎসার পরিকল্পনা তৈরি করা যায়।

  3. শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা মূল্যায়ন: রোগীর শারীরিক অবস্থা (তাপমাত্রা, রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন) এবং মানসিক অবস্থা (উদ্বিগ্নতা, হতাশা) মূল্যায়ন করা হয়।

  4. দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রনিক রোগ চিহ্নিতকরণ: দীর্ঘস্থায়ী রোগ (যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ) চিহ্নিত করা যায় এবং তা দ্রুত চিকিৎসা করা যায়।

  5. রোগের কারণ বা উৎস চিহ্নিতকরণ: রোগী পরীক্ষা করার মাধ্যমে রোগের কারণ বা উৎস চিহ্নিত করা সম্ভব হয়, যা চিকিৎসায় সহায়তা করে।

  6. সঠিক ঔষধ নির্বাচন: রোগীর শারীরিক এবং মানসিক লক্ষণ বোঝার মাধ্যমে সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন করা হয়।

  7. রোগীর সুস্থতা এবং জীবনমান উন্নত করা: সময়মতো রোগী পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হলে রোগীর সুস্থতা এবং জীবনমান উন্নত হয়।

  8. রোগের পূর্বাভাস এবং পর্যবেক্ষণ: রোগী পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের জটিলতা এবং উন্নতি পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা চিকিৎসায় উপযুক্ত পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।

রোগী পরীক্ষার ফলে রোগীর রোগ লক্ষণসমূহ দ্বারা মেটেরিয়া মেডিকায় লিপিবদ্ধ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হতে সর্বাধিক সদৃশ একটি ঔষধ নির্বাচন করা সম্ভব হয়। রোগীর মানসিক, ধাতুগত ও সার্বদৈহিক লক্ষণাবলী নিয়ে রোগীলিপি প্রস্তুত করতে হয়। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর রোগ লক্ষণের সদৃশ মেটেরিয়া মেডিকা হতে ঔষধের লক্ষণসমষ্টির সাথে মিলিয়ে রোগীর ঔষধ নির্বাচন করতে হয়। রোগীর একটি পূর্ণাঙ্গ রোগচিত্র ফুটিয়ে তোলা এবং রোগের প্রগনোসিস ও জটিলতা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার জন্য রোগী পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি। পক্ষান্তরে রোগী পরীক্ষা না করে রোগ যন্ত্রণা সম্বন্ধে মুখেমুখে শুনে ঔষধ নির্বাচন করলে রোগী প্রকৃত অর্থাৎ ডাঃ হ্যানিম্যানের আদর্শ আরোগ্য সম্ভব নয়। অতএব, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রোগী পরীক্ষার আবশ্যকতা ব্যাপক।

১৫। প্রশ্ন: পূর্বে ঔষধ সেবনকারীর গুরুপ্তর অবস্থায় কিভাবে ঔষধ নির্বাচন করতে হবে?

পূর্বে ঔষধ সেবনকারীর গুরুতর অবস্থায় নিম্নলিখিতভাবে। ঔষধ নির্বাচন: পূর্বে অন্য ঔষধ সেবনকারী রোগীর রোগ যদি দ্রুত বর্ধনশীল হয় এবং গুরুতর হয় তবে সঠিক রোগ লক্ষণ নির্ণয়ার্থে ঔষধ প্রয়োগ বিলম্বিত করা যাবে না, কারণ ঔষধ প্রয়োগে বিলম্বিত হলে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে। এই অবস্থায় প্রথমে ঔষধ সেবন করার পূর্বের লক্ষণগুলি রোগী বা তার বন্ধু-বান্ধবদের নিকট থেকে জেনে নিতে হবে। যদি তা জানতে না পারা যায় তা হলে প্রথম ঔষধ সেবনের পরবর্তী লক্ষণসমূহের উপর নির্ভর করে সঠিক ঔষধ নির্বাচন ও প্রয়োগ করতে হবে। এতে প্রথম প্রয়োগকৃত ঔষধের মারাত্মক ক্রিয়া হতে রোগী রক্ষা পাবে।

১৬। প্রশ্নঃ চিররোগের রোগীলিপি সংরক্ষণের উপকারিতা বর্ণনা কর।২০১১, ১৪

চিররোগের রোগীলিপি সংরক্ষণের উপকারিতা বর্ণনাঃ

রোগীলিপি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান অনন্য দিক যা চিকিৎসক ও রোগীর এবং রোগারোগ্য জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে মায়াজমেটিক অবস্থার উপর নির্ভর করে সদৃশ বিধান মতে পরিচালিত হয়। কোন চিররোগের রোগীর চিকিৎসা করতে হলে তাকে এন্টিমায়াজমেটিক ঔষধ দিতে হবে।

আবার এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে ঔষধ প্রয়োগের ফলে রোগীর কিছু লক্ষণাবলী আরোগ্য হবার পর আরো কিছু লক্ষণ বাকী ও নতুন লক্ষণ দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রয়োজন হয়, তখন যদি রোগীলিপি থাকে তাহলে রোগীর জন্য পরবর্তী ঔষধ নির্বাচন করতে

সহজ হয়। রোগীলিপি সংরক্ষণ করলে কোন রোগী যদি চিকিৎসাকালে প্রয়োজনের তাগিদে দূরে কোন স্থানে গমন করে পরবর্তীতে আবার চিকিৎসা নেন, তাহলে চিকিৎসকের জন্য চিকিৎসা করতে সুবিধা হয়।

ঔষধ সেবনের পর রোগীর দেহে প্রকাশিত লক্ষণসমূহ যেগুলো দূরীভূত হয়েছে সেগুলো রোগীলিপি হতে কেটে দিয়ে অবশিষ্ট লক্ষণাবলী সংগ্রহ করে পরবর্তীতে পরিপূরক/ অনুপূরক এর প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীতে আদর্শ আরোগ্য করা সম্ভব। রোগারোগ্যের পর যদি রোগী আবার অসুস্থ হয় তখন চিকিৎসা প্রদানে সুবিধা হয়।

ব্যবস্থাপত্র (Prescription)

১। প্রশ্ন: ব্যবস্থাপত্র কাকে বলে? ব্যবস্থাপত্রের কয়টি অংশ ও কি কি?

ব্যবস্থাপত্র (Prescription):

চিকিৎসক রোগীর নিজের বর্ণনা, আপনজনের বর্ণনা, সেবাকারীর বর্ণনা হতে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণসমষ্টি ও এ লক্ষণগুলোর কারণের গুরুত্ব অনুসারে এবং চিকিৎসক স্বয়ং রোগীর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করে রোগের বিষয় অবগত হয়ে রোগীর আরোগ্য উপযোগী মনে করে রোগীলিপি অনুযায়ী যে সদৃশতম ঔষধ নির্বাচন করে সেবন করার জন্য লিখিত নির্দেশ প্রদান করেন, তাকেই ব্যবস্থাপত্র বলে।

ব্যবস্থাপত্রের অংশ: ব্যবস্থাপত্রের অংশ ৪টি। যথাঃ

(i) সুপারস্ক্রিপশন (Superscription),

(ii) ইন্সক্রিপশন (Inscription),

(iii) সাবস্ক্রিপশন (Subscription),

(iv) সিগনেচার (Signature)।

(i) সুপারস্ক্রিপশন (Superscription): ইহাতে রোগীর নাম, বয়স, ঠিকানা প্রভৃতি উল্লেখ থাকে। এ অংশে ব্যবস্থাপত্র লেখার সময়ে প্রথমে Rx লেখা হয়।

(ii) ইন্সক্রিপশন (Inscription): ব্যবস্থাপত্রের এ অংশে ঔষধের নাম, শক্তি ও পরিমাণ এবং ভেষজবহের নাম ও পরিমাণ উল্লেখ করা থাকে।

(iii) সাবস্ক্রিপশন (Subscription): সাবস্ক্রিপশন অংশে কম্পাউন্ডারকে নির্দেশ প্রদান করা হয়, যাতে কম্পাউন্ডার নির্দেশ মোতাবেক ঔষধ তৈরী করবে।

(iv) সিগনেচার (Signature): সিগনেচার অংশে রোগীর প্রতি নির্দেশ থাকে কখন ঔষধ সেবন করতে হবে। কি পরিমাণে সেবন করতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে কতদিন পর রোগীকে দেখা করতে হবে প্রভৃতির নির্দেশ থাকে। পরে চিকিৎসকের স্বাক্ষরসহ রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ও তারিখ লিখা হয়।

২। প্রশ্নঃ একটি ব্যবস্থাপত্রের নমুনা লিখ।

একটি ব্যবস্থাপত্রের নমুনা নিম্নরূপঃ/

সুপারস্ক্রিপশন

রোগীর নাম….. …. বয়স…….. পুরুষ/মহিলা……

ঠিকানা…..

..ধর্ম/ বৈবাহিক

অবস্থা:………

Rx

ইন্সক্রিপশন

গ্রাফাইটিস ২০০ শক্তি ১ ফোঁটা ১ আউন্স ডিস্টিল ওয়াটার

সাবস্ক্রিপশন

১ ফোঁটা ২০০ শক্তির গ্রাফাইটিস ১ আউন্স ডিষ্টিল ওয়াটার এর সাথে মিশ্রিত করে ৬ দাগ করে দাও।

সিগনেচার

প্রতিদিন সকালে খাওয়ার আগে সেবন করবে। ৭ দিন পর পুনরায় দেখা করতে হবে।

স্বাক্ষরঃ

রেজি নং-

তারিখঃ

৩। প্রশ্নঃ দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র সম্পর্কে আলোচনা কর। বা দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র বলতে কি বুঝ? ১০

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র সম্পর্কে বর্ণনাঃ

প্রথম ব্যবস্থাপত্র করার পর রোগীর লক্ষণগুলোর ভিতরে যে সব পরিবর্তন পাওয়া যায়। উহার অবস্থা অনুসারে অবশিষ্ট লক্ষণসমষ্টি সাদৃশ্যে একটি ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু এ লক্ষণগুলোর সাথে যদি একাধিক ঔষধের আংশিক সাদৃশ্য থাকে, তবে রোগীর লক্ষণ সমষ্টি ও অসুস্থতার কারণে প্রাধান্য অনুসারে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বা অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণসমষ্টির সাথে যে ঔষধের লক্ষণের বেশি সাদৃশ আছে, তা প্রয়োগ করতে হবে। অথবা ঐ লক্ষণসমষ্টি যদি প্রথম ব্যবস্থাপত্রের সময় ব্যবহারিত ঔষধের লক্ষণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়, তবে ঐ ঔষধকেই উচ্চতর শক্তি ও পরিবর্তিত সূক্ষ্মমাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে অবস্থা বিশেষে ঔষধের শক্তি ও মাত্রার পরিবর্তন ঘটিয়ে ও লক্ষণ সাদৃশ্যে এক সময় একটা করে ঔষধ প্রয়োগ করে রোগীকে সামগ্রীকভাবে আরোগ্য করতে হবে। রোগীকে প্রথম ব্যবস্থাপত্র করার পর এইভাবে দ্বিতীয় বা পরবর্তী সময়ে ঔষধের শক্তি ও মাত্রার ভিতর পরিবর্তন করে প্রয়োগ করা বা পরবর্তী উপযোগী প্রয়োগ করাকে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র (Second Prescription) বলে।

প্রশ্নঃ দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র কি? দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে রোগীলিপির ভূমিকা কি? বা, দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে রোগীলিপির ভূমিকা কি? ০৮, ১২

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র (Second Prescription) হল রোগীকে প্রথম চিকিৎসা দেওয়ার পর, তার উন্নতি বা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিবর্তন বা পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার প্রক্রিয়া। এটি মূলত প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পরবর্তী পর্ব, যেখানে রোগীর শারীরিক, মানসিক এবং অন্য লক্ষণগুলোর পরিবর্তন অনুযায়ী নতুন ঔষধ বা চিকিৎসার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

রোগীকে প্রথম ব্যবস্থাপত্র প্রদন করার পর তাঁর সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দ্বিতীয় বা পরবর্তী সময়ে ঔষধের শক্তি ও মাত্রার ভিতর পরিবর্তন করে প্রয়োগ করা বা পরবর্তী উপযোগী ঔষধ প্রয়োগ করার জন্য লিখিত পত্রকে, দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র (Second Prescription) বলে।

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজনীয়তা:

  1. রোগীর উন্নতি মূল্যায়ন:
    প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর রোগীর অবস্থার মূল্যায়ন করার জন্য দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। যদি রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে, তবে ঔষধের ডোজ কমিয়ে বা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।

  2. চিকিৎসায় সঠিক পরিবর্তন করা:
    প্রথম ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে কিছু লক্ষণ পরিবর্তিত হতে পারে বা নতুন লক্ষণ দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে এসব পরিবর্তন অনুযায়ী চিকিৎসা সামঞ্জস্য করা হয়।

  3. অধিক বা নতুন লক্ষণের ভিত্তিতে ঔষধ নির্বাচন:
    রোগী পরীক্ষার পর নতুন লক্ষণ দেখা দিলে, দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে সেই অনুযায়ী সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করা হয়।

  4. রোগের গুরুতরতা ও অগ্রগতি নির্ধারণ:
    প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর রোগী কেমন অগ্রগতি করেছে, এবং কি ধরনের সমস্যা বা জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে সঠিকভাবে নির্ধারণ করা হয়।

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে রোগীলিপির ভূমিকা:

রোগীলিপি (Case Record) দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি চিকিৎসকের জন্য রোগীর সমস্ত ইতিহাস এবং পূর্ববর্তী লক্ষণগুলির একটি পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড প্রদান করে। এর মাধ্যমে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে কী ধরনের পরিবর্তন করতে হবে এবং ঔষধের ডোজ বা প্রকৃতি কিভাবে সংশোধন করতে হবে, তা নির্ধারণ করা যায়।

  1. রোগীর পূর্ববর্তী চিকিৎসা এবং অবস্থার তথ্য: রোগীলিপিতে রোগীর আগের চিকিৎসা, ব্যবস্থাপত্রের ফলাফল এবং বর্তমান অবস্থার সঠিক তথ্য থাকে, যা দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র তৈরিতে সহায়তা করে।

  2. নতুন লক্ষণ ও পরিবর্তনের তথ্য: রোগীলিপিতে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর রোগীর নতুন লক্ষণ বা কোনো পরিবর্তন দেখা গেলে তা সঠিকভাবে নথিভুক্ত থাকে, যা দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে সাহায্য করে।

  3. ঔষধের প্রভাব বিশ্লেষণ: প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধের প্রভাব কেমন ছিল তা রোগীলিপিতে বিশ্লেষণ করা থাকে, এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী ঔষধ বা চিকিৎসা পরিবর্তন করা হয়।

  4. বিকল্প চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ: রোগীলিপি চিকিৎসকের কাছে রোগীর সঠিক অবস্থা ও লক্ষণ সরবরাহ করে, যার মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে যদি ঔষধে পরিবর্তন বা নতুন ব্যবস্থা প্রয়োজন হয়, তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায়।

সার্বিকভাবে, দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র রোগীর চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, এবং রোগীলিপি চিকিৎসকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স যা তাকে রোগীর অবস্থার অবস্থা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ এবং ঔষধের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে সহায়তা করে।

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে রোগীলিপির ভূমিকা: রোগীর চিকিৎসার পূর্বশর্ত হচ্ছে রোগীলিপি প্রস্তুতকরণ। রোগীলিপি ছাড়া রোগীর প্রকৃত রোগচিত্র অংকন করা সম্ভব নয়। হোমিওপ্যাথি মানে সদৃশ বিধান আর সদৃশ বিধানে রোগীর রোগ লক্ষণের সাথে সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষিত ঔষধের গ্রন্থ মেটেরিয়া মেডিকার মধ্যে লিপিবদ্ধ ঔষধের তালিকা হতে সর্বাধিক সদৃশ একটি ঔষধ নির্বাচন করে রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিতে হবে। রোগীলিপি রোগীর সদৃশ, একক ঔষধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত। রোগীলিপি এছাড়া রোগীর আদর্শ আরোগ্য সম্ভব নয়। রোগীলিপি নিয়ে রোগীর লক্ষণসমষ্টি সাহায্যে একটি অধিক সদৃশ ঔষধ নির্বাচন করতে হয়।

প্রথম ব্যবস্থাপত্র দেয়ার পর রোগীর পরবর্তীতে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজন হলে তখন ডাক্তার রোগীলিপি দেখে তাঁর কোন কোন লক্ষণাবলী দুরীভূত হয়েছে বা বৃদ্ধি পেয়েছে তার উপর নির্ভর করে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করবেন। এই ক্ষেত্রে রোগীলিপি প্রস্তুত করা থাকলে তা দেখে সহজেই পরবর্তী ঔষধ প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। সুতরাং দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রে রোগীলিপির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

৫। প্রশ্নঃ কখন এবং কেন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হয়?

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান সময় ও কারণ:

প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ক্রিয়া পর্যবেক্ষণে যখন রোগীর অবস্থার পরিবর্তন লক্ষিত হয় তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হয়।

দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র পরিপূরক হিসাবে প্রদান করা যেতে পারে। প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর দেখা গেল যে ধীরে ধীরে রোগীর অবস্থা ক্রমাগত উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এরূপ উন্নতি বেশ কিছুদিন চলার পর আর কোন ক্রমোন্নতি অথবা কোন অবনতি পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু প্রথম ব্যবস্থাপত্রে ঔষধের লক্ষণাবলী তখনও বর্তমান আছে। দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পুনঃমূল্যায়ন হিসাবে প্রদান করা হয়। আবার যদি প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধের লক্ষণাবলী বর্তমান না থাকে, অন্য কোন একটি ঔষধের লক্ষণাবলীর সদৃশ হয়, তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পরিপূরক হিসাবে প্রদান করা হয়। যখন প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর রোগীর অবস্থা ক্রমাগত উন্নতির দিকে না গিয়ে ক্রমাগত অবনতির দিকে যায়, তখন দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র প্রথম ব্যবস্থাপত্রের প্রতিষেধক হিসাবে গণ্য হয়। এভাবে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের ঔষধ প্রয়োগের পর রোগীর লক্ষণের অবস্থা উপলদ্ধি করে, রোগীর অবস্থা বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিটি লক্ষণের সুচিন্তিত বিশ্লেষণ দ্বারা আমরা দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র সম্বন্ধে একটি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি। এভাবে প্রথম ব্যবস্থাপত্রের পর দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্রের দ্বারা ঔষধ নির্বাচনে যুক্তিপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করে রোগীকে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে আরোগ্যের পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করে, কখনও বিপথে যায় না।

৬। প্রশ্নঃ কি ভাবে বুঝবে যে ব্যবস্থাপত্র ভুল হয়েছে?

ব্যবস্থাপত্র ভুল হয়েছে তা নির্ধারণ উপায়:

ব্যবস্থাপত্র ভুল হয়েছে কিনা তা রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি দেখে বুঝতে পারা যায়। তরুণ বা পুরাতন রোগের ঔষধ প্রয়োগের পর অনেক সময় রোগীরা তাদের রোগের সামান্য হ্রাস বা বৃদ্ধির কথা জানায়। কিন্তু ঐ সামান্য হ্রাস বা বৃদ্ধির কথা সকলে হয়ত লক্ষ্য নাও করতে পারে এ ক্ষেত্রে রোগীর মানসিক ও সর্বাঙ্গীন অবস্থা দ্বারা ঔষধের প্রকৃত ক্রিয়া বুঝতে পারা যায়। রোগের সামান্য বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগী আক্রান্ত বিমর্ষ ও নিরাশ হয়ে পড়ে এবং তার ভাবভঙ্গি ও ক্রিয়া কলাপ দ্বারাই বুঝতে পারা যায় বা প্রকাশ হয়ে পড়ে যে রোগীর রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তখন তার মানসিক যন্ত্রণাগুলি, বাক্য দ্বারা প্রকাশ করা না গেলেও রোগীকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করলেই বেশ বুঝতে পারা যায় যে তার রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে ইহা হতেই চিকিৎসক বুঝতে পারেন যে অনুপোযুক্ত ঔষধ প্রদত্ত হয়েছে অর্থাৎ ব্যবস্থাপত্র ভুল হয়েছে।

৭। প্রশ্নঃ ব্যবস্থাপত্র লিখার সময় একজন চিকিৎসককে কি কি বিষয়ের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়?

ব্যবস্থাপত্র লিখার সময় একজন চিকিৎসককে নিম্নলিখিত বিষয়ের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়:

(1) ডাঃ হ্যানিম্যানের মতে রোগীর ব্যবস্থাপত্র সহজ ও রোগীর ভাষায় করতে হবে।

(ii) রোগীর ব্যবস্থাপত্র কখনও জটিল ও অস্পষ্টভাবে লেখা উচিত হবে না।

(iii) চিকিৎসকে অবশ্যই ব্যবস্থাপত্রে উল্লেখিত ঔষধের নাম ও শক্তি স্পষ্টভাবে লিখতে হবে।

(iv) কম্পাউন্ডারকে সঠিকভাবে ঔষধ প্রস্তুতের নির্দেশনা থাকতে হবে।

(v) কোন ভেষজবহের সাথে ঔষধ মিশ্রিত বা সহযোগে ঔষধ রোগীর জন্য প্রস্তুত করবে তা সুস্পষ্টভাবে লিখতে হবে।

(vi) রোগী কিভাবে, কতবার, কোন সময় ঔষধ সেবন করবে তা নির্দিষ্টভাবে লিখতে হবে।

(vii) সিগনেচার এর চিকিৎসকের স্বাক্ষর, রেজিস্ট্রেশন নং ও তারিখ দিতে হবে।

প্রশ্নঃ ব্যবস্থাপত্র ভুল হলে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? বা, ব্যবস্থাপত্র ভুল হলে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত? ০৮, ০৯

ব্যবস্থাপত্র ভুল হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণঃ

(i) চিকিৎসক যদি বুঝতে পারেন তাঁর ব্যবস্থাপত্র ভুল হয়েছে তখন তিনি সাথে সাথে ব্যবস্থাপত্রে প্রদেয় ঔষধের ক্রিয়ানাশক ঔষধ দিয়ে পূর্বের ঔষধের ক্রিয়া নষ্ট করতে হবে।

(ii) পরবর্তীতে দ্রুত রোগীলিপি পর্যালোচনা করে অধিক সদৃশ একটি ঔষধ সেবন করতে হবে।

(iii) নতুন ঔষধ সেবনের পর রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

(iv) রোগীর রোগ যন্ত্রণার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং তাঁর অবস্থার উপর নির্ভর করে ঔষধ দিতে হবে।

(v) রোগীকে দ্রুত আরোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।

লক্ষণ ও লক্ষণসমষ্টি

১। প্রশ্ন লক্ষণ কাকে বলে? লক্ষণ কত প্রকার ও কি কি?

লক্ষণ (Symptoms):

ইংরেজি Symptoms শব্দটি Symptoms নামক গ্রীক শব্দ হতে উৎপন্ন হয়েছে যা বাংলায় ‘লক্ষণ’ লক্ষণ অর্থ হলো যা কিছু ঘটে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সুস্থ অবস্থার পরিবর্তন হিসেবে দেহ ও মনে যা কিছু ঘটে তাই ‘লক্ষণ’ অর্থাৎ লক্ষণ হলো স্বাস্থ্যের স্বাভাবিক অবস্থার বিকৃত পরিবর্তন যা রোগের পরিচয় বহন করে। 

রোগীর দেহে বা মনে যে সমস্ত পরিবর্তন দেখা দেয় এবং যা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে, তাকে লক্ষণ (Symptoms) বলা হয়। এটি রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বহিরাগত প্রকাশ।

লক্ষণ এমন একটি অবস্থা যা রোগী নিজে, তার পরিবারের লোকজন, সেবাকারী এবং চিকিৎসক স্বয়ং প্রত্যক্ষ করেন। লক্ষণ শুধুমাত্র রুগ্নাবস্থায় বহিঃপ্রকাশ বা রোগের নিদর্শনই নয় প্রতিকারক সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের ও অপরিসীম ভূমিকা রাখে। যেমন- আত্মহত্যার ইচ্ছা, গোসলে অনিচ্ছা, প্রবল পিপাসা, মাথা ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, হাত পায়ে জ্বালা ইত্যাদি।

লক্ষণের প্রকারভেদ:

লক্ষণের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে লক্ষণসমূহকে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:-

(i) ব্যক্তিনিষ্ঠ (Subjective Symptoms) লক্ষণ।

(ii) বস্তুনিষ্ঠ (Objective Symptoms) লক্ষণ।

ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ (ক) মানসিক লক্ষণ (খ) নির্দেশক লক্ষণ (গ) ধাতুগত লক্ষণ

বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথাঃ

(ক) চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ

(খ) ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

২। প্রশ্নঃ ব্যক্তিনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ কাকে বলে? বুঝিয়ে দাও।

ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ (Subjective Symptoms):

যে সকল লক্ষণ কেবলমাত্র রোগী নিজে অনুভব করে এবং বুঝতে পারে রোগী না বললে চিকিৎসক জানতে পারে না, সে লক্ষণসমূহকে ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ (Subjective Symptoms) বলে। যেমন বুকে প্রচন্ড চাপবোধ, ক্ষুদ্র সন্ধিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা, অরুচি, প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া ইত্যাদি। রোগীর নিজস্ব অভিব্যক্তিই হলো ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ।

বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ (Subjective Symptoms):

যে সকল লক্ষণ রোগী না বললেও রোগীর আত্মীয়-স্বজন দেখে বুঝতে পারে চিকিৎসক তার পঞ্চ ইন্দ্রিয় শক্তি ও যন্ত্রের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারে, সে লক্ষণসমূহকে বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ (Objective Symptoms) বলে। যেমন-ঘর্মস্রাব, শ্বাসকষ্ট, অস্থিরতা ইত্যাদি।

ঔষধ প্রুভিং এর সময় বিভিন্ন প্রভারের কিংবা রুগ্ন অবস্থায় রোগীর শরীরে ও মনে বাহ্যিকভাবে কতকগুলো শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ ও চিহ্ন প্রকাশ পায়, তা তাদের পরিচর্যাকারী বা আপনজন ও পর্যবেক্ষণকারী, প্রভার বা চিকিৎসক নিজে খালি চোখে দেখে ও অন্যান্য অনুসন্ধান এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারেন। ঐ লক্ষণ বা চিহ্নগুলোকে বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ বলে।

যেমন- শ্বাসকষ্ট, অস্থিরতা, প্রলাপ ইত্যাদি।

৩। প্রশ্নঃ ব্যক্তিনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য দেখাও। ১০ ব্যক্তিনিষ্ঠ ও বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ

ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ

রোগী স্বয়ং নিজে রোগ সম্বন্ধে ১ যে কষ্টকর ‘অবস্থার কথা বর্ণনা করেন, তাকে ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ বলে।

ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ তিন প্রকার। ২ যথা- মানসিক লক্ষণ, নির্দেশক লক্ষণ ও ধাতুগত লক্ষণ।

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ৩ ক্ষেত্রে ইহার গুরুত সর্বাধিক।

ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণ শুধুমাত্র রোগী ৪ নিজে অনুভব করতে পারে। রোগী না বললে চিকিৎসক বুঝতে পরে না।

উদাহরণ: দীর্ঘদিনের তীক্ষ্ম ৫ সূচফোটাবৎ মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা।

বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ

রোগারোগ্য তথা সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের জন্য চিকিৎসক রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে যে লক্ষণ নির্ণয় করেন, তাকে বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ বলে।

বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ দুই প্রকার। যথা- চিকিৎকের পর্যবেক্ষণ ও ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা- নিরীক্ষা।

ব্যক্তিনিষ্ঠ লক্ষণের পরে ইহার অবস্থান।

বস্তুনিষ্ঠ লক্ষণ রোগী না বললেও চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। বুঝতে পারেন।

উদাহরণঃ লালবর্ণের ফোঁড়া, লালবর্ণের উদ্ভেদ ইত্যাদি।

প্রশ্ন: লক্ষণসমষ্টি বলতে কি বুঝ? বর্ণনা কর। ০৮, ১০

লক্ষণসমষ্টি (Totality of Symptoms):

লক্ষণ রোগীর নিজের বর্ণনার মাধ্যমে, তার আপনজনদের নিকট হতে এবং চিকিৎসক নিজে দর্শন, শ্রবণ ও স্পর্শন এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণ করে জানতে পারেন। এই জন্যে রোগীর দৈহিক কাঠামো, মুখ ভংগিমা, বেশভূষা, বর্তমান কষ্টের কারণ, কষ্টকর অবস্থার অবস্থান, প্রকৃতি, হ্রাস-বৃদ্ধি ও আনুসঙ্গিক অবস্থা, অতীত কষ্ট, বংশগত ও পারিবারিক ইতিহাস, নৈতিক জীবন, দাম্পত্য জীবন, বাসস্থান, মনমেজাজ, দৈহিক সর্বাঙ্গিন ও আঙ্গিক অবস্থা এবং দেহের নিঃসৃত স্রাবাদি সর্ম্পকে অনুসন্ধান করতে হয়। এরূপ অনুসন্ধানের মাধ্যমে রোগীর শরীর ও মনের ভিতরের অস্বাভাবিক পরিবর্তন যা স্বাস্থ্যাবস্থার বিচ্যুতি অর্থাৎ অস্বাভাবিক অনুভূতি। কাজকর্ম ও গঠনাকৃতি সর্ম্পকে জানতে পারা যায়। এগুলোর প্রত্যেকটাকে এক একটা লক্ষণ বলে এবং এগুলোর সমষ্টিকে লক্ষণসমষ্টি (Totality of Symptoms) বলে।

অথবা,

রোগশক্তির গতিশীল প্রভাব যখন জীবনীশক্তির উপর পড়ে ঐ অবস্থায় যদি জীবনীশক্তির ভিতরে রোগ প্রবণতা থাকে তবে ঐ  রোগশক্তির প্রভাবে জীবনীশক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে ইতিপূর্বে জীবনীশক্তির মাধ্যমে শরীর ও মনের যে স্বাভাবিক অনুভূতি, কাজ কর্ম ও গঠনাকৃতি অব্যাহত ছিল, ইহার পরিবর্তে কতকগুলো অস্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থা প্রকাশ পায়। এ প্রকাশিত লক্ষণাবলীর সমষ্টিকে লক্ষণ সমষ্টি (Totality of Symptoms) বলে।

৫। প্রশ্নঃ অদ্ভূত লক্ষণ কাকে বলে? “অদ্ভূত লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করলে সাফল্য অনিবার্য” ব্যাখ্যা কর। ১০

অদ্ভূত লক্ষণ (Peculiar symptom):

যে সব অদ্ভুত অবস্থা রোগীর মধ্যে বর্তমান এবং ঔষধের বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে, তাকে অদ্ভূত লক্ষণ (Peculiar symptom) বলে। যেমন- বুক ধড়ফড়ানি, তাড়াতাড়ি হাটলে উপশম-আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম ও সিপিয়া ইত্যাদি।

“অদ্ভূত লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করলে সাফল্য অনিবার্য

“- ব্যাখ্যাঃ

বিজ্ঞানী ডাঃ হ্যানিম্যান “অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থের ১৫৩ ও ১৫৪ নং অনুচ্ছেদের ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

তাঁর মতে, সদৃশ বিধান সম্মত ঔষধের এ অনুসন্ধানে অর্থাৎ প্রকৃতিক লক্ষণ সমষ্টির সহিত পরিচিত ঔষধসমূহের লক্ষণগুলির তালিকার তুলনা দ্বারা যে রোগ আরোগ্য করতে হবে তার সদৃশ একটি কৃত্রিম রোগোৎপাদিকা শক্তি বাহির করার জন্য রোগের অপেক্ষাকৃত বিস্ময়কর, সুস্পষ্ট দৃষ্টি আকর্ষক, একক, অসাধারণ, অদ্ভূত, বিশেষ পরিচায়ক বিরল লক্ষণের মূল্যই সর্বাধিক। চিকিৎসাশাস্ত্রানুসারে, যে সকল লক্ষণের কোন ব্যাখ্যা করা যায় না, চিকিৎসকের কাছে অদ্ভুত মনে হয়, বিস্ময়ের সৃষ্টি করে তারাই অসাধারণ সক্ষণ, আর এ জাতীয় লক্ষণই ঔষধ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশী মূল্যবান। কোন রোগের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ঔষধ বলে স্থিরকৃত ঔষধের লক্ষণসমূহ হতে, রোগের অনুরূপ যে চিত্র প্রস্তুত হয়, তার মধ্যে যদি ঐ রোগের বিশেষ, অসাধারণ অদ্ভূত ও পরিচায়ক লক্ষণগুলি অধিকতর সংখ্যায় এবং অধিকতর সাদৃশ্যসহ বর্তমান থাকে, তবেই সে ঔষধেই ঐ রোগের মহৌষধ।

অতএব, উপরিউক্ত আলোচনা হতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, সুষ্পষ্ট দৃষ্টি আকর্ষক, অসাধারণ, অদ্ভুত, বিরল প্রকৃতির পরিচায়ক লক্ষণের প্রয়োজনীয়তা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে সুদূরপ্রসারী। সুতরাং ইহার গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রশ্নঃ একটি অদ্ভূত লক্ষণের গুরুত্ব উদাহারণসহ লিখ। ১২, ১৫

একটি অদ্ভুত লক্ষণের গুরুত্ব উদাহারণসহঃ

যে সব লক্ষণ ঔষধ বা রোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অপেক্ষা ব্যতিক্রমধর্মী বা যা অদ্ভুত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক, যা দৃষ্টি আকর্ষনীয় বা সুস্পষ্ট বা একটা মাত্র লক্ষণ একটা ঔষধকে নির্দেশ করে এ ধরনের লক্ষণকে সামগ্রিকভাবে, অদ্ভূত বা অসাধারণ লক্ষণ বলে। যেমন- বুক ধড়ফড়ানি, তাড়াতাড়ি হাঁটলে উপশম- আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম ও সিপিয়া ইত্যাদি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত অংশে জ্বর ও তাপ আছে কিন্তু অন্য অংশে জ্বর নাই ইহা একটি অদ্ভুত লক্ষণ। ডাঃ হানিম্যান ‘অর্গানন অব মেডিসিন’ গ্রন্থের ১৫৩ নং অনুচ্ছেদে উক্ত লক্ষণ সম্বন্ধে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

৭। প্রশ্নঃ প্রেসক্রাইবিং লক্ষণ কাকে বলে?

প্রেসক্রাইবিং লক্ষণ:

যে সকল লক্ষণ ঔষধ নির্বাচনে সর্বোত্তম পথ প্রদর্শক, তাদেরকে প্রেসক্রাইবিং লক্ষণ বলে। যেমন- জিহ্বা শুদ্ধতা সত্ত্বেও পানি পানের পিপাসা অনিচ্ছা- এটি পালসেটিলা ঔষধকে নির্দেশ করে। মুখে প্রচুর লালা স্রাব সত্ত্বেও প্রচুর পানি পিপাসা- এটি মার্কিউরিয়াস-সল ঔষধকে নির্দেশ করে। উত্তাপে জ্বালাবোধের উপশম- এটি আর্সেনিক এলবাম ঔষধকে নির্দেশ করে। অদ্ভুত, অসাধারণ ও বিরল লক্ষণ প্রেসক্রাবিং লক্ষণের অন্তর্ভুক্ত।

৮। প্রশ্নঃ ব্যাপক লক্ষণ কি? রোগ নির্ণয়ে ইহার গুরুত্ব কি?

ব্যাপক লক্ষণ (General Symptoms) : যে লক্ষণগুলি রোগীর

সর্ম্পকে সামগ্রীকভাবে বা সর্বতোভাবে প্রযোজ্য এবং যে সকল লক্ষণের বর্ণনাকালে রোগী আমি শব্দটি উচ্চারণ করে বা আমি সত্ত্বাকে নির্দেশ করে, সেগুলিকে সর্বাঙ্গিন বা ব্যাপক লক্ষণ বলে।

রোগ নির্ণয়ে ব্যাপক লক্ষণের গুরুত্ব। রোগীর সম্পর্কে সামগ্রীকভাবে বা সর্বতোভাবে প্রযোজ্য এবং যে সকল লক্ষণের বর্ণনাকালে রোগী আমি শব্দটি উচ্চারণ লক্ষণ অর্থে ব্যবহার করেছেন। ডাঃ কেন্ট এ লক্ষণের গুরুত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। ডাঃ গার্থ বোরিক এটাকে নির্ধারণ লক্ষণের শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত করেছেন। ব্যাপক লক্ষণকে মূল্যমানের গুরুত্বের ক্রম অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

(1) মানসিক ব্যাপক বা সর্বাঙ্গিন লক্ষণ (Mental General Symptoms) যেমন: ভালবাসা, ঘৃনা, ভাবাবেগ, ভয়, লোপ, ‘প্রলাপ, মানসিক বিভ্রান্তি, সময় জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি।

(ⅱ) দৈহিক ব্যাপক বা সর্বাঙ্গিন লক্ষণ (Physical General Symptoms) যেমন- খাদ্যদ্রব্যের ইচ্ছা ও অনিচ্ছা, ক্ষুধা ও পিপাসা, শীতে গরমে, বাতাসে, স্থানে, অমাবস্যায়, ডানে বামে উর্ধ্বাঙ্গে, যৌন বিষয়ে ইত্যাদি।

রোগী ব্যক্তি মানুষের পরিচয় তুলে ধরে বলে চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক লক্ষণের গুরুত্ব সর্বাধিক। ইহার মাধ্যমে রোগীর মানসিক ও শারীরিক লক্ষণের বিকাশ ঘটে অর্থাৎ রোগীর প্রকৃত রোগচির সংগ্রহে চিকিৎসককে সঠিক ও নির্ভুল ঔষধ নির্বাচনে সাহায্য করে। ব্যাপক লক্ষণের মধ্যে মানসিক লক্ষণসমূহের মূলই সর্বাধিক এবং কেবলমাত্র সুস্পষ্ট মানসিক লক্ষণ দ্বারাই রোগীর জন্য ঔষধ নির্বাচিত হয়।

সুতরাং ব্যাপক লক্ষণের গুরুত্ব সদৃশ বিধান মতে রোগী চিকিৎসা ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী।

প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় লক্ষণের গুরুত্ব উল্লেখ কর।১৭

হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণের গুরুত্ব নিম্নে উল্লেখ করা হল:

(1) লক্ষণ রোগশক্তির বা রোগাক্রান্ত জীবনীশক্তির স্বরূপ প্রকাশ করে। এ জন্যে হোমিওপ্যাথিতে রোগীর লক্ষণসমষ্টিকে রোগ বলা হয়।

(ii) হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণকে রোগের ভাষা বলা হয়। কারণ, এগুলো বিশ্লেষণ করে রোগী ও তার রোগের বৈশিষ্ট্য বুঝা যায়।

(iii) লক্ষণের দ্বারা রোগীর মুখ-ভঙ্গিমা, বেশ-ভূষা, মানসিক, দৈহিক, সর্বাঙ্গিন, আঙ্গিক অবস্থা ইত্যাদি জানা যায়।

(iv) অসাধারণ, অদ্ভুত, একক বিরল ও দৃষ্টি আকর্ষনীয় লক্ষণ প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, ইহা দ্বারা বিভিন্ন রোগী ও ঔষধের সত্ত্বার ভিতরের পার্থক্য নির্ণয় করা যায় এবং এর সহায়তায় অমোঘ অর্থাৎ সুনির্বাচিত ঔষধ নির্বাচন করা যায়।

(v) একইভাবে লক্ষণ ঔষধের ভাষা। ইহা দ্বারা রোগের অনুরূপ ঔষধের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকেও জানা যায়।

(vi) রোগীর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণগুলোর সদৃশ বৈশিষ্ট্যের আরোগ্যকারী ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগীর লক্ষণগুলো দূর হয় এবং তার পূর্বস্বাস্থ্য স্থায়ীভাবে ফিরে আসে।

(vii) চিকিৎসাকালে রোগীর লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করে ঔষধজনিত বৃদ্ধি, রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি ও আরোগ্যের গতি-প্রকৃতি উপলদ্ধি করে চিকিৎসক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্ধারণ করতে পারেন।

সুতরাং লক্ষণ হল রোগীর অসুস্থতা নির্ধারণের একমাত্র পথপ্রদর্শক।

প্রশ্নঃ প্রকৃত লক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর। বা, একটি পূর্ণাঙ্গ লক্ষণের উপাদানগুলো কি কি? বর্ণনা কর। ০৮, ১০

লক্ষণের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Symptoms)

প্রত্যেকটা পূর্ণাঙ্গ লক্ষণের ছয়টি বৈশিষ্ট আছে। যথাঃ

(i) কারণ (Causes): প্রত্যেক লক্ষণ কিংবা রোগে সৃষ্টির পিছনে কতকগুলো কারণ থাকে। যেমন: আকস্মিক দূর্ঘটনা ও আঘাতাদি, অমিতাচার, অনাহার, পার্থিব পরিবর্তন, অতিরিক্ত রাত্রি জাগরণ ইত্যাদি উত্তেজক ও পরিপোষক অবস্থা, অসদৃশ বিসদৃশ ঔষধ ও বিভিন্ন প্রকার অস্থায়ী মায়াজম এবং স্থায়ী মায়াজম অর্থাৎ সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস লক্ষণের বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ে ও ঔষধ নির্বাচনের জন্যে “কারণ” একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

(ii) অবস্থান (Locations): হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিতে বিভিন্ন রোগশক্তি ও ঔষধের ক্রিয়া জীবনীশক্তি তথা সামগ্রিকভাবে শরীর ও মনের সমস্ত অংশের সাথে সম্বন্ধযুক্ত থাকে। এগুলোর প্রত্যেকের প্রধান ক্রিয়াক্ষেত্র বা অবস্থান থাকে। নির্দিষ্ট প্রধান অবস্থানে যেমন এগুলো প্রকাশ পায়, তেমনি সেখান থেকে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিস্তৃতও হয়ে থাকে। যেমন:- একোনাইট ন্যাপের ক্রিয়াক্ষেত্র মন, মস্তিষ্ক, স্নায়ু, হৃৎপিন্ড, শিরা, রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া, অভ্যন্তরীণ তন্ত্রাদি ও বক্ষদেশ।

(iii) প্রকৃতি (Nature): বিভিন্ন রোগী বা ঔষধের লক্ষণগুলো বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়া, অবস্থা, আকার বা গঠনের পরিবর্তন প্রকাশ করে থাকে এগুলোকে লক্ষণের প্রকৃতি বলে। ইহা লক্ষণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। যেমন- (ক) মুখমন্ডলে ঘর্ম- বেলেডোনা, ক্যাক্ষর, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, কার্ব- ভেজ ইত্যাদি। (খ) শুষ্ককাশি বেলেডোনা, ব্রায়োনিয়া।

(iv) অনুভূতি (Sensations): বিভিন্ন রোগীর বা ঔষধের বিভিন্ন ধরনের অনুভূতিমূলক লক্ষণ আছে, যা সেগুলোর বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট নির্দেশ করে। যেমন: (ক) জ্বালাকর ব্যথা-আর্সেনিক, (খ) শীতলতা-ক্যাক্ষর ও ভিরেট্রাম, (গ) ক্ষততাবোধ-আর্নিকা, হ্যামামেলিস

(v) হ্রাস বৃদ্ধি (Modalities): প্রত্যেক রোগী ও ঔষধের কোন লক্ষণ বা লক্ষণসমষ্টি কোন সময়ে ও কোন অবস্থায় হ্রাস বৃদ্ধি হয়, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরণের অবস্থা রোগারোগ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রকাশ করে। ইহা দুই প্রকার। যথা-

ক) সর্বাঙ্গিন হ্রাস-বৃদ্ধি (Modalities in general): ইহা দ্বারা রোগীর ও ঔষধের ব্যক্তিভিত্তিক বা সত্ত্বাভিত্তিক সামগ্রিক হ্রাস-বৃদ্ধি বুঝায়।

যেমন- ১) সকাল ১০টায় বৃদ্ধি- নেট্রাম-মিউর, ২) গরম দুধে উপশম – চেলিডোনিয়াম মেজাজ।

খ) আঙ্গিক হ্রাস-বৃদ্ধি (Modalities in particular): ইহার দ্বারা রোগীর ও ঔষধের কোন আঙ্গিক বা আংশিক অবস্থার হ্রাস বৃদ্ধি বুঝায়। যেমন: ১) মোটর গাড়িতে চড়লে মাথার ব্যথা উপশম-নাইট্রিক এসিড। ২) কাশি চিৎ হয়ে শুলে উপশম- একোনাইট ন্যাপ, লাইকোপডিয়াম। ৩) মাসিক ঋতুস্রাব কেবল রাতে বৃদ্ধি- বোভিষ্টা।

(vi) আনুসঙ্গিক বা সহচর অবস্থা (Concomitants):

কোন মূল লক্ষণের পূর্বে সময়ে ও পরে একই সাথে, একই সময়ে বা পর্যায়ক্রমে ও সহযোগীভাবে যেসব মানসিক ও শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ পায়, উহাকে আনুসঙ্গিক বা সহচর অবস্থা বলে ইহা কোন রোগী ঔষধের লক্ষণের প্রকৃতি উপলব্ধি করতে সহযোগিতা করে। যেমন: (i) রক্ত স্রাবের পর প্রলাপ- চায়না, ল্যাকেসিস (ii) মাসিকের পূর্বে আক্ষেপ- বিউকো, কষ্টিকাম, কুপ্রাম মেটালিকাম ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ লক্ষণের উপাদানগুলো লিখ। ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণের মূল্য বর্ণনা কর। ২০১০, ১২, ১৫, ১৮ বা, একটি পূর্ণাঙ্গ লক্ষণের উপাদানগুলো কি কি? ২০০৮, ১০

একটি পূর্ণাঙ্গ লক্ষণের উপাদানসমূহ: প্রত্যেকটা পূর্ণাঙ্গ লক্ষণের ছয়টি উপাদান আছে। যথাঃ

(ii) অবস্থান (Locations)

(1) কারণ (Causes) (iii) প্রকৃতি (Nature)

(iv) অনুভূতি (Sensations)

(v) হ্রাস বৃদ্ধি (Modalities)

ক) সর্বাঙ্গিন হ্রাস-বৃদ্ধি ও খ) আঙ্গিক হ্রাস-বৃদ্ধি

(vi) আনুসঙ্গিক বা সহচর অবস্থা (Concomitants)

ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণের মূল্য বর্ণনা:

(1) লক্ষণ রোগশক্তির বা রোগাক্রান্ত জীবনীশক্তির স্বরূপ প্রকাশ করে।

(ii) ইহা দ্বারা রোগকে চিনতে পারা যায়। এ জন্যে হোমিওপ্যাথিতে রোগীর লক্ষণের সমষ্টিকে রোগ বলে।

(iii) হোমিওপ্যাথিতে লক্ষণকে রোগের ভাষা বলা হয়। কারণ, এগুলো বিশ্লেষণ করে রোগী ও তার রোগের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায়।

(iv) লক্ষণের দ্বারা রোগীর মুখ-ভঙ্গিমা, বেশ-ভূষা, মানসিক, দৈহিক, সর্বাঙ্গিন, আঙ্গিক অবস্থা ইত্যাদি জানা যায়।

* (v) অসাধারণ, অদ্ভূত, একক বিরল ও দৃষ্টি আকর্ষনীয় লক্ষণ প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, ইহা দ্বারা বিভিন্ন রোগী ও. ঔষধের সত্ত্বার ভিতরের পার্থক্য নির্ণয় করা যায় এবং এর সহায়তায় অমোঘ অর্থাৎ সুনির্বাচিত ঔষধ নির্বাচন করা যায়।

(vi) সাধারণ লক্ষণ রোগের নামকরণ, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও প্রয়োজনীয় সতকর্তা অবলম্বন ও মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিতে সাহায্য করে।

(vii) একইভাবে লক্ষণ ঔষধের ভাষা। ইহা দ্বারা রোগের অনুরূপ ঔষধের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকেও জানা যায়।

(viii) রোগীর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণগুলো এর সদৃশ বৈশিষ্ট্যের আরোগ্যকারী ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগীর লক্ষণগুলো দূর হয় এবং তার পূর্বস্বাস্থ্য স্থায়ীভাবে আসে।

(ix) চিকিৎসাকালে রোগীর লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করে ঔষধজনিত বৃদ্ধি, রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি ও আরোগ্যের গতি-প্রকৃতি উপলদ্ধি করে চিকিৎসক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে দ্বিতীয় ব্যবস্থাপত্র নির্ধারণ করতে পারেন।

সুতরাং লক্ষণ হল রোগীর অসুস্থ্যতা ও সুস্থ্যতা নির্ধারণের একমাত্র পথপ্রদর্শক।

প্রশ্নঃ মূল্যমানের গুরুত্ব অনুসারে লক্ষণের শ্রেণী বিন্যাস কর। ০৯

মূল্যায়নের গুরুত্ব অনুসারে লক্ষণের শ্রেণীবিন্যাস:

লক্ষণ প্রথমত দুই ভাগ

১) শারীরিক লক্ষণ

২) মানসিক লক্ষণ

আবার ব্যক্তিনিষ্ট ও বস্তুনিষ্ট লক্ষণ।

লক্ষণ সমষ্টি

(ক) সর্বাঙ্গিন লক্ষণ

(খ) আঙ্গিক লক্ষণ

(ক) সর্বাঙ্গিন

(1) মানসিক লক্ষণ

(i) দৈহিক লক্ষণ

-অসাধারণ ও সাধারণ

(খ) আঙ্গিক

(i) অসাধারণ

(ii) সাধারণ

গ্রেডিং পদ্ধতিতে- ১ম শ্রেণী, ২য় শ্রেণী, ৩য় শ্রেণী, ৪র্থ শ্রেণী

প্রশ্নঃ ডাঃ হ্যানিম্যান কেন চরিত্রগত লক্ষণকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন? ২০০৮, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৮ বা, চরিত্রগত লক্ষণ বলতে কি বুঝ? উদাহরণসহ লিখ। ১৭

ডাঃ হ্যানিম্যান নিম্নলিখিত কারণে চরিত্রগত লক্ষণকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেনঃ

যে সকল লক্ষণ রোগের ও রোগীর বৈশিষ্ট্যসমূহকে অন্য রোগ ও রোগী থেকে স্বতন্ত্র করে তুলে এবং ঔষধের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক, তাদেরকে চরিত্রগত বা পরিচায়ক বা নির্দেশক লক্ষণ বলে।

প্রত্যেকটি রোগীর সকল লক্ষণই সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। চিকিৎসার জন্য প্রত্যেক চিকিৎসককে সেই ধরনের লক্ষণসমূহকে অধিক প্রয়োজন যেগুলি রোগের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি তুলে ধরে। রোগীর রোগীলিপি নিয়ে এবং ব্যক্তিগত পরীক্ষা দ্বারা যে সমস্ত লক্ষণ সংগ্রহ করা যায় তারমধ্যে যেগুলি অদ্ভূত, অসাধারণ, দৃষ্টি আকর্ষক, পার্থক্যসূচক বা বিরল প্রকৃতির লক্ষাবলীর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন- মুখে প্রচুর লালাস্রাব সত্ত্বেও প্রচন্ড পানির পিপাসা, উত্তাপে জ্বালাবোধের উপশম হওয়া, দেহে তীব্র জ্বালাবোধ থাকা সত্ত্বেও গায়ে আবরণ চাওয়া, চর্বনে দাঁত ব্যথা উপশম হওয়া, উদ্ভেদবিহীন চুলকানি, প্রচন্ড জ্বরে পিপাসাহীনতা ইত্যাদি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই ধরনের লক্ষণের গুরুত্ব অধিক, কারণ এই ধরণের লক্ষণ রোগ ও রোগীর বৈশিষ্ট্যসূচক এবং কোন না কোন ঔষধের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক। কোন রোগী তে কোন চরিত্রগত লক্ষণ না পাওয়া গেলে সেই রোগীকে আরোগ্য করা কষ্টকর।

উপরিউক্ত কারণে ডাঃ হ্যানিম্যান চরিত্রগত লক্ষণকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন।

১৪। প্রশ্নঃ ক্লিনিক্যাল বা আরোগ্য প্রাপ্ত লক্ষণ কাকে বলে?

ক্লিনিক্যাল বা আরোগ্য প্রাপ্ত লক্ষণ: চিকিৎসাধীন কোন রোগীকে কোন কোন অবস্থার জন্য কোন ঔষধ ব্যবস্থা করলে সেই ঔষধের পরীক্ষা লব্ধ লক্ষণ নাই এমন কোন সুস্পষ্ট লক্ষণ যদি আরোগ্য লাভ হতে দেখা যায় তা হলে উহা সেই ঔষধের ক্রিয়ায় দূরীভূত হয়েছে বলে নির্ণত হয়, তাদেরকে ক্লিনিক্যাল বা আরোগ্য প্রাপ্ত লক্ষণ বলে।

১৫। প্রশ্নঃ প্যাথলজিক্যাল বা নিদানগত লক্ষণ কাকে বলে?

প্যাথলজিক্যাল বা নিদানগত লক্ষণ: যান্ত্রিক ক্রিয়া ধারায় বিশৃঙ্খলার কারণে দেহাঙ্গের কাঠামোগত পরিবর্তন, উপাদানগত তারতম্য এবং অনুভূতির পরিবর্তন প্রভৃতি দেখা যায়, তাকে নিদানগত বা প্যাথলজিক্যাল লক্ষণ বলে। যেমন- ফোঁড়া হতে ঘন সাদা পুঁজস্রাব, দড়ির মত লম্বা ও আঠার মতো শ্লেষ্মাস্রাব, কালোবর্ণের রক্তস্রাব ইত্যাদি। এই লক্ষণসমূহ রোগের পরিণত অবস্থার ফল প্রকাশ করে। রোগ কোন স্তরে পৌঁছে গেছে এ লক্ষণসমূহ তা জানাতে সাহায্য করে। ঔষধ নির্বাচন, মাত্রা ও শক্তি নির্ধারণ এবং আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা পত্র প্রদানে এই লক্ষণসমূহ চিকিৎসকে সাহায্য করে। সার্জারী চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কিনা সেই বিষয়েও এই সমস্ত লক্ষণ ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

১৬। প্রশ্নঃ প্যাথোজেনিটিক লক্ষণ কাকে বলে?

প্যাথোজেনিটিক লক্ষণ:

প্রশ্নঃ নির্দেশক লক্ষণ বলতে কি বুঝ? ২০০৮, ১০, ১৮ বা, চরিত্রগত লক্ষণ বলতে কি বুঝ?

নির্দেশক/চরিত্রগত লক্ষণের সংজ্ঞা:

যে সকল রোগের ও রোগীর বৈশিষ্ট্যসমূহকে অন্য রোগ ও রোগী থেকে স্বতন্ত্র করে তুলে এবং ঔষধের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক বিশেষভাবে নির্দেশ করে, উহাকে নির্দেশক বা চরিত্রগত লক্ষণ বলে।

অথবা

যে সব লক্ষণসমূহ রোগের ও রোগীর বৈশিষ্ট্যতাগুলিকে অন্য রোগ ও রোগী হতে আলাদা করে তোলে এবং চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের নিকট সেই ধরনের লক্ষণসমূহেরই প্রয়োজন যেগুলি রোগের এক পূর্ণ প্রতিকৃতি অতি হয়, তাদেরকে পরিচায়ক লক্ষণ বা নির্দেশক লক্ষণ বলে। রোগীকে ব্যক্তিগত পরীক্ষার দ্বারা যে সমস্ত লক্ষণ সংগ্রহ করা যায়। তন্মধ্যে যেগুলি অদ্ভূত, অসাধারণ, দৃষ্টি আকর্ষক, পার্থক্যসূচক বা বিরল প্রকৃতির সেই লক্ষণসমূহই এই শ্রেণিভূক্ত। ডাঃ কেন্ট বলেন- রোগের যে সমস্ত লক্ষণ সাধারণ বুদ্ধিতে ব্যাখ্যা করা যায় না সেগুলি সমস্তই পরিচায়ক লক্ষণ বা চরিত্রগত বা নির্দেশক লক্ষণ। যেমন- প্রচন্ড তাপমাত্রাযুক্ত জ্বরে পিপাসাহীনতা, জিহ্বার শুষ্কতা সত্ত্বেও পানি পানের অনিচ্ছা, দেহে তীব্র জ্বালাবোধ থাকা সত্ত্বেও গায়ে আবরণ চায় ইত্যাদি।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই ধরনের লক্ষণের গুরুত্ব সর্বাধিক।

প্রশ্ন: ব্যাপক লক্ষণ ও আঙ্গিক লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা কর।১২, ১৫

ব্যাপক লক্ষণ ও আঙ্গিক লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য বর্ণনা 

 ব্যাপক লক্ষণআঙ্গিক লক্ষণ
যে সব লক্ষণসমূহ রোগীর  সম্পর্কে সামগ্রীকভাবে বা সর্বতোভাবে প্রযোজ্য এবং যে সকল লক্ষণের বর্ণনাকালে রোগী সাধারণতঃ ‘আমি’ শব্দটি উচ্চারণ করে বা আমি সত্ত্বাকে নির্দেশ করে সে লক্ষণসমূহকে ব্যাপক লক্ষণ বলে।যে সকল লক্ষণ রোগীর দেহের বিশেষ কোন অঙ্গে প্রকাশিত হয় সেগুলোকে আঙ্গিক লক্ষণ বলে। এ সকল লক্ষণ বর্ণনাকালে রোগী অধিকাংশ সময় আমার শব্দটি উচ্চারণের মাধ্যমে লক্ষণের বর্ণনা শুরু করে।
ব্যাপক লক্ষণকে মূলমানের  গুরুত্ব অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- ক) মানসিক ব্যাপক লক্ষণ, খ) দৈহিক ব্যাপক লক্ষণ।আঙ্গিক লক্ষণকে মূলমানের গুরুত্ব অনুসারে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন- ক) অসাধারণ ও বিরল আঙ্গিক লক্ষণ, খ) সুস্পষ্ট হ্রাস-বৃদ্ধিযুক্ত আঙ্গিক লক্ষণ, গ) হ্রাস-বৃদ্ধিবিহীন বৈশিষ্ট্যহীন আঙ্গিক লক্ষণ।
রোগীর ব্যক্তিগত পরিচয় তুলে ধরে বলে চিকিৎসাক্ষেত্রে এ ধরনের লক্ষণের গুরুত্ব রেপার্টরীকরণের মাধ্যমে ঔষধ নির্বাচনে সর্বাধিক।আঙ্গিক লক্ষণ সাধারণতঃ বিষয়মূখী লক্ষণ হিসাবে প্রকাশিত হয়।
ইহা অচির ও চির রোগে এ ধরনের লক্ষণ ঔষধ নির্বাচনে বিশেষ সহায়ক হয়।ইহা অচিররোগে এ ধরনের লক্ষণ ঔষধ নির্বাচনে বিশেষ সহায়ক হয়।
উদাহরণ: ভালবাসা, ঘৃণা, ক্রন্দন, অস্থিরতা, উদ্ভট স্বপ্ন ইত্যাদি।উদাহরণ: উদ্ভেদ বিহীন চুলকানি, টিউমার, আঁচিল, চুল পড়া ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব লিখ। বা মানসিক লক্ষণ এত প্রয়োজনীয় কেন? ২০০৮

মানসিক লক্ষণের গুরুত্বঃ

ডাঃ হ্যানিম্যান “অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মানসিক লক্ষণের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ইহা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

যে সকল লক্ষণ দ্বারা রোগীর মনোবৃত্তি অর্থাৎ মানসিক অবস্থা এবং আচরণের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, তাকে মানসিক লক্ষণ বলে। অর্থাৎ যে সকল বৈশিষ্ট্য পূর্ণ আচরণ রোগীর মনের ভাব, আবেগ, আকাংখা ও ভালবাসা প্রভৃতি প্রকাশ করে সে সকল লক্ষণসমূহকে, মানসিক লক্ষণ বলে। রোগীর মানসিক লক্ষণই বেশির ভাগ সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের প্রধান অবলম্বন হিসাবে পরিগণিত হয়। কারণ খুব নিশ্চিতভাবে নির্দেশক লক্ষণ বলেই তা কোন যথার্থ অনুসন্ধানী চিকিৎসকের দৃষ্টি এড়াতে পারে না। সর্বপ্রকার রোগের প্রধান বৈচিত্র স্বরূপ এ প্রকৃতিগত এবং মানসিক বিকৃতি সম্বন্ধে রোগ আরোগ্যকারী বস্তুসমূহের স্রষ্টাও বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন কারণ পৃথিবীতে এমন কোন ঔষধ নেই যা পরীক্ষাকারী সুস্থ ব্যক্তির প্রকৃতিতে ও মানসিক অবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করতে অপারগ। প্রত্যেকটি ঔষধই বিভিন্নভাবে ইহা করে থাকে।

অতএব প্রত্যেকটি রোগীর ক্ষেত্রে, অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে রোগীর মানসিক ও প্রকৃতিগত পরিবর্তন লক্ষ্য না করে এবং রোগীর যন্ত্রণা দূর করার জন্য অন্যান্য সদৃশ লক্ষণের সহিত রোগীর স্বভাব ও মানসিক অবস্থার সদৃশ রোগ সৃষ্টিকারী শক্তি ঔষধরাজী হতে নির্বাচন না করলে কখনও প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে অর্থাৎ সদৃশ বিধান মতে আরোগ্য সাধন করতে সমর্থ হবে না। ডাঃ হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগীর মানসিক লক্ষণের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

প্রশ্ন: “চিররোগীর চিকিৎসায় মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব অধিক”- আলোচনা কর। ২০১৫ বা, কোন জাতীয় রোগীর চিকিৎসায় মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব বেশি, বিস্তারিত আলোচনা কর। ২০১৮

“চিররোগীর চিকিৎসায় মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব অধিক”-আলোচনাঃ

মানসিক লক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসক রোগীর অন্তর প্রকৃতিকে জানতে পারে। প্রকৃত পক্ষে মনই মানুষ। যে সকল লক্ষণ দ্বারা চিকিৎসক রোগীর অন্তর আত্মা সম্বন্ধে জানতে পারে, যা রোগীর মনকে প্রভাবিত করে এবং যা তাঁর মনকে সহজেই আন্দোলিত করে, তাকে মানসিক লক্ষণ বলে। মনকে দেহ থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়, একে অন্যের পরিপূরক। প্রত্যেক ব্যক্তি ইচ্ছা বৃত্তি, বুদ্ধিবৃত্তি ও স্মৃতিশক্তিই তার স্বাধীন কার্যশক্তি যোগার করে। কোন কারণে যে মানুসিকভাবে দুর্বল হলে তার জাগতিক কাজকর্মের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

ডাঃ হ্যানিম্যান কর্তৃক আবিষ্কৃত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এখানে রোগীর কষ্টকর লক্ষণাবলীর সদৃশ সুস্থ মানবদেহে পরীক্ষিত মেটেরিয়া মেডিকার অন্তর্ভূক্ত ঔষধ থেকে একটি ঔষধ নির্বাচন করে সমলক্ষণে সূক্ষ্মমাত্রা প্রয়োগ করলে প্রাকৃতিক নিয়মে আরোগ্য সাধিত হয়।

মানসিক আঘাত, চাপা শোক, ব্যর্থতা ইত্যাদি থেকে চিররোগের উৎপত্তি হয়। সুতরাং মানসিক রোগ লক্ষণের উপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করা সহজ হয়। ইহা ঔষধ নির্বাচনে একক অদ্ভুত ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

অতএব, চিররোগ চিকিৎসায় মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। ঔষধ নির্বাচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য বিষয়।

প্রশ্ন : মানসিক লক্ষণের সংজ্ঞা দাও। মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব আলোচনা কর। ২০০৯, ১১

মানসিক লক্ষণের সংজ্ঞা: যে সকল লক্ষণ দ্বারা রোগীর মনোবৃত্তি এবং আচরণের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়, তাদেরকে মানসিক লক্ষণ বলে। অর্থাৎ যা কিছু রোগীর মনের ভাব, অবস্থা, আকাঙ্খা, অনীহা, ভয়, ভালবাসা প্রভৃতি প্রকাশ করে, সে সকল লক্ষণাবলীকে মানসিক লক্ষণ বলে। মানসিক লক্ষণকে গুরুত্ব অনুসারে ৩টি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যথা- ১। ইচ্ছাবৃত্তি, ২। বুদ্ধিবৃত্তি ও ৩। স্মৃতিশক্তি।

মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব: ডাঃ হ্যানিম্যান “অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মানসিক লক্ষণের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ইহা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

যে সকল লক্ষণ দ্বারা রোগীর মনোবৃত্তি অর্থাৎ মানসিক অবস্থা এবং আচরণের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, তাকে মানসিক লক্ষণ বলে। অর্থাৎ যে সকল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আচরণ রোগীর মনের ভাব, আবেগ, আকাংখা ও ভালবাসা প্রভৃতি প্রকাশ করে, সে সকল লক্ষণসমূহকে, মানসিক লক্ষণ বলে। রোগীর মানসিক লক্ষণই বেশির ভাগ সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের প্রধান অবলম্বন হিসাবে পরিগণিত হয়। কারণ খুব নিশ্চিতভাবে নির্দেশক লক্ষণ বলেই তা কোন যথার্থ অনুসন্ধানী চিকিৎসকের দৃষ্টি এড়াতে পারে না। সর্বপ্রকার রোগের প্রধান বৈচিত্র স্বরূপ এ প্রকৃতিগত এবং মানসিক বিকৃতি সম্বন্ধে রোগ আরোগ্যকারী বস্তুসমূহের স্রষ্টাও বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। কারণ পৃথিবীতে এমন কোন ঔষধ নেই যা পরীক্ষাকারী সুস্থ ব্যক্তির প্রকৃতিতে ও মানসিক অবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করতে অপারগ। প্রত্যেকটি ঔষধই বিভিন্নভাবে ইহা করে থাকে।

ডাঃ হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগীর মানসিক লক্ষণের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

প্রশ্ন: মানসিক লক্ষণকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হয় কেন? বা ঔষধ নির্বাচনের মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব বর্ণনা কর। ০৯, ১২

ঔষধ নির্বাচনে মানসিক লক্ষণের গুরুত্বঃ

ডাঃ হ্যানিম্যান “অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় মানসিক লক্ষণের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ইহা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

যে সকল লক্ষণ দ্বারা রোগীর মনোবৃত্তি অর্থাৎ মানসিক অবস্থা এবং আচরণের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে, তাকে মানসিক লক্ষণ বলে। অর্থাৎ যে সকল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আচরণ রোগীর মনের ভাব, আবেগ, আকাংখা ও ভালবাসা প্রভৃতি প্রকাশ করে, সে সকল লক্ষণসমূহকে, মানসিক লক্ষণ বলে। রোগীর মানসিক লক্ষণই বেশির ভাগ সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের প্রধান অবলম্বন হিসাবে পরিগণিত হয়। কারণ খুব নিশ্চিতভাবে নির্দেশক লক্ষণ বলেই তা কোন যথার্থ অনুসন্ধানী চিকিৎসকের দৃষ্টি এড়াতে পারে না। সর্বপ্রকার রোগের প্রধান বৈচিত্র স্বরূপ এ প্রকৃতিগত এবং মানসিক বিকৃতি সম্বন্ধে রোগ আরোগ্যকারী বস্তুসমূহের স্রষ্টাও বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। কারণ পৃথিবীতে এমন কোন ঔষধ নেই যা পরীক্ষাকারী সুস্থ ব্যক্তির প্রকৃতিতে ও মানসিক অবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করতে অপারগ। প্রত্যেকটি ঔষধই বিভিন্নভাবে ইহা করে থাকে।

অতএব প্রত্যেকটি রোগীর ক্ষেত্রে, অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে রোগীর মানসিক ও প্রকৃতিগত পরিবর্তন লক্ষ্য না করে এবং রোগীর যন্ত্রণা দূর করার জন্য অন্যান্য সদৃশ লক্ষণের সহিত রোগীর স্বভাব ও মানসিক অবস্থার সদৃশ রোগ সৃষ্টিকারী শক্তি ঔষধরাজী হতে নির্বাচন না করলে কখনও প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে অর্থাৎ সদৃশ বিধান মতে আরোগ্যসাধন করতে সমর্থ হবে না। ডাঃ হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রোগীর মানসিক লক্ষণের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

প্রশ্নঃ হ্রাস-বৃদ্ধি বলতে কি বুঝ? ২০০৯, ১০

হ্রাস-বৃদ্ধির সংজ্ঞাঃ

যে সকল অবস্থায় রোগ লক্ষণের পরিবর্তন ঘটে, বিশেষ করে রোগ লক্ষণ কমে ও বাড়ে, তাকে হ্রাস-বৃদ্ধি (মোড়ালিটি) বলে। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী শীত ও গ্রীষ্মে, শীতল ও উত্তাপে, আর্দ্রতায় ও শুষ্কতায়, দিবা-রাত্রির বিভিন্ন সময়ে, পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় এবং অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তনে বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রূপ হয়।

প্রশ্নঃ ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধির গুরুত্ব বর্ণনা কর। ২০০৯, ১০, ১১, ১৪, ১৮ বা, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধির গুরুত্ব লিখ। ১৮

ঔষধ নির্বাচনে লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধির গুরুত্বঃ

রোগশক্তির গতিশীল প্রভাব যখন জীবনশক্তির উপর পড়ে ঐ অবস্থায় যদি জীবনশক্তির ভিতরে রোগপ্রবণতা থাকে, তবে ঐ রোগশক্তির প্রভাবে জীবনীশক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে জীবনীশক্তির মাধ্যমে শরীর ও মনের যে স্বাভাবিক অনুভূতি, কাজকর্ম, গঠনাকৃতি ছিল, এর পরিবর্তে কতগুলো অস্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার প্রকাশ পায়, ইহাই হোমিওপ্যাথিক রোগতত্ত্ব।

রোগ লক্ষণ অর্থাৎ রোগীর দেহ ও মনে প্রকাশিত লক্ষণ ও চিহ্ন দ্বারা রোগী আরোগ্যের জন্য ঔষধ প্রার্থনা করে। বিভিন্ন অবস্থায় রোগীর রোগ যন্ত্রণা হ্রাস-বৃদ্ধি পায়। শীতকালে, গ্রীষ্মকালে, উত্তাপে- শীতলতায়, চাপে-স্পর্শে, আর্দ্রতায়-শুদ্ধতায়, দিবা-রাত্রির বিভিন্ন সময়ে পূর্ণিমা ও অমাবস্যায়, আহারের পূর্বে বা পরে, জাগ্রত-নিদ্রায় ইত্যাদি কারণে লক্ষণের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। আর লক্ষণের এই হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে ঔষধ নির্বাচনের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যেমন- লাইকোপোডিয়াম এর রোগ লক্ষণ বিকাল ৪টা হতে বৃদ্ধি। ডিওডেনাম আলসারের রোগী খেলে উপশম, গ্যাষ্ট্রিক আলসারের রোগী খেলে বৃদ্ধি। লক্ষণের হ্রাস- বৃদ্ধি দেখে ঔষধ প্রয়োগ করতে হয়। যখন লক্ষণের বৃদ্ধি হয় তখন ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগীর রোগ যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়। আবার লক্ষণের হ্রাসের সময় ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগী আদর্শ আরোগ্য হয়।

অতএব, উপরিউক্ত আলোচনা হতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, ঔষধ নির্বাচনে হ্রাস-বৃদ্ধি গুরুত্ব অত্যধিক। ডাঃ হ্যানিম্যান ইহার গুরুত্ব সম্বন্ধে “অর্গানন অব মেডিসিন” বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

প্রশ্ন: চরিত্রগত লক্ষণ ও অদ্ভুত লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য লিখ। চরিত্রগত লক্ষণ ও অদ্ভুত লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য:

 চরিত্রগত লক্ষণঅদ্ভুত লক্ষণ
যে সকল রোগের ও রোগীর বৈশিষ্ট্যসমূহকে অন্য রোগ ও রোগী থেকে স্বতন্ত্র করে তুলে এবং ঔষধের বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক বিশেষভাবে নির্দেশ করে, উহাকে চরিত্রগত লক্ষণ বলে।যে সব লক্ষণ ঔষধ বা রোগের সাধারণ বৈশিষ্ট্য অপেক্ষা ব্যতিক্রমধর্মী বা যা অদ্ভুত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসূচক, যা দৃষ্টি আকর্ষনীয় বা সুস্পষ্ট বা একটা মাত্র লক্ষণ একটা ঔষধকে নির্দেশ করে এ ধরনের লক্ষণকে সামগ্রিকভাবে, অদ্ভুত বা অসাধারণ লক্ষণ বলে।
উদাহরণ-প্রচন্ড তাপমাত্রাযুক্ত জ্বরে  পিপাসাহীনতা, জিহ্বার শুদ্ধতা সত্ত্বেও পানি পানের অনিচ্ছা, দেহে তীব্র জ্বালাবোধ থাকা সত্ত্বেও গায়ে আবরণ চায় ইত্যাদি।উদাহরণ-বুক ধড়ফড়ানি, তাড়াতাড়ি হাঁটলে উপশম- আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম ও সিপিয়া ইত্যাদি।
ইহা রোগীর সার্বদৈহিক অবস্থা  নির্দেশ করে।ইহা রোগীর একটি সুস্পষ্ট অবস্থা নির্দেশ করে।
8ইহার সমষ্টি দ্বারা রোগীর আরোগ্যের জন্য ঔষধ নির্বাচিত হয়।ইহা আরোগ্যের জন্য ঔষধ নির্বাচনে সুনির্দিষ্ট লক্ষণ।

 

 

 

 

জেনারেল কন্ডিশন ও এ্যাপেয়ারেন্স

প্রশ্ন: “মুখমণ্ডল মনের ভাব প্রকাশ করে”- ব্যাখ্যা কর। ২০১০, ১২, ১৩, ১৫

“মুখমন্ডল মনের ভাব প্রকাশ করে”- ব্যাখ্যা:

মুখমন্ডল মনের দর্পন স্বরূপ। মুখমন্ডলে দৈহিক ও মানসিক অবস্থার প্রতিকৃতি প্রতিফলিত হয়। প্রতিটি ব্যক্তি ধাতুগত লক্ষণে একে অন্যের থেকে ভিন্ন। আকৃতির দিক দিয়ে কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কেউ মোটা আবার কেউ পাতলা ইত্যাদি। প্রসন্ন মুখমন্ডল দেহের সুস্থতার পরিচয় বহন করে। মুখমন্ডল ফ্যাকাশে দেখলে এনিমিয়া বা শক এর নির্দেশ করে। মুখমন্ডল লাল বর্ণসহ অস্থিরতা প্রকাশ করলে জ্বর বা উচ্চ রক্তচাপ নির্দেশ করে। আবার মুখমন্ডল স্ফীতিভাব থাকলে কিডনী, নীল বর্ণ দেখালে হৃদরোগ নির্দেশ করে। ফুসফুসে তরুন প্রদাহে শ্বাস কষ্ট ও মুখমন্ডল ফ্যাকাশে ও নীলবর্ণের দেখায়। মুখমন্ডল হলুদাভ বর্ণের হলে জন্ডিস নির্দেশ করে। পরিপাকতন্ত্রে গোলযোগে মুখমন্ডলে কষ্টের চাপ ও ফ্যাকাশে দেখায়।

উপরিউক্ত আলোচনা হতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, মুখমন্ডল মন ও দেহের অসুস্থতা নির্দেশ করে। মুখমন্ডল দেখে রোগীর রোগাবস্থা নির্ণয় করা যায়। রোগীর উন্নতি বা অবনতি মুখমন্ডল দেখে বুঝা যায়।

প্রশ্ন: নাড়ীর গতি বলতে কি বুঝ? নাড়ীর বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। ১১, ১৪ বা, নাড়ী স্পন্দন অনুভবের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর। বা, নাড়ীর গতি কি? চিকিৎসাকালে এর ব্যবহার উল্লেখ কর। ১৭

নাড়ীর গতির সংজ্ঞা:

হার্টের সংযোজন ও প্রসারণের ফলে লেফট ভেন্ট্রিকেল থেকে রক্ত খুব জোরে অ্যাওটাতে প্রবেশ করে, এ অবস্থায় অ্যাওটার ওয়ালে একটি তরঙ্গের (Wave) সৃষ্টি করে এবং তাৎক্ষনিক এ তরঙ্গ সমস্ত দেহের আর্টারীতে ছড়িয়ে পড়ে, তাকে নাড়ীর গতি (Puls) বলে।

নাড়ীর গতির বৈশিষ্ট্যঃ

(i) পালস রেট (Pulse Rate) : প্রতি মিনিটে যত বার নাড়ীর স্পন্দন

পাওয়া যায়, তাকে পালস রেট বা নাড়ীর গতির হার বলে। সুস্থ প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির স্বাভাবিক নাড়ীর গতির হার ৭২-৮০/মি।

(ii) রিদম অব পালস: পালস এর ছন্দ স্বাভাবিক অবস্থায় নির্দিষ্ট সময় পরপর অনুভব হয়, কিন্তু কিছু কিছু কারণে পালসের ছন্দ অস্বাভাবিক হয়, তাকে রিদম অব পালস বলে।

(iii) পালস এর পরিমাণ: পালস এর ওয়েভ এর প্রবাহের ফলে ভেসেলের ওয়ালে যে প্রসারিত হয় তাকে পালসের পরিমাণ বলে। ইহা ব্লাড ভেসেলের অবস্থার উপর নির্ভর করে।

(iv) ব্লাড ভেসেলের ওয়ালের অবস্থা: সাধারণতঃ প্রাপ্ত বয়স্কদের ভেসেলগুলো দৃঢ় এবং পালসেবল হয়।

(v) Delayed Pulse (দেরীতে পালস পৌছানো): কোন কোন সময় কোন কোন পেরিপেরাল আর্টারীতে পালস পৌঁছাতে দেরী হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ ইহা থেকে কিছু রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।

৩। প্রশ্নঃ দেহের কোথায় কোথায় নাড়ীর গতি দেখা হয়? ০৯

দেহের নাড়ীর গতি দেখা হয়:

দেহের নিম্নলিখিত স্থানে নাড়ীর গতি দেখা যায়: যথা-

১। আর্টারী পালস (Arterial pulse)

(i) রেডিয়াল পালস (Radial pulse) রেডিয়াল আটারীতে দেখা হয়।

(ii) ব্রাকিয়াল পালস (Brachial Pulse)- ব্রাকিয়ার আর্টারীতে দেখা হয়।

(iii) এক্সজিয়াল পালস (Axillary pulse)- এক্সজিলারী আর্টারীতে দেখা হয়।

(iv) ক্যারোটিড পালস (Carotid Pulse) – ক্যারোটিভ আর্টারীতে দেখা হয়।

(v) ফেসিয়াল পালস (Facial Pulse) ফেসিয়াল আর্টারীতে দেখা হয়।

(vi) ফিমোরাল পালস (Femoral pulse) ফিমোরাল আর্টারীতে দেখা হয়।

(vii) পপলিটিয়াল পালস (Popliteal pulse)- পলিটিয়াল আর্টারীতে দেখা হয়।

(viii) পস্টেরিয়র টিবিয়াল পালস (Posterior tibial pulse) – টিবিয়াল আর্টারীতে দেখা হয়।

(ix) আর্টেরিয়া ডরসালিস পালস (Arteria dorsallis pedis pulse) ডরসালিস পেডিয়াস আর্টারীতে দেখা হয়।

২। ভেনাস পালস (Venous Pulse)

(i) জুগুলার ভেনাস পালস (Jugular Venous Pulse) – জুগুলার ভেইনে দেখা হয়।

৪। প্রশ্ন : দ্রুত নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ কোন কোন রোগের নির্দেশক?

দ্রুত নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ নিম্নলিখিত রোগের নির্দেশক:

এনিমিয়া, ডিসপেপসিয়া, নিউরোসিস, প্যারালাইসিস, নার্ভাস ডিসওড়ার, হৃৎপিন্ডের রোগ, মাইট্রাল ষ্টেনোসিস, স্পাইনাল কর্ডের রোগ, কিডনী রোগ, বাত, সন্ধিবাত, আর্টারীর টিউমার, ডিপথেরিয়া ইত্যাদি।

৫। প্রশ্ন: ধীর নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ কোন কোন রোগের নির্দেশক?

ধীর নাড়ীর স্পন্দন সাধারণতঃ নিম্নলিখিত রোগের নির্দেশক:

এ্যাজমা, মেনিনজাইটিস, টাইফয়েড জ্বর, হৃৎপিন্ডের প্যারালাইসিস, এ্যানজিনা পেক্টোরিস ইত্যাদি।

৬। প্রশ্ন: একজন পূর্ণবয়ষ্ক সুস্থ ব্যক্তি স্বাভাবিক নাড়ীর গতি বা স্পন্দনের হার কত?

একজন পূর্ণবয়ষ্ক সুস্থ ব্যক্তি স্বাভাবিক নাড়ীর গতি বা স্পন্দনের হারঃ

একজন পূর্ণবয়ষ্ক সুস্থ ব্যক্তি স্বাভাবিক নাড়ীর গতি বা স্পন্দনের হার ৭২-৮০ বার/মিনিট। আদর্শ স্পন্দনের হার হচ্ছে- ৭৫বার/মিনিট।

৭। প্রশ্নঃ বিভিন্ন বয়সে নাড়ীর স্বভাবিক গতি বা স্পন্দনের হার কত? বিভিন্ন বয়সে নাড়ীর স্বভাবিক গতি বা স্পন্দনের হার:

বয়স

নাড়ীর গতি প্রতি মিনিটে

د নবজাতক থেকে ১ বছর পর্যন্ত

১২০ ১৪০

২ ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত

৯০ ১১০

৩ ৬ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত। ৮০ ৯০

৪ ১৬ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত

৫ ৬১ থেকে উর্ধ্ব

৭২ ৮০

৬৫ ৭৫

৮। প্রশ্নঃ দেহের তাপমাত্রার সাথে নাড়ীর সম্পর্ক লিখ। ০৯

দেহের তাপমাত্রার সাথে নাড়ীর সম্পর্ক:

মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪° ফারেনহাইট। দেহতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়, ব্লাড সার্কুলেশনের মাধ্যমে। সজীব রক্তের তাপমাত্রা ৩৬০-৩৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস যা হৃৎপিন্ডের সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে সমগ্র দেহে সঞ্চালিত হয়।

হৃৎপিন্ডের ভেন্ট্রিকেলদ্বয়ের সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক চাপে পরিবর্তনের ফলে আর্টারীতে সে স্পন্দনের সৃষ্টি হয়, তাকে নাড়ীগতি বা পালস বলে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি নাড়ীর স্বাভাবিক গতি ৭২- ৮০/মিনিট।

দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাধারণতঃ নাড়ীর স্পন্দন বৃদ্ধি পায়। সাধারণতঃ প্রতি ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য নাড়ীর স্পন্দন প্রায় মিনিটে ৮-১০ বার বর্ধিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন রোগে দেহের তাপমাত্রা ‘বৃদ্ধি ও হ্রাস পায়। বাহিরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেহের অভ্যন্তরিত তাপমাত্রার উপর প্রভাব বিস্তার করে ফলে নাড়ীর স্পন্দন দ্রুত হয়।

সুতরাং দেহের তাপমাত্রার সাথে নাড়ীর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। কারণ রোগীর প্রগনোসিস নির্ণয়ে ইহা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৯। প্রশ্নঃ থার্মোমিট্রি ও থার্মোমিটার বলতে কি বুঝায়?

থার্মোমিট্রি (Thermometre) :

থার্মোমেট্রি শব্দটি Therm এবং Metre এ দুইটি গ্রীক শব্দ হতে উৎপত্তি হয়েছে। Therm অর্থ হলো তাপ এবং Metre অর্থ হলো মাত্রা বা পরিমাপ। সুতরাং থার্মোমিট্রি শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো তাপমাত্রা বা তাপের পরিমাপ। পদার্থ বিজ্ঞানে যে শাখায় তাপমাত্রা বা তাপের পরিমাপ করা হয়, তাকে থার্মোমিট্রি বলা হয়।

থার্মোমিটার (Thermometer) :

যে যন্ত্র দ্বারা বস্তুর তাপমাত্রা নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা যায়, তাকে থার্মোমিটার বা তাপমাপক যন্ত্র বলে। সাধারণতঃ উষ্ণমিতিক পদার্থের বা উহার ধর্মের নাম অনুসারে থার্মোমিটারের নামকরণ করা হয়।

১০। প্রশ্ন: শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া কি?

শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়াঃ

পারিপার্শ্বিক বায়ুমন্ডল হতে অক্সিজেন নিঃশ্বাসে সাথে গ্রহন করার পর ফুসফুসীয় কেপিলারীর মাধ্যমে গৃহীত হয়ে ফুসফুসীয় শিরার মধ্য দিয়ে হৃৎপিন্ডের বাম এট্রিয়ামে আসে। হৃৎপিন্ডের বাম এট্রিয়াম থেকে বাম ভেন্ট্রিকেলে যায়, সেখান থেকে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত মহাধমনী দিয়ে দেহের প্রতিটি কোষে যায় এবং বিপাক ক্রিয়ায় ইহা ব্যবহৃত হয়। বিপাক ক্রিয়া শেষে উৎপন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবাহিত হয়ে হৃৎপিন্ডে পৌছায়। হৃৎপিন্ড হতে পালমোনারী ধমনীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছায়। প্রশ্বাসের মাধ্যমে ইহা ফুসফুস থেকে দেহের বাহিরে যায়।

১১। প্রশ্ন: তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রস্রাবের বর্ণ লাল হয় কেন? ১০ বা, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে প্রস্রাবের রং লাল হওয়ার কারণ কি? ০৮, ১২ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে প্রস্রাবের রং লাল হওয়ার কারণ:

তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে দেহে তরল অংশ জলীয়বাষ্পরূপে দেহ থেকে নির্গত হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেহের তাপমাত্রার সাথে বিক্রিয়া করে অস্থিরতা ও অস্বস্তি উৎপন্ন করে ফলে প্রচুর ঘর্মস্রাব হয় বা হতে পারে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেহে যে রোগাবস্থা নির্দেশিত হয় তাতে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে অনুগ্রহ প্রকাশ পায়। সুতরাং ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। দেহে পানি স্বল্পতা দেখা দিলে তা পূরণ না হলে কিডনী তার নেফ্রন দ্বারা রক্ত থেকে যে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় পানিসহ অর্গানিক ও ইনঅর্গানিক উপাদানসমূহ বর্জ্য পদার্থ হিসেবে দেহ থেকে নিষ্কাশন করে তাতে পানির পরিমাণ কম থাকে। অন্যান্য উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকায় এবং পানির পরিমাণ কম থাকায় প্রস্রাবের বর্ণ লাল হয়।

সুতরাং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে প্রস্রাবের রং লাল হয়, কারণ প্রস্রাবের অন্যান্য উপাদানসমূহ ঠিক থাকার জন্য। প্রস্রাবের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমে যায়।

প্রশ্নঃ রোগীর চিকিৎসায় জিহ্বার লক্ষণ বর্ণনা কর। ২০০৯, ১৩, ১৫

জ্বর চিকিৎসায় জিহ্বার লক্ষণ বর্ণনা:

রোগীর জিবো পরীক্ষা করে অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করতে সহজ হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় জিহ্বা পরিষ্কার ও সরস থাকে। তরুণ জ্বর বা টাইফয়েড জ্বর হলে জিহ্বা শুষ্ক হয়ে যায়। টাইফয়েড ও আন্ত্রিক জ্বর অবস্থায় জিহ্বার প্রান্ত ও অগ্রভাগাদি রক্তিম বা এর মধ্যভাগে লাল বর্ণ ও শুষ্ক দেখা যেতে পারে। কোন প্রকার ডুরের ক্ষেত্রে জিহ্বা লেপাবৃত্ত দেখায় এবং জিহ্বার গোড়ার দিকে গ্রানুলারসমূহ ফোলা ও লাল বর্ণের দেখা যায়। পৈত্তিক জ্বরে জিহ্বার বর্ণ ফ্যাকাশে হয়ে উঠে।

১৩। প্রশ্নঃ বিভিন্ন মায়াজমের জিহ্বার স্বাদ বর্ণনা কর।

বিভিন্ন মায়াজমের জিহ্বার স্বাদ:

সোরাঃ

(i) মুখে অসহনীয় মিষ্টি স্বাদ, প্রায় সবসময়।

(ii) মুখে পোড়া স্বাদ, বিস্বাদ বা নীরস, আঠালো স্বাদ।

(iii) টক, মিষ্টি ও তিক্ত ইত্যাদি খাদ্যের অস্বাভাবিক স্বাদ।

সিফিলিসঃ

(i) ধাতব বা তামাটে স্বাদযুক্ত।

(ii) লালা ক্ষরণ, জিহ্বার গভীর ফাটা ও দাঁতের চাপযুক্ত।

সাইকোসিস:

(i) পঁচা, বাসী বা আঁশটে স্বাদ।

(ii) মাছের স্বাদ বা বিস্বাদ যুক্ত।

টিউবারকুলার মায়াজম:

(i) পঁচা, পুঁজের, রক্তের মত এবং ধাতব স্বাদ হতে পারে।

(ii) দাঁতের মাড়ী হতে খুব রক্ত পড়ে।

১৪। প্রশ্নঃ বিভিন্ন মায়াজম গ্রস্থ রোগীর চর্মের অবস্থা বর্ণনা কর। ০৯

বিভিন্ন মায়াজম গ্রন্থ রোগীর চর্মের অবস্থা:

সোরার চর্মের অবস্থাঃ

(i) চর্মের বিশেষত্ব হলো তীব্র চুলকানি ও জ্বালা এবং তাপোচ্ছ্বাস, অপরিষ্কার ইত্যাদি।

(ii) চর্ম সাধারণতঃ শুকনো, খসখসে আঁশ বা ফোস্কাযুক্ত।

(iii) চুলকানি- সন্ধ্যায়, মধ্যরাতের আগে, বিছানার গরমে, পোশাক পরিবর্তনে বৃদ্ধি।

সিফিলিসের চর্মের অবস্থা:

(i) চর্মের উদ্ভেদে সহজেই পুঁজ ও ক্ষতে পরিণত হয়।

(ii) সামান্য যন্ত্রণা থাকে কিন্তু কোন চুলকানি থাকে না।

(iii) সন্ধিতে, শরীরের যে কোন ও ভাঁজে উদ্ভেদ, চটাপড়া এবং তা থেকে পুঁজ বের হয়।

(iv) চর্ম তৈলাক্ত, ঘর্মাক্ত ও অত্যন্ত দূর্গন্ধযুক্ত চর্মের উপর তামার ন্যায় দাগ।

সাইকোসিসের চর্মের অবস্থা:

(i) চর্মোদ্ভেদ পুরু বা শক্ত ও পিন্ড আকারের অথচ তাতে কোন ব্যথা বা চুলকানি থাকে না।

(ii) আঁচিল, টিউমার, একজিমা ইত্যাদি দেখা যায়।

(iii) মুখের চর্ম তৈলাক্ত।

(iv) সংক্রামক ফুস্কুড়ি, কড়া, গায়ের চর্মের নানা বিকৃতি স্থানে স্থানে বা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে থাকে।

টিউবারকুলার এর চর্মের অবস্থা:

(i) চর্মরোগের সাথে গ্রন্থির রোগের সংযোগ থাকে।

(ii) শিরাস্ফীতি, কালশিরা

(iii) অতিরিক্ত ঘাম ও পায়ের দূর্গন্ধযুক্ত ঘাম।

১৫। প্রশ্নঃ নখের বিভিন্ন পরিবর্তন কি কি অসুস্থতার সংকেত নির্দেশ করে?

নখের বিভিন্ন পরিবর্তন নিম্নরূপ অসুস্থতার সংকেত:

(i) নখ পাতলা, নরম, চামচের ন্যায়- আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া।

(ii) অস্বাভাবিক সাদা নখ- লিভার সিরোসিস কনজেনিটাল হাইপোএ্যালমেনিমিক কন্ডিশন।

(iii) নখ অস্বাভাবিক সাদা- নেফ্রটিক সিনড্রোম

(iv) গ্লোসাইটিস, ডিসপেজিয়া, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি।

মায়াজমেটিক কারণে পরিবর্তন:

(i) সিফিলিস মায়াজম- নখ কাগজের মত পাতলা এবং দেখতে ঠিক চামচের ন্যায়।

(ii) সাইকোসিস মায়াজম- নখ অসমান, ভঙ্গুর, লম্বালম্বি উচু রেখাযুক্ত, মোটা, ভারী। বিকৃত, সুগঠিত ইত্যাদি।

(iii) টিউরাবকুলার মায়াজম: নখ অসমান ভঙ্গুর, সহজে টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায়। নখের পাশ থেকে চামড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে নখ সরে ও ঝুলে যায়। খুবই মসৃণ চকচকে নখ। সাদা ছোট দাগযুক্ত নখ।

১৫। প্রশ্নঃ নখের বিভিন্ন পরিবর্তন কি কি অসুস্থতার সংকেত নির্দেশ করে?

নখের বিভিন্ন পরিবর্তন নিম্নরূপ অসুস্থতার সংকেত:

(i) নখ পাতলা, নরম, চামচের ন্যায়- আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া।

(ii) অস্বাভাবিক সাদা নখ- লিভার সিরোসিস কনজেনিটাল হাইপোএ্যালমেনিমিক কন্ডিশন।

(iii) নখ অস্বাভাবিক সাদা- নেফ্রটিক সিনড্রোম

(iv) গ্লোসাইটিস, ডিসপেজিয়া, অ্যানিমিয়া ইত্যাদি।

মায়াজমেটিক কারণে পরিবর্তন:

(i) সিফিলিস মায়াজম- নখ কাগজের মত পাতলা এবং দেখতে ঠিক চামচের ন্যায়।

(ii) সাইকোসিস মায়াজম- নখ অসমান, ভঙ্গুর, লম্বালম্বি উচু রেখাযুক্ত, মোটা, ভারী। বিকৃত, সুগঠিত ইত্যাদি।

(iii) টিউরাবকুলার মায়াজম: নখ অসমান ভঙ্গুর, সহজে টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যায়। নখের পাশ থেকে চামড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে নখ সরে ও ঝুলে যায়। খুবই মসৃণ চকচকে নখ। সাদা ছোট দাগযুক্ত নখ।

Accessory measures:

(a) Importance of diet and regimen during disease and convulescence,

স্বাস্থ্যোন্নতি সহায়ক পথ্য, ব্যায়াম, পরিবেশ

অনুচ্ছেদ নং- ২৫৯

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ক্ষুদ্র মাত্রায় প্রয়োজনীয়তা এবং উপযোগীতার কথা বিবেচনা করলেই আমরা সহজে বুঝতে পারি। চিকিৎসাকালে রোগীর খাবার হতে বা তার অভ্যাসের মধ্যে যে দ্রব্যের কিছুমাত্র ঔষধ শক্তি আছে তা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। নতুবা সে ক্ষুদ্র মাত্রাটির ক্রিয়া দ্বারা অন্যবিধ ঔষধজ প্রতিক্রিয়া অবিভূত বিনষ্ট ও বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

অনুচ্ছেদ নং- ২৬০

এই জন্য পুরাতন রোগীদের চিকিৎসার সময় এরূপ আরোগ্যের অন্তরায়সমূহ সতর্কভাবে অনুসন্ধান করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ যেসব অনিষ্টকর প্রভাব এবং রোগ সৃষ্টিকারী ভুল আহারের দ্বারা সাধারনতঃ রোগের বৃদ্ধি ঘটায় অথচ প্রায় সময় সেদিকে কোন নজরই দেয়া হয় না।

অনুচ্ছেদ নং- ২৬১

চিররোগীকে চিকিৎসা করার সময় আরোগ্য পথের যেসব বাধাবিঘ্ন বিদূরিত করা ও প্রয়োজন মত তার বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ আরোগ্যের অনুকূল আহার-বিহার ও পরিবেশ সৃষ্টি করা একান্ত অপরিহার্য। যেমন- নৈতিক ও বুদ্ধি বৃত্তির নির্দোষ আমোদ-প্রমোদ প্রায় সকল ঋতুতেই উন্মুক্ত বায়ুতে শারীরিক ব্যায়াম, প্রত্যহ ভ্রমন, সামান্য দৈহিক পরিশ্রম যথার্থ বলকারক ও ঔষধ গুণবর্জিত খাদ্য পানীয় প্রভৃতি রোগীর জন্য একান্ত প্রয়োজন।

অনুচ্ছেদ নং- ২৬২

অপরদিকে, মানসিক বিকৃতি ব্যতিত অন্যান্য অচির রোগের ক্ষেত্রে জাগ্রত জীবন-রক্ষক বৃত্তির (awakened life Preserving faculty) সূক্ষ্ম, নির্ভুল অন্তর্নিহিত চেতনা সুস্পষ্টরূপে ও সঠিকভাবে উপযুক্ত খাদ্য ও পানীয় দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। কাজেই কোন খাবার খেতে না দিয়ে রোগীর স্বাভাবিক ইচ্ছাকে দমন করা অথবা কোন অনিষ্টকর জিনিস খেতে রোগীকে প্রলুব্ধ না করার জন্য চিকিৎসক শুধু রোগীর বন্ধু-বান্ধব ও শুশ্রুষাকারীকে উপদেশ দিবেন।

অনুচ্ছেদ নং- ২৬৩

বিশেষ করে সাময়িক আরামপ্রদ খাদ্য-পানীয়ের জন্যই অচির রোগীরা লালায়িত হয়ে থাকেন। সেগুলো বাস্তবিক পক্ষে ঔষধ জাতীয় নয় বরং তাতে কেবল রোগীর এক ধরনের অভাবই পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। পরিমিতভাবে এই আকাংখা পরিপূর্ণ হবার ফলে রোগসমূহ নির্মূল আরোগ্য করার পথে সামান্য প্রতিবন্ধকতা এসে উপস্থিত হলে তা সদৃশ নীতিতেই সুনির্বাচিত ঔষধ দ্বারা প্রতিকার ও পরাভূত করা যায়। ইহার দ্বারা এবং সেরূপ তীব্র আকাংখা পরিতৃপ্ত হবার ফলে জীবনীশক্তিও রোগমুক্ত হয়। অনুরূপভাবে অচিররোগের ক্ষেত্রে কক্ষের তাপমাত্রা ও শয্যা-আবরণীর উষ্ণতা বা শীতলতা নিশ্চিতভাবেই রোগীর ইচ্ছানুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। অত্যধিক মানসিক শ্রম ও উত্তেজক আবেগ প্রবণতা (exiting emotions) হতে রোগীকে মুক্ত রাখতে হবে।

প্রশ্নঃ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঔষধি গুণবিশিষ্ট খাদ্য ও পানীয় বর্জনীয় কেন? ২০০৮, ১০

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ঔষধি গুণবিশিষ্ট খাদ্য ও পানীয় বর্জনীয়।

ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান “অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থের ২৬০-২৬৩ নং অনুচ্ছেদে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় খাদ্য ও পানীয় বর্জনীয় সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

(i) পুরাতন রোগীদের চিকিৎসার সময় আরোগ্যের অন্তরায়সমূহ সতর্কভাবে অনুসন্ধান করা একান্ত প্রয়োজন। কারণ সেসব অনিষ্টকর প্রভাব ও রোগ সৃষ্টিকারী খাদ্য-পানীয় আহারের দ্বারা সাধারনতঃ রোগের বৃদ্ধি ঘটায়।

(ii) চিররোগীকে চিকিৎসা করার সময় আরোগ্য পথের যেসব বাধাবিঘ্ন বিদূরিত করা ও প্রয়োজন মত তার বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ আরোগ্যের অনুকূল খাদ্য-পানীয় ও পরিবেশ সৃষ্টি করা একান্ত অপরিহার্য। যেমন- দৈহিক পরিশ্রম যথার্থ বলকারক ও ঔষধ গুণবর্জিত খাদ্য পানীয় প্রভৃতি রোগীর জন্য একান্ত প্রয়োজন।

(iii) অপর দিকে মানসিক বিকৃতি ব্যতিত অন্যান্য অচির রোগের ক্ষেত্রে জাগ্রত জীবনরক্ষক বৃত্তির সূক্ষ্ম নির্ভুল অন্তর্নিহিত চেতনা সুস্পষ্টরূপে এবং সঠিকভাবে উপযুক্ত খাদ্য ও পানীয় দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। কাজেই কোন খাবার খেতে না দিয়ে রোগীর স্বাভাবিক ইচ্ছাকে দমন করা অথবা কোন অনিষ্টকর জিনিস খেতে রোগীকে প্রলুদ্ধ না করা যাবে না।

(iv) বিশেষ করে ক্ষণিকের আরামপ্রদ খাদ্য-পানীয়ের জন্যই অচির রোগীরা লালায়িত হয়ে থাকেন। সেগুলো বাস্তবিক পক্ষে ঔষধ জাতীয় নয় বরং তাতে কেবল রোগীর এক ধরনের অভাবই পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। পরিমিতভাবে এই আকাংখা পরিপূর্ণ হবার ফলে রোগসমূহ নির্মূল আরোগ্য করার পথে সামান্য প্রতিবন্ধকতা এসে উপস্থিত হলে তা সদৃশ নীতিতেই সুনিশ্চিতভাবেই রোগীর ইচ্ছানুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।

২। প্রশ্ন: পাঁচটি ঔষধের প্রতিষেধক খাদ্য অথবা পানীয়ের নাম লিখ।

পাঁচটি ঔষধের প্রতিষেধক খাদ্য অথবা পানীয়ের নাম:

(১) একোনাইট ন্যাপ- বিয়ার, মাখন, মাংস, চর্বি।

(ii) থুজা অক্সিডেন্টালিস – পেঁয়াজ ও চা।

(iii) নেট্রাম সালফ – বাধা কপি, তরমুজ, লবণ, দুধ, কপি।

(iv) পালসেটিলা- রুটি, সিম, মাখন, দুধপান, চা, চর্বি, গোল আলু, এলকোহলযুক্ত পানীয়।

(৮) মেডোরিনাম – মিষ্টি, লবণ।

প্রশ্নঃ ঔষধ ও পথ্যের মধ্যে পার্থক্য লিখ। ০৯, ১০, ১১

ঔষধ ও পথ্যের মধ্যে পার্থক্য:

 ঔষধপথ্য
বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ফার্মাকোপিয়ার নির্দিষ্ট ফর্মুলা অনুযায়ী ভেষজ পদার্থ হতে প্রস্তুতকৃত পদার্থ যা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে আভ্যন্তরিন বা বাহ্যিক প্রয়োগে রোগারোগ্য এবং রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়, তাকে ঔষধ বলে।পথ্য রোগ আরোগ্য সহায়ক এবং যা গ্রহনে ব্যক্তি সুস্থ ও সবল এবং রোগ মুক্ত থাকে।
ইহার রোগ উৎপাদন ও রোগ  আরোগ্যের উভয় ক্ষমতা আছে।ইহার রোগ উৎপাদন ও রোগ আরোগ্যের উভয় ক্ষমতা নাই।
ইহা সুস্থ মানব শরীরে পরীক্ষিত।ইহা সুস্থ মানব শরীরে পরীক্ষিত নয় কিন্তু পুষ্টিগত দিক থেকে মাননিয়ন্ত্রিত।
ইহাকে জীবনীশক্তি বাধা প্রদান  করে না এবং রোগ আরোগ্যের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করে।ইহা রোগ জীবনীশক্তিকে করে। আরোগ্যে সহায়তা

প্রশ্ন: চিররোগের পথ্য ও পরিচর্যা কিরুল হওয়া উচিৎ? ০৮, ১০

চররোগের পথ্য ও পরিচর্যা নিম্নরূপ হওয়া উচিত।

ডাঃ হ্যানিম্যান হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা আইন গ্রন্থ “অপনিন এব মেডিসিন” এর ২৫৯ – ২৬৩ নং অনুচ্ছেদে চিররোগের পথ্য ও পরিচর্যা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

(i) চিকিৎসাকালে রোগীর আহার হতে বা তার অভ্যাসের মধ্যে যে দ্রব্যের কিছুমাত্র ঔষধ শক্তি আছে তা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। নতুবা সে ক্ষুদ্র মাত্রাটির ক্রিয়া দ্বারা অন্যবিধ ঔষধজ প্রতিক্রিয়া অবিভূত, বিনষ্ট ও বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

(ii) পুরাতন রোগীদের চিকিৎসার সময় রোগ আরোগ্যের অন্তরায়সমূহ সতর্কভাবে অনুসন্ধান করা একান্ত প্রয়োজন।

(iii) সেসব অনিষ্টকর প্রভাব এবং রোগ সৃষ্টিকারী পানাহারের দ্বারা সাধারণতঃ রোগের বৃদ্ধি ঘটায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

(iv) চির রোগীকে চিকিৎসা করার সময় আরোগ্য পথের যে সব বাধাবিঘ্ন বিদূরিত করা ও প্রয়োজন মত তার বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ আরোগ্যের অনুকূল আহার-বিহার ও পরিবেশ সৃষ্টি, করা একান্ত অপরিহার্য।|

(v) নৈতিক ও বুদ্ধি বৃত্তির নির্দোষ আমোদ-প্রমোদে, প্রায় সকল ঋতুতেই উন্মুক্ত বায়ুতে শারীরিক ব্যায়াম, প্রত্যহ ভ্রমন, সামান্য দৈহিক পরিশ্রম, যথার্থ বলকারক ও ঔষধ গুণবর্জিত খাদ্য-পানীয় প্রভৃতি • রোগীর জন্য একান্ত প্রয়োজন।

৫। প্রশ্ন: চিররোগের পথ্যাপথ্য সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিম্যানের মন্তব্য বিশদভাবে বর্ণনা কর।

চিররোগের পথ্যাপথ্য সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিম্যানের মন্তব্যের বর্ণনা:

ডাঃ হ্যানিম্যানের মতে পুরাতন রোগীদের চিকিৎসার সময় রোগ আরোগ্যের অন্তরায়সমূহ সতর্কভাবে অনুসন্ধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যেসব ক্ষতিকর প্রভাব এবং রোগ সৃষ্টিকারী ভুল আহারের দ্বারা সাধারণতঃ রোগের বৃদ্ধি ঘটায় অথচ প্রায় সময় সেদিকে কোন নজরই দেয়া হয় না।

চিররোগীকে চিকিৎসা করার সময় আরোগ্য পথের যেসব বাধাবিঘ্ন বিদূরিত করা ও প্রয়োজন মত তার বিপরীত অবস্থা অর্থাৎ আরোগ্যের অনুকূল খাদ্য-পানীয় ও পরিবেশ সৃষ্টি করা একান্ত অপরিহার্য। যেমন- নৈতিক ও বুদ্ধি বৃত্তির নির্দোষ আমোদ-প্রমোদে, প্রায় সকল ঋতুতেই উন্মুক্ত বায়ুতে শারীরিক ব্যায়াম, প্রত্যহ ভ্রমন, সামান্য দৈহিক পরিশ্রম, যথার্থ বলকারক ও ঔষধ গুণবর্জিত খাদ্য ও পানীয় প্রভৃতি রোগীর জন্য একান্ত ব্যবস্থা করতে হবে।

৬। প্রশ্ন: মানসিক রোগীর জন্য কি কি পথ্যাপথ্য নির্বাচন করবে? মানসিক রোগীর জন্য পথ্যাপথ্য নির্বাচন:

মানসিক বিকৃতি ব্যতিত অন্যান্য অচির রোগের ক্ষেত্রে জাগ্রত জীবন-রক্ষক বৃত্তির সূক্ষ্ম, নির্ভুল অন্তর্নিহিত চেতনা সুস্পষ্টরূপে ও সঠিকভাবে উপযুক্ত খাদ্য ও পানীয় দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। কাজেই কোন খাবার খেতে না দিয়ে রোগীর স্বাভাবিক ইচ্ছাকে দমন করা অথবা কোন অনিষ্টকর জিনিস খেতে রোগীকে প্রলুব্ধ করার যাবে না।

৭। প্রশ্নঃ অচির ও চির রোগীর জন্য কি কি পথ্যাপথ্য নির্বাচন করবে? অচির ও চির রোগীর জন্য নিম্নলিখিত পথ্যাপণ্য নির্বাচন করতে হবে?

সাময়িক আরামপ্রদ খাদ্য-পানীয়ের জন্যই বিশেষ করে অচির রোগীরা লালায়িত হয়ে থাকেন। সেগুলো বাস্তবিক পক্ষে ঔষধ জাতীয় নয় বরং তাতে কেবল রোগীর এক ধরনের অভাবই পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। পরিমিতভাবে এই আকাংখা পরিপূর্ণ হবার ফলে রোগসমূহ নির্মূল আরোগ্য করার পথে সামান্য প্রতিবন্ধকতা এসে উপস্থিত হলে তা সদৃশ নীতিতেই সুনির্বাচিত ঔষধ দ্বারা প্রতিকার ও পরাভূত করা যায়। ইহার দ্বারা এবং সেরূপ তীব্র আকাংখা পরিতৃপ্ত হবার ফলে জীবনীশক্তিও রোগমুক্ত হয়। অনুরূপভাবে অচিররোগের ক্ষেত্রে কক্ষের তাপমাত্রা ও শয্যা-আবরণীর উষ্ণতা বা শীতলতা নিশ্চিতভাবেই রোগীর ইচ্ছানুযায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। অত্যধিক মানসিক শ্রম ও উত্তেজক আবেগ প্রবণতা হতে রোগীকে মুক্ত রাখতে হবে।

ডাঃ হ্যানিম্যানের মতে পুরাতন রোগীদের চিকিৎসার সময় রোগ আরোগ্যের অন্তরায়সমূহ সতর্কভাবে অনুসন্ধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যেসব অনিষ্টকর প্রভাব এবং রোগ সৃষ্টিকারী ভুল আহারের দ্বারা সাধারণতঃ রোগের বৃদ্ধি ঘটায় অথচ প্রায় সময় সেদিকে কোন নজরই দেয়া হয় না। অর্থাৎ আরোগ্যের অনুকূল আহার-বিহার ও পরিবেশ সৃষ্টি করা একান্ত অপরিহার্য। যেমন- নৈতিক ও বুদ্ধি বৃত্তির নির্দোষ আমোদ-প্রমোদ, প্রায় সকল ঋতুতেই উন্মুক্ত বায়ুতে শারীরিক ব্যায়াম, প্রত্যহ ভ্রমন, সামান্য দৈহিক পরিশ্রম, যথার্থ বলকারক ও ঔষধ গুণবর্জিত খাদ্য-পানীয় প্রভৃতি রোগীর জন্য একান্ত প্রয়োজন।

(b) Diet in acute disease

৮। প্রশ্ন। অচির রোগের পথ্যাপথ্য নির্বাচন কিভাবে করবে?

অচির রোগের পথ্যাপখ্য নির্বাচন:

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ঔষধ ও পথ্যাপদ্য একে অন্যের সাথে একান্তভাবে জড়িত। অচির রোগের পথ্যাপথ্য নির্বাচন সম্বন্ধে ডাঃ হ্যানিম্যান অর্গানন অব মেডিসিনের ২৬৩ নাং অনুচ্ছেদে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। লক্ষণ-সমষ্টিই রোগের ভাষা। অর্থাৎ লক্ষণের মাধ্যমে রোগ প্রকাশিত হয়। অচির রোগ, অচির মায়াজম অর্থাৎ সোরার সাময়িক উচ্ছ্বাস দ্বারা সৃষ্টি হয়। অচির রোগের লক্ষণগুলি সুস্পষ্ট থাকে। তাই রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজন চিকিৎসকের কাছে তা সহজেই প্রকাশ করতে পারে বলেই অচির রোগের ঔষধ নির্বাচন করা সহজ হয়। ডাঃ হ্যানিম্যান বলেছেন, অচির রোগের রোগীর আকালা অনুসারে তাকে পথ্য দিতে হবে। গ্লদিও তার রোগের সাথে পথোর সম্পর্ক খারাপ থাকে, অর্থাৎ পথ্য রোগ লক্ষণ বৃদ্ধি করবে তবুও রোগ যন্ত্রণার সময় রোগী আকাঙ্খা থাকলে সেই পথ্য রোগীকে দিতে হবে। যেমন- উদরাময়ের সময় দুধ রোগীর জন্য ক্ষতিকর, শিশু রোগীর আকাঙ্খা থাকলে তাকে পথ্য হিসেবে দিলে রোগারোগ্য সহজতর হয়।

উপরিউক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, অচির রোগে রোগীর আকাঙ্খার উপর নির্ভর করে পথ্যাপথ্য ব্যবস্থা করতে হয়। এতে রোগ আরোগ্যে পথ্যাপথ্য অগ্রণী ভূমিকা রাখে।

৯। প্রশ্ন: খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি রোগীর আকাঙ্খা ও অনিচ্ছার গুরুত্ব আলোচনা কর। ০৯

খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি রোগীর আকাঙ্খা ও অনিচ্ছার গুরুত্বঃ

খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি রোগীর আকাঙ্খা ও অনিচ্ছার গুরুত্ব অচির ও চির উভয় প্রকারের রোগের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। প্রাকৃতিক নীতি দ্বারা পরিচালিত চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা। প্রাকৃতিকভাবে রোগশক্তি মানবদেহে আবির্ভূত হয় এবং কিছু লক্ষণ ও চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। প্রকৃতি মানুষকে সুস্থ ও সবলভাবে জীবন ধারনের শিক্ষা দেয়। মানবদেহে কোন উপাদানের অভাব হলে বিভিন্নভাবে তা প্রকাশ করে। যেমন- হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নেট্রাম মিউরিটিকামের রোগী বেশি পরিমাণে লবণ খাওয়ার আকাঙ্খা থাকে। আবার সাইকোসিস মায়াজমের রোগী বা সাইকোটিক রোগী মাংসে অনিচ্ছা কারণ মাংস খেলে তার রোগ যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়। অচির রোগের রোগীর আকাঙ্খা অনুসারে খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থা করতে হয়। রোগীর রোগগ্রস্ত অবস্থায় উক্ত খাদ্যবস্তু ক্ষতিকর হলে ও প্রাকৃতিকভাবে রোগীর মনে তার আকাঙ্খার কারণে রোগারোগ্যে তা সহায়তা করে। আবার চিররোগে রোগীর খাদ্য ও পানীয় ঔষধের উপর নির্ভর করে রোগীর আরোগ্য দ্রুত করার জন্য ঔষধ ও রোগের সাথে সম্বন্ধযুক্ত খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ চিররোগে রোগীর ইচ্ছানুসারে খাদ্যবস্তু খেতে দেয়া যাবে না।

অতএব ডাঃ হ্যানিম্যানের রোগী চিকিৎসা অর্থাৎ আদর্শ আরোগ্যের জন্য রোগীর খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি আকাঙ্খা ও অনিচ্ছার বিষয় গুরুত্ব দিয়াছেন। সে অনুসারে রোগী আকাঙ্খা ও অনিচ্ছার গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করলে অচির ও চিররোগের আরোগ্য দ্রুত সম্পন্ন হবে।

(c) Diet as hindrance to recovery or action of drug

১০। প্রশ্নঃ পথ্য দ্বারা কিভাবে আরোগ্য ও ঔষধের ক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়?- বর্ণনা কর।

পথ্য দ্বারা আরোগ্য:

ডাঃ হ্যানিম্যান কর্তৃক আবিষ্কৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ হচ্ছে যে বস্তু রোগ আরোগ্য করতে পারে সে বস্তু রোগ উৎপাদন করতে পারে। অর্থাৎ ঔষধের রোগ উৎপাদক ও রোগারোগ্যের উভয় শক্তি বিদ্যমান। হোমিওপ্যাথিক ঔষধের উৎসসমূহের মধ্যে অনেক উপাদান আছে যা মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। যেমন- পিয়াজ, লবণ, কফি ইত্যাদি এবং খাদ্যবস্তুগুলোকে আবার হোমিওপ্যাথিক ফার্মাকোপিয়া অনুসারে ঔষধে রূপান্তরপূর্বক শক্তিকৃত করে রোগারোগ্যে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অসুস্থ অবস্থায় পথ্য দেহের অভাব পূরণ করে রোগী দ্রুত সুস্থ করতে সাহায্য করে। পথ্য রোগীর দেহের পুষ্টির অভাব পূরণ করে যা আরোগ্য ক্ষেত্রে জীবনী শক্তিকে সাহায্য করে।

পথ্য দ্বারা ঔষধের ক্রিয়া বাধা প্রাপ্ত হয়:

ঔষধিগুন সম্পন্ন পথ্য অথবা যে পথ্য ঔষধে ক্রিয়া নষ্ট করে তা বর্জনের জন্য ডাঃ হ্যানিম্যান “অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। ঔষধের ক্রিয়া নষ্ট করে এমন ঔষধিগুন সম্পন্ন খাদ্য ও পানীয় ঔষধ সেবন কালে রোগীকে নিষেধ করতে হবে। অর্থাৎ আরোগ্য পথে বাধা যে সব পথ্য রোগ চিকিৎসাকালে তা গ্রহণ বন্ধ রাখতে হবে। যেমন- থুজা ঔষধের ক্রিয়া নষ্ট করে- চা ও পিয়াজ, নেট্রাম মিউরের ক্রিয়া নষ্ট করে খাদ্য লবণ ইত্যাদি।

(d) পরিচর্যার নির্দেশনা (Directions on nursing)

১১। প্রশ্নঃ পরিচর্যার নির্দেশনা কি? ০৯

রোগী পরিচর্যার নির্দেশনা (Nursing):

রোগারোগ্য জন্য ঔষধ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি পরিচর্যার নির্দেশনা আরোগ্যের পথকে সুগম করে। রোগারোগ্য যে ধরনের পরিচর্যা বা সেবা যত্ন করলে রোগীর সহজেই দ্রুত রোগ হতে মুক্তিপায় সে ধরনের নির্দেশনাসমূহকে রোগী পরিচর্যার নির্দেশনা বলে।

১২। প্রশ্নঃ রোগী চিকিৎসাকালে চিকিৎসক কেন পরিচর্যার উপর গুরুত্ব দেন? ০৯

রোগী চিকিৎসাকালে চিকিৎসক পরিচর্যার উপর গুরুত্ব দেয়ার কারণ:

রোগী চিকিৎসাকালে চিকিৎসক পরিচর্যার উপর গুরুত্ব অত্যধিক কারণ-

(i) রোগীর কক্ষে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকলে রোগ আরোগ্য সহজ হয়।

(ii) রোগীকে আবহাওয়া উপযোগী পোশাক, কাপড়-চোপড়, পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন বিছানাপত্র ইত্যাদি রোগ সংক্রমন পথকে রুদ্ধ করে।

(iii) সহজ খাদ্য, তরল ও অর্ধতরল এবং পুষ্টিকর খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থা করলে পুষ্টির মান বৃদ্ধি পায় আরোগ্যের গতি ত্বরাণিত হয়।

(iv) নিয়মিত গোসল, শরীর মোছানো ইত্যাদি রোগীকে আরোগ্যের দিকে ধাবিত করে।

(v) নিয়মিত ঔষধ সেবনের ব্যবস্থা করে রোগীকে সুস্থ করা।

১৩। প্রশ্নঃ সেবা যত্ন কি? অচির রোগীর সেবা যত্নের নির্দেশনাগুলি লিখ। ০৮, ১০

সেবাযত্নঃ

রোগ মানবদেহে প্রাকৃতিকভাবে প্রবেশ করে, দেহের গুরুত্বপূর্ণ অর্গানগুলোতে আঘাত করে, কিছু লক্ষণ ও চিহ্নের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি শিশু শুলভ, তারা রোগ যন্ত্রণায় কাতর অবস্থায় শ্যায়ায়শায়িত, এখন তার পরিচর্যার মাধ্যমে আরোগ্য পথকে ত্বরাণিত করা যায়, তাকে সেবাযত্ন বলে।

অচির রোগীর সেবা যত্নের নির্দেশনাগুলো নিম্নরূপঃ

ডাঃ হ্যানিম্যান অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের ১৫০- ১৫৬ নং অনুচ্ছেদে অচিররোগের চিকিৎসা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

তাঁর মতে, অচির রোগে রোগীর মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব দিয়ে তার ইচ্ছা আকাঙ্খার উপর নির্ভর করে পরিচর্যা ও পথ্য নির্বাচন করতে হবে। অচির রোগে রোগীর চাহিদা অনুসারে তার পোশাক পরিচ্ছেদের ব্যবস্থা করতে হবে।

(i) রোগীকে নিরিবিলে, পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসে ব্যবস্থাপূর্ণ কক্ষে রাখতে হবে।

(ii) সিভিয়ার অ্যানিমিয়া, ডিহাড্রেশন ক্ষেত্রে রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল, অর্ধতরল খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

(iii) রোগীর বিছানা, আসবাবপত্র, কাপড় চোপড় ইত্যাদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে।

(iv) রোগীর রোগ যন্ত্রণা সময় যে ধরনের পথ্য ও পানীয়ের আকাঙ্খা করে রোগারোগ্য বাধা থাকলে ও রোগীকে সে ধরনের পথ্যাপথ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। ইহাই ডাঃ হ্যানিম্যানের নির্দেশ।

অতএব, অচির রোগে রোগীর সেবাযত্ন রোগীর আকাঙ্খার উপর নির্ভর করে।

প্রশ্নঃ সুপথ্য, অপথ্য ও কুপথ্যের ধারনা দাও। ০৮, ১০, ১২ বা, সুপথ্য, অপথ্য ও কুপথ্যের ধারণা পরিষ্কারভাবে লিখ। ১০

সুপথ্য, অপথ্য ও কুপথ্যের ধারণা:

সুপথ্য:

যে সকল খাদ্য ও পানীয় রোগীর পুষ্টি সাধন ও রোগ আরোগ্যে সহায়তা করে, সে খাদ্যবস্তুকে সুপথ্য বলে। রোগী যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠে এবং দ্রুত হারানো স্বাস্থ্য ফিরে পায় তার জন্য সুপথ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেমন- রোগাক্রান্ত অবস্থায় সহজপাচ্য কম মশলাযুক্ত খাদ্যবস্তু ও তাজা ফলমূল দিতে হবে।

অপথ্যঃ

যে সকল খাদ্য ও পানীয় রোগীর পুষ্টি সাধন করে এবং রোগ আরোগ্যে বাধাপ্রদান করে, সে খাদ্যবস্তুকে অপথ্য বলে। যেমন- থুজা ঔষধ সেবনকালে কাঁচা পেঁয়াজ ও চা খাদ্য হিসাবে গ্রহনে ঔষধটির ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়, তাই উক্ত খাদ্যবস্তু অপথ্য।

কুপথ্য:

যে সকল খাদ্য ও পানীয় রোগীর পুষ্টি সাধন এবং রোগ আরোগ্যে অস্বাভাবিকভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, সে খাদ্যবস্তুকে কুপথ্য বলে। যেমন- উদরাময় এর সময় রোগীকে দুধ পান করতে দিলে রোগীর রোগ বৃদ্ধি পায় এবং গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী অধিক মশলাযুক্ত গুরুপাক খাদ্য খেতে দিলে রোগ বৃদ্ধি পায়, তাই উক্ত খাদ্য বস্তু কুপথ্য।

প্রশ্নঃ একক মাত্রা কাকে বলে? একক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগের উপকারিতা কি? ১৩ বা একবারে একমাত্রা কেন প্রয়োগ করা হয়?

একক মাত্রা এর সংজ্ঞা:

একক মাত্রা সম্পর্কে বিভিন্ন চিকিৎসক বিভিন্ন মতামত পোষণ করেন। সাধারণতঃ কোন রোগী বা প্রভারদেরকে একবার যতটুকু ঔষধ প্রয়োগ করা হয়, তাকে একক মাত্রা বলা হয়। অর্গানন অব মেডিসিন গ্রন্থের ৬ষ্ঠ সংস্করণে এসে ডাঃ হ্যানিম্যান একক মাত্রার পরিমাণ নতুন শক্তিকরণ পদ্ধতির (সহস্রতামিক পদ্ধতির) ঔষধের দ্বারা ঔষুধিকৃত ১০০ গ্রেন আকৃতির একটি অনুবটিকা হবে বলে উল্লেখ করেন। অর্থাৎ একই আকৃতির ১০০টা অনুবটিকার ওজন ১ গ্রেণ হয় এবং এক ফোঁটা ঔষধ দ্বারা সিক্ত করে এর থেকে একটা অনুবটিকা এককমাত্রা হবে বলে নির্দেশ করেন।

একক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগের উপকারিতা:

রোগীর জন্য সুনির্বাচিত ঔষধ সব সময় একবারে একটা মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। ইহার হোমিওপ্যাথির অন্যতম নিয়মনীতি। ঔষধ একবারে একটা করে মাত্রায় প্রয়োগ করলে তা অত্যন্ত কার্যকরী হয়। অর্গানন

অব মেডিসিন গ্রন্থের ৬ষ্ঠ সংস্করণে উল্লেখ আছে যে, ঔষধকে পরিশ্রুত পানিতে গুলে বিভক্ত করে প্রত্যেকবার প্রয়োগের পূর্বে ৮ থেকে ১২ বার সজোরে ঝাঁকি দিয়ে পরিবর্তিত মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়, তবে তা আরও বেশি কার্যকরী হয়। ঔষধকে পরিবর্তিত একক মাত্রায় প্রয়োগ করলে মাত্রাটা আরও অনেক সূক্ষ্ম হয়। যে কোন ঔষধ রোগীর লক্ষণের সাথে যত বেশি সদৃশ লক্ষণ সম্পন্ন হয় ও এর মাত্রা যত বেশি ক্ষুদ্র বা সূক্ষ্ম হবে, ততই দ্রুত আরোগ্যকারী

পরিবর্তন পাওয়া যায়। এজন্য ঔষধকে একক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। উপরোক্ত আলোচনা হতে ইহাই প্রতীয়মান যে হোমিওপ্যাথির অন্যতম অন্যান্য নিয়মনীতি একক মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ। সুতরাং একক মাত্রায় ঔষধপ্রয়োগের উপকারিতা সুদূরপ্রসারী।

রেপার্টরীর পরিচিতি ও সংজ্ঞা

প্রশ্ন: রেপার্টরীর আভিধানিক অর্থ কি? ১১, ১৪ বা, রেপার্টরীর অর্থ কি?

রেপার্টরীর শব্দের আভিধানিক অর্থ:

ল্যাটিন শব্দ Repertorium এবং ফ্রেঞ্জ শব্দ Reperire- Repertoire হতে Repertory শব্দের উদ্ভব হয়েছে। উভয় শব্দই কোন স্থান হতে কোন কিছু খুঁজে বের করা বুঝায়। রেপার্টরী শব্দের আভিধানিক অর্থ অনেক প্রকার হতে পারে। যেমন- ঔষধ কোষ, ভান্ডার, দ্রব্যাদির তালিকা, কোষাগার, সংগ্রহশালা, বিশেষ তথ্যালয়, সূচীপত্র, দলিল ইত্যাদি।

আবার Repertory শব্দের অর্থ পূণরায় পর্যালোচনার অংশ বুঝায়। অর্থাৎ এমনই একটি ছক বা সংক্ষিপ্তসারপূর্ণ তথ্যালয় যেখানে বিষয়সমূহ এমনভাবে সুবিন্যস্ত থাকে যে তা সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরীর সংজ্ঞা লিখ। ০৯

হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরীর সংজ্ঞা:

ডাঃ হ্যানিম্যান রচিত “অর্গানন অব মেডিসিন” গ্রন্থে বর্ণিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসরণ করে স্বল্পতম সময়ে, সুনির্বাচিত, সদৃশ, একক হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচনের সুবিধার্থে-

(i) সুস্থ মানব দেহের পরীক্ষিত

(ii) বিষবিজ্ঞান হতে আহরিত জ্ঞান

(iii) ক্লিনিক্যালভাবে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পরীক্ষিত-

ঔষধসমূহের রোগলক্ষণ উৎপাদনকারী বা আরোগ্যকারী গুণাবলীর দ্বারা লিপিবদ্ধ হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকায় অন্তর্ভূক্ত মানব দেহ-মনে প্রকাশিত প্রায় সর্বপ্রকার রোগ লক্ষণাবলীকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিটি লক্ষণের নির্দেশিত ঔযধাবলীকে বর্ণমালার ক্রমানুসারে এবং ঔষধের গুরুত্ব অনুযায়ী সাজিয়ে অর্থাৎ আভিধানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে যে বিশেষ ধরনের লক্ষণ নির্দেশিকা বা ঔষধ কোষ রচিত হয়েছে, তাকে হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরী বলা হয়।

প্রশ্নঃ সাধারণ রেপার্টরী কাকে বলে? উদাহারণসহ রেপার্টরীর শ্রেণীবিভাগ কর। ১৩, ১৫, ১৮ বা, হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরীর প্রকারভেদ লিখ?

সাধারণ রেপার্টরীর সংজ্ঞা:

প্রথম শ্রেণীর রেপার্টরীকে সাধারণ রেপার্টরী বলে। এই রেপার্টরীতে লক্ষণসমূহকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপকভাবে সাজানো হয়েছে। এই রেপার্টরীর লক্ষণ সহজে ও স্বল্প সময়ের মধ্যে বাহির করা যায়।

ডাঃ কেন্ট ও ডাঃ বোনিং হাউসেনের রেপার্টরী এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরীর প্রকারভেদ:

(i) ব্যাপক সাধারণ রেপার্টরী বা লাক্ষণিক রেপার্টরী: ইহা ২টি প্রধান বিভাগ-

ক) বিশুদ্ধতাবাদী ব্যাপক সাধারণ রেপার্টরী।

খ) যুক্তিসিদ্ধ উপযোগীতাবাদী ব্যাপক সাধারণ রেপার্টরী।

(ii) সিন্থেটিক রেপার্টরী।

(iii) আঙ্গিক বা বিশেষ অঙ্গ ভিত্তিক রেপার্টরী।

(iv) নৈদানিক রেপার্টরী। (v) নির্ঘন্ট রেপার্টরী।

(vi) বর্ণমালা ক্রমিক রেপার্টরী। (vii) কার্ড রেপার্টরী।

(viii) যন্ত্র নির্ভর রেপার্টরী।

(ix) কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর রেপার্টরী।

প্রশ্নঃ রেপার্টরীর অর্থ এবং নামকরণের সার্থকতা বর্ণনা কর। ১২ বা, হোমিওপ্যাথিক রেপার্টরীর নামকরণের সার্থকতা বর্ণনা কর।

রেপার্টরী অর্থ এবং নামকরণের সার্থকতা বর্ণনা:

ল্যাটিন শব্দ Repertorium এবং ফ্রেঞ্জ শব্দ Reperire- Repertoire হতে Repertory শব্দের উদ্ভব হয়েছে। উভয় শব্দই কোন স্থান হতে কোন কিছু খুঁজে বের করা বুঝায়। রেপার্টরী শব্দের আভিধানিক অর্থ অনেক প্রকার হতে পারে। যেমন- ঔষধ কোষ, ভান্ডার, দ্রব্যাদির তালিকা, কোষাগার, সংগ্রহশালা, বিশেষ তথ্যালয়, সূচীপত্র, দলিল ইত্যাদি।

আবার Re অর্থ পুনরায় Part অর্থ অংশ Ary অর্থ আলোচনা, বিষয়বস্তু ইত্যাদি। অর্থাৎ Repertory শব্দের অর্থ পুণরায় পর্যালোচনার অংশ বুঝায়। অর্থাৎ এমনই একটি ছক যা সংক্ষিপ্তসারপূর্ণ তথ্যালয় যেখানে বিষয়সমূহ এমনভাবে সুবিন্যস্ত থাকে যে তা সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।

উপরিউক্ত বর্ণনা হতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, রেপার্টরীর নাম, গঠন এবং কাজের মধ্যে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিকতা ও মিল খুঁজে পাওয়া যায়। সুতরাং রেপার্টরীর নামকরণটি যথেষ্ট সার্থকতা ও যুক্তিসঙ্গত হয়েছে।

প্রশ্ন: লেখকের নামসহ ৫টি প্রধান রেপার্টরীর নাম লিখ। ১১, ১৪ লেখকের নামসহ ৫টি প্রধান রেপার্টরীর নাম:

(i) ডাঃ জে.টি কেন্ট M.D রচিত রেপার্টরী অব দ্যা হোমিওপ্যাথিক মেটেরিয়া মেডিকা।

(ii) ডাঃ জে এইচ ক্লার্ক রচিত- A Clinical Repertory to the Dictionary of Materia Medica

(iii) Dr. William Boericke রচিত- Pocket Manual of Homoeopathic Materia Medica

(iv) Dr. Robin Murphy N.D রচিত- Homoeopathic

Medical Repertory

(v) Dr. C. M. Bogar রচিত- Boaninghausen’s

Characteristics & Repertory

৬। প্রশ্নঃ ডাঃ হ্যানিম্যান এর লিখিত রেপার্টরীর বর্ণনা দাও।

ডাঃ হ্যানিম্যান এর লিখিত রেপার্টরীর বর্ণনা:

ডাঃ হ্যানিম্যান তার চিকিৎসা কর্মে নিত্য ব্যবহারের জন্য ল্যাটিন ভাষায় একটি হস্তলিখিত রেপার্টরী সংকলন করেন। ইহার পৃষ্ঠার সংখ্যা ছিল চার হাজার দুই শত উনচল্লিশ। শুধু মুখ্য লক্ষণ সমন্বয়ে লিখিত এ রেপার্টরীর নামকরণ করা হয়েছিল ” Repertorium.” তৎপর ডাঃ হ্যানিম্যান তাঁর ছাত্র Dr. Gustav Wilhelm Gross- এর দ্বারা হস্ত লিখিত অপেক্ষাকৃত ব্যাপক ধরণের দুই খন্ডে বিভক্ত একটি রেপার্টরী লিখান। ইহার প্রতি খন্ডে প্রায় দেড় হাজার পৃষ্ঠা ছিল। ডাঃ

হ্যানিম্যান নিজ হাতে ইহার সংশোধনী লিখেন।

Disclaimer:
This blog post is for study purposes only. It is not a substitute for professional medical advice. Please consult a healthcare professional for personalized guidance and treatment. Self-medication is strongly discouraged.

Scroll to Top